প্রেমনোঙর ফেলে পর্ব-১৯

0
631

#প্রেমনোঙর_ফেলে
#লেখনীতে: মিথিলা মাশরেকা

১৯.

-আজ সকালে খইয়ের মা মারা গেছে। মেয়েটা অনাথ।

বাবার মুখে কথাটা শুনে বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো প্রাপ্ত পিয়ালী। ডাইনিং টেবিলে ছেলেমেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছিলেন সাদিক সাহেব। খই নিজের ঘরেই ছিলো। সাদিক সাহেবকে ওরা কেউই কিছু জিজ্ঞাসা করেনি খইকে নিয়ে। জানে সময় হলেই ওদের সবটা বলবেন সাদিক সাহেব। চুপচাপ বাবার হাতে খাবার খাচ্ছিলো দুজনে। হঠাৎই বাবার এমন কথা শুনে থেমে রইলো দু ভাইবোন। পিয়ালী বললো,

-কি বলছো তুমি বাবা? আজই ওর মা…?

সাদিক সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। খাবার মাখাতে মাখাতে বললেন,

-হ্যাঁ। মেয়েটার আপনজন বলতে ওর মা-ই সব ছিলো। বাবা নাকি মারা গেছে অনেক আগেই। মৃত্যুর আগে ওর মা বলে গেছে, আত্মীয়স্বজন নেই ওদের কোনো।

-ওমন মিষ্টি মেয়ে কোথায় কিভাবে থাকবে, কে কিভাবে রাখবে, বিষয়গুলো বেশ ভাবাচ্ছিলো। আমার তখন আর কিছুই মাথায় আসেনি প্রাপ্ত। গ্রামপঞ্চায়েতের অনুমতি নিয়ে তাই ওকে এখানেই নিয়ে এসেছি।

প্রাপ্ত নিচদিক তাকিয়ে ভাবছিলো কিছু। বাবার কাছে নিজের নাম শুনে খানিকটা ধ্যানভাঙা চাওনিতে চোখ তুলে তাকালো ও।‌ সাদিক সাহেব ওরই দিকে তাকিয়ে। প্রাপ্ত আশ্বস্তের হাসি ঝুলিয়ে বললো,

-ডোন্ট ওয়ারী বাবা। ও খুব ভালো থাকবে এখানে।

-আর ওকে ভালো রাখার সে দায়িত্বটা আমাদের। তাইনা প্রাপ্ত?

মৃদ্যু হেসে মাথা নাড়লো প্রাপ্ত। দু সেকেন্ড নিরবতার পর পিয়ালী টুপ করে বাবার হাতে থাকা লোকমা নিজের মুখে পুরে নিলো। যদিও ওটা প্রাপ্তর দিকে ছিলো। প্রাপ্ত ওর চুল টেনে দিলো জোরেসোরে। দুজনকে হাসিখুশি দেখে খাওয়ানো শেষ করলেন সাদিক সাহেব। খাওয়া শেষে চলে গেলেন নিজের ঘরে। পিয়ালীও পড়তে বসবে বলে ঘরে চলে গেলো। কি ভেবে প্রাপ্ত খইয়ের ঘরের দিকে এগোলো। দরজায় দাড়িয়ে দেখে খই হাটু জরিয়ে মেঝেতে বসে আছে। বড়বড় খোলা চুলগুলো পিঠ-কোমড় ছাপিয়ে, মেঝেতে পরে আছে। প্রথমে প্রাপ্ত ভেবেছিলো হয়তো খইয়ের চুল তেমন বড় না। এবার বুঝলো, সেদিন ভাজ দেওয়া ছিলো ওর‌ বিনুনি।‌ দরজা থেকে কয়েকপা এগোতেই প্রাপ্ত টের পেলো খই ফোপাচ্ছে। কাদছে ও। প্রাপ্তর কি হলো, আর এগোলো না ও। পিছিয়ে দরজায় চলে এলো আবারো।

