#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#প্রপোজ_স্পেশাল
🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~
আরশ বিদ্যুৎ এর সাথে ডক্টরের কাছে গিয়েছিল। বাসায় এসে রুমে ডুকতেই দেখলো পুরো রুম অন্ধকার হয়ে আছে। রুম অন্ধকার দেখে আরশ একটু আশ্চর্য হলো। লাইন অন করতেই দেখলো পুরো ঘরে বিভিন্ন জায়গায় আ’ম সরি লেখা। ফ্লোরের মধ্যে ফুলের পাপড়ি দিয়ে সরি লেখা৷ অবনিও মুখের সামনে একটা কার্ড ধরে রেখেছে। তার মধ্যে বড় করে সরি লেখা আছে৷ কার্ডটি অবনি নিজে বানিয়েছে। অবনি ধীরে ধীরে মুখের সামনে থেকে কার্ডটি নামালো। দেখলো আরশ দরজার সাথে হেলান দিয়ে বুকের মধ্যে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। অবনি কার্ডটি সরাতেই আরশ সামনের দিকে এগিয়ে এসে অবনির চোখ থেকে পানি মুছে দিলো। আরশ অবনির গালে হাত রেখে বলল-
” তাকাও আমার দিকে। কি হলো তাকাও৷ ”
অবনি তাকাতেই আরশ বলল-
” কেঁদে কেঁদে যে চোখের পাওয়ার নষ্ট করে ফেলছো! পড়ে তো অল্প বয়সেই চোখ হারিয়ে অন্ধ হয়ে বসে থাকবে। আমি যদি মেঘনাকে বিয়ে করে বাসায়ও নিয়ে আসি তুমি তো জানতেই পারবেনা। তাহলে গোয়েন্দাগিরী করবে কিভাবে? ”
অবনি তবুও চোখের পানি ফেলছে। আরশ কথাটা বলেছিলো অবনি যাতে কান্না থামিয়ে ঝগড়া করে কিন্তু অবনি কেঁদেই যাচ্ছে। অবনিকে কাঁদতে দেখে আরশ বলল-
” ওই দেখো আবার কেনো কাঁদছো? আমি কি তোমাকে বকা দিয়েছি? দিইনি তো তাহলে কেনো শুধু শুধু কাঁদছো? তুমি তো জেনে বুঝে কি করোনি তাইনা? তাহলে কেনো নিজেকে ব্লেম করছো? ”
অবনি কাঁদতে কাঁদতে বলল-
” আপনি তো জানতেন আপনার ঝালে এলার্জে আছে৷ তারপরও কেনো আপনি স্যুপটা খেয়েছিলেন? ”
” তুমিই তো বললে তুমি কষ্ট করে রান্না করেছো। খাবার যেমনই হোক আমি যাতে পুরোটা খেয়ে নিই। ”
” আমি বলবো আর আপনি এভাবে খেয়ে নিবেন? আমি যদি আপনাকে সুইসাইড করতে বলি আপনি কি সুইসাইড করবেন? ”
” যদি করিও তোমার কি তাতে কিছু যায় আসে? আমি মরলেও তোমার কি যায় আসে? ”
” হ্যাঁ সেই তো! আমি তো আপনার কেউ নই৷ আমার কেনো কিছু যায় আসবে। আমি তো শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভেই..…”
আর কিছু বলার আগেই আরশ অবনির মুখে হাত দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো।
” এসব কথা আমি নেক্সট টাইম আর শুনতে চাইনা৷ চলো দুজন একসাথে ঘুরে আসি। ”
” কোথায়! ”
” গেলেই দেখতে পাবে। ”
” আমি যেতে পারবোনা৷ ”
” হোয়াই? ”
” আমার অনেক ফাইল চেক করার বাকি আছে৷ কালকের মধ্যে ফাইলগুলো বস কে না দিলে আমায় রেজিগনেশন লেটার ধরিয়ে দিবে। ”
আরশ ঠোঁট চেপে হেসে বলল-
” ওকে। আমি তোমার বস কে রিকোয়েস্ট করবো যাতে তোমায় রেজিগনেশন লেটার ধরিয়ে না দেয়। যাও রেডি হয়ে নাও। ”
অবনি নীল শাড়ি পড়ে নিলো। হাতে নীল কালার কাঁচের চুরি, সিম্পল সাজ। আরশ নীল কালার পাঞ্জাবি পরে নিলো। সানগ্লাসটি বুকের উপর পাঞ্জাবিতে ঝুলানো। দুজন একসাথে নিচে নেমে এলো। জাহানারা খান সোফায় বসে ছিলেন৷ তাদের একসাথে নামতে দেখে বলল-
