প্রেম_পাগলামি #নিহীন_রুবাইয়াত #পর্ব:৯

0
406

#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:৯

আজ ক্লাস এক্টু দেরিতে শুরু হবে তাই ঘুম থেকেও দেরী করে উঠেছি।সবার সাথে সকালের করে রুমে এসে রেডি হয়ে নিলাম।কিন্তু কেন জানি না আজ হিজাব পরতে ইচ্ছা করছিলো না।হিজাব বাদেই ভার্সিটি তে গেলাম।ভার্সিটিতে যেয়ে শুনি আজ নাকি ক্লাসটা আর হবে না।মেজাজ পুরো বিগড়ে গেলো।রাগ কমানোর জন্য মীরাকে বললাম চল ফুচকা খাই।ওউ রাজি হয়ে গেলো।দুজন হাটছি তখনি শিবলি ভাই এল,

–এই পুচকি মেয়ে তোমার ফ্রেন্ড নিহীন কই?
(ওনার কথাই মীরা অবাক হলো।আমি তো ওর পাশেই দাড়িয়ে তাও আমার খোজ করছে)

–ভাই আপনার চোখে কি কোন সমস্যা আছে?
–না তো
–তাহলে নিহু আমার পাশে থাকা স্বত্তেও ওরে খুজতেছেন কেন?

উনি বেশ জিজ্ঞাসু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত পপর্যবেক্ষণ করলেন।
–তুমি নিহীন!!??
–হুম আমি নিহীন।
–ও মাই গড!আমি তোমাকে চিনতেই পারিনি।তুমি আজ স্কার্ফ বাদে এসেছো চেনায় যাচ্ছে না।ওয়েট ওয়েট।

উনি পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাউকে আসতে বললেন।কথা শেষ করে আমার দিকে তাকাচ্ছেন আর হাসছেন আর আমি,মীরা বিরক্তি নিয়ে ওনার হাসি দেখছি।দুই এক মিনিটের মাথায় ওই অসভ্যটাও চলে এসেছে।এখন বুঝলাম শিবলি ভাইয়া ওনাকে আসতে বললেন

–ভাই দেখ এটা নাকি নিহীন।হাহাহাহাহাহহহ….আমি তো চিনতেই পারিনি হাহাহাহাহাহাহহহহহহহহহহহহহহহহহ………

শিবলি ভাইয়া মজা করে বললেও সৌভিক ভাইরে অনেক রাগি লাগছে,উনি আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যে কাচাই খেয়ে ফেলবে।উনি কিছু বলার জন্য আমার দিকে তেড়ে আসলেন ওনাকে দেখে আমি দু পা পিছিয়ে গেলাম।উনি হাতের মুঠো আরো শক্ত করেন,আমি ভয় পেয়ে যায়।শিবলি ভাইয়ার দিকে রাগি লুক দিয়ে চলে গেলেন।শিবলি ভাই ও হয়তো বুঝলেন না ব্যাপারটা।

–ভাইয়া আপনি কি কিছু বলতে এসেছিলেন?
–হ্যা।আই ওয়ান্ট টু সে থ্যাঙ্কস।
–থ্যাঙ্কস কেন?
–ওই যে আমার প্রেজেন্টেশন করে দিলে তাই..

প্রেজেন্টেশন কথাটা শুনে আমি বেশ অবাক হলাম।

–আমি কখন…
–কেন পরশুদিন সৌভিক তোমাকে দিয়ে করিয়ে নিলো না?
–ওটা আপনার ছিলো?
–হ্যা আমারই তো।
–আমি তো ভেবেছিলাম
–ওয়েট ওয়েট তুমি এটা ভাবোনি তো ওটা সৌভিকের?(আমার মুখের রিয়াকশন দেখে উনি বুঝে গেলেন আমি এমনটাই ভেবেছি।উনি হোহহোহোহহহ করে হেসে দিলেন)তুমি পারোও বটে।ও ক্লাস টপার ব্রো,ও কোনদিন নিজের প্রেজেন্টেশন কাউরে দিয়ে করাবে এটা ভাবলে কিভাবে তুমি?ও পড়াশুনা,রাজনীতি সব কিছুতে এক নম্বর।আমি একটু বিজি ছিলাম তাই ও বললো তোমার দিয়ে করিয়ে নেবে.।ও কোথায় আছে তুমি এটা জানতে চাইলে যখন তারপর আমি ওরে কল দিই তখনি ও আইডিয়াটা দেই।

আমি কিভাবে রিয়াক্ট করবো বুঝতে পারছি না।ওনার মোবাইলে কল আসলো উনি চলে গেলেন।আমার খুব রাগ হলো,অন্যের প্রেজেন্টেশন আমাকে দিয়ে করিয়ে নিলো।ব্যাটা চিটার।

