প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#পর্ব_৫৮
#Writer_Afnan_Lara
🌸
শান্ত ডোন্ট ওয়ারি,আমার রক্তের গ্রুপ “এ পজিটিভ” আমি রক্ত দিব আহানাকে,সমস্যা নেই
.
নওশাদের কথায় শান্তর কিছুটা স্বস্তি হলো,কপাল কুঁচকে ডাক্তারকে বললো “আহানার জ্ঞান ফিরবে কখন”
.
ডাক্তার বললেন ১/২ঘন্টা লাগতে পারে,তবে রক্ত দিতে যেন দেরি না হয়,এতে ওর ক্ষতি হয়ে যাবে
দরকার হলে আজকে সারারাতের মধ্যেই এক ব্যাগ দিয়ে দেওয়া উচিত
নওশাদ শান্তর কাঁধে হাত রেখে বললো চল,ওয়েট করিস না বেশি
জানিস তো আন্টির ও এমন!
.
শান্ত যেন বুকে খুব জোরে আঘাত পেলো,আহানার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে ওর পাশে এসে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে গেলো,দুহাত দিয়ে ওর গাল ধরে তাকিয়ে রইলো
নওশাদ শান্তর মাথায় হাত দিয়ে মুছে বললো “কনট্রোল ইউরসেল্ফ শান্ত!”
শান্ত কপালটা মুছে আহানাকে বেড থেকে তুলে নিলো,আর কারোর দিকে তাকালো না সে,আহানার দিকে তাকিয়েই হাঁটা ধরলো
নওশাদ শান্তকে থামিয়ে একটা Cab ঢেকে নিলো
♣
আহানা যখন চোখ খুললো তখন সে নিজেকে হসপিটালের বেডে পেলো,চমকে উঠে বসলো সে,এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না
পুরো রুম খালি,রুমে সে আর বিছানা ছাড়া আর কিছুই নেই,কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো সে,শান্তকে আশেপাশে না দেখলে ভয়টা জাগ্রত হয় ক্রমশ
মনে করার চেষ্টা করলো যে কি হয়েছিলো এর আগে
.
একজন নার্স উঁকি দিয়ে আহানাকে দেখে চলে গেলেন
শান্ত, নওশাদ আর রুপার কাছে এটা বলতে যে আহানার জ্ঞান ফিরেছে
নওশাদ ততক্ষণে রক্ত দিয়েও দিয়েছে,রক্তের ব্যাগ হাতে নিয়ে শান্ত রুমে ঢুকলো,আহানা নামতে গিয়ে শান্তকে দেখে থেমে গেলো
শান্তর সাথে সাথে রুপা, নওশাদ আর একজন নার্স ঢুকেছেন রুমে
কিছুক্ষন পর একজন ডাক্তার ও এলেন
আহানা বারবার জিজ্ঞেস করতেসে কি হইসে কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছে না ওর সাথে
শান্ত তো তাকাচ্ছেও না
আহানা এরকম সবার নিরবতা দেখে কেঁদে দিলো
খুব খারাপ লাগতেসে তার, কেউ তার সাথে কথা বলতেসে না শুধু রোবটের মত তাকিয়ে আছে
ডাক্তার ক্যানেলার নিয়ে এগিয়ে এসে বসলেন,উনি আহানার হাত ধরতেই
আহানা বললো সে রক্ত নিবে না,সুই ফুটাবে না,কথাটা বলার সাথে সাথে খুব জোরে চড় খেলো
গালে হাত দিয়ে শান্তর দিকে তাকালো সে
শান্ত ওকে চড় মেরে ওর দিকেই তাকাচ্ছে না
যেন কিছুই হয়নি, ঠাণ্ডা মাথায় ডাক্তারের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত সে
ডাক্তারকে বলতেসে রক্ত এক ব্যাগ দিতে কত সময় লাগবে
আহানা গালে হাত দিয়ে চুপ করে বসে আছে,ডাক্তার হাতে সুই ঢুকাতেই আহানা কেঁপে সরতে নিতেই শান্ত ওকে আগলে জড়িয়ে ধরে ফেললো
শান্তর ছোঁয়া পেয়ে মনে হলো সব ব্যাথা গায়েব হয়ে গেসে তার
ডাক্তার সুই খুলে নিতেই শান্ত আহানাকে ছেড়ে দিলো
রুপা আহানাকে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে,আহানা ডান হাত দিয়ে মাথা ধরে আরেকদিকে মুখ করে শুয়ে আছে,ক্যানেলার বাম হাতে
শান্ত পাশের সোফায় গিয়ে বসলো,ডাক্তার সব ঠিকঠাক করে বললেন “৮/৯ঘন্টা লাগতে পারে এক ব্যাগ শেষ হতে
আমি স্পিড কমিয়ে দিয়েছি উনার বয়স কম বলে,মাঝে মাঝে ব্যাগটা নেড়ে চেড়ে দিবেন কারণ রক্ত জমে যায়”
.
