#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ১২ ( বাকি অংশ )
🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~
আরশ ওয়ার্কশপের সামনে গাড়ি ব্রেক করলো। রিয়াজ গাড়ি থেকে নেমে আরশকে এরকম টমটম গাড়িতে চড়তে দেখে হো হো করে হেসে দিলো। আরশ রিয়াজের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকাতেই হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। আরশ রিয়াজকে পেছনে গিয়ে বসতে বললো নিজে ড্রাইভ করবে বলে। অবনি আরশের পাশের সিটে বসলো। সারা রাস্তা পিনপতন নীরবতা। বাসায় পৌঁছানোর পর গাড়ি থেকে নেমে আরশ পা বাড়ালে অবনি পেছন থেকে বলে-
” আমার বাবাকে নিয়ে এতোটা ভাবার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। ”
আরশ ঘাড় বাঁকিয়ে পেছন ফিরে পকেটে হাত গুঁজে বলল –
” শোনো মেয়ে শশুর মশাইয়ের সাথে ভাব করে নিয়েছি বলে ভেবোনা শশুরের মেয়ের সাথেও ভাব করে নিবো। ”
আরশের কথা শুনে অবনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো৷ অবনি হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো –
” এই আপনার সাথে কে ভাব করতে চাইছে হুমম? ”
আরশ একটু ভাব নিয়ে বলল-
” না তোমার কথা শুনে মনে হলো আমার সাথে যেচে পড়ে ভাব করতে চাইছো। ”
” আপনার মতো সয়তান লোকের সাথে ভাব করার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই বুজেছেন আপনি হুহ। ”
কথাটা বলে অবনি খান ভবনের দিকে পা বাড়ালো। আরশ তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। আর নিজে নিজেই বলছে-
” ভাব তো তুমি করবেই মিসেস খান৷ আমার মনের খাঁচায় তো তোমাকে বন্ধি করবোই। তোমার জন্য এতো আয়োজন আর তুমিই এরকম পালাই পালাই করবে তাতো হতে পারে না। আমি তোমাকে বাধ্য করবোনা। তুমি নিজেই আমাকে ধরা দিবে। ইট’স মাই চ্যালেঞ্জ। ”
কথাটা বলে আরশও পা বাড়ালো খান ভবনের দিকে।
অবনি গিয়ে জাহানারা খান কে জড়িয়ে ধরলো। জাহানারা খান অবনির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল-
” কেমন আছো মিষ্টি। বাবার বাড়ি গিয়ে তো আমাকে ভুলেই গিয়েছ। ”
” না দাদু ভুলিনি প্রতিটি মুহূর্ত তোমাকে মিস করেছি। আমাদের ওইদিকে সিগনাল বেশি একটা থাকেনা তো তাই নেটওয়ার্কে প্রবলেমের জন্য বেশি কথা বলতে পারিনি। ”
জাহানারা খান মৃদু হেসে বলল –
” হ্যাঁ আমি বুঝতে পেরেছি। মজা করার জন্যই কথাটা বললাম। ”
জাহানারা খান সোফায় বসা একজন সুদর্শন যুবক কে দেখিয়ে বলল-
” ও হলো বিদ্যুৎ ওর কথাই বলেছিলাম তোমাকে। আর বিদ্যুৎ ও হচ্ছে আমার নাতবৌ । ”
লোকটি সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অবনি তাকে সালাম দিলো।দুজনের মাঝে ভালোমন্দ কথা হলো। বিদ্যুৎ অবনিকে উদ্দেশ্য করে বলল-
” আমি কিন্তু তোমার ভাইয়ের মতো। সো আমাকে ভাই বলেই ডাকতে হবে। আসলে আমার পরিবার বলতে আরশের ফ্যামেলীকেই বুঝি। আমি যখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে ছিলাম সেই সময়টায় বাবা মা আমাদের একটা করে চলে যায়। ”
বিদ্যুৎতের কথা শুনে অবনি অবাক হয়ে বলল-
” আমাদের মানে?”
