#প্রেমমানিশা(২৫)
সানাহ্ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। তার দৃষ্টি কিছুতেই সরছে না ফারহানের থেকে। ফারহানকে এভাবে ভিলেন মার্কা উচ্চহাসিতেও যে এত সুন্দর লাগবে সেটা সানার জানা ছিলনা। হাসতে হাসতে ফারহানের গালে টোল পড়েছে। সেই দৃশ্যও মারাত্মক নজরকাড়া। কতদিন এরকম কাউকে হাসতে দেখেনি। বাড়ির সকলে তো তার ভয়েই তটস্থ থাকে যার কারণে সামনে কেউ হাসেনা। কিন্তু এরকম হাসিও একজনকে অনেক বছর আগে হাসতে দেখেছিল সানাহ্।
সানার বাবাই আফজাল সাহেবও ঠিক এভাবেই হাসতেন। হাসলে গালে টোল পড়তো। কপালের রগগুলো ভেসে উঠতো। সানার বড় ভালো লাগতো সেই দৃশ্য। সানার মামণিও ঠিক এভাবেই সানার বাবাইকে হাসতে দেখে এক নজরে তাকিয়ে থাকতেন। যেন মিটিয়ে নিচ্ছেন তার সারাজীবনের তৃষ্ণা। আজ সানাহ্ও তার মায়ের দেখানো পথে হাঁটছে আর ফারহান সানার বাবাইয়ের পথে।
‘ আর কত হাসবেন কবি সাহেব ? এভাবে হাসলে তো পেট ব্যথা করবে । ‘ বলে সানাহ্ ওর হাতের ফ্যান মুছার কাপরটা রেখে বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে গেলো। ফারহানের দিকে এগিয়ে গিয়ে ফারহানের সামনে দাঁড়ালো। ফারহান হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো। ওর হাসি যেন থামতেই চাইছে না। সানাহ্কে রাগাতে
তার বেশ ভালো লাগে। রেগে গেলে সানার ফর্সা মুখ যেন লাল আপেলের মতো হয়ে যায়। তখন ফারহানের ইচ্ছা করে টুক করে সেই আপেল খেয়ে ফেলতে।
ফারহানকে থামানোর উপায় পাচ্ছে না সানাহ্। ফারহানের এরকম হাসাহাসি তার ভালো লাগছে না। ফারহানের ঝংকার তোলা হাসি তাকে আরও দূর্বল করছে। উপায় না পেয়ে সানাহ্ এবার এমন কিছু করলো যার পর ফারহানের হাসি আপনিতেই বন্ধ হয়ে গেলো।
ফারহানের বাম হাতের তালুতে এমন জোরে চিমটি কাটলো যে ব্যথায় ফারহানের হাসিই বন্ধ হয়ে গেলো। ফারহান ভাবেনি সানাহ্ হুট করে তাকে এভাবে চমকে দিবে। সানার কথা তাহলে ঠিকই। সে ঠিকই প্রতি নিয়ত ফারহানকে চমকে দিচ্ছে কিন্তু পার্থক্য এটাই যে সেটা চিঠি লিখে নয় নিজের উদ্ভট সব কাজকর্ম দিয়ে। ফারহান এবার সানার দিকে তাকালো। ফারহানকে চুপ করাতে পেরে বিজয়ের হাসি হাসছে সানাহ্।
সানার ঠোঁটের কোণে এই দুর্লভ,অপার্থিব আর প্রচ্ছন্ন হাসি আরেকবার ফারহানকে বাধ্য করলো সানার প্রেমে পড়তে। সর্বদা গম্ভীর ভাব ধরে রাখা চেহারায় ক্ষনিকের জন্য ফুটে উঠা হাসি যেন ফারহানের চোখে এক অদৃশ্য ঘোর তৈরি করলো। ফারহান এই ঘোরের মাঝে পড়ে আটকে রইলো সানার ওই দূর্লভ হাসির মাঝেই। মনের অজান্তেই সানার হাসি যেন ফারহানের মনে চিরদিনের জন্য জায়গা তৈরি করে নিলো। মনে সাধ জাগলো যদি সানাহ্ এভাবেই সবসময় হাসতো তাহলে কতই না ভালো হতো।
‘ আপনারা যে আসবেন কোথায় মা তো বললো না। ‘
