প্রেমাতাল
পর্ব ৪৫
মৌরি মরিয়ম
মুগ্ধ আটকালো না তিতিরকে। ওর মা এসে আচমকাই ওর গালে একটা চড় মারলো। মুগ্ধ আকাশ থেকে পড়লো! মা শেষ কবে ওকে মেরেছিল মনে করতে পারছে না। পিউ অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। মুগ্ধ বলল,
-“এটা কি হলো?”
মা বলল,
-“তুই মেয়েটাকে এভাবে কাঁদালি কেন?”
-“মা মাঝেমধ্যে না আমি তোমাকে বুঝেও বুঝিনা। এমনিতে অন্য মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য পাগল হয়ে থাকো। সারাদিন রাত আমাকে বলতে থাকো বিয়ে কর, বিয়ে কর। আর আজ তিতিরকে কাঁদিয়েছি বলে তুমি আমাকে মারলে?”
-“না বোঝার কি আছে? আমি তো তিতিরকে খুব পছন্দ করি। ওর মত লক্ষী, ধৈর্যশীল আর সংসারী মেয়ে খুব কমই হয়। ও তোর বউ হলে মরেও নিশ্চিন্তে থাকতাম। কিন্তু তিতিরের ফ্যামিলি তো কোনদিন ওকে তোর সাথে বিয়ে দেবে না। সেজন্যই আমি তোকে বিয়ে দিতে চাই। বয়স কি কম হয়েছে?”
-“কমই তো, মাত্র ৩১ গেল।”
-“তোর বাপ এই বয়সে এক ছেলের বাবা হয়েছিল।”
“হ্যা কিন্তু বাবা তো..”
কথা শেষ করতে দিল না মা। তার আগেই বলল,
-“আরেকটা চড় মারবো এটা নিয়ে কথা প্যাঁচালে।”
মুগ্ধ থেমে গেল। মা বলল,
-“যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বল”
মুগ্ধ বলল,
-“কোনটা?”
-“কি হয়েছে? ও ওভাবে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল কেন?”
-“মা আজ আমি ওর সাথে অনেক কড়া কথা বলেছি। অনেক কষ্ট দিয়েছি ওকে।”
-“কেন?”
-“দরকার ছিল এটার।”
-“কি বলছিস তুই? মেয়েটা সারাক্ষণ ফ্যামিলি থেকে কষ্ট পায়, কোথায় তুই একটু সাপোর্ট দিবি তা না তুই উল্টো কষ্ট দিচ্ছিস আর বলছিস দরকার ছিল?”
-“হ্যা দরকার ছিল। এবার ও খুব শীঘ্রই চলে আসবে আমার কাছে। যেটা ও এতদিন পারছিল না।”
-“এত সিওর হচ্ছিস কি করে?”
-“আমি ওকে খুব ভালভাবে চিনি মা। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকাতে হয়। আজ আমি আঙুল বাঁকিয়েছি, এখন শুধু ঘি ওঠার অপেক্ষা।”
-“এজন্যই বলে ছেলেরা অমানুষ। মেয়েদের নিয়ে বাজী খেলতে ওরা একটুও ভাবে না।”
-“হ্যা মা, তুমি ঠিক বলেছো। ছেলেরা অমানুষই হয়। কারন, তাদের কাছে প্রিয়জনের একদিনের হাসির চেয়ে সারাজীবনের সুখটা বেশি ইম্পরট্যান্ট। আর তার জন্য তারা সবকিছু করতে পারে।”
একবুক কান্না মুগ্ধর গলায় এসে আটকে গেল। মায়ের এবার কষ্ট হলো। কাছে এসে মুগ্ধর গায়ে হাত বুলিয়ে দিল। মুগ্ধ বলল,
-“একবার দেখেছো ওর গায়ের দাগগুলো? এমন মার মেরেছে শরীরের একটা যায়গাও বাদ রাখেনি। কি অমানুষিক নির্যাতন করেছে ভাবতেও পারবে না।”
মা অবাক হয়ে বলল,
-“সেকি! কে মেরেছে? কবে মেরেছে? কই আমিতো কোন দাগ দেখলাম না।”
-“সপ্তাহখানেক আগে ওর মা মেরেছে ৩ ফিট লম্বা স্কেল দিয়ে। পুরো শরীর নীল হয়ে গিয়েছিল। এখন কি অবস্থা জানিনা। ফুলহাতা জামা পড়েছে বলে দেখতে পাওনি।”
