#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_১১
#নিশাত_জাহান_নিশি
“এই তোরা এখানে? তোরা আমাকে অ্যাটাক করেছিলি?”
হাতেনাতে ধরা খেয়ে অমনি ছেলে দুটি মাথা নুইয়ে নিলো। ভয়ে কাঁপা-কাঁপি জুড়ে দিলো। পালানোর রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল। বিক্ষুব্ধ হয়ে রূপল সামনের ছেলেটির দিকে এগিয়ে এলো। ঝাঁজালো গলায় বলল,
“এই শাফকাত বল? তোরা আমাকে অ্যাটাক করেছিলি কেন?”
অমনি শাফকাতের পাশের ছেলেটি প্রাণপণে দৌড়ে জায়গা থেকে পালালো! প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে পিছু ফিরে আর তাকানোর প্রয়োজন বোধ করলনা। আটকে গেল শাফকাত। ঘাড়টা ত্যাড়া করে সে জায়গায় দাড়িয়ে রইল। এক রোঁখা গলায় পাল্টা রূপলের দিকে প্রশ্ন তুলে বলল,
“আপনার থেকে এটা আশা করিনি ভাই। আপনাদের ব্রেকাপের তো ছয়মাসও হলো না। এর মধ্যেই আপনি…
এতটুকু বলেই থেমে গেল শাফকাত। কৌতূহলী হয়ে রূপল ভ্রু যুগল কুঁচকে খরতর গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“এর মধ্যেই আমি কী করলাম? কথা পেটে রাখিস কেন? পুরো কথা শেষ কর।”
ভীতিহীন গলায় শাফকাত বলল,
“এরমধ্যেই আপনি অন্য মেয়ের পিছু ছুটতে শুরু করেছেন!”
“অন্য মেয়েটা কে?”
“যার বাড়ি থেকে মাত্র বের হলেন!”
“কে সে?”
“ভেবে দেখুন!”
“নীহারিকা?”
আচমকা হাত জোর করে শাফকাত রাগী গলায় রূপলকে বলল,
“ছোটো ভাই হিসেবে আপনার কাছে একটাই রিকুয়েস্ট ভাই, প্লিজ আপনি নীহারিকার দিকে হাত বাড়াবেন না! আমি আপনাকে অনেক রেসপেক্ট করি! আশা করি আপনিও আমার কথার গুরুত্ব দিবেন।”
শিথীল হয়ে এলো রূপল। নাক টেনে ভাবশূণ্য গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“কেন? নীহারিকাকে ভালোবাসিস তুই?”
নিবিড় দৃষ্টিতে শাফকাত চোখ তুলে রূপলের দিকে তাকালো। নিশ্চল গলায় বলল,
“অনেক ভালোবাসি ভাই! প্লিজ তার দিকে তাকাবেন না। আর একটা রিকুয়েস্ট..নীহারিকা যেন এই ব্যাপারে কিছু না জানে। আশা করি আপনি এই সিক্রেটটা কারো কাছে শেয়ার করবেন না।”
প্রত্যত্তুরে শূণ্য গলায় রূপল বলল,
“বাড়ি যা। যদি আমাকে চিনতে ভুল না করিস তাহলে বলব তুই নিশ্চিন্তে থাক। এসব কোনো ব্যাপার নেই আমাদের মধ্যে। একটু আগে বললি না ব্রেকাপের ছয়মাস যেতে না যেতেই আমি অন্য মেয়ের প্রেমে পড়েছি? বিষয়টা সম্পূর্ণ ভুল! আমাদের তো এখনও ব্রেকাপই হয়নি। আর অন্য কারো প্রেমে পড়া তো দূর। উল্টো এটা ভেবে খুশি হ যে, কিছুদিন বাদে আমাদের বিয়ে! আমার আর সুহাসিনীর!”
বলেই রূপল বাইকে ওঠে গেল। শো শো বেগে বাইক ছেড়ে দিলো। রূপলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে শাফকাত স্বস্তির শ্বাস ফেলল। বুকে হাত রেখে বলল,
“ফাইনালি নিশ্চিন্ত হলাম। আমার ভালোবাসাকে শুধু আমি ছাড়া পৃথিবীর আর অন্য কাউকে ভালোবাসতে দিবনা। যদি আমি তাকে না পাই তবে পৃথিবীর অন্য কাউকেও তাকে পেতে দিবনা!”
ক্লান্ত অবসন্ন শরীর নিয়ে রূপল বাড়ি ফিরে তার রুমে ঢুকল। রুমের পাখা ছেড়ে ধপ করে বিছানার উপর বসতেই নাজনিন বেগম দ্রুত পায়ে হেঁটে রূপলের রুমে ঢুকলেন। রাগী ভাব নিয়ে তিনি রূপলের মুখোমুখি দাঁড়ালেন। কঠোর গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,
“কী ব্যাপার? এতক্ষণ কোথায় ছিলি?”
গম্ভীর গলায় রূপল বিছানার উপরে দু’হাতে ড্যাশ দিয়ে বসে বলল,
“আশেপাশেই ছিলাম।”
“এভাবে আর কতদিন?”
“যতদিন বেঁচে আছি!”
“নিজের দিকে একটু তাকিয়েছিস? দিন কী দিন কী অবস্থা হচ্ছে তোর? কতটা এবনরমাল হয়ে গেছিস তুই?”
“অসব দেখার সময় নেই। আমার মন-ই তো ভালো নেই মা। শরীরের ভালো বুঝে কী হবে?”
