#প্রেম_পাগলামি
#পর্ব:০২
#নিহীন_রুবাইয়াত
সৌভিক ভাইরে দেখে আমার বেশ ভয় লাগছে এখন,যদিও আমি নিজেকে খুব সাহসি বলে দাবী করি কিন্তু মনে মনে ঠিকই জানি আমার দৌড় কতো দূর।এদিকে মীরার অবস্থা যায় যায়।বেচারি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আমার পিছনে।
–শিবলি ক্যান্টিনে সবাই কই?
–বের করে দিয়েছি সৌভিক
–তোকে কে বলেছে বের করতে?এতো বেশি বুঝিস কেন?যা ডেকে নিয়ে আয়,ছোট্ট সোনামণিরা একা একা ভয় পাচ্ছেতো।ভাবছে আমরা বোধ হয় ওদের খেয়েই ফেলবো।
(কথাটা শেষ করেই ডেভিল হাসি দিলো,ওনাকে দেখে মনেই হচ্ছে না উনি একটু আগেও ওতোটা রেগে ছিলেন)
–সৌভিক তুই কি চাচ্ছিস বল তো?(জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তে শিবলি নামের ছেলেটি জানতে চাই)
সৌভিক কি যেন ইশারা করে,শিবলি একটা বাকা হাসি দেয়।শিবলি দুইটা ছেলেকে আবার ইশারা করে।তারা যত দ্রুত না ক্যান্টিন থেকে বের হয়েছিলো তার থেকে দ্রুম ক্যন্টিনে লোক আসলো,যারা আগে ছিলো তারা তো এসেছেই সাথে আরো অনেকেই।ক্যান্টিন পুরো গিজ গিজ করছে।
আমরা আগে যে টেবিলে বসে ছিলাম সৌভিক এসে সেই টেবিলের একটা চেয়ার টেনে বসলো।শিবলিও তার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলো।
–সৌভিক বড্ড ক্ষুধা পেয়েছে রে ভাই(পেটে হাত দিয়ে শিবলি কথাটা বলে)
–তোর ক্ষুধা পেয়েছে?আগে বলিসনি কেন??এই রকি এক প্লেট চাওমিন দে তো,,তাড়াতাড়ি।
একটা ছোট রোগাপাতলা ছেলে জী ভাই বলে দৌড় দিলো।ছেলেটা হয়তো ক্যান্টিনে কাজ করে।মিনিট দুয়েকের মধ্যেই রকি নামের ছেলেটা এক প্লেট চাওমিন নিয়ে হাজির হলো।টেবিলের ওপর থাকা পানির জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে যায় রকি।কিন্তু শিবলি ইশারা করে ওকে চলে যেতে বলে।রকিও চলে যায়।প্লেটটা হাতে নিয়ে শিবলি এক চামচ নিজের মুখে নিতে যেয়ে থেমে যায়।আমাদের দিকে তাকাই।
|
–সৌভিক দেখ ফুলকলি আর পুচকিটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওরা ওভাবে তাকিয়ে থাকলে খাবো কি করে?
শিবলি ভাইয়ার কথা শুনে সৌভিক ভাই আমাদের দিকে তাকাই,একটা ডেভিল হাসি দিয়ে বলে,
–সেটাই তো রে।।তোর তো পেট খারাপ করবে এইভাবে তোর খাবারে নজর দিলে…
–ও মাই গড!!সিরিয়াসলি ম্যান..
প্লেটটা টেবিলে রেখে দেই।
–এই মেয়ে এদিকে এসো..
(মীরা পিছন থেকে যেতে চাই আমি ওর হাত ধরে চোখ গরম দিই,ইশারায় বুঝালাম যে আমরা যাবো না)
–কি হলো আসো..কথা কানে যায় না??(শিবলি ভাইর ধমকে মীরা আমার হাত সরিয়ে ছুটে গেলো ওনাদের সামনে)
–নাম কি??
–জি?
–কি নাম? জি!!এ সৌভিক এ কেমন নাম রে?জি…কারোর নাম যে জি হয় জানা ছিল না।হাহাহাহাহাহহাহাহহাহাহাহহা..
–না না ভাইয়া,আমার নাম জি না।আমার নাম মী মী মীরা..
