#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ৫
🚫 ~ কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~
” আপনি? আপনি এভাবে আমাকে টেনে নিয়ে এলেন কেনো? আমি কতোটা ভ’য় পেয়ে গেছিলাম ধারণা আছে আপনার! ”
” এই মেয়ে তোমার কি মিনিমাম কনমসেন্স নেই? তুমি বাবা মায়ের দরজার আড়ালে আড়ি পেতেছিলে! কারো পার্সোনাল কথা আড়ি পেতে শুনতে নেই এটা জানা নেই তোমার! এখন যদি আমার জায়গায় অন্য কেউ চলে আসতো তখন কি হতো! ”
” আরে আমি তো…. ”
” চুপপ আর একটা কথাও না। চুপচাপ খাবার খেয়ে নাও। ”
“ কিন্তু আমার কথা….” আর কিছু বলার আগেই আরশ অবনির মুখে খাবার পুড়ে দিলো।
” আর একটা কথাও না দ্রুত খাবার শেষ করো। একটু পর আর খাওয়ার সময়টুকু পাবে না। পার্লার থেকে কয়েকজন বিউটিশিয়ান আসবে তোমাকে সাজাতে তাই তাড়াতাড়ি খাবারটা শেষ করো। ”
” কেনো কেনো? সামান্য বৌভাতের অনুষ্ঠানে পার্লার থেকে লোক এনে সাজানোর কি দরকার! আমি নিজেই তো যথেষ্ট সুন্দর করে সাজতে জানি। ”
” আর ইউ ক্রেজি? আমাদের ফাংশনে কতো নামি-দামি লোকজন আসবে তার ধারণা আছে তোমার? চুপচাপ দ্রুত খাবার খেয়ে নাও। ”
কথাটা বলে আরশ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর পার্লার থেকে কয়েকজন বিউটিশিয়ান অবনিকে সাজিয়ে দিলো। অবনিকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। ব্লু কালার লেহেঙ্গা, ডায়মন্ডের জুয়েলারি, সিম্পল মেকআপ, স্টাইলিশভাবে খোপা ব্যাস এইটুকু তেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে অবনিকে। বিউটিশিয়ানরা গর্জিয়াস মেকআপ করাতে চেয়েছিলো। কিন্তু অবনি বারন করায় সিম্পল মেকআপ করিয়েছে। অবনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে। তখনই আরশ রুমে প্রবেশ করতেই অবনিকে দেখে কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়। তার চোখ আঁটকে যায় অবনির দিকে। আরশের পারফিউমের গ্রান’টি পুরো রুমে ছড়িয়ে পড়ে। এই স্মেইলটা অবনির খুব ভালো লাগে। অবনিও আয়নার মধ্যে আরশকে দেখে একদৃষ্টিতে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো। আরশকে সবসময়ই সুন্দর লাগে তবে আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। ব্লু কালার ড্রেস, হাতে চকলেট কালার ফিতার ঘড়ি, স্পাইক করা চুলে যেনো আরশকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। আরশের উপস্থিতিতে অবনির হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলো। এমনটা আগেও হতো অবনির কিন্তু তা শুধু ভয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু এখন যেনো অন্যরকম শিহরন বয়ে গেলো। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। আরশের মোবাইলে একটা কল আসায় আরশ আর অবনির ঘোর কা’টে। আরশ তাতক্ষনাত দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। এতোক্ষণ ছ্যচড়ার মতো তাকিয়ে ছিলো ভাবতেই অবনি লজ্জা পেয়ে গেলো। আরশ নিজে নিজে বলছে-
” ছি ছি! আরশ তুই এতোক্ষণ ভ্যাবলার মতো এই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলি! এই মেয়েটাকে আগে কখনো দেখিসনি নাকি? ভুলেও আর কখনো এই গু*ন্ডি মেয়েটার দিকে তাকাবি না। ”
আরশ মোবাইলে কথা শেষে অবনিকে বললো-
” এসো গেস্টরা অলরেডি চলে এসেছে আমাদের নিচে যেতে হবে। ”
” তো! যান না আপনি! আমি কি একা হাঁটতে পারি না? শুনুন আমার দুটো পা আছে, আমি একাই যেতে পারবো বুঝেছেন আপনি? ”
” শোনো তোমার মতো মেয়েকে এমনি এমনি সাথে নিয়ে ঘুরঘুর করার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই বুঝেছো? নেহাৎ এখানে মান্যগন্য ব্যক্তিরা রয়েছে নাহলে তোমার মতো মেয়েকে আমি যেতে বলবো তো দূরের কথা তুমি নিজে থেকে যেতে চাইলেও নিতাম না। ”
” আমার মতো মেয়ে মানে ! হোয়াট ডু ইউ মিন? কি বুঝাতে চাইছেন আপনি?”
