#প্রেমমানিশা(০৮)
হঠাৎ তারস্বরে অতসীর ফোন বেজে ওঠায় সকলের ভাবনায় ছেদ পড়ল। অতসী তার জিন্সের পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করে কানে ধরেই বললো ‘ হ্যাঁ বল… আচ্ছা আমি আসছি……তোরা দশ মিনিট অপেক্ষা কর। না না দেরী হবে না..… আমি এক্ষুনি আসছি…… ‘
কথা শেষে অতসী ফোন আবার জায়গা মত রেখে দিয়ে জালাল সাহেবের উদ্দেশ্যে বললো ‘ তাহলে দাদু এবার তো আমার যেতে হয় ? আগেই ওদের না বলে এসেছে ভুল করেছি……এখন দেরী করলে আমায় ফেলে যেতে ওদের সময় লাগবে না…… ‘
অতসীর কথা শুনে মিসেস আসমা কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু জালাল সাহেব উনাকে মাঝ পথেই থামিয়ে দিয়ে বললেন ‘ আচ্ছা তাহলে তুই যা.. পরে এক সময় করে আসিস ‘
‘ তাহলে সুন্দরীরা আসছি…… আবার দেখা হবে কোনো এক শরতের সন্ধ্যায়……ঠিক পুরনো দিনের মতো। ‘ বলে আনমনে হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে গেলো অতসী। অতসী ঠিক কিছুটা তার আপাই সানারই মত। কখন কোন কথা বলতে বলতে আচমকা গম্ভীর হয়ে যায় বলা যায় না।
অতসী বেরিয়ে যেতেই মিসেস আসমা আর জালাল সাহেব আড়চোখে প্রণয়ের দিকে দৃষ্টি দিলেন। প্রণয় সেই দৃষ্টি দেখে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল ‘ তোমরা যা ভাবছো তা নয় দাদু..… ও শুধুই আমার..… ‘
‘ তোর স্টুডেন্ট তাইতো ? অতসী যে ঢাবিতে পড়ে এটা আমি জানতাম কিন্তু তুই যে ওই ভার্সিটিতেই জয়েন করেছিস এটা আমার জানা ছিল না। তবে তোদের কথোপকথন আর অতসীর বারবার তোকে স্যার স্যার বলে সম্বোধন করাতে খানিকটা আন্দাজ করতে পেরেছি। তুই আমাকে যতটা উজবুক ভাবিস আই থিঙ্ক আমি ততটাও নই..… ‘ মুচকি হেসে বললেন জালাল সাহেব।
‘ তুমি যে অতিশয় বুদ্ধিমান সেটা তোমার ইমেজিনেশনই বলে দিচ্ছে দাদু…… তবে দিদুন কি ভেবেছিল আমিও সেটা ইমেজিন করতে পেরেছি…… ‘ প্রণয় বললো।
‘ হয়েছে হয়েছে……দুই দাদু নাতিতে মিলে আমার নামে এত বদনাম না করলেই নয় ? আমি যাচ্ছি আমার রান্নাঘরে…… বৌমা চলো…… ‘ মিসেস আসমা বললেন।
মিসেস আসমা আর উনার পুত্র বধূ দুজনেই চলে গেলেন রান্নার কাজে। জালাল সাহেব উনার লাইব্রেরী ঘরে গিয়ে বসলেন আর প্রণয় তার ঘরে গেলো ফ্রেশ হতে। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে এসে প্রণয়ও ঢুকলো লাইব্রেরী ঘরে।
—-
‘ শুনছো ..… ‘ মিসেস কায়নাতের করুন ডাক।
‘ হু…… ‘
‘ তুমি যে বললে সানাহ্কে আমাদের বান্দরবনের ফার্ম হাউজে পাঠাবে…… সানাহ্ যেতে রাজি হবে ? ওর না বিয়ের এক সপ্তাহ পরই ফাইনাল সেমিস্টার ? ও বেকে বসবে নাতো ? ‘ মিসেস কায়নাতের গলায় স্পষ্ট ভয়ের আভাস।
‘ ও না যেতে চাইলেও তো লাভ নেই তাইনা ? ওকে সুস্থ রাখতে হলে ওর মর্জির বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও আমাদেরকে ওর যেটাতে ভালো সেটাই করতে হবে। অ্যান্ড ওয়ান থিং আমার যা মনে হয় সানার এই অসুস্থতার কথাটা আশা আর ফারহানের থেকে আমাদের লুকিয়ে রাখাটা ঠিক হবে না। ওদের বলে দেওয়া উচিত..… ‘
