প্রেম_পাগলামি
#পর্ব:৮
#নিহীন_রুবাইয়াত
–নিহীন শোন…..
আমি ওনার দিকে তাকালাম।
–কিছু বলবেন??
–না মানে তুমি তো আমাকে থ্যাঙ্কস বলতে আসছিলে তাই না?
–হ্যা তো
–দেন ডু মি ফেভার।ধরে নাও তোমার ওয়েলকাম গিফট।(কথাটা শেষ করেই উনি এক চোখ টিপ মারে আমি একটু বিষম খাই)
–কিকি কি করতে হবে?
–চলো বলছি
–…………
–কি হলো?ফলো মি…..
কই যে নিয়ে যাচ্ছে আল্লাহই জানে!এই লোক তো আবার একটু উল্টা।আজ আবার অপমান না করে।
ওনার পিছু পিছু হাটছি উনি আমাকে লাইব্রেরিতে নিয়ে এলেন,লাইব্রেরিতে ২/৩ জন ছাড়া কেউ নেই।
–এখানে কেন নিয়ে এলেন?
–রোমান্স করতে..
–কি?
–ওহ হ্যালো আমার এতোটাও খারাপ দিন আসিনি তোমার মতো পিচ্চির সাথে……যাই হোক বসো এখানে আসছি আমি।
উনি বুক সেল্ফের দিকে গেলো।আর আমি ভাবছি ওনার লাস্ট কথা।আমি নাকি পিচ্চি?হাহ!!আমি ২০+,আমাকে কি দেখে পিচ্চি বলে।
–কি ভাবছো এতো?
–কিছু না।
–আচ্ছা,এই নাও আমার এই প্রেজেন্টেশনটা করে দাও এটাই হবে তোমার থ্যাঙ্কস রিটান গিফট।
–কি?আমি প্রেজেন্টেশন করে দেবো?
–হুম তুমি
–আপনি কি মজা করছেন?আমি পড়ি অনার্স সেকেন্ড ইয়ার আর আপনি মাস্টার্সে তাও আবার আলাদা ফ্যাকাল্টি।
–আলাদা ফ্যাকাল্টি নাকি তুমি?
–হুম জানেন না বুঝি?
উনি ভ্রু কুচকে তাকান আমার দিকে।আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম এভাবে তাকিয়ে আছে কেন..
–তুমি কি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট?
–মানে?
–আরে বলোতো
–না।আমি প্রেসিডেন্ট হব কেন?
–তাহলে কি কোন সেলিব্রেটি?
–কি সব বলছেন?
–ওহ তাও না।তাহলে বাংলাদেশের শীর্ষধনীর মেয়ে?
–পাগল হয়ে গেলেন কি যা তা বলছেন
–এসব কোনটাই যখন না তখন আমি কিভাবে জানবো তুমি কোন ফ্যাকাল্টির।মানুষ তো এনাদেরি খোজ রাখে।যতসব আজাইরা কথা।তুমি কে হ্যা যে তুমি কোন ফ্যাকাল্টির তা মানুষের জানা লাগবে?
ওনার কথাগুলো শুনে খুব রাগ হলো।কিন্তু ঝামেলা বাধাতে চাই না বলে চুপ থাকলাম।
–আমি পারবো না প্রেজেন্টশন করে দিতে।
–তুমি পারবা তোমার ঘাড় পারবে।এই নাও নোটস দেখে দেখে কপি করো।এক ঘন্টাই শেষ করবা কাল আমাকে এটা জমা দিতে হবে।
আমি রাগ হলেও,রাগে রাগে নোটস গুলো নিয়ে কপি করা শুরু করলাম।আমি বিবিএ পড়ি আর আমাকে দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রেজেন্টেশন করাচ্ছে।শয়তান ব্যাটা।আমি লিখেই যাচ্ছি আর উনি একটা চেয়ারে বসে আরেক্টার ওপর পা তুলে পা নাচাচ্ছে আর মোবাইন টিপছে।
–আচ্ছা একটা কথা বলবো?যদি কিছু মনে না করেন তো।
উনি মোবাইলের থেকে চোখটা একবার আমার দিকে দিলেন তারপর আবার মোবাইলে চোখ দিয়ে বললেন,
–বলো
–না মানে আপনি নাকি ভার্সিটির টপার,আপনার সিজিপিএ নাকি অনেক বেশি তা আপনি নিজের প্রেজেন্টশন অন্যকে দিয়ে করাচ্ছেন কেন?আপনি নিজের কাজ এভাবেই মানুষকে দিয়ে করিয়ে ভালো রেজাল্ট করেছেন?