শান্ত ঠিক আছে বললো
ডাক্তার রক্তের ব্যাগ আবারও চেক করে চলে গেলেন,শান্ত নওশাদ আর রুপাকে বললো চলে যেতে এসব সে সামলাবে,গায়ে হলুদ যেন ঠিকঠাক ভাবে হয়
রুপা যেতে চায়নি,নওশাদ বললো ‘গায়ে হলুদ কোনো বড় বিষয় না,আমরা যাবো না,এখানেই থাকি”
শান্তর অনেক রিকুয়েস্টে অবশেষে তারা বাধ্য হয়ে চলে গেছে
আহানা এক দৃষ্টিতে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু শান্ত ওর দিকে তাকাচ্ছে না
আহানা ডান হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে কিছু বলতে যাবে শান্ত তখনই উঠে চলে যেতে নিলো রুম থেকে
আহানা বললো দাঁড়াতে
শান্ত দাঁড়িয়ে পড়লো,তাও পিছন ফিরে আহানার দিকে তাকালো না সে
আহানা বললো”সরি,আমি আসলে আপনাকে ব্যাপারটা বলতে চাইনি কারণ”……
শান্ত আর কিছু শুনলো না দরজা খুলে বেরিয়ে চলে গেলো
সোজা ডাক্তারের কেবিনে আসলো সে,রিপোর্ট নিয়ে চুপ করে থেকে একটা নিশ্বাস ফেললো তারপর কথা বলা শুরু করলো কঠিন চোখে
.
“ওর আর কোনো সমস্যা নেই তো?এভাবে হুট করে রক্ত এত কম পয়েন্টে আসার কোনো কারণ আছে কি??আমার টেনসন হচ্ছে,আমার মায়ের ব্লাড ক্যানসার ছিল,ক্যানসার হওয়ার আগে থেকেই মাকে ২বছর পরপর ৩ব্যাগ করে রক্ত দিতে হতো,মায়ের রক্তশূন্যতা ছিল,এরকম করে কয়কবছর চলেছে,তারপর হঠাৎ আমরা জানতে পারি মায়ের ব্লাড ক্যানসার,এরকম সিনটোম দেখেছি আমি তাই জিজ্ঞেস করতেসি,আহানার এমন কিছু নয়তো?যদি হয় আমাকে বলুন, আমি কোনো দেশ বাকি রাখবো না যেখানে ওর চিকিৎসা করাবো না,আমি ওকে সুস্থ করে তুলবো
.
কুল ডাউন!আমি কিছু টেস্ট দিচ্ছি,সব গুলো টেস্ট করিয়ে নিবেন,রিপোর্ট না দেখে আমি বলতে পারতেসি না,আর রক্তশূন্যতা হলেই ক্যানসার হয় না,যার থেকে রক্তটা নেওয়া হয় সে রক্তে প্যাঁচ থাকলে আই মিন পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে রক্ত দেওয়া হলে পরে তা ক্যানসারের আকার ধারন করে
আজ আমরা সব টেস্ট পূরন করেই রক্তটা দিতেছি
আর আপনার মায়ের আগে রক্তশূন্যতা ছিল বলেই যে ক্যানসার হয়েছে এমনটা নয়,ভুল ধারনা এটা,রক্ত পরীক্ষায় গাফিলতি হয়েছে বলেই আর নয়ত ইনফেকশনের কারনে
.
