#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#Part- 4 & 5
সন্ধ্যা হলেই নীলিমা বাসা থেকে বের হতে যায়।
নীলিমার বাবা মেয়ে কে বের হতে দেখে পেছন থেকে ডাক দেন।
অনিচ্ছা থাকা সত্যে ও নীলিমা থেমে দারায় কিন্তু পেছন ফিরে তাকায় না।
নীলিমার বাবা মেয়ে কে নরম সুরেই বললেন
– মা আজকে পাবে না গেলে হয় না ?
নীলিমা প্রতি উত্তরে তাৎছিল্যর হাসি হাসে।
কিন্তু তা নীলিমার বাবার চোখে পড়ে না।
নীলিমার বাবা উত্তর না পেয়ে ধীর কন্ঠে ই আবার বললেন
– দেখ সব কিছুর একটা লিমিট থাকে।
আজ কে তুই পাবে যাস না।
নীলিমা আবার তাৎছিল্যর হাসি হেসে পেছনে না ঘুরেই বলল
– মিস্টার চৌধুরী আপনার বলা শেষ ?
প্রতি উত্তরে নীলিমার বাবা শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
নীলিমা তাৎছিল্যর হাসি ফুটিয়ে ব্যস্ত পায়ে গাড়ির চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে বের হয়ে যায়।
_____________________
আজ নীলিমা রাত আটটার মধ্যে ই বাসা তে ফিরেছে।
নীলিমা তো দশ টার আগে বাসা তে ফিরে না ,,,,,,
নীলিমার বাবা ডয়িং রুমে বসে বসে ফাইল হাতে কাজ করছিলেন।
নীলিমা কে মেইন ডোর দিয়ে ঢুকতে দেখেই ওনি চমকে উঠলেন।
উনি বিস্ময়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন ,,, কিন্তু নীলিমা পাত্তা না দিয়ে উপরে উঠে যায়।
মিসেস চৌধুরী মেয়ের ঘরের দিকটাতে আওয়াজ শুনে থমকে যান।
নীলিমা এসেছে ?
কখনো তো এতো আগে বাসাতে তে ফিরে না।
বরং দশ টার জায়গা তে এগারো টা বাজায়।
তাহলে ?
মিসেস চৌধুরী কৌতুহল নিয়ে মেয়ের ঘরে যান।
ঘরে গিয়ে দেখতে পান,,,,, নীলিমা বই হাতে অংক কষতে ব্যস্ত।
অবাক হয়ে কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেন ওনি।
হঠাৎ করেই ওনার চোখ থেকে অঝোরে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল ।
আজ কতো দিন পর মেয়েকে এমন ভাবে দেখছেন ওনি।
মেয়েটা যে নিজেকে শেষ করতে ব্যস্ত।
নীলিমা দরজার দিকে তাকাতেই মা কে দেখতে পায়।
মা কে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে ও যায় ।
কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয়,,,,
নীলিমা সারা বিশ্ব কে দেখাতে চায় ও খুব ভালো আছে।
আর পৃথিবীর সব থেকে বাজে মেয়ে ওওও
কিন্তু মানুষ যতই চেষ্টা করুক না কেন কখনো না কখনো সে তার আসল রূপে আসেই।
নীলিমা ও তাই ,,,,,
কাল থেকে পরীক্ষা শুরু,,,,, আর যাই হোক এই পড়াশুনা কে অবহেলা করতে পারবে না নীলিমা।
কোনো মতে পাশ করলে ও করতে হবে।
কাউকে কথা দিয়েছিলো কি না।
নীলিমা পড়াতে মনোযোগ দিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বলল
– কিছু বলবে আম্মু ?
মিসেস চৌধুরী চোখের পানি আঁচল দিয়ে মুছে বললেন
– না রে মা কিছু বলব না ।
তুই তে আজ এতো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরেছিস এটাই অনেক।
নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– আম্মু আমায় এতো ভালোবেসো না।
পরে খুব কষ্ট পাবে তাহলে ,,,,,
মিসেস চৌধুরী কৌতুহলী চোখে বললেন
– কেন ?
