প্রেম_পাগলামি #নিহীন_রুবাইয়াত #পর্ব:৩২

0
321

#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:৩২

আমার হাতে শপিং ব্যাগটা দিয়ে মা নিজের রুমে চলে গেলো আমিও আমার রুমে এসে প্যাকেটটা খুললাম।প্যাকেট খুলতেই আমি তো শকড।
এটা তো সেই শাড়িটা যেটা আমি দোকানে পছন্দ করেছিলাম।হ্যা এটাই তো।কিন্তু সৌরভ ভাইয়া কিভাবে জানলো নাকি আন্দাজেই দিয়েছে?আন্দাজে দিলেও তো ভালোই,বেগুনি রং এর শাড়িটা ভাজ খুলে গায়ে জড়াতে যাবো তখনি শাড়ির ভাজ থেকে একটা কিছু পড়লো মনে হলো,নিচু হয়ে দেখি একটা চিরকুট।ফ্লোর থেকে তুলে নিয়ে খুলে দেখলাম চিরকুটটি।

“এক পশলা বৃষ্টি ২০০গজ দূরের কৃষ্ণচূড়া আর তুমি….!তোমাকে আর কি বিশেষায়িত করবো আপদমস্তক তুমি বিশেষন,,
নীল রং এর শাড়িতে তোমাকে বেশ মানায় কিন্তু বেগুনি রং এর শাড়িতেও তোমাকে খারাপ লাগবে না।রোজ নিয়ম করে একটু হাসলে কাজের আহামরি ক্ষতি হয়ে যাবে না কিন্তু…!তাই একটু বেশি বেশি হেসো নিহীপাখি..*_*
ভাইয়াকে খুব কষ্টে বুঝিয়ে শাড়িটি পাঠালাম,তোমার পছন্দের কোনকিছুই কিন্তু আমার নজর এড়াই না।হিহিহহহহিহহ,,ভালোবাসি বলে কথা।জানি না তুমি আমায় ভালোবাসো কিনা তবে একটা অনুরোধ কাল একবার ওই শাড়িটা পরে আসবে??
–তোমার অসভ্য”

লেখাগুলো পরে আমি তো শকড।কি লোক রে বাবা আমি যে শাড়িটা পছন্দ করেছি সেটাও খেয়াল করেছে?আবার সৌরভ ভাইয়াকে কি না কি বলে বাসায় ও পাঠায় দিলো।
–লোকটা ওতোটাও খারাপ না নিহী,ভালোবাসায় যায় ওই অসভ্যটাকে।কাল শাড়িটা পরেই যাস। (মনে মনে বললাম)

সকাল সকাল উঠে পড়েছি,ঝামেলা একটাই আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না।আপুকেই জোর করে ম্যানেজ করে নিলাম।আপু শাড়িটা পরিয়ে দিলো,অবশ্য আজকেই কেন শাড়িটা পরছি তাও বার বার জিজ্ঞেস করছে আপু।কোনরকম মিথ্যে বুঝিয়ে বের হলাম,এটাও বলেছি আজ ভার্সিটি শেষে মীরার বাসায় যাবো ফিরতে রাত হবে।উনি কিন্তু আমাকে রাত করে থাকতে বলেননি কিন্তু কেন জানি না ইচ্ছা হলো অনেকটা সময় কাটানোর।বাসা থেকে আজ গাড়িও নিলাম না রিক্সায় উঠেছি।রিক্সাওয়ালাকে একটা জায়গার নাম বললাম উনি আমাকে ওখানে নামিয়ে দিয়ে আসলেন।
–হ্যালো
–হুম নিহীপাখি বলো
–কোথায় আপনি?
–আমি তো ভার্সিটিতে যাচ্ছি আর ৫-৭ মিনিট লাগবে।
–ভার্সিটিতে যাওয়া লাগবে না।
–মানে?
–আমি একটা ঠিকানা টেক্সট করে দিচ্ছি ওখানে আসুন।আমি অপেক্ষা করছি।(উনি হয়তো প্রথমে বুঝতে পারেননি।বুঝতে পেরে উনি খুব খুশি হন মনে হলো)
–আমি এক্ষনি আসছি।

