#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_১৯
#নিশাত_জাহান_নিশি
“হৃদিকে ঘিরেই সমস্ত রহস্য লুকিয়ে আছে!”
ঘাড় দুলালো রূপল। নীহারিকার অভিব্যক্তি সে মানতে নারাজ! পাল্টা নীহারিকার ভুল ভাঙানোর জন্য সে স্পষ্ট ভাষায় নীহারিকাকে বলল,
“উঁহু। আপনার হয়ত কোথাও ভুল হচ্ছে! হৃদির জন্মের পর থেকেই হৃদির প্রতি সুহাসিনীর আলাদা এক টান ছিল। সবিতাও হয়ত মা হয়ে হৃদির প্রতি এতটা যত্নশীল ছিলনা যতটা সুহাসিনী ছিল। যবে থেকে সুহাসিনীর আমার সাথে পরিচয় হয়েছে ঠিক তবে থেকেই দেখেছি সুহাসিনী হৃদিকে কতটা ভালোবাসে! সুহাসিনীর দেখাদেখি আমারও হৃদির প্রতি আলাদা এক টান তৈরী হয়েছিল! যা হয়ত সুহাসিনী বুঝতে পেরেছে যার জন্য সুহাসিনী মৃত্যুর আগে হৃদিকে আমার কাছে আমানত হিসেবে রেখে গেছে।”
রূপলের কথার পরিপ্রেক্ষিতে অট্ট হাসল নীহারিকা! পুনরায় সে রূপলের দিকে ঝুঁকে এলো। শক্ত গলায় রূপলকে বলল,
“লিসেন, মায়ের চেয়ে খালার দরদ বেশী মানা যায়! তবে দরদটা অতিরিক্ত হলে বুঝে নিতে হবে এখানে নিশ্চয়ই কোনো ঘটনা আছে। যা আপনি বা আমরা কখনও জানার বা বুঝার চেষ্টা করিনি।”
“আপনি কী বুঝাতে চাইছেন একটু ক্লিয়ারলি বলবেন?”
“আমি নিজেও এই বিষয়ে পুরোপুরি ক্লিয়ার না। ডায়েরিটা পড়লেই তবে সব ক্লিয়ার করতে পারব।”
কপাল কুঁচকালো রূপল। নীহারিকার দিকে উজবুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সে। হটকারি গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“হোয়াট? কীসের ডায়েরী?”
“সুহাসিনীর ডায়েরী।”
“কোথায় পেলেন এটা? আপনি কী তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন?”
“হুম। আর হৃদিকেও ভাবির কাছে রেখে এসেছি।”
স্বস্তি খুঁজে পেল রূপল! অতিশয় নীহারিকার দিকে ভরসার দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সে। সন্তুষ্ট গলায় বলল,
“থ্যাংক ইউ সো মাচ। এতকিছুর চাপে আমি হৃদির কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। সবিতার মাথা থেকেও হয়ত হৃদির বিষয়টা বের হয়ে গিয়েছিল! তাই তাকে সাথে নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিল। এতকিছুর মাঝেও হৃদির কথাটা আপনি মনে রেখেছেন দেট’স হোয়াই আপনাকে ম্যানি ম্যানি থ্যাংকস।”
ফিচেল হাসল নীহারিকা। অকপটে গলায় প্রত্যত্তুরে রূপলকে বলল,
“এবার বুঝতে পেরেছেন তো? মা হয়ে সবিতা আপু হৃদির প্রতি কতটা কেয়ারলেস? আদোতে একজন মায়ের পক্ষে কী সম্ভব তার মেয়েকে একা একটা বাড়িতে রেখে বের হয়ে যাওয়া? এতটা সময় পাড় হয়ে যাওয়ার পরেও মেয়ের কোনো খোঁজ খবর না নেওয়া? এতটা কেয়ারলেস কী একজন মাকে মানায় বলুন?”
বিষয়টা নিয়ে কোনোকিছু না ভেবেচিন্তেই রূপল ফট করে নীহারিকাকে বলে উঠল,
“এসব আপনার মনের সন্দেহ! সবিতা এখন তার মধ্যে নেই। তার স্বামীকে খু/ন করা হয়েছে। তার স্বামী যতই খারাপ হোক না কেন স্ত্রী হয়ে তো সে তার স্বামীর জন্য পাগলামী করবেই। এই সময়ে কী কারো মাথা ঠিক থাকে?”
“আপনার সাথে অযথাই তর্ক করে আমি পারবনা! তাই এই মুহূর্তে আমি আপনার সাথে কোনো তর্কে যেতে চাইছিনা।”
তিক্ততা নিয়ে রূপল দাঁতে দাঁত চাপল। রুষ্ট গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“আপনার খাওয়া শেষ হলে এবার উঠি?”
