#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ২২
🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ
অবনি এক বালতি পানি এনে সিঁড়ি পরিষ্কার করছে। হাসান চৌধুরী এসেছিলো প্রানপ্রিয় বন্ধুর একমাত্র মেয়েকে দেখতে। কিন্তু এসে যা দেখলেন তার জন্য তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। ড্রয়িং রুমে প্রিয়া খান টিভি দেখছে। জাহানারা খান মনোযোগ সহকারে পেপার পড়ছেন। আর এদিকে অবনি একা একা সিঁড়ি পরিষ্কার করছেন। তিনি অবনিকে ডাক দিয়ে বললেন –
” অবনি মা। ”
অবনি পেছন ফিরে হাসান চৌধুরীকে দেখতেই দ্রুত পায়ে তার কাছে এগিয়ে গিয়ে সালাম দিয়ে বলল-
” কেমন আছেন আঙ্কেল? ”
হাসান চৌধুরী চোয়াল শক্ত করে বললেন-
” আমি কেমন আছি সেটা দেখা বিষয় নয়। প্রথমত দেখার বিষয় হচ্ছে এ বাড়ির মানুষগুলো দিন দিন কেমন জানোয়ারের মতো হয়ে যাচ্ছে। ”
হাসান চৌধুরীর কথায় প্রিয়া খান টিভি অফ করে দিয়েছে। জাহানারা খান পেপার থেকে চোখ সরিয়ে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল-
” তুমি কি বলছো তুমি তা বুঝতে পারছো হাসান? ”
” না বোঝার তো কিছু নেই মিসেস খান! আমি কি কিছু ভুল বলেছি? আপনি নাকি একজন বিচারক? খুব বিচক্ষণ মানুষ! আপনার বিচক্ষণতার তারিফ না করে পারছিনা। একটা মেয়ে এটুকু বয়সে এতো একের পর এক শক পেয়েছে৷ যেই সময়টাতে ওর আপনাদের বেশি প্রয়োজন ছিলো ঠিক সেই সময়টাতেই আপনারা তার সাথে জানোয়ারের চেয়েও বেশি খারাপ আচরন করছেন। আই কান্ট বিলিভ দিস। ”
প্রিয়া খান উত্তেজিত হয়ে বলল-
” হাউ ডেয়ার ইউ? আপনার সাহস তো কম না আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের অপমান করছেন? জানোয়ারের কথা বলছেন? জানোয়ার তো এই মেয়েটা। আমার একমাত্র ছেলেটাকে খেয়ে ফেলেছে। আমরা ভালো মানুষ বলেই ওকে এখনো জেলের ভাত খাওয়াইনি। এ বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছি। অন্য কেউ হলে এতোদিতে কয়েদখানা থাকতে হতো। ”
” হ্যাঁ। অনেক করে ফেলেছেন আপনারা মেয়েটার জন্য। আর করতে হবেনা। অবনি আমার মেয়ে। আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে। ”
প্রিয়া খান রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল-
” তো নিয়ে যান না কেনো? আপদ বিদেয় হলেই বাঁচি। ”
হাসান চৌধুরী অবনি কাছে গিয়ে প্রিয়া খান আর জাহানারা খানের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল-
” চল মা আমার সাথে চল। এতো ভালো মানুষের ভিড়ে তুই ভালো থাকতে পারবিনা। আমারি দোষ যে আমি তোর জীবনটাকে নরকের দিকে ঠেলে দিয়েছি এবার আমাকে তার পাশ্চিত্য করতে দে।”
কথা বলতে অবনি ধলা পাকিয়ে আসছে। তবুও অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল-
” এসব কি বলছো আঙ্কেল। আমার ভাগ্য আমার সাথে বেইমানী করেছে। এতে তোমার কোনো দোষ নেই। আমার কপাল নিয়েই আমায় থাকতে দাও। তুমি যাও আঙ্কেল তুমি চলে যাও। আমি এখানেই ভালো থাকবো। ”
কথাটা বলে অবনি কাঁদতে কাঁদতে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
হাসান চৌধুরী যাওয়ার আগে বলে গেলো-
” একটা নিরীহ মেয়ের সাথে আপনারা যা শুরু করেছেন৷ একদিন এরজন্য আফসোস করতে হবে কথাটা মাথায় রাখবেন৷ ”
অবনি বালিশের মুখ গুঁজে কান্না করছে। বালিশ থেকে মাথা তুলে নিজে নিজেই বলছে-
” কেনো আপনি আমার থেকে দূরে সরে আছেন। আমার কষ্ট দেখে আপনার খুব আনন্দ হচ্ছে তাইনা। আনন্দ হবে নাই-বা কেনো। আপনি তো অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে তা কখনোই সহ্য করতে পারবোনা মিস্টার আরশ খান। আত্মহত্যা যদি মহাপাপ না হতো তাহলে এই মুহূর্তে নিজের জীবন দিয়ে সকলকে মুক্তি দিয়ে দিতাম। সেটা তো আর সম্ভব নয় তাই এখানে থেকেই কষ্ট পেয়ে পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরতে চাই৷ আমি কষ্ট পেলেও তো আপনার কিছু যায় আসে না। ”
তখনই ড্রয়িং রুম থেকে অবনির ডাক পড়লো। অবনি চোখের পানি মুছে দরজা খুলে ড্রয়িং রুমের দিকে গেলো।
