প্রেম_তুমি পর্ব ৭

#প্রেম_তুমি
পর্ব-৭
ফাবিহা নওশীন

কলেজের বাস্কেটবল সাইটে অর্ষা আর ওর বন্ধুরা বাস্কেটবল খেলছে। দর্শন কিছুক্ষণ আগে ওদের দেখে গেছে খেলতে। কিছুক্ষণ পরে এসে দেখে অর্ষার গ্রুপের কয়েকটা ছেলে সেকেন্ড ইয়ারের জুবায়েরের সাথে তর্কাতর্কি করছে। অর্ষা দুহাত ভাজ করে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ষা বিরক্তি গিয়ে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর বলল,
“এটা কেমন কথা? আপনি সিনিয়র আমরা জুনিয়র এই যুক্তিতে খেলতে হবে? আপনি সিনিয়র তাই যখন ইচ্ছে খেলতে পারবেন। যখন ইচ্ছে হবে খেলার মাঝে এসে অন্যের খেলা নষ্ট করবেন? এত ক্ষমতা আপনাকে কে দিয়েছে?”

একটা ছেলে বলল,
“অর্ষা, তুই থাম আমি দেখছি।”
অর্ষা চোখমুখ কুঁচকে বলল,
“তোরা তো অনেকক্ষণ ধরেই দেখছিস। এইবার আমাকে দেখতে দে।”
জুবায়ের কটাক্ষ করে বলল,
“আরে, তোদের লিডার না-কি? লেডি লিডার!”
তারপর মুখ বাঁকিয়ে হাসতে লাগল।
অর্ষার বন্ধুদের কথাটা গায়ে লাগল।
“ও কে সেটা আপনার না দেখলেও চলবে। আপনি এখন যান আমাদের খেলতে দিন। ফালতু কথা শুনে সময় নষ্ট করতে চাই না।”
জুবায়ের জোর দেখিয়ে বলল,
“পারলে খেল তো। দেখি কত সাহস!”
অর্ষা ওর সামনে গিয়ে বলল,
“খেলব। একশো বার খেলব। আপনি যা পারেন করে নিন।”
“এই মেয়ে তুই আমাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছিস? পারলে খেল।”
অর্ষা এইবার প্রচন্ড রেগে গেল। চোখ মুখ লাল করে গর্জে উঠে বলল,
“খেলব। কী করবি হ্যা? কী করবি? আমি কী তোকে ভয় পাই? এতক্ষণ অনেক রেস্পেক্ট দিয়েছে৷ জাস্ট এনাফ!”
জুবায়ের শার্টের হাতা ফোল্ড করে ওর দিকে এগিয়ে এসে আঙুল তুলে বলল,
“দেখতে চাস কী করব?”
অর্ষা দুহাত ভাজ করে আরো সামনে এগিয়ে নির্ভীক দৃষ্টি দিয়ে বলল,
“হ্যা, দেখতে চাই। দেখা। অপেক্ষা করছি।”
জুবায়ের অর্ষার চোখের সামনে আঙুল নিয়ে বলল,
“সরে যা বলছি। এখনো সময় আছে। নয়তো….
অর্ষা তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
” নয়তো কী?”
দর্শন দেখছে অর্ষা আর জুবায়েরের মধ্যে আধা হাত দূরত্ব। অর্ষা রাগে হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। কেউ কাউকে ছাড়ছে না। জুবায়ের একটা ছেলে ও যদি রাগের বশে উল্টা পালটা কিছু করে বসে, যদি গায়ে হাত দিয়ে দেয়? তাহলে? এখুনি ওদের থামানোর দরকার। কিন্তু কাকে থামাবে? অর্ষাকে থামাতে গেলে সবাই প্রশ্ন তুলবে। পরবর্তীতে এর জন্য সাফাই দিতে হবে। তাই জুবায়েরকে থামাতে হবে। জুবায়ের অর্ষাকে দুই হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে উদ্বত হলে দর্শন আকস্মিক ভাবে ওর হাত ধরে পেছনে নিয়ে আসে। জুবায়ের তাল সামলাতে না পেরে আরো কয়েক পা পিছিয়ে পড়ে।

দর্শন একবার অর্ষার দিকে চেয়ে জুবায়েরকে বলল,
“আর ইউ লস্টেড? এগুলো কী ধরনের বিহেভিয়ার? একটা মেয়ের সাথে…. তুই একটা মেয়েকে তার পারমিশন ছাড়া টাচ করতে যাচ্ছিলি? শেইম অফ ইউ।”

