#প্রেমনোঙর_ফেলে
#লেখনীতে-মিথিলা মাশরেকা
#পর্ব-৯
ডাইনিং টেবিলের সামনে,এক চেয়ারে বসে আরেক চেয়ারে দুপা তুলে দিয়ে বসে আছে প্রাপ্ত। টেবিলে ডানহাতের কনুই ঠেকিয়ে একধ্যানে দরজার কাছে থাকা ফুলদানিটার দিকে তাকিয়ে আছে ও। মোটামুটি রাগী দৃষ্টিতে ভস্ম করে দিচ্ছে ওই কৃত্রিম ফুলগুলোকে যেনো। হাত জ্বলছে প্রাপ্তর। ডানহাতে দু জায়গায় কেটে গেছে,বা হাতের কবজির দিকে ছেকা লেগে কালচে দাগ পরে গেছে একদম। রান্নাঘরে গিয়ে এই প্রথমবার এভাবে লেগেছে ওর। অন্যমনস্ক থাকার জন্য। টেবিলে রাখা কয়েকপদের রান্না ওর নিজহাতে করা। সাজিয়েছেও ও নিজেই। মা মারা যাবার পর রান্নাটা সাদিক সাহেবই সামলেছেন। তবে প্রাপ্ত নিজেও শিখে গেছে বাবার দেখাদেখি। পিয়ালী এসবে ছিলো না কোনোদিনই। থাকতে দেয়নি প্রাপ্ত। সাদিক সাহেবেরও ঘোর বারন! তার অনুপস্থিতিতে তাই রান্নাঘরে প্রাপ্তই ঢুকেছিলো। কিন্তু মনের মাঝে চলা অস্থিরতার জন্য নিজের শরীরেও ক্ষত বসিয়ে নিয়েছে। পিয়ালী পড়া শেষ করে এসে চেয়ারে বসে গেলো। উপুর করে রাখা প্লেট সোজা করতে করতে বললো,
-কি রান্না করেছিস ভাইয়া? খুব খিদে পেয়েছে রে!
-পাবদা মাছ,গোশ,শাঁক। টমেটোর চাশনিও আছে দেখ।
প্রাপ্ত শান্তস্বরে বললো। পিয়ালী ভাত বাড়তে গিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকালো। প্লেট না উল্টে ওভাবেই বসে আছে সে। মাথা নেড়ে একটা হতাশার শ্বাস ফেলে,পিয়ালী নিজেই প্রাপ্তর সামনের প্লেটটা সোজা করে দিলো। ভাত বেড়ে দিতে দিতে বললো,
-এমন কেনো তুই বলতো ভাইয়া? এমন বাচ্চাদের মতো কেনো করিস বলতো? বাবা বাসায় না থাকলে প্রতিবার এইরকম সেন্টি খেয়ে বসে থাকিস। তোর জন্যই বাবা কোথাও যেতে চায়না! এমন করলে চলে? বড় হয়েছিস না তুই?
প্রাপ্তর দৃষ্টি নিমিয়ে এলো। একপলক বোনের দিকে তাকিয়ে পরপরই এদিকওদিক চোখ সরিয়ে নিজের বেখেয়ালীপনার এই অভূতপুর্ব নজিরকে অনুভব করতে লাগলো ও। পিয়ালী যা বললো,এমনটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু তা তো নয় আজ! আজ ওর অন্যমনস্ক থাকার কারন ওর বাবার অনুপস্থিতি নয়! এর কারন ওর কল্পকন্যাও নয়! সে জায়গাটা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অন্যকেউ নিজের করে নিয়েছে। ওর অগোচরেই ওর ভাবনায় অন্যকিছুই জুড়ে বসেছে আজ। রেস্ট্রুরেন্ট থেকে ফেরার পর একমুহুর্তের জন্যও ইচ্ছের নামকে মাথা থেকে সরাতে পারে নি ও। একটা গিটারের জন্য মেয়েটা কেনো এতোটা হাইপার,এই একটা প্রশ্নই ওকে পাগল করে রেখেছে এখনো অবদি। প্রাপ্ত এতোবেশি মত্ত্ব হয়ে এই একটা কথাই ভাবছিলো যে,হাতের আঘাতের কথাও ভুলে গেছে ও। পিয়ালী বললো,
-নিজেই খাবি? নাকি খাইয়ে দেবো?