উনি আবারো ভ্রু কুচকে তাকান।আমি তো নিজেকেই গালি দিচ্ছি কি বলে ফেললাম এটা।এবার উনি আবার আমাকে মারবে।কথাটা ভেবেই আমি গালে হাত দিয়ে বসে থাকলাম।
–গালে হাত দিয়ে বসে আছো কেন?নিজের কাজ করো
–জি জি…..
আমি লেখাই মন দিলাম বলেছিলো এক ঘন্টাই শেষ করতে কিন্তু যে লেখা টানা ২ ঘন্টা টাইম লাগলো আমার।এর মাঝে ওনার সাথে দুএকবার চোখাচোখি হয়েছে।
–লেখা শেষ।
আমি হাসি মুখে ওনার দিকে খাতাটা দিই।উনি খাতা টা চেক করে কোন কথা না বলেই চলে যাই।
–আজব মানুষ একটা থ্যাঙ্কস ও দিলো না।অসভ্য কোথাকার।
আমি ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে মীরাকে খুজছি।আজ তার সাথে আমার দেখাই হয়নি।মীরাকে পেলাম না শাওনকে পেলাম।শাওন বললো মীরা নাকি আমাকে খুজছিলো কল ও দেছে কয়েকবার।কিন্তু আমার ফোনে তো কোন কল আসিনি।আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখি ২৬ টা মিসডকল।ইশ ফোনটা সাইলেন্ট ছিলো তাই বুঝিইনি।ধুর….আমি মীরাকে কল ব্যাক করে সরি বললাম।শাওন থাকাই সৌভিকের কথাটা আর বললাম।বাসায় চলে আসলাম।
রাতে শাওন নক দিলো…
–কি করো?
–সুয়ে আছি।
–খাইছো?
–হুম
–মন খারাপ।
–না তো
–তাহলে এতো চুপচাপ কেন?
–এমনিই।
–আচ্ছা যদি কোনদিন জানতে পারো আমি আমি না তখন কি করবে?
–মানে?
–এই ধরো তুমি যারে ভেবে কথা বলছো আমি সে না অন্য কেউউ
–কি যা তা বলছো?তুমি অন্য কেউ হতে যাবে কেন?
–হতেও তো পারি।
–ইয়ারকি মেরো না তো এখন
–আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।রাত হয়েছে ঘুমাও।
শাওন কল কেটে দেই।আমি এই ছেলেটারে একদম বুঝি না।সামনে তো খুব ফ্রেন্ডলি কথা বলে কিন্তু ম্যাসেজিং এর সময় এমন করে কেন?ভয়েস কলেও কথা বলে না।ধুর ছেলেরা এতো কনফিউজিং কেন?একদিকে শাওন আর একদিকে ওই অসভ্যটা।কোল বালিশ নিয়ে ঘুরে সুয়ে থাকলাম।
সকালে ভার্সিটির জন্য একেবারে রেডি হয়ে বের হচ্ছি,মা ডাক দিলো
–নিহীন আজ তোর ভার্সিটিতে যেতে হবে না।
–কেন?
–আজ বাড়িতে মেহমান আসবে।
–মেহমান!!কারা?আর মেহমানের সাথে আমার ভার্সিটি না যাওয়ার কি সম্পর্ক মা?
