#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা: #ohona_akther
#পর্ব: ১১ ( বাকি অংশ )
🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~
বিকেল বেলা আমজাদ আলম অবনিকে বললো আরশকে নিয়ে বাইরে হাঁটতে যেতে। বাবার কথানুযায়ী অবনি আরশকে নিয়ে বের হলো। সারা বিকেল তারা দুজন হাঁটাহাটি করে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরলো। ক্লান্তিতে আরশ বিছানায় পিঠ এলিয়ে দিলো৷ আরশের জীবনে এতোটা পথ কখনো হাঁটেনি৷ চারদেয়ালের মাঝে বদ্ধ ছিল তার জীবন। তাই বাইরের প্রকৃতিটা একটু অন্যরকম ভাবেই উপভোগ করেছে সে৷ লাইট অফ করে ক্লান্তি দূর করতে ঘুমিয়ে পড়লো আরশ। রাত ১০ টার দিকে আরশের ঘুম ভাঙে। চোখের সামনে যা দেখলো তাতে আরশের রীতিমতো কাঁপা-কাঁপি অবস্থা। ভীতিতে রুদ্ধ হয় শ্বাস। আরশের মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না। বিদঘুটে অন্ধকারে নিভু নিভু আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কিছু একটা চুল ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছে। চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। আরশ এবার ঘামতে শুরু করলো৷ আরশ লাইট জ্বালাতে যাবে কিন্তু পায়ের মধ্যে সেই শক্তি টুকু নেই। আরশ পায়ে জোর না পেয়ে ধপ করে নিচে পড়ে গেলো। ওমনি লাইট জ্বলে উঠলো আরশ ভুত ভুত বলে চিল্লাতে থাকে। আরশকে এরকম চিল্লাতে দেখে অবনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। অবনি আরশকে হতভম্ব হয়ে বলল-
” এই আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? নিচে পড়ে গেলেন কিভাবে? আর এরকম ভুত ভুত করে চিল্লাচ্ছেন কেনো? ”
অবনির কন্ঠ শুনে আরশ হুট করে অবনিকে জড়িয়ে ধরে বলল-
” ভুত ভুত ভুত। তোমাদের বাসায় ভুত। ভুত আমাদের পিছু নিয়েছে। ”
অবনি পড়লো মহা ঝামেলায়। আরশকে অনেক কষ্টে নিজে থেকে ছাড়িয়ে বলল-
” এই কি আবোল তাবোল বকছেন। আমাদের বাসায় কোনো ভুত টুত নেই। ”
আরশ ভীত কন্ঠে বলল-
” বিশ্বাস করো। আমি নিজে ভুতকে দেখেছি। ” আরশ হাত দিয়ে ইশারা করে অবনিকে বলল-
” এই জায়গাটায় চুল ছেড়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমার মনে হচ্ছে আমরা ঘুরতে যাওয়াতেই কোনো মেয়ের আত্মা আমার পিছু নিয়েছে। এবার আমার কি হবে! ওরে বাবা গো আমি আর এই বাড়িতে থাকবোনা। অবনি প্লিজ আজকের রাতটা তুমি আমার পাশেই থেকো। তুমি আমার পাশ থেকে সরে যেওনা প্লিজ। নাহলে ওই শাঁকচুন্নি আবাও চলে আসবে। ”
আরশের কথা শুনে অবনির আর বুঝতে বাকি হইলোনা আরশ কিসের কথা বলছে। অবনির তো এবার যেনো হাসিই থামছেনা৷ অবনিকে এরকম পা’গলের মতো হাসতে দেখে আরশের মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। সে এখানে ভয়ে মরছে আর এই মেয়ে কিনা তাকে নিয়ে ঠাট্টা করছে। আরশ চোয়াল শক্ত করে অবনিকে বলল-
” এভাবে পা’গলের মতো হাসছো কেনো? তোমার কি মনে হয় আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি? আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা তাই তো! যখন শাঁকচুন্নিটা তোমার ঘাড় মটকাবে তখন বুঝবে তুমি। ”
অবনি এবার হাসি থামিয়ে কোমড়ে হাত রেখে ভ্রু যুগল কুঁচকে শক্ত কন্ঠে বলল-
” এই আপনি আমাকে শাঁকচুন্নি বললেন কেনো? ”
” আরে আমি তোমাকে কেনো বলতে যাবো আমি তো ওই শাঁকচুন্নির….”
