#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:১৩
আমি আমার ওড়নার এক কোনা ছিড়ে ওনার পায়ে বেধে দিই।ওড়নাটা বাধার সময় আড়চোখে ওনার দিকে কয়েকবার তাকাই।উনি বাচ্চাদের মতো মুখ গোমড়া করে বসে আছে,এমন ভাব যে আমি ওনার চকলেট কেড়ে নিয়েছি আর বলেছি চুপ করে বসো তা না হলে চকলেট দেবো না।খুব হাসি পাচ্ছে,এই মানুষটার এই রূপটা আজ প্রথমবার দেখলাম এর আগে প্রতিবারি তার বিশ্রী একটা রূপ দেখেছি আমি।
–নিন হয়ে গেছে।
উনি এখন বাচ্চাদের মতো করেই তাকিয়ে আছে কিন্তু এখন বেশিই গাল ফুলিয়ে আছে।ওনার নাক টা লাল হয়ে আছে ঠিক যেম পাকা টমেটো,,আমার খুব হাসি পেয়ে গেলো।
–হাহাহাহাহাহাহাহাহাহহহহ….
–হাসছো কেন?
–আপনার নাকটা টমেটো হয়ে গেছে একদম।হাহাহাহহহহহহহ…
–কিহ?
–জ্বিইইই।
–ফালতু ইয়ারকি মারবা না এখান থেকে উঠবা ক্যামনে তাই ভাবো।
–কি ভাবে আর উঠবো?লাফ দিয়ে উঠবো
–ও মা!তাই নাকি?ভালো তো।যাও ওঠো…
–হ্যা ওয়েট…
আমি উঠে দাড়ালাম,ওনার দিকে এটিটিউড মার্কা হাসি দিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করলাম।কিন্তু আমার হাত পৌছালো না।লাফঝাপ মারার পরও উপরের মাটির টিকিটুকু ও আমার হাতের নাগাল পেল না।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিলাম।
–কি হলো ম্যাডাম আপনি নাকি লাফ দিয়ে উঠে যাবেন তা ওঠেন।
–…………….
–হাহাহাহহাহাহহাহহহহ……
–হাসবেন না একদম।আমাকে সাহায্য করেন।
–আমি কি সাহায্য করবো?
–কি সাহায্য করবেন মানে?উপরে উঠতেতে সাহায্য করবেন।
–কিন্তু আমার পায়ে তো অনেক ব্যাথা আমি তো উঠতেই পারবো না।
–মানে টা কি??তাহলে কি এখানে পড়ে থাকবো নাকি?
–আমার কোন অসুবিধা নেই,সকাল না হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকাই যায়।কি সুন্দর একটা পরিবেশ।আহ!!মন চাই সারাজীবন এখানেই থেকে যায়।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে ৩২ টা দাত বেরিয়ে কেলানি দিলেন যা দেখে আমার রাগ উঠে গেলো।মন চাচ্ছে ওনার দাতে ঘুষি মেরে দাতগুলো ভেঙে দিই।
–ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?তোমার কি রাগ হচ্ছে নাকি??
ওনার এই কথাটা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো।নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম।
–নাহ।রাগ হবে কেন?আমার তো ডান্স করতে ইচ্ছা করছে..
–রিয়েলি?ওয়াও।নাচো নাচো আমিও দেখি,এখানে বসে বসে টাইমটা আরো ভালো কাটবে।হিহিহিহিহিহহহ।।
আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না।সোজা ওনার কোলের ওপর উঠে জ্যাকেটের কলার চেপে ধরলাম।
–আমি মরছি আমার জ্বালায় আর আপনি মজা নিচ্ছেন?
–আমি তো…..
–চুপ একদম চুপ আর একটা কথা বলেছেন তো গলা টিপে দেবো বলে দিলাম।অসভ্য ব্যাটা,কোথায় এখান থেকে কিভাবে উঠবো সেই কথা ভাববে তা না ফালতু কথা বলেই যাচ্ছে।”আমার কোন অসুবিধা নেই,সকাল না হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকাই যায়।কি সুন্দর একটা পরিবেশ।আহ!!মন চাই সারাজীবন এখানেই থেকে যায়।”মানে সবকিছুর একটা লিমিট থাকে কিন্তু আপনি লিমিটলেস প্রানী।
–আমি অসভ্য ব্যাটা?