“খাওয়া শেষ হলেও আমার কথা এখনও শেষ হয়নি!”
“কী কথা বাকী আছে আবার?”
“সাফোয়ান ভাইয়ার খু/নটা কী আজই হয়েছে নাকী কাল?”
ভরা রেস্টুরেন্টে কোনো সিনক্রিয়েট করতে চায়না রূপল। তাই সে সাবলীলভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে শিথিল গলায় বলল,
“ভোর চারটায় হয়েছে।”
“আর একটা লাস্ট কুয়েশ্চন।”
“কী?”
“মিস্টার রাতুল কী রাতে আপনার সাথেই ছিল?”
“খেয়াল করিনি। রাতে আমি বেলকনিতে ছিলাম।”
“ওকে। ভোরে যখন আপনি শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে ঢুকলেন তখন কী উনাকে রুমে দেখেছিলেন?”
আপত্তি সত্ত্বেও রূপল প্রত্যত্তুরে বলল,
“বাইরে থেকে তখন রুমে ঢুকছিল। পানি খেতে নিচে গিয়েছিল।”
অমনি নীহারিকা সংক্রিয় হয়ে উঠল। চোখেমুখে তার অস্থির ভাব ফুটে উঠল। উত্তেজিত গলায় সে রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“বাইরে থেকে এসে উনি আপনার পর পরই শাওয়ার নিতে ঢুকেছিলেন রাইট?”
“হুম। কিন্তু কেন?”
তৎক্ষনাৎ জায়গা থেকে ওঠে দাড়ালো নীহারিকা। প্রশ্নবিদ্ধ ভাবমূর্তি পাল্টে সে ব্যস্ত স্বরে রূপলকে বলল,
“চলুন আমরা উঠি।”
“আগে তো বলুন আপনার মাথায় ঘুরছেটা কী?”
“প্রমাণ ছাড়া কিছু বলে আপনার হাতের চড় খাব না-কী? সকালের চড়টা এখনও আমার গালে লেগে আছে!”
নীহারিকার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলনা রূপল। তবুও এই বিষয়ে তেমন কোনো ঘাটাঘাটি করলনা সে। নীহারিকাকে কোনো ভাবেই সিরিয়াসলি নিতে চাইছেনা সে! এই মুহূর্তে নীহারিকাকে অপ্রোজনীয় হিসেবে ভাবতেও দু’বার বেগ পেতে হচ্ছেনা তাকে! বেপরোয়া ভাব নিয়ে রূপল ওয়েটারকে ডাকল। খাবারের বিল মিটিয়ে নীহারিকাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল। বাধ্য হয়ে নীহারিকাকে তার বাড়ি অবধি পৌঁছে দিয়ে রূপল আবার হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল।
সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে ঢুকতেই নীহারিকার মা-বাবা এবং নিহাল মিলে নীহারিকাকে আচ্ছেমত বকতে শুরু করল! সবার বকুনি খেয়ে নীহারিকা সীমিত সময়ের জন্য মন খারাপ করলেও পরক্ষণে আবার সব ভুলে গেল। কারো সাথে কোনো কথা না বাড়িয়ে সে চুপিসারে নিজের রুমে ঢুকে পড়ল। রুমের দরজাটা ভালো করে ভেতর থেকে আটকে সে বিছানার তলা থেকে সুহাসিনীর সেই ডায়েরীটি বের করল। ডায়েরিটি খুলে সে হতবাক হয়ে গেল! মাঝের কয়েকটা পৃষ্ঠা ছেঁড়া ডায়েরিটির। আগে থেকেই ডায়েরিটির পৃষ্ঠাগুলো ছেঁড়া ছিল না-কী নতুন করে কেউ ছিঁড়েছে তা ঠিক ঠাওর করতে পারলনা সে। তবে সন্দেহ থেকে সে খাটের উপর ডায়েরিটা রেখেই দৌঁড়ে গেল পিয়াসার রুমে। গিয়ে দেখল পিয়াসা হৃদিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। রুমে তৃতীয় কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিয়াসা পিছু ঘুরে তাকালো। নীহারিকাকে এক ঝলক দেখামাত্রই পিয়াসা মৃদু হাসল। উৎফুল্ল গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“তুমি এসেছ নীহারিকা?”
বিনিময়ে নীহারিকাও শুকনো হেসে পিয়াসাকে বলল,
“হ্যাঁ ভাবি। হৃদি কী ঘুমুচ্ছে?”