এটুকু বলে আরশ থেমে ভাবুক ভঙ্গিতে বলল-
” এক মিনিট এক মিনিট, বাই এনি চান্স ওই শাঁকচুন্নিটা তুমি নও তো? ”
” এই একদম শাঁকচুন্নি বলবেন না৷ হ্যাঁ ওইটা আমিই ছিলাম৷ আপনিই উল্টো পাল্টা ভেবে ভয় পাচ্ছিলেন। ”
” শাট আপ! ইডিয়ট, এভাবে কেউ রাত্রিবেলা শাঁকচুন্নির মতো অন্ধকারে চুল ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকে? আর একটু হলেই তো আমার প্রান পাখি উড়ে যেতো। ”
” আপনি চুপ করুন। অতিরিক্ত গরম পড়ছিল তাই শাওয়ার নিয়ে চুল শুকানোর জন্য ফ্যানের সামনে দাঁড়িয়েছি। আর আপনিই বা এতো ভীতু কেনো? সারাক্ষণ তো খুব সাহসী দেখান আর এখন সামান্য একটা ভুত দেখেই সব সাহস ফুঁস করে উড়ে গেলো! ”
” তোমার মতো শাঁকচুন্নি কে দেখলে যে কেউ এমনিতেই ভয় পেয়ে যাবে। ”
” এই আপনি বার বার আমাকে শাঁকচুন্নি বলছেন কেনো। ”
” শাঁকচুন্নির মতোই তো লাগছিল। ”
” আর আপনাকে তো বাঘ রুপি বিড়ালের মতো লাগছিল। ”
” শোনো আমি মোটেও ভয় পাইনি বুঝেছো? জাস্ট তোমাকে বুঝিয়ে দিলাম তুমি নিজেকে যতোই সুন্দর মনে করো দিন শেষে তোমাকে শাঁকচুন্নির মতোই লাগে। ”
” এই জিনিসটাই আপনার দোষ। সবসময় সব কিছুতে আপনি হারতে নারাজ। আপনি নিজেকে যতোই হিরো ভাবেন দিন শেষে আপনাকে আমার কৌতুক অভিনেতা দিলদারের মতোই লাগে। ”
” হোয়াট? তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি! এতো বড় বড় কথা বলার সাহস হয় কি করে তোমার? তুমি কি ভুলে যাচ্ছো তুমি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো। ”
” নাহ আমি ভুলিনি, তবে আপনি বোধহয় ভুলে গেছেন আপনার কাঁদা মাখা পিকটা এখনো আমার মোবাইলেই রয়েছে। ”
ব্যাস এটুকু কথাতেই আরশের মুখ চুপসে গেলো৷ আরশ মনে মনে বলছে-
” এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে৷ পিক তো তোমাকে ডিলিট করতেই হবে মিসেস খান। আগে পিকটার ব্যবস্থা করি, তারপর তোমার ব্যবস্থা কিভাবে করতে হয় তা আমি খুব ভালো করেই জানি৷ জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। ”
দেখতে দেখতে অবনি আর আরশের চলে যাওয়ার সময় চলে এলো। আমজাদ আলম অবনিকে বলল-
” মাত্র কদিন হলো এসেছিস এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবি। ”
অবনি আবেগাপ্লুত হয়ে শীতল কণ্ঠে বলল-
” হ্যাঁ বাবা। আর থাকা সম্ভব নয়। উনার অফিস খোলা তার উপর বাড়িতে বিদ্যুৎ আসবে তো তাই তাড়াতাড়ি যেতে
হচ্ছে। ”
বিদ্যুৎ কথাটা শুনে আমজাদ আলম অবাক চাহনি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো –
” বিদ্যুৎ! বিদ্যুৎতে সমস্যা হলে মেকানিক খবর দিলেই তো হয় তোদের যাওয়ার কি দরকার? ”
” আরে বাবা এই বিদ্যুৎ সেই বিদ্যুৎ নয়। এই বিদ্যুৎ হলো উনার বন্ধুর নাম। ”
#চলবে