#প্রেমনোঙর_ফেলে
#লেখনীতে: মিথিলা মাশরেকা
১৩.
খই গাছের সবচেয়ে নিচের ডালটায় রীতিমতো ঝুলছে। আর নিচ থেকে রাকীন ওর বিনুনি ধরে রেখেছে আর ফোন দেখছে। ভাবখানা এমন,ওর সব মনোযোগ মোবাইলেই। গাছের ডালে ওর বিনুনি ধরে রাখার জন্য একজন যে চরম বেকায়দায় পরে আছে,বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তাতে। তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো খই। এই মানুষটা তো সত্যিই মানুষ! গতরাতে হাত কেটে তার প্রমান দিয়েছে ওকে। কিন্তু তাহলে আজ এভাবে জ্বী’নের মতো হুট করে আবির্ভাব হলো কিভাবে? একহাতে গাছের ডাল জড়িয়ে আরেকহাতে বিনুনিতে টান লাগালো খই। রাকীন প্রতিক্রিয়াবিহীন। খই আবারো বিনুনি টান লাগিয়ে বললো,
-আমার বিনি ধরছেন ক্যান?
…
-আরে? বিনি ছাড়েন না ক্যান?
…
-কথা কানে যায় না? কালা নাকি? বিনি ছাড়েন কইতাছি!
রাকীন এবার চোখ তুলে উপরে তাকালো। খইয়ের বিনুনি আঙুলে আরেকপ্যাচে পেচিয়ে মোবাইলটা পকেটে পুরলো ও। এখানে এসেছিলো পুকুরটা পরখ করে নিতে। সামনের রাস্তা সংস্কারের জন্য মাটি লাগবে। কচুরিপানায় মজা এই পুকুর সেচে এখান থেকেই মাটি রাস্তায় দেবে এমনটাই প্লান ওর। গ্রামের মাতব্বরের সাথে এ নিয়ে কথাও বলেছে রাকীন। মাটির জন্য মুন্সীর কাছ থেকে এই পচা ডোবাটা বেশ চড়া দামে কিনতে হয়েছে ওকে। তবুও সংস্কারকাজ শুরু করা চাই ওর। তাই বিকেল গরাতেই বেরিয়ে পরেছে ও। রাকীন যখন পুকুরের আরেকপাশ দেখছিলো তখনই খই এসে গাছে উঠতে শুরু করে। পাশ ফিরে খইয়ের বিনুনিটাই দেখেছে ও। পরে যাবে এমন ভয়ে মেয়েটাকে থামিয়ে দিতে গিয়ে বুঝতে পারে,ওটা খই। তাই আরো ভালোমতোন বিনুনি টেনে ধরেছে ওর। খইয়ের কথায় রাকীন গাছের দিকে ঘুরে দাড়ালো। খানিকটা গম্ভীরভাবে বললো,
-গায়ে শাড়ী পেচিয়ে গাছে ওঠে কেউ?
-আমি উডি! বিনি ছাড়েন!
-পরে হাত পা ভাঙুক! তখন বুঝবে! গেছো মেয়ে কোথাকার!