মিস্টার কবিরের কথা মিসেস কায়নাতের কর্ণ কূহরে যেতেই মিসেস কায়নাত যেন এক প্রকার চমকে উঠলেন, উনার চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। শক্ত গলায় বললেন ‘ না কখনোই না……কবির তুমি যা বলছো ভেবে বলছো তো ? ওর অসুস্থতার কথা ওরা জানলে ফারহানের সঙ্গে সানার বিয়ে হতে দিবে তো ? ‘
মিস্টার কবির উনার প্রিয়তমা স্ত্রীয়ের কথা শুনে চোয়াল শক্ত করে ফেললেন। দৃঢ় গলায় বললেন ‘ বিয়ে নাহলে না হবে……আমার মেয়ের জন্য কি পাত্রের অভাব পড়েছে ? যে আমার মেয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মেয়েকে বিয়ে করতে আপত্তি করবে তার সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় ? যেই মেয়েকে এত ভালোবেসে বড় করলাম তাকে কষ্ট পাওয়ার জন্য এমন একটা লোকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কোনো মানেই হয় না যে আমার মেয়ের মন বোঝে না। এই কবি কেমন কবি যে মেয়েদের মনই বোঝে না ? ‘
মিসেস কায়নাত বুঝলেন স্বামী তার মেয়ের নিরাপত্তা আর জীবনের কথা ভেবে মেয়ে বিয়ে দিতে ঘাবড়ে আছেন। মিসেস কায়নাত এবার গলা নরম করে বললেন ‘ তুমি যা ভাবছো তা একেবারেই নয়…… তুমি একবারও সানার সঙ্গে কথা বলেছ ? বললে বুঝতে এই বিয়ে নিয়ে ওর মনে এক প্রকার আগ্রহ আছে, হয়তো ফারহানকে ওর পছন্দ। তুমি পারবে বাবা হয়ে মেয়ের আনন্দে ব্যাঘাত ঘটাতে ? তাছাড়া এখন লুকাচ্ছি বলে তো এই নয় যে ফারহান কখনোই ওর এই অসুস্থতার কথা জানবে না.. বিয়ের পর এক সময় না এক সময় ঠিকই জানবে। তাছাড়া এমনও তো হতে পারে বিয়ের পর মেয়ে আমাদের সুস্থ হয়ে গেলো…… ‘
স্ত্রীর কথা শুনে শান্ত হলেন মিস্টার কবির। ব্যাপারটা ভেবে দেখেননি উনি,মেয়ে উনার সত্যিই এই বিয়ের কথা চলাকালীন কোনো প্রতিবাদ করেনি। তাহলে কি মেয়েটা তার সত্যিই এই বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ? কিন্তু সত্যি তো এটাই বাবা হয়ে সে পারেনা তার মেয়েকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে। মেয়েটা যে তার অন্তপ্রাণ।
সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে মনোরম পরিবেশে বারান্দার বেতের সোফায় বসে আছে সানাহ্। জ্বরটা তার একটু কমেছে কিন্তু শরীরের জ্বর কমলে কি হবে, মনের জ্বর তো তার কমেনি। যেখানে মনের অসুস্থতা গুরুত্ব পায় সেখানে দেহের অসুস্থতা গুরুত্বহীন। মনটা তার প্রতি নিয়ত ভঙ্গুর হচ্ছে কাল রাতে ফারহানের বলা কথাগুলো মনে করে।
মানুষটাকে সে বেশ সমীহ করেই চলে আবার তাকে অপ্রত্যাশিত ভাবেই নিজের কাছেও পেতে চায়। মন তার বড়ই বেহায়া, সময়ে অসময়ে ফারহানকে পেতে চায়। সানাহ্ জানে ফারহানের দিক থেকে এই বিয়েতে কোনো মত নেই কিন্তু তবুও মনে ক্ষীণ একটা আশা ছিল যে নিজের মায়ের মুখের দিকে চেয়ে হলেও ফারহান নিঃশব্দে মেনে নিবে এই বিয়ে।
তবে কাল রাতে ফারহানের বলা প্রত্যেকটা কথা প্রতি মুহূর্তে সানাহ্কে বুঝিয়ে দিয়েছে ফারহানের জীবনে তার কোনো ভূমিকা নেই, শি ইজ নন-এনটিটি । কিন্তু সে তো চেয়েছিল ফারহানের প্রিয়তমা হতে। ফারহান যদি তাকে সেই অধিকার দিত তাহলে আজ এই রাত তার আর ফারহানের হতো।
