প্রেম_হয়ে_এলি_তুই #লেখিকা : #Ohoa_Akter #পর্ব : ৭

0
119

#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #Ohona_Akter
#পর্ব : ৭

🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~

” এই একদম বাজে কথা বলবেন না। আমার কথা বাদ দিয়ে নিজের কথা বলুন। এতোক্ষণ তো খুব বড় বড় কথা বলছিলেন আরশ খান এসবে ভয় পায় না এখন কোথায় গেলো আপনার এতো বড় বড় কথা? যান গিয়ে সা’প’টিকে শায়েস্তা করুন! ”

” আমি তোমার মতো সা’প’কে ভ’য় পাইনা, তারমানে এই নয় যে সত্যিকারের সা’প কে ভ’য় পাবো না। ”

অবনি রেগে গিয়ে বললো-
” এই কি বললেন আপনি আমি সা’প? ”

” তা নয়তো কি! শুধু সা’পই নও তুমি একটা নাগিনী। ”

” আমি নাগিনী! ”

” নাগিনীই তো, আমাকে মা’রা’র জন্যই তো এ বাড়িতে এসেছো। ”

” আমি নাগিনী হলে আপনি হলেন শেওড়া গাছের পেত্নীর জামাই। ”

” এক্সাক্টলি তাই! তুমি তো পেত্নীর মতোই আমার ঘাড়ে চেপেছো! ”

” একদম বা’জে কথা বলবেন না। আপনার মতো অসভ্য লোকের ঘাড়ে চাপার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও আমার নেই৷ আমি যদি জানতাম পাত্রের আপনি থাকবেন তাহলে আপনাকে বিয়ে করার চেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে মরতাম। ”

” এক মিনিট এক মিনিট! তুমি আবার ইচ্ছে করে আমাকে মারার জন্য সাপটা বিছানায় ছেড়ে দাও নি তো?”

” এই আপনি কি মাথায় গোবর নিয়ে ঘুরেন নাকি? আমি যদি সা’প টা বিছানায় ছেড়ে দিতাম তাহলে আমি রুম থেকে বেরিয়ে যেতাম না? আমি কি যাদু দিয়ে বাইরে গিয়ে দরজা লক করে আবার ভেতরে চলে এসেছি! এই বুদ্ধি নিয়ে আপনি টপ বিজনেসম্যান হয়েছেন? হাই ফানি! ”

” চুপ, এখন এতো লেকচার না দিয়ে দরজায় ধাক্কা দাও সেটা কাজে লাগবে। ”
জাহানারা খান সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসছেন বক্সে করে কিছু গহনা নিয়ে। এদিকে ছেলের ভয়ার্ত কন্ঠ শুনে প্রিয়া খান আর চুপ থাকতে পারলো না।

” চৈতী দরজাটা খোল বাবুন ভয় পাচ্ছে। ওই মেয়েকে অন্যভাবে শায়েস্তা করা যাবে। দেখছিস না বাবুন কতোবার করে বলছে দরজা খোলার জন্য। ”

” খালামনি তুমি বুঝতে পারছোনা ওতো নিজের বউকে সা’পের কা*ম*ড় থেকে বাঁচানোর জন্য চেঁচাচ্ছে। ”

তখনই জাহানারা খান এসে শক্ত কন্ঠে বললো-
” কি হচ্ছে এখানে? দুজন মিলে এখানে কি করছো?”

জাহানারা খানের কথায় প্রিয়া খান আর চৈতী দুজনই ভ’য় পেয়ে গেলো। প্রিয়া খান তো মনে মনে নিচের কপাল চাপড়াচ্ছে আর মনে মনে বলছে-

” হায় হায়রে! গেলো গেলো আমার সব কিছু গেলো। এখন যদি এই শাশুড়ী মা সবটা জানতে পারে আর বাবুন যদি জানে তার মা তার ঘরের মধ্যে সা’প ঢুকিয়ে দিয়েছে তাহলে তো বাবুন আর জীবনে আমাকে মা বলে ডাকবে কি’না সেটাও সন্দেহ আছে৷ ”
তাদের চুপ থাকতে দেখে জাহানারা খান বলল-
” কি ব্যপার চুপ করে আছো কেনো? আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি শুনতে পাচ্ছ না? ”

চৈতী কাঁপা কাঁপা গলায় বললো-
” নননা দাদু কি……”

আর কিছু বলার আগে আবারও রুম থেকে শব্দ এলো-
” প্লিজ কেউ দরজাটা খোলো রুমের ভেতর সা’প ঢুকেছে। ”

কথাটা জাহানারা খানের কানে আসতেই তিনি ঘাবড়ে গেলেন। জাহানারা খান দ্রুত দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। দেখতে ফেলো দরজা বাইরে থেকে লক করা জাহানারা খান পেছন ফিরে চৈতী আর প্রিয়া খানের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকাতেই তারা অপরাধী ভঙ্গিতে নিচের দিকে চোখ নামিয়ে নিলো। জাহানারা খান দ্রুত দরজা খুলে দিলো৷ দরজা খুলতেই আরশ আর অবনি দ্রুত বেরিয়ে এলো।