” এই, ঝগড়া করাটা কি তোমার হেভিট নাকি! কোনো একটা ইস্যু পেলেই ঝগড়া শুরু করে দাও! ”
” আমি ঝগড়া করছি! ঝগড়া তো আপনি করছেন, অতীতেও করেছেন আর ভবিষ্যতের জন্যও প্রিপারেশন নিচ্ছেন। ”
” হ্যাঁ সব সময় আমিই ঝগড়া করি এবার দয়া করে আমার সাথে নিচে যেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন মহারানী। ”
” থাক থাক! এতো করুন সুরে বলতে হবে না। আমি এমনিতেই খুব দয়ালু মানুষ। কেউ আকুতি মিনতি করে কিছু বললে তার কথা রাখি। নিরীহ পেয়ে কারো মতো ফাঁকা আওয়াজ করিনা। ”
প্রতিউত্তরে আরশ কিছু না। অন্য সময় হলে হয়তো দুজনের মধ্যে টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া লেগে যেতো। কিন্তু কথায় আছে না বিপদে পড়লে কিছু কথা চুপচাপ হজম করতে হয়। আরশের ঠিক সেই দশা৷ তারপর অবনি আর আরশ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো–
সবার দৃষ্টি তাদের দিকে। সবাই বলাবলি করছে কতো সুন্দর মানিয়েছে তাদের। অনেকে বলছে এমন একটা বউমা যদি আমার ছেলের জন্য পেতাম। জাহানারা খান তাদের দিকে এগিয়ে গেলো। আরশ আর অবনি মিলে জাহানারা খান কে পা ছুঁয়ে সালাম করলো। জাহানারা খান অবনির গালে হাত দিয়ে বললো-
“ বাহ! কি মিষ্টি লাগছে আমার মিষ্টিকে। আমি তো একটা মেয়ে হয়েই চোখ ফেরাতে পারছিনা। ”
আরশ অভিমানী সুরে বললো-
“ জানেমান আমার দিকে তো দেখছি তোমার কোনো নজরই নেই! ”
” কে বললো এই কথা? আমার দাদুভাই কে তো অলওয়েজ হ্যান্ডসাম বয় লাগে। আমার দাদু ভাইয়ের রুপে তো আমি বুড়ো বয়সেও প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। ”
তারপর জাহানারা খান দুজনকে আদর করে মেহমান দের কাছে গেলেন৷ আরশ আর অবনি আকবর খান আর প্রিয়া খান কে সালাম করতে গেলো। আকবর খান তাদের দোয়া করে দিলেন। কিন্তু প্রিয়া খান শুধু আরশকেই দোয়া করে দিলো অবনির দিকে ফিরেও তাকালো না। এতে কেনো যানি অবনির বুকে কষ্ট অনুভব হলো। নিজের মনের অজান্তেই চোখের কোনায় পানি চলে এলো হয়তো তার মা বেঁচে থাকলে তাকেও এভাবে আদর করে দিতো। ব্যপারটা আরশের চোখ এড়ায়নি। আরশ তার মাকে বললো-
” উফফ মম! আমাকেই যদি একসাথে সব আদর দিয়ে দাও আরেকজন তো নজর লেগে যাবে পড়ে যদি আমার বদ হজম হয়ে যায়! ”
প্রিয়া খান আবার ছেলের জন্য ওভার প্রজেসিভ, তাই ভয় পেয়ে গেলেন যদি সত্যিই ছেলের বদ হজম হয়ে যায়৷ তাই বাধ্য হয়ে অবনিকেও আদর করে দিলেন।
