গল্পের নামঃ #প্রেমানুভূতি
#পর্বসংখ্যা_০৮
লেখনীতেঃ #ফারিহা_জান্নাত
মহুয়ার পাশে বসে থাকতে থাকতে কখন যে চোখটা লেগে গেছে বুঝতেই পারেনি। মহুয়ার নড়ে উঠলে আদনানের ঝিমুনী ভাঙে। চোখ কচলিয়ে তাকিয়ে দেখে মহুয়া ঘুমের ঘোরেই উশখুশ করছে। নার্সকে ডাকলেই সে বলে জ্ঞান ফিরতে পারে তাই এমন করছে, ভয়ের কিছু নেই।
আদনান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আবারো মহুয়ার হাতটা মুঠ করে ধরে চুপ করে বসে থাকে।
কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে চোখ খুলল মহুয়া। পিটপিট করে চেয়ে আশেপাশে তাকালো। চোখে আলো লাগলেই চোখটা ব্যাথা করা শুরু করলে চোখটা বন্ধ করে ফেললো। হাতটা আস্তে করে নাড়াতেই আদনান জেগে গেলো। অস্হির হয়ে মহুয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ধীরে ধীরে চোখ খুললো মহুয়া। অতিরিক্ত লাইটটা অফ করে দিলো আদনান। মহুয়া চোখ খুলে মলিন হাসি দিয়ে আদনানের দিকে তাকালো।
আদনান ধীর কন্ঠে বলল,
– “খারাপ লাগছে খুব?”
মহুয়া না বোধক মাথা নাড়াতে চাইলে মাথায় চাপ পড়ে। সাথে সাথে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলে। কথা বলতে চাইলে গলার স্বর বের হয় না। আদনান মহুয়ার অবস্হা বুঝতে পেরে বলে,
– “গলায় কাঁচ ঢুকে গিয়েছিল। অপারেশন হয়েছে তাই কথা বলতে পারছেন না। চিন্তা করবেন খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবেন। আপনাকে ঠিক হতেই হবে।”
ক্লান্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে মহুয়া। ডাক্তার এসে কিছুক্ষণ চেক-আপ করে চলে যায়। ডাক্তার চলে যাওয়ার পরই আদনান বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় মহুয়ার জ্ঞান ফিরার কথা। সেই সাথে বলে দেয় এই রাতে কাউকে না আসতে, আগামীকাল সবাই আসবে। কথা শেষ করে মহুয়ার কাছে এসে দেখে মহুয়া আবারো ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমটা গভীর হওয়ার আগেই তাড়াতাড়ি তাকে জাগিয়ে তুললো আদনান। গলার সমস্যার কারনে এখন লিকুইড ফুড ছাড়া অন্য কিছু খেতে পারবে না। হসপিটালের ক্যান্টিন থেকে দেওয়া স্যুপটাই এখন খেতে হবে। মহুয়ার মাথার নিচে আরেকটা এক্সট্রা বালিশ দিয়ে মাথাটা উঁচু করে নিলো। তারপর স্যুপটা তার মুখের সামনে ধরতেই মহুয়ার চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলে। আদনান চোখ পাকিয়ে মহুয়ার দিকে তাকায়। অসহায় চোখে তাকিয়ে মহুয়া মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আদনান এবার ধমক দেয় তাকে। মহুয়া ভয় পেয়ে ধীরে ধীরে স্যুপটা খেয়ে নেয়। মহুয়া স্যুপ খাওয়া শেষ হলে তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুমাতে বলে।
পরদিন বেশ সকাল সকাল শিল্পী,মাহমুদ রহমান আর মোর্শেদ চৌধুরী এসে উপস্হিত হয়। শিল্পী খাতুন তো মহুয়ার এই অবস্হা দেখে কেঁদেই দেন। আদনান অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মাকে শান্ত করে। তাদের কথা-বার্তার শব্দে মহুয়া ঘুম থেকে উঠে পড়ে। মোর্শেদ চৌধুরী ও মাহমুদ রহমান কিছু কথা বলে আদনানের সাথে ডাক্তারের কাছে কথা বলতে যায়। শিল্পী খাতুন মহুয়া সামনে এসে কেঁদে বলে,
– “তুই নিজে গাড়ি থেকে না বের হয়ে কেন আমাদের বের করে দিলি হ্যা? আমার কথা কি একবারো মনে পড়ে নি?”