–তা কি বেটি????(চিল্লিয়ে)
–এই না না।ছি ছি!তা হবো কেন?না মানে এখানে তো আমরা দুজনি আছি আমি তো কোন অসভ্যতামি করিনি কিন্তু তুমি সুযোগ বুঝে আমার কোলে উঠে পড়েছো।তাহলে অসভ্যতামি টা…….মানে বুঝোই তো….হিহিহিহিহহহহহ।
ওনার কথাই আমার হুশ ফিরলো।সত্যিই তো,আমি ওনার কোলের ওপরে উঠে গেছি।ছি ছি!লোকটা কি ভাবলো আল্লাহই জানে।আমি তাড়াতাড়ি কলার ছেড়ে দিয়ে কোল থেকে নেমে গেলাম।উনি এখনো মুচকি মুচকি হাসছেন।
–কি সমস্যা এভাবে হাসছেন কেন?
–না মানে ভাবছি যে আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে তোমার মতো ঝাসি কি রানীও নিজেকে সামলাতে পারে না।
–কি?দেখুন আমি মোটেও ইচ্ছা করে
–আরে বুঝি বুঝি,এখন তো ওমন কথা বলবাই যে রাগের মাথায় বুঝতে পারোনি।সবাই এমনটাই বলে।আমার মতো হ্যান্ডসাম,ড্যাশিং,চার্মিং মাসকিউলার বডি ওয়ালা ছেলে দেখে যেকোনো মেয়েরই মনে ইচ্ছা জাগবে আমার কাছে আসার।
কথাগুলো বলে উনি বেশ ভাব নিয়ে কলার নাচালেন।
–হাহাহাহাহাহহাহাহহাহহাহাহাহহহহ….
–কি হলো হাসছো যে?
–আপনি আর হ্যান্ডসাম?আবার ড্যাশিং!হাহাহাহহাহহাহাহহাহহহহ।।নাইস জোক।আই থিঙ্ক ইট উইল বি দা জোক অফ দা ইয়ার।
–হুয়াট??জোক মানে টা কি?
–হায় আল্লাহ আপনি জোক মানে জানেন না?আপনি না ক্যাম্পাসের বেস্ট স্টুডেন্ট,সবার চোখের মণি তা সাধারণ একটা ইংলিশ এর বাংলা জানেন না।ছি ছি ছি,,,লজ্জা লজ্জা।
–হুয়াট দা হেল ইজ দিস!!জোক মানে জানবো না কেন আমি?আমি জানি জোক মানে কি।
–তাহলে আবার শুনছেন কেন জোক মানে কি?
–উফফ!এই মেয়ে তো খুব বেশি দুষ্টু।
–এই আমি একদম শান্ত,নম্র,ভদ্র একটা মেয়ে(আমিও এবার দাত বের করে ক্লোজ আপের এড দিই)
–থাক,তুমি যে কি তা আমার জানা আছে।দুষ্টু মেয়ে কোথাকার।এইবার সোজা কথায় হাসো।আমি হ্যান্ডসাম একথায় ওমন রিয়াক্ট করার কারন কি?
–কারন তো অনেক আছে।কোনটা শুনবেন তাই বলেন?
–সব শুনবো।
–না,আমার ওতো বলার সময় নেই।
–কেন সময় নেই কেন?বাড়িতে কি ৫/১০ ছেলেমেয়ে রেখে এসেছো যে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে তাদের খেতে দিতে হবে তাই কথা বলার টাইম নেই।
–একটু ভুল বললেন ওটা ৫/১০ না ১৫/১৬ হবে।
আমার কথায় উনি বিষম খেলেন আমি যে এমন একটা কথা বলবো উনি আশা করেননি হয়তো।
–কি ফাজিল মেয়ে রে বাবা।
–হিহিহিহিহহহহহহ..আমি অনেক ভালো মেয়ে।
উনি মুখটটা পেঁচার মতো করে অন্যদিকে তাকিয়ে বসে রইলেন।১০ মিনিট মতো পর,,
–আচ্ছা আমরা কি এখানেই থাকবো?উপরে উঠবো না?
–…………………….
–কি হলো কথা বলছেন না কেন?
–সকাল হোক কেউ না কেউ আমাদের খুজতে ঠিকি আসবে তখন উঠবো তার আগে হবে না।পায়ের মধ্যে কেমন যেন চিনচিন করছে।
–কি??তাহলে তো আরো অনেক টাইম লাগবে।
–হুম।
–ধুর ভালো লাগে না।
–কেন?এখন এমন করছো কেন?নিজেই তো ইচ্ছা করে বিপদটা ডেকে আনলে।আমি তো তোমাকে ভালো মতোই উপরে তুলতে যাচ্ছিলাম নিজেই তো দুষ্টুমি করে আমাকে নিচে নিয়ে আসলে।
–……………..
