#প্রেমমানিশা(১৫)
‘ ফারহান আর কতদিন এভাবে সানাহ্কে খুঁজবি বাবা ? এবার তো চলে আয়…… এরকম করলে তোর চাকরি কি করে থাকবে ? ‘ মিসেস আশা বিমূর্ষ গলায় ফোনের ওপারে থাকা ফারহানকে বললেন।
ভদ্র মহিলা নিজের ছেলেকে নিয়ে এখন বেশ চিন্তায় আছেন। ছেলে তার সানাহ্কে খুঁজতে গিয়ে চাকরি বাকরি ছেড়ে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা যে সানার জন্য এতটা পাগল সেটা উনি আগে বুঝতে পারেননি। বুঝলে হয়তো সানার সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার চিন্তাই করতেন না। অন্তত সানার জন্য তো নিজের ছেলেকে কষ্টে দেখতে চাননা সে সানাহ্ যতই বান্ধবীর মেয়ে হোক ।
‘ এক কথা আর কতবার বলবে মা ? আমি তো বলেই দিয়েছি আমার এখন ফার্স্ট প্রায়োরিটি হলো সানাহ্কে খুঁজে বের করা। সে এর জন্য যদি আমাকে চাকরি হারাতে হয় তাহলে আমি তাতেও রাজি । তাছাড়া আমি তো ভার্সিটিতে মেইল করে জানিয়েই দিয়েছি যে আমার ছুটি লাগবে। তাহলে এই কথা আসছে কোথা থেকে ? ‘ ফারহান বিরক্ত হয়ে বলল। রোজ রোজ মায়ের এক কথা তার আর ভালো লাগছে না।
‘ এমন পাগলামি কেন করছিস তুই ? সানার জন্য এতটা পাগল তো তুই ছিলি না..… তাহলে কি তোকে সানার সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করে কোনো ভুল করলাম ? ‘ মিসেস আশা বললেন ।
‘ আমি পাগলামি কেন করছি সেটা কি তুমি বুঝতে পারছ না মা ? না বুঝলে বলে দিচ্ছি,আমি সানাহ্কে ভালোবাসী। এই কথা তো সানাহ্ আর আমার বিয়ে ঠিক করার আগে ভাবা উচিত ছিল। তোমার থেকে অন্তত এটা আশা করিনি মা। আগে সানাহ্ যখন তোমার কাছে ভালো ছিল তখন তাকে বিয়ে করার জন্য তুমি আমায় জোর করছিলে আর আজ ওর বিপদে ও তোমার কাছে খারাপ হয়ে গেলো বলে ওকে আমার কাছ থেকে দূরে সরাতে চাচ্ছো ? মা তুমি কি সেলফিশ হয়ে যাচ্ছ না ? ‘ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল ফারহান।
ছেলের কথায় চুপ করে গেলেন মিসেস আশা। কিছু বলার মতো ভাষাই খুঁজে পেলেন না। বারবার মনে হলো তাহলে কি সে স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে ? ফারহান তার মাকে চুপ করে থাকতে দেখে নরম গলায় বললো ‘ চিন্তা করোনা,খুব তাড়াতাড়ি তোমার হবু ছেলের বউকে নিয়ে ফিরবো। আমার মন বলছে সে আমার আশেপাশেই কোথাও আছে। ‘
ফারহান কথাগুলো বলেই ফোন রেখে দিল। ছেলে ফোন রাখতেই মিসেস আশা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। উনি জানেন না ফারহান আর সানার এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি। শুধু ভয় হচ্ছে এভাবে করে ওদের জীবনটা না নষ্ট হয়ে যায়।