জাহানারা খান সার্ভেন্টসকে ডেকে বললো দারোয়ান কে লাঠি নিয়ে আসতে রুমের ভেতর সা’প ঢুকেছে।

আরশ জাহানারা খান কে জড়িয়ে ধরে বললো-
” জানেমান তুমি এসেছ। আমি জানতাম আমার যেকোনো বিপদে তুমি সব সময়ই আমাকে ছায়ার মতো আগলে রাখবে। ”
জাহানারা খান আরশের গালে হাত রেখে আদর করে চৈতীর দিকে এগিয়ে গিয়ে ঠাস ঠাস করে দু’টো থাপ্পড় মেরে দিলো। থাপ্পড়টা এতো জো’রে ছিল যে চৈতী চিটকে ফ্লো’র পড়ে গেল। প্রিয়া খন চৈতীকে ধরে দাড়ঁ করালো। জাহানারা খানের এমন কাজে আরশ অবাক হয়ে বললো-

” কি ব্যপার দাদু তুমি ওকে এভাবে মারলে কেনো?”

” দাদু ভাই তুমি খুব ভালো করেই যানো বিনা দো’ষে আমি কারো গায়ে হাত তুলি না। ওকেই জিজ্ঞেস করো আমি কেনো তার গায়ে হাত তুলেছি। ”

আরশ চৈতীর সামনে দাঁড়িয়ে বললো-
” কি ব্যপার তুই কি এমন করেছিস যার জন্য দাদু এতো রেগে গেলো? চুপ করে আছিস কেনো? আনসার মি! এক মিনিট বাই এনি চান্স সা’প’টা তুই আমাদের ঘরে ঢুকিয়ে দিসনি তো?”

আরশের কথায় জাহানারা খান বলল-
” ঠিকই ধরেছ তুমি দাদুভাই। সা’প’টি ও-ই তোমাদের রুমে ঢুকিয়ে দিয়েছেলো শুধু তাই নয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিলো এতোক্ষণ। ”

” হোয়াট? ”

” আরশ বিশ্বাস কর আমি জাস্ট মজা করার জন্যই…”

” হোয়াট দ্যা? আর ইউ মেড? সা’প কি মজা করার জিনিস। ”

” আরশ প্লিজ তুই আমাকে ভু’ল বুঝিসনা ওই সা’পটি তো তোকে কা*ম*ড়া তো না। ওটা একটা মন্ত্রপুত সা’প। ”

” এই মাথা কি পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেছে তোর? একজন এডুকেটেড পিপল হয়ে তোর মুখে যে এসব কথা মানায় না তুই সেটা বুঝতে পারিছস না? তোর এই মজার চক্করে পড়ে আজ কতো বড় একটা এক্সিডেন্ট হতে পারতো তার ধারণা আছে তোর? ছি ছি ছি! আজকের পর থেকে তোকে যেনো আমার চোখের সামনে তো দূরের কথা এ বাড়ির ত্রিসীমানয় ও না দেখি, কথাটা মাথায় রাখিস। ”

ছেলের এমন কথা শুনে প্রিয়া খানের মনটা কেঁদে উঠলো। তিনি আরশকে বললো-
” বাবুন রাগ করিসনা বাবা। মেয়েটা ভুল করে এমন কাজ করে ফেলেছে আর কখনো এমন ভুল হবে না। তুই প্লিজ মেয়েটাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিস না। মেয়েটা এ বাড়ি ছেড়ে আর কোথাও তো যাওয়ার জায়গা নেই বল। ”
জাহানারা খান প্রিয়া খানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই প্রিয়া খান চুপ হয়ে গেল। মায়ের কথায় আরশ বললো-

” বেশ এ বাড়িতে নাহয় থাকতে দিলাম। কিন্তু নেক্সট টাইম আমার চোখের সামনে যেনো ওকে না দেখি। যত্তসব ডিজগাস্টিং! ”

জাহানারা খান অবনিকে বলল-
” মিষ্টি এই বক্সটা নিয়ে আমার রুমে গিয়ে বসো আমি আসছি৷ ”
জাহানারা খানের কথায় অবনি বক্সটি হাতে নিয়ে সোজা জাহানারা খানের রুমের দিকে চলে গেলো। জাহানারা খান প্রিয়া খান কে উদ্দেশ্য করে বলল-