“শরীরের তুলনায় মনকে বেশী প্রশ্রয় দিলে এমন হবেই। এখনও সময় আছে নিজেকে সামলে নে।”
“পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম কাজ কী জানো মা?”
“কী?”
“নিজেকে সামলানো! তুমি যাও। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”
“তোকে আর একা থাকতে দিচ্ছিনা আমি। তোর খালাম্মা তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছে! পিয়াসা পুরোপুরি সুস্থ হলেই আমরা তাকে দেখতে যাব। তোর কোনো বারণ শুনব না এবার।”
অমনি হিংস্র হয়ে উঠল রূপল। বসা থেকে চটপট দাঁড়িয়ে ওঠে সে তার গাঁয়ে থাকা পাঞ্জাবিটা টেনেটুনে ছিঁড়ে ফেলল। উগ্র মেজাজ নিয়ে চিৎকার করে বলল,
“তোমাকে বার বার বারণ করছিনা? আমার সামনে বার বার বিয়ের নাম না নিতে? কেন শুনো না তুমি আমার কথা? কেন এভাবে আমাকে মানসিকভাবে টর্চার করো? এসব করে কী পাও তুমি? ইচ্ছে করে বার বার দুর্বল জায়গাতে আ’ঘা’ত করো। বিয়ে যদি করতেই হয় তবে আমি সুহাসিনীকেই বিয়ে করব! তাকে ছাড়া আর কাউকে নয়। তোমার মুখ থেকে আর কোনো কথা শুনতে চাইছিনা আমি! বের হয়ে যাও আমার রুম থেকে!”
ছেলের ব্যবহারে হতবাক হয়ে গেলেন নাজনিন বেগম! মুখ চেপে কেঁদে তিনি নিরাশ গলায় বললেন,
“আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি আমার ছেলে আমার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করতে পারবে! শুধুমাত্র বাইরের একটা মেয়ের জন্য তার মায়ের সাথে এভাবে গলা উঁচিয়ে কথা বলবে।”
কাঁদতে কাঁদতে নাজনীন বেগম রূপলের রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে রূপল মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। ছেঁড়া পাঞ্জাবিটা গাঁ থেকে খুলে সে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়ল। এই মুহূর্তে তার ঘুমটা অধিক জরুরি। পরিপূর্ণ ঘুম হলে তবেই তার মাথা ঠিক হবে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে।
_________________________________
সকাল দশটা থেকেই নীহারিকা রেডি হয়ে অপেক্ষা করছে রূপলের জন্য। আজ সুহাসিনীর সাথে দেখা করার কথা তার। তবে রূপলের এখনও কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছেনা। ফোনেও তাকে পাওয়া যাচ্ছেনা! রেডি হয়ে খামোখা বসে থাকাটা নীহারিকার মোটেও পছন্দ না। তাই সে সোজা রিকশা করে রূপলদের বাড়িতে চলে এলো! নীহারিকাকে পেয়ে রূপলের মা-চাচীরা খুশি হয়ে গেল। যত্ন আত্তি করে তারা ভরা পেটেও তাকে খাওয়াতে লাগল। সবশেষে সবার দৃষ্টি এড়িয়ে নীহারিকা দৌড়ে গেল রূপলের রুমের সামনে। দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে রূপলকে ঘুম থেকে উঠালো। ঘুমে ঢুলুঢুলু শরীরে রূপল রুমের দরজা খুলতেই নীহারিকা উল্টো পাশে ফিরে গেল! উন্মুক্ত শরীরে রূপল রুমের দরজা খুলেছিল। ঘুমের ঘোরে রূপল আচ্ছন্ন গলায় নীহারিকাকে বলল,
“আপনি এখানে?”
উল্টো পাশ ফিরেই নীহারিকা বলল,
“আজ আমাদের সুহাসিনীর সাথে দেখা করার কথা ছিল।”
মুহূর্তেই রূপলের ঘুম টুম সব উবে গেল! তৎপর হয়ে ওঠে সে দ্রুত গলায় বলল,
“পাঁচ মিনিট দাঁড়ান। আমি আসছি।”
নীহারিকাকে দাঁড় করিয়ে রেখে রূপল প্রায় দশ মিনিটের মধ্যেই রেডি হয়ে বাইকের চাবি নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। অভুক্ত রূপলকে বাড়ির কেউ খাওয়াতে পারলনা! নীহারিকাকে সাথে নিয়ে সে সোজা এনজিওর সামনে চলে এলো। রূপলকে গেইটের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে নীহারিকা দারোয়ানের পারমিশন নিয়ে গেইটের ভেতর ঢুকল। রূপলের বিবরণ অনুযায়ী সে ঠিকঠাক ভাবেই সুহাসিনীর রুমের সামনে এসে দাড়ালো। বুকে দম নিয়ে সে রুমের দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেল। অমনি রুমের ভেতর থেকে মেয়েলী গলার মিষ্টি স্বর ভেসে এলো। বলল,
“কে?”
দ্রুত হেঁটে নীহারিকা রুমের ভেতর ঢুকে পড়ল। সুহাসিনীর বেডের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে হাঁপানো গলায় বলল,
“আপু আমি নীহারিকা। মনে আছে আমার কথা আপনার?”
শরীরের ব্যথা নিয়ে সুহাসিনী কাতর গলায় বলল,
“না তো! কোন নীহারিকা?”
“আরে ঐযে একদিন আমাকে হেল্প করেছিলেন। কয়েকটা গু’ণ্ডা ছেলের হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়ে ছিলেন!”
#চলবে…?