-“ইশ।”
মায়ের চোখ ছলছল করছিল, মুগ্ধরও। মুগ্ধ বলল,
-“যেদিন মেরেছে তার পরদিনই আমি দেখা করতে গিয়েছিলাম মা। ওকে দেখে এসে থেকে আমার মাথা খারাপ হয়েছিল। আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। অথচ মেয়েটা হাসিমুখে আমাকে শান্তনা দিচ্ছিল। কিভাবে পারলো এরকম একটা মেয়েকে এভাবে আঘাত করতে? বলো না মা এমন ফ্যামিলি কখনো দেখেছো তুমি? আজ মেরেছে কাল এর থেকে খারাপ কিছু করবে। আমি আর ভরসা করতে পারছি না ওকে ওর ফ্যামিলির কাছে রেখে। আবার নিয়ে আসার অধিকারও নেই। কি করবো বলো? তাই আমি এটাই চেয়েছি হয় ও ফ্যামিলিকে ছেড়ে আমার কাছে চলে আসুক নাহয় ওর ফ্যামিলির কাছেই থাকুক, তারা মারুক কাটুক যা খুশি তাই করুক.. জানবোও না অসহায়ত্বেও ভুগবো না। অপশন দুটো অথচ চুজ করতে হবে একটা। অপশন কিন্তু আমি দিইনি, ওর ফ্যামিলি দিয়েছিল কিন্তু আমরা মানছিলাম না। খুব বড় ভুল ছিল সেটা আমাদের। যে সম্পর্কের কোন ভবিষ্যৎ নেই সেই সম্পর্ক এভাবে চলতে পারেনা মা। এর তো একটা শেষ হওয়ার দরকার ছিল। করে দিলাম শেষ। বাট শি উইল কাম ব্যাক।”
মা মুগ্ধর পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,
-“হুম, সব ঠিক হয়ে যাবে বাবা। বি স্ট্রং।”
-“আমি তো স্ট্রং ই মা। খুব স্ট্রং, পাথরের মত। দেখলে না যার চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি আমি গড়াতে দিইনি আজ তার চোখের হাজার ফোঁটা জল ঝরলাম। আমি সবই পারি মা।
তিতির মুগ্ধর বাসা থেকে বের হয়েই একটা সিএনজি নিল। চোখের পানি মুছে শেষ করতে পারছে না। মুগ্ধ এতটা বদলে গেছে? সত্যি বদলে গেছে নাকি অন্যকিছু? মাথায় কিছু ঢুকছে না। মুগ্ধ এতটা নিষ্ঠুর কবে হলো? হ্যা অন্যদের সাথে মুগ্ধর নিষ্ঠুরতা ও আগে দেখেছে কিন্তু ওর সাথে? কি করে পারলো মুগ্ধ। একবার চোখটা মুছিয়ে দিল না! ওর হাতদুটো কোমরে রাখার পর ও জড়িয়ে না ধরে হাত সরিয়ে নিল! ব্ল্যাকমেইল করলো! কিন্তু মুগ্ধ তো জানে তিতির শুধু বাবার জন্যই যেতে পারেনা। পৃথিবীর সবাই জাহান্নামে যাক কিন্তু মুগ্ধ কেন ওকে বুঝবে না? ওর সবকিছু বোঝার মানুষ যে এখন একমাত্র মুগ্ধই ছিল। আজ সেও কিনা বুঝে না বোঝার ভান করলো। ঠিকই আছে, মুগ্ধ কত কষ্ট করেছে ওর জন্য! বিনিময়ে কিছুই তো পেল না। আর কত কষ্ট করবে? একদম ঠিক কাজ করেছে মুগ্ধ। এসব ভাবতে ভাবতেই কাঁদছিল আর ওড়নায় চোখ মুছছিল তিতির। কিন্তু যতই মুছছে সাথে সাথে আবার ভিজে যাচ্ছে চোখদুটো।
