#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ১৮
🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ
বর এসেছে বর এসেছে বলে মেয়েরা হৈ হুল্লোড় করতে করতে গেইটের দিকে গেলো। অবনি জানালার দিক এগিয়ে গিয়ে বাইরে দেখার চেষ্টা করছে। অবনির মনে আজ অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছে। সব কিছু কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে অবনির কাছে। অবনির মুখে হাসি ফুটলো। চৈতী অবনির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অবনিকে হাসতে দেখে মনে মনে বলল-
” হেসে নাও হেসে নাও। পড়ে তো কেঁদেও কূল পাবে না। যতো খুশি আনন্দ করো। খুব শীঘ্রই তোমার ওই মুখের হাসিকে কান্নায় পরিনত করবো আমি। সবার মনকে বিষিয়ে দিবো আমি। যুদ্ধ মানে তোমার আমার শত্রু শত্রু খেলা, যুদ্ধ মানে তোমার প্রতি আমার অবহেলা। ”
কথাটা বলে চৈতী মনে মনে সয়তানি হাসি দিলো।
অবনির চোখ দরজার দিকে পড়তেই অবনি আশ্চর্য হয়ে বলল-
” কি ব্যাপার ননদিনী তুমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ”
অবনির কথায় চৈতী থতমত খেয়ে অবনির দিকে এগিয়ে এসে বলল-
” আব…আসলে তোমার কাছেই আসছিলাম। বউ সাজে তো তোমাকে দেখা হয়নি। তাই দেখতে এলাম। ”
চৈতী অবনির গালে হাত রেখে বলল-
” কি সুন্দর লাগছে গো তোমায়। এমনি এমনি কি আমাদের আরশ তোমার প্রেমে পড়েছে নাকি। দোয়া করি তোমার সুখের সংসারে কারো নজর যেনো না লাগে৷ ”
অবনি নিজের গাল থেকে চৈতীর হাত সরিয়ে বলল-
” নজর দেওয়ার চান্স দিলে তো নজর দিবে। কেউ নজর দেওয়ার আগে তার চোখ দুটো খুলে হাতে ধরিয়ে দিবো। আমার সুখের সংসারে আগুন লাগাতে আসলে সেই আগুনে তাকেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবো। ”
চৈতী লো ভয়েজে বলল –
” রিলাক্স ভাবি রিলাক্স। এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? আমি তো জাস্ট কথার কথা বললাম। তুমি এতো সিরিয়াস কেনো হচ্ছো। বোকা মেয়ে এতো অল্পতে ভয় পেলে চলে? ”
” আশ্চর্য তোমার এমন কেনো মনে হচ্ছে যে আমি ভয় পাচ্ছি? ”
” নাহ আমার কেনো মনে হতে যাবে। বাই দ্যা ওয়ে আমি নিচে যাচ্ছি কিছুক্ষণ পর তোমায় নিতে আসবো। ”
কথাটা বলে চৈতী চলে যেতে নিলে অবনি পেছন থেকে বলল-
” কালকে কিন্তু সবাই আমাকে হলুদ ছোঁয়ালেও তুমি ছোঁয়াওনি। কোথায় ছিলে তুমি? ”
অবনির কথায় চৈতী থমকে দাঁড়ায়। তারপর পেছন ঘুরে বলল-
” হলুদে আমার এলার্জি আছে তাই৷ ”
কথাটা বলে চৈতী গটগট করে চলে গেলো। অবনি চৈতীর চলে যাওয়ার পানে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর একটু চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল-
” কি বুঝাতে চাইলো চৈতী। ওকি নতুন কোনো ষড়যন্ত্র করতে চাইছে? না না আমাকে আরো এলার্ট থাকতে হবে। ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে ও বড় কোনো প্ল্যান করছে। কিন্তু কি? ”
অবনির হাসিখুশি মুখে চিন্তার চাপ নেমে এলো।
” আমার নতুন জীবনে আবার কোনো ঝড় আসবে না তো? ”
কতোগুলো মেয়ে এলো অবনিকে নিতে। রুপা অবনির কাছে গিয়ে বলল-
” কিরে? কিসের ঝড়ের কথা বলছিস। ”
অবনি নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল-
” ননা কিছু না। রুপা সবকিছু ঠিকঠাক মতো হবে তো? আমার জীবনে নতুন কোনো ঝড় নেমে আসবে না তো? ”
” দূর পা’গ’লি! কিসব উল্টো পাল্টা চিন্তা করছিস। এসব ভুলভাল চিন্তা বাদ দিয়ে নিচে চলো৷ তোমার বর তো তোমাকে চোখে হারাচ্ছে।”
রুপার কথা শুনে অবনি লজ্জা পেয়ে গেলো।
__________________
আরশ আর অবনিকে পাশাপাশি বসানো হলো৷ আরশ অবনির হাতটি শক্ত করে ধরে অবনির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল-
” তোমাকে বউয়ের সাজে খুব স্নিগ্ধ লাগছে। ”
” কি করছেন৷ হাত ছাড়ুন সবাই দেখছে তো। ”
” তো! দেখছে তো কি হয়েছে। আমি আমার বউয়ের হাত ধরেছি অন্যকারো হাত তো ধরিনি। অবনি আই লাভ ইউ। ”
” থ্যাংক ইউ৷ ”
অবনির কথায় আরশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আরশ অসহায় কন্ঠে বলল-
” দ্যাটস নট ফেয়ার অবনি। কেউ আই লাভ ইউ বললে তাকে আই লাভ ইউ টু বলতে হয়৷ ”
” আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না। তাহলে আই লাভ ইউ বলবো কেনো? ”
”ভালো না বাসলে বিয়ে করছো কেনো?”