মনটা মানছে না, বারবার করে বলছে এখানে তোর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে সানাহ্, পালিয়ে যা তুই দূরদূরান্তে। এরকম তার প্রায়ই হয়, যখনই সে ডিপ্রেসড হয়। কিন্তু এইবার এই চাওয়ার মাঝেও জোর আছে, আছে যুক্তি। যেখানে তার প্রয়োজন নেই,সেখানে তার থাকার কোনো মানে হয়না। সে তো বলেইছিল তার মাকে যে বিয়ের কথা বলে লাভ নেই,ফারহান মানবে না। কিন্তু মানেনি তার মা, বারবার বলেছে আশা বললে শুনবে। সানাহ্ এমন কি এও বলেছিল তাদের যেন ওর রোগটার ব্যাপারে আর তার অতীতের ব্যাপারে বলে দেয় কিন্তু ওর মা গ্রাহ্য করেনি। এই কথাটাও এড়িয়ে গেছে। সবকিছু গ্রাহ্য না করার পরিণতি আজ তাকে ভোগ করতে হচ্ছে।
‘ তোর শরীরটা এখন কেমন আছে আপাই ? ‘
আবছা অন্ধকারে জোনাকির দিকে তাকিয়ে যখন সানাহ্ তার ভাবনায় মশগুল তখন আচমকা পিছন থেকে অতসীর গলা পেয়ে চমকে উঠলো। পাশ ফিরে দেখলো বারান্দার দরজায় ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে অতসী। অতসীকে দেখেই সানার মনে পড়লো তার মামনির কথা, মানুষটা এভাবেই তার ঘরের বারান্দার কাছে দাড়িয়ে থাকত। সানাহ্ দ্রুত চোখ সরিয়ে নিয়ে মৃদু স্বরে বলল ‘ ভালো ‘।
অতসী তার আপাইয়ের মৃদু গলায় বলা কথা শুনেই বুঝলো ভালো নয়,কিছুই ভালো নয়। তার আপাইয়ের সবকিছু আবারোও লন্ডভন্ড হয়ে গেছে আর তার আপাই পারছেনা সেটা নতুন করে সাজাতে। তার আপাই এমনই বাউন্ডুলে, অগোছালো মনের মানুষ।
কখন কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় তা সে জানেনা,নিজেকে সামলে নিতে জানেনা। তার আপাই অনেক কিছুই পারেনা আবার কিছু না পেরেও অনেক কিছুই পারে। খুব ভালো রান্না করতে জানে, মায়ের থেকে শিখেছে। ঘর গোছানো, গান, নাচ সবই। তানপুরার তালে তালে গান আর ঘুঙুরের সঙ্গে নাচ দুইই তার ডান হাতের কাজ তবে পারেনা শুধু নিজেকে সামলাতে। এই মানুষটা যদি জীবন সংগ্রামে নিজের পাশে ফারহান স্যারের মতো কোনো মানুষকে পায় না তাহলে এক সময় সেও নিজেকে সামলে নিতে পারবে এটা অতসীর দৃঢ় বিশ্বাস ।
–—
ঘরের এক কোণায় থাকা স্টাডি টেবিলের টেবিল ল্যাম্প জেলে ভার্সিটির কিছু কাজ করছিলো ফারহান। ইদানিং বড়ই ব্যস্ততায় যাচ্ছে তার সময়। সামনে অনার্সের পরীক্ষাও আছে তাই তারও একটা চাপ আছে, প্রশ্ন তৈরির প্রেসার। তাছাড়া হলে গার্ডও পড়তে পারে। এমনিতেই ফারহান সারা বছরই অনেকটা ব্যস্ততায় থাকে, দম ফেলবার সুযোগ তার প্রায়শই হয় না।অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা যেন ব্যস্ততা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, বাড়িতেও এখন আর বেশি সময় থাকে না। সারাদিন কাটে ভার্সিটিতেই।
হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে ফারহানের ধ্যান ভঙ্গ হলো। ঘাড় ঘুরিয়ে সদ্য আসা মানুষটাকে এক পলক দেখে আবারও কাজে মন দিল। মিসেস আশা নিঃশব্দে ফারহানের স্টাডি টেবিলের কাছে থাকা আরেকটা চেয়ার টেনে বসলেন। ব্যস্ত ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। ফারহান কাজের দিকে চোখ রেখেই বললো ‘ কিছু বলবে মা ? ‘
