প্রেমময় তৃষ্ণা পর্ব – ১০

0
1313

গল্প – প্রেমময় তৃষ্ণা
পর্ব – ১০ (বোনাস)
লেখিকা – তানিয়া

শুভ আজ অফিসের কাজ তারাতারি শেষ করে।বাড়ীতে যেতে হবে বলে, কারন আজ নাকি শুভর বাবা আজমাল চৌধুরীর ছোটবেলার বন্ধু শাফিন রহমান তার পরিবার সহ ডিনারে আসবে।তাই শুভকেও বাসায় তারাতারি আসার জন্য, আজমাল চৌধুরী নিজে ফোন দিয়ে জানায়।শুভ প্রথমে রাজি না হলেও পরে বাবার জোরাজোরিতে বাধ্য হয় আসতে।
|
শাফিন রহমান তার ওয়াইফ ও দুকন্যা আরুশী এবং আরুহীকে সাথে নিয়ে চৌধুরী বাড়ীতে পৌছালো। তাদের রিসিভ করতে মিস্টার এবং মিসেস চৌধুরী স্বয়ং নিজেই আসলো।ছোটবেলার বন্ধু এতো বছর পর দেখা পেয়ে আজমাল ও শাফিন কোলাকোল করে নিলো।
আজমাল চৌধুরী বাড়ীর সবাইর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো তাদেরকে। কিন্তু আরুশীর চোখ খুঁজছে শুধু একজনকে,সে হলো শুভ।সেদিন শুভকে দেখার পর থেকেই শুভকে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায় আরুশী ।তাইতো শুভর ডিটেলস খুঁজার পর জানতে পারে তার বাবা আর শুভর বাবা বাল্যকালের ফ্রেন্ড।এই সুযোগে নিজের বাবাকে তার পছন্দের কথা জানায়,এমনকি জিদ ধরে বিয়ে করলে শুভকেই করবে,তা না হলে এদেশ ছেড়ে ও একেবারের জন্য চলে যাবে।শাফিন রহমান মেয়ে আরুশীর প্রতি একটি দূর্বল, তাইতো মেয়ের চাওয়া সব তিনি সবসময় পূর্ণ করেছেন।এবারও করবেন বলে কথা দিলো,তাই তো চৌধুরী বাড়ীতে নিজ থেকেই ডিনারের দাওয়াত চেয়ে নেন।
|
কিছুক্ষন পর শুভও বাসায় এসে পরে,আর এসেই ড্রয়িংরুম এ সবাইকে একত্রে পেয়ে যায়।শুভও সবার সাথে পরিচয় হয়ে কিছুক্ষন কথা বলে,ফ্রেস হতে নিজের রুমে চলে যায়।শুভর সাথে কতো কথা বলবে বলে ভেবে এসেছিলো আরুশী,কিন্তু শুভকে দেখেই আরুশীর কথা জেনো বন্ধ হয়ে যায়।
|
শুভ রুমে এসেই কলিকে আগে একটা ফোন করে,কিন্তু কলি ফোন রিসিভ করেনা বলে,ফ্রেস হতে চলে যায়।
|
মামুন, কলি ছাদে দাঁড়িয়ে কথা বলছে,আর জুই জবা আবার কিছু একটা বিষয় নিয়ে ছোটখাটো ঝগড়া করছে,আসলে জুঁই জবা জমজ বোন,কিন্তু ওদের সম্পর্ক দা কুমড়ার মতো।তাইতো সারাক্ষণ লেগেই থাকে।কলির থেকে এক বছরের ছোট তারা।_____কি রে তোর হিরোর খবর কি।_____কলি আজ প্রথম মামুনের কথায় লজ্জা পেলো।_____ও মাই গোড,কলি। তুই লজ্জা পাচ্ছিস।তার মানে চুটিয়ে প্রেম চলছে,ঠিক তো।_____ভাইয়া,তুমি কিন্তু সব সময় বেশি কথা বলো।_____মামুন কলির গালগুলো টেনে,মাই লিটল সিস্টার, আমি বেশি কথা বলিনা,হাছা কথা কই।তাইতো তোর গালটা টমেটোর মতো লাল হয়ে গিয়েছে।এখন আমাকে বল সব,যা জানি না আমি।
|
actually কলি আর মামুন খুব ক্লোজড। মামুন কলি থেকে প্রায় চার বছরের বড় হলেও,দুজনের সম্পর্কটা অনেকটা বন্ধুত্বের মতো।শুভর প্রতি ওর ফিলিংস এর কথা সবার আগে মামুনই জানতে পারে।কিন্তু তখন মামুন এসব কলির আবেগ বলে মনে করতো,আর এক সময় ঠিক হয়ে যাবে বলে আসা করতো।কিন্তু মামুনের আসায় কলি জল ঢেলে দেয়।কলি মামুনকে সব খুলে বলে,_____সত্যি বলছিস।শুভ ভাই ও তোকে ভালোবাসে।_____হুমমমম অনেক।_____ও মাই গোড,অবশেষে নিজের পাগলামিতে শুভ ভাইকেও জরিয়ে ফেললি।আচ্ছা মামা জানে কিছু।_____না, বাবাতো আমাকে শুভর সাথে কথাও বলতে মানা করেছে,জানো।কলির মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