আজ সানাহ্ মোটামুটি খানিকটা সাজগোজ করেই বেরিয়েছে। পরনে তার টকটকে লাল জামদানি শাড়ি আর বাদামি রঙ্গা চুলগুলো কোমর অব্দি ছাড়া। ডান হাতে একটা রিস্ট ওয়াচ যেটা তাকে তার পঁচিশতম জন্মদিনে তার বাবা দিয়েছিলেন। ব্যাস এই অব্দিই তার সাজ। এর থেকে এক চুলও বেশি সাজাতে পারেননি মিসেস জয়িতা। অবশ্য সানাহ্কে সাজিয়ে নিয়ে যাওয়াটা পুরোপুরি উনার ইচ্ছা আর সানাহ্ও তাকে শ্রদ্ধা করে বলে না করতে পারেনি।
দুই সুন্দরি রমনী যখন শাড়ি পড়ে সেজেগুজে রাস্তায় বের হলেন তখন রাস্তায় থাকা পথচারীরা সকলেই অন্তত একবার একবার করে তাদের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে। যাঁরা সানার এই অসামান্য রুপে চোখ দিচ্ছে তারাই দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার ঘুরে আবারও তাকাচ্ছে। মিসেস জয়িতা সানাহ্কে এসব দেখে একটা চোখ টিপ মারলেন তবে সানাহ্ নির্বিকার। সে চেয়েছিল বিয়ের পর এরকম করেই ফারহানের জন্য সাজবে। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি।
সানাহ্দের বাড়ি থেকে মিসেস জয়িতার মেয়ে ঐশানির বাড়ি পায়ে হেঁটে দশ মিনিটের দূরত্বে তাই ওরা আর কোনো ট্রান্সপোর্ট প্রেফার করলো না। সোজা পায়ে হেঁটেই এগিয়ে যেতে লাগলো। কাটায় কাটায় দশ মিনিট পর তারা এসে পৌঁছল এক মাঝারি আকারের দোতলা বাড়ির সামনে। বাড়িটা বাইরে থেকে দেখেই মনে হচ্ছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি। হয়তো ঐশানির শশুরের বাড়ি।
মিসেস জয়িতা এক প্রকার খানিকটা ঠেলেই সানাহ্কে নিয়ে বাড়ির সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন। ডান হাতে কলিং বেল দিলেন। বেল বাজাতেই মিনিট দুইয়ের মধ্যে একটা অল্প বয়সী শাড়ি পরিহিতা মেয়ে এসে দরজা খুললো আর ওদের দেখে বেশ চওড়া এক হাসি দিল। সানাহ্ আন্দাজ করলো বোধ করি এই মেয়েই ঐশানি।
ঐশানি সৌজন্য হেসে মিসেস জয়িতা আর সানাহ্কে অভ্যর্থনা জানিয়ে বাড়ির ভিতরে নিয়ে এলো আর ওদের সোফায় বসিয়ে রেখে স্নাকসের ব্যবস্থা করতে গেলো। ঐশানি প্রস্থান করতেই সানাহ্ আশেপাশে চোখ ফিরিয়ে পুরো বাড়ি পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। বাড়িটা ওদের বাড়ির মত অত বড় নাহলেও তিন চারজনের থাকার জন্য বেশি হয়ে যায়। সানাহ্ মিসেস জয়িতার কাছে জানতে পেরেছে ঐশানির শশুর বাড়িতে আছে বলতে ওই স্বামী, শাশুড়ি আর এক মধ্য বয়সী ভাসুর যার মানসিক কিছু সমস্যা আছে বলে সে সবসময় বাড়িতেই থাকে। বিয়েটা তার হয়নি।
