‘ রবীন্দ্রনাথ কোন কাব্যের জন্য এশীয়দের মধ্যে প্রথম নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন ? ‘
দেখতে আসা পাত্রর মুখ থেকে এমন একটা প্রশ্ন শুনে সানার মাথা যেন চক্কর দিয়ে উঠলো । নিজের শ্রবণ ইন্দ্রিয়কে অবিশ্বাস্য ঠেকলো । সামনে বসে থাকা মানুষটার মুখ থেকে প্রথমেই যে এই প্রশ্ন শুনবে সেটা সে একেবারেই আশা করেনি। সানাহ্ নিষ্পলকভাবে চেয়ে রইলো ওর সামনে বসে থাকা মানুষটার দিকে ।
ওর সামনে বসে থাকা মানুষটা আর কেউ নয় বরং ওর হবু বর ফারহান ইমতিয়াজ যার সঙ্গে সানার বিয়ে ঠিক হয়েছে । ফারহানের সঙ্গে তার এটাই প্রথম দেখা নয় । ফারহানের সঙ্গে তার আগেও বহুবার দেখা হয়েছে। সানাহ্ ঢাবির অনার্স চতুর্থ বর্ষের ইংরেজি সাহিত্যের এক তুখোড় ছাত্রী আর ফারহানও ঢাবির বাংলা সাহিত্যের একজন স্বনামধন্য প্রফেসর । মানুষটা একেবারেই রসকষহীন আর গম্ভীর মানুষ ।
ফারহান ইংরেজি সাহিত্য সহ্য করতে পারে না.. কেন পারে না সেটা সানার জানা নেই। ফারহানকে আজ অব্দি যতবার দেখেছে ততবারই ফারহান ওর দিকে ভ্রু কুচকে বিরক্তি মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়েছে যেন পারলে ওকেই কাচা চিবিয়ে খায় । ফারহান ওকে দেখেই যে কেন এরকম করে সেটা তো একমাত্র ফারহানই জানে। ওহ আরেকটা কথা তো বলাই হয়নি… ফারহান শুধু মাত্র বাংলা প্রফেসর না সেই সঙ্গে একজন ভালো কবি আর লেখকও বটে। তার লেখা বইয়ের অন্ত নেই সানার ছোটো বোন অতসীর কাছে ।
অতসী হলো সানার ছোটো বোন সাইয়ারা কবির অতসী । বর্তমানে ঢাবির অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী আর একজন সাহিত্য প্রেমী। সানার কাছে যেমন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে শতাধিক বই আছে অতসীর কাছেও সেরকমই বাংলা সাহিত্য নিয়ে হাজার খানেক বই আছে । অতসীর ঘরকে অতসী এক প্রকার ছোটো খাটো লাইব্রেরিই বানিয়ে ফেলেছে বলা চলে । আর অতসী সে তো ফারহান বলতে পাগল, তার ধারণা এই পৃথিবীতে ফারহান ছাড়া আর কোনো ভালো লেখক নেই । অতসী এক প্রকার ফারহানের উপর ক্রাশ খেয়ে ব্যাকা হয়ে আছে ।
‘ আপনি কি শুনতে পারছেন আমি কি বলছি ? ‘
ফারহানের গলা শুনে নিজের ভাবনা ছেড়ে বেরিয়ে এলো সানাহ্ । হালকা মাথা দুলিয়ে না বোধক ইশারা করে বললো ‘ নাহ্ জানিনা না… ‘
সানার কথা শুনে ফারহান ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সানার দিক থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি দিল । এই অতি অসামান্য রূপের বাঙালি কাম বিদেশি রমণীকে তার দেখতে ইচ্ছা করছে না…বড়ই বিরক্তি লাগছে।
বাঙালি মেয়েদের গায়ের রঙের একটা সীমা থাকে কিন্তু এই সানাহ্ নামক মেয়েটার গায়ের রং অতীব মাত্রায় ফর্সা, ঠিক যেন এক বিদেশি তরুণী। সানাহ্ এতটাই ফর্সা যে তার উন্মুক্ত হাত, পায়ের রগ সবুজ হয়ে ধরা পড়ে। কিছু হলেই সানার ললাটের রগ দুটি ভেসে উঠে ফারহানকে যেন জানান দেয় সানাহ্ মেয়েটার রূপের কোনো তুলনা হয় না।
