#প্রেমমানিশা(১৪)
মিস্টার আশরাফ যখন তার পুরনো অতীতের স্মৃতিতে পুরোপুরি বিভোর তখনই বাড়ির সামনে এসে ভিড় করলো দুটো প্রাইভেট কার। শব্দ পেয়ে মিস্টার আশরাফের ঘোর ভেঙে গেলো । উনি ছুটলেন কে এসেছে দেখতে। বাড়ির ছাদ থেকে মিসেস রাহেলা আর মিস্টার আমানও ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলেন বলে উনারাও ছুটে এলেন। সানাহ্ ঘরে নেই খবরটা সবাইকে দিতে ছুটে এসে শায়খ নিজেই গাড়ি দেখে অবাক হয়ে গেলো। তারা ঠাওর করে উঠতে পারল না এত সকালে কে এসেছে।
একটা গাড়ি খুলে মিস্টার কবির,মিসেস কায়নাত আর অতসী বেরিয়ে এলো। আরেকটা কালো গাড়িতে করে মিসেস আশা আর ফারহানও এসে পৌঁছল। দুজনেই গাড়ি রেখে বেরিয়ে এলো। সকলে একে অপরের মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে। সকলের মনেই এক চিন্তা…. কোথায় সানাহ্……
—-
‘ এসব কি মজা চলছে ? সানাহ্ তোমাদের বাড়ি এসে রাতের আঁধারে আবার পালিয়েও গেলো অথচ তোমরা ধরতেই পারলে না…. ইজন’ট ইট এ ওরস্ট জোক ? ‘ রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বলে উঠলেন মিস্টার কবির।
রাগে কথাগুলো বলেও ক্ষ্যান্ত হলেন না মিস্টার কবির। এবার মিসেস কায়নাতের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিলেন কিছু কড়া বাক্যবাণ ‘ হাজারবার বলেছিলাম মেয়েটাকে একটু নজরে নজরে রাখো। ওর দিকে চোখ রাখো যেন কোনো বিপদ না বাঁধায়। কিন্তু তুমি শুনলে তো। তোমার তো নিজের উপর খুব কনফিডেন্স না ? এই তোমার আদর্শ মা হওয়ার নমুনা। নিজের প্রবল আত্ম বিশ্বাসের জোরে আমার মেয়েটার জীবনই নষ্ট করে দিলে। তুমি মা ডাকার যোগ্য না…. এ ব্লাডি উইচ লেডি। ইউ রুইন্ড ইউর ওউন ফ্যামিলি ‘।
মিস্টার কবিরের এহেন রুঢ় কথাও যেন মিসেস কায়নাতের উপর কোনো প্রভাব ফেললো না। উনি বসে আছেন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে। মুখে কোনো অনুভুতি নেই। ঠিক যেন অনুভূতিহীন জড় বস্তু। মেয়ের শোকে তার এই অবস্থা হলেও তার নিজেরই এসব কথায় অভ্যাস আছে। মেয়ে এরকম হুট করে হারিয়ে গেলেই তার স্বামী রেগে গিয়ে এসব বলে।
মিস্টার কবিরের এহেন ব্যবহারে ফারহান যেন অবাক না হয়ে পারল না। সে ভাবেনি মিস্টার কবিরের মতো এত ঠান্ডা মাথার মানুষও এভাবে রাগারাগি করতে পারে। কিছুক্ষণ পর নিজের সম্বিত ফিরে পেয়ে বিড়বিড় করে বললো ‘ সানাহ্ ওয়াজ রাইট…. শি টোটালি মেইড ইট ‘।
তবে কথাগুলো নিরুচ্চারে বললেও সম্মুখে মিস্টার কবির এবং সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল ‘ আঙ্কেল এখন এভাবে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করার কোনো মানেই হয়না। যা করার সানাহ্ ফিরে এলে করবেন। কিন্তু এখন আগে ওকে খুঁজে বের করাটা দরকার। যা বুঝলাম সানাহ্ কিছুতেই চায়না আমরা ওকে ধরে ফেলি তাই এভাবে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ওকে ধরতে হলে আমাদের গামছা বেধে নামতে হবে। সব থেকে ভালো হয় ওর লোকেশন ট্রেস করতে পারলে। ‘