দুপুর নাগাদ তিতির বাসায় ফিরলো। বাবা, ভাইয়া নামাজ পড়তে গিয়েছে। ভাবী ড্রইং রুমে টিভি দেখছে, মা বোধহয় গোসলে। নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকালো তিতির। মুগ্ধর দেয়া সব জিনিসগুলো বের করে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল কতক্ষণ। কাঁদতে কাঁদতেই মুগ্ধর ছবি বের করলো। এই একটা ছবিই আছে, নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে, কালো টি-শার্ট পড়া। চোখে সানগ্লাস। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। কি সুন্দর করে হাসছে, হাসিটা দেখলেই বুকের ভেতরটা ধুক ধুক করে। তিতির ছবিটাতে অসংখ্যবার চুমু খেল পাগলের মত। তারপর মুগ্ধর পাঠানো মেসেজগুলো বারবার পড়লো। ভয়েস রেকর্ডগুলো প্লে করতেই তিতিরের এতক্ষণের নীরব কান্নাটা ভয়ঙ্কর কান্নায় পরিণত হলো। চিৎকার করে করে কাঁদতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাবী দরজায় নক করলো। কান্নার আওয়াজ পেয়ে এসেছে। তিতির দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে ভাবীকে ধরে কাঁদতে কাঁদতেই বলল,
-“ভাবী, ভাইয়াকে একটু রাজী করাও না। তুমি বললে ভাইয়া মানবে। মুগ্ধকে ছাড়া তো আমি বাঁচবো না কেউ বোঝে না কেন?”
ভাবী জড়িয়ে ধরে বলল,
-“পাগলী মেয়ে! তুমি তো জানো তোমার ভাইয়া আমার কোন কথাই শোনে না। তবু আমি ওকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, লাভ হয়নি।”
মা ডাইনিং টেবিলে লাঞ্চ রেডি করতে করতে বলল,
-“এত কান্নাকাটি কিসের?”
তিতির দৌড়ে গেল মায়ের কাছে। মায়ের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-“মা, মাগো.. আমাকে তুমি মেরে ফেলো মা। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। মুগ্ধকে ছাড়া আমার লাইফ ইম্পসিবল।”
মা স্বাভাবিক মুখে বলল,
-“তাহলে মরেই যা। আজিমপুরে রেখে আসবো।”
তিতিরের বলতে ইচ্ছে হলো, ‘আমি কি আসলেই তোমার নিজের পেটের মেয়ে?’
কিন্তু বলতে পারলো না। মা বলল,
-“প্লেট, গ্লাস গুলো টেবিলে সাজিয়ে দে যার যার যায়গামত।”
তিতির দেখলো ৫ টা প্লেট ৫ টা গ্লাস টেবিলের এক কোনায় রাখা। রাগ সংবরণ করতে একটা গ্লাস উঠিয়ে মাটিতে ছুড়ে ভেঙে ফেলল তিতির। মা বলল,
-“আরো চারটা আছে।”
তিতির প্লেটগুলো হাতে উঠিয়ে আছাড় মেরে ভাঙলো। মা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তিতিরের দিকে। তারপর তিতির এক হাতে সবগুলো গ্লাস ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ফেললো। মা বললো,
-“যা যা ভাঙলি সব তোর বাপের টাকায় কেনা তাই টের পেলি না। এক পয়সা আয় করার যোগ্যতা তো নেই নষ্ট করার যোগ্যতা খুব ভালভাবে আছে। যা পরিস্কার কর।”
চম্পা বলল,
-“খালা, আমি সব পরিস্কার করতাসি।”
-“না তুই করবি কেন? তুই কি নোংরা করেছিস? যে নোংরা করেছে সে পরিস্কার করবে।”