সানার রূপের জন্য সানাহ্কে নিঃসন্দেহে ব্লন্ড গার্ল বলা যায়, যার রূপ সৌন্দর্যের কোনো অভাব নেই। সানার যে শুধু রূপে বিদেশিনী ভাবটা আছে তা একেবারেই নয়, সে কথাবার্তা আচার আচরণ সবদিক দিয়েই বিদেশিনী। সানার আরেকটা নামও দিয়েছে ফারহান, বিদেশিনী প্রফেসর। না চেহারায় যে প্রফেসর প্রফেসর ভাব আছে তানা বরং সানাহ্কে সে যখনই দেখে তখনই দেখে চোখে সরু ফ্রেমের গোলগাল এক গোল্ডেন কালারের চশমা আর হাতে একখান বই । বই.. কী বই ? A Miss Silver Mystery সিরিজের ‘ Grey Mask ‘ বা কখনও Daniel Defoe এর ‘ Robinson Crusoe ‘ ।
ফারহানের জানা নেই বইগুলোর ভেতরে কি আছে কিংবা বইগুলো কি বিষয়ক কিন্তু এটা জানে বইগুলো বেশ নামিদামি লেখকদের আর এগুলো সানাহ্ তার বাবার বন্ধুকে বলে ইন্ডিয়া থেকে আনিয়েছে। শুধু এগুলোই নয় আরও অনেক বই আছে সানার কাছে যেগুলো ফারহান চোখের দেখাও দেখেনি সেরফ অতসীর কাছ থেকে শুনেছে । ঠিক এইসব কারণেই সানাহ্ ফারহানের কাছে বিদেশিনী প্রফেসর, The Mysterious Woman মনে হয়… যার মধ্যে আছে এক আস্ত বড় রহস্য কিন্তু মেয়েটা সেই রহস্য কাউকে বুঝতে দেয়না। আসলে এই জগতে সব মানুষের মধ্যেই রহস্য থাকে…. কারোরটা প্রকাশ পায়, কারোরটা পায় না ।
তাই এখন এই সুন্দর রমণীর দিকেই ফারহান দৃষ্টি দিতে চাইছে না পাছে তার প্রেমে পড়ে যায়। এই জীবনে অন্তত তার কোনো বিয়ে করার শখ নেই। মাকে দেখেছে বাবা মারা যাওয়ার পর কত কষ্ট পেয়েছে তাই সেও তার প্রিয়তমার মৃত্যুতে কষ্ট পেতে চায়না। কে বলতে পারে ভাগ্য হয়তো তার প্রিয়তমাকেই আগে নিয়ে গেলো।
সানার বারান্দায় দাড়ালে বাইরের খুব সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় । সানাহ্দের বাড়ির বাউন্ডারি পেরোলে যে সরু রাস্তা আছে তার দুই ধারে খুব সুন্দর ফুল গাছ লাগানো যা দেখলে ফারহানের মন জুড়িয়ে যায় ।
ফারহান আর সানাহ্ বর্তমানে সানার ঘরের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে । ফারহানের মা আর সানার মা দুজনেই দুজনকে ঠেলেঠুলে পাঠিয়েছে একান্তে কিছু কথা বলতে। সানার মা মিসেস কায়নাত আর ফারহানের মা মিসেস আশা হলেন ছোটবেলাকার ঘনিষ্ট বান্ধবী। তাই সেই সূত্রে সানার পরিবারের সঙ্গে ফারহানের পরিবারের বেশ ভালই সখ্যতা আছে তবে ফারহান আর সানাহ্ বরাবরই একে অপরকে এড়িয়ে চলে আর তার পিছনে কারণ হলো দুজনের দুই ধরনের মানসিকতা । ফারহানের বাংলা সাহিত্য পছন্দ আর সানার ইংরেজি সাহিত্য।
‘ রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য এশীয়দের মধ্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন… এটা ক্লাস নাইনের বাংলা বইয়ের সুভা গল্পের লেখকের পরিচিতিতে লেখা আছে.. ‘
প্রথমে ফারহানের কথা শুনে সানাহ্ মুগ্ধ হলেও ক্রমশ সেটা লজ্জায় পরিণত হলো । প্রথমে ফারহানের কথা শুনে সানাহ্ মনে করেছিল মানুষটার স্মৃতি শক্তি খুবই তুখোড় তাই এত বছর আগের পড়া এখনও মনে রেখেছে কিন্তু ক্রমশই তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো । ফারহান যে সানাহ্কে খোঁচা দেওয়ার জন্য সানার দুর্বলতা নিয়ে রীতিমত টানা হেঁচড়া শুরু করেছে সেটা সানাহ্ ভালই বুঝতে পারছে । সানার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল আর ফারহান তার রক্তিম হয়ে উঠা মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল যাতে সানাহ্ সেটা দেখতে না পায় ।