বিরক্তি নিয়ে বললো রাকীন। খই বিনুনি টানছিলোই। রাকীন একপা এগিয়ে আঙুল-বিনুনির প্যাঁচ খুলতে যাবে,খইয়ের আরেকহাত আচমকাই ডাল থেকে ফসকে গেছে। মাটিতে পরবে সে ভয়ে চোখমুখ খিচে বন্ধ করে নিলো খই। পরপরই অনুভব হলো,দুহাতে কারো গলা জরিয়ে আছে ও। মাটিতে পরার আগেই কেউ একজন পাজাকোলে করে শুন্যে ধরে রেখেছে ওকে। বাচিয়ে নিয়েছে পরে যাওয়া থেকে।
রাকীনের কয়েকমুহুর্তের স্তব্ধতা। খইয়ের দিকে কয়েকমুহুর্তের নিস্পলক স্থির দৃষ্টি। দুহাতের বাহুডোরে থাকা শ্যামাঙ্গী, ভয়ে খিচে বন্ধ করে রাখা তার দু চোখ, কামড়ে ধরে রাখা নিচের ঠোট, সর্বশক্তিতে ওর গলা জরিয়ে রাখা হাতজোড়া যেনো আটকে দিয়েছে ওকে। শ্বাস হঠাৎই দ্রুত চলতে লাগলো ওর। একটা শুকনো ঢোক গিলে তাকিয়ে রইলো ও খইয়ের দিকে। যেনো অচেনা মেয়েটায় চেনা কোনো নেশা মিশে আছে।
খই পিটপিট করে চোখ মেললো। রাকীনের অদ্ভুত চাওনিতে কপাল কুচকে এলো ওর। রাতের আবছা আলোয় দেখা মানুষটাকে শেষ বিকেলের আলোতে আরো মোহনীয় দেখাচ্ছে যেনো। পরিহিত আকাশী রঙের শার্টের বুকের দু দুটো বোতাম খোলা। গরমের জন্যই হয়তো ছেড়ে দিয়েছে তাদেরকে। খই রাকীনের কাধে নখের আঁচড় বসাতেই ধ্যান ভাঙে রাকীনের। দু দন্ডের এমন ঘটনায় অস্বস্তিতে পরে গেছে ও। তৎক্ষনাৎ ও ছেড়ে দিলো খইকে। জ্বিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে,গলা ঝেরে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। এভাবে মেয়েটাকে কোলে ধরে রাখা মোটেও উচিত হয়নি ওর। পরপরই মনে পরলো খইকে কোল থেকে রীতিমতো ফেলে দিয়েছে ও। নিচে তাকিয়ে দেখে কোমড় ধরে মাটিতে পরে আছে খই। রাকীন চটজলদি পরিস্থিতি সামাল দিতে বললো,
-আব্…দ্ দেখেছো,এভাবে গাছে চড়তে গিয়ে পিছলে পরে…
-কাইল আপনার লাগি ওই চেরাগ পাইনাই। আইজ আপনার লাগি গাব পাড়তে পারলাম না। আমার সব কাজের পথের কাটা আপনে! আস্ত একটা কাটাবাহার! আল্লা গো! গাবগাছ থাইকা পরলেও মনে হয় মাজাটা বাচতো আমার! ওহন মনে হইতাছে আস্ত একটা তালগাছ থাইকা পরছি! ওমা গো!
-কি? আমি কাটাবাহার? আমি তালগাছ?
-খালি তাই না! আপনে একটা কালা! কানে কম শুনেন। তারসাথে কানাও। চোখেও কম দেখেন আপনে। বদুকাকার চেয়েও মনে হয় বয়স বেশি আপনের। গায়ে জোর নাই। ফালায়া দিছেন আমারে!
রাকীন ঠিক কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে,ভেবে পেলো না। খই উঠে দাড়িয়ে গায়ের ময়লা ঝাড়তে লাগলো। তারপর রাকীনের দিকে তীক্ষ্মদৃষ্টি ছুড়ে চলে গেলো রাগে গজগজ করতে করতে। হতভম্ব হয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো রাকীন। খই আড়াল হলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নিলো গোটা বিষয়টা আর কারো নজরে পরেছে কিনা। কাউকে দেখলো না তেমন। দু তিনটে গরু চড়ানো ছেলেরা সড়কের ওপারে দৌড়াদৌড়ি করছে শুধু। স্বস্তির শ্বাস বেরোলো। সঙ্গে কাধ বেয়ে ঘাম গরিয়ে পরলো রাকীনের। তারসাথে কাধে জ্বালা অনুভব করলো ও। হাত তুলে কাধ স্পর্শ করে বুঝলো,খইয়ের নখের আঁচড়ে কিঞ্চিত কেটে গেছে সেদিকটা। তাতেই ঘাম লেগে জ্বালাপোড়া করছে। নিরবে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে নিজের সামনে তুলে ধরলো রাকীন। খইয়ের দেওয়া এটুকো আঘাত ওর পুরোনো ক্ষতে জাগিয়ে দিয়েছে। মোবাইলের স্ক্রিনে নিজের প্রতিবিম্বে গলার কাছের ছোট ক্ষতের দাগটা দেখে সেখানটায় স্পর্শ করলো একবার। নিজেকে সামলাতে কষ্ট হচ্ছিলো ওর। একবর্ন উচ্চারন না করে শুধু নিজেই নিজেকে শুনিয়ে দিলো,
-তোর স্মৃতি হিসেবে আমার কাছে অনেককিছু রয়ে গেছে খেয়া। সেগুলো আজীবন রয়ে যাবে। আর সাথে সেগুলোতে তুইও রয়ে যাবি। আজীবন। যদি স্মৃতি হয়েই থাকতে চাস,আমি বলবো, আমার অনুকুলে কিছুই নেই। তবে তোর স্মৃতিকে আগলে তোকে সত্যিসত্যি ফিরে পাবার লোভটা সম্পুর্নই আমার আয়ত্ত্বে। আর সে লোভ আমি আজীবন করে যাবো। আমার সে ভ্রম ভাঙার জন্য হলেও,ফিরতে তো তোকে হবেই খেয়া! ফিরতে তোকে হবেই!