অর্পা সেটা শুনে আরো ক্ষেপে যায়। এগিয়ে গিয়ে বলল,
“হাও ডেয়ার ইউ? ইউ অন্না….
দর্শন, অর্ষার দিকে চেয়ে ধমকে উঠে বলল,
” শাট আপ! তুমি ওখানে গিয়ে দাঁড়াও।”
অর্ষা দাঁড়াল না। ওকে টাচ করতে চেয়েছিল শুনেই মাথায় আগুন ধরে গেল। তাই অগ্নি দৃষ্টিতে জুবায়েরের দিকে চেয়ে আছে। দর্শনের দৃষ্টি আবারও অর্ষার দিকে গেল।
“এই মেয়ে তোমাকে বলিনি ওখানে গিয়ে দাঁড়াতে? তুমি কী হ্যা? সেন্স নাই? মেয়ে হয়ে একটা ছেলের সাথে সংঘাতে জড়াও? কথা কাটাকাটি ইটস ওকে বাট মারামারি?”
অর্ষা বিস্ময় নিয়ে বলল,
“আমি মারামারি কই করছিলাম? আমি তো কথাই বলছিলাম।”
“কথা বলছিলে? কয়েক ইঞ্চি দূরত্বে থেকে গায়ে হাত তোলার ইন্ধন দেওয়াকে কথা বলা বলে?”
অর্ষা আবারও বিস্ময় প্রকাশ করে বলল,
“ইন্ধন? কে ইন্ধন দিচ্ছিল?”
“তোমরা দু’জন দুজনকে ইন্ধন দিচ্ছিলে। তোমাকে যদি ধাক্কাটা দিয়ে বসত তখন পড়ে গিয়ে শুধু কী ব্যথা পেতে? তোমার সম্মানটা কই থাকত? তোমার কাছ থেকে এমন বিহেভিয়ার একদমই এক্সপেক্ট করিনি।”
তারপর জুবায়েরকে ইচ্ছে মতো ধুয়ে দিচ্ছে।
ওদের কথার মাঝে অর্পা চলে এল। অর্পা এসে দেখল দর্শন প্রচন্ড রেগে গেছে৷ জুবায়েরকে যা নয় তাই বলছে। অর্ষা চুপ করে দাঁডিয়ে আছে।
“অর্ষা, এখানে কোন সমস্যা হয়েছে?”
দর্শন অর্পাকে দেখে রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
“এই যে অর্পা, তোমার কথিত ছোট বোন সে না-কি খুব বুদ্ধিমতী? সব সময় না প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকো? ওর তো কমন সেন্স পর্যন্ত নেই। কি অদ্ভুত মেয়ে! জুবায়েরের সাথে মারামারি করতে চলে যাচ্ছে। ওর কাছে গিয়ে ওর কয়েক ইঞ্চি দূরত্বে থেকে শাসাচ্ছে। জুবায়ের তো রাগে হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। আমি না থাকলে এখনি একটা দূর্ঘটনা ঘটে যেত। তখন কী হত? সম্মানটা থাকত? ও যদি আমার কিছু হত তবে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতাম। বেকুব মেয়ে কোথাকার!”
অর্ষা ছলছল চোখে সব অপমান হজম করে নিচ্ছে। অর্পা ওর ছলছল চোখ দেখে দর্শনকে ইশারায় চুপ থাকতে বলল।

