প্রেমাচার কলমে: #অপরাজিতা_মুন #পর্ব_১০

0
270

#প্রেমাচার
কলমে: #অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_১০
[কপি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ]

দুরন্ত গতিতে ছুটছে কালো রং এর রেন্স রোভার গাড়িটি। গন্তব্য অজানা। শহরের আনাচে কানাচে কিছুক্ষণ ঘুরবে এটাই শুধু জানা। স্টিয়ারিং এ বলিষ্ঠ হাতদ্বয় রেখে সম্মুখে খেয়লী নজর রেখে ড্রাইভ করছে আব্দুল্লাহ আল মশরিফ জায়ান। পাশেই ফন্ট সিটে বসেছে সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মুবিন। পেছনে জানালার দু’ধারে মেহরুন এবং মেহনুভা। দুই বোনের মাঝের সিটে মায়মুনা। গাড়ির ভেতরে মৃদু আওয়াজে গান বাজছে।
“দূর দ্বীপবাসিনী,
চিনি তোমারে চিনি
দারুচিনিরও দেশে, তুমি বিদেশিনী গো
সুমন্দ ভাষিনী, দূর দ্বীপবাসিনী।”

গানের সুরে বিমোহিত সবাই। গানের একেকটা শব্দ, একেকটা কথা, কন্ঠে তোলা সুরের উথান পতন মন ছুঁয়ে যাচ্ছে। আবেশে গুনগুন করে সুর মেলাচ্ছে মেহরুন। মেয়েটার গানের গলা মাশাল্লাহ।

রাত খুব বেশি গভীর হয় নি। তবুও অজানা গন্তব্য কে সামনে রেখে মাশরিফের আর ঘুরতে ইচ্ছা করছে না। ইচ্ছে যে করছে না ঠিক তা না, ইচ্ছা টাকে এখন প্রাধান্য দেওয়াও সম্ভব না। সারাদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরতে গিয়েও যেতে পারেনি চা-কফি বানানোর চক্করে। দিন শেষে রাত হয়েছে, ক্লান্ত দেহটা টা শুধু বিছানা টানছে। তবুও মেহনুভার ঘুরাঘুরির শখ না মেটা পর্যন্ত ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েই শহর ঘুরাতে হবে।

মাশরিফ তো আর একাই চালাক না, মনে রাখতে হবে মেহনুভাও কিন্তু তার চেয়ে কম না। সন্ধ্যায় যদিও সে কফি বানানোর ক্যাচালে পরেছিলো বেশ মারাত্নক ভাবে। কিছুতেই মাশরিফ, মুবিন, মেহরুন এবং মায়মুনা ট্রে ছাড়ছিলো না, মেহনুভাও সংকল্প করেছিলো, সে কফি বানাবে না। বেশ দাপট দেখিয়েছিলো, কড়া কন্ঠে হুমকি ধামকি ও দিয়েছিলো। তবুও কাজ হচ্ছিলো না। শেষে উপায়ন্তর না পেয়ে মাশরিফের সাথে চুক্তি করে। শর্ত রাখে যদি মাশরিফ আজ মেহনুভাকে শহরের অলিতে-গলিতে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ায়, তবেই সে কফি খাওয়াবে নচেৎ না।
এবং শুধু মাশরিফ কে খাওয়াবে তা না, সবাইকেই খাওয়াবে। ব্যাস টোটকা দেওয়া হয়ে গেলো। কাজেও লাগলো। মেহনুভার প্রস্তাব শুনে মাশরিফ সরাসরি নাকচ করেছিলো কিন্তু তাৎক্ষণিক মেহনুভার দলে মেহরুন, মুবিন, মায়মুনা চলে এসেছিলো। মেহনুভার পক্ষ নিয়ে তারাও জেদ ধরেছিলো ঘুরাঘুরি করার। মাশরিফ ইচ্ছা না থাকা সত্বেও ভাইবোনের জোরাজুরিতে রাজি হয়েছিলো। অবশ্য কফি খাওয়ার লোভে রাজি হয় নি সে, ভাইবোনের সম্বলিত আবদার ফেলতে পারে নি। অনেক দিন হলো ভাই-বোন একত্রে ঘুরতে বের হয় না। মফিজউদ্দিন আবার মেহনুভা এবং মায়মুনাকে রাতে বিরাতে কোথাও যেতে দেন না। মেহনুভাও অনেক দিন হলো রাতের ঢাকা ঘোরে না। এই উছিলায় একটু না হয় নিস্তব্ধ রাত্রিতে মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় ঘুররে, উড়বে, ডানা ঝাপটাবে।

মালাই চা এবং কফি খেয়ে বেশ তৃপ্তি পেয়েছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। সন্তুষ্টজনক হাসি হেসে বিজয়ীর তকমা দিয়েছেন দুজনকেই। কাকে রেখে কাকে বাদ দিবেন, দুজনের তৈরি কৃত চা-কফি দুটোই তার মন প্রাণ জুড়িয়ে দিয়েছে, তৃপ্তি পেয়েছে।