•
মুক্তমঞ্চে আজ উন্মুক্ত সংগীতসভা বসেছে। ছোট,বড়,বাউল,ব্যান্ড সবরকমের গায়কের সুরে মুখরিত মুক্তমঞ্চ এলাকা। শ্রোতাসারির শেষ প্রান্তের এককোনে মাস্ক পরে দাড়িয়ে এ পর্যন্ত বারোটার মতো গান শুনে নিয়েছে ইচ্ছে। এদের মাঝে সাতজন খুবই ভালো গায়। মিউজিক একাডেমি থেকে আসার সময় দশটার মতো টোকেন নিয়ে এসেছে ও। মুক্তমঞ্চের ভালো গাইয়েদের গান বের করার সুযোগ করে দেবে বলে। একাডেমি জানে ওর বাছাই কেমন হবে। তাই অনুমতিও দিয়েছে। গানগুলো শুনে গায়ক গায়িকা নিজেনিজেই নির্বাচন করে নিলো ইচ্ছে। একজন অর্গানাইজারকে দিয়ে টোকেনগুলো দিয়েও দিয়েছে। এরা সরাসরি রেকোর্ডিংয়ের সুযোগ পাবে,এমনটাই সুপারিশ করা টোকেনে।
শেষেরজনের গান শুনে গিটারের ব্যাগ কাধে নিয়ে মাস্ক পরিহিত অবস্থাতে মঞ্চে উঠলো ইচ্ছে। প্রথমে সেভাবে কেউ গুরুত্ব দিলো না। ইচ্ছে মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে গিটার নামালো। স্পিকারে বললো,
-ওপেন কনসার্ট! তবুও গান শুরুর আগে আপনাদের অনুমতি চাইছি। মে আই?
সেরকম সারা নেই দর্শকশ্রোতায়। মাস্কের আড়ালে ইচ্ছে হাসলো। কথা বলে নিলো সঙ্গীতযন্ত্র বাজানোর দায়িত্বে থাকা সবার সাথে। তারাও সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি ওকে। ইচ্ছে ভাবলো,একেবারে গান শুরুর সময়ই মাস্ক খুলবে ও। গিটারটা নিয়ে সবে সুর তুলতে যাবে,টের পেলো,ওর গিটারের তারগুলোর একটা ছেড়া। হতাশার শ্বাস ছাড়লো ইচ্ছে। এজন্যই বুঝি আজ নাফিজা বেগম কোনোরকম বাধা দেয়নি ওকে কনসার্টে আসা নিয়ে। কোনো ঝামেলা করেনি আজ। গিটারটা আগে থেকেই নষ্ট করে রেখে দিয়েছিলো সে। ইচ্ছের গান গাওয়ার উদ্যমে শীতলতা চলে আসলো। ঠিক করলো,নিজে গিটার না বাজিয়ে,বাকিদের ক্যারাওকেতেই গান গাইবে আজ ও। মাস্কটা খুলে ফেললো আস্তেকরে। স্পিকারে বললো,
-আজকে ইচ্ছে গিটার ছাড়াই গাইবে।
ও মাস্ক খোলাতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পরেছে পুরো জায়গাটায়। ইচ্ছের নামে সবাই চেচাতে শুরু করে দিয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এমন অবাক আগমন হয়তো ওর দ্বারাই সম্ভব। সবাই চিৎকার করে বলছে, “আমরা তোমার গান চাই ইচ্ছে। গিটার তো তোমার স্বরের সহচরী