দর্শনের ফ্রেন্ড সার্কেল আর অর্ষার ফ্রেন্ড সার্কেল এক সাথে বসে আছে। সবাই নীরব নির্বিকার। কেউ কোন কথা বলছে না। রুশান বিজ্ঞ ভাব নিয়ে সবার চেহারা একবার দেখল। তারপর দর্শনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমি বুঝতেছি না তুই এত ক্ষেপেছিস কেন? অর্ষা আর জুবায়েরের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। ওরাও এতটা ক্ষেপেনি যতটা তুই ক্ষেপেছিস। তোর রাগটা আসলে কোথায়? মানে কার প্রতি?”
দর্শন আনমনে বেখেয়ালি হয়ে বলে ফেলল,
“অর্ষার প্রতি।”
তারপর খেয়াল হতে নিজেই চমকে গেল। তারপর আমতা আমতা করে বলল,
“সামান্য একটা ইস্যু নিয়ে দুই ইয়ারের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখে একটু রেগে গেছি।”
“তুই তো পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছিস। তোর কী মনে হয় কে দোষী?”
“দুজনেই।”
অর্ষা ওর দিকে চোখ তুলে এক পলক দেখল। তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিল।
অর্পা দর্শনকে প্রশ্ন করল,
“দোষটা কার বেশি ছিল? অর্ষা না জুবায়েরের?”
“আমি এখানে কারো পক্ষপাত করছি না। তবে বলব দোষ বেশি ছিল জুবায়েরের।”
“দোষ জুবায়েরের আর রাগ অর্ষার প্রতি? হুয়াই?”
“আই ডোন্ট নো। আই হ্যাভ টু গো নাও।”
দর্শন বসা থেকে উঠতেই পিয়ন এসে বলল,
“প্রিন্সিপাল অন্বেষা হাসান অর্ষা আর শেহজাদ খান দর্শনকে ডেকে পাঠিয়েছেন।”
অর্ষা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তারপর দর্শনের দিকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাকায়। দর্শনের সাথে ওর চোখাচোখি হওয়ার পর পিয়নকে বলল,
“শুধু আমাদের?”
“সাথে জুবায়ের আহমেদও আছে।”
“আচ্ছা, আমরা আসছি।”
পিয়ন যেতেই দর্শন বলল,
“ওর জন্য এখন আমাকে প্রিন্সিপালের রুমে যেতে হচ্ছে।”
রুশান কৌতূহল নিয়ে বলল,
“তুই কী কিছু করেছিস? মারামারি টাইপ…. রুশান শেষের কথাটা একটু আস্তে করে বলল।
দর্শন ওর প্রশ্ন শুনে অবিশ্বাসের সুরে বলল,
“আমি বিশ্বাস করতে পারছি না তোরা কেউ এটা ভাবতে পারিস। আমি আর মারামারি সে তো আকাশ-পাতাল ব্যবধান। আমি এ-সব থার্ড ক্লাস কাজ করি না। আমি ঘটনা অব্জার্ভ করেছি তাই হয়তো।”

দর্শন, অর্ষা আর জুবায়ের তিনজন প্রিন্সিপালের রুমে দাঁড়িয়ে আছে। দর্শন যা দেখেছে, শুনেছে সেসবের বিবরণ দিচ্ছে যথার্থভাবে।
প্রিন্সিপাল অর্ষার দিকে চেয়ে বলল,
“তুমি এ ব্যাপারে কী বলতে চাও?”
“স্যার, উনি সিনিয়র সেক্ষেত্রে বলব আমার উনাকে যথেষ্ট রেস্পেক্ট করা উচিত ছিল। কিন্তু উনি কী আদোও সে রেস্পেক্ট পাওয়ার যোগ্য? খেলা নিয়ে যখন আমার অন্য সতীর্থদের সাথে কথা বনাবনি হচ্ছিল না তখন আমি এগিয়ে যাই ব্যাপারটা মেটানোর জন্য কিন্তু কিছু বলার আগেই উনি আমাকে কুৎসিত ইংগিত দিয়ে কিছু কথা বলেন। যেটা সিনিয়র কিংবা বড় ভাই হিসেবে উনার বলা উচিত হয়নি। তারপর তুই তোকারি করেন তারপর আমিও বেয়াদবি করেছি। এটা আমি স্বীকার করছি। এর জন্য আমি যদি শাস্তি প্রাপ্য হই তবে মাথা পেতে নেব। কিন্তু তারপর উনি আমাকে ধাক্কা মারতে উদ্বত হোন। উনি (দর্শনকে দেখিয়ে) যদি তাৎক্ষণিক না আসতেন তাহলে আমি পড়ে গিয়ে ভীষণ ব্যথা পেতাম। তার চেয়েও বাজে ব্যাপার হচ্ছে উনি উইদাউট মাই পারমিশন আমাকে টাচ করতে চেয়েছিল। যদি সেটা হয়ে যেত স্যার আমি উনার নামে কেস ঠুকে দিতাম। আমার চাচ্চু একজন নামকরা আইনজীবী।”
অর্ষা দাপট দেখিয়ে বলল। দর্শন ইম্প্রেসড। কিভাবে পুরো বিষয়টা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল। এখন তো মোড় ঘুরে গেল। কিছুতেই অর্ষার উপর কোন চার্জ নেওয়া হবে না। কেননা সব ওর কন্ট্রোলে। দর্শন ঠোঁট বাকিয়ে হাসল।
প্রিন্সিপাল ওকে পর্যবেক্ষণ করে কি জানি ভাবল তারপর চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,
“দর্শন, অর্ষা কি ঠিক বলছে?”
“স্যার ওরা দু’জনই সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে আর্গুমেন্টে জড়িয়েছে। এটা এভাবে হওয়া উচিত হয়নি। তবুও হয়ে গেছে। জুবায়েরের কাজটা ঠিক হয়নি। হ্যা, অর্ষা যা বলল সেটা সত্যি।”
অর্ষা হাফ ছেড়ে বাঁচল। মনে মনে দর্শনকে এতগুলো ধন্যবাদ দিল। দর্শন, অর্ষার দিকে আবারও মুডি লুক নিয়ে তাকাল। অর্ষার মুখের হাসিটা চুপসে গেল।
প্রিন্সিপাল জুবায়েরকে বকাঝকা করে কিছু ভালো ভালো পরামর্শ দিয়ে সবাইকে চলে যেতে বলল।