–ওহ তোমার নাম মী মী মীরা…সুন্দর নাম..তা ফুলকলি তোমার নাম কি?(শিবলি ভাইয়া আমার দিকে তাকাই)
আমি কোন কথা বলি না।
–এ্যটিটিউড??(সৌভিক বাকা হাসি দেয়)
–না না ভাইয়া।আসলে ওর রাগটা একটু বেশি তাই আর কি বাট ও ওনেক ভালো মেয়ে আর ওর নাম তো…
–এই মেয়ে তোমাকে বলতে বলা হয়েছে??(শিবলি ভাইয়া টেবিলে জোরে এক থাবা দেয়।মীরা লাফিয়ে ওঠে)
শর্ট টপস পরা মেয়েটি আমাকে উদ্দেশ্য করে ওনাদের কাছে ডাক দেই।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ওখানেই দাড়িয়ে থাকি।এরপর সৌভিক ভাই আমার কাছে চলে আসে।ওনার চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে ঠিক আগের মতো,মনে মনে একটু ভয় পেয়ে গেলাম।সাহস হলো না আর দাড়িয়ে থাকার।
যে টেবিলে বসে ছিলাম ওখানে গিয়ে বসলাম।
–নাম কি?
–…………
–চুপ করে আছো যে তাহলে কি সত্যিই তোমার নাম ফুলকলি?(শিবলিসহ সবাই হাসলো)
–নাম যায় হোক আমার বাইকের টায়ার পাঞ্চার করেছো কেন??(সৌভিক ভাই পাশের চেয়ারটাই বসতে বসতে বলে)
–…………..
–তখন তো অনেক বাবার টাকার ফুটানি করছিলে এখন চুপ কেন?
(আড়চোখে একবার ওনার দিকে তাকালাম)
–আমি কিছু করিনি..
–ডোন্ট টেল মি লাই..(খুবই শান্তভাবে বললেন উনি)
–আমি মিথ্যা বলছি না..
–তাহলে চোরের মতো নজর লুকাচ্ছো কেন?
–আমি সত্যি বলছি…
উনি হাতের মুঠি শক্ত করে টেবিলে ঘুষি মারেন,আমি নড়ে উঠি কিন্তু আবার নরমাল হওয়ার ভান করি।
–তুমি অন্যায় করেছো তার শাস্তি তোমাকে পেতে হবে..এই চাওমিন টা খাও…(শিবলি ভাই বলে ওঠে)
–ওয়েট শিবলি,,ও তো এটা খাবেই বাট স্পেশাল চাওমিন খাবে..
–মানে?
–রকি শুকনা মরিচের গুড়াটা নিয়ায় তো…
রকির আনার শুকনা মরিচের কৌটাটা থেকে উনি পুরোটা চাওমিনের সাথে মিস্কড করে দেন।আমার তো ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।কারন আমি একদমই ঝাল খেতে পারিনা।
–খাও..
–আমি খাবো না…
–খেতে বলেছি খাও..
–দেখুন বাড়াবাড়ি করবেন না,আপনারা আমাদের ওপর টরচার করছেন,র্যাগিং ও বলা যায় আমি কিন্তু ভি.সি কে জানাবো
আমার কথা শুনে উনি প্রচন্ড বাজে ভাবে হাসে,বাংলা সিনেমার ভিলেন ও হয়তো এমন করে হাসে না।আমি এখনো কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব নিয়ে বসে আছি,এই মুহুর্তে মীরা হয়তো ভয়ে কুপোকাত হয়ে গেছে,ওর দিকে ভুলেও তাকাবো না তাহলে আমিও নিজেকে আর সামলাতে পারবো না।এসব ভাবতে ভাবতে ওনার হাসি বন্ধ হয়ে গেলো।উনি চেয়ার থেকে উঠে আমার হাত ধরে একটান দিলেন।আমি ওনার বুকের সাথে মিশে গেলাম যেন।উনার চোখের দিকে তাকাতেই বুকের মধ্যে কেঁপে উঠলো।আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারলাম না।ওনার গরম নিশ্বাস আমার চোখেমুখে পড়ছে আর আমার বুকের মধ্যে ধড়ফড়ানি বেড়ে যাচ্ছে।আশেপাশে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে,অনেকে ফিসফাস করছে।আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে…
–ছাড়ুন আমাকে তা না হলে কিন্তু আমি ভি সি স্যারকে বলবো..