আচমকা সানাহ্ তার চিরাচরিত সত্ত্বায় ফিরে এসে ফারহানকে উদ্দেশ্য করে বললো কথাটা। সানার কথা শুনে ফারহানও তার কল্পনার দুনিয়া ছেড়ে বেরিয়ে এলো। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি টেনে আবারও বিন ব্যাগের উপর গিয়ে বসলো। এক পা আরেক পায়ের উপর রেখে বললো ‘ হয়তো আন্টি চাননি তুমি জানো যে আমরা আসছি। আই গেস আন্টি তোমাকে চমকে দিতে চাইছিল। তোমার মা তো তোমার মতোই হবে। চমকে দেওয়াতে ওস্তাদ। বাই দ্যা ওয়ে আমাদের আগের একটা গেট টুগেদার ডিউ ছিল তাই আজ ব্রেকফাস্টে ডেকে সেটা পুষিয়ে নিলো। ‘
‘ তাহলে তো ভালই। কিন্তু আপনারা যে শুধু দেখা করতে এসেছেন তাতো নয়। আমার মাকে আমি যতটুকু চিনি তাতে এইটুকু বলতে পারি যে সে নিশ্চয়ই আন্টির সঙ্গে কোনো জরুরি কথা ডিসকাস করবে। তাই হয়তো এভাবে ব্রেকফাস্টের নাম করে ডেকে এনেছে। মেবি আমার আর আপনার বিয়ে নিয়ে প্ল্যানিং করবে। ‘ সানাহ্ এবার ফ্যান মোছার ময়লা পানির বালতিটা বাথরুমে নিয়ে রাখলো। তারপর হাত দিল বইয়ের তাক গোছানোর কাজে।
সানাহ্ যখন তার অতি মূল্যবান বইগুলো তাকে রাখতে ব্যস্ত তখন ফারহান বললো ‘ বাহ্ তোমার গেসিং ট্যালেন্ট তো মারাত্মক। না জেনেই গেস করে নিলে। আসলে তুমি ঠিকই বলেছ। মা আর আন্টি মিলে আমাদের বিয়ের যাবতীয় যত প্ল্যানিং সব আজকেই সেরে নিবে যাতে পরবর্তীতে কাজ শুরু করতে পারে। যাই হোক বিবি সাহেবা এখন দয়া করে আপনি নিচে চলুন। আপনাকে খেতে ডাকা হয়েছে। ‘
ফারহানের প্রত্যেকটা কথা সানাহ্ কাজ করতে করতেই মনযোগ দিয়ে শুনল। ফারহানের কথা শুনে সরাসরি কোনো ভনিতা না করেই বলল ‘ আপনি মাকে বলে দিন আমি এখন যেতে পারবো না…. আমার অনেক কাজ আছে। তাছাড়া আমি তো খেয়েই নিয়েছি। বাকি রইলো কনে হিসেবে আপনাদের প্ল্যানিং অ্যাটেন্ড করা তাইতো ? হয়ে যাবে…. আমার আর একটু কাজ আছে। কাজ শেষ হলেই আসছি…. ‘
‘ তাহলে বলছো আমি যেন নিচে একা যাই তাইতো ? তোমাকে নিতে এলাম অথচ খালি হাতে ফিরবো ? এটা কি মানা যায় ? ‘ ফারহান মৃদু গলায় বললো।
‘ না মানার কিছু নেই। আমি তবুও খেয়েছি কিন্তু আপনি আর বাকিরা কিছুই খাননি। আমার জন্য না খেয়ে বসে থাকার মানে হয় না। আমি যদি জানতাম আপনারা আসবেন তাহলে খেতাম না। মা তো বলেনি, তাই এই ডিজাস্টারটা হলো। ‘ সানাহ্ বই গোছাতে গোছাতেই ফারহানের দিকে তাকিয়ে এমন একটা ভাব করলো যেন সে এতকিছু জানলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
ফারহান বিনিময়ে কিছুই বললো না। উঠে এগিয়ে গেলো সানার দিকে। সানার হাত ধরে সানাহ্কে ঘরের আয়নার সামনে নিয়ে দাড় করালো ফারহান। সানাহ্ শুধুই অবাক হয়ে দেখছে তার কবি সাহেবের গতিবিধি।