কথাগুলো শুনে শান্ত সিট থেকে উঠে আহানার কাছে ফিরে আসলো
আহানা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে
শান্ত রক্তের ব্যাগটা নাড়িয়ে চাড়িয়ে সোফায় এসে বসতেই আহানা চোখ খুলে ওর দিকে তাকালো
.
আপনি আমার সাথে কথা বলতেসেন না কেন?
.
শান্ত তার ফোন বের করে গেমস খেলায় মন দিয়েছে
আহানা রেগে উঠে বসে পড়লো
শান্ত ফোনটা রেখে ওর কাছে এসে ওকে জোর করে আবার শুইয়ে দিলো
.
ছাড়ুন,এত ঢং দেখাতে হবে না,ছাড়ুন
.
শান্ত আহানার গায়ের থেকে টান দিয়ে শাড়ীর অাঁচল নিয়ে সেটা দিয়ে ওর ডান হাতটা সিটের সাথে বেঁধে আবার সোফায় ফিরে এসে বসলো
আহানা কাঁদতেসে অনবরত
শান্ত না দেখার ভান করে গেমস খেলে যাচ্ছে
কাঁদতে কাঁদতে আহানা বড় বড় করে শ্বাস নেওয়া ধরলো,এভাবে হাত বেঁধে রাখায় ওর সত্যি কষ্ট হচ্ছিলো
শান্ত বুঝতে পেরে উঠে এসে ওর হাতের বাঁধন আবারও খুলে ওকে শাড়ী ঠিক করে পরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো,রুমে থাকলেই আহানা কথা বলার চেষ্টা করবে বারবার
তাই একাই থাকুক সেখানে
.
ভোর হতেই শান্ত আবার কেবিনে ঢুকলো,আহানা ডান হাত মাথার উপর রেখে ঘুমাচ্ছে
পুরো রাত রক্ত দিতেই লেগে গেছে,শান্ত এক সেকেন্ডের জন্যও ঘুমায়নি,ঘুমালে আহানা একা হয়ে যাবে
ডাক্তার এসে ব্যাগ সরিয়ে ক্যানেলার থেকে সব খুলে ফেললেন,শুধু ক্যানেলার রেখে দিলেন কারণ একদিন বাদে আবার ও রক্ত দিতে হবে
আহানা জেগে গিয়েছে ততক্ষণে
শান্ত একপাশে চুপ করে দাঁড়িেয় আছে,ডাক্তার বললেন এখন নিয়ে যেতে পারেন উনাকে
শান্ত আহানার হাত ধরে ওকে নামাতে যেতেই আহানা হাত সরিয়ে ফেললো,নিজে নিজে নামার চেষ্টা করতেসে,নেমেই হাঁটা ধরলো সে
কিছুদূর যেতেই পড়ে গেলো নিচে
শান্ত এগিয়ে এসে গাল ফুলিয়ে নিচু হয়ে ওকে তুললো তারপর ওকে এক হাত দিয়ে ধরে হসপিটাল থেকে বের হয়ে একটা রিকসা নিলো,রিকসায় দুজনে গাল ফুলিয়ে বসে আছে,এতক্ষন শান্ত রেগে ছিল আর এখন আহানাও
শান্ত আহানাকে নিয়ে ওর বাসায় আসলো
আহানা চুপচাপ শান্তর বিছানায় বসে আছে,রুপা নওশাদ এসে দেখে গেছে ওকে
এর পরে সূর্যের মেজো ভাই লিমন রক্ত দিবে
.