টেবিলের উপর থেকে হাত নামিয়ে নিলো প্রাপ্ত। কপাল ভালো এইটা পিয়ালীর চোখে পরেনি। নিজেহাতে খেতে তো পারবে না। রুমে গিয়ে ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে নেবে না হয়! এখন কোনোমতেই এগুলো পিয়ালীর চোখে পরতে দেওয়া যাবে না। পিয়ালীর দিকে ঠিকঠাকমতো ঘুরে বসে বললো,
-দে খাইয়ে দে।
কথা না বাড়িয়ে ওকে খাওয়াতে লাগলো পিয়ালী। নিজে হাতে খাবার কমই খায় প্রাপ্ত। সাদিক সাহেব বাসায় থাকলে দুজনকেই খাইয়ে দেন। আর তার অনুপস্থিতিতে পিয়ালীই বাধ্য হয় প্রাপ্তকে খাইয়ে দিতে। দুবার ভাইয়ের মুখে খাবার তুলে দিয়ে বললো,
-আর কতোদিন এভাবে বাবা আর বোনকে জ্বালাবি বলতো?
-এক্সকিউজ মি? জ্বালাই মানে?
-তো তোর মনে হয় তুই জ্বালাস না?
পিয়ালী খাবার এগিয়ে দিচ্ছিলো প্রাপ্তর মুখের দিকে। ওর হাত ধরে ওরই মুখের দিকে ঠেলে দিয়ে বললো,
-নিজেও খা আর আমাকে অপবাদ দেওয়া বন্ধ কর!
খাবার মুখে নিলো পিয়ালী। কিন্তু বিরক্তিভাব কমার বদলে বেড়ে গেছে ওর। প্রাপ্ত বললো,
-এতো ভালো রান্না করি,এই তোর হাতে খেতে হচ্ছে বলে কোনো স্বাদ নেই খাবারে!
-তো খাচ্ছিস কেনো?
-তো তোর কি মনে হয়? আমি কষ্ট করে রান্না করবো,আর তুই বসেবসে খাবি? তা তো হচ্ছে না! তোকে খাটানোর জন্যই এভাবে খাইয়ে দিতে বলি। নইলে তোর হাতে খেতে গেলে মনে হয় আমার স্বাধের স্বাদগ্রন্থি অক্কা পেয়েছে।
-তাহলে এক কাজ কর। বিয়েটা করে নে এজ সুন এজ পসিবল। বউয়ের হাতে খেতে গেলে আর স্বাদগ্রন্থি অক্কা পাবে না দেখিস!
প্রাপ্ত নির্বিকারভাবে বললো,
-জানি সেটা আমি! তোকে বলতে হবে না! তবে এতো সহজে তোর ছুটি নেই।
-আমিও সেটা জানি! এতো সহজে ভাবি পাচ্ছি না আমি! যা এটিচিউডে বাইরে চলিস তুই! মাঝেমধ্যে তো মনে হয় কোনো গ্যাংস্টারের বোন আমি!
গ্যাংস্টার শব্দটা শুনে প্রাপ্ত কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো বোনের দিকে। চোখ সরিয়ে নিয়ে টেবিলের নিচে রাখা হাতের ক্ষতর দিকে তাকালো। এই শব্দটা একমাত্র ইচ্ছেই ওর সামনে ব্যবহার করেছে। তাও একবার না! বেশ কয়েকবার! পিয়ালী ভাইকে আবারো অন্যমনস্ক দেখে কপাল কুচকে বললো,
-কিরে? আবার কি হলো?
-আচ্ছা পিয়ালী? আবেগ তো শুধু জীবন্ত কারো প্রতি হয়,তাইনা? কোনো প্রানহীন জিনিস কি করে কারো আবেগ হয় বলতো? এমনটা হতে পারে? এমনটা হওয়ারই বা কি কারন বলতো?