–নিহু ফুচকা খাবি না?চল
–না খাব না,
–কেন?
–মুড নেই।

পুকুর পাড়ে এসে বসে আছি।কেন জানি না রাগ লাগছে।মীরা বার বার বলছে নিহু চল বাসায় যায়।আমি ওর কোন কথারি উত্তর দিচ্ছি না,চুপ করে বসেই আছি।

–হিজাব বাদে এসে কি বুঝাতে চাইছো তোমার চুল অনেক সুন্দর?মানুষকে রূপ না দেখালেই নয়।

এরকম একটা কথা শুনে উঠে দাড়ালাম।

–ছেলেদের পটানোর জন্য এতো কিছু?রূপ বেশি হয়ে গেছে তো
–কি বলছেন এসব?কথা বলার লিমিট থাকে কিন্তু।
–ভুল কিছু বলেছি কি?আমি তো বলি মানুষকে এতোই আকর্ষন করতে ইচ্ছে করে তাহলে জামা কাপড় খুলে এসো কাল থেকে।তাতেও যদি সাধ না মেটে মুখে রং মেখে রাস্তায় দাড়িয়ে পড়ো।

কথাটা আমার খুব গায়ে লাগলো।আমি ওনার মুখে থাপ্পড় মেরে দিই।তারপর কাঁদতে কাঁদতে চলে আসি।আমার পিছু পিছু মীরাও চলে আসে আমাকে সামলাতে।

রাতে শুয়ে আছি।ভার্সিটি থেকে আসার পর অনেক কেঁদেছি কিন্তু রাগ কুমিনি।আমি আজ কি এমন করেছি যে উনি এতোগুলো বাজে কথা শুনালেন।উনি সত্যিই খুব খারাপ,আমি আর কোনদিন ওনার সাথে কথা বলবো না।ঘুম আসছে না উঠে বেলকনিতে গেলাম।নিচের দিকে তাকাতেই দেখি একটা গাড়ি বাসার সামনে,গাড়ির ভিতরে কোন ছেলে বসে আছে।মুখ বোঝা যাচ্ছে না তবে এটা বুঝতে পারছি সে আমার বেলকনির দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি উকি মেরে দেখার চেষ্টা করলাম গাড়িটি চলে গেলো।এতো রাতে কে বাসার সামনে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে পারে মাথায় আসলো না।আচ্ছা এটা ওই লোকটা না তো?অচেনা সেই লোক।

সারা রাত আর ঘুম হলো না,লোকটা কে আর কেন দাড়িয়েছিলো তা বুঝার চেষ্টা করলাম।

সকালে ভার্সিটি তে গেছি মীরা হাপাতে হাপাতে আমার কাছে আসে।
–নিহীন ঝামেলা হয়ে গেছে।
–ঝামেলা কি ঝামেলা?
–তুই কাল হিজাব বাদে কেন এসেছিলি?জানিস কাল কিছু ছেলে তোর……
–আমার কি?
–কাল তুই হিজাব বাদে আসায় তোর শরীর থেকে অনেক বার ওড়না সরে যায়,শরীরের আকৃতি বোঝা যাচ্ছিলো।ওই সময় কিছু ছেলে তোর খারাপ খারাপ ছবি তোলে,সেগুলো একটা গ্রুপে পোষ্ট করতে যাচ্ছিলো
–কি?
–হ্যা।

মীরার কথা শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো যেন।আমার মাথা ঘুরে উঠলো।মীরা আমকে ধরে ফেলে
–নিহু নিহু তুই ঠিক আছিস?
–………….
–নিহু তোর চিন্তা করতে হবে না।সৌভিক ভাল যে তোর ছবি তোলাগুলো দেখে ফেলেছিলো।উনি সঙ্গে সঙ্গে ওগুলো ডিলিট করে দেই আর মারধোরো করে।কাল উনি তোকে ওই জন্যই মেরেছিলো নিহু।

আমি মীরার দিকে তাকিয়ে থাকি।আমি ওনার ওপর রাগ করব না ধন্যবাদ জানাবো।আমার খুব খারাপ লাগা শুরু করলো,আমি ওনাকে থাপ্পড় দিলাম কিন্তু উনি তো আমার ভালো চেয়েই…ছি নিহীন!!তুই কি করলি এটা।ওনার কাছে আমার ক্ষমা চাইতে হবে আর ধন্যবাদ ও জানাতে হবে।আমি দৌড় দিলাম ওনাকে খুজে চলেছি,মীরা ও আমার পিছু পিছু ছুটছে আমি এভাবে দৌড়াচ্ছি কেন জিজ্ঞেস করছে আমি ওর কথাই কান দিচ্ছি না।অনেক খুজে তারপর পেলাম উনি ওনার বন্ধুদের সাথে বসে ছিলো।আমাকে দেখে না দেখার ভান করলো।আমি ওনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম
–সরি এন্ড থ্যাঙ্কস।