___________

“দাঁড়ান, দাঁড়ান, দাঁড়ান। মাশরিফ ভাই গাড়ি থামান।”

আকস্মিক মেহনুভার চেঁচানো স্বরের ডাকে লুকিং গ্লাসে তাকায় মাশরিফ। প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেহনুভাকে লক্ষ করে। মেয়েটার নয়নমণি দ্বয় অস্থির। একবার বাহিরে তাকাচ্ছে তো আরেকবার ভেতরে, মাশরিফের দিকে। নজরে নজর মিলে দুজনের। মেয়েলি কন্ঠটা আবারও অস্থির কন্ঠে ডেকে উঠে,

“মাশরিফ ভাই, গাড়ি থামাচ্ছেন না কেনো? গাড়ি থামান, আমি নামবো।”

“নামবি কেনো?”

“এতো কথা বলেন কেনো? আমার জুলুম হইছে বোঝেন না কেনো? থামান, আমি নামবো।”

মাশরিফ অবাক হয়। বিস্মিত কন্ঠে বলে,

“কি!”

“হ্যাঁ। গাড়ি থামান।”

মাশরিফ মেহনুভার কথার আগাগোড়া বোঝে না। জুলুম হয়েছে মানে কি? কি বোঝাতে চাচ্ছে মেহনুভা? মাশরিফের অজানা। তবে নিজে থেকে যতটুকু বুঝে, ‘জুলুম’ শব্দটা দিয়ে আপাতত প্রাকৃতিক কাজটা কেই বুঝতেছে। মাশরিফ মানলো যে মেহনুভার প্রাকৃতিক কাজ জোরে চেপেছে তাই বলে এখানে কেনো দাঁড়াতে বলবে? নাহ, এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা গেলো না। রাস্তার এক পাশে গাড়ি পার্কিং করে মাশরিফ। গাড়ি থামতে দেড়ি, মেহনুভার নামতে দেড়ি হয় না। হড়বড় করে দরজা খুলে এক ছুটে চলে যায় ফুটপাতের উপরে তোলা সারি সারি হস্তশিল্পের দোকান গুলোতে। মেহনুভার ছুট দেখে মাশরিফ এবং মুবিনের হুশ ফিরে। আরেহ, তারা যে এখন দোয়েল চত্বরে আছে। ইস! এটা তো মাথাতেই ছিলো না। কিসের জুলুম আর কিসের চাপ? ওসব কিছুনা। গাড়ি থেকে নামার বাহানা।

মেহনুভার গমনের পথে চেয়ে মেহরুন এবং মায়মুনা উসখুস করছে। এই দুইটা মেয়ে মেহনুভার মতো না। এরা হুটহাট কিছু করতে পারে না। ভাই এর অবাধ্য হয়ে তো আরো না। সৈয়দ বাড়ির বড় নাতী হিসেবে মাশরিফ আলাদা একটা সম্মান পায় সবসময়। সেই হিসেবে মেহরুন, মুবিন, মায়মুনাও বেশ শ্রদ্ধা করে। ভাই এর কথা কিংবা সিদ্ধান্তের মূল্যায়ন করে। কিন্তু এই মেহনুভাটা একেবারে বিপরীত। সবাইকে যথেষ্ট মান্য করলেও মাশরিফের বেলাতেই এই মেয়েটার ভাব অনেকটা গা ছাড়া। ভয় পায় আবার পায় ও না। প্রয়োজনে কথা বলে আবার কখনও না। মন ভালো থাকলে সুন্দর হাসি উপহার দেয়, কখনো একেবারেই না। চলার পথে মুখ ভেংচি কাটতে ছাড়ে না।

উসখুস করতে করতেই ভাইকে ডেকে মেহরুন বলল,

“ভাইয়া, আমি মেহনুভার কাছে যাই। ডেকে আনি।”

বিরক্তির রেখা ফুটে ওঠেছে মাশরিফের কপালে। গম্ভীর মুখে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে মাটির তৈরি জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা দোকানটায় দাঁড়ানো মেহনুভার পানে। এখান থেকে ওখানে, বিভিন্ন দোকানে ঘুরছে। রং-বেরং এর জিনিস পত্র হাতিয়ে হাতিয়ে দেখছে। মাশরিফ বোনে ডাকেও পিছু ফিরে তাকালো না। শুধু চাপা গলায় বলল,

“দ্রুত ডেকে আন বাদরটাকে। একে নিয়ে আমি আর জীবনেও কোথাও বের হবো না।”