এবার ফারহান আয়নার সামনে সানার পিছন থেকেই সানার ঠোঁটের নিচে নিজের আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলো। ফারহানের এমন কাজে সানার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। ফারহানকে কিছু বলতে উদ্যত হয়েছিল কিন্তু তার আগেই ফারহান সানার ঠোঁটের নিচে নিজের স্পর্শ হালকা করে বললো ‘ আজ যেই ঠোঁটের নিচে শূন্যতা বিরাজ করছে সেই ঠোঁটের নিচেই একদিন হাসি থাকবে। তোমার অস্তিত্ব রেঙে উঠবে আমার গভীর ছোঁয়ায়। আমি অপেক্ষা করবো ততদিন যতদিন না তোমাকে একান্তই নিজের করে পাচ্ছি। তোমার এই শূন্য চুলে বিরাজ করবে আমার ভালোবেসে আনা বকুল ফুলের মালা। আমি অপেক্ষা করবো ততদিন যতদিন না তুমি আমায় তোমার অন্তর্দেশে লুকিয়ে থাকা গভীরতম অনুভূতিগুলো জানাচ্ছ। ‘
ব্যাস আর কিছু বললো না ফারহান। নিজেকে সানার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিলো। পা বাড়ালো ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। তবে কিছু একটা মনে পড়তেই সানার দিকে ফিরে তাকালো। আলতো হেসে বলল ‘ তাড়াতাড়ি এসো, প্রফেসর ফারহান ইজ ওয়েটিং ফর ইউ। ‘
কথাগুলো বলেই বেরিয়ে গেলো ফারহান। সানাহ্ এখনও ফারহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। তার ঘুরে ফিরে সেই একই কথা বারবার মনে পড়ছে ‘ তাড়াতাড়ি এসো, প্রফেসর ফারহান ইজ ওয়েটিং ফর ইউ ‘ । আলাদা কিছু একটা ছিল এই কথায়। প্রবল ভালোবাসার অধিকারবোধ। সানাহ্ লম্বা দম নিয়ে ভাবলো ফারহান তবে এসেছে তার ভালোবাসার অধিকার নিয়ে।
ফারহান নিচে নামতেই এবার মিসেস আশা আর মিসেস কায়নাতের মুখোমুখি হলো। মিসেস আশা ইয়া বড় এক হাসি দিয়ে বললো ‘ হবু বউকে দেখতে গেছিলি বুঝি ? ‘
ফারহান ওর মায়ের কথায় অপ্রস্তুত হলো। তেজ দেখিয়ে কথাটা কাটাতে চেয়ে বললো ‘ আরে ধুর এসব কি বলছো। আমি সানাহ্কে দেখতে যাইনি। আঙ্কেল বলেছিলেন সানাহ্কে ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডেকে আনতে। আমি তাই গিয়েছিলাম ‘
‘ তো ডেকে আনলে ওকে ? ‘
এবার মিসেস কায়নাত পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন। এক মুহূর্তের জন্য হবু শাশুড়ির এরকম গম্ভীর মুখ দেখে ঘাবড়ে গেছিলো ফারহান। কেন জানি মিসেস কায়নাতকে দেখলেই ওর গা টা ভয়ে ছমছম করে উঠে। অথচ ভাগ্যের কি লেখন দেখো। সেই মিসেস কায়নাতই ওর শাশুড়ি হতে চলেছেন।
ফারহান নিজেকে সামলে দৃঢ় কন্ঠে বলল ‘ গিয়েছিলাম ডাকতে কিন্তু ও তো কাজ করতে ব্যস্ত। ঘর পরিস্কার করছে সে। আমরা যে আসছি এটা ওকে জানাননি বলে সানাহ্ সকাল সকালই খেয়ে নিয়েছে। তাই বললো কাজ শেষ করে আসবে। ‘
‘ আল্লাহ্ ও খেলো কখন ? আমি তো সারাক্ষণ এখানেই ছিলাম। একবারও ওকে নিচে নামতে দেখলাম না। তুই রাগ করিস না আশা। আসলে আমারই দোষ। ওকে সারপ্রাইজ দিবো বলে জানাইনি যে তোরা আসছিস। ও জানলে কখনোই সবাইকে ফেলে খেত না। ‘ ফারহানের কথা শুনে ৪৪০ ভোল্টের শক খেয়ে কথাগুলো বললেন মিসেস কায়নাত।
