গল্প – প্রেমময় তৃষ্ণা
পর্ব – ২১
লেখিকা – তানিয়া
কলি রাতভর ঘুমাতে পারেনি,বার বার শুভর কথা মনে পড়ছে।গায়ে হলুদে শুভর অবহেলাগুলো বিষন ভাবে পুড়াচ্ছে, আচ্ছা আমিও তো উনাকে এ কয়েকদিন অনেক অবহেলা করেছি।নিশ্চই তখন উনারও খুব কস্ট হয়েছে।তাই প্রতিশোধ নিচ্ছে মনে হয়।
||
||
ভালোবাসা মানষের অবহেলা এতোটা বেদনাদায়ক কেনো হয়।হয়তো শুভ বকলে,মারলেও এতো কস্ট লাগতো না,যতোটা তার অবহেলায় হচ্ছে।
||
||
সারারাত নির্গুম কাটানোর পর ভোরে কলির চোখ লেগে গেলো।অনেক বেলা করে ঘুমামোর পর কি মনে করে লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়লো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা ১১ টা বেজে গেছে,অথচ ওকে কেউ ডাক দেয়নি।তারাতারি উঠে ফ্রেস হয়ে এসে দেখে, কলির মা কলির জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে।কলির খেতে একদমই মন চাইছিলো না,তবুও মায়ের কথায় অল্প কিছু খেয়ে নিলো।নাস্তার পর কলিকে একটা সাদা শাড়ী,লাল ব্লাউজ মেচিং করে পড়িয়ে দিলো।মুখে কোনও মেকআপ এর ছিটেফোঁটা নেই।চুলগুলো ছাড়া, শুধু ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। এতেই মনে হচ্ছে আকাশ থেকে নেমে আসা সদ্য কোনও পরী।______কলি তার মাকে জিঙ্গেস করলো,এসব কি।সকাল সকাল আমাকে এভাবে রেডি কেনো করলে।
||
||
কলির মা বাহিরে গিয়ে দেখতে বললো,____দেখতো ওরা কি রং খেলা খেলছে। এসব নাকি ঢাকা শহরের রং তামাশা।আমরাতো বাপ আগে এসব দেখা তো দূরে থাক শুনিওনি।
||
||
কলি তার মায়ের কথায় বাহিরে এসে দেখে উঠানে বিভিন্ন রংএর কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে আছে,এদের মধ্যে কয়েকজনকে আমি চিনি,কিন্তু এখন এদের চিনি বললে ভুল হবে।কিভাবে রং মেখে নিজেকে পেত্নী বানিয়ে রেখেছে।
||
||
আরে কলি এখন তোর আসার সময় এলো, তোর জন্য কখন থেকে অপেক্ষা করছি।আস এখানে____এসব কি মিলি আপু।আমিতো এসব আগে কখনো দেখিনি।
||
||
____দেখবি কি করে তুই,তুই কি ঢাকা শহরের বিয়ে গুলোতে কখনো গিয়েছিস।তাহলে জানবি কি করে।এটা জাস্ট একটা প্রোগ্রাম, বিয়ের আনন্দকে বাড়ানো আর কিছু না,____যাই বলো না কেনো আপু আমার এসব কালচার একদম ভালো লাগে না।কি দরকার ছিলো।দেখো রং দিয়ে কি করেছো।
||
||
____তুইতো বাকি আছিস, এখন তোরও পালা।___একদম না আপু, আমাকে রং লাগাবার চেস্টা করবে না।মিলি কলিকে রং লাগাবার চেস্টা করলে কলি এক দৌড় দিয়ে বাড়ীর পেছনে চলে যায়।এদিক দিয়ে শিলা ও মিলি কলিকো খুঁজতে শুরু করলে কলি ভয়ে স্টোররুমে ডুকে পরে দরজা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,দৌড়াদৌড়ি করার কারনে কলি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়।কিছুক্ষন পর চোখ খুলে সামনে ভুত দেখার মতো চমকে যায়।সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখে।
||
||