মেহরুন অলরেডি বেরিয়ে গেছে। বাকি আছে মায়মুনা। কাচুমাচু করে কোনো রকমে “আমিও যাই ভাইয়া, ডেকে আনি।” বলেই ছুট লাগিয়েছে। মুবিন তাদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। মাশরিফ তপ্ত শ্বাস ফেলে মুবিনের দিকে তাকায়। ভাই এর চাহনি দেখে মিটিমিটি হাসি মুবিনের ফুরিয়ে যায়। এদিক ওদিকে তাকিয়ে হাসি লুকায়।

“তুই আর সং সেজে এখানে বসে থাকিস না। যা, ওদের ওখানে যা।”

মুবিন তো এটার আশাতেই ছিলো। এতো সুন্দর সুন্দর জিনিস। তাইয়্যেবার জন্য একটা নিয়ে নিবে এই ফাঁকে। যদি কখনও মন দেওয়া নেওয়া হয় সেদিন না হয় টুপ করে উপহার দিবে।

_________

মেহরুন বিভিন্ন ধরনের পার্স, গুজরাটি ব্যাগ কিনে ভরিয়ে ফেলেছে। মায়মুনা ঘর সাজানোর শোপিস। মুবিন লুকিয়ে একটা রুপালি সরু পায়েল। মেহনুভার চলাচল মাটির তৈরি টব গুলাতে। এতোক্ষণে কয়েকটা কিনেও ফেলেছে। এ পর্যায়ে এসে একটা মাঝারি আকৃতির ফুলের টব ভীষণ রকমের পছন্দ হয়েছে। উপরে মিরর ওয়ার্ক করা। দেখতে খুব সুন্দর, একেবারে নজর কাড়া। বেশ দর কষাকষি করে মেহনুভা কিছুতেই দোকানদার এর সাথে দাম মিলাতে পারছে না। মনে হয় লোকটা বুঝে গেছে এটা মেহনুভার অনেক পছন্দ হয়েছে। তা নাহলে লোকটা দাম কেনো ছাড়বে না। ধ্যাত, মেহনুভা এই দোকান থেকে নিবেই না। অন্য দোকানে যে যাবে, সে সব দোকানের টব গুলোর মিরর ওয়ার্ক কাজ গুলো এটার মতো এতো নিঁখুত না। ঠোঁট ফুলিয়ে গোমড়া মুখে কিছু ভাবলো, ফুলের টব টা দোকানিকে ফেরত দিয়ে বলল,

“আর ২০ টাকা বাড়িয়ে দিবো। দিলে দেন না দিলে না দেন। অন্য দোকান থেকে নিবো।”

দোকানদারের প্রত্যাখ্যান শুনে হাঁটা ধরল মেহনুভা। মুখ তার এখনও গোমড়া। মনে মনে অনেক করে চাচ্ছে দোকান দার যেনো তাকে পিছু ফিরে ডাকে। কয়েক কদম তো এগিয়ে এলো, এখনও তবে ডাকছে না কেনো!
কাঙ্ক্ষিত সময় চলেই এলো, পিছু হতে দোকানদার ডাকল,

“নিয়া যান আফা। আর ত্রিশ টা টাকা দিয়েন।”

চোখ জোড়া চিকচিক করে উঠলো মেহনুভার। এটাই তো সে চাচ্ছিলো। আনন্দে মনটা ছলাৎ করে উঠলো। তবে প্রকাশ করল না। পিছু ফিরল, হাত নাড়িয়ে দোকানিকে উদ্দেশ করে বলল,

“ত্রিশ টাকা দিতে পারবো না। বিশ টাকা বাড়তি দেওয়াই ঠকা হচ্ছে আমার।”

“আসেন আসেন নিয়া যান। রাত হইছে, ঝাপ বন্ধ করুম। এজন্য এহন আর আফনের কাছে বেশি রাখলাম না। তয় আফা, আমগো দোকান ছাড়া অন্য দোকানে কিন্তু এই দামে পাইবেন না।”

“সব দোকানেই একি দাম ওইটা আমি জানি মামা। আপনার আর নিজের গুনকীর্তন নিজে করা লাগবো না। দেন, প্যাক করেন।”

মেহনুভার সোজা সাপটা কথা শুনে দোকানদার এক গাল হাসে। চাপার দাঁত গুলা বের করে হাসতে হাসতে বলে,

“আফা, আপনে মানুষটা মেলা ভালা। মুখের কথা মুখে বলেন, পেটে রাখেন না।”

“জ্বী মামা। এজন্য অনেকের কাছে আমি পছন্দের আবার পছন্দের না।”

চলবে….

(ছোট পর্ব একটু, তবুও মানিয়ে নিবেন। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা বুঝলেন। বিকালে ঘুমাইছিলাম, ঘুম টা পুরোপুরি হয়নি। এজন্য মাথা ধরেছে।

এবার বলেন, গল্প ঠিকঠাক আগাচ্ছে তো? নাকি আমার এসব হযবরল লেখা আপনাদের জন্য মেহনুভার কথ্যমতে জুলুম হয়েছে?🥴]
ভালোবাসা সকলকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here