নীলিমা উত্তর দিলো না।
মিসেস চৌধুরী এখনো উত্তরের অপেক্ষা করছেন।
নীলিমা অংক টা পুরো পুরি কমপ্লিট করে বলল
– আমি বিয়ার সাথে করে নিয়েই এসেছি।
কাল পরীক্ষা তাই একটু আগে বাসাতে আসছি।
এতো খুশি হইয়া না ।
মিসেস চৌধুরীর চোখ দুটো আবার পানি তে টুইটুম্বর হয়ে গেল।
নীলিমা বুঝতে পারছে মিসেস চৌধুরী কাঁদছেন।
কিন্তু নীলিমা নিরুপায়,,,, ওর জীবনটাই ঘন কালো আঁধারে ছেয়ে গেছে।
নিশ্বেষ তো সেই কবেই হয়ে গেছে।
শরীর টা বেঁচে আছে যে এটাই অনেক ।
নীলিমা মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো ।
ভেতর টা একটু হলে ও যে পুরছে ,,, মাকে খুব ভালোবাসে যে।
কিন্তু এখন আর সেই ভালোবাসা প্রকাশ করে লাভ নেই।
সমস্ত কিছু ই মূল্যহীন হয়ে গেছে।
নীলিমা এই সব ভাবতে ভাবতে আবার ঠোঁটের কোনে তাৎছিল্যর হাসি ফুটিয়ে দিলো।
মিসেস চৌধুরী আঁচলে মুখ চেপে নিজের রুমের দিকে পর্দাপন করলেন।
মা কে চলে যেতে দেখেই নীলিমা দরজা লক করে দিলো।
ব্যাগ থেকে বিয়ারের বোতল টা বের করে একের পর এক গ্লাস শেষ করলো।
নীলিমার খুব কষ্ট হচ্ছে,,,,, এতো বিয়ারের ও কেন ওর নেশা হয় না ?
কেন ওর সমস্ত কষ্ট দূর করে দিতে পারে না ?
খানিকক্ষণ জন্য ও কি পারে না এই কষ্টের মুক্তি দিতে ?
নীলিমা চিৎকার করে কাঁদছে,,,,,, এই কান্না ওর রোজকার,,,,, সারাজীবনের কান্না।
চোখের পানি কেন শুকোয় না তা ভেবে পায় না নীলিমা।
চোখের পানি দিয়ে দুঃখের সাগর বুনে চলেছে নীলিমা।
সাউন্ড প্রুফ রুম না হলে নিশিরাতের ভয়নাক সেই নীলিমার আর্তনাদ গুলো প্রকৃতি ও সহ্য করতে পারতো না।
এই ঘরের জড় জিনিস গুলোই জানে অশরীরীর মতো নীলিমা রোজ ডুকরে ডুকরে কাঁদে।
কোনো জীব এ ঘরে থাকলে নির্ঘাত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তো।
নীলিমা মেঝে তে বসে হাঁটু তে মুখ গুঁজে দেয়।
সব কেন এতো অসহ্য লাগে ওর কাছে।
কেন একটি মানুষ কে ঘিরে ওর পৃথিবী?
কেন এতো আসক্তি?
