#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:২৪
অনেক খোজার পর ওনাকে পেলাম ওনাদের বিল্ডিং এর সামনে।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।আমি ওনাদের সামনে গিয়ে দাড়ায়।আমাকে দেখে উনি ওনার বন্ধুদের ইশারা করেন সবাই চলে যায়।শিবলি ভাইয়া থাকে শুধু
–বাসায় যাওনি কেন এখনো?
–……..
–কথা বলছো না যে কোন সমস্যা?
–আপনি সবাইকে কি বলেছেন??
–কি বলেছি?
–নাটক করেন??জানেন না কি বলেছেন?
–জানলে কি আর তোমার কাছে শুনতাম?
–দেখুন নাটক করবেন না,মেজাজ কিন্তু অনেক হাই।
–আমি কি অভিনেতা যে নাটক করবো?অবশ্য আমার সুন্দর চেহারা দেখে অনেকেই আমাকে হিরো বলে(উনি ভাব নিয়ে কলার ঠিক করতে করতে বলেন)
–সুন্দর না কেন হাতি।এসব নাটক বাদ দেন আর এটা বলেন আপনি সবাইকে কেন বলেছেন আমি আপনার বউ?
–কি আমি এটা আবার কখন বললাম??আমি এটা বলিনি
–সবাই আমাকে ভাবি বলে ডাকছে কেন?আপনিই তো বলেছেন আমাকে ভাবি বলে ডাকতে।
–আমিইইইইইইইইইইইইইইই???(এমন ভাবে বললো যে আকাশ থেকে পড়েছে আমার কথা শুনে)
–কেন বলেছেন বলেন?আমি কি আপনার বউ?
–তোমার মতো ঝগড়ুটে মেয়ে আমার বউ হতে যাবে কেন??আর হ্যা আমি বলেছি তোমাকে ভাবি বলে ডাকতে বলেছি ঠিক তাই বলে তো এটা বলিনি যে তুমি আমার বউ।
–মানে??
–কিসের মানে??তোমাকে ভাবি বলে ডাকলেই কি তুমি আমার বউ হবা?
–কিন্তু ওই ছেলেটা যে…
–ওই ছেলেটা কি?
–ওই ছেলেটাই তো বললো ভাই মানে আপনি নাকি বলেছেন
–হাহাহাহহাহাহহহহহহহহহহ..দেখো মেয়ের কান্ড।বুঝলি রে শিবলি তোর ফুলকলি এখনো ছোটটিই রয়ে গেলো।(শিবলি ভাই ও মুচকি মুচকি হাসলেন)
ওনাদের হাসি দেখে আমার রাগ আরো বেড়ে গেলো,,
–হাসছেন কেন আপনারা??আমি কি ফান করছি এখানে??
আমার চিল্লানিতে দুজনি হাসি থামিয়ে দিয়েছে।সৌভিক ভাই কিচ্ছুক্ষন মাথা নিচু করে রইলেন তারপরি বুক ফুলিয়ে বলে উঠলেন,
–এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না সিনিয়রদের সামনে চিল্লাচিল্লি করো?
–আমার সাহস যে কতটা তা নিশ্চয় আপনি ভালো মতোই জানেন।
আমার কথাই বিষম খাই উনি।শিবলি ভাই পিছে সরে যায়।কারন আমার রাগ উঠলে যে আমি সব করতে পারি তা তাদের অজানা না।
–এদিকে তাকান
–……………..
–এদিকে তাকাতে বললাম না(উনি বাচ্চাদের মতো মুখ নিয়ে তাকাই)
–মানছি আপনি বলেননি আমি আপনার বউ।কিন্তু শুধু শুধু ভাবি বলতে কেন বললেন?
–তোমার চেহারাটার মাঝেই কেমন ভাবি ভাবি লুক আছে।
–হোয়াট?
–ইয়ো বেবি।আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে তুমি খুব তাড়াতাড়িই প্রেমে পড়বে,বিয়েও হবে।তখন তো তোমাকে সবাই ভাবি বলবে তাই না??তাই এখন থেকে সবাই ডাকা শুরু করুক।অভ্যাস করুক।
–হোয়াট ননসেন্স…কি বলতেছেন এইগুলা?
