#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================
❝ ফিরে_আসা ❞
———————-
লেখিকা- Umma Hurayra Jahan
পর্ব-৪৯
দেখতে দেখতে পার হয়ে গেলো তিন তিনটা মাস।
মোট ৪ মাস পার হয়ে গেলো।
মাহিন ফজরের নামায পড়ে এলো।আজ মাহিনের মধ্যে এক আনন্দ অনুভুতি কাজ করছে।কারন আজ দিনটাই যে তার জন্য স্পেশাল।কারন আজ দীর্ঘ ৪ মাস পর ফাতেমার সামনে যাবে।এ ৪ মাসে এক বারের জন্য ফাতেমার সাথে দেখা তো দূরে থাক কথায় হয় নি মাহিনের।
মাহিন আজ কিছুটা হলেও নিজেকে ফাতেমার যোগ্য করে গড়ে তুলতে পেরেছে।
আয়নার সামনে দাড়ালে মাহিন এখন নিজেকে চিনতে পারে না।আগের মাহিন আর বর্তমানের মাহিনের মধ্যে এখন আকাশ পাতাল তফাত।
সেদিনের সেই বেয়ারা ছেলে যে নামায কালামের ধারে কাছেও ছিলো না, আজ সে নামায কালাম ছাড়া থাকতে পারে না।যত কাজই থাকুক না কেন আগে নামাযকেই প্রাধান্য দেয় মাহিন।
কারন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন “তোমরা নামায পড়ো, আমি তোমাদের অগোছালো কাজ গুছিয়ে দেবো।“
তাই মাহিন এখন নামাযকে আর তার আমলকেই প্রাধান্য দেয়।
আর এখন মাহিনের আলমারিতে প্যান্ট শার্টের বদলে জায়গা পেয়েছে সুন্নতি পোষাক ,পাঞ্জাবি পাজামা,জুব্বা,টুপি,ইত্যাদি।
মাহিন সবসময় এগুলোই পড়ে এখন।
আর হে,মাহিন এখন দাড়িও রেখেছে।সেদিনের পর থেকে দাড়িতে আর হাত লাগায় নি।মানে দাড়ি কাটে নি।মাশাআল্লাহ।
কুরআন শরীফও মোটিমোটি শিখে ফেলেছে।এখন দেখে দেখে পড়তে পারে।কারন কুরআন শিখার জন্য মাহিন প্রাণপন চেষ্টা করেছে।তাই আজ সে কুরআনও পড়তে পারে।
-আর হে, মাহিনের কারনে আজ মেহেঘ বেগম আর মহিমাও পরিপুর্ন পর্দা করা শুরু করেছে।কারন মাহিন এ কয়েক মাসে তাবলিগে গিয়েছে।সেখানে সে পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে ভালোভাবে জেনেছে।
আজ মাহিন ফাতেমার কাছে যাবে।তাই সে রেডি হচ্ছে।
সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকলো মহিমা
-কিরে ভাইয়া রেডি হয়েছিস??
মাহিন- ওয়া আলাইকুমুস সালাম।হে এই তো রেডি হচ্ছি।
জানিস আজ না খুব নারভাস লাগছে।ছোট বেলায় পরিক্ষা দিতে গেলে যেমন লাগতো ঠিক সেরকম লাগছে।।।
মহিমা- আরে ভাই আমার চিন্তা করিস না।সব ঠিক হবে আজ।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।সব ঠিক হবে।
মাহিন– হুম।কিন্তু আমি যে ওদের বাড়িতে না জানিয়ে যাচ্ছি ওরা যদি কিছু বলে??