” মা চেয়েছে তাই। ”
আরশ অভিমানী সুরে বলল-
” আমি ছাড়া বাকি সবার চাওয়া পাওয়ার মূল্য আছে তোমার কাছে। থাক লাগবেনা তোমার আই লাভ ইউ বলা হুহ। বুঝবে বুঝবে যখন আমি থাকবো না তখন তুমি ঠিকই বুঝবে আমি তোমার কি ছিলাম। ”
আরশের ছেলেমানুষী দেখে অবনি ঠোঁট চেপে হাসলো৷
অবশেষে তাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। অবনি তার বাবাকে ধরে কান্না করলো। আরশ আর অবনি গাড়িতে বসলো। গাড়িতে বসেও অবনি কান্না করছে। আরশ অবনির মাথা নিজের কাঁধে রেখে বলল-
” এতো কান্না করছো কেনো হুমম? এমন ভাবে কান্না করছো যেনো তোমার প্রথমবার বিয়ে হচ্ছে। ”
আরশ অবনিকে রাগানোর জন্যই কথাটা বলল। আরশের কথা শুনে অবনি আরশের কাঁধ থেকে মাথা তুলে বাইরের দিকে চেয়ে রইলো। আরশ বেশ বুঝতে পারছে অবনি রেগে গেছে। আরশ অবনির হাতটি শক্ত করে ধরে বলল-
” আজকেই যা কান্না করার করে নাও। আজকের পর যেনো আর কখনো তোমার চোখে পানি না দেখি। ”
★★★
খান ভবনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরশ আর অবনি। প্রিয়া খান তাদের দুজনকে বরন করে ঘরে তুললো। চৈতী অবনিকে আরশের রুমে নিয়ে গেল৷ অবনিকে বিছানার উপর বসিয়ে চৈতী বেরিয়ে এলো। চৈতী পেছন ফিরে একবার তাকালো।
” এই ঘরটা বেশিদিন থাকার সৌভাগ্য হবে না তোমার। এই ঘর থেকে বের করার ব্যবস্থা করবো আমিই। তোমার জন্য আমি সকলের সামনে অপমানিত হয়েছি৷ এতো সহজে তোমাকে আমি ছাড়বোনা৷ নরক বানিয়ে দিবো আমি তোমাদের জীবন। ”
কথাটা বলে চৈতী চলে যায়।
বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডার পর আরশ রুমে এলো। অবনি বিছানা থেকে নেমে এগিয়ে এসে আরশকে পা ছুঁয়ে সালাম করতে নিলে আরশ অবনিকে বুকে জড়িয়ে বলল-
” তোমার স্থান আমার পায়ে না। তোমার স্থান আমার বুকে। ”
তারপর নফল নামাজের মাধ্যমে তাদের নতুন জীবনের সূচনা হলো।
.
সকালবেলা আরশ ঘুম থেকে উঠে দেখলো অবনি ঘুমিয়ে আছে। আরশ অবনির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। আরশ অবনির জন্য নিজ হাতে কফি বানিয়ে আনলো। সাথে একটি গোলাপও রয়েছে। আরশ রুমে এসে কফি কাপটি টেবিলের উপর রেখে অবনির কাছে গিয়ে বিছানার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে অবনির চুলে হাত দিয়ে বিলি কাটতেই অবনির ঘুম ভেঙ্গে গেলো৷ অবনি অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে আরশের কপালে স্পর্শ করলো৷ অবনি ফ্রেশ হয়ে এলো। আরশ অবনির দিকে কফি কাপ এগিয়ে দিলো। একটি কাপ দেখে বলল-
” এক কাপ কেনো? আপনি খাবেন না?”
