প্রেম_হয়ে_এলি_তুই #লেখিকা :#Ohona_Akhter #পর্ব : ১১ ( প্রথম অংশ

0
89

#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা :#Ohona_Akhter
#পর্ব : ১১ ( প্রথম অংশ )

🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~

ডাইনিং টেবিলে বাহারি রকমের খাবার সাজানো। আমজাদ আলম একমাত্র জামাইয়ের জন্য সকল খাবার নিজ হাতে রান্না করেছেন। বাবাকে একা এতো খাবার রান্না করতে দেখে অবনি বলল-
” বাবা তুমি কেনো নিজে নিজে এতো কষ্ট করতে গেলে? আমি এসেই তো রান্না করে নিতে পারতাম৷ ”

মেয়ের কথা শুনে আমজাদ আলম বলল-
” এটা কোনো কথা বললিরে মা। তুই কেনো এতো দূর থেকে এসে রান্না করতে যাবি। এখন এতো কথা না বলে চুপচাপ জামাইয়ের পাশে বোস। ”

অবনি তার বাবাকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে বলল-
” একদম বেশি কথা বলবেনা। অনেক হয়েছে এবার তুমি খাবার খেতে বসো আমি খাবার সার্ভ করছি। ”
অবনি আরশকে আর তার বাবাকে খাবার সার্ভ করে দিলো। আমজাদ আলম আরশকে উদ্দেশ্য করে বলল-

” আমাদের ছোট্ট ঘরে তোমার থাকতে খুব অসুবিধা হচ্ছে তাইনা বাবা৷ ”

” না না ইট’স ওকে। আ’ম ফাইন৷ ”
এভাবে তাদের জামাই শশুরের মাঝে টুকটাক কিছু কথা হলো। তাদের খাওয়া শেষে অবনি নিজেও খেয়ে নিলো।

★★★★

রাত্রি বেলা কারেন্ট চলে যাওয়ায় চাঁদের আলোয় উঠোনে চেয়ার নিয়ে জামাই শশুর খোশগল্পে মেতে উঠলো। অবনি কফি বানিয়ে নিয়ে এলো তাদের জন্য৷ তারপর অবনিও তাদের জামাই শশুরের আড্ডায় যোগ দিলো। গল্প করতে করতে কোন ফাঁকে মধ্যরাত পেরিয়ে রাতের শেষাংশ চলে এলো কেউ টেরই ফেলোনা। সবার হুশ ফিরলো কারেন্টের আগমনে। এতোক্ষণ বাইরের প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে হৃদয় জুড়ানো বাতাসে কারেন্টের অনুপস্থিতি কারো অনুভবই হয়নি। হয়তো এই মুহূর্তে কারেন্ট না এলে গল্প করতে করতে রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে যেত।

কারেন্ট চলে আসায় সবাই রুমে চলে এলো। অবনির রুমের খাটটি অতোটা চওড়া নয়। দুজন ঠিকঠাক ভাবে ঘুমানোর মতো। মাঝে দিয়ে যে কোলবালিশ রাখবে তার তাগাদ নেই। ফলস্বরূপ একজনকে নিচে ঘুমাতেই হবে। তাই অবনি বলল-
” আপনি উপরে ঘুমান। আমি মেঝেতে বিছানা করে নিচ্ছি। ”
কিন্তু অবনির কথায় আরশ আপত্তি জানায়।

” উহুম। ঘুমালে দুজন একসাথে উপরে ঘুমাবো আর নাহলে দুজন নিচেই বিছানা করে নিবো। ”

” দুজন নিচে বিছানা করে নিবো মানে?”

” হ্যাঁ, তুমি খাটের এইপাশে বিছানা করবে আর আমি ওইপাশে সিম্পল! ”

” এতো নাটকের তো দরকার নেই। আপনি আমাদের অতিথি তাই আপনি উপরে ঘুমান। আমি নিচে ঘুমাতে পারবো। আমি তো ওতো বিলাসবহুল ভাবে বড় হইনি তাই নিচে ঘুমাতে আমার প্রবলেম হবে না। ”

” গায়ে কাঁদা মেখে যদি বাড়ি পর্যন্ত আসতে পারি, নিচেও ঘুমাতে পারবো। ”

” ইনসাল্ট করছেন?”

” ইনসাল্টের কি হলো! আমি জাস্ট তোমাকে এটাই বোঝালাম নিচে ঘুমাতে আমার প্রবলেম হবেনা। “

” এই আপনি এতো ঢং কেনো করছেন বলুন তো। এখানে তো আমি আর আপনি ছাড়া বাইরের কেউ নেই যে আপনাকে সিনেমার শুটিং করতে হবে। আপনার মনে আবার আমার প্রতি এতো দরদ কবে থেকে জন্মালো!”