‘ কিরে তোদের কথা হলো ? চল চল.. সানাহ্ তোর বাবা অপেক্ষা করছে । দুপুরের খাবার খেতে বসতে হবে তো… ‘
ছেলে মেয়ে বারান্দায় ঢুকেছে অনেকক্ষণ হয়ে গেছে দেখে মিসেস আশা আর মিসেস কায়নাত তাদের নিতে এলেন । আজ ফারহানদের সানাদের বাড়িতে আসার মুখ কারণ হলো ফারহান আর সানার আকদের কথাবার্তা বলে রাখবেন আর সেই বাহানায় সবাই মিলে একসঙ্গে একটু খাওয়া দাওয়াও করবে।
‘ কি ব্যাপার মেয়ে আমার তো বাড়িতে সারাদিন টইটই করে বই হাতে ঘুরে বেড়ায়। যে এক দন্ডও এক জায়গায় বসে না সে আজ ফারহানকে দেখে এক জায়গাতেই দাড়িয়ে আছে । বাহ্ তাহলে ফারহানই পারবে আমার গম্ভীর মেয়েকে ঠিক করতে । ‘
মিসেস কায়নাতের কথায় সানাহ্ তার দিকে গরম চোখে তাকালো কিন্তু মিসেস কায়নাত তা পাত্তা দিলেন না বলে সানাহ্ লজ্জায় তার মুখ নামিয়ে নিলো। কায়নাতের কথা শুনে মিসেস আশাও বললেন ‘ তোর মেয়েও তো কম কিছু না… আমার রসিকতা প্রিয় ছেলেকে কিভাবে শান্ত করে দিলো দেখেছিস ? ফারহানকে একমাত্র সানাই পারবে টেক্কা দিতে । এখন আল্লাহ আল্লাহ করে দুটোর বিয়ে দিতে পারলে বাঁচি । ‘
ফারহান তার মায়ের কথায় বিরক্তি বোধ করছে কিন্তু সৌজন্যতার খাতিরে কিছু বলতে পারছে না । দিব্য ইমতিয়াজ আর আশালতা তালুকদারের বড় ছেলে হলো ফারহান। স্বামী দিব্য ইমতিয়াজ গত হয়েছেন বহুকাল আগেই । এত বছর একা হাতে বড় করেছেন সন্তানদের আর এখন তাদের বিয়ে দিতে চান। আপন বলতে বাপের বাড়ির মানুষরা আর দুটো ছেলেই আছে । বড় ছেলে ফারহান ইমতিয়াজ আর ছোটো ছেলে রুদ্রিক ইমতিয়াজ ।
সানাহ্ রান্নাঘরে মিসেস কায়নাতকে কাজে সাহায্য করছে খাবার ঘরে জিনিস আনা নেওয়া করতে । বাইরে খাবার টেবিলে বসে ফারহান আর কবির সাহেব বিভিন্ন ব্যাপারে আলোচনা করছেন । আলোচনা করছেন বললে ভুল হবে কারণ কবির সাহেব বিবাহিত জীবন নিয়ে ফারহানকে উপদেশ দিচ্ছেন আর ফারহান তা বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে নেড়ে বোঝার ভান করে হা হু করছে। ব্যাপারটা যে তার কাছে বিরক্তির কারণ সেটা তার চেহারা দেখে একেবারেই বোঝার যো নেই । তার চেহারায় প্রকাশ পাচ্ছে স্নিগ্ধ মুচকি হাসি যেটা এখন সানাহ্ দেখলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করতো। ফারহানের মত মানুষের মুখে হাসি দেখা আর অমাবশ্যার রাতে পূর্ণিমার চাঁদ পাওয়া এক ব্যাপার। মানুষটা একেবারেই হাসতে জানে না বললে কথাটা ভুল নয়…
‘ সানাহ্ যা গিয়ে ফারহানকে ভাত তরকারি বেড়ে দে… ‘
মিসেস কায়নাতের কথায় সানাহ্ উনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। তারপর বললো ‘ কেন উনি কি নিজে বেড়ে খেতে পারেন না ? ‘
মিসেস কায়নাত মেয়ের কথা শুনে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না, ইতিমধ্যে উনার নাক কাটা যাচ্ছে লজ্জায় কারণ মিসেস আশা রান্নাঘরের দরজাতেই দাড়িয়ে ছিলেন। মিসেস কায়নাত শুধু বিনিময়ে চোখ বড় বড় করে দাঁত কিরমির করে ফোঁসফোঁস করে উঠলেন আর তাই কাজে দিল। সানাহ্ সুরসুর করে এগিয়ে গেল খাবার ঘরের দিকে । সানাহ্ তার মায়ের রাগকে খুব ভয় পায়, মহিলা রেগে গেলে বোম্বাই মরিচের রুপ ধারণ করেন যেটা সানাহ্ আর তার বাবা দুজনের জন্যই বেশ বড়সর বিপদের আভাস ।