” দাদু ভাই তুমি মিষ্টিকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছ? ”
” জ্বী দাদু। আমরা একটু বাইরে
যাচ্ছি। ”
জাহানারা খান একটু ঠাট্টার ছলে অভিমানী সুরে বলল-
” দাদুভাই তোমার কি মনে হচ্ছেনা আমার তুমি আমার থেকে কেমন দূরে সরে যাচ্ছো? ”
আরশ অবাক হয়ে বলল-
” কই দাদু! আমি কেনো তোমার থেকে দূরে সরে যাবো। ”
” সরেছো তো! আগে আমাকে জানেমান ছাড়া কথাই বলতেনা। আর এখন জানেমান তো দূরের কথা চোখের সামনে না পড়লে খোঁজও মেলেনা তোমার। ব্যাপার কি হুমম? ”
আরশ দাদু কথায় মাথা চুলকিয়ে বলল-
” সরি জানেমান ভুল হয়ে গেছে। তুমি আমার প্রথম বৌ বলে কথা। এখন তুমিই বলো তোমার সতীনকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাবো কি? ”
জাহানারা খান আরশের কান টেনে বলল-
” খুব দুষ্টু হয়ে গেছিস তাইনা৷ ভারি বজ্জাত হয়ে গেছিস। আমার হাতে মার না খেতে চাইলে মিষ্টি নিয়ে বের হ। ”
” জো হুকুম মহারানী। ”
কথাটা বলে আরশ সানগ্লাস পরে অবনিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে জাহানারা খান হেসে দিলেন। আরশ আজ বাইক নিয়ে ঘুরতে বের হলো। বেশি কিছুদূর জার্নির পর তাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে এসে পৌঁছালো। তারপর দুজন একসাথে সামনের দিকে পা বাড়ালো। আরশ বলল-
” এটা আমার ফেবারিট প্লেস। মাঝখানে রাস্তা, দুপাশে সারিবদ্ধ গাছ। বাহারি রকমের ফুল, ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে বাতির আলোয় প্লেসটা আমার খুব ভালো লাগে। আমার যখন মন খুব ভালো থাকে তখন এই প্লেসে আসি। আবার স্পেশাল ডে তেও এইখানে আসি, মন খারাপ থাকলেও এই প্লেসে আসি। তবে দীর্ঘদিন এই প্লেসে আসা হয়নি। ”
অবনি জিজ্ঞেসুক ভঙ্গিতে বলল-
” কেনো? ”
” আমি চেয়েছিলাম কেনো এক সময় যখন আমার জীবনে স্পেশাল কেউ থাকবে তখন তাকে নিয়ে এই প্লেসে আসবো। ”
আরশের কথায় অবনি বিস্মিত হয়ে বলল-
” কিন্তু আমি তো আপনার স্পেশাল কেউ নই! আমাকে নিয়ে কেনো আসলেন? ”
অবনিকে কথায় আরশ অবনির দিকে এক পলক চেয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির করে বলল-
” চলো সামনে যাওয়া যাক! ”
” আপনি কিন্তু আমার কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছেন। আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আমি পাইনি। ”
” সব প্রশ্নের জবাব হয়না। কখনো কখনো নিরবতার মাঝেই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে থাকে। ”
আরশের এরকম ঘুরানো পেছানো উত্তরে অবনির মনে হাজারো প্রশ্ন, কৌতূহল ঘুরপাক খাচ্ছে।
_______________________
পরদিন তারা দুজন অফিসে গেলো। অবনির কাছে আজ কেনো জানি ভালো লাগছে। কোনো এক অজানা কারনে। অবনির বারবার মনে হচ্ছে আরশ ওকে কোনো রহস্যের ক্লু দিলো। কিন্তু কি? অবনি কেবিনে বসে নিজে নিজেই বলছে-
