#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:১৪
বোতল ঘুরানো হলো এবার বোতলের মুখটা গিয়ে পড়লো সৌভিক ভাইর দিকে।ওনার দিকে বোতলের মুখ ঘুরতেই সবাই বেশ আনন্দে চিল্লিয়ে উঠলো,যতোই হোক ক্যাম্পাসের ক্রাশ বয় এর পালা এবার।উনি এতোক্ষন একদম চুপচাপ ছিলেন এবার বেশ হাসি মুখে বললেন,,
–ফেসে গেলাম যে এবার।এ রুম্পা কি করলি এটা??
–ওমনি ফেসে গেলে?তোমার ঢং যে আর কতো দেখবো বুঝি না ভাই।এবার ঢং বাদ দিয়ে কোনটা নিবি বল।
উনি খুব অসহায়ের মতো রুম্পা আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন,,
–ওকে ট্রুথ।
রুম্পা আপু তো রাজ্য জয়ের হাসি দিলেন,,
–ডু ইউ লাইক সামওয়ান?
–…………
–কি রে চুপ করে আছিস কেন?বল।সবাই জানতে চাই,আমাদের ক্রাশ বয়ের ক্রাশ কে?(সত্যিই সবাই জানতে চাই ওনার কোন পছন্দ আছে কিনা।সবাই ওনাকে জোর করতে লাগলো শুধু মাত্র শিবলি ভাইয়া চুপ করে আছে)
–আচ্ছা বাবা ওয়েট,ওয়েট।ইয়াহ,সব মানুষেরই কাউকে না কাউকে ভালো লাগেই আমারো ভালো লাগে একজনকে,ইটস ন্যাচারাল।(খুবি লজ্জার ভংগিমায় বলেন উনি)
ওনার কথাই সবাই হৈচৈ করে,হাতি তালি দেয় তখনি সাদাফ ভাইয়া বলে,নামটাও বলে দে সৌভিক।উনি বিষম খাই।শিবলি ভাইয়া হেসে দেয়,
–সাদাফ,আমাদের ক্রাশ বয়ের এতোটাও সাহস নেই যে নাম বলবে।হাহাহাহহহহহ…
–আমার সাহস নিয়ে কথা যতো কম বলবে ততোই ভালো।বুঝলে মনু?
–হুম,থাক ভাই,অফ যাও আমার মুখ খুলাইয়ো না।
উনি কাশতে কাশতে,,
–খেলা কন্টিনিউ কর রে ভাই।
–তা তো করবোই তার আগে ক্রাশ এর নাম কউ।
–কেন?এটা তো প্রশ্ন ছিল না।কাউকে ভালো লাগে কিনা জাস্ট সেটা জানতে চাইছিস তো।
তখনি থার্ড ইয়ারের উর্মি বলে ওঠে,ভাইয়া নামটা বলে দেন না প্লিইইইইইইইইজ।উর্মির কথায় সবাই হেসে দিলো কিন্তু উর্মি গায়ে মাখলো না।কিন্তু সৌভিক ভাই কেন জানি না উর্মির সাথে তাল দিলো।
–না বললেই কি নয় উর্মি?
–না না না না….প্লিজ ভাইয়া প্লিইইইইজ।
–যদি বলি তুমি?
উর্মির তো খুশিতে চোখ ছল ছল করছে,আমি মীরা তো অবাক হয়েছি কিন্তু সৌভিক ভাইর ফ্রেন্ডরা সব হাসছে মুখ টিপে।
–সত্যি ভাইয়া???