নিজেকে পেছোতে দেখে চরমমাত্রায় অবাক হলো প্রাপ্ত। আজ কি তবে ওর সাহস কম পরে গেলো কোনোভাবে? যেনো ও চাইছে না খইকে সহমর্মিতা জানাতে। বারবার মনে হচ্ছে মা হারানোর যন্ত্রনায় তো ইচ্ছেকেও কাদতে দেখেছে ও। সেদিন তো ইচ্ছেকেও‌ সমবেদনা জানাতে পারে নি। আজ কি করে খইকে শান্তনা দেবে ও? ইচ্ছের ক্ষেত্রে তবে অন্যায় হবে না? আকাশকুসুম ভাবনার শেষে নিজের মাথার চুলগুলো উল্টে ধরলো প্রাপ্ত। এখানেও ইচ্ছে! কেনো? এখানে ইচ্ছের তো থাকার কথা নয়! কোথাওই থাকার কথা নয় ওর! ও তো ওর চিন্তার বিপরীর সত্ত্বা! তবে ও কেনো জুড়ে যাবে ওর চিন্তায়? কেনো? একরাশ অস্থিরতা নিয়ে এবার বাসা থেকেই বেরিয়ে এলো প্রাপ্ত। বাইকটা নিয়ে অজানা কোনো গন্তব্যে এগোবে বলে। বাসায় থাকলে এই অস্থিরতা বাড়বে বই কমবে না। মুদি দোকান থেকে ওকে বাইকে চড়তে দেখলো মাহীম। দৌড় লাগালো তৎক্ষনাৎ। দুর থেকে ডাক লাগিয়ে বললো,

-প্রাপ্ত? আমিও যাবো! বাইক থামা! প্রাপ্ত?

প্রাপ্ত পেছন ফিরে দৌড়াতে দেখলো ওকে। না চাইতেও বাইক থামালো ও। মাহীম বাইকের কাছে এসে হাটুতে হাত রেখে হাপাতে লাগলো। প্রাপ্ত বললো,

-কোথায় যাবি?

-তুই যেখানে যাবি।

দাত কেলিয়ে বললো মাহীম। প্রাপ্ত কিছু বললো না আর। মাহীম ঝটপট উঠে বসলো ব্যাকসিটে। একটু গা ছাড়াভাবেই বসেছিলো ও। প্রাপ্ত বাইক ছুটাতেই প্রায় পরে যাওয়া অবস্থা ওর। কোনোমতে সামলালো নিজেকে। বাইকের একটু বেশিই গতি দেখে বললো,

-কিরে? এতো জোরে বাইক কেনো চালাচ্ছিস?

-কিরে? হয়েছে কি তোর?

-ক্ষেপেছিস কেনো প্রাপ্ত?

প্রাপ্ত আরো জোরে চালাতে লাগলো বাইকটা। মাহীম কিছুই বুঝে উঠলো না। ওর কথায় আরো যেনো সমহারে গতি বাড়লো বাইকের। তাই সিদ্ধান্ত নিলো কথাই বলবে না আর। মনেমনে নিজেকে গালি দিতে লাগলো যেচে প্রাপ্তর বাইকে ওঠা নিয়ে। মনপ্রানের বিদ্ধস্ততা নিয়ে বাইক চালাতে গিয়ে প্রাপ্ত এতোটাই বেখেয়ালী হয়ে পরেছিলো যে, রাস্তায় যে ট্রাফিক সিগনাল পরেছে সেটা খেয়ালই করিনি ও। রঙরুটে চলে এসেছে ট্রাফিক অমান্য করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রাপ্তর বাইককে আরেকটা বাইক ধাক্কা মেরে দিয়ে যায়। বাইকসহ প্রাপ্ত-মাহীম দুজনেই গরিয়ে পরলো রাস্তার পাশে।

প্রাপ্তরা ছিটকে পরার পরপরই একটা দ্রুতগতির ট্রাক একদম পাশ কাটিয়ে চলে যায় ওদের। কয়েকজন পথচারী এসে জড়ো হয় ওদের চারপাশে। বাইক থেকে পরে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি দুজনের কারোরই। প্রাপ্তের বা হাতের কনুই আর মাহীমের হাটুতে ছড়ে গেছে। তবে বাইকে ধাক্কা না লাগলে ট্রাকের সাথে বড়সর একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো ওদের। তাই অন্য বাইকটার প্রতি ক্ষোভ নেই কারো। প্রাপ্তর রঙরুটে আসা উচিত হয়নি, এমনটাই বলছিলো ওরা। প্রাপ্ত গায়ের ওপর থেকে বাইকটা সরিয়ে উঠে হাত ঝারলো। মাহীমকে তুলে দাড় করিয়ে বললো,

-ঠিক আছিস তুই?

-হুম। তোর কিছু হয়নি তো?