তিতির পানিসহ পানির জগটাও আছাড় মেরে ভাঙলো। তারপর ভাঙা কাঁচের উপর দিয়ে হেটে চলে গেল নিজের ঘরে। পায়ের মধ্যে যে কতগুলো কাঁচের টুকরো ঢুকেছে! প্রথম যখন ভাঙা কাচের উপর পা ফেলল তখন যা ব্যাথা না লাগলো তার চেয়ে অনেক বেশি লাগলো পরের স্টেপগুলোতে। প্রত্যেকবার পা ফেলার সময় ভাঙা কাচের টুকরোগুলো একটু একটু করে ভেতরে ঢুকছিল। ঘরের দরজা লাগিয়ে ওখানেই বসে পড়লো তিতির। বাম পা টা কোলের মধ্যে নিয়ে একটা একটা কাচ বের করছিল আর সেখান দিয়ে রক্ত পড়ছিল। তারপর একইভাবে ডান পায়ের নিচের কাচগুলোও বের করে ফেলল তিতির। রক্তে লাল হয়ে গেছে জামাকাপড়, ফ্লোর সবকিছু। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে উঠে আলমারি থেকে একটা ওড়না বের করে দু’টুকরো করলো। তারপর তা দিয়ে পা’দুটোকে বেধে নিল। তারপর চোখের পানি মুছে নিল। ওর সবকিছু এখন থেকে ওরই করতে হবে। এই পৃথিবীতে আজ আর ওর বলে কেউ নেই। সবাই যার যার।
সেদিন থেকেই তিতির একটা চাকরির চেষ্টা করতে লাগলো। মায়ের খোঁটাটা দিনরাত শুধু কানে বাজে। দেখতে দেখতে তিতিরের মাস্টার্স শেষ হয়ে গেল। তারপর একটা চাকরিও পেয়ে গেল। প্রথম মাসের স্যালারি পেয়েই তিতির যা যা ভেঙেছিল তা তা হুবহু ডিজাইনের এক সেট করে কিনে নিয়ে এল। মা দেখে নির্বিকার রইলেন।
এখন তিতিরের দিনকাল ব্যস্ততায় কাটে। সকালে অফিসে যায় সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে। প্রায় একটা বছর পার হয়ে গেছে। সেদিনের পর আর একদিনও কথা হয়নি মুগ্ধর সাথে। না মুগ্ধ ফোন করেছে, না তিতির। বাবা মা তিতিরের বিয়ের জন্য এক ছেলেকে ঠিক করেছে, তান্নার বন্ধু। যে প্রায়ই বাসায় আসে আর তিতিরকে তার সামনে বসে থাকতে হয়। ছেলেটির নাম সুহাস। সুহাস ইঞ্জিনিয়ার, বেশ স্মার্ট, সুন্দর দেখতে, নম্রভদ্র। যেমনটা তিতিরের ফ্যামিলি চেয়েছিল। সুহাস যখন কথা বলে তিতির তা এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্যকান দিয়ে বের করে দেয়ারও প্রয়োজন মনে করে না, শোনেই না। মুগ্ধর কথা ভাবতে থাকে। সুহাস যতক্ষণ সামনে থাকে তিতিরের মুখের দিকে হা করে চেয়ে থাকে। প্রতিদিন রাতে ফোন করে তিতির হাই হ্যালো করে ঘুমের ভান করে তখন সুহাস নিজেই ফোন রেখে দেয়। সুহাস আর ওর ফ্যামিলি যখন প্রথম দেখতে আসে তিতিরকে তখনই পছন্দ করে ফেলে। আর সুহাসের মা ওকে আংটি পড়িয়ে দেয়। সেদিনই সুহাসকে তিতির মুগ্ধর কথা সবটা খুলে বলেছিল। সব শোনার পর ও বলেছিল,
-“আমি এসব আগে থেকেই জানি। তান্না বলেছিল আমাকে।”
-“আপনি সব জেনেও আমাকে বিয়ে করবেন?”
সুহাস হেসে বলেছিল,
-“হ্যা, না করার তো কারন দেখছি না। বিয়ের আগে রিলেশনশিপ সবার থাকে। আমারও গার্লফ্রেন্ড ছিল। এনিহাও ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছে, এখন আমি কি তার জন্য চিরকুমার হয়ে বসে থাকবো? সেটা তো আর সম্ভব না।”
-“আমাদের রিলেশনশিপ টা আজকালকার টিপিক্যাল রিলেশনশিপের মত ছিল না। অন্যরকম ছিল, আমি কখনোই ভুলতে পারবো না ওকে।”
-“এরকম মনেই হয় তিতির। কিন্তু বিয়ের পর সব অন্যরকম হয়ে যায়। সময় সব ঠিক করে দেয়।”
-“কিছুই ঠিক হবেনা, আমি জানি। আপনি কি এটা মেনে নিতে পারবেন যে আপনার স্ত্রী অন্য একজনকে ভালবাসে?”