” হ্যাঁ আমাকে আর আমার ছোট বোনকে ছেড়ে চলে গেছে পরপারে৷ ”
” ও আচ্ছা। আপনার বোন কোথায়? ”
” ছিল এখন আর নেই। ”
কথাটা বলে বিদ্যুৎতের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।
বিদ্যুৎতের কান্না দেখে অবনির মনে কষ্ট অনুভব হয়। অবনি কৌতুহল হয়ে জিজ্ঞেস করলো –
” নেই মানে? কি হয়েছিল আপনার বোনের? ”
বিদ্যুৎ চোখের পানি মুছে বলল-
” বাদ দাও সেসব কথা। ওইসব কষ্টের মুহূর্ত গুলো স্মরণ করে আনন্দের মুহূর্ত গুলোকে নষ্ট করতে চাইনা। তোমাকে অনেকটা আমার ছোট বোনের মতোই লাগছে। তোমাকে দেখে বোনুর কথা মনে পড়ে গেলো। তাই তুমি আমাকে ভাই বলেই ডাকবে৷ আমি কি তোমাকে বোনু বলে ডাকতে পারি?”
অবনি উৎফুল্ল হয়ে বলল-
” কেনো নয়! আমারও কোনো ভাই নেই। ভালোই হলো আমিও একটা পাতানো ভাই পেয়ে গেলাম। এখন থেকে কিন্তু আর কান্না করবেন না। ভেবে নিন আমিই আপনার বোনু৷ ”
আরশ সদর দরজা দিয়ে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতে করতে বলল-
” বাবাহ! সবাই দেখছি আমাকে ছাড়াই খোশগল্পে মেতে উঠেছে। আরো একজনও যে বেড়াতে গিয়েছিল সেটা তো যেনো কারো মনেই নেই৷ ”
জাহানারা খান ঠাট্টার স্বরে বলল-
” তা দাদুভাই এখানে আমিও আছি বিদ্যুৎ ও আছে তুমি কথাটা কাকে উদ্দেশ্য করে বললে শুনি। ”
আরশ ভাবলেস ভাবেই জবাব দিলো-
” যেহেতু কারো নাম মেনশন করিনি তাহলে বুঝতে হবে উভয়কেই বলেছি৷ ”
বিদুৎ এগিয়ে এসে আরশকে জড়িয়ে ধরলো।
” মাত্র একমাসের জন্য দেখা হয়নি কিন্তু মনে হচ্ছে কতোগুলো বছর তোর সাথে সাক্ষাৎ হয়নি৷ আমি বিদেশ থাকলেও আমার আত্নাটা তোর বিয়েতেই পড়ে ছিল। কতো ইচ্ছে ছিল তোর বিয়েতে মজা করবো। অথচ সেরকম কিছুই হলোনা। আমার ট্রিট কিন্তু চাই৷ ”
” আর কতো অন্যের বিয়ের ট্রিট নিবি এবার অন্তত নিজে বিয়েটা কর। ”
” কি আর করার বল। জীবনে কোনো কিছুতেই তোকে হারাতে পারিনি শেষ বিয়েটাও আগে নিজে করে নিলি। ”
কথাটা বলে দুজনই হেসে দিলো।
” তো বল কি খাবি চা নাকি কফি? ”
” কফি খেয়ে খেয়ে মুখটা তেঁতো হয়ে গেছে। একটু চা পেলেই শান্তি। ”
আরশ মারিয়াকে ডাক দিলো চা আনার জন্য। মারিয়া আরশদের বাসায় কাজ করে। অবনি আরশকে থামিয়ে বলল –
” আপনারা গল্প করুন আমিই চা বানিয়ে আনি। ”
কথাটা বলে অবনি কিচেনের দিকে গেলো। চা বানাতে বানাতে অবনি নিজে নিজেই বলছে-
” সত্যি কারো নাম শুনেই হাসাহাসি করতে নেই। লোকটার নামটা অদ্ভুত হলেও মনটা অনেক ভালো কতো সহজে আমায় আপন করে নিলো। ”
অবনি চায়ের কাপ সবার হাতে তুলে দিলো। সবাই চায়ে চুমুক দিয়ে অবনির প্রশংসা করলো। বিদ্যুৎ বলল-
” সত্যিই বোনু তোমার হাতের চা একেবারেই অসাধারণ। অসম্ভব ভালো হয়েছে৷ এখন থেকে আমি এবাড়িতে রোজ আসবো তোমার হাতের চা খেতে। ”
অবনি অভিমানী সুরে বলল-
” বোনু বলে ডাকছেন অথচ এখনো তুমি তুমি করেই কথা বলছেন। আপনার বোনুকে কি আপনি তুমি করেই বলতেন? ”
অবনির কথা শুনে বিদ্যুৎ হেসে দিলো। সাবলীল কন্ঠে বলল-
” আচ্ছা ঠিক আছে। আর অভিমান করতে হবেনা। আমি এখন থেকে তুই করেই বলবো। তুইও কিন্তু আমাকে তুমি করে বলতে হবে ডান?”
” ওকে ডান। ”
#চলবে