দর্শন বন্ধুদের কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলল। শুধু তাই না ওকে গুটিবাজ মেয়ে হিসেবে আখ্যায়িত করল। কিভাবে সব খেল নিজেই খেলল। খুবই ভয়ানক মেয়ে!

অর্পা অকারণেই বন্ধুদের সাথে চিল করার জন্য একটা পার্টি থ্রো করল। আর তাতে ওর ফ্রেন্ড সার্কেল আর অর্ষাও আছে। অর্ষা একা আসবে না, সাথে প্রিয়াকে নিয়ে আসবে বলে জানায়।তাও শুধু আসবে দর্শনের জন্য। ওখানে দর্শনের দেখা পাবে। এমনিতেই দর্শনের কাছে ইমেজ খারাপ হয়ে গেছে। যে করেই হোক শুধরে নিতে হবে। এদিকে দর্শন হোয়াটসঅ্যাপে অর্পার ভয়েস ম্যাসেজ অন করে ক্লাস এইট পড়ুয়া বোনকে পড়াচ্ছে।
“দোস্ত, বিকেল ৫ টায় পার্টি থ্রো করেছি। বাড়িতে গ্রুপ স্টাডির কথা বলে চলে আসিস। টাইম মতো চলে আসবি কিন্তু।”
দর্শন দ্রুত মেসেজ অফ করে বোনের দিকে তাকাল। ওর বোন সহজ দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে।
দর্শন সব এড়িয়ে বলল,
“কোথায় ছিলাম আমরা? হ্যা এই অংকে….
” ভাইয়া তুই আজ পার্টিতে যাচ্ছিস এটা মাকে বলতে যাচ্ছি। বেস্ট অফ লাক।”
“এই না, আমার সোনা বোনটা। তুই কত ভালো একটা মেয়ে।”
দিশা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“উমম একটা শর্ত, এক হাজার টাকা দেও।”
“পাঁচশ…
” নো এক হাজার।”
“আচ্ছা সাতশো…
” নো এক হাজার।”
“সাতশো…
” এক হাজার এন্ড
(চিৎকার করে আম্মু….
দর্শন ওর বোন দিশার মুখ চেপে ধরে বলল,
“চুপ, দিচ্ছি।”
দর্শন ওয়ালেট থেকে চকচকা এক হাজার টাকার নোট বের করে দিল।
ওর বোন সেটা নিয়ে বলল,
“আর এখুনি ছুটি দিবে।”
” যা ছুটি। ভাগ! দূর হ!”

দর্শন রেডি হয়ে অর্পার পার্টিতে গিয়ে উপস্থিত হলো। কিন্তু সেখানে আচমকা অর্ষার এন্ট্রি দেখে চমকে যায়৷ অর্ষা কালো জিন্স, শট টপ্স, ক্রিম কালার জ্যাকেট আর সাদা সু পরে পার্টিতে উপস্থিত। চুলগুলো খোলা।

আগাম একটা করে বেশি পর্ব পড়তে চাইলে আমাকে ফ্লো করুন ✊🖐️

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here