শুভ পেন্টের পকেটে হাত দিয়ে সামনের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কলির দিকে টেডি স্মাইল দিয়ে এগিয়ে আসছে।হাতে তার রং এর একটি থালা।____কলি ভুত দেখার মতো দাঁড়িয়ে আছে,কলি ভাবছে কালকের মতো আজও হয়তে স্বপ্ন দেখছে,তা না হলে শুভ এখানে কি করে।কলি দরজা খুলে চলে জেতে নিলে,দেখে দরজা বাহির থেকে বন্ধ করা,কলি জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে থাকে,কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না দেখে কলি পেছনে ঘুরতে নিলে, দেখে শুভ ওর একদম সামনে দাঁড়িয়ে আছে।কলি চোখ গুলো বড় বড় করে শুভর দিকে তাকিয়ে আছে।শুভ থালা থেকে রং নিয়ে কলির গালে কপালে লাগিয়ে দিলো।এর পর কলির হাতে রং নিয়ে নিজের গালে লাগিয়ে নিলো।আর কলি এখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,আসলে বুঝতে পারছে না ওর সাথে হচ্ছে টা কি।___শুভ কলির আরো একটু কাছে এগিয়ে কানের সামনে মুখটা নিলে,___কলি ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে,শুভ কলির এমন ভয় পাওয়া মুখটা দেখে একটু হেসে দেয় আর কানের সামনে গিয়ে বলে____দেখলি আজ তোকে আমার রং এ রাঙ্গিয়েই দিলাম,আর তোর রং এ নিজেকেও রাঙ্গিয়ে নিলাম।______শুভর কথায় হঠাৎ কলি চোখটা খুলে ফেলে,কিন্তু এবারও সামনে কেউ নেই।দরজাটা খোলা এখন,কলি দৌঁড়ে বাহিরে গিয়ে শুভকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথায় পেলো না।বাহিরে ইনাম,মাহির,রাহি,অর্পা, ফাহিম আছে কিন্তু শুভ নেই।কলির সন্দেহ হলো,তার মানে ওটা স্বপ্ন ছিলো না,___কলিকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সবাই এসে কলিকে রং দিতে থাকে।কিন্তু কলির চোখ শুভকে খুঁজে।একসময় রাহিকে জিঙ্গেসই করে ফেলে শুভ কোথায়।কিন্তু রাহির কথায় কলির শোকড হলো,কারন রাহি বললো শুভ নাকি বাড়ীতে ঘুমিয়ে আছে,আমরা অনেক ডাকাডাকি করলাম রং খেলবো বলে,কিন্তু ভাইয়ার নাকি রং এ এলার্জি তাই ও খেলতে পারবে না।তাই আমরাই চলে আসলাম।কলির রাহির কথা একদমই বিশ্বাস হলো না।ও পুরো বাড়ী তন্যতন্য করে খুঁজলো,ওটা শুভই ছিলো।তাহলে সবাই আমাকো মিথ্যা কেনো বলছে,কিছুই বুঝতে পারছে না।
||
||
আজ কলির বিয়ে,সকাল থেকে কলির চোখের পানি জেনো বাধ মানছে না,সাজাতে যারা আসছে তারাও খুব বিরক্ত কলির উপর কিন্তু কলির কি দোষ।এতোদিন নিজেকে শক্ত রাখলেও এখন সে নিজেকে সামলাতে পারছে না।শুভকে ছাড়া কিভাবে থাকবে।এতো বছরের ভালোবাসা ভুলা কি এতোই সহয,মুখে যতোই বলুক শুভকে ভালোবাসবে না,কিন্তু মন।…মনের পিন্জ্ঞরে শুভকে তো আগেই বন্দি করে রেখেছে।সেখান থেকে শুভকে সরিয়ে অন্য কাউকে রাখা মানে ………কলির মরন।
||
||
লাল বেনারসিতে কলিকে অপূর্ব লাগছে, যেই দেখছে তারই চোখ জেনো কলির দিকে আটকে যাচ্ছে।কলি এমনেই দেখতে অনেক সুন্দর তার উপর লাল রংটা জেনো কলির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।সাথে মেচিং গহনা,ফুল কোনও কিছুর কমতি নেই এই নভোবধুর মধ্যে।কিন্তু এদিকদিয়ে কলি জেনো এক গভীর চিন্তায় মগ্ন, সামনে কে আসছে,কে কি করছে তাতে জেনো কলির কোনও ধ্যানও নেই।এদিক দিয়ে কাজী বার বার কবুল বলতে বলছে কিন্তু কলির কানে জেনো কোনও কথা ডুকছেই না।
||
||
তাই কলির বাবা এসে কলির মাথায় হাত দিয়ে জিঙ্গেস করলো,কোনও সমস্যা। এতোক্ষন পর কলির ধ্যান ভাঙ্গলো আর বাবার দিকে তাকালো,____কবুল বল মা,সবাই অপেক্ষা করছে।কলি কিছুক্ষন বাবার দিকে তাকিয়ে অস্ফুট কবুল বলে দিলো, হয়ে গেলো কলির বিয়ে।কবুল বলার সাথে সাথে চারদিকে হৈ হুল্লোর আরো বেড়ে গেলো।সবাই সবাইকে মিস্টি খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।কিন্তু আমার মনের ঝড়টা জেনো আরো বেড়ে গেলো,বিদায়ের আগেই চিৎকার পেড়ে কাঁদতে মন চাইছে।কারন আজ থেকে পুরোনো সব স্মৃতি ভুলে,নতুন করে শুরু করতে হবে।নতুন এক মানুষ,নতুন এক জীবন।কিন্তু কিভাবে পারবো এতো বছরের স্মৃতি মুছে দিতে।
