প্রেম_পাগলামি #নিহীন_রুবাইয়াত #পর্ব:১০

0
438

প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:১০

আমার সিট প্রায় শেষের দিকে আর মীরার একদম সামনে।
আমি মীরাকে হাগ করে সাইড ব্যাগটা নিয়ে আমার সিটের কাছে যায়।

–আপনি?
–তুমিইইইইইইইইইইইইইইইইই???ও মাই গড!!
–আপনি এখানে কি করছেন?
–কেন বাস কি তোমার বাবার সম্পত্তি যে তুমি ছাড়া আর কেউ উঠতে পারবে না?
–আমি কি একবারো বলেছি সেটা?আমি তো জাস্ট শুনলাম,আগে তো জানতাম না আপনি যাবেন সেটা।যায় হোক সরেন,আমি বসবো।
–তুমি বসবা মানে?
–আমি বসবো মানে এখানে আমার সিট তাই আমি বসবো।
–এটা তোমার সিট কিভাবে হলো?নাম টাম লেখা আছি নাকি?

উনি উঠে দাড়িয়ে সিট চেক করতে লাগলেন তারপর আবার বসে পড়লেন।
–কই তোমার নাম তো লেখা নেই।ইভেন কারোর নামই নেই।বড়লোকের বেটি বলে এইভাবে নিজের দখল করে নিবা?

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।

–ওরকম গরুর মতো তাকিয়ে আছো কেন?
–………………..
–এই শিবলি এই বড়লোকের বেটিরে সিট দে একটা?(উনি মুখটা উচু করে বলে)
–এটাই আমার সিট,লটারিতে এখানেই সিট পড়েছে আমার।
–ওহহহহহহহহহহহহ আগে বলবা তো।আচ্ছা বসো।
–না,বসবো না।
–কেন?
–আপনি এতোক্ষন যেটা করলেন তারপর আপনার পাশে বসে যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না।
–ওকে দেন দাড়ায় থাকো।
–হ্যা সেটাই থাকবো দরকার হলে।

আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম কিন্তু কোথাও সিট ফাকা নেই।তাই বাধ্য হয়ে দাড়িয়ে থাকা লাগলো।গাড়ি স্টার্ট দিলো।১০মিনিট মতো পর বাসের লাইট অফ হয়ে গেলো।অন্ধকারের মধ্যে ভালোই বুঝতে পারছি শয়তানটা আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে হাসছে।ইচ্ছা করছে দাতে এক ঘুষি মেরে দিই।আরো ১ ঘন্টা মতো দাড়িয়ে থাকলাম।কিন্তু এবার যা হলো তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।ড্রাইভার এমন জোরে ব্রেক কষেছে যে আমি তাল সামলাতে না পেরে ওনার কোলের ওপর বসে পড়েছি।

অন্ধকারের মধ্যেই দুইজন যেন ফ্রিজড হয়ে গেছি।কিছুক্ষন থ মেরে বসে থাকলাম,,
–তুমি তো খুব চালাক।সুযোগ বুঝে আমার কোলে বসে পড়েছো।সুন্দর ছেলে বলে বুঝি কান্ট্রোল হচ্ছিলো না তাই সবার আড়ালে সোজা কোলে বসে পড়লে।হিহিহিহিহিহিহহ…..

উনার দাত কেলানি দেখে মেজাজ গরম হয়ে গেলো।আমি উঠে দাড়ালাম।সামনে থেকে ম্যাম আসলো,,
–কি ব্যাপার নিহীন দাড়িয়ে আছো কেন?
–ম্যাম ওরে সেই কখন থেকে বলছি কিন্তু বসতেছে না।বলে এমন সস্তা বাসে আমি বসবো না

ম্যামকে আমার নামে মিথ্যা কথা বলে দিলো।কি খারাপ লোক রে বাবা।আমি ম্যামকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ম্যাম বললো,
–একটু কষ্ট করে বসে পড়ো নিহীন।

ম্যাম আমার মাথায় হাত বুলিয়েই চলে গেলো।উনি উঠে দাড়িয়ে আমাকে জানালার সাইডে বসার জায়গা করে দিলেন।আমি রাগে গজ গজ করতে করতে বসে পড়লাম।উনিও বসলেন।

