প্রেম_হয়ে_এলি_তুই #লেখিকা : #ohona_akther #পর্ব : ১৯

0
84

#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ১৯

🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~

অবনি রুমে গিয়ে দেখলো আরশ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। অবনি গিয়ে আরশকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল-
” সরি। ”

আরশ পাশ ফিরে অবনির দিকে চেয়ে আবার বাইরের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো-
” সরি বলার মতো কিছু হয়নি। ”

” আপনি রেগে আছেন আমার উপর? ”

” আমি রাগ করলেই বা তোমার কি? চলো এখন রেডি হতে হবে। আমরা দ্রুত বেরিয়ে পড়বো। ”

” এতো তাড়াতাড়ি? ”

” কেনো তুমি খুশি নও? ”

” আশ্চর্য আমি সেটা কখন বলেছি। ”

” চলো রেডি হবে। ”

অবনি একটার পর একটা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে আরশকে ইশারা করছে কেমন। আরশ বার বার মাথা নেড়ে না বোঝাচ্ছে। শেষে পার্পেল কালার শাড়ি চয়েস হলো। দুজনে ম্যাচিং করে ড্রেস পড়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অবনি নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।

ক্রিস্টাল পাথরের পার্পেল কালার শাড়ি, সাথে ম্যাচিং করা ফুল স্লিভ ব্লাউজ। স্টাইলিশ খোপা সাথে বেলি ফুলের গাজরা। গলায় সিম্পল কাজের পার্পেল ক্রিস্টালের একটা নেকলেস।সাথে মাঝারি সাইজের ম্যাচিং কানের দুল। বাম হাতে দুটো মাঝারি সাইজের রিং। ডান হাত খালি। মুখে সিম্পল মেকআপ।

আরশ রুমে ঢুকে দেখলো অবনি আয়নাতে নিজেকে দেখছে। আরশ সামনে এগিয়ে অবনিকে পেছন থেকে জড়িয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল-

” যতোই সুন্দর করে সাজো দিন শেষে তোমাকে পেত্নীর মতোই লাগে। ”

আরশ কথা শুনে অবনি ভ্রু কুঁচকে পেছন ঘুরে বলল-
” আপনি কি ঠিক মতো প্রশংসা টুকুও করতে পারেন না? সব সময় বলেন আমাকে পেত্নীর মতো লাগছে। এতোই যখন খারাপ দেখতে লাগে আমাকে তাহলে বিয়ে করছেন কেনো? স্মার্ট সুন্দরী মেয়ে দেখেই বিয়ে করে নিতেন। ”

” করতাম তো। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম আমার যে একটা পেত্নী বউ আছে সে তো কেঁদে কেটে সাগর বানিয়ে ফেলবে।দেখা গেলো সেই সাগরে আমি আর আমার নতুন বউ ডুবে মরে যাবো। ”

” সাগরে ডুবে মরবেন কেনো? অন্য কোনো মেয়ের সাথে রং ডং করতে দেখলে আমি নিজেই আপনাকে ডুবিয়ে মারবো। ”

” থাক মহারানী মাপ করুন। সবে মাত্র বিয়ে করলাম। বউয়ের মুখে এখনো ভালোবাসি শোনা বাকি। এতো তাড়াতাড়ি মরে গেলে ভালোবাসি শুনবো কিভাবে। ”

” সেই আশাতেই বসে থাকুন। তবে আমার মুখ থেকে ভালোবাসি শোনার সৌভাগ্য আপনার হবেনা বুঝেছেন আপনি? ”

” বলবে বলবে। একদিন তুমি নিজেই আমাকে ভালোবাসি বলবে। তখন আমিও একটু ডং করে বলবো নাহ আমি তোমাকে ভালোবাসি না হুহ। ”

” জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছেন? ”

” তুমি নিজেই আমাকে ভালোবাসি বলবে। আমি তোমাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ করলাম। ”

” ওকে! আমিও আপনার চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট করলাম। ”

বাড়ির সকলের থেকে বিদায় নিয়ে আরশ অবনি বেরিয়ে পড়লো।

________________________

বিকেল বেলা সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে আরশ অবনি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গেলো। দুজন সমুদ্র পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। পানির স্রোত এসে তাদের পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। তাদের দুজনের চোখ পশ্চিম আকাশে।একটু একটু করে সাগরের বুকে হেলে পড়ে সূর্য! সাগরের বুকে যতোই হেলে পড়ছে সূর্য, ততোই আবিররঙা হয়ে উঠে আকাশ, চারপাশ।