আহানার খারাপ লাগছে এই ভেবে যে তার জন্য রুপা নওশাদের বিয়েতে তাদেরই মুখে হাসি নেই,আজ রুপার বিয়ে আর সে কোনো মজাই করতে পারছে না,সবাই নরসিংদী চলে গেসে,সেখানে নওশাদের বাড়ি,সেখানে বিয়ে হবে,রয়ে গেছে শান্ত আর আহানা
আহানা মুখ ফুটে বলতেও পারছে না শান্তর না যাওয়াতে নওশাদ কতটা কষ্ট পেয়েছে,সকাল ৮টা বাজে তখন,আহানা নিজে নিজে বিছানা থেকে নেমে ড্রয়িং রুমের দিকে গেলো,
শান্ত বুয়াকে কবুতরের মাংস রাঁধতে বলেছে,কবুতরের মাংসে রক্ত বাড়ে,বুয়া সেটাই রান্না করতেসে আর শান্ত সব তদারকি করতেসে
আহানা এগিয়ে এসে দাঁড়াতেই শান্ত চলে গেলো পাশ কেটে
.
দাঁড়ান প্লিস,আপনি কাল থেকে আমার সাথে এমন কেন করতেসেন?
.
শান্ত তার আলমারি থেকে টিশার্ট নিচ্ছে
আহানা এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে নিজের দিকে ফিরালো
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো”সমস্যা কি?”
.
সমস্যা কি?আবার জিজ্ঞেস করতেসো?তুমি আমাকে এত বড় একটা কথা জানালে না আর এখন বলতেসো সমস্যা কি?
.
কেন জানাবো আপনাকে??
.
শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে ২সেকেন্ড চেয়ে থেকে আহানাকে খপ করে ধরে কাছে নিয়ে এসে আহানার ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছুক্ষন বাদেই ছেড়ে দিয়ে বললো “এই কারণে জানাবে”
আহানা থ হয়ে থাকিয়ে আছে ওর দিকে
মূহুর্তেই কি থেকে কি হয়ে গেলো!!
শান্ত টিশার্ট নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে গায়ের পাঞ্জাবি খুলে টিশার্টটা পরতেসে
আহানা বিছানায় এসে পা তুলে বসলো,শান্ত টিশার্ট পরে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে
আহানা ঠোঁটে হাত লাগিয়ে বসে রইলো বারান্দার দিকে তাকিয়ে
“ওর এই প্রেম আমাকে শান্তিতে মরতেও দিবে না”
রেগে আহানা পাশের বালিশটা ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো
শান্তকে কিছু বলার,বোঝানোর,জিজ্ঞেস করতে চাওয়ার সাহস আর মনমানসিকতা কিছু আর রইলো না
এরকম সিরিয়াস মোমেন্টে ধরে এটা কি করলো,কিস ও না,আবার কিসের মতোই,আজব!যত দূরে থাকতে চাই তত স্পর্শ করে চলে যায় বারবার
.
শান্ত প্লেটে ভাত আর কবুতরের মাংস নিয়ে এসে ওর পাশে বসলো
চুপচাপ লোকমা বানিয়ে খাওয়াচ্ছে ওকে
আহানা রেগে বললো “তখন এমন করলেন কেন?”
.
কি করলাম?
.
ওরকম!
.
তুমি বললা তোমার অসুখের কথা আমাকে জানাবে কেন
তাই আমি জানানোর কারণটা দেখিয়ে দিলাম
.
মানে কি বুঝাতে চান আপনি?কিস করলেই আপনাকে আমি আমার অসুখের কথা জানাবো?
.
ওটা তো কিস ছিল না,কিস তো তারা করে যাদের মনে প্রেম প্রেম মুড থাকে,বাট তখন আমার মোটেও প্রেম প্রেম মুড ছিল না,রাগে ছিলাম বলে কামড় দিসি,তুমি কিস আর কামড়ের পার্থক্যও জানো না?
.
আহানা গাল ফুলিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসলো,এই লোকটার সাথে সিধা কথা বলতে গেলেও হাজার প্যাঁচে পড়তে হবে
.