নীলিমা পাগলের মতো করছে ,,,,, রোজ ই করে,,, আবার নিজেই নিজে কে সামলে নেয়।
নীলিমার পৃথিবী টা জনমানবশূন্য,,, কেউ নেই ওর পাশে।
ইচ্ছে করে বুক চিরে দেখাতে রোজ এই হৃদয় টা কতোটা জখম হয়।
5,,,,
পরীক্ষা শেষ করে নীলিমা হল থেকে বের হচ্ছিলো।
ব্লু পেন্ট এর সাথে জিন্স এর লং শার্ট আর সাথে শর্ট একটা ওড়না পড়েছে নীলিমা।
মাথায় উঁচু করে ঝুঁটি বেঁধেছে,,,,,
নীলিমা কে দেখলে কেউ বলবেই না যে এই মেয়ে টা এতো বিয়ার খায়।
নেশার বিন্দু মাত্র ছাপ নেই ওর মুখে।
বি এ ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা ছিলো নীলিমার।পরীক্ষা মোটামুটি ভালোই দিয়েছে।
প্রথম দু বছর পড়শুনাতে হেঁয়ালি করলে ও গত দু বছর নীলিণা বেশ করে পড়াশুনা করেছে যদি ও বাসার মানুষের অগোচরেই সেটা বেশি করেছে।
নীলিমা ব্যাগ কাঁধে হল রুম থেকে বের হচ্ছিলো ।
তখনি একটা ছেলে হাঁটু গেড়ে নীলিমা কে প্রপোজ করে দেয়।
নীলিমা ছেলেটার দিকে বিরক্তি নিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে ।
তারপর চলে যেতে নিলেই ছেলেটা উঠে দাড়িয়ে বলে
– নীলিমা আমি তোমাকে ছয় মাস ধরে ভালোবাসি ।
বলা হয় নি ,,,, কিন্তু আজ অনেক সাহস জুগিয়ে বলেই দিলাম।
নীলিমা ছেলেটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে তাৎছিল্যর হাসি দিলো।
আশে পাশের সবাই তাকিয়ে আছে।
নীলিমার তাতে কিছুই যায় আসে না।
কিছু মুহুর্ত পর নীলিমা বলল
– হোয়াটস ইউথ নেইম।
ছেলেটা মিষ্টি করে হেসে বলল
– আবির।
নীলিমা কিঞ্চিত হেসে বলল
– মিস্টার আবির কাউকে ভালোবাসা দোষের নয়।
আপনি বলেছেন আমি শুনেছি ,,, কিন্তু আমি এতে ইন্টারেস্ট নই।
দয়া করে আমার থেকে দূরে থাকলে খুশি হবো।
এই বলেই নীলিমা স্থান ত্যাগ করলো।
আবির ভেবে পায় না ,,, এই মেয়ে টা এমন কেন।
না কারো সাথে মিশে আর না কারো সাথে রিলেশন করে।
এতো টা ভিন্ন রকমের কেন ?
আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলো ,আবির কে কেন পছন্দ হলো না নীলিমার।
আবির দেখতে তো কোনো অংশেই কম নয়।
উল্টো কতো শত মেয়ে তার সাথে রিলেশনে যাওয়ার জন্য পাগল।
অথচ ও কিনা ভালোবাসে এমন একজন কে যে তাকে
চায় না ।আবিরের ভেতর থেকে এক রাশ ক্লান্তি আর বিরক্তি দীর্ঘশ্বাস হয়ে বের হয়ে আসলো।
আবির নীলিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের রাস্তা তে পা বাড়ালো ।
_______________________
নীলিমা কলেজ গ্রাউন পেরিয়ে মেইন গেটের কাছে আসতেই কিছু কথা তে থেমে গেল।
নীলিমার ক্লাস মেট তাফসিয়া আর মেরিনা নীলিমা কে শুনিয়ে বলছে
– বুঝেছিস আজকাল কিছু মেয়ে রা যে পরিমানে নেশা করে কি আর বলব।
তবু ও সেই নেশাক্ত শরীর নিয়ে কলেজে আসে।
ছি এদের লজ্জা নেই নাকি।
নীলিমা ওদের কথাতে কিঞ্চিত তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
কি অদ্ভুত একটা টু শব্দ ও করলো না নীলিমা ।
মনে হলো কথা গুলো ওকে বলা হয় নি।
নীলিমা গেইট দিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে ভাবলো।