-“তুমি বয়সেই বড় হয়েছো তিতির বাট স্টিল ইউ টক লাইক আ টিনেজার।”
-“যাই হোক, আমি এক্ষুনি বিয়ে করতে পারবো না। আগে ওর বিয়ে হবে তারপর আমি বিয়ে করবো। ততদিন অপেক্ষা করতে পারবেন?”
-“তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারবো।”
-“প্রথমদিনেই এরকম সিনেমার ডায়ালগ দিচ্ছেন কি করে?”
-“ওয়েল, প্রথম দিন হতে পারে আমাদের দেখা হওয়ার কিন্তু আমি তোমাকে অনেকদিন আগেই দেখেছিলাম। তখন তুমি বোধহয় ভার্সিটিতে পড়ো কেবল। সেদিনই তোমাকে পছন্দ করে ফেলেছিলাম।”
তিতির আর কথা বাড়ায়নি। শেষে বলেছিল,
-“ঠিকাছে অপেক্ষা করেন। ওর বিয়েটা হয়ে গেলেই আমাদেরটাও হবে।”
-“ওকে আমার কোন তাড়া নেই। আমার শুধু তোমাকে পেলেই হবে।”
কিন্তু আজও তিতির প্রতিটা রাত মুগ্ধর সাথে কথা বলার তৃষ্ণা মেটায় পুরোনো ভয়েস রেকর্ডিং শুনে। আদরের তৃষ্ণা মেটায় পুরোনো আদরের স্মৃতিগুলো রোমন্থন করে। কোনদিন এসব ভেবে খুব ভাল লাগে কোনদিন আবার প্রচন্ড কান্না পায়। কোনদিন মিটিমিটি হাসে, কোনদিন কাঁদে। মাঝেমাঝে ভাবে একটা মিরাকল কি হতে পারে না? এভাবেই কাটছে তিতিরের জীবন।
আর মুগ্ধর প্রতিটি দিন কাটে অফিসের কাজের ব্যস্ততায়। আর রাত কাটে তিতিরকে ভেবে। একমাত্র মুগ্ধর বালিশটাই জানে মুগ্ধর চোখেরও জল গড়ায়। আজও মুগ্ধ অপেক্ষায় আছে তিতিরের।
মুগ্ধ ঘুমিয়ে ছিল। দিনটি শুক্রবার, অফিস নেই তাই বেশিক্ষণ ঘুমানো। হঠাৎ বুকের ভেতর কোন তপ্ত ছোঁয়া অনুভব করতেই চোখ মেলে তাকালো। তাকিয়ে দেখলো তিতির ওর বুকের মধ্যে শুয়ে আছে। মুগ্ধও তিতিরকে আরো ভাল করে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে লাগলো। এ আর নতুন কি! মুগ্ধর প্রতিদিনকার স্বপ্ন। কিন্তু হঠাৎই মনে হলো তাপটা যেন বেশি। আবার চোখ মেলে তাকালো। ঘুমটাকে ঝেড়ে ফেলে আবার তাকালো। এটা তো স্বপ্ন নয়, এটা বাস্তব। প্রচন্ড গরম তিতিরের শরীর। কপালে, গলায় হাত দিল। জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে তিতিরের। মুগ্ধকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকতে দেখে তিতির হেসে ঘোর লাগা অসুস্থ স্বরে বলল,
-“আমি চলে এসেছি।”
মুগ্ধ বলল,
-“চলে এসেছো মানে? আর এত জ্বর নিয়ে এলেই বা কিভাবে?”
তিতির মুগ্ধর গলাটা জড়িয়ে ধরে জ্বরের ঘোরেই বলল,
-“তোমার এই স্লিপ্পি ভয়েসটা না খুব সেক্সি। কতদিন পর শুনলাম! আমি খাব।”
মুগ্ধ অবাক হয়ে চেয়ে রইলো তিতিরের দিকে।
To be continued…