–হাআআআআ,আমি বাপু গরীব মানুষ সব সবরকম গাড়িতে ট্রাভেল করতে পারি।

রাগী চোখে ওনার দিকে তাকালা।অন্ধকারে কতোটা বুঝতে পারলেন উনি জানি না।পাশে বসে বকবক করেই যাচ্ছে।
–উফফফ!!থামবেন আপনি?
–আমি আবার কি করলাম??
–চুপ থাকেন আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে।
–আমি তো চুপই আছি।
–চুপ একদম চুপ।(আমি ওনার হাতটা শক্ত করে ধরে কথাটা বলি)
–হাই হাই,তুমি তো দেখছি সেই চালু।সুযোগ বুঝে অন্ধকারে আমার মতো নিরীহ ছেলেটার এডভান্টেজ নিচ্ছ।
–কি?আমি এডভান্টেজ নিচ্ছি।
তাই তো নিচ্ছো।তখন কোলে বসে পড়লে এখন আবার হাত ধরে বসে আছো।এটাকে তো…..

ওনার কথা শেষ করার আগেই আমি হাত ছেড়ে দিই।উনি মুখ চেপে হাসে আর আমি রাগে গজ গজ করতে থাকি।উনি ফোন বের করে কারোর সাথে চ্যাট করতে থাকে,ছোট্ট প্রোফাইল পিকটা দেখে মনে হলো কোন মেয়ে।জিএফ টিএফ হবে হয়তো।আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।যদিও জানালা দেয়া আছে।একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম ভাংলো আযানের শব্দে।আস্তে আস্তে চোখ আধা খুললাম মনে হচ্ছে কিছুএক্টার ওপর খুব আরাম করে মাথা রেখে ঘুমিয়েছি কিন্তু বাসের মধ্যে কিসে মাথা রাখলাম।চোখ মিটমিট করতে

করতে কিসের ওপর মাথা রেখেছি তা দেখার জন্য ঘাড়া ঘুরিয়েই শকড খেলাম,আমি ওই অসভ্যটার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলাম।কিন্তু কেন জানি না মাথা উঠাতে ইচ্ছা হলো না,মন চাচ্ছে ওনার কাধেই শুয়ে থাকি এভাবে।আমি আবার শুলাম।কিছুক্ষন পর আবার ওনার মুখের দিকে তাকালাম,উনি ঘুমিয়ে আছি।ওনার মুখের ওপর হালকা আলো এসে পড়েছে,খুব নিষ্পাপ লাগছে ওনাকে,আমি তো ক্রাশ খেয়ে যাবো একদম।ওনার মুখের থেকে চোখ সরাতে পারলাম না।মনে মনে ভাবছি এতো নিষ্পাপ চেহারার একটা মানুষ আমার সাথে এরকম করে কেন?আমি অনেক্ষন তার দিকে তাকিয়ে আছি।

–ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?জীবনে হ্যান্ডসাম ছেলে দেখোনি বুঝি?

চোখ বন্ধ করেই কথাটা বললেন।আমি তো থতমত খেয়ে গেলাম।এ তো ঘুমিয়ে ছিলো তাহলে বুঝলো কি করে আমি ওনাকে দেখছিলাম।

–এখনো তাকিয়ে আছো?আগেই বলে দিচ্ছি আমার প্রেমে পড়েও লাভ নেই,আমি কিন্তু রিজেক্ট করে দেবো তোমায়।
উনি চোখ খুলেই শয়তানি একটা হাসি দিলেন।আমি হুড়মুড় করে উঠে বসলাম।

–শুনুন আমার কোন ইচ্ছা নেই আপনার প্রেমে পড়ার।
–আরে হয়েছে হয়েছে।আমি বুঝি তো।সারারাত আমার কাধটা বালিশ বানিয়েছো এমনকি আমার চাদর টাও কেড়ে নিয়েছো।

–চাদর?