কিছুক্ষণ পরেই মুখে এক চওড়া হাসি নিয়ে স্নাক্সের ট্রে হাতে বসার ঘরে এসে হাজির হলো ঐশানি। ট্রে রেখে দ্রুতই সে আবারও অন্তর্ধান। মিনিট দুয়ের মাঝেই সে ফিরে এলো কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে। সেগুলো টি টেবিলে রেখে সানার মুখোমুখি বসলো। সানাহ্ ঐশানির দিকে তাকিয়ে আছে।
ঐশানি ভট্টাচার্য মিসেস জয়িতা মিত্র এবং হরিহর মিত্রর একমাত্র মেয়ে এবং তাদের তৃতীয় সন্তান। বয়স আনুমানিক ২৩-২৪ হবে তারমানে সে সানার ছোট। মুখভাব তার গোলগাল আর চোখগুলো টানা টানা। মাথার চুল কোমরের অনেকটা উপরে তবে ঘাড়ের নিচে। গলায় সরু এক সোনার চেইন আর কানে সোনার ছোটো কানের দুল। হাতেও শোভা পাচ্ছে শাঁখা পলা আর নোয়া। মাথা ভর্তি সিঁদুর যেন এই অল্প বয়সী নারীর সৌন্দর্য্য আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি করেছে। তার আরক্তিম গাল জোড়া জানান দিচ্ছে সে রুপে অসামান্য সুন্দরী। সানার কেন জানি ঐশানিকে দেখে ইচ্ছে করলো ‘ পুতুল ‘ বলে ডাকতে। অন্তত মেয়েটা গায়ে গতরে তো পুতুলের মতই দেখতে। হাইটে বেশি নয় আনুমানিক ৫’২” আর শরীরও অনেকটা রোগা তার উপর খানিকটা ফ্যাকাসেও।
মিসেস জয়িতা নুডুলসের পাকোড়া সানার হাতে তুলে দিয়ে সানার সঙ্গে ঐশানির পরিচয় করিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই ঐশানি বলে উঠলো ‘ তোমাকে বলতে হবে না মা। আমি জানি ও সানাহ্..…সানাহ্ দি। তুমি ওর অনেক প্রশংসা করেছ এই কদিনে তাই ও কিরকম দেখতে তা আমার মুখস্ত। রিয়েলি শি ইজ এ ব্লন্ড গার্ল……লাইক এ প্রিন্সেস ‘ ।
ঐশানির স্বগতোক্তি শুনে সানাহ্ কি বলবে বুঝে পেলো না। তার হাতে তেলে চিটচিটে পাকোড়া। পাকোড়ার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে সানাহ্। পরিস্থিতির চাপে কতকিছুই না করতে হয়। এর আগে সানাহ্কে কেউ কখনও মেরেও এমন অইলি খাবার খাওয়াতে পারেনি অথচ আজ ভদ্রতার খাতিরে দায়ে পড়ে খেতে হচ্ছে। দা ওরস্ট ডে….
‘ তুমি বসে আছো কেন দিদি ? পাকোড়াটা মুখে দাও না..… তোমার কি ভালো লাগছে না পাকোড়া খেতে ? তাহলে আমি অন্যকিছু করে আনি ? ‘ ঐশানি বললো।
ঐশানির কথায় চমকে উঠে মেকি হেসে আমতা আমতা করে সানাহ্ বললো ‘ নাহ্ খাচ্ছি তো…… এই যে। ‘ মুখে কমপ্লিমেন্ট না দিলেও সানার কাছে পাকোড়াটা খারাপ লাগেনি। খেতে ভালো তবে ডিপ ফ্রাই করা এই যা। যাকগে একদিন খেলে কিছু হবে না। সানাহ্ হাতের পাকোড়া শেষ করে বললো ‘ অনেক ভালো হয়েছে খেতে ‘
‘ তাহলে তুই আরেকটা নে..… বসে আছিস কেন ? এমা এখন কি খাবারও তোর হাতে তুলে দিতে হবে ? দাড়া দিচ্ছি…… ‘ বলে মিসেস জয়িতা সানার হাতে আরও একটা পাকোড়া তুলে দিলো আর সানাহ্ও কোনো আপত্তি করলো না।