–হ্যা ৩ সত্যি।
–ও মাই গড,ও মাই গড।আই কান্ট বিলিভ দিস যে আমি আপনার ক্রাশ।ভাইয়া আপনি আগে কেন বলেননি।আমি যদি আগে জানতাম আমি আপনার ক্রাশ।আমার তো গায়ের লোম কাটা দিয়ে উঠছে,আমি নাকি ক্যাম্পাসের ক্রাশ বয়ের ক্রাশ।অঅঅ,আই এম সো লাকি।
শিবলি ভাইয়া এবার জোরে জোরে হেসে বলে,,
–উর্মি কুল কুল।এতোটা এক্সসাইটেড হয়ে কাজ নেই।সৌভিক মজা করছে,হাহাহহাহাহহহহহ…
–কি?উনি মজা করবে কেন?সৌভিক ভাইয়া আপনি কি মজা করে বলেছেন??(ঢং করে কথাটা বলে উর্মি)
সৌভিক ভাই চুপ থাকে।সবাই চুপ হটাত উনি বলে ওঠেন,,
প্রিয়তমা যে তাকে বর্ণনা করা কি এতোই সহজ?সে তো থাকে মনের আড়ালে,তাকে ছুতে ইচ্ছা করে এই দুটি হাত বাড়ালে।
উনি চোখ বন্ধ করেন,তারপর বলেন..
বৃষ্টি লিখবো বলে, কাব্য-কৌতূহলে, শব্দ খুঁজি,
অথচ দু চোখ জানে, কী ভীষণ অভিমানে,
বৃষ্টি বলতে আমি তোমাকেই বুঝি!
সে এসে বসুক পাশে, যেভাবে অসুখ আসে,
তারপর হয়ে যাক যন্ত্রণা অনায়াসে।
তবুও আসুক সে,
জানুক, প্রিয়তম অসুখ সে।
হটাত করে ওনার ছন্দ বলায় সবাই তো অবাক।উনি ছন্দটা শেষ করেই আমার দিকে একবার আড়চোখে তাকান।সবাই এবার অনেক জোরে জোরে হাততালি দেই,সবাই বলাবলি করে উনি যে এতো সুন্দর ছন্দ জানে তা তো কেউই জানতো না।উনি মুচকি মুচকি হাসছেন আর আমার দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছেন,ওনার চোখে কেন জানি না আজ আমি কেমন লজ্জা দেখতে পাচ্ছি।ছেলেরাও যে এভাবে লজ্জা পাই তা আমার জানা ছিলো না।ওইদিন অনেক রাত পর্যন্ত আমরা আড্ডা দিলাম।সৌভিক ভাইর দিকে কেন জানি না বার বার চোখ চলে গেছে,ওনার সাথে চোখাচোখি হলেই উনি মেয়েদের মতো লজ্জা পেয়ে যাচ্ছেন।ব্যাপার টা আমার কেমন যেন লাগলো।
পরেরদিন সকালে আমরা বাসায় ফিরে আসি।তারপর কেটে যায় দুইদিন,ভার্সিটি যায়নি।রুমে সুয়ে সুয়ে শাওনের সাথে কথা বলছি,ট্যুরে যেয়ে ওর সাথে কথা বলাই হয়নি।ওর সাথে ম্যাসিজিং করছি মা রুমে এলো,,
–সারাদিন ওই ফোন নিয়েই পড়ে থাকো তুমি,আল্লাহর নাম নিয়ে বাড়ির কুটোটি তো কাটো না কিন্তু তাই বলে নিচে এসে সবার সাথে কি একটু বসাও যায় না।
আমি মায়ের কথা কানে নিলাম না।ফোন টিপেই যাচ্ছি।মা আরো কিছুক্ষন বকবক করলো,আমি এখনো ফোন টিপছি।আমার ভোলাভালা,চুপচাপ,নরম-শরম আম্মাজান এবার অনেক রেগে আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো।মা জাতির এই স্বভাবটা কেন জানি না আমার বেশ হাস্যকর লাগে,হুট করেই ছেলেমেয়ের ওপর রাগ করা এটা তাদের একটা অন্যতম গুন।আমার মা এমনিতে তেমন রাগে না কিন্তু যখন রেগে যায় আমার কেন জানি না মার মুখ দেখে খুবি হাসি পাই।এবারো আমি প্রতিবারের মতো হেসে ফেলেছি।আমার এই হাসি মায়ের কাছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো।
–তুই একটা ফাজিল,বেয়াদব মেয়ে।কোন ভদ্রতা শেখোনি।আমাদেরই ব্যার্থতা,আমিই খারাপ।
কথা বলতে বলতে মা কেদেই দিলো,আমার মা প্রতিবার এমন করে।বকা দিতে দিতে নিজেরে খারাপ বলে কান্নাকাটি শুরু করে।আমরা তিন ভাই বোন অভ্যস্ত এর সাথে।মা আমার ফোন নিয়েই চলে গেলো।আমি উপুড় হয়ে শুলাম কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না।
বিকালে আপুর ডাকে ঘুম ভাংলো,
–নিহী ওঠ ওঠ,এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস??