মহুয়া মলিন হেসে আটকপ আটকে বলে,
– ” মেয়ে হয়ে মা-কে কিভাবে বিপদের মুখে ঠেলে দিতাম।”
শিল্পী খাতুন আবারো হু হু করে কেঁদে ফেলেন। মহুয়া তার কান্না দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
তারপর হসপিটালে থাকার বাদ বাকি দিনগুলোতে আদনান-ই মহুয়ার সাথে ছিলো। শিল্পী খাতুন আর মাহমুদ সাহেবকে থাকতে দেয় নি। আর মোর্শেদ চৌধুরী তার ফ্লাইটের সময় অনুয়ায়ী মহুয়ার এক্সিডেন্টের কিছুদূিন পরেই বিদূেশে চলে যান। এ নিয়ে মহুয়ার বেশ কিছুদিন মন খারাপ ছিলো। পরে আদনান অনেক বুঝিয়ে তাকে স্বাভাবিক করে। ডাক্তারের পরামর্শে প্রায় দুই সপ্তাহ পর মহুয়া আাসায় ফিরতে পারে। এতদিন পর হসপিটাল থেকে ফিরতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মহুয়া।
________
বিছানায় বসে গল্পের বই পড়ছিলো মহুয়া। আদনান সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। মহুয়ার শরীর এখন বেশ খানিকটা সুস্হ। তবে হাঁটতে পারে না ঠিকমতো। তবে কিছুদিন ধরে তার প্রচুর মুড সুইং হয়। কেন হয় মহুয়া নিজেও বলতে পারে না। গতদিন তো আদনানের উপর রেগে টেবিল ল্যাম্প ছুড়ে ভেঙ্গে ফেলেছিলো। তারপর নিজের কাজে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেছে সে। আদনান অবশ্য তাকে কিছু বলে নি। হাসিমুখে সামলে নিয়েছিল সবকিছু।
মাথায় কারে স্পর্শ পেলেই মহুয়া চোখ তুলে তাকায়। দেখে আদনান ফলের জুস হাতে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবারের মতোই মহুয়া অসহায় স্বরে বলল,
– “আজকে বাদ দিন না প্লিজ। কালকে খাবো প্রমিস।”
আদনান রাগী স্বরে বলে,
– “না! প্রতিদিনের টা প্রতিদিন খেতে হবে। এখন চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো খেয়ে নাও।”
মহুয়া মুখ ভেঁংচিয়ে আালিশ দিয়ে মুখ চেপে রাখে। অর্থাৎ সে কিছুতেই খাবে না। আদনান এবার গ্লাসটা পাশের টেবিলে রেখে মহুয়ার দিকে এগিয়ে গেলো। মহুয়া তো কিছুতেই খাবে না। আদনান মহুয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
– “প্লিজ খেয়ে নাও। না হয় তোমাকে আবারো হসপিটালে থাকতে হবে।”
মহুয়া আদনানের নরম সুর শুনে চুপচাপ দুধটা খেয়ে নিলো। আদনান মহুয়ার কাজে খুশি হয়ে তার কপালে একটা চুমু খেলো। এই কয়েকদিনে তাদের সম্পর্ক বেশ পাকাপোক্ত হয়েছে। দুজন দুজনার কাছাকাছি এসেছে। আদনান এখন মহুয়াকে তুমি করে বলে। তবে সমস্যা হলো মহুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে। এই অসুস্হতার কারনে মহুয়ার অনেক ক্ষতি হয়েছে। ডান পা-টা অনেক অচল হয়ে গিয়েছে। হাঁটাহাঁটি করতে বেশ কষ্ট হয়। আদনান ভাবছে খুব শীঘ্রই মহুয়াকে নিয়ে বিদেশি ডাক্তারের কাছে যাবে।
রাত বাড়তেই মহুয়ার পাগলামি শুরু হয়। এখন বেশিরভাগ রাত জেগেই কাটায়। তার সাথে জেগে থাকে আদনান। সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে, কিন্তু মহুয়ার কথা শুনে আবারো ঝিমুনী কেটে যায়। কতদিন এভাবে চলবে কে জানে!
চলবে,
ভাঙ্গা হাত তার উপর ভ্যাকসিনের ব্যাথা! এর বেশি হাত চললো না। তবে খুব শীঘ্রই গল্পের ইতি টেনে দিবো, অপেক্ষা করাবো না আপনাদের।