‘ মা তোমরা বসো……আমি শাশুড়ি মাকে ডেকে আনছি। তুমি এতক্ষণ হয়েছে এসেছো কিন্তু উনাকে ডাকিনী শুনলে আমি আস্ত থাকবে না। তোমরা গল্প করো..… ‘ বলেই ঐশানি অন্তর্ধান তার শাশুড়ির খোঁজে।
ঐশানি বেরিয়ে যেতেই মিসেস জয়িতা সানাহ্কে সুধালেন ‘ কি হয়েছে ? খারাপ লাগছে ? ‘
সানাহ্ ইনিয়ে বিনিয়ে বললো ‘ না আসলে শাড়ি এই প্রথম পড়েছি তাই অসস্তি লাগছে। ‘ খানিকটা মিথ্যা কথাই বললো সানাহ্ কারণ খাবারের কথাটা বললে জয়িতা দেবীর খারাপ লাগতে পারে।
‘ আচ্ছা একটু সহ্য করে নে……আর এসব পড়িয়ে তোকে নিয়ে ঘুরতে বের হবো না। সন্ধ্যা অব্দি একটু বসে যাই ঐশানির শাশুড়ি বনলতা দেবী আবার খুব মিশুকে। মানুষ পেলেই আড্ডা দিতে বসে যান। আসলে এই বয়সে কেউ নেই তো গল্প করার জন্য তাই। ‘ মিসেস জয়িতা বললেন।
মিসেস জয়িতার কথায় সানাহ্ আলতো করে মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বুঝিয়ে দিল সে সামলে নিবে। সানার সম্মতি পেয়ে মিসেস জয়িতা পরমানন্দে সমুচা ভেঙে খেতে শুরু করলেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই ঐশানি তার শাশুড়ি নিয়ে হাজির হলো। ভদ্র মহিলা মিসেস জয়িতাকে দেখে যার পরণাই খুশি হলেন। খুশি হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কুশলাদি বিনিময় করলেন । কুশলাদি বিনিময় শেষে মিসেস জয়িতা মিসেস বনলতার সঙ্গে সানার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন ‘ ও হলো সানাহ্..…আমার নেইবার। খুবই মিশুকে আর প্রাণবন্ত। ‘
সানাহ্কে দেখে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তীক্ষ্ণ চোখে জরিপ করলেন মিসেস বনলতা। মিসেস বনলতার এহেন দৃষ্টি দেখে ভরকে গেল সানাহ্। খানিকটা নড়েচড়ে বসতেই মিসেস বনলতা পান খাওয়া দাত মেলে হেসে বললেন ‘ হাও আর ইউ ইয়াং লেডি ? ‘
ভদ্র মহিলা যে সানাহ্কে এভাবে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবে সেটা জানা ছিলনা সানার। প্রথমে উনার এহেন ব্যবহারে খানিকটা ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে গেলেও দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বললো ‘ আই অ্যাম ফাইন ‘ ।
এবার কেন যেন মিসেস বনলতা চিন্তায় পড়ে গেল। গালে হাত দিয়ে উনাকে কিছু ভাবতে দেখা গেলো। সানাহ্ ব্যাপারটা লক্ষ্য করে ঐশানিকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো মানুষটার এরকম ব্যবহারের কারণ কি। ঐশানি সেই ইশারা বুঝতে পেরে চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো খানিকটা সবুর করতে, কিছুক্ষনের মধ্যেই বোঝা যাবে।। সানাহ্ সেই মতে স্থির হয়ে বসলো।
‘ ইউ আর এ ভেরি ইন্ট্রোভার্ট পারসন,রাইট ? ‘