” আচ্ছা উনি কি বুঝাতে চাইলো? আমি কি উনার স্পেশাল কেউ? সেজন্যই নিয়ে গেছে? নাকি অন্যকিছু! ধ্যাত আমি উনাকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছি। আমি কেনো উনার স্পেশাল কেউ হতে যাবো। আমি যদি উনার স্পেশাল কেউ হতাম উনি কি আমাকে অফিস থেকে এভাবে বের করে দিতো! দূর এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমার মাথাটা শেষ হয়ে যাবে৷ তাড়াতাড়ি কাজে মনোযোগ দিই পরে ওই বজ্জাত ব্যাটা গিরগিটির মতো রুপ বদলাতে এক সেকেন্ড সময় নিবে না।
এদিকে আরশ চেয়ারে হেলান দিয়ে কপালে হাত রেখে কিছু একটা ভাবছিলো। হঠাৎ একটি টেলিফোন আসায় আরশ ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো। আরশ টেলিফোন কানে নিতেই ওপাশ থেকে কল এলো-
” স্যার একটি মেয়ে আপনার সাথে ইমার্জেন্সি দেখা করতে চাইছে। বলছে আপনার পরিচিত কেউ। আমি কি তাকে আপনার কেবিনে পাঠিয়ে দিবো? ”
” জ্বি পাঠিয়ে দিন। ”
কিছুক্ষণ পর একটি মেয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। মেয়েটি দেখে আরশের কপালে ভাজঁ পড়লো৷
আরশ চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বলল –
” তুই এখানে? ”
” ভয় নেই আরশ। আজ আর কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে আসিনি। বিশ্বাস করবি কিনা জানিনা৷ তবে এটা সত্যি আমি যা করেছিলাম তোকে ভালোবেসেই করেছিলাম। কিন্তু আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমার বোঝা উচিৎ ছিল তুই বিবাহিত। ”
” তো! এখন আমি কি করতে পারি? ”
” কিছুই করতে হবেনা। আমি শুধু তোর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি৷ আমার মনে হয়েছিল তোর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। এখন ক্ষমা করবি কি করবিনা সেটা……”
এটুকু বলে চৈতী চোখ হাত দিয়ে বলল-
” আাহ! কি যেনো চোখে পড়েছে। আরশ প্লিজ একটু দেখনা কি হয়েছে আমার চোখে। উফফ চোখে খুব জ্বালা
করছে। ”
আরশেরও চৈতীর জন্য মায়া হলো। সে তো নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইতে এসেছে। আরশ চৈতী কে চেয়ারে বসিয়ে চৈতীর চোখে ফুঁ দিচ্ছিলো। ওই মুহূর্তেই অবনি কতোগুলো ফাইল হাতে নিয়ে আরশের কেবিনে প্রবেশ করলো। কিন্তু চোখের সামনে যা দেখলো তাতে অবনির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। অবনির হাতের ফাইল গুলো ধপ করে নিচে পড়ে গেলো৷ ফাইল পড়ার শব্দে আরশ চমকে পেছনে ফিরে দেখলো অবনিকে। অবনি হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লো। আরশ দ্রুত পায়ে এগিয়ে অবনিকে নিজের সাথে আগলে নিলো। জ্ঞান ফিরতেই অবনি চোখের সামনে আরশকে দেখতে ফেলো। আরশ অবনির গালে হাত রেখে বলল-
” অবনি তুমি ঠিক আছো? ”
অবনি আরশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল-
” খবরদার আপনার ওই নোংরা হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করবেন না। লজ্জা করে না আপনার চৈতীর সাথে রঙ্গলীলা করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে ছিহ! ”
” অবনি তুমি ভুল…..”