‘ স্যার আপনি ভাতের সঙ্গে কি নিবেন বলুন.. আমি দিয়ে দিচ্ছি ‘
সানার এহেন অদ্ভুত সতি সাবিত্রী আর ভালো মানুষ রুপ দেখে ফারহান তার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। সানার এত ভালো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার পিছনে কারণ কি ? সানাহ্ তো এত ভালো মানুষ নয়, সে তো ফারহানকে সহ্যই করতে
পারেনা… অন্তত ফারহানের তো তাই মনে হয় ।
‘ আমি নিয়ে নিবো… আপনাকে কষ্ট করতে হবে না ‘ ফারহানের সোজা সাপ্টা উত্তর ।
‘ আরে না না কষ্ট কিসের ? আপনি হলেন আমার মায়ের আদরের হবু জামাই… আপনার খাতির না করলে কি করে হয় ? পরে তো আপনি গেলে মা আমাকেই বকবে.. তাইনা মা ? ‘ সানাহ্ জোর করে ফারহানের পাতে ভাত দিতে দিতে বললো ।
সানার কথা শুনে মিসেস কায়নাত দাতে দাত চেপে মেকি হেসে মেয়ের কথায় সায় দিলেন কিন্তু ভিতর দিয়ে উনি রাগে ফুসছেন । মেয়ে তার বেশিই কথা বলে তাই কোথায় কি বলতে হবে চিন্তা না করেই উল্টাপাল্টা কথা বলে দেয়। মেয়ে হিসেবে তার উচিত ফারহান তার হবু বর বলে ফারহানের সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা পাওয়া কিন্তু সে তো লজ্জা তো দূর বরং অনাড়ম্বরে বলছে যে ফারহান তার হবু বর।
‘ আরে আরে আন্টি তুমি দাড়িয়ে আছ কেন ? আসো আসো… খেতে বস, সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করি । মা আজ তুমি আসবে বলে তোমার জন্য স্পেশালি চিংড়ি মাছের মালাইকারিটা করল। তোমার তো চিংড়ি পছন্দ তাইনা ? ‘
‘ না না থাক.. তোমরা সবাই খাও। আমি পরে তোমাদের খাওয়া শেষে খেয়ে নিব.. ‘ মিসেস আশা মুচকি হেসে উত্তর দিলেন।
‘ খেয়ে নাও.. খেয়ে নাও, আশা খেয়ে নাও। তোমার হবু বৌমা বিয়ের আগেই তোমার এত সেবা যত্ন করছে, ব্যাপারটা ইনজয় করো। বিয়ের পর ছেলের বউয়ের সেবা পাওয়া আর কুমিরের চোখের পানি দুটোই এক… বলা যায়না ভাগ্যে জুটে কিনা ‘ মিস্টার কবির খেতে খেতে বললেন ।
সানাহ্ তার বাবার কথা শুনে তার বাবার দিকে দাত কিরমির করে তাকালো কারণ তার বাবা তাকে নিয়েই মজা করছে । মিস্টার কবির মেয়ের রুদ্র রুপ দেখে মেকি হেসে বললেন ‘ আহা আমি তো মজা করছিলাম… বাকি মেয়েদের আর আমার মেয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে.. তুই সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেন ? ‘
সানাহ্ কিছু বললো না এর প্রতি উত্তরে। মিসেস কায়নাত মেয়ের সঙ্গে সঙ্গে এবার মেয়ের বাবার উপরও ক্ষেপেছেন আর সেটা উনার মুখ দেখে ভালই বুঝা যাচ্ছে। মেয়ে আর মেয়ের বাবা দুজনের মধ্যে যদি একটু সেন্স থাকতো। দুজনের একজনও জানেনা কোথায় কোন কথা বলতে হয় । অতঃপর সানার জোরাজুরিতে মিসেস আশা তাদের সঙ্গে খেতে বসলেন। সকলে এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে বলতে খাচ্ছে।
ফারহানকে অবাক করে দিয়ে সানাহ্ সত্যি সত্যি চামচ দিয়ে খাওয়া শুরু করলো। ফারহান ভাবেনি যে সত্যি সত্যি তার ধারণা ঠিক হবে। তার গেসিং ততটাও ভালো নয়। সানাহ্ শুধু যে চামচ দিয়ে খাচ্ছে তানা রীতিমত বিফের গায়ে ফর্কও চালাচ্ছে। সে খচখচ খচখচ এক আওয়াজ… সানাহ্ কি ইচ্ছে করে শব্দ করে খাচ্ছে ?