” তোমার প্রতি আমার দরদ জন্মাতে যাবে কেনো? ”

” তাহলে নিচে ঘুমানোর জন্য এরকম উঠে পড়ে লেগেছেন কেনো?”

” কারন, বলা তো যায় না কখন আবার আমাকে এই নিয়ে খোঁটা দিয়ে বসো। ”

” এই একদম বাজে কথা বলবেন না। আমি কখনোও আপনাকে খোঁটা দিয়েছি?”

” দাওনি৷ তবে দিতে কতক্ষণ। ”

” খুব বেশি বাজে বকছেন আপনি।চুপচাপ এসব উল্টো পাল্টা চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। এমনিতেই অনেকটা লেট হয়ে গেছে৷ ”

আরশ বিছানায় শুয়ে পড়লো। অবনি নিচে বিছানা পেতে আরশের দিকে থেকে উল্টো পাশে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো। আর নিজে নিজেই বলছে-
” কেমন অসভ্য লোকরে বাবা! আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে ভালোবেসেই নিচে ঘুমাতে চেয়েছিল। অথচ শেষে কিনা আমি খোঁটা দিবো সেই ভেবে নিচে ঘুমাতে চেয়েছে। যেইনা বললাম খোঁটা দিবোনা। ওমনি নাচতে নাচতে খাটে শুয়ে পড়লো। আর এদিকে আমিই আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখে বসে আছি৷ ”

নিজে নিজে বিড়বিড় করে এসব বলে অবনি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলো আরশ ঘুমিয়েছে কিনা। আশ্চর্য বিষয় আরশ বিছানায় নেই। আরশকে বিছানায় না দেখে অবনি ঘাবড়ে গেলো। পরে খাটের নিচে ফাঁ’কে দিয়ে চোখ পরতেই দেখলো আরশ ওপর পাশে বিছানা পেতে শুয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। আরশকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবনি লজ্জা পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে নিলো। আপনা-আপনি ঠোঁটের কোনে হাসির ঝলক নেমে এলো। ব্যাপারটায় কেনো জানি অবনির ভালোলাগা কাজ করলো।কিন্তু কেনো তার উত্তর জানা নেই অবনির।

________________

সকাল সকাল ফজরের নামাজ পড়ে আরশ আর অবনি আবারও ঘুমিয়ে পড়লো। আরশ এমনিতেই লেট করে ঘুম থেকে ওঠে তার উপর রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি। অবনির ৯ টা বাজে ঘুম ভাঙ্গে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে চলে যায় রান্না ঘরে। অবনি নাস্তা তৈরি করে বাবাকে খেতে দিলো। আরশের খবারটা নিয়ে রুমে এলো। কিন্তু আরশ এখনও পরে পরে ঘুমাচ্ছে। দুনিয়াবি কোনো খবরই তার নেই। মনে হচ্ছে কতো রাত ঘুমায়নি। অবনি খাবারটা টেবিলের উপর রেখে আরশের দিকে এগিয়ে গেলো। আরশের স্নিগ্ধ মায়াবী মুখপানে তাকিয়ে অবনির আর ঘুমটা ভাঙ্গাতে ইচ্ছে করলোনা। মুগ্ধতার দৃষ্টিতে কিয়ৎক্ষন চেয়ে রইলো। পরক্ষণেই ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আরশকে ডাক দিলো। কিন্তু আরশ তো একেবারে ঘুমেই বিভোর হয়ে আছে। অবনি শতো ডাকাডাকি করেও লাভ হলোনা। তাই অবনি কবুতরের পালক এনে আরশের পায়ে সুুরসুরি দিতেই আরশ ধরপরিয়ে উঠে বলে-

” কে কে! ”

পাশে হাসির শব্দে আরশের আর বুঝতে বাকি রইলোনা অবনিই তার পায়ে সুুরসুরি দিয়েছে।

” এই মেয়ে আমার পায়ে এভাবে সুরসুরি দিলে কেনো? ”

” তো কি করবো! বেলা দশটা বাজে এখনোর মুরগির মতো ঝিমুচ্ছেন। ”

” স্টপ দিস ননসেন্স! তুমি কি আমাকে একটা দিনও ঠিকঠাক মতো ঘুমাতে দিবেনা। ”

” না দিবোনা। কারন মানুষ রাতের বেলা ঘুমায় দিনে বেলা নয়। ”
আরশ একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে গেলো।

#চলবে…

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ গঠনমূলক মন্তব্য চাই। 💞🦋)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here