মাত্র” এমন আরো অনেককিছু। ইচ্ছের চোখ ভরে উঠলো আশপাশের এতো ভালোবাসা দেখে। বাইরের দেশে তো সবাই ওর স্বর কম,ওর গিটারের সুরকেই বেশি প্রাধান্য দিতো। আর এখানে ওর জন্মভুমি ওকে চায়,ওর স্বরকে চায়। ওকে ভালোবাসে সব। ইচ্ছে ব্যান্ডের লোকজনকে শুরু করতে বলবে বলে পাশ ফিরছিলো। কিন্তু ওর চোখ আটকে গেলো স্টেজের ডানপাশে বড়বড় অক্ষরে “সরি” লেখাটায়।
একটা মেয়ে হাতে “সরি” শব্দটা ধরে দাড়িয়ে আছে। আর ওর পেছনে আরেক অনাকাঙ্ক্ষিত চেহারা। ইচ্ছের রাগের আরেক নাম,সাদমান ইনাব প্রাপ্ত। বহুকষ্টে নিজেকে সংবরন করেছে প্রাপ্ত আজ। এর আগে কোনো কাজের জন্য কোনোদিন অনুতপ্ত হতে হয়নি ওকে। কোনোদিন সরি বলতে হয়নি। কিন্তু তা আজ খাটলো না। ইচ্ছের মায়ের দেওয়া গিটারটা ভাঙার জন্য তীব্র গ্লানি হচ্ছিলো ওর। তাই সরি বলতে চলে এসেছে। মেয়েটা স্টেজের দিকে এগিয়ে আসলো। নিচে থেকেই ইচ্ছেকে বললো,
-সেদিন আমার জন্য তোমার গিটার ভেঙেছিলো আপু। সরি।
ইচ্ছে চুপ করে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। এরমাঝে প্রাপ্ত এগোলো। চোয়াল শক্ত রেখে হাতে থাকা ইচ্ছের মায়ের দেওয়া গিটারটার অনুরুপ গিটারটা স্টেজে তুলে দিলো ও। বেখেয়ালিভাবে বললো,
-সেদিন আমার হাতেই তোমার মায়ের গিটারটা ভেঙেছিলো। সরি।
ইচ্ছে অবাক হলো। গিটারটা ওর মায়ের দেওয়া,এটা তো কেউই জানতো না। তবে প্রাপ্তর ভঙিমায় ওর অপরাধবোধটা নেই এতোটুকোও। যেনো ও কারো চাপে পরে সরি বলতে এসেছে। ইচ্ছে সরু চোখে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। যেটুকো জেনেছে,তাতে প্রাপ্তকে চাপে পরে সরি বলার মতো ছেলে বলে মনে হয়নি ওর। প্রাপ্তর বর্তমান ভাবটায় পুরোপুরি প্রকাশ পায়,এ ছেলে ভাঙবে তবু মচকাবে না। গিটারটা দেখে আর বিশেষ কিছু বললো না ইচ্ছে। মুচকি হেসে মেয়েটাকে বললো,
-ইটস্ ওকে। সরি বলতে হবে না তোমাকে। তোমার উপর এতোটুকোও রাগ নেই আমার।
-তাহলে প্রাপ্ত ভাইয়ার উপর রাগ করেছো?
ইচ্ছে আবারো তাকালো প্রাপ্তর দিকে। সে ছেলে এখনো সেই ভাবেই আছে,অপরাধবোধ নেই তার। এদিকে দর্শকও অধৈর্য হয়ে পরছে। ইচ্ছে দ্রুত মাথা দুলিয়ে না বুঝালো। প্রাপ্তর ওপর রাগ নেই ওর। মেয়েটা উৎফুল্লস্বরে বললো,
-তাই? তাহলে এই গিটারে গান গাও আজকে?