–এখন তো চুপ থাকবাই।ফাজিল মেয়ে।
–আমি ফাজিল না।
–চুপ।আর একটা কথাও বলবা না।মন চাচ্ছে তোমাকে…
–আমাকে? কি?
উনি আর কিছু বললেন না।আবার অন্যদিকে তাকিয়ে বসলেন।কেটে আরো বেশ খানিকটা সময়,সকাল হয়ে গেছে।হটাত শিবলি ভাইর গলার আওয়াজ পেলাম,সৌভিক সৌভিক করে ডাকছে।ওনার গলা পেয়ে আমরা দুজনেই অনেক খুশি।খুশি হয়ে একে অপরের দিকে মুখ ঘুরাতেই ঘটে গেলো এক লজ্জার ঘটনা।শিবলি ভাইয়ার গলা শুনে আমি আর সৌভিক ভাই একি সাথে শিবলি বলে একে অপরের দিকে মুখ ঘুরাতেই ওনার ঠোট এসে আমার নাক স্পর্শ করে।দুজন পুরো স্ট্যাচু হয়ে যায়।উনি লজ্জাই মুখ ঘুরিয়ে ফেলেছে আর আমি তো পাথর হয়ে গেছি।এই প্রথম কোন ছেলের কাছে এভাবে..ছি ছি!ব্যাপারটা বেশ লজ্জা জনক।আমরা দুজন দুদিক ঘুরে বসে থাকি।হুশ ফেরে আবার শিবলি ভাইয়ার ডাকে।এবার সৌভিক ভাই ও আওয়াজ দেয় সাথে আমিও।শিবলি ভাইয়া খুজতে খুজতে গর্তের কাছে চলে আসে।
–সৌভিক তোরা এখানে কি করছিস?
–সেসব কথা পরে হবে আগে তোল আমাদের।
–হ্যা ভাইয়া প্লিজ আগে তোলেন।
–হ্যা হ্যা।হাত দাও তোমার
শিলবি ভাইয়া নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় আমি ওনার হাত ধরে উঠে পড়ি।এবার উনি সৌভিক ভাইর দিকে হাত বাড়ায় কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার উনি শিবলি ভাইয়ার হাত না ধরেই উঠে পড়ে।আমি তো অবাক।লোকটা নিজে নিজেই উঠে পড়লো যখন তাহলে এতোক্ষন ওখানে বসে ছিলো কেন?
–এই আপনি নিজে নিজেই তো এখন উঠে পড়লেন তাহলে এতোক্ষন বসে ছিলেন কেন?উঠে পড়ে আমাকে উঠাতে পারতেন তো।
উনি আবার বিষম খাই।
–এতোক্ষন ওখানে বসে থাকার মানে কি হ্যা?
–না মানে তখন আমার পায়ে খুব ব্যাথা করছিলো সেই জন্যই তো বসে ছিলাম।এখন আর পায়ে তেমন ব্যাথা নেই
–এইটুকু টাইমের মধ্যে ব্যাথা কমে গেলো।
–হুম গেলোই তো।
–কিভাবে শুনি?আমাকেও একটু বলেন কি এমন হলো এইটুকুর মধ্যে যে ব্যাথা এত তাড়াতাড়ি কুমে গেলো?
–আসলে কারনটা হল শিবলি।আমার ভাই,আমার বন্ধু,আমার জান।ওর মুখটা দেখলেই আমার সব ব্যাথা,কষ্ট চলে যায়।
ওনার কথায় শিবলি ভাই ও বিষম খেলেন আর উনু কেলানি হাসি দিলেন।ওনার কথার আগে মাথা কিছুই যুক্তিগত মনে হলো না।
শিবলি ভাইয়া এবারর জানতে চাইলেন আমরা এখানে কি করছিলাম উনি সব ঘটনা বললেন।শিবলি শুনে হাসতে লাগলো সাথে উনিও।আমি মুখ শুকনো করে দাড়িয়ে রইলাম।ওনারা এখনো হাসছেন আমার রাগ হয়ে গেলো।
–উফফ!!হাসি থামান।এখানে কি কমেডি মুভি চলছে যে এতো হাসছেন?