” উহুম। তুমি খাও আমি পড়ে খেয়ে নিবো। ”
” একসাথে খেলেই তো হয়। আপনি বসুন আমি আপনার জন্য কফি নিয়ে আসছি। ”
কথাটা বলে অবনি উঠে যেতে নিলে আরশ অবনির হাত ধরে বসিয়ে দিলো।
অবনির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
” আমি কি তোমাকে বলেছি আমার জন্য কফি আনতে? চুপচাপ নিজে খেয়ে নাও। ”
অবনি মুখ ভেংচি কেটে কফি খাওয়া শুরু করলো। কয়েক চুমুক খাওয়ার পর আরশ কফি কাপটি টেনে নিয়ে নিজে খাওয়া শুরু করলো৷ আরশের এমন কাজে অবনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। অবনি ভ্রু কুঁচকে রাগী রাগী ভাব নিয়ে বলল-
” এটা কি করলেন আপনি? আমার কফি নিজে খেয়ে নিলেন! আমি আপনাকে বানিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। আপনি রাগ দেখিয়ে না করে দিলেন। আর এখন আমার এঁটো করা কফি নিজে খেয়ে নিলেন! ”
” এতে করে ভালোবাসা বাড়ে। ”
কথাটা বলে আরশ চোখ মেরে চলে গেলো৷
________________________
খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে। কেউ কোনো শব্দ না করে চুপচাপ খাবার খাচ্ছে। নিরবতা ভেঙ্গে আরশ বলল-
” তোমাদের সবাইকে একটা কথা বলার ছিলো। ”
সবাই জিজ্ঞেসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আরশের দিকে।
” অবনি আর আমার বিয়ের পর কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। তাই আমি আর অবনি হানিমুনে যাচ্ছি। ”
সবাই ঠোঁট চেপে হাসলো। আরশ সেদিকে খেয়াল করে বলল-
” আশ্চর্য! কি ব্যাপার তোমরা হাসছো কেনো? ”
সবাই হাসি থামিয়ে ফেললো। প্রিয়া খান বলল-
” তোর বউকে নিয়ে তুই হানিমুনে যাবি। এটা আবার আমাদের বলার কি আছে।”
” আশ্চর্য আমি তোমাদের জানালাম। হানিমুনে গেলে কি জানিয়ে যাবো না? ”
আকবর খান বলল-
” তা কবে যাচ্ছিস? ”
আরশ খাবার প্লেটের দিকে চোখ স্থির রেখে বলল-
” আজই সব গুছিয়ে নিবো। ”
জাহানারা খান ঠাট্টার স্বরে বলল-
” বাবাহ! দাদুভাই তুমি দেখছি বিয়ে না হতেই হানিমুনে যাওয়ার টিকিট কেটে নিয়েছো। ”
জাহানারা খানের কথায় অবনি লজ্জা পেয়ে গেলো। আরশ বলল-
” কাম অন দাদু! বিয়ে তো আগেই হয়েছে এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ভাবে হয়েছে। ”
বিদ্যুৎ বলল-
” কোথায় যাবি সেটা কি ঠিক করেছিস?”
” হ্যাঁ কক্সবাজার থাকবো পাঁচ দিন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, হিমছড়ি পাহাড়, তারপর সুইজারল্যান্ড যাবো বিজনেসের কাজে সেই সাথে অবনিকেও নিয়ে যাবো। কাজও হবে সাথে ঘুরাও হবে। ”
চৈতী বলল-
” ওয়াও! সুইজারল্যান্ড? আমাকেও নিয়ে চলনা আরশ৷ প্লিজ প্লিজ। ”
আরশ চৈতীর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
” আর ইউ ক্রজি চৈতী? মিনিমাম কনমসেন্স নেই তোর? ”
বিদ্যুৎ বলল-
” ওরা দুজন পার্সোনাল টাইম স্পেন্ড করতে যাবে। তোর আবার কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার কি দরকার? ”
অবনি বলল-
” আচ্ছা আমরা দুজন একা যাবো। ব্যাপারটা কেমন লাগছেনা। পরিবারের সবাই মিলে গেলে তো অনেক মজা হবে। আমরা সবাই বরং একসাথে যাই। ”
অবনির কথা শুনে আরশ ভ্রু কুচঁকে শক্ত কন্ঠে বলল-
” অবনি আমরা হানিমুনে যাচ্ছি! কোনো ফ্যামেলি ট্যুরে নয়। ”
কথাটা বলে আরশ টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো।
ছেলে কে রেগে যেতে দেখে প্রিয়া খান বলল-
” দিলিতো ছেলে টাকে রাগিয়ে। হায়রে কপাল কোথায় কোন কথা বলবি এখনও শিখলিনা। হানিমুনে কেউ ফ্যামেলি নিয়ে যায় নাকি? বোকা মেয়ে একটা। এখন যা ওর রাগ ভাঙ্গা। ”
কথাটা বলে প্রিয়া খান অবনিকে পাঠিয়ে দিলো।
#চলবে…..
( ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। চাইলে আমার গ্রুপে জয়েন হয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন। অথবা কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞেস করতে পারো।
গ্রুপ লিংক 👉 https://facebook.com/groups/834251051795835/
💞💞🦋 )