পিয়ালীর কুচকানো কপাল আরো কুচকে এলো। এতো ভারী কথা এর আগে প্রাপ্তর মুখে শুনেছে বলে মনে পরে না ওর। প্রাপ্ত অন্য কোনো দুনিয়ায় হারিয়ে আছে,এটা বুঝলো ও। নিজের ক্ষুদ্র জ্ঞানকে বারদুয়েক ধাক্কা মেরে উত্তরে বললো,
-হয়তো প্রানহীন জিনিসটা জীবন্ত কারো সাথে সম্পর্কিত। তাই জীবন্ত মানুষটার সাথে ওই প্রানহীন জিনিসটাও আবেগ হয়ে গেছে।
প্রাপ্ত তৎক্ষনাৎ ওর দিকে তাকালো। কিছুটা চমকে উঠেছে পিয়ালী। ভ্রু নাচিয়ে ভাইকে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে। জবাব না দিয়ে উঠে দাড়ালো প্রাপ্ত। গ্লাসের পানিটা শেষ করে বোনের দিকে ফিরে বললো,
-খাওয়া শেষ কর। আমি মিষ্টিকে আসতে বলছি। পড়া শেষে ওর সাথেই ঘুমিয়ে যাস। আসতে দেরি হবে।
রুমে গিয়ে পরনে থাকা টিশার্টের উপরে একটা শার্ট পরে নিলো প্রাপ্ত। বোতাম লাগালো না একটাও। দুহাতা ফোল্ড করে কনুই অবদি রেখে,বাইকের চাবিটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো ও। কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না পিয়ালী। তবে ভাইয়ের স্বভাব বেশ ভালোমতোই জানে ও। বাসার সামনের রোডের ওপার থেকে মিষ্টির আসতে দুমিনিটও লাগবে না। নিজের মতো করে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো ও।
•
রাত ২.৪৫। কিচেন ড্রয়িংরুমের মাঝামাঝি কাউচে বসে ইচ্ছে বেশ মজা নিয়ে কাপ নুডুলস্ খাচ্ছে। বাসায় ফেরা অবদি যে বাসার খাবার থাকবে না,নাফিজা বেগম রাখবেন না,এটা বেশ ভালোমতোই জানে ও। তাই কিচেনের সবচেয়ে আপন জায়গায় কয়েকবক্স কাপ নুডুলস্ এনে রেখেছে আগেই। বেশিরভাগ রাতেই না খেয়েই ঘুমিয়ে পরে ও। প্রোগ্রাম,পার্টি এসবের তাগাদায় মাসে এক দুইবার বাসায় রাতে খাওয়া হয় হয়তো। তখন নিজ হাতে পানি গরম করে কাপ নুডুলস্ খায়। রান্নাবান্নার দক্ষতা এই অবদিই ওর। আর এতে নিজেকে নিয়ে গর্ব করতেও ভোলে না ইচ্ছে। একদম ওর পায়ের নিচেই,ফ্লোরে একটা বিদেশী কুকুর শুয়ে। ওটা এনেছিলেন নাফিজা বেগম। নিজের মেয়েকে হারিয়ে,সৎ মেয়ের প্রতি প্রতিশোধস্পৃহা জমিয়ে, কুকুর পুষতে চেয়েছিলো সে। বেশ আদরযত্নও করতো কুকুরটাকে। নাম দিয়েছে টমি। তবে টমি আবার তার চেয়ে ইচ্ছেকেই বেশি ভালোবাসে। এজন্য ওকেও বাসাছাড়া করতে চেয়েছিলেন উনি। কিন্তু নওশাদ সাহেবের জন্য হয়ে ওঠেনি। ইচ্ছে কাটা চামচে নুডুলস্ প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে বললো,
-টমি? আর ইউ আস্লিপ? ঘুমিয়ে গেছিস? টমি?
টমি চোখ মেলে উঠে দাড়ালো। সাদা ধবধবে লোমশ শরীরটা ঝাড়া মেরে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে লেজ নাড়াতে থাকলো। ইচ্ছে মুচকি হাসলো। তারপর নিচে নেমে হাটু গেরে বসে গেলো। টমি ইচ্ছের পায়ে গা ঘষতে শুরু করে দিয়েছে। ইচ্ছে ওর গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
-এস এম তোকেও খেতে দেয়নি?
টমি হেটে গিয়ে ওর খাবারের পাত্র দেখালো। ওতে এখনো খাবার রয়ে গেছে। ইচ্ছে বুঝলো আজকে নওশাদ সাহেব হয়তো খাইয়েছে টমিকে। টমি আবারো এসে গা ঘেষলো ইচ্ছের সাথে। ইচ্ছে বললো,
-তাহলে জেগে আছিস কেনো? ঘুম আসেনি সোফায়? এখানেই বা চলে আসলি কেনো? আমাকে নামতে দেখে?