ফারহানের কথায় হার মানলেন মিস্টার কবির। তাৎক্ষণিক মুহূর্তের জন্য নিজের ভিতর জমে থাকা রাগটা চেপে গিয়ে বললেন ‘ তাহলে আমি জাবেদকে ফোন দিচ্ছি। ও আমার ফ্রেন্ড এবং একজন পুলিশ অফিসার। এই বরিশালেই থানার বড় একটা পোস্টে চাকরি করে। সানার লোকেশন বের করা ওর জন্য দুধ ভাত। ‘
ফারহান যেন এই অপেক্ষায় ছিল। মিস্টার কবিরের কথায় খুশি হয়ে বলল ‘ তাহলে আর অপেক্ষা কিসের ? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করুন। এই কাজটা আমাদের আরও আগেই করা উচিত। আপনি উনাকে ফোন দিন তারপর লোকেশন ট্র্যাক হলে আপনার বন্ধু আর আমি মিলে সানাহ্কে খুঁজতে বের হবো। আপনারা সেই ফাঁকে সবাই একটু রেস্ট নিন। ‘
—-
‘ আঙ্কেল সানার লোকেশন কি ট্রেস করা গেছে ? ও কোথায় ? ‘ উদ্বিগ্ন গলায় বললো ফারহান।
ফারহানের কথায় মনে হলো মিস্টার জাবেদ খানিকটা নিরাশই হয়েছেন কারণ ওনার চেহারায় ফুটে উঠেছে ফ্যাকাসে ভাব। উনি আমতা আমতা করে বললেন ‘ লোকেশন ট্রেস তো করেছি…. কিন্তু ‘
‘ কিন্তু কি আঙ্কেল ? ‘ ফারহান অবাক হয়ে বললো।
‘ ওর লাস্ট লোকেশন পাওয়া গেছে সিলেটে যেখানে ও পৌঁছেই ওর ফোন সুইচ অফ করে দিয়েছে। আই থিঙ্ক ও ধরতে পেরেছে আমরা ওকে ট্রেস করছি। ‘ হতাশ গলায় বললেন মিস্টার জাবেদ।
মিস্টার জাবেদের কথায় যেন মিস্টার কবির আরও ভেঙে পড়েছেন। উনি কপালে হাত রেখে ধপ করে বসে পড়লেন। মিসেস কায়নাত স্থানুর মতো বসে আছেন আর মিসেস আশা উনাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। অতসী কি করবে সে নিজেই বুঝতে পারছে না। ইতিমধ্যে সে তিন চার দফা সবার জন্য কফি করে এনেছে।
সানার মামারাও নিজেদের মতো যথা সাধ্য চেষ্টা করছে সানাহ্কে খোঁজার। নিজেদের যত রকমের সোর্স আছে সব কাজিয়ে লাগিয়েছে তারা। সারাদিন খোঁজাখুঁজি করে যখন উনারা সকলে ফিরে রেস্ট নিচ্ছিলেন তখন মিস্টার জাবেদের এই কথা শুনে শায়খের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে উঠলো। তার মনে মনে আশঙ্কা হলো ফারহান যদি সানাহ্কে খুঁজে বের করে ? মেয়েটা বেরিয়েছে দুদিনও হয়নি। সানার চিঠি পড়ে শায়খ অন্তত এটা বুঝতে পেরেছে সানার কিছুদিন মেন্টাল পিস দরকার আর এর জন্য ওর একা থাকা খুব দরকার,কাইন্ড অফ ওয়েদার চেঞ্জ।
মিস্টার জাবেদের কথায় এবার খানিকটা অসহায় হয়ে পড়লো ফারহান। সানাহ্কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এই ভেবে কাল থেকে তটস্থ তার উপর দিয়ে সানার এসব পাগলামি তাকে সানার উপর আগ্রাসী করে তুলছে। ফারহান আগ্রাসী গলায় বিড়বিড় করে বললো ‘ ইউ হ্যাভ টু রিপেন্ট ফর ইট উডবি মিসেস ফারহান…. ভেরি সুন। আই উইল নট স্পেয়ার ইউ…. ফর গড সেক আই অ্যাম নট গোইং টু স্পেয়ার ইউ ফর দিস টাইম ‘ ।
কথাগুলো নিরুচ্চারে বললেও ফারহান সম্মুখে বললো ‘ তাহলে যতটুকু পেয়েছি তাকেই কাজে লাগাবো। পুলিশ সোর্স তো আছেই….দরকার পরে সিলেটের অলিগলি চেক করবো তবুও সানাহ্কে আমার চোখের সামনে চাই। ‘
‘ তুমি আমার কথা বুঝতে চাইছ না ফারহান। সিলেট কি তোমার ছোট জায়গা মনে হয় ? তুমি ওকে সারাদিনেও খুঁজে বের করতে পারবে না। ‘ মিস্টার জাবেদ বললেন।
