#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা: #ohona_akther
#পর্ব : ১০
🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~
অবনি ড্রাইভিং সিটে বসে আছে আর আরশ পেছন থেকে গাড়ি ধাক্কা দিচ্ছে।
আরশ গাড়ি ধাক্কা দিতে দিতে হাঁপিয়ে গেল। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। আরশ কপাল থেকে ঘাম মুছে অবনিকে জিজ্ঞেস করলো –
” অবনি আর কতো দূর যেতে হবে আমাদের? ”
” আরে আর সামান্য একটু রাস্তা তারপরেই আমাদের বাসা। ”
আরশ এবার শক্ত কন্ঠে বলল-
” এই থামবে তুমি? আর একবারও যদি বলেছ সামান্য একটু রাস্তা তাহলে দেখো আমি কি করি৷ সেই কখন থেকে সামান্য একটু রাস্তা আর একটু সামনে গেলেই আমাদের বাসা এসব বলে আসছ।সামান্য সামান্য করতে করতে এই পর্যন্ত এসেছি এখন পর্যন্ত বাড়ির ‘ ব ’ ও দেখতে পাচ্ছি না। ”
” আরে আমি যদি দূরে বলতাম তাহলে কি আপনি এতো দূর পর্যন্ত গাড়িটা নিয়ে আসতেন? তবে এবার সত্যি বলছি একদম সিরিয়াসলি বলছি আর একটু সামনে গেলেই আমাদের বাসা৷ ”
” সত্যিই বাবা৷ এইজন্যই তো বলি প্রতিদিন অফিসে এতো লেট করে যেতে কেনো। আসলে আমার বোঝা উচিৎ ছিল তোমার বাড়ির রাস্তাটা ঠিক তোমার মতোই ঝামেলা! ”
কথাটা বলে আরশ বিরক্তিকর শ্বাস নিয়ে আবার গাড়ি ধাক্কা দিতে শুরু করলো। আর নিজে নিজেই বিড়বিড় করে বলছে-
” শালার বিয়েটাই হলো অদ্ভুতভাবে! বিয়ের আগেই পাত্রী পলাতক, অদ্ভুত বাসর, অদ্ভুত বৌভাত, এবার অদ্ভুত শশুর বাড়ির যাত্রা! পৃথিবীতে মনে হয় আমিই একমাত্র পুরুষ যার শশুর বাড়িতে যেতে হচ্ছে গাড়ি ধাক্কাতে ধাক্কাতে! ভাগ্য ভালো এখানে জানা শোনা কেউ নেই। নাহলে তো এই ঐতিহাসিক কাহিনী মূহুর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যেতো সেই সাথে আমার মান ইজ্জত সব ফালুদা হয়ে যেতো। আর জানি কি কি দেখার বাকি আছে আল্লাহ মাবুদই ভালে জানেন। ”
এদিকে আরশের এই নাজেহাল অবস্থা দেখে অবনির তো ইচ্ছে করছে হু হা করে হাসি দিতে। যেই ছেলে এতো আহ্লাদে বড় হয়েছে তার কি’না শেষ পর্যন্ত এই দূরাবস্থা! অবনি মনে মনে বলছে –
” বেশ হয়েছে ব্যাটা বজ্জাত, আমাকে অনেক জ্বালাতিস তুই, এবার বুঝ মজা। ”
অবনি আরশকে ব্যঙ্গাত্বক ভাবে বলল-
” দূররর, এতো আস্তে ধাক্কা দিলে হবে! সারাদিন তো মুখে খুব বড় বড় কথা বলেন। আরশ খান এই, আরশ খান সেই এসব বলে কান জ্বালা পালা করে দেন। এখন সামান্য গাড়ি টুকু ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন না! আপনার জায়গা আমি হলে কতো আগে বাড়ি পৌঁছে যেতাম। ”
অবনির কথাটা যেন আগুনের মধ্যে ঘি ঢালার মতো৷ আরশের এমনিতেই মেজাজটা খারাপ ছিল।
অবনির ব্যঙ্গাত্বক কথা শুনে মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো।
আরশ এবার গাড়ি ছেড়ে অবনির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল-
” এতোই যখন বড় বড় কথা বলছো তাহলে এবার নিজেই গাড়িটা…..”