আমি ফোন কেটে দিলাম।ঠিকানা টা টেক্সট করে দেয়ার ১০মিনিট মতো পর উনি আসলেন।আমি বেশ অবাক এত তাড়াতাড়ি চলে আসবেন ভাবতেতে পারিনি।উনি আমার পাশে এসে বসলেন।আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে,,
–তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে নিহীন।
–ধন্যবাদ কিন্তু আপনি এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলেন কিভাবে?
–আমার নিহীপাখি আমাকে কোথাও আসতে বলেছে আর আমি যদি লেট করি তাহলে তো সে রাগ করতো।আর আমি কি তাকে রাগাতে পারি?
–ওহহহহ,ভালো
–হুম ভালো তো হবেই,কে হুকুম করেছে দেখতে হবে না??আমি যদি অন্যদেশেও থাকতাম তাও দশ মিনিটে হাজির হতাম।
(ওনার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।উনিও ভ্রু কুচকালেন।কিছুক্ষন পর একটু হেসে দিলেন)
–বেশি বেশি হয়ে গেলো নাকি?
–জি
–ওই একটু
–একটু না অনেকটাই
এরপর দুজনেই হেসে দিলাম।নদীর পড়ে ছোট্ট একটা বেঞ্চের ওপরে বসে দুজন বেশ অনেক সময় বসে থাকলাম।নদীর বয়ে যাওয়া স্রোত,স্নিগ্ধ বাতাসে বেশ ভালো লাগছে।অনেক্ষন চুপচাপ থাকার পর বলে উঠলাম,
–কিছু খাওয়াবেন খুদা লেগেছে??
আমার কথা শুনে উনি আশেপাশে তাকালেন,কিন্তু একটা বাদাম ওয়ালা ছাড়া কিছুই পেলেন না।
–নিহীন এখানে বাদাম ছাড়া আর কিছু
–ওটাই আনেন
–আচ্ছা তুমি বসো আমি আনছি।
উনি বাদাম কিনে এনে নিজেই বাদাম এর খোসা ছিলে আমকে খেতে দিলেন।দুজনে অনেক গল্পই করলাম,হাসাহাসি করলাম।ঘন্টাখানেক পর উঠলাম,রিক্সায় ঘুরলাম।দুজন খুব ফ্রিলি কথা বলছি আজ কোন সংকোচ নেই।বেলা ১২টার দিকে সেই বৃদ্ধাশ্রমে গেলাম।আজ সবাই আমাকে নাতবৌ বলে ডাকছে আমি বাধা দিলাম না।সারাটা দিন ওখানেই থাকলাম।সন্ধ্যার পর দুজন বের হলাম।রিক্সায় ছিলাম কিন্তু কি মনে করে আমি রিক্সা থেকে নেমে গেলাম।
–কি হলো নিহীন নেমে গেলে যে।
–আপনিও নামুন
–কেন?
–আমি বলছি তাই।
উনি নেমে রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে দিলেন।দুজনেই এবার হাটছি।ফাকা রাস্তাই পাশাপাশি হাটতে বেশ ভালোই লাগছে।উনি হটাত বলে উঠলেন,
–নিহীপাখি
–হুউম
–একটা কথা বলবো?
–হুউউউম
–তোমার হাত না মানে
আমি বুঝতে পারলাম উনি হাত ধরার কথা বলছেন কিন্তু আমি বুঝেও না বুঝার ভান করলাম।
–কি মানে?
–না মানে আমি কি তোমার মানে
–উফ মানে মানে না করে বলেন তো
–আমি কি তোমার হাত ধরতে পারি??
–না
–কেন?
–আমি বলছি তাই।
–না আমি হাত ধরবোই।
উনি সাথে সাথে হাত ধরে নিলেন।
–কি হলো হাত ধরলেন যে?আমি না বললাম না
–তুমি বললেই হবে?
–তাহলে পারমিশন না নিলেই তো হতো।
হাত ধরে কিছুক্ষন হাটার পর হটাত করেই আমার কাশি শুরু হয়ে গেলো।আমাকে কাশতে দেখে উনি খুব বিচলিত হয়ে গেলো।কাছে পানি না থাকায় আমাকে দাড় করিয়ে পানি আনতে গেলেন।উনি যাওয়ার পর আস্তে আস্তে আমার কাশি বন্ধ হয়ে গেলো।আমি চারিপাশে খুজলাম কিন্তু ওনাকে পেলাম না।
–কি ব্যাপার সুন্দরি সৌভিককে খুজছো বুঝি?
পাশ থেকে লোকটার কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম
–আপ আপনি?(আমার সামনে আর কেউ না সেই আদিল)

