প্রেম_পাগলামি #নিহীন_রুবাইয়াত #পর্ব:৩৪

0
317

#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:৩৪

–আসি বললেই তো যাওয়া হবে না…(আমি ওনার হাত ধরে ফেলি উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়)
–কিছু বলবে কি??
–হুম
–ওহ বলো..
–ভালোবাসি আপনায়।
–কি??
–হুম অনেক ভালোবাসি,জানি না কবে এতো ভালোবেসে ফেলেছি তবে সত্যিই ভালোবাসি।
–…….(আমার কথা গুলো অবাক হয়ে শুনছেন)
–কথা বলছেন না যে??
–তুমি কি সত্যিই কথাগুলো বলছো নিহীন?
–মিথ্যা বলার কি কোন কারন আছে??
–আ আ আমার কেন জানি না বিশ্বাস হচ্ছে না।তুমি আমাকে ভালোবাসো?মানে সত্যিই ভালোবাসো?(ওনার চোখেমুখে হাসি আর অপেক্ষা দেখতে পারছি আমার হ্যা ভালোবাসি কথাটা শোনার।আমিও আর ঘুরালাম না,এমনিতেই অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে)
–হ্যা সত্যিই।

উনি যেন আবার খুশিতে লাফিয়ে উঠলেন।ইয়েস ইয়েস করে কিছুক্ষন উরুধুরা নাঁচলেন,ওনার এই ডান্স দেখে আমি হেসে ফেললাম।আমার হাসি দেখে উনি লজ্জা পেলেন কিন্তু তা সাময়িক।
–নিহীন নিহীন তুমি জানো না আজ আমি কতোটা হ্যাপি।ফাইনালি তুমিও আমাকে ভালোবাসো।আমার যে কতোটা ভালো লাগছে।
–……..(আমি হাসছি এখনো)

উনি ও অনেক আনন্দ করছেন কিন্তু হটাত ওনার মুখের হাসি ম্লান হয়ে গেলো।উনি মুখ সরিয়ে নিলেন।

–কি হয়েছে??
–………………
–এই যে মিস্টার অসভ্য বলেন কি হয়েছে??
–আজ যা হলো এটা ঠিক হয়নি নিহীন।আমি সবার চোখে নিচে নেমে গেছি।তার থেকে বড় কথা আমি নিজের কাছেই ছোট হয়ে গেলাম।(ওনার কথা শুনে বেশ খারাপ লাগলো)
–আপনার এতে কোন দোষ নেই আর এটা তো ভুল বুঝাবুঝি ছিলো।প্লিজ আপনি এসব আর মনে রাখবেন না প্লিজ প্লিইইজ।আর সবাই তো নিজেদের ভুল্টা বুঝতে পেরেছে তাই আর ওসব ভেবে নিজের মন খারাপ করবেন না(উনি আমার দিকে আড়চোখে তাকায় তারপর মুচকি হাসেন)
–ঠিক আছে।তুমি যখন বলছো তখন আমি আর ভাববো না।কিন্তু ওই আদিলকে তো আমি ছাড়বো না।ওর সাহস হয় কি করে তোমার সাথে মিসবিহেভ করার।
–আপনি আবার বেশি ঝামেলা করতে যাবেন না।ওই লোকটা অনেক খারাপ।
–আমি এইকক্ষেত্রে চুপ থাকতে পারি না।ওর মতো ছেলেদের কারনেই দেশে মেয়েদেরকে এতো অন্যায় সহ্য করতে হচ্ছে,দিনের পর দিন খারাপ নজরের স্বীকার হচ্ছে তারা।এদের তো কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেয়া উচিত।তাহলেই দেশটা যদি একটু ভালো থাকে,মা বোনেরা চিন্তামুক্তভাবে বাড়ির বাইরে বের হতে পারে।
–হ্যা সেটাও ঠিক বলেছেন।

আমরা দুজন এরপর দেশের সমস্ত মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করলাম।এদিকে রাত ও অনেক হয়ে গেছে,আমার বেশ ঘুম ঘুম পাচ্ছে।
–নিচে যাবেন না??
–এখনি??
–হুম
–আর কিছুক্ষন থাকা যায় না??
–আচ্ছা(ঘুম আসছে তাও বললাম না।)
–চলো বসে কথা বলি

আমরা দুজন চিলেকোঠার দেয়ালের গা ঘেষে বসে আছি।মাঝে এক হাত মতো দূরত্ব।চাঁদের আলোই মাঝে মাঝে চোখাচোখি হচ্ছে আমাদের,বেশ লজ্জা লাগছে।নীরবতা কাটিয়ে উনি এবার বললেন,,
–আচ্ছা নিহীন তুমি আমায় কতোটা ভালোবাসো??
–ভালোবাসা আবার পরিমাপ করা যায় নাকি??
–না তা যায় না কিন্তু হয় না একটা ব্যাপার মানে ভালোবাসার প্রকাশ।
–উউউম জানি না আমি।(বাচ্চামি করে)
–কেন??
–জানি না কেন।আচ্ছা আপনি আমাকে কতোটা ভালোবাসেন??(বাচ্চাদের মতো অবুঝ স্বরে)
–আমি??
–না তো কি ওবাইদুল কাদের??
(আমার মুখে ওবাইদুল কাদেরের কথা শুনে উনি খুব হাসলেন।এমন ভাবে হাসছেন যেন আমি কি না কি বলেছি)
–হাসছেন কেন?হাসি থামান আর বলেন।
–আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।হাহাহাহহহ…
–এখনো হাসছেন?
–সরি সরি….
উনি হাসি থামিয়ে একদম চুপ হয়ে গেলেন।আমি অধীর আগ্রহে ওনার মুখের দিকে চেয়ে আছি।উনি আকাশের দিকে তাকিয়ে,ঠিক আকাশ না চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন,,

আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে,
অভিমান কিংবা দূরত্বের দিনেও ভালোবাসি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে,
অন্যপাশ ফিরে শুয়ে থাকলেও ভালোবাসি।

আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে,
প্রচন্ড রাগ কিংবা তুমুল ঝগড়াতেও ভালোবাসি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে,
কথা না হওয়া সময় জুড়েও ভালোবাসি।

আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে,
আমার জীবনের প্রতিটি সাফল্য আর ক্ষতির মাঝেও ভালোবাসি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে,
আমার হাসির মাঝে লুকিয়ে থাকা বেদনাতেও তোমাকে ভালোবাসি।

আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে,
রাগ করে কল কেটে দিলেও ভালোবাসি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে,
তুমি না থাকলেও ভালোবাসি।

আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে,
দুই,দশ কিংবা দুইশো বছর পরও ভালোবাসি।
আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে,
কখনো ভালোবাসি না বললেও ভালোবাসি।
(শেষ লাইনটা উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন)

ওনার কথাগুলো শুনে আমি যেন বরফের মতো জমে গেছি।উনি যে এমনভাবেও কিছু বলতে পারেন আমার জানা ছিলো না।
–কি হয়েছে নিহীপাখি তুমি ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন??(ওনার কথাই চোখ সরিয়ে নিই)
–না না কিছু না।
(আমি এবার হায় তুললাম)
–তোমার কি ঘুম আসছে?
–না মানে।
–আচ্ছা ঘুমাও।
–না না সমস্যা নেই।
–আরে না তুমি ঘুমাও।আমি কিছু মনে করবো না।
(ওনার কথা মতো ঘুমানোর জন্য আমি রুমে যাওয়ার জন্যে উঠে দাড়ালাম কিন্তু উনি আমার হাত ধরে বসিয়ে দিলেন)
–কি হলো উঠে কয় যাচ্ছো?
–কেন ঘুমাতে?
–ঘুমানোর পারমিশন দিয়েছি কিন্তু রুমে যাওয়ার না(আমি অবাক হয়ে তাকালাম)।এখানেই ঘুমাবে তুমি।আমার কোলে মাথা রেখে।

উনি আমার মাথা ওনার কোলের ওপর নিয়ে আমার চুলে বিলি কাটছে আর আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।সকালের উদীয়মান সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো,আশে পাশে তাকালাম কেবল রোদ ওঠা শুরু করেছে।উপর দিকে চোখ পড়তেই ওনার মুখ দেখতে পারলাম।খুবি স্নিগ্ধ লাগছে মুখটা,ওনার সিল্কি চুলগুলো কপাল বেয়ে মেলে আছে।আমি কিছুক্ষন ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম তারপর আস্তে করে উঠে ওনার কপালে বেয়ে পড়া চুলগুলো সরিয়ে দিলাম।উনি একটু নড়ে উঠলেন তারপর আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেন।এরি মাঝে নিচে আওয়াজ পেলাম,বেশ জোরে জোরে কথা হচ্ছে আমি ভয় পেয়ে যায় আর নিচে দৌড় দিই ওনাকে ডাকতে যেও ডাকলাম না।নিচে এসেই দেখি সৌরভ ভাইয়া আর আমার ভাইয়া ফোনে কার সাথে কথা বলছে।আপুর কাছে জানতে পারলাম আদিলকে নাকি পুলিশ শহরের কোথাও খুজে পাচ্ছে না।সৌরভ ভাইয়া আর আমার ভাইয়া ঠিক করলো ওরা নিজেরাই যাবে খুজতে।
–সৌরভ আর বসে থাকতে পারছি না,পুলিশ যা করার করবে কিন্তু আমাদের ও খুজতে হবে ওই শয়তানটাকে ওর সাহস হয় কি করে আমার বোনের সাথে…..ওরে তো আমি।
–শান্ত হ নিশান।চল খুজি কিন্তু সৌভিক কোথায়??
–হ্যা তাই তো সৌভিক কোথায়??(ওনার মা বলে ওঠে)
–রুমেও তো নেই ভাই(শাওন বলে)

সবাই ওনাকে আশেপাশে খোজে কিন্তু পাইনা।আমিও বলতে পারছি না উনি ছাদে।সবাই কোথাও না পেয়ে চিন্তাই পড়ে।চিন্তা দেখে আমি এবার শাওনকে সাইডে ডেকে বলি উনি ছাদে আছে।শাওন প্রথমে অবাক হলেও পরে মুচকি একটা হাসি দিয়ে ছাদে চলে যায়।মিনিট পাঁচেক পর দুজন ছাদ থেকে নেমে আসে।ওনাকে ছাদ থেকে নামতে দেখে তো সবাই অবাক।উনি বাহানা দিয়ে বলে ভোরে ভালো লাগছিলো না তাই ছাদে গিছিলো আর পরে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে।ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে ভাইয়া,সৌরভ ভাইয়া আর উনি বের হয় আদিলকে খোজার জন্যে।

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here