মহিমা– বললে বলুক ।তাতে তুই মন খারাপ করিস না।কারন ওরা যদি তোকে ধরে মারও দেয় এটাই স্বাভাবিক।কারন ৪ মাস ধরে তো ভাবি বাবার বাড়িতে আছে।আর কম অত্যচার করে তো তুই আর ভাবিকে বাড়ি থেকে বের করিস নি।
হয়তো হয়তো এখন তুই নিজেকে পুরোপুরি পরিবর্তন করেছিস,কিন্তু আগে তো এমন ছিলি না।তুই যে নিজেকে পরিবর্তন করেছিস এটাও তারা জানে না।তাই যদি অপমান করে দয়া করে একটু সহ্য করিস।কিছু বলিস না।
মাহিন– ফাতেমাকে ফিরিয়ে আনতে যদি এর থেকেও বড় কিছু সহ্য করতে হয় তাহলে সেটা সহ্য করতেও রাজি আছি।
আচ্ছা মা বাবা কোথায় রে??আমি তো রেডি।এখন তো রওনা দিতে হবে।না হলে তো দেরি হয়ে যাবে।
মহিমা — মা বাবা নিজেদের ঘরে আছে। ওদের সাথে দেখা করে তারপর যা।
মাহিন- হুম।
-এই বলে মাহিন ওনাদের রুমে সালাম দিয়ে ঢুকলো।
আরমান সাহেব আর মেহেঘ বেগম সালামের জবাব দিলেন।
আজ আরমান সাহেব আর মেহেঘ বেগম ছেলের এমন পরিবর্তন দেখে খুব খুশি।
মাহিন- মা. ..বাবা..আমি যাচ্ছি তোমাদের বৌমাকে ফিরিয়ে আনতে।দোয়া করো যাতে সহি সালামতে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারি।
মেহেঘ- দোয়া করি রে বাবা।আমাদের ফাতেমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।এতোটা দিন মেয়েটা বাড়িতে নেই।বাড়িটা যেন মরুভুমির মতো খা খা করছে।যা বাবা ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।
আরমান- আমিও দোয়া করি রে বাবা।সাবধানে যাস।
মাহিন–ঠিক আছে।
সালাম দিয়ে মাহিন ওনাদের রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
-বাসা থেকে বের হওয়ার আগে মাহিন আয়াতুল কুরসি আর বাইরে যাওয়ার দোয়া পড়ে নিলো।আর বের হওয়ার সময় বাম পা আগে দিয়ে বের হলো।
কারন এটা সুন্নত।
মাহিন এখন প্রতিটি পদক্ষেপে সুন্নত পালন করার চেষ্টা করে।
মাহিন আল্লাহর নাম নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।গাড়ির মধ্যে যানবাহনে চড়ার দোয়াটাও পড়ে নিলো।
আজ তার মনে, এক অজানা অনুভুতি কাজ করছে।কিছুটা ভয়ও লাগছে তার।যদি ফাতেমা তার সাথে না ফিরে?????তখন কি হবে??
-হে আল্লাহ সব কিছু যেন ঠিক ঠাক হয়।আমার হুর পরী যেন আমার কাছে ফিরে আসে।
মনে মনে এগুলো বলছে মাহিন।
গাড়ি চলছে।মাহিনের হার্টবিট যেন গাড়ির মতো দৌড়ে চলেছে।
আজ প্রচুর জ্যাম রাস্তায়।
এক ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়লো মাহিন।
হঠাৎ গাড়ির জানালার কাচে কারোর হাতের টুকা মারার শব্দ শুনতে পেলো মাহিন।
মাহিন জানালার কাচ খুলে দিলো।
—স্যার এই ফুল গুলা নেন না।দেখেন সারাদিন ধরে ঘুরতাছি কেউ ফুল গুলা কিনলো না।সবাই খালি গোলাপ ফুল চায়।কিন্তু আমি পদ্ম ফুল বেচি।গোলাপ কিনার টাকা আমার নাই।তাই পদ্মফুল বেচি।
একটি ছোট্ট মেয়ে রাস্তায় পদ্মফুল বিক্রি করছিলো।
— স্যার নেন না কয়টা ফুল।আজ একটাও বেচতে পারি নাই।
মাহিনের হঠাৎ মনে পরে গেলো ফাতেমার প্রিয় ফুল পদ্ম।আর ভাগ্যক্রমে আজ মাহিন পদ্ম ফুলোও পেয়ে গেলো।
— মামনি তুমি আমাকে সবগুলো ফুল দিয়ে দাও।আমি তোমার সবগুলো ফুল কিনবো।
এটা শুনে ছোট্ট মেয়েটি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো।
–সত্যি কইতাছেন স্যার??সবগুলা আপনি কিনবেন??