আর কিছু বলার সৌভাগ্য বেচারা আরশের হলোনা। তার আগেই ধপ করে ছিত হয়ে কাঁদায় পড়ে গেলো। সারা শরীর কাঁদা লেগে ভুতের মতো হয়ে গেছে।
আরশকে পড়ে যেতে দেখে অবনি দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে এলো। আরশকে দেখে অবনির যেনো হাসিই থামছে না৷ এই মুহূর্তে আরশের মেজাজটা খারাপ করার জন্য অবনির এই হাসিটাই যথেষ্ট।
আরশ রেগে অবনিকে বলল-
” এই মেয়ে এভাবে পেত্নীর মতো না হেসে আমাকে টেনে তোলো। ”
অবনির তো হাসি থামছেই না। অবনির হাসিটাকে কিছুটা কন্ট্রোল করে হাসতে হাসতেই বলল-
” বিশ্বাস করুন আপনাকে এত্তো পরিমাণ ভয়ংকর লাগছে যে এই মুহূর্তে কেউ আপনাকে দেখলে শিওর হার্ট অ্যাটাক করবে। এক মিনিট আমি আপনাকে দেখাচ্ছি৷ কথাটা বলে অবনি মোবাইলের ক্যামেরাটা অন করে আরশের ক্যামেরাটা ধরে বলল-
” এই দেখুন আপনাকে কতোটা ভয়ংকর দেখাচ্ছে। ”
ক্যামেরায় নিজের এই করুন অবস্থা দেখে আরশের এখন পাটি বিছিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আরশ নিজে নিজে বলছে-
” দাদু তুমি আমাকে এই কোন জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিলে। দেখে যাও তোমার আদরের দাদুভাই কি দূরাবস্থায় পড়ে আছে। ”
আরশের কথা শুনে অবনি আবারও হাসি শুরু করলো। অবনিকে হাসতে দেখে আরশ অবনির দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালে অবনি হাসতে হাসতে বলল-
” এভাবে তাকাবেন না প্লিজ। আপনাকে যে পরিমাণ ভয়ংকর লাগছে তার উপর এরকম চোখ রাঙ্গালে দেখা যাবে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। পরে আপনারই বিপদ বাড়বে না পাড়বেন আমাদের বাড়ি পৌঁছাতে আর না পারবেন নিজের বাড়ি ফিরে যেতে। ”
” শাট আপ! ইডিয়ট, চুপচাপ আমাকে তোলো। আর একটা কথাও বলবেনা তুমি। ”
” ইশশ, শখ কতো আমাকে কাঁদায় ফেলার ধান্দা তাইনা! কি ভেবেছেন আমি বোকা! পাড়লে নিজে নিজেই উঠুন হুহ। ”
” আরে সত্যি বলছি ফেলবো না তোলো আমাকে। ”
” অসম্ভব আমি আমার শত্রুকে বিশ্বাস করলেও আপনাকে বিশ্বাস করিনা। ”
কথাটা বলে অবনি আবারও বলল –
” একটা উপায় পেয়ে গেছি। ”
” কি? ”
অবনি মোবাইলটা নিয়ে আরশের কাঁদা মাখা ছবিটা ক্যামেরায় বন্দি করে নিলো। তারপর আরশকে বলল-
” আমি আমার মোবাইলে আপনার ছবিটা তুলে রাখলাম। বাই এনি চান্স আপনি যদি আমায় কাঁদায় ফেলে দেন তাহলে কিন্তু আমি আপনার এই কাঁদা মাখা ছবিটা ভাইরাল করে দিবো। ”
অবনির কথা শুনে আরশের যেনো বিষম খাওয়ার মতো অবস্থা। কারন সে তো ভেবে নিয়েছিল সত্যিই সত্যিই অবনি যখন তাকে টেনে তুলতে যাবে তখন অবনিকেও কাঁদায় ফেলে দিবে। তারপর তাকে নিয়ে হাসাহাসি করার মজা বুঝাবে। কিন্তু অবনি তার সেই প্ল্যানে জল ঢেলে দিলো! আরশ নিজে নিজেই মনে মনে বলছে-
” আরশরে তোর অবস্থা তো ঠিক খরগোশ আর কচ্ছপের মতোই! এই মেয়ে তো দেখছি সয়তানি বুদ্ধিতে আমার চেয়ে দশ গুন এগিয়ে! ”
তারপর অবনি একটা লাঠি দিয়ে আরশকে টেনে দাঁড় করালো। বাকিটা পথ তারা হেঁটেই গিয়েছে। আর রাস্তায় আরশকে দেখে ছোট বাচ্চারা এমন ভাবে হাসাহাসি করছিল যেনো তারা কোনো মানুষ নয় জোকার কে দেখেছিল। মেয়ের ডাকে আমজাদ আলম দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর মেয়েকে দোয়া করে দিয়ে বলল-
” কিরে মা জামাই বাবা আসেনি? ”
বাবার কথা শুনে অবনি হাসতে হাসতে বলল-
” এসেছে তো! ওই যে দেখো সারা শরীর কাঁদায় ঢেকে আছে। ”
” একি এরকম হলো কিভাবে? ”
” কিভাবে আবার আমাদের বাড়ির রাস্তায় কাঁদায় গাড়ির চাকা আটঁকে গেছিলো। কাঁদায় পড়েই এই অবস্থা হয়েছে। ”
#চলবে