শান্ত ভেসিনে গিয়ে হাত ধুচ্ছে
আহানা ওর পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আছে,এখন যদি বলি রুপা নওশাদের বিয়েতে যাব সোজা মানা করে দিবে,কি করা যায়
.
কি?এমন চেয়ে আছো কেন?
.
আআআমমমি আসলে!রুপার শশুর বাড়ি দেখবো
.
সেটা পরেও একদিন গিয়ে দেখে আসা যাবে
.
চলুন না আজ যাই
.
না,নো ওয়ে,তোমার শরীরের অবস্থা দেখসো?
.
আপনি আছেন না?
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে চেয়ে চলো গেলো
আহানা এই সুযোগে খোঁপা করে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো
.
আহানা দাঁড়াও কই যাচ্ছো তুমি?
.
আমার বাসায়
.
কেন?
.
ওমা,শাড়ী পরবো না?রেডি হবো না?নরসিংদী যেতে হবে তো
.
না যাবে না তুমি
.
আমি যাব মানে যাবো
.
আহানা হাঁটা ধরলো,শান্ত মাথার চুল টেনে রাগ কনট্রোল করে আহানার পিছু পিছু বেরিয়ে গেলো
আহানা বাসায় ঢুকে একটা শাড়ী নিলো,বেগুনি রঙের,চট করে শাড়ীটা পরে বেরিয়ে আসলো সে
শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
আহানা চুড়ি পরতে পরতে বললো কি ব্যাপার রেডি হয়ে আসেন,সবে সাড়ে ৯টা বাজে,নরসিংদী যেতেও তো সময় লাগবে, তাড়াতাড়ি করেন
.
তোমার যদি শরীর খারাপ হয় তো তোমার খবর আছে
.
হবে না
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে নিজের বাসায় চলে আসলো,একটা বেগুনী রঙের পাঞ্জাবি নিয়ে পরে আহানাকে নিয়ে নরসিংদীর উদ্দেশ্যে বের হলো,বিআরটিসির একটা বাসে টিকেট কেটে উঠলো দুজনে
.
আহানা শান্তর কাঁধে মাথা রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে
বাইরের আকাশ দেখতেসে সে,মাঝে মাঝে উঁচু দালান চোখে পড়তেসে, ঝুঁকে বসায় সব ঠিকমত দেখা যাচ্ছে না
শান্ত গাল ফুলিয়ে চুপ করে সামনে তাকিয়ে আছে,এখনও ঠিক করে আহানার সাথে কথা বলতেসে না সে
.
আহানা ঘুমিয়ে পড়েছে,আহানার মুখে রোদ পড়তেসে দেখে শান্ত জানালার পর্দা টেনে দিলো
নরসিংদী আসতে ২ঘন্টার বেশি সময় লেগে গেছে
শান্ত আহানাকে নিয়ে একটা রিকসা নিলো নওশাদের বাসায় যাওয়ার জন্য
নওশাদ মন খারাপ করে গালে হাত দিয়ে স্টেজে বসে আছে
শান্ত গেট দিয়ে ঢুকতেই নওশাদ স্টেজে থেকে ওকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে শান্তকে জড়িয়ে দরলো,খুশিতে আটখানা হয়ে গেসে নওশাদ
থ্যাংকস বলতে বলতে শেষ সে,সে কত খুশি হয়েছে তার জড়িয়ে ধরা দেখেই বুঝা যাচ্ছে,মনে হয় যেন কতবছর পর সে শান্তকে দেখেছে
আহানা মুচকি হেসে বাসার ভিতরে চলে গেলো,বিয়ের অনুষ্ঠান এটা রুপাদের বাসায় হওয়ার কথা ছিল কিন্তু নওশাদের বাবা মায়ের অনুরোধমত নওশাদদের বাসায় বিয়েটা হবে,কাবিন হবে এখানেই
রুপাদের বাসায় না হওয়ার কারণটা হলো গিয়ে নওশাদের ইচ্ছা ছিল কোনো বড় অনুষ্ঠান যেন আপাতত না হয়,তাই কাবিন সহ বিয়েটাই নওশাদের বাসায় থেকে হবে