আমার কথা শোনা মাত্র উনি আমাকে আর এক থাপ্পড় দিয়ে বসেন আমি গিয়ে পড়ি টেবিলটার ওপর।একিদিনে ৩ থাপ্পড়..আমার মেজাজ গরম হয়ে গেলো টেবিলে থাকা চাওমিনের প্লেটটা নিয়ে ওনার গায়ে ছুড়ে মারি,এটাই ছিলো হয়তো আমার জীবনের আর একটা বড় ভুল..
–হাউ ডেয়ার ইউ??সৌভিক তুই ঠিক আছিস তো??
শিবলি ভাইয়ার কথাই উনি কোন উত্তর দিলেন না।ওনার শার্টে পুরো চাওমিন লেপ্টে আছে আর নজর সে তো শকুনের মতো।উনি একবার শিবলি ভাইয়ার দিকে একবার তাকালেন তারপর আমার কাছে এসেই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা শুরু করলেন।উনি কাজটা এতো দ্রুম করেছেন যে বুঝার জন্য আমার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো…
–কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়,ছাড়ুন।
–খুব শখ না ভি সি কে বলার,চলো ভিসির কাছে নিয়ে যাচ্ছি।
আমার লাফালাফিতেও কোন কাজ হলো না।উনি হেটেয় যাচ্ছেন পিছু পিছু ক্যাম্পাসের সবাই আসছে।এরপর যা হলো আমি কল্পনা করতেও ভয় পায়।ক্যাম্পাসের ভিতরে যে ছোট্ট পুকুর টা আছে উনি আমাকে ছুড়ে ফেলে দেয়।পুকুরের ভিতর পড়া মাত্রই আমি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছি,,শুধু এটুকু শুনতে পারছি কেউ একজন নিহু নিহু বলে জোরে জোরে চিল্লাচ্ছে।
–আরে ভাই কি করলেন ও সাতার জানে না তো,ও তো মারা যাবে।
–কি?ও সাতার জানে না?
–না..(কাঁদতে কাঁদতে মীরা বলে)
–সৌভিক ও সাতা….(শিবলি কথা শেষ করার আগেই সৌভিক পুকুরে ঝাপ দেয়)
আমাকে তুলে এনে বসায়।আমি কিছুক্ষন কাশলাম,এই শীতে পুকুরের পানিতে হাবুডুবু খেয়ে কাঁপছি আমি। নিজেকে একটু সামলিয়ে,,,
–আপনি কি মানুষ?? আপনি একটা জানোয়ার..তার থেকেও খারাপ আপনি…(আমি এবার কেঁদেই দিয়েছি)
উনি খুব রাগি মুড নিয়ে আমাকে উঠিয়ে দাড় করান,কিছু বলতে যান কিন্তু আমার ভেজা শরীরের দিকে ওনার নজর যেতেই চোখ নামিয়ে ফেলেন।উনি চলে যান।ওনার গ্যাং এর সবাই চলে যায়….
আমি কেঁদেই চলেছি,মীরা আমাকে সামলাতে ব্যস্ত,,ঠিক সেই সময় ই একটা ছেলে আসে,,বয়স ১২-১৩ হবে…
–আপা এই জ্যাকেটটা পরে নেন…
পিচ্চিটার কথাই আমি,মীরা তাকাই।সে আবার আমাকে ওটা পরে নিতে বলে।আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
–আপা ভেজা শরীরে আর থাইকেন লোকে নজর দিচ্ছে ভাই কইছে..
আমি নিজের দিকে তাকাই আসলেই তো আমার শরীর তো ভিজে গেছে পুরো,শরীরের অনেক অংশ বোঝা যাচ্ছে।গায়ের চাদর টাও হারিয়ে গেছে পুকুরে,মাথায় পরা হিজাব টা দিয়ে গা ঢাকতে চাইলাম কিন্তু হলো না,আজকে যে হিজাব টা পরে এসেছি তা তুলনামুলক অনেক ছোট…মীরা তাড়াতাড়ি ছেলেটার হাত থেকে জ্যাকেট টা নিয়ে আমার গায়ে জড়িয়ে দিলো….