ইচ্ছের বা পায়ে থাকা কালো সুতাটা কামড়াতে লাগলো টমি। যেনো বোঝাতে চাইছে, ফর্সা পায়ে কালো রঙটা একটু বেশিই নজরকাড়া। সিড়ি দিয়ে নামার সময় ওই পা চোখে পরতেই চলে এসেছে ও। ইচ্ছে হেসে দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো ওকে। তারপর পা বাড়ালো রুমের দিকে।
রুমে এসে টমিকে ছেড়ে হেডফোন,ফোন,গিটার,একটা ছোট্ট নোটপ্যাড আর পেন্সিল হাতে নিলো। তারপর সোজা গিয়ে রাখলো বারান্দায় রাখা বিনব্যাগের সামনে। টমি
মেঝে শুকে এদিকওদিক হাটছে। ইচ্ছে আগে গিয়ে দেওয়ালে আটকানো সেই গিটারভাঙা টুকরোতে লেখা মা শব্দটাতে চুমো দিলো। আলতোভাবে ছুইয়ে দিয়ে বললো,
-লাভ ইউ মা।
দুবার জোরে ডেকে উঠলো টমি। ইচ্ছে ওর দিকে ফিরলো। এভাবে ডাকার মানে কারো উপস্থিতি অনুভব করছে টমি। কিন্তু এখানে কারো থাকার সম্ভবনা নেই। ইচ্ছে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-ডোন্ট মেক নয়েজ টমি। এস এম শুনলে সমস্যা হবে। বাবার ঘুমেও ডিস্টার্ব হবে। সো কিপ কাম। ওকে?
টমি থামলো। কিন্তু মেঝে শোকা আর পাইচারি থামালো না। ইচ্ছে বিনব্যাগে বসে কানে হেডফোন গুজে দিলো। চোখ বন্ধ করে গিটারে কিছুক্ষন এমনই টুংটাং করতে লাগলো। তারপর সুর তুলতে লাগলো নিজের মতো করে। সে সুর মিলিয়ে গাইলো,
‘ইচ্ছেনদী বড্ড বেসামাল
হুম…খেয়াহীন সে অপ্রাপ্তির খাতায়…
হৃদয়তীরে কষ্টের তরী ভিড়লো
হুম…কেউতো কড়া নাড়লো,মন মোহনায়…
অনুভবে মুড়িয়ে নাও,ভালোবাসায় ডুবে যাও
ভেসে যাওয়ার চেষ্টাও করো
সাতরঙা পাল তুলে…
নয়তো,মনগহীনে আটকে যাবে
প্রেমনোঙর ফেলে..
হুম…প্রেমনোঙর ফেলে…’
গানের পরেরটুকোর পরিবর্তে টমির জোরালো শব্দে আঁতকে উঠলো প্রাপ্ত। এতোটাই চমকে গেছে যে,জানালার তাকের উপর দেয়ালের সাথে লেপ্টে দাড়িয়ে থেকেও লাভ হলো না। ওখান থেকে সশব্দে নিচে পরে গেছে ও। আর গিয়ে পরেছে একেবারে সোজা বাগানের ইট বিছানো মাটিতে। মৃদ্যু আর্তনাত করে হাতের কনুই চেপে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো প্রাপ্ত। দাতে দাত চেপে টমিকে গালি দিতে গিয়েও দিলো না। টমি তো অবুঝ প্রানী। ও ডাক লাগিয়ে নিজের কাজ করছে মাত্র। এখানে সব দোষ ইচ্ছের। ওর জন্যই একের পর এক আঘাত সহ্য করতে হচ্ছে ওকে।
পিয়ালীর কথা শুনে সাতপাঁচ না ভেবেই বাইক ছুটিয়ে ইচ্ছের বাসায় চলে এসেছে ও। পৌছানোর পর মনে হয়েছে,এভাবে আসার কোনো মানে নেই। কিন্তু আবার এটাও ভেবেছে,এসেছে যখন,পরখ করেই যাক,এই গিটারের জন্য এতো বেশি রিয়্যাক্ট কেনো করছে ইচ্ছে। বেশ অনেকক্ষন বাসার নিচেই রাগ নিয়ে হাটাহাটি করার পর,একটা দম ছেড়ে দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকেছে প্রাপ্ত। দোতালার শুধু দুইটা ঘরই খোলা ছিলো। একটাতে পিয়ানো,তানপুরা এইসব মিউজিকাল ইনস্ট্রুমেন্ট আর মেডেল,অ্যাওয়ার্ডে ঠাসা। পরে এই ঘরে ঢুকে বুঝেছে,এটাই ইচ্ছের ঘর। ভাঙা গিটারটা কি করেছে,সেটা খুজতে ময়লার ঝুড়িতে অবদি হাত দিয়েছিলো প্রাপ্ত। কিছুই পায়নি। এরইমাঝে টমিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে যায় ইচ্ছে। পালানোর জায়গা না পেয়ে জানালায় চড়ে দাড়িয়েছিলো ও। নিচে নামলেও শব্দ হতো বলে লাফ দেয়নি। টমি ওরই উপস্থিতি টের পেয়েছিলো বলে প্রথমবার ডেকে উঠেছিলো।