ওর ক্যারক্যারানি শুনে মেজাজ টাই গরম হয়ে গেল,,
–কি রে ফুফুর মতো তুই ভাঙা রেডিওর গান শুরু করলি কেন?
–কি আমি ভাঙা রেডিওর গান শুরু করলাম??
–হ্যা তাই করলি,এখন কি বলতে এসেছিস বল।
–তুই না একটা আস্ত শয়তানি,বলবোই না যা কি বলতে চেয়েছিলাম।
ও রাগ করে চলে গেলো,আমি ঘুরে সুলাম কিন্তু ঘুম আসলো না।উঠে বসলাম,কিছুক্ষন বসে থেকে ঘড়ির দিকে তাকালাম।হাই আল্লাহ!!বিকাল ৪ টা বেজে গেছে???আমি তো ঘুমিয়েছি সকাল ১১ টার দিকে,আমাকে কেউ একবার ডাকলোও না,দুপুরে খেতেও ডাকলো না!!একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিলাম তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে বের হলাম।চুলে টাওয়াল পেচিয়ে নিচে গেলাম দেখি সবাই সোফায় বসে কোন একটা ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করছে।আমাকে দেখে সবাই একবার তাকালো তারপর আবার নিজেদের মতো কথা শুরু করলো।আমি বেশ অবাক হলাম,খারাপও লাগলো।সেই সকালে একটা ব্রেডজ্যাম খেয়েছি তারপর আর কিচ্ছু খাইনি,রুম থেকেও বের হয়নি কেউ আমার সাথে কথাও বললো না।ডাইনিং এ গেলাম দেখি আমার খাবার ঢাকা আছে কিন্তু খেলাম না,সবার ওপর অভিমান হয়েছে এখন কেন কথা বললো না তারা?আমি কিচেন থেকে একটা চিপসের প্যাকেট নিয়ে চিপস খেতে খেতে সবার পাশদিয়ে চলে যাচ্ছিলাম,দাদি ডাক দিলো।
–নিহী বুবু এখনো ঘুমাচ্ছিলি কেন?তোর আব্বা,আম্মা বোন গিয়ে ডাইকা আসলো উঠলি না।
আমি তো দাদির কথাই হা।দাদি বলে কি?আমাকে সবাই ডাকতে গিছিলো।ধুর!!আমি ভুল বুঝলাম।রাগ করে খাবারটাও খেলাম না।মন চাচ্ছে নিজের চুল নিজেই ছিড়ি।
–কি রে বুবু কথা বলছিস না কেন??
–হুম দাদি।
–আচ্ছা শোন যা গুছায় নে তোরা তো আর একটুপর তোর হবু দুলাভাইর বাড়ি যাবি।তারা তো তোদের রাতে দাওয়াত দিয়েছে।
–মানে?
–আমরা আজ সৌরভদের বাড়ি যাবো(পিছন থেকে ভাইয়া বলে ওঠে)
–ভাইয়া তুমি কখন এলে?