‘ আপনি আমার কথা বুঝতে চাইছেন না স্যার। সিলেট বড় বলে কি আমি আমার ওয়াইফকে খোঁজা বন্ধ করে দিব ? শি ইজ গোইং টু বি মাই ওয়াইফ অ্যান্ড আই ওয়ান্ট হার এট এনি কস্ট। একদিনে খুঁজে বের করতে হবে এমন কোনো কথা আছে ? আমরা দরকার পড়ে ওকে কয়েক দিন লাগিয়ে খুঁজব কিন্তু খুঁজব। আপনি চিন্তা করবেন না….আমি সিলেট পুলিশ অফিসারের সঙ্গে কথা বলে নিবো। আপনাকে সানাহ্কে খুঁজতে হবে না ‘ ফারহান রাগী গলায় বললো।
‘ সানাহ্ শুধু তোমার উড বি ওয়াইফ নয় আমারও বন্ধুর মেয়ে তাই ওর প্রতি আমার কিছু দায়িত্ত্ব আছে। আর জাবেদ আলী কখনও নিজের দায়িত্বে আপোস করেনা। আই এম গোইং উইথ ইউ…… ‘ থমথমে গলায় বললেন মিস্টার জাবেদ।
‘ এজ ইউর উইশ ‘ বলে ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ফারহান। সে ভাবেনি এভাবে সানাহ্কে পেয়েও হারাতে হবে। ভুলটা তারই..…সে যদি বিয়ে নিয়ে আপত্তি না করতো তাহলে এসব হতো না। তবে নিজের ভুল শুধরে নেয়ার সময় এখন এসে গেছে।
—-
Saanson mein saanson mein
Teri sargamein hai ab rat din
Zindagi meri toh kuch naa
Ab tere bin
Teri dhadkanon ki sargoshi
Meri dhadkanon me bajti hain
Meri jagti nigaahon me
Khwahish teri hi sajti hain
Mere khayal mein har pal
Tere khayal shaamil hain
Lamhe judaiyon waale
Mushkil bade hi mushkil hain
Oh piyaa….
ছাম ছাম ঘুঙুরের শব্দে মুখরিত পুরো হলঘর। অনবরত বেজে চলেছে সেই মিষ্টি মধুর শব্দ। বিশাল হলঘরের মাঝে হাত পা গানের তালে নাড়িয়ে নাড়িয়ে অনবরত নেচে চলেছে সানাহ্। মুখে তার মিষ্টি মধুর হাসি আর ঠোঁটও নড়ছে গানের তালে । তাকে ঘিরে খানিকটা দূরেই দল বেঁধে দাড়িয়ে আছে এক রাশ যুবতী। তারা সকলেই মুগ্ধ সানার নাচ দেখে। তারা ভাবেনি যেই মেয়েটাকে দেখতে এত স্থির, অচঞ্চল মনে হয় সে নাচের সময় এভাবে প্রাণবন্ত হয়ে নাচতে পারে।
সানাহ্ তার প্রাণবন্ত হাত পা ছড়িয়ে নেচে চলেছে পুরো ঘরময়। একসময় নাচতে নাচতেই সে তার আজকের তালিম শেষ করলো। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের মাঝে নাচ করতে গিয়েও সে ঘেমে একাকার। কাউচে বসে মিলাকে বললো এসির টেম্পারেচার আরও কমিয়ে দিতে। তারপর পাশ থেকে নিজের ওয়াটার পটটা নিয়ে গলায় পানি ঢাললো। খানিকটা জিরিয়ে নিয়ে এবার বললো ‘ যেহেতু আমার আগেও একজন এক্সপেরিয়েন্সড টিচার তোমাদের নাচ শিখিয়েছেন সেহেতু আমি মনে করি এই নাচ তুলতে তোমাদের তেমন সমস্যা হবে না। আজ ডেমো দেখিয়েছি…. কাল থেকে নাচ তোলার প্রয়াস চলবে। ঠিকাছে ? আর আগের নাচটা নিয়মিত প্রাকটিস করবে নাহলে মনে থাকবে না। ঠিকাছে ? ‘
সকলে নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সায় দিল সানার কথায়। তারা সকলেই হতভম্ব সানার নাচ দেখে। তাদের মনে হলো এতটা ভালো নাচ তাদের প্রিভিয়াস টিচারও পারতেন না। সানাহ্ যেই গানে নেচেছে সেই গানে সে খুব ভালো করেই নিজের ব্যালান্স মেইনটেইন করেছে। এই ধরনের নাচ করাটা অনেকটা কষ্ট সাধ্য ব্যাপার কারণ এই নাচ যত দ্রুত নাচা যায় ততই সুন্দর যার কারণে প্রায় সময় ব্যথায় পা টনটন করে। তবে সানাহ্ সেসবের ধারের কাছেও নেই কারণ এসব তার বহু বছরের সাধনার ফসল।