বাসায় ঢুকবো কিন্তু ভয় লাগছে,এইভাবে ভিজে আছি,কেউ দেখলে হাজারটা প্রশ্ন করবে।বিশেষ করে আমার বড় বোন নিলুফা আপু আর আমার ফুফু।আমার ফুফু সুযোগ পেলেই তো আমার পিছনে লাগে।সবার চোখ এড়িয়ে ভিতরে ঢুকতে পেরে একটু চিন্তা মুক্ত হলাম।ঘরের দরজা লক করেই ওয়াশরুমে গেলাম।আমার যখনই রাগ হয় আমি পানির কল চালু করে দিয়ে তার নিচে বসে থাকি আজও তাই করলাম।খুব খারাপ লাগছে আর রাগও হচ্ছে।মানুষ এতো টা খারাপ হতে পারে আমার জানা ছিলো না।দেড় ঘন্টা পর বের হলাম,ওয়ারড্রব থেকে লম্বা টুপিওয়ালা হুডিটা বের করে পরে নিলাম,কারন মুখে ওই বজ্জাতটার আঙুলের ছাপ স্পষ্ট।নিচে গেলাম বেশ পরে। এসেই রুমে গেলাম আবার এতো পরে কেন বের হলাম নিলু আপা মা অনেক প্রশ্ন করলো কোনরকম মিথ্যা উত্তর দিয়েছি।গাড়ির কথা বাবা কয়েকবার শুনলো কিন্তু ড্রাইভার কাকা সামলে নিলো।
ওইদিন রাতে ঘুম আসলো না,সকালের সব ঘটনা মনে পড়ছে।সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাংলো।ভার্সিটিতে যেতে ইচ্ছা করছে না একদম তাও যাওয়া লাগলো।গাড়িতে বসে জানালাটা নামিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি কাল সবার সামনে আমি মান সম্মান খুইয়েছি সবাই তো আজ আমাকে নিয়ে মজা করবে।এসব ভাবতে ভবতেই পৌছে গেলাম।কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার কেউ আমাকে নিয়ে হাসলো,কালকের অনেকেই আমার পাশ দিয়ে চলে গেলো কিন্তু এমন একটা ভাব নিলো যে আমকে চেনেই না।মনে মনে একটু খুশি হলাম।রিলাক্স মুডেই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছি উদ্দেশ্য মীরাকে খুজা,এসে ধরে ওরে দেখেনি।
–ওমা গো পড়ে গেলাম গো..(কথাটা বলেই চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেলেছি। কোন দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলাম মনে হলো,কিন্তু সিড়ির মাঝে দেয়াল আসবে কি করে?আর ধাক্কা খেয়ে পড়লাম না কেন?ধিরে ধিরে চোখ খুললাম)
–আপনি??(সামনে ওই বজ্জাত খাটাস দাড়িয়ে।শুধু দাড়িয়েই না আমার কোমর জড়িয়ে ধরেছে।উনি ধরে আছে বলেই নিচে পড়িনি।আমি একবার নিচের দিকে তাকালাম,ভাগ্যিস উনি ধরেছেন তা না হলে আজ হাত পা কিছু একটা সিউর ভাংতো।কথাটা ভেবেই স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম কিন্তু ওনার মুখের দিকে আবার তাকেই প্রচন্ড রাগ হয়ে গেলো,ওনার হাত আমার কোমরে দেখে আরো রাগ উঠে গেলো,দিলাম এক থাপ্পড় বসিয়ে।উনি যেন হতভম্ব হয়ে গেলেন।)
–ছাড়ুন আমাকে..(ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম,ওনার চোখ কালকের মতো লাল হয়ে গেছে,মুখটাও লাল হয়ে গেলো,আমি তো ভয় পেয়েয়ে গেলাম,মনে মনে নিজেকে গালি দিতে লাগলাম আবার সেই একই বোকামির জন্য।)
উনি খুব রেগে হাত তুললেন,আমি ভয়ে গালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছি।বেশকিছুক্ষন হয়ে গেল কিন্তু উনি মারলেন না।আমি তাকালাম..
–কি আজব?বজ্জাত টা কয় গেলো?(আশেপাশে তাকালাম কিন্তু না উনি নেই তো)
–ভালোই হয়েছে চলে গেছে,,বজ্জাত খাটাস কোথাকার…
তিন তলার ওয়াশরুমে মীরাকে দেখে কিছুক্ষন ওরে মারলাম তারপর দুজন ক্লাসে গেলাম।
চলবে……
(বানানে ভুল থাকলে ক্ষমা করবেন,যে কোন ভূলত্রটিই ক্ষমা করবেন।আর গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন।ধন্যবাদ)