আমি প্রেমে পড়বো?
–হ্যা।
–কার প্রেমে পড়বো আমি শুনি?
–তুমিইইইইইইই প্রেমে পড়বেএএএ……আমি কি জানি নিজের মন রে জিগাও….
–অ্যা?
–হাহাহহাহহাহাহাহ,,,আসি নিহীপাখি আমার অনেক কাজ আছে।
আমি হাবলার মতো দাড়িয়ে থাকলাম ওনারা হাসতে হাসতে চলে গেলো।হটাত আমার খেয়াল হলো উনি যাওয়ার সময় আমাকে কি বলে গেলো??নিহীপাখি?আ আমাকে তো নিহীপাখি বলে ওই লোকটা ডাকে।তাহলে আমি কি ভুল শুনলাম নাকি সত্যিই বলে গেলো।আমার মাথা ঘুরপাক দিয়ে উঠলো।
বাসায় এসে আগেই সোফায় বসে পড়লাম।
–মাআআআআ….
–এই যে পানি(আজব ব্যাপার তো আজ পানি চাওয়ার আগেই মা নিয়ে হাজির)
–কিরে পানির গ্লাস টা নে…(আমি গ্লাসটা নিয়ে পানি খেয়ে নিলাম)
–মা খুব
–ক্ষুদা লেগেছে তাই তো??তুই ফ্রেস হয়ে আই আমি খাবার দিচ্ছি।
আমি তো আরেক শক খেলাম।এটাও আজ মা নিজে থেকে বলে দিলো।
–কিরে যা
–হুম যাচ্ছি।
আমি রুমে এসে ব্যাগটা রেখে ওয়াশরুমে গেলাম।শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে জোহরের নামাজ পড়ে নিলাম।তারপর নিচে গেলাম দেখি সবাই টেবিলে বসে আছে।বাবা অফিস থেকে চলে এসেছে।আমাকে দেখে হাসিমুখে বসতে বলে।আমি চেয়ার টেনে বসার আগেই মিনু(আমাদের বাসায় থাকে পরিবারের সদস্যই ও)চেয়ার টেনে দেই,
–ছোট আপা বসেন।
আমি বসলাম,চোখের সামনে সব আমার ফেভারিট ডিশ।চিকেন বিরিয়ানি,বিফ টিকিয়া,চিকেন ফ্রাই,সালাদ,বোরহানি।দুপুর বেলা হটাত এতো আয়োজনের মানে বুঝতে পারছি না।কোন মেহমান ও তো আসিনি।আমি সব খাবারগুলোর দিকে তাকাচ্ছি এমন সময়ই ভাইয়া আসলো,আমার পাশের চেয়ারে বসতে বসতে,,
–দেরি করে ফেললাম না তো..
–না ভাইয়া ঠিক সময়ে এসেছিস(নিলু আপু বলে উঠলো)
এই অবেলায় ভাইয়াকে দেখে আরো শকড।ভাইয়া তো বাসায় থাকে না,ওর অফিসের কাছে একটা মেসে থাকে বাসা থেকে দূর হয় তাই।ছুটির দিনে বাসায় আসে।আজকে তো শুক্রবার না আবার সরকারি ছুটিও না।
–নিহী ভালো আছিস?
–হুম ভাইয়া।কিন্তু তুমি এখন??
–এই তো চলে এলাম আর কি।
|
–ফ্রেস না হয়েই খেতে বসে গেলে যে?বাইরে থেকে এসেছো না জানি কতো ধুলোবালি,জীবানু লেগেছে।(বাবা ভাইয়াকে বলে)
–বাবা আসলে খুব ক্ষুদা পেয়েছিলো তো তাই আর কি…
–তাই বলে..