||
||
বর কনেকে পাশাপাশি বসানো হলো,কলি তার বর থেকে একটু দূরত্ব রেখে বসলো।কিন্তু কলির বর কলির সাথে ঘেষে বসলো।কলির খুব বিরক্ত লাগছে,লোকটার কান্ড দেখে,অস্বস্তি কর।হঠাৎ মাহির, ইনাম,আর রাহি সামনে এসে বললে,ভাবী এবারতো একটু হাসো।মুখটা এমন বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছো কেনো।ভাইয়া বিয়ে করবে কিনা,তুমি বলছিলে না,দেখো ভাইয়া সত্যি সত্যিই তোমাকে বিয়ে করে ফেলেছে,এবারতো একটু হাসো।
____ভাবিইই,কলি একটু অবাক হয়ে।
_____মাহির তোকে বলছিলাম না তোর ভাবীর এক্সিডেন্ট এর পর থেকে মাথাটা খারাপ হয়ে গিয়েছে,দেখছিস কি সব আবল তাবল বলে,আজগুবি টাইপ।___পরিচিতো কন্ঠ শুনে আমি, আমার পাশে বসে থাকা লোকটার দিকে তাকালাম,শুভকে দেখে ৪২০ ভোল্টেজ ঝটকা খেলাম।এই আপনে এখানে কি করেন।আমার না শাহিন………শুভ আর কিছু বলতে দিলো না,এমন ভাবে আমার দিকে তাকালো মনে হয় এখুনি আমাকে কাচা খেয়ে ফেলবে।
||
||
____ওরনার নিচ দিয়ে আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আমাকে উনার আরো একটু কাছে টেনে নিলো,কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে লাগলো_____তুই কি মনে করেছিস,এতো সহযে তোকে ছেড়ে দেবো।এতো বছর অপেক্ষা করে গাছ বড় করলাম আমি,আর এখন আমার গাছের ফল অন্য কেউ খাবে,তাহলে আমি শুভ কি করবো,বসে বসে আঙ্গুল চুষবো।….এটা তো হতে পারেনা ‘জান’।আমার অনেক সাধনার ফল,এর ভাগ আমি কাউকে দিতে রাজি না।ফল দরকার পরলে কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেবো।তবুও কাউকে স্পর্শ করতে দেবো না,বুঝলি……।____কলি শুকনো একটা ঢোক গিলে মাথা নাড়লো।____অনেক ঝালিয়েছস আমায়,এখন তুইও নিজেকে রেডি করে নে।শুভ কলির দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলে।
||
||
আরে ভাই ভাবী তেমাদের রোমাঞ্চ বন্ধ করো,এখানে এতো মানুষের সামনেও শুরু হয়ে গেছো।আর ভাবী তুমি এতো অবাক কেনে।মনে হয় জানতেই না শুভ ভাইয়ের সাথে বিয়েটা হচ্ছে।এতোদিন তো আমরা ইচ্ছে করে লুকিয়ে রেখেছিলাম,কিন্তু কাজীতো নাম নিয়েছিলো শুনো নাই।_____কলি খুব অসহায় ভাবে মাহিরের দিকে তাকালো।আর মাথা নেড়ে বুঝালো ও নাম শুনে নাই কারন ও তো তখন শুভর চিন্তায় মগ্ন ছিলো।____ও গোড ভাবি তুমিও না,এখনো পিচ্ছিই রয়ে গেলা।কলির গাল দুটো টেনে।____যাক ভালোই হয়েছে।কলির শুভকে সামলাতে হবে না,শুভই কলিকে সামলাবে নি।দরকার পড়লে কোলে বসিয়ে বুঝাবে,রাগ ভাঙ্গাবে,পিচ্ছি বউ বলে কথা।
_____জাস্ট সেট আপ, ফাহিম।অনেক হয়েছে।এবার কিন্তু সব গুলোকে পিটানো শুরু করবো।
সবাই হেসে দিলো,কিন্তু কলির মুখের হাসিটা গায়েব হয়ে গেলো।এতোক্ষন শুভর কথা চিন্তা করছিলো শুভকে ছাড়া কিভাবে থাকবে,আর এখনো শুভর কথাই চিন্তা করছে,শুভর সাথে কিভাবে থাকবে।এতোদিন উনাকে ঝালানোর শোধ আমার উপর কিভাবে তুলবে।
…………
……………….
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে…….]
#প্রেমময়_তৃষ্ণা #তানিয়া #গল্পের_ডায়েরি #TaNiA #GolperDiaryOfficial