–ঘন্টাখানিক মতো হলো।যা যা আর কথা বলিস না সবাই রেডি হয়ে গেছে তুই বাকি আগে যা রেডি হয়ে নে।
–ওকে
মনে মনে একদম ইচ্ছা করছে ন যেতে।সত্যি কথা বলতে আমি ওনার ফ্যামিলির কাউকে চিনি না,ফ্যামিলি তো পরের কথা আমি ওনাকেউ তেমন চিনি না।মানে কথা হয়নি বেশি আমাদের।বাবা ভাইয়া সবাই যাচ্ছে তাই আমি নাও বলতে পারবো না।রুমে এসে রেডি হয়ে নিলাম।রেড আর হোয়াইট কম্বিনিশনে একটা থ্রীপিস,রেড হিজাব আর চোখে হালকা কাজল দিয়ে আমি রেডি।নিচে এসে শুনি দাদি আর মা যাবে না।তাদের অনেক বার বললাম তারা গেলো না।আর হবু শশুর বাড়ি যাওয়া কেমন দেখায় তাই আপুও যাবে না।আমি এবার মাকে বললাম,,
–মা তোমরা কেউ যাচ্ছো না।আমিও যাবো না।
–না মা এসব কথা বললে হয় না।তুই নিলুর ছোট বোন তুই যদি না যাস কেমন দেখাবে বল তো?আর তুই তো এসবে আগে আগে থাকবি।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।ভাইয়া এসে আমাকে টেনে নিয়ে গেলো।হবু দুলাভাইদের বাড়িটা বেশ বড়।বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম সৌরভ ভাইয়া,ওনার মা-বাবা,দাদা আমাদের আপ্যায়ন করে নিলেন।আমরা সোফায় বসলাম।হটাত আমার নজর দেয়ালে থাকা বড় ছবির ফ্রেমটার দিকে গেলো।ছবিটা দেখে বেশ পুরাতন মনে হল।তিনটা ছেলে দাড়িয়ে আছে ছবিটাই।একজনের বয়স আনুমানিক ১৪-১৫,আরেকজনের ১০-১২ আর একজনের ৫-৬ হবে।১০-১২ বছরি ছেলেটাকে দেখে খুব চেনা লাগল কোথায় যে দেখেছি খেয়াল হলো না।তবে আমি ছেলেটার ছবি এর আগেও দেখেছি।
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে সৌরভ ভাইয়ার দাদা জিজ্ঞেস করলেন,
–ওভাবে কি দেখছো দিদুন?
–না না তেমন কিছু না।ছবিটা দেখছিলাম।
–ওহ ওটা।ওই যে বড় মতো দেখছো ওটা তোমার দুলাভাই সৌরভ,তার থেকে আরেকটু ছোটটা হলো আমার মেজ নাতি আর একদম ছোটটা আমার ছোট নাতি শাওন।
ওনার মুখে শাওন নামটা শুনে আমার ক্যাম্পাসের শাওনের কথা মনে পড়ে গেল।কিন্তু ও তো এটা না।এটা তো অন্য শাওন।সবাই কথা বলছে,সৌরভ ভাইয়ার মা তো আমাকে এটা সেটা খাওয়াতে ব্যাস্ত হটাত ওনাকে কেউ ডাক দেয়,
–বড়োমা আমার মোবাইলের চার্জারটা কই?
ছেলেটার গলা খুব চেনা,আমি তার দিকে তাকাতেই শকড খাই,এটা তো শাওন।তার মানে ও সৌরভ ভাইয়ার ভাই কিন্তু আমাকে আগে কেন বলিনি?ও মোবাইল টেপাই ব্যস্ত থাকাই আমাকে খেয়াল করিনি।
আমি ওরে ডাক দিই,,
–শাওন তুমি?
ও আমার দিকে তাকিয়েই যেন ফ্রিজড হয়ে যায়।
চলবে…….
(কোন ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।আর নেক্সট নেক্সট না করে গল্পটা কেমন লাগছে সেটা জানালে বেশি খুশি হবো।ধন্যবাদ)