–আহ নিশানের বাবা সবসময় এরকম করো না তো।আগে খেয়ে নিক পরে গোসল করবে।
মায়ের কথা শুনে বাবা চুপ করে গেল।দাদি বলে উঠলো,
–বৌমা নিহী কে খেতে দাও।
–হ্যা মা দিচ্ছি।
মা খুব যত্ন সহকারে আমার প্লেটে খাবার তুলে দিলো।আমি হাত দিতে যাব মা হাত ধরে ফেলে,
–আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
মা নিজে হাতে আমাকে খাইয়ে দিলো।খাওয়া শেষে রুমে এসে শুলাম। আজ মায়ের কি হলো বুঝলাম না এতোটা চেঞ্জ।অন্যদিন আমি কতো বাহানা করার পর খাইয়ে দেই আজ বলাও লাগলো না।শুধু মা কেন বাসার সবাই কেমন এক্টা অদ্ভুত আচারন করছে।ধুর হচ্ছে টা কি??ঘুম দিলাম।ঘুম ভাংলো নিচ থেকে আসা হৈচৈ শুনে।বিছানা থেকে উঠে,ফ্রেস হয়ে নিলাম,ঘড়িতে দেখি বিকাল ৫ টা বাজে।নিচ থেকে কিসের এত আওয়াজ,দেখি তো।নিচে না যেয়েই বেলকনি থেকে দেখলাম ভাইয়া,আপু,মীরা,শাওন,সৌরভ ভাই সবাই কি নিয়ে হাসাহাসি করছে।এখন ওদের সবাইকে দেখে তো আবার অবাক।নিচে গেলাম,ওরা কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে কিন্তু আমাকে দেখেই চুপ।আমি ভ্রু কুচকে সবার দিকে তাকালাম আর ওরা চোরের মতো ফেস করে আছে।
–তোমরা সবাই এখানে?
–কেন আসতে পারি নাকি?(শাওন বলে ওঠা)
–না তা পারো কিন্তু হটাত
–উহ নিহীন তুইও না,,আরে ওরা না আসলে তোর বার্থডে পলপার্টির প্লানিং কে করতো??
আপু ফট করে বলে ওঠে,কথাটা বলেই জ্বিহবায় কামড় দিলো আর সবাই আপুর নাম ঘরে রাগ করে উঠলো।আপু আস্তে করে বলে সরি।আমি তো ভুলেই গিছিলাম আমার বার্থডে।হ্যা কালকেই তো,এবার বুঝলাম আমাকে এতো আদর যত্ন করার কারন।প্রতিবারি আমার বার্থডের আগের দিন থেকে আমাকে এভাবেই ট্রিট করা হয়।কিন্তু এবার আমি ভুলে গেলাম,অবশ্য ভার্সিটিতে যা হচ্ছে একদিন তাতে ভুলে যাওয়ারি কথা,নিজের নাম টা ভুলিনি এটাই অনেক।
সবাই এর পরে অনেক আফসোস আর মন খারাপ করছিলো আমাকে সারপ্রাইজ দিতে পারবে না আর।কিন্তু আমার তো মজাই লাগছে।রাতে খাবার পর সৌরভ ভাইয়া,শাওন আর মীরা চলে গেলো।যাওয়ার আগে সৌরভ ভাইয়া আমাকে বলে গেল,
–শালিকা রাতে শোয়ার আগে একটা হার্টের ওষুধ খেয়ে নিও।
ওনার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না।১২ টা বাজতে আর ৪৫ মিনিট বাকি।আর ৪৫ মিনিট পরই আমার জন্মদিন।আমি তো খুব এক্সাইটেড সকালের জন্য।ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকবো কিন্তু কল আসলো,স্ক্রিনে বড়বড় করে লেখা শয়তান বেটা।নামটা দেখে অবাক হচ্ছি,এ আবার কোথা থেকে আসলো রে বাবা।এট তো সেই লুকিয়ে থাকা লোকটায়।আমাকে কেন কল দিচ্ছে।আজ আবার কি বলবে বা করবে?ধুর রিসিভি করবো না।কেটে গেলো,তিন চার বার ইগনোর করার পর রিসিভ করলাম,বিরক্তি নিয়ে বললাম,,
–হ্যালো।
–এতো টাইম লাগে কেন কল রিসিভ করতে?
গলাটা শুনে আমার বুক ধক করে উঠলো,এটা কার গলা,এতো চেনা লাগছে কেন??
–কি হলো কথা বলছো না যে..
২য় বার গলাটা শুনে আমি আবারো কেপে উঠলাম।কাপা গলায় বললাম,,
–কেক কেক কে??