আরশ আর অবনির জন্য দুটি পাশাপাশি রাজকীয় চেয়ার রাখা হয়েছে। তারা সেদিকটায় যাবে অবনির চোখ পড়লো সদর দরজার দিকে তার বাবা আর হাসান আঙ্কেল আসলে। অবনি তার বাবাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। তারপর পা ছুঁয়ে সালাম করে বললো-
” কেমন আছো বাবা? ”
” তোকে ছাড়া কি করে ভালো থাকিরে মা? তোকে ছাড়া তো কখনোও একা থাকিনি তাই একটু খারাপ লাগছে। তুই কেমন আছিস? ”
” তোমার মেয়ে কি তোমাকে ছেড়ে ভালো থাকতে পারে বাবা? তুমিই তো উঠে পরে লেগেছিলে আমাকে পর করার জন্য। ”
” ওই দেখো বো’কা মেয়ে কান্না করছিস কেনো সাজ ন’ষ্ট হয়ে যাবে তো! তোকে খুব সুন্দর লাগছেরে মা৷ আমি খুব ব্যর্থ বাবা তাই নারে। তোকে কখনো এতো দামী জামাকাপড় অলংকার কিনে দিতে পাড়িনি। ”
” চুপ করো তুমি একদম বা’জে কথা বলবেনা। দামী জামাকাপড় হলেই যে সুখী হতে হবে এমনটা কে বলেছে তোমাকে? তুমি আমাকে রাজকন্যার মতোই রেখেছো। কখনোই অ’ভাব বুঝতে দাওনি। আমি তোমাকে নিয়ে প্রাউড ফিল করি বাবা। ”
আরশ দূর থেকে অবনির বাবাকে দেখে এগিয়ে গেলো। তারপর অবনির বাবাকে আর হাসান চৌধুরী কে সালাম করলো। কিছু কথাবার্তার পর অবনি আর আরশ তাদের রাজকীয় চেয়ারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ পর পর মানুষজন এসে অবনিকে দেখে যাচ্ছে। পুরুষরা আরশের সাথে হ্যান্ডশেক করছে৷
চৈতী আর প্রিয়া খান একসাথে দাঁড়িয়ে শলাপরামর্শ করছে কিভাবে অবনিকে সবার সামনে অপদস্ত করা যায়। চৈতী প্রিয়া খান কে বললো-
“ খালামনি ”
” হুমমম। ”
” কাকে বেশি সুন্দর লাগছে বলো তো? আমাকে? নাকি ওই থার্ডক্লাস মেয়েটিকে? ”
” আরে এটা কোনো প্রশ্ন হলো? তোর চেয়ে সুন্দর হবে ওই মেয়েটা! কোনোদিন তোর নখের সমানও হতে পারবেনা। ”
” সত্যি বলছো? ”
” কি আশ্চর্য আমি আবার মিথ্যে বলতে যাবো কেনো? ”
” তাহলে সবাই ওই মেয়েটার সুনামে পঞ্চমুখ কেনো?”
” দূরর বো’কা মেয়ে! বুঝতে পারছিস না ও এখন এ বাড়ির নতুন বউ। তাও আবার খান বাড়ির পুত্রবধু। কারো ভালো না লাগলেও কি সামনা-সামনি কিছু বলবে নাকি?”
” হুমম সেটা তো বুঝলাম কিন্তু আমি বেশ কয়েকবার লক্ষ্য করলাম আরশ ওই ক্ষে’ত মেয়েটার দিকে কয়েকবার আড় চোখে তাকিয়েছে। ”
” আড়চোখে! আড়চোখে তাকিয়েছে তার মানে মনে হচ্ছে ওদের সম্পর্কটা এখনো পুরোপুরি ঠিক নয়। ”
” কিভাবে বুঝলে তুমি?”