উনি চোখ দিয়ে আমার গায়ের দিকে ইশারা করলেন।ওনার চাদর আমার গায়ে শুধু তাই না একি চাদরের মধ্য শুয়ে আছি দুজন।আমি তাড়াতাড়ি চাদর সরাতে লাগলাম।

–আরে থাক থাক এখন আর নাটক করা লাগবে না।আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে নিজেকে সামলাতে পারোনি তাই ইচ্ছা করেই হয়তো…….
–দেখুন আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি আর আপনি তো পারতেন আমাকে সরিয়ে দিতে তা দেননি কেন?
–তুমি আর দিতে দিলে কই?যেভাবে আমার হাত জড়িয়ে ছিলে,,বাবা রে বাবা।আচ্ছা একটা কথা বলো তো তুমি কি ছেলে দেখলেই এমন করো।মানে গায়ে পড়ে থাকো,আজ এটা তো কাল ওটা।এসব মেয়েদের কি বলে জানো তো?সাবধান কিন্তু লোকে যদি জানে এসব তোমার বিয়ে দিতে পারবে না তো বাবা মা লজ্জাই।

উনি খুব বিশ্রী হাসি দিলেন।আমার খুব খারাপ লাগলো,একটা মানুষ কিভাবে এতো খারাপ হতে পারে?মাঝে মাঝে ওনাকে খুব ভালো মনে হয়,সেদিন উনি আমার হেল্প করেছিলেন কিন্তু আমি ভুল বুঝে ওনাকে মেরেছিলাম তার জন্য আমি অনুতপ্ত কিন্তু আমি ওনাকে সেদিন অনেক ভালো মানুষ ও মনে করা শুরু করেছিলাম।কিন্তু না উনি খুব জঘন্য একজন মানুষ।আমার চোখে পানি চলে এসেছে কোনমতে নিজেকে সামলালাম।সূর্য উঠে গেছে।স্যার এসে বললো কারোর যদি নেমে চা-নাস্তা খাওয়া লাগে তাহলে নামতে পারে।উনি আগে নেমে গেলেন,আমি সিটে বসেই রইলাম।কিছুক্ষন পর মীরা আসলো।

–নিহু নিচে যাবি না?
–না
–কেন?
–ইচ্ছা নেই।
–চল না।চা খেয়ে আসি,এই শীতে চা খাওয়াটা খুব দরকার।যে শীত বাবা রে বাবা।
–আমার লাগবে না।
–উফফ!!বেশি কথা বলিস না তো,চল।

মীরা হাত ধরে আমাকে টেনে নিয়ে গেলো।আমি আর মীরা চায়ের দোকানে চা অর্ডার দিয়ে বেঞ্চের ওপর বসি।তখনি ওই অসভ্যটা আমাকে ডাক দেয়,উনি আর শিবলি ভাই দোকান থেকে একটুটু দুরে রোদের মধ্যে দাড়িয়ে।আমি শুনেও না শুনার ভান করলাম।উনি আবার ডাক দেয়।

–কথা কানে যাচ্ছে না??এদিকে এসো

আমি গেলাম না।বসেই আছি।
–কি হয়েছে বলেন।

–এদিকে আসো।

–পারবো না।

আমার পারবো না কথা শুনে উনি নিজেই চলে এসেছেন আমার কাছে।ওনার চোখ লাল হয়ে গেছে,মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে।আমি ভয় গেলাম,মীরাও কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।

–একবার আমার কথাই না করেছো মেনে নিলাম,নেক্সট টাইম যদি কিছুতে না বল খবর আছে।আমাদের দুজনের জন্য দুটো চা নিয়ে আসবে।চিনি কম হবে আমারটাই,আমি বেশি মিষ্টি খেতে পারিনা।

আমি আবারো পারব না বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই উনি বললেন,,
–ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু সে পারবা না।ইফ ইউ সে দ্যাড়,দ্যাটস নট গুড ফর ইউ..আন্ডারসস্টান্ড?

উনি গটগট করে চলে গেলেন।ওনার তখনকার ব্যবহারে আমি অনেক রেগে ছিলাম সাথে কষ্ট ও পেয়েছি কিন্তু ওনার সাথে পাঙ্গা নেয়ার ইচ্ছা আমার নেই তাই বাধ্য হয়ে চা অর্ডার দিতে গেলাম।মন তো চাচ্ছে চায়ে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলি।কিন্তু আমি তো সেটাও পারবনা।

–মামা দুইটা চা দিয়েন।
–আইচ্ছা খালা।

আমি চায়ের অর্ডার দিয়ে ওনাদের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি কোন একটা কথা বলছেন আর খুব হাসছেন।শিবলি ভাই ও হাসছে।ওনার হাসি দেখে আরো রাগ বেড়ে গেলো আর মাথায় খেলে গেলো এক দুষ্টু বুদ্ধি………………..

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here