|
–নিহীন চোখ খোল(মায়ের গলা শুনে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালাম
–মাআ(মাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলাম,আমি যে জীবিত আছি এটাই অনেক)
–কান্নাকাটি থামা আর এই শাড়িটা পরে নে।
(মায়ের হাতে লাল টুকটুকে একটা জামদানি শাড়ি।বিয়েতে কনেরা যেমন পরে তেমন)
–শাড়ি কেন পরবো মা?
–আজ এই মুহুর্তে তোর বিয়ে।
–আমার বিয়ে মানে?
–যে তোর এতো বড় সর্বনাশ করতে যাচ্ছিলো তার সাথেই তোর বিয়ে হবে এখন।মান সম্মান বাঁচাতে আমাদের এ বিয়ে দিতেই হবে।

মা কেঁদে দিলো,আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।কি বলছে মা এগুলো?আমার বিয়ে,কার সাথে আর হটাত কেনোই বা?আমার কোন কথা না শুনেই আপু আমাকে শাড়িটি পরিয়ে দিলো।কিছুক্ষনের মধ্যেই রাত ২টার দিকে বাবা শুকনো মুখে আমার ঘরে ঢুকলো সাথে কাজি।কেউ আমার কোন কথায় শুনছে না।কয়েক মিনিটেই আমার বিয়ে হয়ে গেলো।আমি মিস নিহীন থেকে মিসেস নিহীন আশহাদ হয়ে গেলাম।যখন ওনার নাম শুনলাম আমি তো অবাক হটাত কি হলো বাবা মা ওনার সাথে আমার বিয়ে দিচ্ছে।বাবা মার বারবার বলাতে আমি কবুল বলে দিই।আমার সাথে কয়েক ঘন্টা আগেই বাজে একটা ঘটনা ঘটলো আর তারপরই ওনার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো।কিন্তু মা এটা কেন বললো যে আমার সর্বনাশ করেছে তার সাথে বিয়ে?আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না।

রাত তিনটা আমি বাসর ঘরে বসে আছি ওনার অপেক্ষায়,মনে মনে এই বিয়েটার কারন খুজছি কিন্তু কিছুই মাথায় আসছে না।বিয়ে,শব্দটা ছোট হলেও মেয়েদের কাছে এটা অনেক বড় একটা স্বপ্ন।আমারো অনেক স্বপ্ন ছিলো বিয়ে নিয়ে কিন্তু এভাবে সব হয়ে যাবে কোনদিনি ভাবিনি,তারওপর যা ঘটে গেলো সব মিলিয়ে আমি অনেক ভয় পেয়েছি।তবে আমি খুশি আমার পছন্দের মানুষটিকে স্বামী হিসেবে পেয়েছি।আমার অপেক্ষার সমাপ্তি করে উনি আসলেন,ওনাকে দেখে আমি উঠে দাড়িয়ে ওনাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে যায়,বড়দের মুখে শুনেছি স্ত্রীকে বাসর রাতে সালাম করতে হয়।আমিও সেই প্রথা অনুসারে সালাম করতে যায় কিন্তু উনি আমার দুই বাহু ধরে ফেলেন।খুব শক্ত করে ধরায় ব্যাথা পাই।উনি আগে তো এভাবে কখোনো আমার হাত ধরিনি ওই একদিন ছাড়া তাহলে কি আজও উনি রেগে আছেন?কিন্তু কেন আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেলো।আমি ওনার চোখের দিকে তাকাতেই বুক্টা কেপে উঠলো,চোখ লাল আর ফুলে গেছে।কিছু হয়েছে কি ওনার কেঁদেছে নাকি?
–কি হয়েছে আপনার??
উনি আমার কোন কথার উত্তর না দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ছুড়ে মাটিতে ফেলে দেন।মাটিতে এমনভাবে পড়ায় আমি হাতে বেশ ব্যাথা পায়।কিন্তু উনি আমাকে এভাবে ধাক্কা দিলেন কেন?
–আমাকে এভাবে ধাক্কা দিলেন কেন?কি হয়েছে?

আমি মাটিতেই বসে আছি উনি আমার কাছে এসে চুলের মুঠি ধরে ফেলেন।আমি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠি।

চলবে….
(আপনাদের হিরো হিরোইনের বিয়ে দিলাম আজ।দুঃখিত দাওয়াত দিইনি আসলে হুট করেই হয়ে গেলো।কেন হলো সেটা ভাবছেন নিশ্চয়,বলবো বলবো সব বলবো একটু অপেক্ষা করেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here