নিরবে সৈকতে আছরে পড়ছে সাগরের ঢেউ। সেই ঢেউয়ে নেমে পা ভিজে আরশ আর অবনি সূর্যাস্ত দেখছে। সূর্যটি ক্ষনিকেই আরো হেলে পড়লো। নিমিষেই একেবারে সাগরের বুকে ছুঁই ছুঁই লাল সূর্য। গোধুলি লগ্ন শেষে সূর্য ডোবার পরও আকাশে দৃশ্যমান।

আকাশের দিকে তাকিয়ে অবনি বলল-
” আমার খুব ভয় হয় জানেন। কখনোও যদি আপনি আমাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেন৷ সূর্যটির মতো আপনার ভালোবাসাটা যদি কখনো ডুবে যায়!”

আরশ অবনির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে অবনির কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলল-
” আমার ভালোবাসা চাঁদ নয় যে ডুবে যাবে, আমার ভালোবাসা সূর্য নয় যে অস্ত যাবে, আমার ভালোবাসা অক্সিজেনের মতো সারাজীবন তোমার মাঝে বেঁচে থাকবে।”

রাতের খাবার শেষে দুজন লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো। মধ্যরাতে অবনি নাআআআ করে চিল্লিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো। অবনির চিৎকার শুনে আরশ ঘুম থেকে উঠে লাইট অন করলো। আরশ দেখলো অবনির চোখে মুখে আতঙ্কের চাপ। আরশ অবনির কাছে গিয়ে বলল-
” কি হয়েছে অবনি? কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছো? ”

অবনি হুট করেই আরশকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। অবনিকে এরকম কাঁদতে দেখে আরশ হতভম্ব হয়ে গেলো। আরশ বুঝতে পারছে অবনি ভয়ংকর কোনো স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে গেছে। আরশ অবনিকে পানি খাইয়ে দিলো।

আরশ অবনির গালে হাত রেখে বলল-
” শান্ত হও। তোমাকে না বলেছি কান্না করবেনা। কি হয়েছে কান্না করছো কেনো বলো আমাকে? ”

অবনি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল-
” চলুন না আমরা বাড়ি ফিরে যাই। ”

” হোয়াট? কি যা-তা বলছো? ”

” আমি খুব ভয়ানক স্বপ্ন দেখেছি। একটা কালো ছায়া আপনাকে আপনার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। কিছুদূর যাওয়ার পর কালো ছায়াটি আপনাকে ধাক্কা দিয়ে খা’দের দিকে ফেলে দিলো। আমি আপনাকে বাঁচাতে পারিনি। ”

অবনির কথা শুনে আরশ হেসে বলল-
” লাইক সিরিয়াসলি! তুমি একটা স্বপ্ন নিয়ে এরকম ডেস্পারেট হয়ে উঠেছো? ছায়াটা তোমারই প্রেতাত্না ছিলো। ”
কথাটা বলে আরশ অট্টহাসি হেসে দিলো।
অবনি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
” আপনার হাসি পাচ্ছে? আমার নিজেকে কতোটা অসহায় মনে হয়েছিলো জানেন আপনি? আপনার সাথে আমি আর কথাই বলবোনা৷ ”

কথাটা বলে অবনি উঠে যেতে নিলে আরশ অবনির হাত ধরে নিজের কাছে টেনে এনে বলল-
” এটা জাস্ট একটা স্বপ্ন। এছাড়া কিছুই নয়। সারাক্ষণ মাথার মধ্যে আমাকে নিয়ে এসব উল্টো পাল্টা চিন্তা ঢুকিয়ে রাখলে তো স্বপ্নে এসবই দেখবে তাইনা। ”