উনি একবার আমার দিকে তাকালেন তারপর উঠে দাড়ালেন।ব্যাগ নিয়ে চলে যেতে গেলেন।
–সরি বললাম তো।

উনি কথাটা শুনে দাড়ালেন ঠিকই কিন্তু পিছনে তাকালেন না।পিছু না তাকিয়েই বললেন,

–শিবলি ওরে বলে দে ওর নাটক দেখার কোন ইচ্ছাই আমার নেই।
–আমি নাটক করছি না।

উনি খুব জোরে জোরেরে হাসলেন,,
–কারোর গায়ে হাত তোলার আগে একবার ভেবে নিয় নিহীন।

উনি চলে গেলেন।আমার চোখে পানি চলে এসেছে।শিবলি ভাইয়া এসে আমার মাথায় হাত দিলেন।

–ও একটু রেগে আছে তাই এমন করলো।তবে তুমি চিন্তা করো না একটু পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে।ছেলেগুলো তোমার বাজে ছবি তুলেছিলো এটা ওর সহ্য হয়নি।পরে রাগের মাথায় তোমাকে অনেক খারাপ কথা বলে,তুমি তখন ওরে থাপ্পড় মারাই ও অনেক কষ্ট পাই।তুমি প্লিজ ওরে ভুল বুঝো না।

শিবলি ভাইয়া চলে যায়।আমার নিজের ওপর হচ্ছে।অপরাধী লাগছে।ওইদিন রাতে শুয়ে আছি মীরা কল দিলো।
–দোস্ত ভার্সিটি তে সব ব্যাচ থেকে ট্যুরে যাচ্ছে।তুই যাবি??
–কিসের ট্যুর?
–আরে ৩ দিনের ট্যুর,সুন্দরবন যাবে নাকি।চল না দোস্ত খুব মজা হবে।
–আচ্ছা ভেবে দেখি।
–ভাবাভাবি না।তুই যাবি তাই জানি।তোর বাসায় ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার।
–আচ্ছা দেখি।

পরেরদিন মীরা এসে বাসায় বলে,বাসা থেকে প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়।আমি ট্যুরে যাচ্ছি ঠিকি কিন্তু কারা কারা যাচ্ছি,কোথায় যাচ্ছি কিছুই তেমন জানি না।এই কদিনে মনের ভিতর শুধু খারাপ লাগছে সৌভিক ভাইর সাথে ওমন করার জন্য।তবে মীরা ট্যুর নিয়ে অনেক বেশি এক্সাইটেড।ফাইনালি আজকে সেইদিন আমরা ট্যুরে যাচ্ছি,মীরা তো খুশিতে লাফাচ্ছে।রাত ৯ টাই বাস ছাড়বে।আজ বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জানলাম প্রত্যেক ব্যাচ থেকে ৫ জন করে যাচ্ছে।অনার্স ২য় বর্ষ থেকে মাস্টার্স প্রথম বর্ষ পর্যন্ত।মোট ২০ জন আর আমাদের সাথে একজন ম্যাডাম ও একজন স্যার ও যাবে।আমি আর মীরা পাশাপাশি সিটে বসলাম।কিন্তু একটা ভাইয়া এসে বললো ইচ্ছা মতো বসা যাবে না নাকি।মাস্টার্সের আপু ভাইয়ারা বলেছে লটারি করা হবে,তারপর যার যার নাম্বার মিলে যাবে তাকে তাকে বসা লাগবে,যদি তাদের কথা না শুনা হয় তাহলে নাকি কপালে শনি আছে।সিনিয়র দের পাওয়ার অনেক তাই তাদের কথার অমান্য করা যে নিজের বিপদ ডেকে আনা তা আমাদের ভালোই জানা আছে।আমি আর মীরা একে অপরের দিকে স্যাড লুক দিয়ে বোল থেকে দুইটা চিরকুট তুলে নিই।আমার সিট প্রায় শেষের দিকে আর মীরার একদম সামনে।
আমি মীরাকে হাগ করে সাইড ব্যাগটা নিয়ে আমার সিটের কাছে যায়।

–আপনি?
–তুমিইইইইইইইইইইইইইইইইই???ও মাই গড!!

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here