” আরে বুঝতে পারছিস না! যদি ওদের সম্পর্ক ঠিকই হতো তাহলে বাবুন নিজের বউকে দেখার জন্য এতো লুকোচুরির কি দরকার! ”
” হুমম ঠিক বলেছো। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আরশ ধীরে ধীরে মেয়েটার প্রতি উইকি হয়ে পড়ছে। নাহলে যে ছেলে কখনো কোনো মেয়েদের দিকে তাকিয়ে দেখেনি এমনকি আমার দিকেও তাকায়নি সেই ছেলে ওই ক্ষে’ত মেয়েটাকে দেখার জন্য উতলা হয়ে পড়েছে তাও আবার লুকিয়ে লুকিয়ে! ”
” আরে দূরর! আমার বাবুনের মাথা ওতোটাও খা’রা’প নয় যে তোর মতো একটা সুন্দরী মেয়েকে রেখে ওই মিডেল ক্লাস মেয়েটার উপর উইকি হয়ে পড়বে। তুই বরং বাবুনের কাছে যা। তোকে দেখে তো আমিই ফি’দা হয়ে যাই। আর বাবুন তো উষ্ঠা খেয়ে তোর প্রেমে পড়ে যাবে। ”
” ঠিক বলেছো৷ তুমি থাকো আমি আসছি৷ চৈতী গিয়ে আরশকে হুট করে জড়িয়ে ধরে বললো-
” হ্যালো বেইবি! ইউ আর লুকিং সো বিউটিফুল। ”
চৈতী এরকমভাবে আচমকা আরশকে জড়িয়ে ধরবে আরশ তা ভাবতেই পারেনি। বিরক্তিতে আরশের কপালে ভাজঁ পড়লো। হাত মু’ষ্টিব’দ্ধ হয়ে গেলো৷ আরশ চৈতীকে তাতক্ষনাত নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললো-
” কতোবার তোকে বলেছি হুটহাট আমাকে হাগ করবিনা। তারপরও কেনো বার বার ছ্যচড়ামি করছিস? তুই বুঝতে পারছিস না এতে করে তোর উপর আমি যথেষ্ট বিরক্তবোধ করি। তোকে লাস্ট বারের মতো ওয়ার্ন করছি। এখন বিভিন্ন গেস্টরা আছে তাই কিছু করলাম না। নেক্সট টাইম এমন অ’সভ্যতামি করলে কানের নিচে ক’ষে দুইটা থা’প্পড় মে’রে দিবো। ”
চৈতী আরশের রা’গ সম্পর্কে ভালো করেই জানে। তাই আরশের কথায় চৈতী ভ’য় পেলেও আরশকে তা বুঝতে দিলো না।
” কাম অন আরশ। জাস্ট হাগ করেছি। এতে এতো রিয়্যাক্ট করার কি আছে? ”
চৈতীর কথায় অবনি বললো-
” রিয়্যাক্ট করবেনা কেনো ননদিনী? তুমি যদি তোমার ভাই জানের এতো সুন্দরী একটা বউকে পা’ত্তা না দিয়ে কোথাথেকে সুনামির মতো তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আঠাঁর মতো লেগে থাকো তাহলে তো রিয়্যাক্ট তো করবেই তাই না!”
“ স্টপ দিস। এই মেয়ে আমি আমার আরশ বেইবির সাথে কথা বলছি ওকে? সো তোমার মুখটা বন্ধ রাখো। ”
চৈতীর কথা শুনে আরশ বললো-
” ঠিক করে কথা বল চৈতী। তুই মনে হয় ভুলে যাচ্ছিস কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিস। এই মেয়ে নয় ভাবি বলে ডাকবি অবনিকে গট ইট? ”
আরশের কথায় চৈতী জোরপূর্বক মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোঝালো। আরশ চৈতীকে আবারও বললো-
” সরি বল অবনিকে। ”
আরশের কথায় চৈতী উ’ত্তে’জি’ত হয়ে বললো-
” হোয়াট? আমি কেনো সরি বলবো? আমি কি এমন দো’ষ করেছি যার জন্য সরি বলতে হবে! ”
” এই যে একটু আগেই বললি আমার সাথে কথা বলছিস ও যেন মুখটা বন্ধ রাখে সেজন্যই সরি বলবি। ”
” কি যা-তা বলছিস সামান্য একটা কথার জন্য আমার ওকে সরি বলতে হবে? ইম্পসিবল!”
” আমি তোকে সরি বলেছি মানে তুই এখনি সরি বলবি ব্যাস। ”
চৈতী বাধ্য হয়ে অবনিকে সরি বললো। আর মনে মনে বললো-
” আমিও দেখবো অবনির প্রতি তোমার এতো দরদ কতোদিন থাকে। আমার পথের কা’টাঁকে তো আমি ঠিকই উপড়ে ফেলবো।
এদিকে অবনি মুগ্ধতার দৃষ্টিতে আরশের দিকে তাকালো। অবনি যেনো নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। সত্যিই একটা নারী পারফেক্ট মর্যাদা পায় তার স্বামীর কারনে আরশই যেনো তার উদাহরণ।
#চলবে….
(( ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। গঠন মূলক মন্তব্য চাই। সবাই বেশি বেশি সাপোর্ট করবে 🥹🫰))