আহানা রুপার কাছে গিয়ে বসলো ভিতরের রুমে
পুরো রুম ভর্তি মেয়ে,কেউ জানালার কাছে গিয়ে ফোনে কথা বলতেসে,কেউ বা খাটের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গসিপ করতেসে,আর খাটে তো বিন্দুমাত্র জায়গাও নেই,রুপা কোনোরকম সবার মাঝে গুটিশুটি দিয়ে বসে আছে
আহানাকে দেখে রুপা ঠিক সেরকম খুশি হয়েছে যেরকম নওশাদ শান্তকে দেখে হয়েছিল
আহানা হেসে দিয়ে রুপার পাশে গিয়ে বসলো
একটা মেয়ে এসে বললো “জানো বরের বড় ভাই এত্ত জোস,আমি তো চুল দেখে ক্রাশ খেয়ে গেসি”
আরেকজন বললো বারবার পকেটে হাত ঢুকানো দেখে আমি তো ফিদা হয়ে গেসি
একটা মেয়ে হাতে নেইলপলিশ লাগাতে লাগাতে বললো ওসব রেখে আমি তো তার হাইট দেখে ক্রাশিত
আহানা মাথা বাঁকা করে বাইরের দিকে তাকালো,বাসার সামনে স্টেজ
সেখানে শান্তকে দেখা যাচ্ছে,নওশাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতেসে সে
আহানা মুচকি হেসে রুপার ঘোমটা ঠিক করায় মন দিলো
একটা মেয়ে দৌড়ে এসে বললো সেই ছেলেটা আসতেসে এদিকে!!!
সব মেয়েরা ঠিকঠাক হয়ে বসলো,আহানা যে তার স্ত্রী তা কেউ জানে না,শুধু জানে সে বিবাহিত,তাও ক্রাশ তো ক্রাশই হয়
শান্ত পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে একটু কাশ দিয়ে রুমে প্রবেশ করলো
সবার আগে আহানার দিকে তাকালো সে,তারপর আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সব মেয়েরা রোবটের মত দাঁড়িয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে
শান্ত আহানার কাছে এসে এক বোতল পানি দিয়ে খেতে বলে চলে গেলো
একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে ফিসফিসিয়ে বললো এ মেয়েটা মনে হয় ছেলেটার স্ত্রী,হুমমম
.
রুপা আহানাকে এক ধাক্কা দিলো দুষ্টুমি করে কারণ আহানা লজ্জায় লাল হয়ে আছে
.
বাইরে থেকে গান শোনা যাচ্ছে,শান্তর গলা
আহানা উঠে বেরিয়ে গেলো দেখতে,তার পিছু পিছু বাকি মেয়েরাও ছুটলো
শান্ত মাইক নিয়ে গান গাইতেসে,তার সেই চিরচেনা সুর,চিরচেনা সেই গান “বাজে স্বভাব”
ওর সাথে সূর্য আর রিয়াজও গান ধরেছে
আহানা হেসে শান্তর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত গান গাইলে মনে হয় ওর চোখ ও তাল মিলাচ্ছে গানের সাথে সাথে
শান্ত তার ঠোঁটের উপর দিয়ে আঙ্গুল ঘুরিয়ে নিয়ে আহানার দিকে চেয়ে গানের শেষ লাইনটা গাইলো
“আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না”
আহানা দারুনভাবে লজ্জা পেয়ে চলে গেলো বাসার ভিতরের দিকে
শান্ত এত মানুষ ভর্তি জায়গায় ওকে লজ্জা দিয়ে দিলো যা একটা কাকপক্ষী ও জানতে পারলো না
“আমার বয়ে গেসে আর কোনোদিন কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো না
লজ্জা দিতে এক নাম্বার ছেলেটা,ইসসসস🙈”
চলবে♥