অবনি হাত উঠিয়ে আরশকে থামিয়ে বলল-
” থাক! ঠিক ভুল বিবেচনা করার মতো জ্ঞান আমার রয়েছে মিস্টার আরশ খান৷ আপনি আমার বিশ্বাস ভেঙেছেন। আমি আপনাকে কখনো ক্ষমা করবোনা। কখনোই না। ”
কথাটা বলে অবনি কাঁদতে কাঁদতে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো।
★★★★
সারাটাদিন পেরিয়ে গেছে অথচ আরশ অবনিকে একটা কলও দেয়নি। অবনির যেনো বুক ভেঙে কান্না আসছে। অবনি কিছুক্ষন পর পর মোবাইল চেক করছে কিন্তু না কোনো কলই আসেনি। অবনির মনে অভিমানের পাল্লা আরো বেশি ভারী হলো। অবনি ডিসিশন নিয়েছে আরশের সাথে আর কথা বলবেনা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে অবনি চোখের পানি ফেলছে আর নিজে নিজেই বলছে-
” আপনি এতোটা খারাপ? আমার রাগ, অভিমান কোনো কিছুতেই আপনার কিছু যায় আসেনা৷ অবশ্য কিছু কেনো যায় আসবে! আমি তো আর আপনার কেউ নই। আপনি তো আর আমাকে মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। তাহলে কি সব আপনার দয়া ছিলো! সারাটাদিন আমার কিভাবে কেটেছে একবারের জন্যও জানতে চাননি। আমিই ঠিক ছিলাম আমি সত্যিই আপনার স্পেশাল কেউ নই৷ আপনার জীবনে আমার কোনো অস্তিত্বই নেই। ”
তখনই অবনির মোবাইলে একটা কল আসে। কলটি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শব্দ এলো-
” বোনু আমি গাড়ি নিয়ে নিচে ওয়েট করছি। তুই তাড়াতাড়ি নিচে আয়। আরশের অবস্থা বেশি ভালোনা। তোকে এখনিই আমার সাথে যেতে হবে। ”
কথাটা শুনে অবনি চমকে উঠলো। হাত থেকে মোবাইলটা ধপ করে নিচে পড়ে গেলো। বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। অবনি দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচো নামলো। কারো থেকে বলেও আসেনি। তার মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে ‘ আরশের অবস্থা বেশি ভালোনা। ‘ আরশের বিপদ আর ও কিনা নিজের কথাই ভেবে যাচ্ছিলো। একবারও মাথায় আসলোনা আরশের এতো দেরি কেনো। অবনি বিদ্যুৎ এর সাথে গাড়িতে গিয়ে বসলো। বিদ্যুৎ গাড়ি ড্রাইভ করছে। আর অবনি অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন আরশের কাছে গিয়ে পৌঁছবে। অবনি কাদঁতে কাদঁতে বলল-
” উনার কি হয়েছে ভাইয়া। তুমি কেনো আমাকে পরিষ্কার করে কিছু বলছোনা। আমাকে খুলে বলো প্লিজ। উনার কি হয়েছে?
” বোনু এখন এতো কথা বলার সময় নেই। গেলে তো নিজের চোখেই দেখবি নাকি। ”
একটা বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই অবনি দ্রুত গতিতে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে ভেতরের দিকে গেলো। বাড়ির ভেতরে প্রবেশের পর অবনি দেখলো কেমন আঁধার হয়ে আছে। আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে কেউ যেনো সিঁড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারের মধ্যে কাউকে এরকম দাঁড়াতে দেখে অবনি আঁতকে উঠল। অবনি সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাতেই যখন আরশকে পরখ করলো। অবনি এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে আরশকে জড়িয়ে ধরলো। তবুও অবনির বুক কাঁপছে৷ যেনো সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আরশ বেশ বুঝতে পারছে অবনি খুব ভয় পেয়েছে। অবনি কাঁদতে কাঁদতে বলল-
” আপনি এতো খারাপ কেনো বলুন? আপনি খুব খারাপ একটা মানুষ।আপনার কিছুই হয়নি অথচ আমি কতোটা ভয় পেয়ে গেছিলাম৷ আর একটু হলেই তো আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। ”
আরশ অবনিকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে বলল-
” ভালোবাসো আমাকে?”
” নাহ। ”
” একটু! ”
” উহুম ”
কথাটা বলে অবনি পেছন ঘুরে চলে যেতে নিলে আরশ অবনির হাত ধরে হেঁচকা টানে নিজের কাছে আনলো।
” তুমি না বললেও আমি তোমার মনের কথাটা বুঝতে পারি অবনি। তুমি আমাকে ভালো না বাসলে আমার পাশে অন্য কাউকে দেখে এভাবে রিয়্যাক্ট করতেনা। তোমার আমাকে ঝাল খাওয়ানো, রাগ করা, অভিমান করা,আমার পেছনে গোয়েন্দাগিরি করা ৷ সবকিছুতেই আমি তোমার চোখে আমার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা দেখেছি। ”
আরশ অবনিকে পেছনে ঘুরিয়ে অবনির চোখটা বেঁধে দিলো।
” একি চোখ কেনো বাঁধলেন?”