‘ হয়তো তুমি যখন উপরে গিয়েছিলে তখন ও নিচে নেমেছিল আর ব্রেকফাস্ট রেডি দেখে খেয়ে নিয়েছে। দোষ তো তোমারই। তুমি জানতে না সানাহ্ প্রত্যেক উইকেন্ডে ঘুম থেকে উঠেই খেয়েদেয়ে নিজের ঘর পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে? ও যে সবসময় আমাদের সবার আগে খায় সেটাও তো তোমার জানা। তুমি যেহেতু ওকে বলনি যে আশারা আসছে সেহেতু এই ডিজাস্টারের দায়িত্ত্ব তোমার। আশা তুমি কিছু মনে করো না। দোষটা কায়নাতের, ও কাউকেই বলেনি যে তোমরা আসছো। আমিও তোমরা আসার পরই জানলাম। ‘ মিস্টার কবির এতক্ষণ দূরে দাড়িয়ে দুই বান্ধবী আর ফারহানের কথা শুনছিলেন। কিন্তু ফারহান আর মিসেস কায়নাতের কথোপকথন শুনে নিজে আর কথা না বলে থাকতে পারলেন না।
‘ না না ভাইজান আমি কিছু মনে করিনি। দয়া করে আপনি রাগ করবেন না কায়নাতের উপর। ও বুঝতে পারেনি ব্যাপারটা এরকম হয়ে যাবে। তার থেকে আমরা নাহয় এখন খাওয়া দাওয়া করে ফেলি। তারপর সানাহ্ এলে নাহয় ওদের বিয়ের প্ল্যানিং করা যাবে। ‘ মিসেস আশা মিসেস কায়নাতকে ইশারায় আশ্বস্ত করে বললেন।
মিসেস আশার ইশারা বুঝে মিসেস কায়নাত সস্তির নিশ্বাস ফেললেন। মিস্টার কবিরও মিসেস আশার কথায় সায় দিয়ে মাথা নাড়লেন। এরপর ওরা সকলে খেতে বসলো। এর মাঝে অতসীও এসে হাজির। ওকে দেখে মনে হচ্ছে সারারাত অনেক কান্নাকাটি করেছে।
ব্যাপারটা ফারহানের চোখে পড়লো কিন্তু বাকিরা কথায় এতটাই মশগুল ছিল যে জিনিসটা এড়িয়ে গেলো। হঠাৎ করে সকাল সকাল ফারহানদের দেখে থতমত খেয়ে গেছিলো অতসী। পরে জানতে পারলো আজ মূলত এতকিছু আয়োজন করা হয়েছে যাতে ফারহান আর সানার বিয়ে নিয়ে কথা বলা যায়।
অতসীও আর কথা না বাড়িয়ে খেতে বসে পড়ল কিন্তু ফারহান ওর দিকে খেতে খেতে বার কয়েক সরু চোখে তাকালো। কেন জানি ফারহানের মনে হচ্ছে কিছু তো একটা হয়েছে নাহলে অতসীর মত রসিকতা প্রিয় মানুষ কখনও এতটা দীর্ঘ সময় কথা না বলে চুপ করে থাকতে পারে না।
খাওয়া দাওয়া শেষে সকলে একসঙ্গে জড়ো হয়েছে বসার ঘরে। অপেক্ষা চলছে সানার জন্য। বসার ঘর বড় হওয়ায় সকলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছে। মিসেস কায়নাত আর মিস্টার কবির একসঙ্গে। অতসী আর ফারহান সামনাসামনি বসেছে। আর মিসেস আশা আলাদা একটা সোফাতে বসেছেন যার অপর পাশ খালি। সকলেই টুকিটাকি আলাপ করছেন। এই যেমন বিয়েটা কোথায় হলে ভালো হয়, কিরকম জায়গা হলে ভালো হয় ইত্যাদি।
ফারহান বারবার সিড়ির দিকে তাকাচ্ছে। তার চোখ সেই ঘুরে ফিরে সিড়িতেই আটকে আছে। ভাবছে সানাহ্ এখনও নামছে না কেন ? কী এমন করছে মেয়েটা ? একটা দিন কি কাজ না করলে হয়না ? এরকম চলতে থাকলে তো বিয়ের পর সানাহ্কে কাছেই পাবে না। ধুর এত দেরি করলে হয় ? ফারহানের কি সানাহ্কে দেখতে ইচ্ছা করে না ? সানার নাহয় দেখতে ইচ্ছা করেনা কিন্তু ফারহানের তো করে। সানাহ্ নাহয় সাধু সন্যাসী, ওর মনে নাহয় কোনো অনুভূতি নেই কিন্তু ফারহানের মনে তো আছে। ফারহানের তো ইচ্ছা করে সারাদিনই দেখতে।