” শুধুমাত্র আমার দাদুভাই আর আমার ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে তোমাকে এবাড়িতে এখনো অ্যালাও করছি তার মানে এই নয় দিনের পর দিন তোমার এসব অনৈতিক কাজ গুলোকে চুপচাপ মেনে নিবো। আজকে দাদু ভাইয়ের সামনে তোমার নামটা নিলাম না কারন আমি চাইনি দাদু ভাইয়ের মনে তোমার জন্য যেটুকু সম্মান অবশিষ্ট আছে সেটুকু শেষ হয়ে যাক। তবে ভবিষ্যতেও যে চুপ করে থাকবো তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ আশা করি ভবিষ্যতে সেটা মাথায় রেখেই তুমি যেকোনো কাজে পা বাড়াবে। নাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। কথাটা মাথায় রেখো।
কথাটা বলে জাহানারা খান চলে এলো। জাহানারা খান যেতেই প্রিয়া খান হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।
” উফফফ, যাক বাবা বাবুনের সামনে আমার নামটা যে প্রকাশ করেনি সেটাই অনেক। ”

________________

জাহানারা খান রুমে প্রবেশ করতেই অবনি উঠে দাঁড়ালো।
জাহানারা খান অবনির প্রতিটি কাজেই মুগ্ধ৷ তিনি অবনিকে নিজের পাশে বসিয়ে বাক্সটি খুলে গহনা গুলো নিয়ে বলল-

” মিষ্টি এইযে গহনা গুলো দেখছো। এগুলো আমার শাশুড়ী মা আমাকে দিয়েছিলেন। কারন তার কাছে আমাকে এ বাড়ির যোগ্য বউ মনে হয়েছিল। এরপর এই গহনা আর কারো হাতে যায়নি কারন, তোমার শাশুড়ী মায়ের আচরণ আমার কখনোই ভালো লাগেনি। তার মধ্যে আমি কখনো কোনো গুন দেখিনি যা ছিল শুধু সম্পত্তির লো’ভ। কিন্তু তোমাকে আমার এ বাড়ির যোগ্য বউ মনে হয়। তাই আজ থেকে এ গহনা আর এ বাড়ির চাবি আমি তোমার হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাই। ”

” না না দাদু এসব কি বলছেন আপনি। এসব আপনার জিনিস। আমি এগুলো নিতে পারবোনা। ”

” কেনো মিষ্টি? আমার দেওয়া জিনিসের মূল্য তোমার কাছে নেই? নাকি তুমি এসবে খুশি হওনি?”

” ছি ছি! এসব কি বলছেন। আমার কাছে এগুলো আমার জীবনের চেয়েও বেশি মূল্যবান। কারন এসবের মধ্যে আপনার মতো একজন সৎ আদর্শবান মানুষের ছোঁয়া রয়েছে৷ ”

” বেশ তাহলে তুমি সাচ্ছন্দ্যে এগুলো গ্রহন করো। ”

” আপনি যাতে এতোবার বলছেন আমি আপনার কথা অমান্য করতে পারবোনা। তাই আমি শুধু গহনা গুলো উপহার হিসেবে নিচ্ছি। কিন্তু এ বাড়ির চাবি আমি নিতে পারবো না। যতদিন আপনি জীবিত আছেন। ততদিন এ চাবি শুধু আপনারই থাকবে। ”

অবনির কথা শুনে জাহানারা খান বলল-
” সত্যি মিষ্টি তোমাকে যতোবারই দেখছি ততোবারই তোমার ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করে তুলছে।” তারপর জাহানারা খান আলমারিতে চাবিটি তুলে রেখে আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করলো।

” এ শাড়িটি আমার বিয়ের। অতি যত্নে শাড়িটি কে তুলে রেখেছিলাম। আজ দেখবো আমার মিষ্টি কে এই শাড়িতে কেমন লাগে। ”

” কিন্তু দাদু আমি তো শাড়ি পড়তে জানি না। ”

” তাতে কি হয়েছে! আমি আছি না?আমি পড়িয়ে দিবো। ”
এতোক্ষণ দরজার আড়ালে থেকে প্রিয়া খান আর চৈতী সবই দেখছিলো। অবনি আর জাহানারা খান কে দরজার দিকে পা বাড়াতে দেখে তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে কোনো রকমে পালিয়ে বাঁচল।

জাহানারা খান আর অবনি ড্রয়িং রুমে আসতেই আরশ তাদের কাছে এসে বলল-
” দাদু বিদ্যুতের সাথে আমার কথা হয়েছে। বিদ্যুৎ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের বাসায় আসবে। ”

আরশের কথায় অবনি বলল-
” এ্যাঁ! বিদ্যুৎ? এই আপনি কি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেললেন নাকি! চোখের সামনে এতোগুলো লাইট জ্বলছে। মাথার উপর ভোঁ ভোঁ করে ফেন চলছে, এসি চলছে, তারপরও বলছেন বিদ্যুৎ আসবে!”

” শাট আপ! ইডিয়ট, এই বিদ্যুৎ সেই বিদ্যুৎ নয়! আমার ফ্রেন্ডের নাম। ”

” ও আচ্ছা তাই বলুন! আপনার বন্ধুর নাম তো দেখছি আপনার মতোই অদ্ভুত। ”

#চলবে…..

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক মন্তব্য চাই কিন্তু। সবার সাড়া পেলেই গল্পটি বড় করবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here