____মামুন কলির মনটা ঠিক করার জন্য,জানিস তোর ফুফু কি প্লানিং করছে_____কি??
তোর আর আমার বিয়ে দিতে চায়।____কিইইই,আমি তোমাকে বিয়ে একদমই করবো না।____আমি মনে হয় তোকে বিয়ে করার জন্য মরে যাচ্ছি।_____তাহলে ঠিক আছে।আচ্ছা ফুফুকে কিছু বলোনি তুমি।___হুমমম বলে দিয়েছি, আমি দরকার হলে কলাগাছ কে বিয়ে করবো।তবু কলিকে ইম্পসিবল। ___ঠিক,তার মানে কি আমি কলা গাছ থেকেও খারাপ।এ কথা বলেই কলি মামুনকে মারতে লাগলো।
|
মামুন আর কলির সম্পর্কটাই এমন, কিন্তু ওদের এই সম্পর্ক অনেকেই বুজে না।সব সম্পর্ক যে প্রেমের হতে হবে এমন কোনও কথা নেই,কিছু সম্পর্ক আপনাকে বাঁচাতে, হাসতে,আর সামনে বাড়তে সাহায্য করবে।তাই সব সম্পর্কের মানে খুঁজতে জাবেন না কখনো।
|
আচ্ছা এবার থাম,শুনলাম আমার পাখি নাকি ফোন নিয়েছে।নাম্বারটা দেতো,____শিলা জানলে আমাকে খুন করবে।____আরে জানবে না,তুই বলিস তোর মোবাইল থেকে চুরি কইরা নিছি।____ছি: তুমি আমাকে মিথ্যা বলতে বলছো।
আমার জন্য একটু মিথ্যা বলতে পারবি না,কেমন বোন তুই।আর নিজেতো প্রেম করে ঘুড়ে বেড়াচ্ছিস,আমার লাইনটাও একটু ধরিয়ে দে।____পারুম না,নিজেরটা নিজে করে নেও।
|
মামুন অনেক আগ থেকেই কলির বান্ধবী শিলাকে পছন্দ করে,কিন্তু ব্যাচারা আজও তার মনের কথা বলতে পারেনি,আর শিলার যেহেতু ফোন ছিলো না,তাই এতোদিন কথাও বলতে পারতো না,মাঝে মাঝে কলিদের বাসায় আসলে দেখা হয় এতুটুকুই।কিন্তু এখন যেহেতু শিলার হাতে ফোন আছে,তাই এবার যেভাবেই হোক শিলাকে লাইনে আনতেই হবে।মামুন ভাবছে।
|
শুভ ড্রয়িংরুম এ বসে সবার সাথে বসে আছে ,আরুশী বার বার পারেনা চোখ দিয়েই শুভকে গিলে খাচ্ছে।কিন্তু শুভর সে দিকে কোনও খবর নেই,শুভ তার মোবাইলে ব্যস্ত,কারন কলি মেসেজ করছে,বাড়ীতে মেহমান,তাই হয়তো আজ কথা বলতে পারবে না।কিন্তু শুভ কিছুতেই মানছে না,কলিকে যথারীতি কয়েকটা হুমকি দিয়ে দিলো,আজ কথা না বললে,ওর কপালে খারাপি আছে।
|
মাহির,ইনাম,রাহি ও অর্পা আরুশী আর আরুহী সবাই মিলে গল্প করছে শুধু শুভ ছাড়া,শুভর এখানে একদমই ভালো লাগছেনা,কলির উপর বিষন রাগ উঠছে।সামনে থাকলে হয়তো বুঝিয়ে দিতো,শুভকে রাগানোর পরিনিতি কি হতে পারে।তাই মাকে বলে নিজের রুমে চলে গেলো,শুভকে চলে যেতে দেখে আরুশীর মনটাও খারাপ হয়ে গেলো,এতো কস্ট করে,সেজেগুজে এসে কি লাভ হলো,খারুশটা আমাকে একবার ও দেখলো না।
|
এদিক দিয়ে আজমাল ও শাফিন রহমানের মধ্যে কিছু কথা হলো,যা কারো কানে এখনো পৌঁছায় নি।সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে বলে,কাউকে বলবে না এখন তারা,ডিশিশন নিলো।কিছুদিন পর মিস্টার এবং মিসেস চৌধুরীর ৩৫তম Marriage Anniversary , সেদিন একটা পার্টির আয়োজন করা হবে।সেখানেই সবাইকে সারপ্রাইজ দেবে।কিন্তু এই সারপ্রাইজ কলি আর শুভর জন্য কতোটা ভয়ানক হবে কে জানে।তাদের মাঝে বাধা হওয়া দেয়ালটা যেনো আরো শক্ত হয়ে যাচ্ছে, যা হয়তো শুভ চাইলেও ভাঙ্গতে পারবে না।
…………
……………….
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে…….]

#প্রেমময়_তৃষ্ণা #তানিয়া #গল্পের_ডায়েরি #TaNiA #GolperDiaryOfficial

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here