–আরে যে সে মেহমান না রে নিহী তোর বোনের হবু শশুরবাড়ির লোক আসবে বিয়ার কথা কইতে। বলতে(দাদী খুশিতে বলে ওঠে)
–হুয়াট?রিয়েলি দাদি?ওয়াওওওওও ম্যান,ফাইনালি সৌরভ ভাইর ফ্যামিলি আসছে তাহলে।
–হ্যা পোলা চাকরি পাইছে বিয়া তো করবোই আর নিলুর ও তো বয়স হচ্ছে।যা যা তুই ঘরে ব্যাগ রেখে আই আমাদের সাহায্য কর।আর শোন মীরাকেও বল চলে আইতে।
–ওক্কে দাদি।
আমি আনন্দে ঘরে চলে আসি।মীরাকে কল দিয়ে সব বলি ওউ তো অনেক খুশি।ওউ আর ভার্সিটিতে যাই না আমার বাড়ি আসার জন্য রওনা দেই।আমি আপুর রুমে যায়।ভিতরে না ঢুকেই দরজাই দাড়িয়ে ওর কান্ড দেখে মুখ টিপে হাসছি।আয়নার সামনে দাড়িয়ে একের পর এক শাড়ি গায়ে ধরে দেখছে আর ছুড়ে ফ্লোরে ফেলছে।এক এক করে সব শাড়ি ফেলে দিলো তারপর মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে পাইচারি করছে।আমি এবার জোরেই হেসে দিলাম আমার হাসির আওয়াজে ও আমার দিকে তাকালো।
–এই তুই হাসছিস কেন?
–তোর কান্ড দেখে যে কেউই হাসবে।
–কেন আমি কি জোকার যে হাসবে?
–আরে তা কখন বললাম তুই যেভাবে নার্ভাস হয়ে ঘুরছিস দেখতে অনেক ফানি লাগছে।হাহাহাহহাহা
–ওখানে দাড়িয়ে না কেলিয়ে আমার হেল্প কর।আমি সেই কখন থেকে শাড়ি সিলেক্ট করছি একটাও পাচ্ছি না ভালো।
–আরে আপু তোর সব শাড়িই তো অনেক সুন্দর।যেটাই পরিস না কেন তোকে একদম ঝাক্কাস লাগবে।
আমি মেঝে থেকে একটা নেভি ব্লু শাড়ি তুলে নিলাম,ওর হাতে দিয়ে বললাম,
–এটা পর তোকে অনেক মানাবে।
–ওর বাড়ির লোকের যদি পছন্দ না হয় এটা।আচ্ছা নিহীন ওনারা আমাকে আমাকে কি জিজ্ঞেস করবে বল তো?ওনাদের যদি আমাকে ভালো না লাগে তাহলে?
–আরে আপু তুই থাম তো।এমনভাব করছিস যেন ওনারা তোকে আগে থেকে চেনে না।ভাই এটা তো।লাভ মেরেজ তোদের।ভাইয়ার মা বাবা তোকে আগে দেখেছে তাই কুল সিস্টার।
আমাদের দুই বোনের কথার মাঝেই ভাইয়া আসলো।ভাইয়াকে দেখেই আমরা দুই বোন ভাইয়া বলে ছুটে গেলাম আর ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম।ভাইয়া চাকরির সূত্রে বাইরে থাকে।আপুকে দেখতে আসবে বলেই বাবা ভাইয়াকে আসতে বলেছে।আমরা তিন ভাই বোন গল্প করছি এরি মাঝে মীরা চলে এলো।
বিকালে আমি আর মীরা আপুকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিলাম।আপু বেচারি তো অনেক ভয় পেয়ে আছে।সৌরভ ভাইয়া মানে আপুর বিএফ এর ফ্যামিলি এসে আপুকে দেখে গেলো।আপু তো লজ্জাই লাল হয়ে ছিলো ওদের সামনে।রাতে শুয়ে আছি শাওন নক দিলো।
–জানো আমি আজ অনেক অনেক হ্যাপি।
–হটাত এতো হ্যাপি কেন?