অবনি ড্রয়িং রুমে আসতেই চৈতী বলল-
” অবনি কিছু মনে করোনা। আমার দু’হাতে নেলপলিশ লাগানো। তুমি একটু কষ্ট করে আমার পায়ে নেলপলিশ দিয়ে দাও। ”
মারিয়া চৈতীকে বলল-
” মেডাম ভাবি মনিরে কওনের কি দরকার? আমারে দেন আমি দিয়া দিই।”
চৈতী মারিয়াকে চোখ রাঙিয়ে বলল-
” শাট আপ। গিয়ে নিজের কাজ করো। তোমার সাহস তো কম না। তোমার নোংরা হাত দিয়ে আমার পায়ে নেলপলিশ লাগাতে চাইছো? অবনি দ্রুত নেলপলিশটা লাগাও। জানোই তো আমি তোমার মতো অবসর নই। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এখন আমাকেই সামলাতে হচ্ছে। সো বি আরলি। ”
ড্রয়িং রুমে জাহানারা খান, প্রিয়া খান, আকবর খান উপস্থিত ছিলো। তারা চা খাচ্ছে আর এমন ভাব নিয়ে রয়েছে যেনো এদিকে কি হচ্ছে তাদের খবরই নেই। তাদের খাপছাড়া ভাব দেখে অবনি বিষন্নতার শ্বাস নিয়ে ফ্লোর বসে চৈতীর পায়ে নেলপলিশ লাগাতে নিতেই হঠাৎ কারো হাতে তালির শব্দ কানে ভেসে এলো। সকলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বিস্মিত হয়ে সকলে সদর দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো।
” বাহ! বাহ! বাহ! অসাধারণ দৃশ্য। এরকম দৃশ্য তো সিনেমা তেও দেখা যায়না। এটা তো সিনেমা কেও হার মানায়। তা খান বাড়িতে এই ঐতিহ্য কবে থেকে শুরু হলো? ”
চৈতীর হাত পা থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো। মুহুর্তেই সারা শরীর ঘামতে শুরু করলো। বাড়ির সকলে বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। মুখ থেকে আওয়াজ বের হচ্ছে না। সকলের মনে প্রশ্ন এতো মীর মুগ্ধ। চৈতীর মোবাইলে দেখেছিলো ছেলেটিকে। পুরো আরশের মতো দেখতে। কিন্তু ছেলেটি হঠাৎ কিসব বলছে। সবাই জিজ্ঞেসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চৈতী কাঁপা কাঁপা গলায় বলল-
” ততুমি? ”
আরশ তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল-
” হ্যাঁ আমি৷ কেনো চিনতে খুব অসুবিধা হচ্ছে নাকি এভাবে মুগ্ধ থেকে আরশ হয়ে ফিরবো তা ভাবতে পারিসনি। আমিই আরশ খান। খান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি মালিক আকবর খানের একমাত্র ছেলে আরশ খান। ”
কথাটা শুনে অবনির চোখ খুশির ঝলক ফুটে উঠলো। চোখের কার্নিশ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরলো। অবনির খুব ইচ্ছে করছিলো আরশকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে গেলো আরশের সেদিনের ব্যবহারের কথা। অবনি খুব কষ্ট পেয়েছে। তাই অবনির আবেগ থেকেও অভিমানের পাল্লা ভারী হয়ে আছে। ভেবে নিয়েছে আরশের সাথে আর কথা বলবেনা।
.
এদিকে বাড়ির সকলে যেনো নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। প্রিয়া খান কান্না মিশ্রিত গলায় কাপাঁ কাপাঁ কন্ঠে বলল-
” বাবুন! ”
চৈতী চমকে বলল-
” খালামনি তুমি এই ছেলের কথা একদম বিশ্বাস করবেনা। তুমি বুঝতে পারছোনা এই মেয়েটা সম্পত্তির লোভে এই ছেলেকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে৷ সেজন্যই এখন মুগ্ধ ছেলেটাকে আরশ সাজ……”
আর কিছু বলার আগেই আরশ চৈতীর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। চৈতী গালে হাত দিয়ে বলল-
” হাউ ডে…..”
অসম্পূর্ণ কথার মাঝেই আবারও থাপ্পড় পড়লো চৈতীর গালে। থাপ্পড়টা এতো জোরে ছিলো যে সকলে চমকে উঠলো।
আরশ চোয়াল শক্ত করে বলল-
” যতোবারই কথা বলতে যাবি ঠিক ততোবারই এভাবেই থাপ্পড় খাবি। ”
আকবর খান বলল-
” এই ছেলে তুমি যে আমাদের আরশ তার কোনো প্রমান আছে তোমার কাছে? ”
প্রিয়া খানও তাল মিলিয়ে বলল-
” সত্যিই তো! আমরা কি করে বুঝবো তুমি এই মেয়েটার সাথে হাত মিলিয়ে এমন করছো না? চৈতী তো ঠিকই বলেছে এমনও তো হতে পারে এই মেয়েটা তোমাকে সম্পত্তির লোভ দেখিয়ে আমার ছেলে সাজিয়ে এনেছে। দেখো তুৃমি নিজেই বলেছিলে তুমি সঙ্গীত শিল্পী মীর মুগ্ধ আমার ছেলের মতো দেখতে।তাহলে হঠাৎ কি মনে করে আমার ছেলে সেজে এ বাড়িতে পা দিয়ে মাস্তানি শুরু করে দিয়েছো? ”
#চলবে….
( ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।সকলের মন্তব্য আশা করছি।)