অবশেষে সেই মহেদ্রক্ষন এলো যখন সানাহ্ নিচে এলো। সানার পরনে আজ একটা খয়েরী পার কালো শাড়ি। সানাহ্কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মাত্র গোসল সেরে এসেছে। ভেজা চুলগুলো পিঠের উপর ছেড়ে দেওয়া। সেই চুল থেকে একটু আধটু পানি পড়ছে। মনে হয় তাড়াহুড়োয় চুল ভালো করে মুছেনি। কোনোমতে জাস্ট চুলে টাওয়েলটা ছুঁয়ে চলে এসেছে।
ফারহান সানাহ্কে নামতে দেখেই সানার দিকে চোখ দিলো। সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে নিল নিজের বেয়াড়া চোখ দুটো। আজকাল চোখগুলো যা অবাধ্য হয়ে উঠেছে তাতে এভাবে চলতে থাকলে তার নিজেরই ক্ষতি। সানার রুপে মুগ্ধ হওয়া চোখ দুটো কোনওদিন যদি সানার উপর নজর লাগিয়ে দেয়। তাহলে তো ফারহানের ক্ষতি। সদ্য গোসল করা সানার রুপ যেন উপচে পড়ছে। ফারহান চেয়েও পারছে না চোখ সরাতে। অবাধ্য চোখ জোড়া ঘুরে ফিরে সানার দিকেই যাচ্ছে। সানাহ্কে দেখে ফারহান মনে মনে বললো ‘ তাহলে বিবি সাহেবা দেখি আমাকে বারবার তার প্রেমে না ফেলে ছাড়বেনই না। ‘
সানাহ্ নিচে এসে কোনদিকে তাকালো না। সরাসরি মিসেস আশার পাশে গিয়ে বসলো অথচ ফারহান আর অতসী দুজনের পাশেই বসার জন্য যথেষ্ট জায়গা ছিল। সানাহ্ মিসেস আশার পাশে বসতেই মিসেস আশাকে সালাম দিয়ে বললো ‘ সরি আন্টি কিছু মনে করবেন না। আমি আসলে জানতাম না আপনারা আসবেন। জানলে আরও আগেই আসতাম, আপনাদের এতক্ষণ ওয়েট করাতাম না আর আপনাদের রেখে খেতামও না। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড। ‘
সানার এহেন অপরাধী ভাব নিয়ে কথা বলা দেখে মিসেস আশা ফিক করে হেসে দিলেন। হাসি আটকে চেহারায় গম্ভীর ভাব এনে বললেন ‘ অবশ্যই আমি কিছু মনে করেছি।। আর এর জন্য তোমাকে শাস্তিও পেতে হবে। অনেক বড় শাস্তি পেতে হবে। ‘
মুহূর্তেই মিসেস আশার কথা শুনে সানার উজ্জ্বল মুখ পাংশুটে হয়ে গেলো। করুন চোখে তাকিয়ে রইলো ফারহানের দিকে। ফারহানও অবাক তার মায়ের ব্যবহারে। তার মা যে এরকম কিছু বলবে ভাবেনি। সানাহ্ এবার ফারহানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে অসহায় গলায় মিসেস আশাকে জিজ্ঞেস করলো ‘ কি শাস্তি ? ‘
‘ শাস্তি বেশি কিছু না…. মাত্র দুইটা শাস্তি। প্রথম শাস্তি হলো এখন থেকে আমাকে মা বলে ডাকার অভ্যাস করে নাও। কাল পরশু তোমার ফারহানের সঙ্গে বিয়ে। বিয়ের পরও যদি তুমি এভাবে আন্টি ডাকতে থাকো তাহলে পাড়ায় আমার মন সম্মান থাকবে না। দ্বিতীয় শাস্তি হলো…. তোমার জন্য টরটিলা উইথ চিকেন স্টাফিং এনেছি। ‘
মিসেস আশার কথা শুনে সানার খুশি আর দেখে কে। তবে সানাহ্ তার হাসি আটকে সহজ সরল মুখ করে মাথা উপর নিচে করে সরল ভঙ্গিতে মিসেস আশার কথায় সায় দিল। সানার সায় দেওয়ার ভঙ্গি দেখে মিসেস আশা হো হো করে হেসে উঠলেন।
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….