ইচ্ছে আগে দর্শকসমাজে চোখ বুলালো। সবাই কতো আগ্রহে অপেক্ষা করছে ওর গানের জন্য। প্রাপ্তর মুডি চেহারার জন্য,এদের সবার চাওয়াকে কেনো ফেলনা করে দেবে ও? ঠিক করলো,ওই বাকামুখোর দিকে ও আর তাকাবেই না! সুন্দর একটা হাসি উপহার দিলো ও মেয়েটাকে। তারপর প্রাপ্তর দেওয়া গিটারটা নিয়ে সুর তুলে গাইতে শুরু করলো,
“মুশকিলে পরে গেলো মনটা
পাঁচিলে চড়ে গেলো চাঁদ,
ছিলো নিজের কথা না ভেবে
হুম…খুশিগুলো দিয়েছিলো বাদ।
চুপিচুপি সে,খোলা আকাশে
আজ খেলতে যায়,জানি গান শোনায়
আঁকাবাকা পথ,ভাঙা মনোরথ
তবু গরিয়ে যায়,জানি পথ হারায়।
কিছু ঠিক কিছু ভুল,ছুয়ে সন্ধ্যে আঙুল
বলেছে বাড়ি ফিরে আয়…
কিছু দিন কিছু রাত,কাধে রেখেছে হাত
ডেকেছে বাড়ি ফিরে আয়…”
গান গাইতে গাইতে পুরো শ্রোতাজনতাকে দেখে নিলো ইচ্ছে। এইতো! ওর দেশ! ওর আপনজন! এসব ছেড়ে কি ভেবে ভিনদেশে পরে ছিলো ও? না চাইতেও গানের মাঝে গিটারে সুর দিতে দিতে হাতের ডানপাশে কয়েকবার তাকালো ও। মিষ্টিঘরের আরো কিছু বাচ্চাদেরও নিয়ে এসেছে প্রাপ্ত। ওরা হাতেতালি দিচ্ছে আর নাচছে। বোঝাই যাচ্ছে ইচ্ছের গান বেশ উপভোগ করছে ওরা। আর ওদের ঠিক পেছনে দাড়িয়ে প্যান্টের পকেটে দুহাত গুজে দাড়িয়ে মুগ্ধচোখে বাচ্চাগুলোকে আনন্দ করতে দেখছে প্রাপ্ত। ওর ঠোটেও হাসি। নজরকারা হাসি যাকে বলে। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই ইচ্ছের চোখ সে হাসিতে আটকালো। এবার ও প্রাপ্তর দিকে তাকিয়ে থেকে গাইলো,
“করপরতা টিকিটে আমি
উঠে পরেছি ঝুলন্ত ট্রেনে
নেমে পরেছি ঘুমের স্টেশনে,মন…
বেচে পরতে থাকার মানে
পাখিদের বাসারা জানে
ফিরে আসা তারই তো টানে,মন…
চোখেমুখে পরলে চাদর,
মাঝেমাঝে লাগছে ভালো
তোর আমার থেকে বেশি সেকথা জানে মন…
চুপচুপি সে…জানি পথ হারায়
কিছু ঠিক কিছু ভুল…বাড়ি ফিরে আয়! ”
গান শেষ হতেই আরো বেশি হুল্লোড়ে মেতে উঠলো বাচ্চাগুলো। স্টেজ থেকে প্রাপ্তর ঠোটের কোনের প্রসারিত হাসিটাও ঠিক চোখে পরলো ইচ্ছের। ছাইরঙা শার্টের গুটোনো হাতায় বলিষ্ঠদেহী মানুষটাকে ঘিরে চারপাশে অতীব স্নিগ্ধতা জুড়ে এসেছে যেনো। ইচ্ছে চোখ ফেরালো না। ওর কাছে আজ প্রথমবারের মতো কোনো পুরুষের হাসি আজ একটু বেশিই আকর্ষক। বেশিই অমায়িক! কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলোই না! তবে কেনো হচ্ছে এমন? অকারনে? নাকি অপ্রতিরোধ্য কারনে? কোনটা?
#চলবে…
[ গল্প সম্পর্কিত আড্ডা দিতে জয়েন করুন মিথিমহল। গ্রুপ লিংকঃ
https://www.facebook.com/groups/233416685257163/?ref=share_group_link ]