—-
‘ মিস সানাহ্ আপনি দেখছি অল্প সময়েই স্টুডেন্টদের মন জয় করে নিয়েছেন। সকলে এখন আপনার কাছেই নাচ শিখতে চাইছে। প্রথমে তো বাচ্চারা মানতেই চাইছিল না নতুন টিচারকে কিন্তু এখন তারা অবাক আপনার নাচ দেখে। ‘ মিসেস শকুন্তলা বললেন।
মিসেস শকুন্তলা নাচের স্কুলের একজন পুরোনো শিক্ষক। এই স্কুলের সঙ্গে সে জড়িত আছে একদম প্রথম থেকে যখন স্কুলটা একটা কামরার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। উনার আর গুরুজীর যৌথ চেষ্টায় আজ নাচের স্কুল অনেক বড় হয়েছে।
মিসেস শকুন্তলার কথা শুনে আলতো হাসলো সানাহ্। হালকা হেসে জরুরি কথাবর্তা শেষ করে কাধে ব্যাগ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল। একজন নিউ কামার হিসেবে সে ভালই উন্নতি করেছে সিলেটে এসে। একটা ভালো নাচের স্কুলে চাকরি সেই সঙ্গে কিছু টিউশনি। এর থেকে যা আর্ণ হয় তাতে আরামসে চলে যাবে সানার। এখানে এসে সানার বরং সুবিধাই বেশি হয়েছে।
জাপানের সাহায্যে একটা দুই রুম,একটা বারান্দা আর এক বাথরুমের ফ্ল্যাট পেয়েছে খুবই স্বল্প ভাড়ায়। তার উপর চাকরির ব্যবস্থাও জাপানই করেছে। সব মিলিয়ে হয়তো মাস শেষে হাজার দুয়েক টাকা সেভিংসও করা যাবে। তারপর অনেকগুলো টাকা জমলে সেটা দিয়ে কোথাও ইনভেস্ট করে ভালোই কামাই করা যাবে।
ভবিষ্যৎ চিন্তা ভাবনা করতে করতেই এগোচ্ছিল সানাহ্। মনে পড়লো বাড়ি ফিরে ফারহানকে একটা চিঠি লেখা দরকার। বেচারা হয়তো চিন্তায় আছে। সানার খানিকটা খারাপই লাগছে এভাবে সবাইকে ছেড়ে এসে থাকতে। সবাই হয়তো ওকে নিয়ে টেনশন করছে। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে চোয়াল শক্ত করে ভাবলো খারাপ লাগলেও সেই খারাপ লাগা কাটাতে হবে। এই স্বার্থপর পৃথিবীতে সবাই নিজের কথাই ভাবে তাই সে যদি নিজেকে নিয়ে ভাবলে তাতে কোনো অপরাধ নেই।
ফ্ল্যাটে ফিরেই চুলায় রান্না চরাল সানাহ্। এই ক্ষেত্রেও জাপানকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। সে না থাকলে সানাহ্ একলা এতকিছু সামলে উঠতে পারত না। ফ্ল্যাটের টুকিটাকি যা লাগবে তার সবই জোগাড় করে দিয়েছে জাপান। তেল থেকে শুরু করে হাড়ি সবই। সানাহ্ এই প্রথম কারোর প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করছে।
রান্না শেষ করে ঘর পরিস্কার করে ফ্যান ছেড়ে ফ্যানের নিচে বসলো সানাহ্। এই শীতকালেও কাজ করায় সে ঘেমে একাকার। সে সিলেট এসে উঠেছে তার প্রায় এক সপ্তাহ হতে চললো। প্রথম প্রথম বুঝে উঠতে পারছিলো না কি করবে। মনে হচ্ছিল বাড়ি ছেড়ে এসে ভুল করেছে। সেই সময় দেবদূত হয়ে এলো জাপান আর ফারাইরা নামের সেই মেয়েটা যে ওকে বাসে হেল্প করেছিল। আসলে মেয়েটা জাপানের উডবি ওয়াইফ। সে প্রথম দিন সানাহ্কে দেখেই চিনতে পেরেছে আর সানাহ্ নিজেও। অবাক হয়েছিল এটা জেনে যে ওই পিচ্ছি মেয়ে জাপানের বাগদত্তা।