–আজকে সৌরভ ভাইয়ার ফ্যমিলি আইছিলো আপুকে দেখতে..
–সৌরভ ভাইয়া কে?
–আরে আপুর বি এফ।জানো ওদের ৭ বছরের রিলেশন।
–অনেক দিন তো।
–হ্যা
–তা ওদের পরিচয়টা কিভাবে?
–সেটাও অনেক মজার।আমি সেবার নাইনে পড়ি আর আপু ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।ঈদ করতে দাদু বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আমার খুব জ্বর আসছিলো তাই আমি যেতে পারিনি।বাবা,আপু আর ভাইয়া গিছিলো।আমাদের দাদু বাড়ির গ্রামেই আবার সৌরভ ভাইয়ার নানা বাড়ি।ওরাও সেবার গিছিলো।আমার ভাইয়া আর সৌরভ ভাইয়া এক ব্যাচের হওয়ায় গ্রামে ক্রিকেট খেলার সময় ওদের ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যাই।ঈদের দিন ভাইয়া সৌরভ ভাইয়াকে দাওয়াত দেই,সৌরভ ভাইয়া আমদের বাড়িতে আসে।আপু তখন সেমাই খাচ্ছিলো,দাদি ওরে বলে ভাইয়াকে সেমাই দিতে।বাসায় যে মেহমান এসেছে ও বা দাদি কেউ জানতো না।সৌরভ ভাইয়া আমার ভাইয়ার রুমে পিছন ঘুরে তাকিয়ে ছিলো,,ভাইয়ার আর ওনা হাইট,ফিগার প্রায় সেম হওয়ায় আপু বুঝতে না পেরেই ভাইয়া বলে ডাক দেই সৌরভ ভাইয়া তাড়াহুড়া করে তাকাতেই আপুর সাথে ধাক্কা খায় আর আপুর হাতে থাকা সেমাইয়ের বাটি ভাইয়ার গায়ে পড়ে।ব্যাস ভাইয়া তখন আপুর ওই ভীত চেহারা দেখেই প্রেমে পড়ে যাই।এভাবেই ওদের লাভ স্টোরি শুরু।আমার ভাইয়া প্রথম থেকেই জানতো কিন্তু আপুকে কিছুই বলিনি।ধীরে ধীরে আমরাও জানি।
–বাহ!চমতকার…তাহলে এতোদিনের ভালোবাসা পূর্নতা পাবে।তা কে কে এসেছিলো আজ?
–সৌরভ ভাইয়ার মা বাবা আর মামা আসছিলো।
–ওনার কোন ভাই বোন আসিনি?
–ওনার কোন বোন নেই শুনেছি একটা ভাই আছে তবে আমি তাকে চিনি না।
–বোনের দেবর আর তুমি তাকে চেনো না?এইটা কোন কথা?
–আরে আমি কোনদিন ওনার শুনিনি আপুর মুখে আর নিজে থেকেও জানতে চাইনি।
–কেন?
–এমনিই ইচ্ছা হয়নি।ভালো কথা তুমি কেমনে জানলে দেবর?ভাসুর ও তো হতে পারতো।
–আরে আমি কিভাবে জানবো?আন্দাজে বললাম।
–সত্যি?
–মিথ্যা বলার কি আছে?আচ্ছা আমার ঘুম পাচ্ছে বাই
–এখনি ঘুম পাচ্ছে?
–হুম।
–ওকে বাই।
কেন জানি না মনে হলো ও আমাকে এড়িয়ে গেলো।অন্যদিন আমার ঘুম পাই ও জোর করে ম্যাসিজিং করে আর আজ নিজেই এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলো।ধুর এরে একটুও বুঝিনা সামনে এক চোখের আড়ালে আর এক।আমি কিছুতেই শাওনের এই দুই রুপ কে মিলাতে পারি না।
চলবে…….