–আমার ভাষায় দা হ্যান্ডসাম গাই এন্ড তোমার ভাষায় অসভ্য,শয়তান।হাহাহহাহাহহহহহহ
গলাটা তো একদম সৌভিক ভাইয়ের মতো।আমি কি কানে বেশি শুনছি?উনিই কি এই অপরিচিত লোকটা।ওদিক থেকে বলে উঠলেন বেলকনিতে আসো তো।
–…………..
–কি হলো আসো??আর কতোক্ষন দাড়িয়ে থাকবো?
ওনার আওয়াজে বারবার আমার বুক কেপে উঠছে।কেন মনে হচ্ছে ওটা উনি,আমি আর দেরি করলাম না দৌড়ে বেলকনিতে গেলাম আমার জানা লাগবে লোকটা কে?বেলকনিতে যেয়েই আমি যেন ভুত দেখলাম।সেই কালো গাড়িটা যেটা প্রায় আমার বাসার সামনে রাতে দাড়িয়ে থাকতো,সেই গাড়ির সাথে কালো পাঞ্জাবি,জেল দিয়ে সেট করা চুল,হাতে ডায়ালের ঘড়ি আর কানে ফোন নিয়ে সৌভিক ভাই দাড়িয়ে।আমাকে দেখে অন্য হাত দিয়ে হাই দিলেন।আমি তো ওনাকে দেখে জমে বরফ হয়ে গেছে,কোন নড়চড় নেই।উনি ফোনে নিহীন নিহীন করছে আমার কোন সাড়া নেই।
–নিহীইইইইন
–হুম হুম
–কি হয়েছে?কথা বলছো না কেন?
–আ আপ আপনি কি সত্যি নিচে দাড়িয়ে আছেন?
–মানে?
–আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?
–কি বলছো এসব?
–আপনি কি আমার ইমাজিনশন নাকি বাস্তবেই
–হোয়াট?? আচ্ছা তুমি বরং নিজেই এসে দেখে যাও নিচে আমি তোমার ইমাজিনেশন কিনা।
আমি আর দাড়ালাম না যেভাবে ছিলাম ওভাবেই দৌড় দিলাম শুধু যাওয়ার সময় একটা স্কার্ফ গায়ে দিয়ে নিয়েছি।মেইনগেইট খুললাম না সবাই জেগে যাবে তাই পিছনের গেট দিয়ে বের হলাম।বাইরে এসেই দেখি উনি দাড়িয়ে,ওনাকে দেখেও বিশ্বাস হচ্ছে না।
–এতো টাইম লাগে আসতে??
–………
–কথা বলছো না যে…
–একটা চিমটি কাটুন তো
–কি?
–চিমটি কাটুন তো আগে…
আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম উনি কিচ্ছুক্ষন ঠোট উল্টে তাকিয়ে থেকে আমার হাতে অনেক জোরে চিমটি কাটলেন।আমি চিতকার করে উঠলাম,উনি আমার মুখ টিপে ধরলেন,,
–আরে আস্তে আস্তে।চিল্লিয়ো না তোমার বাসার সবাই তো জেগে যাবে।তখন তো আমাকেই মার খেতে হবে।
উনি কথা গুলো বলে আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলেন।কিন্তু আমি তো শকড উনি সত্যিই এখানে।
–আপনি এখানে কি করছেন?আর এই নাম্বারটাই বা কার।
–সব বলছি আগে গাড়িতে ওঠো
–গাড়িতে কেন?
–আরে ওঠো তো।
উনি আমার হাত ধরে সামনের সিটে বসিয়ে দিলেন তারপর নিজে গিয়ে বসলেন ড্রাইভিং সিটে।ড্রাইভিং সিটে বসেই কাকে যেন কল দিলেন,,
–সব রেডি তো??
–…………
–গ্রেট।
উনি ফোন রেখে দিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করলেন আমি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি।
চলবে………
(আমি ইচ্ছা করেই এখানে শেষ করলাম সবার এক্সসাইটনেন্ট দেখতে চাই একটু।হিহিহিহিহহহহ,,সবাই একটু ভাবুক এরপর কি হয়।)