আচমকা মিসেস বনলতার এহেন প্রশ্নে চমকে উঠলো না সানাহ্। সে নিজেকে তৈরি করেই রেখেছিল সেভাবে। মাথা নেড়ে বললো ‘ হুম ‘ । মিসেস বনলতা হেসে বললেন ‘ তোমার উত্তর শুনেই বুঝেছি। যারা ইন্ট্রোভার্ট তারা প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেয়।। আর যারা এক্সট্রোভার্ট তারা সবসময় প্রশ্নকর্তার উত্তরের সঙ্গে নিজের কথাও জুড়ে দেয়। তাই তুমি ইন্ট্রোভার্ট। ‘
‘ সে কি সানাহ্ ইন্ট্রোভার্ট ? কই ওর ব্যবহারে তো কিছুই টের পাইনি। বরং আমার সাথে আর ঐশানির বাবার সঙ্গে বেশ হেসে হেসেই তো কথা বলে। ‘ মিসেস জয়িতা অবাক হয়ে বললেন। তার কথায় বিস্ময়ের রেশ। উনি ধারণা করেননি সানাহ্ তার সত্তা লুকিয়ে রেখেছে।
‘ ইন্ট্রোভার্ট মানেই যে হাসতে,কথা বলতে জানে না তা না। যারা ইন্ট্রোভার্ট তারা স্পেসিফিক কিছু মানুষের সঙ্গে মন খুলে কথা বলে আর আপনারা হলেন তাদেরই একজন। ‘ মিসেস বনলতা বললেন।
‘ আন্টি আপনি কি সাইকোলজি নিয়ে পড়াশুনা করেছেন ? ‘ সানাহ্ জিজ্ঞেস করলো।
‘ হুম করেছি তো…… কিন্তু মৈনাক ( ঐশানির স্বামী) হওয়ার পর ছেড়ে দিয়েছিলাম। ইউ আর এ ইন্টেলিজেন্ট পারসন সানাহ্। সারাদিন সংসার ছেলে মেয়ে সামলে চাকরি করা সম্ভব ছিলনা সেটা তো বুঝতেই পারছ। ‘ মিসেস বনলতা পরম উৎসাহে বললেন।
মিসেস বনলতার কথা শুনে সানাহ্ বিজ্ঞের মত মাথা নাড়ল যেন এই বিষয়ে তার প্রচুর অভিজ্ঞতা। সানাহ্কে এভাবে মাথা নাড়তে দেখে মিসেস বনলতা মুচকি হেসে বললেন ‘ তা তুমি কি নিয়ে পড়ছো ? ‘
‘ ইংলিশ লিটারেচার নিয়ে…. ঢাকা ইউনিভার্সিটি ‘ শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট দুটো জিহ্বার আগা দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে বললো।
‘ বাহ্ ভালই তো…. তা এখান থেকে পড়াশোনা করতে কষ্ট হয়না ? ‘
‘ আমি ঢাকা থেকেই পড়াশোনা করতাম। এখানে শুধু কিছুদিনের ওয়েদার চেঞ্জের জন্য এসেছি। সামনে পরীক্ষা আছে তাই কিছুদিন পরই ফিরে যেতে হবে। ‘
‘ ওহ্…… তুমি কোন ইয়ার ? ‘
‘ অনার্স ফাইনাল ইয়ারে ‘
‘ মাস্টার্স কী ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকেই করবে ? ‘ মিসেস বনলতা কৌতূহল দমাতে সানাহ্কে প্রশ্ন করে বসলেন।
‘ না সেভাবে কিছু ভাবিনি..… দেখি আগে পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্ট বের হোক ‘ সানাহ্ বিব্রত সুরে উত্তর দিলো। এই প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর নেই তার কাছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সে এখনও করেনি। যা চিন্তা ভাবনা করার তা অনার্স পরীক্ষার পর পাকা করবে। আপাতত নো স্ট্রেস..