–হুম মামনি ,,আমি সবগুলো কিনবো।
এই বলে মাহিন মেয়েটির কাছ থেকে সবগুলো ফুল নিলো।
–দাম কতো এগুলোর মামনি???
–স্যার ১০০ টাকা।
মাহিন পকেট থেকে একটা ১০০০ টাকার নোট বের করে মেয়টিকে দিলো।
–স্যার আমার কাছে তো ভাংতি নাই।আপনি আমারে খুচরা টাকা দেন।
–ভাংতি দিতে হবে না মা।তুমি এ টাকাটা রেখে দাও।এই টাকা দিয়ে গোলাপ ফুল কিনে নিয়ে।তারপর গোলাপ ফুল বিক্রি করো।তাহলে সবাই তোমার ফুল কিনবে।
–কিন্তু স্যার!!!!!
— কোন কিন্তু নয় মা।মনে করো তোমার চাচ্চু তোমাকে নিজের মেয়ে মনে করে দিয়েছে।
একথা শুনে মেয়েটা কেদে দিলো আনন্দে।
–আল্লাহ আপনার ভালো করুক স্যার।দোয়া করি আপনি সারা জীবন যাতে ভালো থাকেন।
এই বলে ছোট্ট মেয়েটা আনন্দে নাচতে নাচতে চলে গেলো।
মেয়োটার চলে যাওয়ার দিকে মাহিন তাকিয়ে আছে।
মেয়েটার আনন্দ দেখে মাহিন খুব খুশি হলো।কারন অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর আনন্দই আলাদা।
–যাক আমার হুর পরীর প্রিয় ফুলটা পেয়ে গেলাম।
জ্যাম ছুটে গেলো।মাহিন আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো।
আর কিছুক্ষন পর মাহিন রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে শ্বশুড় বাড়ির জন্য নানা ধরনের ফলমূল,কনফেকশনারি,মিষ্টি,
আরো কত কি কিনে নিলো।
এভাবে মাঝে মধ্যে জ্যামের মধ্যে পড়ে পড়ে ফাতেমার বাড়ি পৌছাতে যোহরের আজান পড়ে গেলো।
ফাতেমাদের বাসার কাছেই একটা বড় মসজিদ আছে।
তাই মাহিন ভাবলো আগে নামাযটা পড়ে তারপর ফাতেমার বাড়ি যাবে।
মাহিন গাড়িটা এক জায়গায় সাইট করে মসজিদে গেলো নামায পড়তে।
মসজিদে হাসান আর রফিক সাহেবও এসেছেন।
মাহিন তাদেরকে খেয়াল করে নি।
নামায শেষে রফিক সাহেব একবার মাহিনকে দেখেছিলো ।
ওনার মাহিনকে চেনা চেনা লাগছিলো কিন্তু চিনতে পারেন নি।চিনবেই বা কি করে এখনের মাহিন তো আর আগের মতো নেই।
তাই নামায শেষে হাসান আর রফিক সাহেব বাসায় চলে গেলেন।
মাহিন নামায শেষে গাড়িটা যেখানে রেখেছিলো সেখান থেকে আনতে গেলো।তাই একটু দেরি হয়ে গেলো।
মাহিন গাড়ি নিয়ে ফাতেমাদের বাসায় গিয়ে বাসার গ্যারেজে গাড়ি পার্ক করে রাখলো।
মাহিন বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে হাতে অনেক জিনিস।
কলিং বেল বাজাতে তার আত্মা কাপছে।
বার বার ঢোক গিলছে।
অবশেষে আল্লাহর নাম নিয়ে কলিং বেল বাজালো কয়েকবার।
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে রিনা দরজা খুলতে এলো।
রিনা দরজা খুলতেই মাহিন রিনাকে দেখে সালাম দিলো।
-আস সালামু আলাইকুম রিনা ।কেমন আছো??
রিনা মাহিনের সালামের জবাব দিলো।
–আপনে কেডা??আপনেরে তো চিনতাছি না।
–আরে রিনা আমি তোমার ফাতেমা বুবুর জামাই মাহিন।
রিনা মাহিনের পা থেকে মাথা অব্দি একনজর চেয়ে দেখলো।
রিনা- আপনে মাহিন দোলাভাই??