মাহীমকে মাথা নেড়ে ঠিক আছে বুঝালো প্রাপ্ত। তারপর বাইক তুলে দাড়ালো ঠিকঠাকমতো। আশপাশের কথাগুলোকে পাত্তা না দিয়ে সবে বাইকে চড়ে বসতে যাবে, প্রাপ্ত দেখলো ওদেরকে ধাক্কা মেরে যে বাইকটা গিয়েছিলো, সেটা আবারো ওদের দিকেই আসছে। হাত ঝাড়তে ঝাড়তে সরুদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ও বাইকারের দিকে। দুজন আছে। দুজনেই হেলমেট পরিহিত। কামিজ পরনের পেছনেরটা যে মেয়ে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সামনের জনকে নিয়ে কিছু আন্দাজ করার আগেই বাইকটা একদম ওর সামনে এসে থামলো। বাইক চালক বাইকে বসেবসে সুন্দরমতো বুকে হাত গুজে বললো,

-হোয়াটস্ আপ মিস্টার গ্যাংস্টার? রঙরুটে কি মনে করে?

গলার স্বর শুনেই‌ প্রাপ্তর চেনাচেনা লাগছিলো। আর এই গ্যাংস্টার সম্বোধনে আরো নিশ্চিত হয়ে গেলো ও। এই বাইকার, ইচ্ছে। পেছনে গিটারের ব্যাগ নিয়ে বসে থাকা মেয়েটা ভয়ে ভয়ে হেলমেট খুললো নিজের। সে রাকা। ওকে দেখে মাহীমও‌ বুঝে গেলো, বাইকের চালক আর কেউ নয়, স্বয়ং ইচ্ছে। সবার সামনে যে ও হেলমেট খুলবে না, সেটা বুঝলো‌ প্রাপ্ত। হাত মুঠো করে‌ দাড়িয়ে রইলো চুপ করে। ঠিক কি ঘটছে ওর সাথে? এই মেয়েটার থেকে সরে যেতে গিয়ে আরো জরিয়ে কেনো যাচ্ছে ও? নিজের উপরই রাগ হচ্ছে প্রচন্ড ওর। শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো শুধু। ওর মুঠো করা হাত দেখে হাসি পেলেও হাসলো না ইচ্ছে। গুন্ডামো আটকানোর এই ভঙিমাটার সাথে পরিচিত হয়ে গেছে ও। রাকাকে বাসা থেকে পিক করতে গিয়েছিলো। ফেরার পথে রঙরুটে ঢুকে পরা বাইকটাকে ট্রাকপেষা হওয়ার হাত থেকে বাচাতে, বাধ্য হয়েছে নিজের বাইকেই ধাক্কা লাগাতে। ঘটনার পর বুঝলো ওটা প্রাপ্তর বাইক ছিলো। মুচকি হেসে ইচ্ছে আবারো বললো,

-বললে না? রঙরুটে কেনো এসেছিলে? মারতে তো নয়।‌ দেন? মরতে?

-দ্ দেখ ইচ্…

কাপাকাপা‌ গলায় কিছু বলতে যাচ্ছিলো রাকা। ইচ্ছে ওকে বলার সুযোগ দিলো না। প্রাপ্তকে উদ্দেশ্য করে আফসোসের স্বরে বললো,

-শিট! যদি তুমি সত্যিই মরতে এসে থাকো, আমি তো তোমাকে মরতে দিলাম না! ইশ্! কত্তোবড় ভুল করে ফেললাম। অবশ্য ভুল করলে‌ আমি সরি বলতে জানি। কেউ সরি এক্সেপ্ট না করলে, সেটাকেও এক্সেপ্ট করতে পারি। নট লাইক ইউ! ইউ নো!

প্রাপ্তর চেহারায় রাগ ফুটে উঠলো আরো। হেলমেটের আড়ালে ইচ্ছে ঠোট টিপে হাসলো। তারপর প্রাপ্তর দিকে আরেকটু মুখ এগিয়ে বললো,

-আর যদি মরতে না এসে থাকো, দেন তোমাকে আজ আমি বাচিয়ে দিয়ে গেলাম মিস্টার গ্যাংস্টার। তবে এর জন্য কিন্তু তোমার কাছ থেকে একদমই থ্যাংকস্ এক্সপেক্ট করছি না! ট্রাস্ট মি!

ওর কথা শুনে রীতিমতো ভয়ে আছে রাকা, মাহীম। ইচ্ছে যেনো ইচ্ছে করেই উ’স্কা’চ্ছে প্রাপ্তকে। আর সেটার পরিণতি খুব একটা ভালো হবে না বলে দুজনেরই ভয়। কথাটা বলে ইচ্ছে আগের মতোই ঠোট টিপে হাসতে হাসতে প্রাপ্তর প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় রইলো। ভেবেছিলো হয়তো পাব্লিক প্লেসেই ওকে বলবে কিছু একটা। ওকে অবাক করে দিয়ে আচমকাই ঠা’স করে পাশের একটা ছেলের গালে চ’ড় লাগিয়ে দিলো প্রাপ্ত। ইচ্ছে, রাকা, মাহীম তিনজনসহ উপস্থিত বাকিরা সবাইই চমকে উঠেছে। মাহীম ওর গালে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে বিরবিরিয়ে বললো,

-আলহামদুলিল্লাহ আমার গালটা বেচে গেছে।

সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ছেলেটা ছুট লাগাতে যাচ্ছিলো। প্রাপ্ত ওর কলার ধরে ফেলেছে। ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে, দাতে দাত চেপে বললো,

-ভীড়ের সুযোগ নেওয়া উচিত হবে?