অন্য সময় হলে হয়তো নীলিমা এদের হাড় মাংস আলাদা করে দিতো।
কিন্তু এখন কিছু বলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে টাই নেই।
যার শরীরে আত্মা টাই নেই তাকে কে কি বলল কি যায় আসে ।
ওদের কথা বিন্দু মাত্র নীলিমার গা কে স্পর্শ করতে পারলো না।
______________________
নীলিমা চলে যেতেই তাফসিয়া আর মেরিনা অবাক হয়ে রইলো।
ভেবে ছিলো কিছু একটা বলবে ,,,,
কিন্তু নীলিমা তো পুরো প্লেন টাই ঘেঁটে দিলো।
তাফসিয়া আফসোসের সুরে বলল
– ইসসস আজ একটু বললেই হতো রে পুরু ধুইয়ে দিতাম।
মেরিনা কিঞ্চিত হেসে বলল
– দূর বাদ দে তো।
এই মেয়ের এখন কোনো অনুভূতি ই নাই।
এর সাথে কথা বলা আর দেওয়ালের সাথে কথা বলা এক কথা।
মেরিনার কথা তে তাফসিয়া বাঁকা হাসলো ।
তারপর দুজন হাসতে হাসতে বের হয়ে গেল।
_______________________
পরীক্ষা শেষে দুদিন নীলিমা বাসা থেকে বের হয় নি।
যার ফলে নীলিমার বাবা বেশ খুশি হয়েছেন।
হাজার হোক কোনো পিতা কি চায় ওনার সন্তান নেশার মতো বাজে বিষয়ে জড়িয়ে যাক।
নীলিমা দুদিন বেশ ঘুমিয়েছে ,,,,, বহু দিন ধরে ঘুমোয় না যে।
তাই একসাথে দুটো করে হাই ডোজের ঘুমের ওষুধ খেয়েছে।
যার ফলে শরীর বিছানাতে নিস্বতেজ হয়ে গেছে।
বহুদিনের না ঘুমুনো অতৃপ্ত আত্মা টা আজ ঘুমিয়েছে ঠিক ই কিন্তু এই ঘুমে কোনো তৃপ্তি নেই।
রাত আটটার দিকে নীলিমার ঘুম ভেঙে গেল।
নীলিমা উঠে গিয়ে দেখলো বিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
ঘড়ির দিকে এক নজর তাকিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো।
শরীর টা মেজ মেজ করছে ওরর।
বড্ড ক্লান্ত শরীর দুদিনের এতো ঘুমে মনে হচ্ছে ক্লান্তি টা উল্টো বেড়ে গেছে ।
মিসেস চৌধুরী ডাইনিং এ খাবার সাজাচ্ছিলেন।
নীলিমা কে নিচে নামতে দেখে বললেন
– মা তুই কি এখন ডিনার করবি?
নীলিমা মাথা ঝাঁকিয়ে বারন করলো।
মিসেস চৌধুরী বললেন
– কিছু দরকার মা ?
নীলিমা উত্তর না দিয়ে মেইন ডোর দিয়ে বেরিয়ে গেল।
মেয়ের সেই আগের অবস্থা দেখে মিসেস চৌধুরী কাঁদতে লাগলেন।তার সংসারে সুখ নামক কিছু কি আর আসবে না ?
মেয়েটা যে শেষ হয়ে যাচ্ছে
ডাইনিং এ বসে এভাবে কাঁদতে দেখে আজাদ চৌধুরী বললেন
– এভাবে কাঁদছো কেন ?
মিসেস চৌধুরী সমস্তটা বলার পর ওনি শুধু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন।
চোখে থাকা কালো ফ্রেমের চশমা টা খুলে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
নীলিমা পাবে যেতেই ম্যানেজার উঠে দাড়িয়ে সম্বোধন করলেন।
নীলিমা পাবে থাকা বিশাল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো কয়টা বাজে।
নয়টা বেজে যাওয়াতে নীলিমা পাবে বসে বিয়ার খেলো না ।
তিন বোতল বিয়ার নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
ম্যানেজার ছোট্ট একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন ।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
পরবর্তী পার্ট পেতে পেইজ এ ফলো দিয়ে রাখুন
https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/