সানার কথা শুনে মিসেস বনলতা শুধুমাত্র ‘ ওহ্ ‘ বলে আবারও আড্ডায় মশগুল হয়ে পড়লেন।
আড্ডায় আড্ডায় কখন যে দিনের আলো পেরিয়ে রাতের আঁধার নেমে এলো সেটা কারোর খেয়ালই রইলো না। সকলেই তাদের কথায় ব্যস্ত। আঁধার ঘনিয়ে আসতেই মিসেস জয়িতার খেয়াল হলো রাত অনেক হয়ে গেছে, এখন বাড়ি ফেরা দরকার। কথাটা মনে পড়তেই সানাহ্কে বেড়িয়ে পড়ার জন্য তাগাদা দিলেন উনি। অবশ্য মিসেস বনলতা আর ঐশানি রাতে খাওয়া দাওয়া করে ওই বাড়িতেই থেকে যেতে বলেছিলেন কিন্তু মিসেস জয়িতা আর সানাহ্ কেউই রাজি হননি।
উভয়ই রাজি হননি বলে ভুল হবে কারণ সানাহ্ই চোখের ইশারায় মিসেস জয়িতাকে বলেছিল যে সে এখানে রাতে থাকতে চাইছে না। অগত্যা মিসেস জয়িতাকে সানাহ্কে সঙ্গে করে বেরিয়ে পড়তে হলো।
প্রকৃতিতে অন্ধকার নেমে আসায় মিসেস বনলতা মিসেস জয়িতা আর সানাহ্কে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তার এক বিশ্বস্ত ড্রাইভারকে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দিলেন। অতঃপর ড্রাইভার ওদের দুজনকে তাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে ফিরে গেলো। বাড়ি ফিরে সানাহ্ বাইরের জামা কাপড় ছেড়ে ফ্যানের নিচে বসে খানিকটা জিরিয়ে নিলো। একটু বিশ্রাম নিয়ে উঠে ভাত চড়ালো, মাড় গালা ভাত।
ভাত বসিয়ে দিয়ে কাধে গামছা,জামা কাপড় নিয়ে সানাহ্ বাথরুমে ঢুকলো গোসল সারতে। চুলায় ভাত বসানো আছে আর দেরি হলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এই ভেবে সানাহ্ দ্রুতই গোসল সেরে বেরিয়ে রান্নাঘরে দৌড় দিল। ভাতের মাড় গেলে রান্নাঘরের তাকের উপর রেখে ঘরে ফিরে এলো। মাথার গামছা বারান্দায় মেলে চুল ছেড়ে খানিকটা আছড়ে দিয়ে ফ্যানের নিচে চুল ছেড়ে দাড়ালো যাতে চুল শুকিয়ে যায়।
চুল খানিকটা শুকিয়ে প্লেটে পাতিলের ভাত নামিয়ে ফ্যান ছেড়ে ঠান্ডা করতে দিলো। দুপুরের রান্না করা তরকারি চুলায় বসিয়ে একটু নাড়াচাড়া দিয়ে বলক আনিয়ে খাবার ঘরে নিয়ে এসে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে আসন পেতে বসলো। প্লেটে তরকারি নিয়ে খেতে শুরু করলো। এভাবে মেঝেতে বসে খেতে সানার অনেকটা কষ্টই পোহাতে হচ্ছে কারণ মেঝেতে বসে খাওয়া তার অভ্যেসে নেই। খাওয়া শেষে সানাহ্ বাসনকোসন সিংকে জমিয়ে সেগুলো ধুয়ে ঘরটা একটু গুছিয়ে চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাইরে হাঁটাহাঁটি করতে।
সানার সিলেট এসে থেকে অভ্যাস হয়েছে প্রতিদিন রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাইর হাঁটতে বের হওয়া আর সেই হাঁটা চলে নদীর কাছে পৌঁছানোর আগ অব্দি। অবশ্য ওকে এহেন রাতের বেলা বের হতে দেখে রাস্তায় থাকা লোকগুলো প্রায়ই ওর দিকে ভুত দেখার মত চমকে তাকায় কিন্তু ও সেসব পাত্তা দেয়না। কিন্তু আজ নদীর পাড়ে যাওয়াটা যে তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিবে সেটা কে জানতো। তার জীবনের সবকিছু বদলে দিবে।
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্..…