ইচ্ছেকে সেই মা লেখাটাকে চুমো দিতে ঠিকই দেখলো প্রাপ্ত। বুঝতে বাকি রইলো না,ঠিক কেনো গিটারটাকে আবেগ বলেছে ইচ্ছে। অপরাধবোধটা কাটানোর জন্য বারবার করে ইচ্ছের চড়দুটোকে মনে করতে লাগলো ও। কিন্তু ততোক্ষনে ইচ্ছে গান শুরু করায়,আর কিছু মাথাতেই আসেনি ওর। টমি মেঝে শুকে এগিয়ে ব্যালকনির ধারে চলে এসেছে। দেখেই নিয়েছে জানালার উপরের দেয়ালে লেপ্টে দাড়িয়ে থাকা প্রাপ্তকে। আর তাই এবারে আরো জোরে চেচিয়েছে। ইচ্ছের গানে প্রাপ্ত নিজেও চোখ বন্ধ করে ছিলো। অনুভব করছিলো কিছু একটা হয়তো। তাই টমির আকস্মাৎ আওয়াজটায় আতঙ্কের রেশ এসেছে ওর মাঝে। একটু বেশিই হচকিয়ে নিচে পরে গেছে বেচারা। টমি এখনো ডাকছে। হেডফোন কানে বলে প্রাপ্তর পরে যাওয়ার শব্দ বা টমির ডাক,কোনোটাই কানে পৌছায়নি ইচ্ছের।
প্রাপ্ত স্বস্তির দম ছাড়লো। এভাবে কারো সামনে ইহকালে অপদস্ত হওয়ার মতো ইমেজ ওর না। ইচ্ছের সামনে তো কোনোকালেই না! তীক্ষ্ম চোখে তাকালো ও টমির দিকে। ভাবখানা এমন, ‘দেখে নেবো তোকে!’ টমি ডাক থামিয়ে জিহ্বা বের করে ওরই দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চাওনিতেও যেনো বলা, ‘তুই দেখে নিস,সাদমান ইনাব প্রাপ্ত’র এই হ্যাংলা রুপ,ডাক ছুড়ে ছুড়ে,আমিও দেখিয়ে দেবো সবাইকে!’ প্রাপ্ত হাতা গুটিয়ে তেড়ে এগোতে যাচ্ছিলো। কি বুঝলো,মনেমনে এই উত্তরটার জন্যও ইচ্ছেকে দায়ী করলো ও। ওর কাছ থেকেই নির্ঘাত এভাবে তাকাতে শিখেছে এই কুকুর। এই মেয়ের সবকিছুতেই ওর জন্য ঝামেলা তৈরীর উপায় আঁকা। পায়ের কাছে থাকা ইটের টুকরোতে লাথি মেরে রাগ আর বিরক্তি নিয়ে চলে যাচ্ছিলো প্রাপ্ত। কি ভেবে ঘাড় ঘুরিয়ে একপলক ইচ্ছের দিকে তাকালো ও। ইচ্ছে আর গান গাইছে না। চোখ বন্ধ করে গিটারে সুর তুলছে শুধু। নিকষ রাতে কালোমেঘে ঢাকা চাঁদের সাথে অনেকটা মিল এই মেয়েটার। অজান্তেই তুলনা একে দিয়ে নিজেই থমকে গেলো প্রাপ্ত। এগুলো তো ইচ্ছের জন্য বরাদ্দ নয়! এগুলো তো ওর বিপরীত বৈশিষ্ট্যের কোনো এক কল্পকন্যার জন্য! সেই চেনা অনুভূতিগুলো আজ এ কার নামে করে দিলো ও? কেনো করে দিলো?
#চলবে…
[ গানটা আমার নিজের লেখা। সুর সাজিয়েছি বলে গানই বললাম। তাই কেউ এই অদ্ভুত গান খুজে না পেলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়! 🤭 কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু পাঠকমহল! হ্যাপি রিডিং! ❤
গল্প সম্পর্কিত আড্ডা দিতে জয়েন করুন মিথিমহল। গ্রুপ লিংকঃ
https://www.facebook.com/groups/233416685257163/?ref=share_group_link ]