” চলো আমার সাথে। ”
”কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? ”
” যেখানেই নিই মেরে ফেলতে নিবো না নিশ্চয়ই। আমার উপর একটুও বিশ্বাস নেই? ”
” আমি সেটা বলেছি নাকি। ”
” আমি বলা অবধি চোখ খুলবেনা কিন্তু। ”
আরশ অবনিকে নিয়ে ছাদে গেলো। তারপর অবনিকে বলল-
” এবার চোখ খুলতে পারো৷ ”
চোখ মেলে অবনি পুরোই বিস্মিত হয়ে গেলো। চারপাশে অনেক সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। চারপাশে নিভু নিভু মোমবাতি জ্বলছে। লাইটের রঙিন আলোয় পুরো ছাদকে আলোকিত করে রেখেছে। গোলাপের পাপড়ি ছাদের ফ্লোরে ছড়িয়ে আছে , লাভ বেলুন দিয়ে সাজানো ছাদের ফ্লোরে ছড়িয়ে আছে। লাভ বেলুন দিয়ে লাভ সাজানো তার ভেতর লাইটিং করা ইংরেজিতে বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে আই লাভ ইউ অবনি। আরশ অবনির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অবনির দিকে একগুচ্ছ লাল আর সাদা গোলাপ ধরে মোলায়েম কন্ঠে বলল-
❝ তোমাকে ভালোবাসি কতোখানি জানি~
হবে কি তুমি আমার রাজ্যের রানী?
প্রেম হয়ে এলি তুই আমারই জীবনে~
ভালোবেসে রবে কি আমারই ভুবনে?
কি করে বলবো মুখে,
তোমায় ভালোবাসি ~
বুঝে নিতে পারো না, দেখে মুখের হাসি।
রাগ করো না অবনিকা,
তোমায় বড়ো ভালোবাসি ~
তাইতো কতো দূর থেকেও,
তোমার কাছে ফিরে আসি।
আজ এই সময়, থাকবে আমার মনে~
তোমার আমার মিলন হলো,
এই শুভ দিনে।
থাকো যদি কাছাকাছি
মনে হয় বেঁচে আছি ~
তুমি ছাড়া এলোমেলো পৃথিবী আমার
এই মনটা যে তোমার। ❞
” উইল ইউ বি দ্যা কুইন অব মাই কিংডম? ”
অবনি আরশের হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে বলল-
” ধন্যবাদ আমাকে এতো সুন্দর ফুল দেওয়ার জন্য বাট সরি আপনার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করতে পারলাম না। ”
আরশ উঠে দাঁড়িয়ে অবনির বাহুতে হাত রেখে অবনির চোখে চোখ রেখে বলল-
” কেনো? তোমার পছন্দ হয়নি? ”
” হয়েছে! বাট রাজা বিহীন রাজ্যের আমার কোনো প্রয়োজন নেই। ”
” রাজা বিহীন রাজ্য মানে? ”
” রাজা বিহীন রাজ্যই তো! আমার রাজ্যে রাজাও আমার হবে রাজ্যও আমার হবে৷ সেখানে চৈতী, মেঘনার মতো কোনো ডাইনি উঁকি দেওয়ার দুঃসাহস দেখাতে পারবেনা। কিন্তু আপনার রাজ দরবার আর বাজারের মাছ দরবারের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে বলে তো আমার মনে হচ্ছে না। আমি চাই এমন একটা রাজ্য যেখানে শুধু আমিই রাজত্ব করবো অন্য কেউ তার আশেপাশেও আসার দুঃসাহস দেখাবেনা৷ ”
আরশ নিঃশব্দে হেসে অবনির গালে হাত রেখে বলল-
” তুমি ছাড়া এই মন আর কেউ পাবেনা। আজ থেকে আমার মনের রাজত্ব শুধুই তোমার। অন্য কেউ উঁকি দেওয়ার সাহসই পাবেনা। কেউ উঁকি দিতে আসলেও আমি বলে দিবো খালা মাপ চাই, আপনার থেকেও ভারী মিষ্টি, সুন্দরী, অভিমানী, হিংসুটে আর ঝগড়ুটে একটা বউ আমার বাড়িতে আছে। ”
” এই কি বললেন আমি ঝগড়ুটে? ”
” নাহ ভুল করে বলে ফেলেছি। আমার কথা বলতে গিয়ে তোমার কথা বলে ফেলেছি। ”