ইচ্ছে কি বলবে, কিছুই বুঝে উঠলো না। ভীড়ের ঠিক কেমন সুযোগ নেওয়ার কথা বুঝালো এই‌ লোকটা? প্রাপ্ত ছেলেটার দিকে ফিরলো এবার। শান্তভাবে বললো,

-যেই দেখলি লোকজন জড়ো হয়েছে, ভীড়ের সুযোগ নিয়ে নিজের পকেট ভারী করতে লেগে পরলি তাইনা? তো এখানকার কার মানিব্যাগটা মে’রে দিলি শুনি? কতো আছে ওটাতে?

সবাই বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো প্রাপ্তর দিকে। তারপর নিজেদের পকেট চেইক করতে লাগলো। ছেলেটা নিজেও অবাক। একজন বললো তার মানিব্যাগ নেই। প্রাপ্ত ইশারা করে মানিব্যাগ বের করতে বলতেই তৎক্ষনাৎ নিজের পকেট থেকে একটা মানিব্যাগ বের করে সামনে ধরলো ও। প্রাপ্তর সামনে হাতজোড় করে বললো,

-ভ্ ভুল হয়ে গেছে ভাই! ভুল হয়ে গেছে!

প্রাপ্ত লোকগুলোর হাতে ছেড়ে দিলো ছেলেটাকে। সবাই ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো। ইচ্ছে শুধু দেখলো সবটা। প্রাপ্ত এগিয়ে এসে হুট করে ইচ্ছের গলায় প্যাঁচানো স্কার্ফ ধরলো। বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকালো ইচ্ছে। প্রাপ্ত বেপরোয়াভাবে ওর স্কার্ফের একাংশ একটানে ছিড়ে ফেললো। আঁতকে উঠলো রাকা, মাহীম। প্রাপ্ত আগের মতোই গা ছাড়া ভাবে স্কার্ফের টুকরোটা নিজের কনুইয়ের কাটা জায়গায় প্যাঁচালো। তারপর ইচ্ছের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে শান্তশিষ্টভাবে বললো,

-থ্যাংকস্।

ইচ্ছে যেনো থমকে আছে। নির্বিকারচিত্ত্বে নিজের বাইকে চড়ে বসলো প্রাপ্ত। মাহীম ওর প্যান্টের হাটুর দিকে ছিড়ে যাওয়া অংশটার দিকে কাদোকাদোভাবে তাকালো একপলক। আরেকপলক তাকালো রাকার ওড়নাটার দিকে। ‘আই উইশ, প্রাপ্তর মতো করে থ্যাংকস্ বলতে পারতাম’ মনেমনে এমন আফসোসপর্ব শেষ করে চড়ে বসলো ব্যাকসিটে। প্রাপ্ত বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। ওরা চোখের আড়াল হতেই গলার ছেড়া স্কার্ফটা আস্তেধীরে হাতে তুলে ধরলো ইচ্ছে। নিশব্দে হেসে দিলো হঠাৎই। ঠোটে মুচকি হাসিটা রেখে বাইকের আয়নায় রাস্তার দিকে দৃষ্টিস্থির করে বললো,

-হি ইজ সামথিং এলস্। স্ট্রেইন্জ একটা লোক।

-অদ্ভুত না ইচ্ছে। যখন সে তোর ঠোটে হাসির কারন, হি ইজ স্পেশাল ইচ্ছে! ভেরি স্পেশাল!

রাকার কথায় কিঞ্চিত চমকে উঠলো ইচ্ছে। হেলমেটের আড়ালের হাসিটা কি করে দেখলো ও, কে জানে! কিন্তু ওর কথাটা সত্যিই কি অযৌক্তিক? প্রাপ্ত কি সত্যিই ওর হাসির কারন নয়? নিজেকে প্রশ্ন করে থমকে গেলো ইচ্ছে। এ প্রশ্নের উত্তর ওর অনুকুলে নয়। তাকে বরং উপেক্ষা করাই শ্রেয়!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here