অবনি আরশের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকাতেই আরশ বোকা হাসি দিয়ে বলল-
” না মানে আমি বলতে চাইছি এটা জাস্ট তোমার মনের ভুল ভাবনা। আমি তো স্বপ্নে দেখলাম তুমি সাদা পাঞ্জাবি পড়ে, মুখের মধ্যে ময়দা মেখে, চোখে আর ঠোঁটে মোটা করে কাজল লাগিয়ে তেঁতুল গাছের উপরে বসে হো হো করে হেসে আমাকে ভয় দেখাচ্ছ। বাই এনি চান্স তুমি কি সত্যিই এরকম কিছু প্ল্যান করছো নাকি? ”
কথাটা আরশ বানিয়ে বলেছে অবনির মাথা থেকে দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য।

আরশের কথা শুনে অবনি রেগে আরশকে বালিশ দিয়ে মারতে শুরু করলো।
” দেখলে তো আমি বলেছিলাম না সেই কালো ছায়া তুমি ছাড়া অন্য কেউ হতেই পারেনা৷ এখন মিললো তো আমার কথা? তুমি আসলেই তেঁতুল গাছের পেত্নী। ”

” কি বললেন? আমি কালো ছায়া পেত্নী? ”
কথাটা বলে অবনি আবার বালিশ দিয়ে মারতেই আরশ কোনোমতে উঠে দৌড় দিলো। দুজনে বিছানার চারপাশে ঘুরছে আর হাসছে। কিছু সময় পর দুজনই হাঁপিয়ে গেল। আরশ অবনির দিকে তাকিয়ে বলল-
” অনেক হয়েছে। এবার ঘুমাবে চলো। ”

কথাটা বলে আরশ লাইট অফ করে দিলো। তারপর দুজন পুনরায় শুয়ে পড়লো। আরশের চোখে ঘুম এলেও অবনির কেনো জানি ঘুম আসছেনা। বার বার স্বপ্নটি তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সত্যিই ভুল ভাবনা নাকি কোনো অশুভ ইঙ্গিত!

_________________

পরদিন সকাল সকাল তারা দুজন নাস্তা শেষে হিমছড়ি পাহাড়ে গেলো। বিকেল বেলা দুজন আবারও ঘুরতে বের হলো৷ অবনি ঝিনুকের গহনা, শোপিছ এসব দেখছে। আরশের মোবাইলে একটা কল আসে আরশ এক সাইডে গিয়ে কথা শেষ করে অবনির কাছে এসে বলল-
” তুমি এখানেই থাকো আমি আসছি৷ ”

আরশের এরকম বিষন্ন চেহারা দেখে অবনি বলল-
” কোথায় যাচ্ছেন আপনি? কিছু কি হয়েছে? ”

” এতোকিছু বলতে পারবোনা। আমি খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো। তুমি এখান থেকে কোথাও যাবেনা। ”

কথাটা বলে আরশ বেরিয়ে যেতে নিলে অবনি আরশের হাত ধরে বলল-
” কি এমন জরুরি কল এলো আপনার যে আপনাকে এখনি যেতে হচ্ছে?”

” আশ্চর্য তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো?আমার উপর ভরসা নেই তোমার? ”
অবনি আরশকে জড়িয়ে ধরে বলল-

” আছে তো। কিন্তু কালকে স্বপ্নটা…..”

অবনির পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে আরশ ওকে থামিয়ে বলল-
” ছেলেমানুষী করো না অবনি। আমি যাবো আর আসবো। ”
কথাটা বলে আরশ বেরিয়ে পড়লো। আরশ যাওয়ার বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলো৷ এদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে কিন্তু আরশ আসছে না দেখে অবনির মনে অজানা ভয় সৃষ্টি হলো। এমনিতেই কাল রাতে ভয়ানক স্বপ্ন দেখেছে৷ অবনি দোকান থেকে বেরিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালো। কিছুদূর যেতেই অবনি থমকে দাঁড়ালো। অবনির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। চারপাশের সব যেনো অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। অবনি নাআআআ করে চিৎকার করে। অবনির চিৎকার শুনে লোকজন দ্রুত এগিয়ে এলো। চোখের সামনে যা দেখলো তাতে অবনি বাকরুদ্ধ হয়ে মুহূর্তেই সেন্স হারিয়ে ফেললো৷

#চলবে….

( ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। গাইস কেউ হাইপার হইও না। রিলাক্স 🥹🤌 তোমাদের বেশি সাড়া পেলে নেক্সট পার্ট বড় করে দিবো 🫰)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here