” শুনুন এই ফুল আমার, আপনি আমার, আপনার মনে রাজত্ব করার অধিকারটাও শুধুই আমার। আজকে ক্ষমা করেছি বলে ভবিষ্যতে যে করবো এমনটা কিন্তু একদমই ভাববেন না। ”
” জ্বি না মেডাম আ’ম সরি। আর কখনো কোনো মেয়ের ছায়াও ঘেঁষবো না হ্যাপি? ”
আরশের প্রতিটি কাজেই অবনি বিস্মিত হয়ে গেলো। নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছেনা। সব কেমন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।
অবনি আরশকে জড়িয়ে ধরে ভেজা কন্ঠে বলল-
” আপনি সত্যিই আমাকে এতোটা ভালোবাসেন? আমার কেনো জানি বিশ্বাসই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে পুরোটাই স্বপ্ন। একটু পর ঘুম ভেঙ্গে যাবে৷ ”
” আরে কাঁদছো কেনো বোকা মেয়ে। আজকের পর যেনো তোমার চোখে আর পানি ঝরতে না দেখি৷ ”
কিন্তু অবনির চোখের পানি গুলো যেনো উবছে পড়ছে৷ তবে এ পানি কষ্টের নয় প্রাপ্তির। আরশ অবনিকে নিয়ে কেক কাটলো। তারপর অবনিকে বলল-
” নিচে চলো তোমার জন্য আরোও সারপ্রাইজ রয়েছে। ”
” আরো সারপ্রাইজ? ”
” জ্বি মেডাম। নিচে চলুন। ”
” মেডাম কি তার হাতটি আমার মতো এক অসহায় প্রেমিককে ধরতে দিবেন? ”
আরশের কথায় অবনি হেসে নিজের হাত দিয়ে আরশের হাতটি শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।
তারপর দুজন হাতে হাত রেখে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো। একটি দরজার সামনে দাঁড়ালো অবনি। দরজার সামনে ফিতা বাঁধা। অবনি ফিতা কেটে রুমটির ভেতর প্রবেশ করলো। রুমের ভেতর ঢুকে অবনি আরেক দফা অবাক হলো।
ফ্লোরের মধ্যে গোলাপ আর গাঁদা ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে। সাথে রয়েছে লাল কালারের লাভ বেলুন। আর কতোগুলো ক্যানভাসে তার ছবি আঁকা। মনে হচ্ছে কেউ অতি যত্নে অনেক দিন থেকে এঁকেছিল। এই ছবি গুলো তো তার হাসান আঙ্কেলের অফিসে থাকাকালীন সময়ে আঁকা। অবনি কলম হাতে নিয়ে বসে আছে, ফাইল দেখছে, কিছু ছবিতে অবনি গালের নিচে হাত দিয়ে বসে আছে৷ ছবি গুলো থেকে চোখ সরিয়ে অবনি বিস্মিত হয়ে আরশের দিকে তাকালো।
” আপনি এই ছবি গুলো কিভাবে আঁকলেন? প্রতিটি ছবির ইমেজ তো হাসান আঙ্কেলের অফিসে যখন আমি কাজ করছিলাম তখনের! ”
” উফফ এতো হাইপার কেনো হচ্ছো। আগে সবকিছু দেখো। ”
আরশ অবনিকে একটা পেইন্টিং এর সামনে দাঁড় করালো। পেইন্টিংটি পর্দা দিয়ে ডাকা। অবনি পর্দা সরিয়ে দেখলো তাদের বিয়ের ছবি। আরশ অবনিকে আরোও একটি পেইন্টিং এর সামনে দাঁড় করালো। এই পেইন্টিংও একইভাবে পর্দা দিয়ে ডাকা। অবনি ভাবলো এই পেইন্টিংটিও হয়তো আকর্ষনীয় কিছু থাকবে কিন্তু যা ছিলো তা দেখে অবনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
#চলবে….
( অবশেষে তাদের মিলিয়ে দিলাম। সবার কি মনে হয় কি দেখে অবনি ভ্যাবাচ্যাকা খেলো? 🥹 আজকে পর্বটি পড়ে রিভিউ না দিলে আমি কিন্তু রাগ করবো🥺🫶
আমার গ্রুপ : https://facebook.com/groups/834251051795835/
💞💞💞)