ও খালু গো. …একবার দেইখা যান গো।এক মুন্সি বেডা আইছে আর কইতাছে হে নাকি ফাতেমা বুবুর জামাই!!!
রিনার চিৎকার শুনে রফিক সাহেব আর হাসান এলো।
রফিক সাহেব রিনাকে বললো -কিরে রিনা চিৎকার করছিস কেন??কে এসেছে??
রিনা– খালু দেহেন এই মুন্সি নাকি ফাতেমা বুবুর জামাই মাহিন দুলাভাই।
রফিক সাহেবকে দেখে মাহিন সালাম দিলো।
মাহিন– আস সালামু আলাইকুম।বাবা কেমন আছেন??
রফিক–ওয়া আলাইকুমুস সালাম।তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারছি না বাবা।তুমি কে???
মাহিন– বাবা আমি মাহিন।
হাসান মাহিনকে দেখে চমকে গেলো।
রফিক সাহেব তো মাহিনকে দেখে রেগে অগ্নিবর্ন হয়ে গেলো।রেগে লাল হয়ে গেছেন উনি।
রফিক সাহেব মাহিনকে তুই তুকারি করতে লাগলেন।
মাহিন আগে থেকেই জানে তাকে এসব শুনতে হবে।
রফিক- –তোর সাহস কি করে হলো আমার বাড়িতে আসার???তুই আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে এতো দিন পর এসেছিস তামাশা দেখতে যে আমার মেয়েটা বেচে আছে নাকি মরে গেছে??
তোর জন্য মেয়েটা আমার গুরমে গুমরে মরে যাচ্ছে।তোকে কতো ভালোবাসতো আমার মেয়টা আর তুই কিনা!!!!ছিঃ ভাবতেও লজ্জা লাগে তোর মতো একটা মানুষরূপি পশুর কাছে আমি আমার মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছিলাম।
তোকে তো আমি শেষ করে দিবো।
এই বলে রফিক সাহেব মাহিনকে মারতে গেলো।
কিন্তু হাসান বাবাকে আটকে দিলো।
হাসান– এটা তুমি কি করছো বাবা???ছেলেটাকে চেয়ে দেখো ও আগের মতো নেই।নিঃশ্চই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।তাই আমাদের কাছে এসেছে।
রফিক– এ সব ওর চালবাজি।
রফিক সাহেবের চিৎকার শুনে আবিদা খাদিজা বেগমের কাছে গেলো।
আবিদা- একটু দেখুন তো মা বাবা কেন চিৎকার করছে।
আমি বাড়ির বউ আমি তো এসবের মধ্যে যেতে পারি না।
খাদিজা- ঠিক আছে।
এই বলে উনি দরজার কাছে এসে দেখেন রফিক সাহেব কার উপর জানি চেচাচ্ছেন।
খাদিজা বেগম আড়াল থেকে মাহিনকে দেখে চিনে ফেলেছেন।তাই তিনি সামনে গেলেন।
খাদিজা— কি ব্যাপার ছেলেটার উপর তুমি এভাবে চিৎকার করছো কেন??ওকে আগে ভিতরে আসতে দাও।
বাড়ির জামাইকে কি কেউ দরজার সামনে দাড় করিয়ে এভাবে অপমান করে নাকি???জ্ঞান বুদ্ধী কি সব লোপ পেয়েছে নাকি??