‘ সামনের মাসেই তোদের বিয়ে..…হাতে আছে আর পঁচিশ দিন। বিয়ের পরপরই পরীক্ষা বিধায় বিয়ের আগে বিয়ে ঘটিত যেসব জিনিসের দরকার পড়বে তা নিয়ে ঝামেলা করার সময় সানার থাকবে না। তুই যদি একদিন নিজে ওকে নিয়ে গিয়ে নিউ মার্কেট থেকে ওর জন্য লেহেঙ্গা,কসমেটিকস, জুয়েলারি কিনে আনতি তাহলে ভালো হতো..… ‘
মায়ের কথায় ব্যস্ত ফারহানের যেন টনক নড়লো। চমকে উঠে বললো ‘ কেন মিস সানাহ্ তোমাকে কিছু বলেনি ? ‘
ছেলের কথায় যে বড়ই অবাক হয়েছে তা সরাসরি প্রতীয়মান হলো মিসেস আশার মুখে। বিস্ময়ে উনার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। অবাক মিশ্রিত গলায় বললেন ‘ সানাহ্ আমাকে কি বলবে ? ‘
এবার যেন ফারহান আরও খানিকটা অবাক হলো। মনে মনে বললো ‘ কি ব্যাপার মিস সানাহ্ কি আঙ্কেল আন্টিকে ব্যাপারটা বলেননি ? আঙ্কেল আন্টিকে ব্যাপারটা বললে এতক্ষণে তো উনাদের মাকে বলে দেওয়ার কথা। নাহ্ মা গেলেই মিস সানাহ্কে ফোন করতে হবে। উনার সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা দরকার…. ‘ ।
‘ বললি নাতো সানার আমাকে কি বলার কথা বলছিলি ? ‘
মিসেস আশার কথায় ফারহানের ভাবনায় ছেদ পড়ল। মুচকি হেসে বলল ‘ আমি মিস সানাহ্কে আগেই বলেছিলাম কবে আমরা শপিংয়ে যাবো……উনি বলেওছিলেন তোমাকে বলবেন। কিন্তু আজব ব্যাপার বললেন না কেন ? ‘
ছেলের কথায় মিসেস আশা মুচকি হেসে বললেন ‘ হয়তো ভুলে গেছে……জানিস ফারহান কাল কায়নাত বলছিলো সানাহ্ মনে হয় এই বিয়ে নিয়ে অনেক খুশি, ভীষণ আগ্রহ নিয়ে তোদের বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা করত বিয়েতে কি পড়বি, কোন রঙের পড়বি সব।। তোদের যখন বিয়ের কথা চলছিল তখনও মেয়েটা কোনো আপত্তি করেনি..…আবার যে আমাকে সরাসরি কিছু বলবে সেটাও করেনি। আমি সানাহ্কে ভালো করে চিনি……ভীষণ স্ট্রেট ফরোয়ার্ড মেয়ে। আমার মনে হয় মেয়েটা তোকে খুব ভালোবাসে..…ওকে কখনও কষ্ট দিস না। ও তোকে খুব ভালোবাসে….… ‘
মায়ের কথা শুনে স্তম্ভিত ফারহান। তার দৃষ্টি পলক হারিয়েছে। সে কিছু বলার শব্দও খুঁজে পাচ্ছে না। তার শব্দকোষ শূন্যের কোঠায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, মস্তিষ্ক খালি খালি মনে হচ্ছে। চিন্তা ভাবনা করার শক্তিও হারিয়েছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না সানাহ্ নামক এই বিদেশিনী প্রফেসরও তাকে ভালোবাসতে পারে।
‘ জানিস ফারহান তোর বাবার সঙ্গে যখন আমার বিয়ের কথা চলছিল তখন আমি সদ্য ইন্টার পাশ করা গ্রামের মেয়ে, শহরের কিছুই চিনি না। তোর বাবা ছিলেন বিরাট ব্যবসায়ী। বিদেশ থেকে এসেছিলেন ডিগ্রি নিয়ে। পরে শশুর মশাইয়ের ব্যবসায়ের কাজে যোগ দেন।
একদিন হুট করে শশুর মশাই আর শাশুড়ি মা তোর বাবাকে নিয়ে হাজির হন আর আমার বাবাও আশ্চর্যজনকভাবে তাদের দেখে স্বানন্দে স্বাগতম জানান। আমি তো বাবার এই অদ্ভুত ব্যবহারে অবাক হয়ে গেছি। পরে জানতে পারলাম আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। এই কথা জানার পর আমি বাবার সঙ্গে অনেক রাগারাগি করেছিলাম কিন্তু বাবা আমাকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাদের সামনে নিয়ে যান।