হঠাৎ কথা প্রসঙ্গে মিসেস আশা বলে উঠলেন ‘
কায়নাত তাহলে ওদের আকদটা বরং সামনের মাসের প্রথম দিকেই করিয়ে দেই কি বল ? ‘
মিসেস আশার কথা শুনে সানার বিষম উঠে গেল আর ফারহান তার মায়ের কথা শুনে তার মায়ের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো কারণ মিসেস আশার কথা ওর ঠিক পছন্দ হয়নি। সানাহ্ ফারহানের কাছেই বসে ছিল বিধায় সানার বিষম উঠাতে ফারহান ওর দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিল আর সানাহ্ সেটা নিয়ে পানি খেতে শুরু করলো।
সানাহ্ কে তাড়াহুড়ো করতে দেখে ফারহান বললো ‘ ধীরে সুস্থে খান….তাড়াতাড়ি না খেলে আপনার ট্রেন ফেল হবে না । এত তাড়াতাড়ি খেলে আবার বিষম লাগবে.. ‘
সানাহ্ ফারহানের কথা শুনে ধীরে সুস্থে পানিটা খেয়ে সস্তির নিশ্বাস ফেললো। এবার সানাহ্ আর ফারহান আশেপাশে মুখ ফেরাতেই দেখলো মিসেস আশা আর মিস্টার কবির মুখ টিপে হাসছেন আর মিসেস কায়নাতের মুখেও প্রচ্ছন্ন হাসি। ফারহান সেটা দেখে অপ্রস্তুত হলো। খাবার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে মিসেস আশাকে উদ্দেশ্য করে বলল ‘ মা আমার খাওয়া শেষ… তোমার খাওয়া হলে বইলো। আমাকে বের হতে হবে… ভার্সিটিতে কিছু কাজ আছে ‘
মিসেস আশা ছেলের কথায় নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সায় দিলেন আর মিসেস কায়নাত সানাহ্ কে উদ্দেশ্য করে বললেন ‘ সানাহ্ যাও গিয়ে ফারহানকে তোমার ঘরে নিয়ে যাও, ওর হাতটা ধুয়ে নিক। ‘
সানাহ্ মায়ের এহেন কথায় বিরক্ত হলো কারণ তার মা এসে থেকেই তাকে বারবার ঠেলে ফারহানের কাছে পাঠাচ্ছে । তবুও সকলের সম্মুখে কিছু না বলে ফারহানকে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে হাঁটা দিলো। ফারহানকে নিজের ঘরে এসে বাথরুমটা দেখিয়ে দিলো। ফারহান তার মতো বাথরুমে গিয়ে হাত ধুয়ে এলে সানাহ্ ওর দিকে টিসু এগিয়ে দিলো। ফারহান সেটা নিয়ে হাত মুছে নিল। ফারহানের হাত মোছার পর ফারহান বললো ‘ মিস সানাহ্… ‘
ফারহানের ডাকে সাড়া দিয়ে সানাহ্ ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। ফারহান বললো ‘ একটু আপনার ঘরের বারান্দায় আসুন.. কিছু কথা আছে । ‘
ফারহানের কথা শুনে সানাহ্ আলতো করে মাথা নেড়ে সায় দিল। ফারহান এগিয়ে গিয়ে সানার রুমের বারান্দায় দাড়াল। তার এখানে দাড়ানোর মূল কারণ এই জায়গাটা তার খুব ভালো লাগে তাই জরুরি কথাগুলো এখানেই বলবে ।
~ চলবে ইনশাআল্লাহ…
#প্রেমমানিশা(০১)
মিফতা তিমু
( চেষ্টা করবেন সবাই রেসপন্স করার। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ চাইলে প্রতিদিনই দুটো গল্পই পোস্ট করবো। যেহেতু আপনাদের রেসপন্সে আমি আরও ভালোভাবে লেখার মনোবল পাবো সেহেতু যথাসাধ্য রেসপন্স করবেন )