-বাবা তুমি ভিতরে আসো তো।তোমার শ্বশুড়ের কথায় রাগ করো না।
এই রিনা তুই মাহিনের হাত থেকে জিনিস গুলো নিয়ে ভিতরে রাখ।
মাহিন জিনিস গুলো রিনার দিকে এগিয়ে দিলো।
খাদিজা বেগম মাহিনকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে বসালেন।
হাসান আর রফিক সাহেবও সেখানে গেলেন।
রফিক সাহেক রাগে কটমট করছেন।
হাসান– মাহিন তুমি বাবার কথায় রাগ করো না।
মাহিন– না না আমি রাগ করি নি।আমি এর থেকে বড় শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।কারন আমি আপনাদের সবার কাছে একজন বড় অপরাধী।সত্যিই আমি ক্ষমার অযোগ্য।
তবুও আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।আর আমি যতটা সম্ভব নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছি।বাকি আল্লাহ মাবুদ ভালো জানেন।
জীবনে অনেক পাপ করে ফেলেছি।যার হিসাব আমি দিতে পারবো না।কিন্তু ফাতেমা আমার জীবনে আলো হয়ে এসেছিলো।যার মূল্য আমি আগে বুঝি নি।
কিন্তু ফাতেমা চলে আসার পর প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহুর্ত আমি বুজতে পেরেছি আমার জীবনে তার মূল্য কতো টুকু।
তাই আমি আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে ,ফাতেমার কাছে ক্ষমা চেয়ে ওকে ওর বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি।
নিচ দিকে চেয়ে মাহিন কথাগুলো বললো।
রফিক- আমি আমার মেয়েকে যেতে দেবো না তোমার সাথে।ওকে নিয়ে আবার বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাও তাই না।একবার বের করে তো শান্তি হয় নি।
মাহিন- -জানি এখন আপনারা আমাকে বিশ্বাস করতে পারবেন না।এটাই স্বাবাভিক।
কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি নিজেকে পাল্টে ফেলেছি।নিজেকে ফাতেমার যোগ্য করে গড়ে তুলার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি।
যার বিনিয়ে আমি আল্লাহর কাছে ফাতেমাকে আবার আমার জীবনে ফিরে পেতে চেয়েছি।
মাহিন বিগত ৪ মাসে কি কি করেছে সব উনাদেরকে বললো।
খাদিজা বেগম আর হাসান রাজি হলেও রফিক সাহেব এখন বেকে বসে আছে।
এতো কিছু বাড়িতে ঘটে গেলো কিন্তু ফাতেমা এর কিচ্ছু টের পায়নি।কারন ফাতেমার ঘরটা কোনায়।সেখানে বাইরের শব্দ বেশি পৌছায় নি।আর আবিদাও কিছু বলে নি।কারন সে তো মাহিনের সামনে যেতে পারবে না।তাই আড়াল থেকেই সব কথা শুনায় ব্যস্ত।
রিনাও ফাতেমাকে কিছু বলে নি।
মাহিন- আমি একটু ফাতেমার সাথে দেখা করতে চাই।গত চার চারটা মাস ধরে ওর সাথে আমার কোন প্রকার যোগাযোগ হয়নি।
একপ্রকার ইচ্ছা করেই আমি যোগাযোগ করি নি।কারন আমি মনে মনে ওয়াদা করেছিলাম ,যতদিন পর্যন্ত নিজেকে ফাতেমার যোগ্য করে গড়ে তুলতে না পারবো ততদিন ওর সামনে যাবো না কথাও বলবো না।
কিন্তু আজ যতটা সম্ভব আমি চেষ্টা করেছি ।তাই এখন আমি আমার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই।
হাসান- অবশ্যই করবে।ও ওর ঘরেই আছে। তুমি যাও ওর সাথে দেখা করো গিয়ে।
রফির সাহেবও এবার কিছু বললেন না।যতই রাগ করুক না কেন কিন্তু উনিও তো মনে মনে এটাই চাইতেন ,মাহিন যাতে ফাতেমাকে নিজে এসে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
এবার উনার রাগ একটু কমেছে।
মাহিন- বাবা আমি কি যাবো ফাতেমার কাছে?????
রফিক– নিজের স্ত্রীর কাছে যাবে ,তা এতো ঢং করছো কেন??যাও ফাতেমার কাছে যাও।
এই বলে রফিক সাহেব মাহিনের দিকে তাকিয়ে হাসি দিলেন।
মাহিন- জাযাকাল্লাহু খয়রান বাবা।
এই বলে মাহিন অনেক খুশি হলো।
রফিক- ওয়া ইয়্যাকা।
যাও এবার তাড়াতাড়ি যাও।
ফাতেমা নিজের রুমে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।হালকা বাতাস বয়ছে।ফাতেমা তার লম্বা কেশ খুলে দাড়িয়ে আছে বেলকনিতে।চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ফাতেমা।কারন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাও এক প্রকার সুন্নত।
মাহিন ফাতেমার রুমে এলো।এসে দেখে ফাতেমা বেলকনিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
–আস সালামু আলাইকুম হুর পরী।
মাহিন ফাতেমাকে আস্তে করে সালাম দিলো।
ফাতেমার কানে সালাম পৌছালো।সে বুঝতে পেরেছে এটা তার রাগি মশাইয়ের কন্ঠ।
কিন্তু এ সময় ফাতেমার রাগি মশাই তার বাড়িতে আসবে কি করে??