–সৌভিক থেমে যা ফুলকলি রেগে গেছে।
ওনারা হাসি থামায় কিন্তু মুখ টিপে হাসছে বুঝতে পারছি।আমি ওনাদের দিকে রাগী লুক দিলাম।
–এখানেই কি দাড়িয়ে থাকবেন নাকি যাবেন?সবাই এতোক্ষনে কি না কি ভেবেছে কি জানি!
–কেউ কিছু ভাবিনি।কেউই তেমন উঠিনি।
শিবলি ভাই একটা সুন্দর হাসি দিয়ে কথাটা বলেন।আমরা তিনজন তাবুতে ফিরে আসি।এসে দেখি সত্যিই ওতো মানুষ ওঠেনি এখনো।আমি আমার তাবুর ভিতর যায়,মীরাও এখনো ঘুমিয়ে আছে।আমি ওর পাশে বসি আর ঘটনা গুল ভাবতে থাকি।হটাত চুমুর কথাটা মনে পড়ে যায়।লজ্জা পেয়ে যায় আমি।
আজকেও অনেক ঘুরি আমরা,কিন্তু সবাই একসাথে।কারনটা হল সৌভিক ভাইয়ার পা কেটে গেছে তাই সবাই অনেকবার জিজ্ঞেস করে কিভাবে পা কাটলো কিন্তু উনি বলেছেন পড়ে গিছিলাম।
রাতের খাবার খেয়ে সবাই আজকেও আগুন জ্বালিয়ে আড্ডা দিচ্ছি,ঠিক সবাই না ৪/৫জন ঘুমিয়ে গেছে।এমন সময় একটা আপু বলে ওঠে আজ নাকি ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলবে।আমরা সবাই তো অনেক এক্সসাইটেড।কিন্তু সৌভিক ভাইর ওতোটাও রিয়াকশন নেই।এই লোকটার মাঝে মাঝে একদম নিরামিষ মনে হয়।ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলার জন্য আমরা সবাই গোল হয়ে বসি।সাদাফ ভাইয়া একটা কাচের বোতল আনে,রুম্পা আপু সেটা ঘুরিয়ে দেয় প্রথমেই বোতলের মুখ গিয়ে পড়ে টিনা আপুর দিকে।টিনা আপু ডেয়ার নেই,বেচারি ডেয়ার নিয়ে ফেসে গেছে,শিবলি ভাইয়া ওনাকে দিয়ে নিজের নামেই নিজেকে গালাগাল দিতে বলে।বেচারি টিনা আপু নিজেই নিজেকে গালি দিচ্ছে আর শিবলি ভাইয়ার দিকে রাগি চোখে তাকাচ্ছে।আমরা মুখ টিপে হাসছি।ডেয়ার শেষে টিনা আপু বলে
–তোর পালা আসুক দেখ কি করি আমি।শালা শিবলির বাচ্চা।
–হিহিহিহিহহহহহ।।দেখবানে তুই কি করিস।।হাহাহহাহহাহাহহহহহহহ….
এবার আরো তিন জন একে একে ট্রুথ ডেয়ার নেই।এরপর আসে মীরার পালা।মীরার সাহস অনেক কম তাই ও ডেয়ার নেই।কারন বড় আপু ভাইয়ারা যেকোন কিছু জানতে চাইতে পারে।অবশ্য ডেয়ার নিলেও যে বিপদ কম তা কিন্তু না।মীরা ডেয়ার নিলে শিবলি ভাইয়া বলে ওনাকে প্রোপজ করার কথা।এ কথা শুনে আমার মীরু তো হা হয়ে গেছে।
–আমি এসব পারবো না ভাইয়া।
–পারবো না বললে তো হবে না মীরা তোমাকে আমায় প্রোপজ করাই লাগবে আর যদি না করো তাহলে কিন্তু পানিশমেন্ট আছে।
মীরা বেশ কয়েকবার না বলে,অসহায়ের মতো আমার দিকে তাকাই কিন্তু আমার ও তো কিছু করার নেই।বাধ্য হয়ে ওর ডেয়ার কমপ্লিট করা লাগে।এক প্রোপজ যেয়ে ৫০০ বার ও তুতলিয়েছে,ভয়ে প্রায় কাদো কাদো হয়ে গেছে কিন্তু প্রোপজটা করেছে।
আবার বোতল ঘুরানো হলো এবার বোতলের মুখটা গিয়ে পড়লো সৌভিক ভাইর দিকে।
চলবে………
(কোন ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।আর নেক্সট নেক্সট না করে গল্পটা কেমন লাগছে সেটা জানালে বেশি খুশি হবো।ধন্যবাদ)