সানাহ্ যখন ফ্যানের নিচে বসে নিজেকে ঠান্ডা করতে ব্যস্ত তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো। সানাহ্ কিছুক্ষণ ভ্রূ কুচকে চিন্তা করলো কে আসতে পারে। জাপান নাকি পাশের ফ্ল্যাটের জয়িতা বৌদি ? তবে দরজা না খুললে তো জানা যাবে না তাই সানাহ্ গায়ে ওড়না জড়িয়ে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলেই বাইরে দাড়িয়ে থাকা জয়িতা বৌদিকে দেখে তার ঠোঁটের কোণে আপনিতেই হাসি ফুটে উঠল।
জয়িতা মিত্র হলেন সানার নেইবার। উনার সঙ্গে উনার স্বামী হরিহরও থাকেন। এই হিন্দু দম্পত্তি নিজেদের বিশাল বিলাসবহুল বাড়ি ছেড়ে ছোটো বাড়িতে থাকতে এসেছেন শুধুমাত্র জীবনের শেষ বয়সে একটু একসঙ্গে আলাদা সময় কাটাবেন বলে।
মিসেস জয়িতা সেই সূত্রে বড়ই মিশুক। উনাদের পাশের ফ্ল্যাটে যেই আসে তার সঙ্গেই বন্ধুত্ত্ব করে ফেলেন তবে উনার এই বন্ধুত্ত্ব কারোরই ভালো লাগে না বলে কয়েকদিন পরই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এক্ষেত্রে সানাহ্ খানিকটা অন্যরকম। সে শত ইন্ট্রোভার্ট হওয়া সত্ত্বেও প্রথম দিনেই মিসেস জয়িতার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিয়েছে।
‘ আরে জয়িতা বৌদি তুমি ? বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন ? ঘরে এসো…… ‘ বলে সানাহ্ মিসেস জয়িতার হাত টেনে তাকে ঘরে নিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে তাকে নিয়ে বারান্দায় বসলো। বারান্দায় জাপান দুটো বেতের সোফা আর একটা কাচের ছোটো টি টেবিল লাগিয়েছে তাই সেখানেই বসেছে ওরা।
‘ তুমি একা কেন ? হরি দা কোথায় ? উনি কি আজও বাজার গেছেন ? কাল না তোমরা বাজার করলে ? ‘ সানাহ্ জিজ্ঞেস করলো।
‘ আরে না না আজ ও বাজার যায়নি। আসলে ও একটু বেরিয়েছে। ওর পায়ের ব্যথাটা বেড়েছে কদিন ধরে কিন্তু আমায় কিছুই বলেনি। আজ হঠাৎ করে কথায় কথায় বলে ফেললো। তাই আমি বললাম আমি গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসি ফার্মেসি থেকে কিন্তু সে শুনলে তো। সে বলে সে থাকতে আমি কেন বের হবো ? তাই সে একাই বেরোলো… ‘ মিসেস জয়িতা বললেন।
‘ ওহ্ আচ্ছা…… তা তুমি কি খাবে বলো। আমি চা করে আনবো ? তারপর দুজনে মিলে বিস্কিট ডুবিয়ে খাবো। চলবে না ? আসলে ঘরে তেমন কিছু নেই। আজ বাজার শেষ। আবার বেরিয়ে আনতে হবে…. ‘ সানাহ্ বললো।
‘ আরে না না ওসবের দরকার নেই। আমি ভাবছি আজ তোকে নিয়ে একবার আমার মেয়ের বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসবো। তুই যাবি আমার সাথে ? ‘ মিসেস জয়িতা আলতো হেসে বললেন।
মিসেস জয়িতার কথা শুনে মনে হয় একটু অসস্তিতে পড়লো সানাহ্। আমতা আমতা করে বলল ‘ না মানে আমি…. আমি কি করে যাবো ? তোমার মেয়ে আমাকে চিনে না আর আমিও তাকে চিনি না। ‘
‘ আরে চিনাচিনি করা লাগবে কেন ? তুই যখন এসেছিলি তখন কি আমাকে চিনতি ? তোর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে না ? তাহলে ওর সঙ্গেও হবে। আমি কোনোকিছু শুনতে চাচ্ছি না। তুই আমার সঙ্গে যাবি ব্যাস…. তোর দাদা আজ যেতে পারবে না। তার পায়ে ব্যথা। ‘
অগত্যা সানাহ্ আর কি করবে। তার রাজি হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
~ চলবে ইনশাআল্লাহ….
ছবিয়াল: পিন্টারেস্ট