নেহাত এটা তার মনে ভুল।তাই ফাতেমা পাত্তা দিলো না।
সে ভেবেছে এটা তার মনের ভুল।
মাহিন– এই যে হুর পরী একটু পিছনে তাকাও!!!দেখো তো এবার তোমার রাগি মশাইটাকে পছন্দ হয় কিনা।
ফাতেমা কিছুটা অবাক হয়ে পিছনে ঘাড় ফিরালো।
পিছনে ঘাড় ফিরিয়ে ফাতেমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।বেচারি হা করে তাকিয়ে আছে।……………
চোখের পলক যেন পড়ছে না তার।
এক অবাক আর হাজারো প্রশ্ন ভরা চোখ নিয়ে হা করে ফাতেমা মাহিনের দিকে চেয়ে আছে।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না ফাতেমা।
মাহিন- এই যে আমার হুর পরী সালামের জবাবটা যে দিলে না।সালামের জবাব দেওয়া তো ওয়াজিব।
এটা তো তুমিই আমাকে শিখিয়ে ছিলে।
ফাতেমা মনে মনে সালামের জবাব দিলো।
কারন তার মুখের ভাষা সে যেন হারিয়ে ফেলেছে।
মাহিন ফাতেমার কাছে গেলো।গিয়ে ফাতেমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো।
এখনো ফাতেমার মুখে কোন শব্দ নেই।
ফাতেমা যেন স্টেচু হয়ে গেছে।
মাহিন তো ফাতেমাকে জড়িয়ে ধরে কেদেই চলেছে।
ফাতেমা যা ঘটে চলেছে তা কিছুই বিশ্বাস করতে পারছে না।মনে হচ্ছে যেন স্বপ্ন দেখছে।ফাতেমার মনে হচ্ছে সে যদি কথা বলে তাহলে হয়তো স্বপ্নটা ভেঙে যাবে কিছুক্ষন পর।
মাহিন কেদে কেদে ফাতেমাকে বললো কি হলো কিছু বলছো না কেন???কি হলো কিছু বলো???
৪টা মাস ধরে তোমার কন্ঠ শুনি না।এতো অপেক্ষার পরেও তুমি কথা বলবে না তোমার রাগি মশাইটার সাথে???
প্লিজ কথা বলো !!!প্লিজ কথা বলো।!!!
মাহিন ফাতেমাকে ছেড়ে সামনে দুই হাত ধরে দাড় করালো।
ফাতেমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।চোখ লাল হয়ে গেছে।
মাহিন–কি হলো কি কাদছো কেন??তুমি কাদলে তো আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।
ফাতেমা যেন এই মাহিনকে দেখে শক খেলো।
বেেচারি খাড়া থেকে ফ্লোরে বসে পড়লো।
মাহিন- আরে আরে কি হলো তোমার???
ফাতেমা – আমি কি এটা সত্যি দেখছি????নাকি স্বপন।???
যা ঘোর কাটলেই ভেঙে যাবে?????
এতোক্ষন পর ফাতেমার মুখে কথা ফুটলো।
মাহিন– তুমি স্বপন দেখছো না।এটাই বাস্তব।আমি নিজেকে তোমার জন্য পরিবর্তন করেছি।আর তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে এতো দিন তোমার সাথে কোন যোগাযোগ করি নি।
তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।আর কষ্ট দিবো না।আমাকে মাফ করে দিয়ো।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।তোমাকে ছেড়ে আর কোনদিন কোথাও যাবো না।
মাহিন ফাতেমাকে আবার জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো।
দুইজন দুজনকে ধরে হাউমাউ করে কাদতে লাগলো!!!!
চলবে ইনশাআল্লাহ……
আজকের পর্ব ছোট হয়ে গেছে।
এই গল্প যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
কমেন্ট