আমাকে তোর বাবার সামনে নিয়ে যেতেই উনি উঠে দাড়িয়ে বললেন আমার সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চান।
তখনকার সময়ে এই চাওয়াটা নিছকই পাপ কারণ তখন এভাবে পাত্র পাত্রীর একান্তে কথা বলা কেউ ভালো চোখে দেখত না। কিন্তু আমার বাবা বাঁধ সাধেননি। উনি সম্মতি দেওয়ার পর তোর বাবাকে আর আমাকে একান্তে রেখে আসা হলো বারান্দায়।
সেদিন মানুষটার সঙ্গে প্রথম দেখা অথচ উনি হঠাৎ নিরবতা ভেঙে বলে উঠলেন ‘ কাঠগোলাপ তোমার খুব পছন্দ তাইনা ? ‘
বিশ্বাস কর তোর বাবার মুখে এই কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়েছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি কি করে জানলেন। উনি সেই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন উনি আমায় এখন থেকে নয় প্রায় বছর খানেক আগে থেকে চিনেন। আমি গাছ নিয়ে বহুত সৌখিন ছিলাম বলে প্রায়ই বাগানে এটা ওটা লাগাতে গ্রামের বড় নার্সারিতে যেতাম। সেখান থেকে গাছ এনে লাগাতাম। একদিন এরকমই এক দুপুরে কাঠগোলাপ খুঁজতে গেছিলাম। এই গাছটা অনেকদিন ধরেই খুঁজছিলাম কিন্তু গ্রামের কোথাও ছিল না। পরে নার্সারির হরি কাকাকে বলে আনালাম আর সেদিনই নাকি উনি আমাকে দেখেছেন।
সেদিন থেকে প্রায়ই গ্রামে আসতেন আর আমার অজান্তে আমায় ফলো করতেন। এরপর একসময় আমার বাবা মায়ের খোঁজ নিয়ে সম্বন্ধ নিয়ে এলেন। বিশ্বাস কর তোর বাবার কথা শোনার পর আমি আর বিয়েতে না করতে পারিনি কারন যেই মানুষটা আড়ালে থেকে সবসময় আমার যত্ন নিয়েছে তার থেকে ভালো মানুষ আমি আর কাউকে পাবো না। এরপর আমাদের বিয়ে ঠিক হয়,কথা পাকা হওয়ার এক মাস পরে।
জানিস মানুষটার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরপরই আমার মনে তার প্রতি এক আলাদা ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল, বলতে পারিস তাকে আস্তে আস্তে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম। সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের এমনভাবেই সৃষ্টি করেছেন যে তারা যেকোনো সময়,যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। বিয়ের পর ভালো মন্দ বিচার না করেই নিজেদের জীবন সঙ্গীকে ভালোবাসতে পারে। তার জন্য সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের মনকে অনেক নরম করে তৈরি করেছেন যার কারণে বেশিরভাগ মেয়েরাই বিয়ে ঠিক হলে হবু স্বামীকে আস্তে আস্তে ভালোবাসতে শুরু করে।
সানাহ্ তোকে এখন থেকে পছন্দ করে নাকি আগে থেকেই সেটা বলতে পারবো না কারণ ওর সঙ্গে তোর পরিচয় অনেক বছরের শুধু তুইই কখনও আলাদা করে কথা বলিসনি ওর সঙ্গে। কিন্তু আমি এটা বলতে পারি সানার মনে তোর প্রতি অনুভূতি আছে আর সেটা শতাধিক নিশ্চয়তা দিতে পারি কারণ মানুষের ঠোঁট মিথ্যে বলতে পারে,চোখ নয়। তোর মনে ওর প্রতি কেমন অনুভূতি আছে জানিনা তবে এটা বলবো আর যাই হোক ওকে কষ্ট দিস না। যাক অনেক রাত হয়ে গেছে……আমি উঠে খাবার দিচ্ছি তুই নিচে আয়…. বলেই মিসেস আশা চলে গেলেন তবে ফারহানের মনে রেখে গেলেন এক জোট প্রশ্ন।
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্…