“হ্যাঁ। মাত্র ঘুমুলো। আগে বলো তো এতক্ষণ তুমি কোথায় ছিলে?”
“পরে বলছি ভাবি। আগে বলুন আজ আমাদের বাড়িতে কী কেউ এসেছিল?”
“তুমি তো জানোই নীহারিকা, আজ আমার মা-বাবা আসার কথা ছিল।”
“মিস্টার রাতুলও কী এসেছিলেন?”
“হ্যাঁ। তবে ভাইয়া বেশিক্ষণ থাকেনি। জরুরি কল আসাতে চলে গিয়েছিল।”
“ওহ্ আচ্ছা। তাহলে আপনি রেস্ট করুন ভাবি। আমি আসছি।”
পিয়াসাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নীহারিকা হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। পুনরায় নিজের রুমে ঢুকে সে দরজা আটকে দিলো। ডায়েরিটা হাতে নিয়ে সে গভীর চিন্তায় ডুব দিলো। বিড়বিড় করে বলল,
“তবে কী মিস্টার রাতুল আমার ঘরে ঢুকেছিলেন? ডায়েরির কথাটা কোনোভাবে জেনে গিয়েছিলেন তিনি? না-কী এসব আমার মনের ভুল? হতে পারে ডায়েরির পৃষ্ঠাগুলো আগে থেকেই ছেঁড়া ছিল! তবে কী সুহাসিনীই ডায়েরির পাতাগুলো ছিঁড়েছিল না-কী অন্যকেউ?”
এসব নানাবিধ প্রশ্ন মাথায় নিয়ে নীহারিকা ডায়েরিটি খুলল। হুট করেই তার মাথাটা ধরে এলো! শরীরটাও কেমন ম্যাচম্যাচিয়ে উঠল। জ্বর জ্বর অনুভূত হলো। শক্তিতে কুলালো না তার ডায়েরিটি পড়ার। অসুস্থ এবং দুর্বল শরীর নিয়ে সে কাত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। জীর্ণ শীর্ণ শরীর নিয়ে একদফা ঘুমানোর চেষ্টা করল। ডায়েরিটি আবারও সযত্নে সে বিছানার তলায় রেখে দিলো।
মাঝখানে কেটে গেল প্রায় সপ্তাহ খানেক! এই এক সপ্তাহে নীহারিকার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, সে শোয়া থেকেও অবধি উঠতে পারছিলনা। রূপলের সাথেও কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে পারছিলনা। অথচ রূপলের সাথে যোগাযোগ করাটা তার অত্যাবশকীয় ছিল। সাফোয়ানের খু/নিকেও খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ। তবে জোরদার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেনা তারা। সাভারের একটি বস্তি এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। সেখানেই অভিযান চলছে পুলিশের। আসল খু/নিকে খুঁজে বের করাটা এখন সময় সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এরমধ্যেই নীহারিকা শুনল রাতুল আবারও দেশের বাহিরে ফিরে যাচ্ছে! যদিও মাসখানিক বাদে তার বাহিরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে সেই ডেট সে একমাস আগেই এগিয়ে আনলো! বিষয়টায় বেশ সন্দেহ হলো নীহারিকার! শরীরের অসুস্থতা নিয়েই সে ডায়েরিটি পড়ার সিদ্ধান্ত নিলো! বিছানার তলায় রাখা ডায়েরিটি সে খুলল! খুব মনোযোগের সাথে সে ডায়েরিটি পড়তে লাগল। ডায়েরির পৃষ্ঠাগুলো ক্রমশ যতই এগিয়ে যাচ্ছিল ততই যেন তার গাঁয়ের লোমগুলো শিউরে উঠছিল! মাঝে মাঝে সে আঁতকেও উঠছিল। ডায়েরির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো ছেঁড়া হলেও লিখার ছাপ অনুযায়ী নীহারিকা কিছুটা মিলিয়ে হলেও ডায়েরিটা পড়তে পারছিল! ডায়েরিটা সম্পূর্ণ শেষ করার পর নীহারিকার গাঁ থেকে অঝরে ঘাম ঝরতে লাগল! ঢকঢক করে সে এক গ্লাস পানি নিমিষেই গিলে খেল। ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে সে ফোনটি হাতে নিয়ে তৎক্ষনাৎ রূপলের নাম্বারে কল করল। প্রথম দুটি কল বেজে যাওয়ার পর রূপল দ্বিতীয় কলটি তুলল। অমনি নীহারিকা দ্রুত গলায় বলল,
“কোথায় আপনি?”
ব্যস্ত গলায় রূপল বলল,
“পুলিশ স্টেশন। কেন?”
“একবার আপনাদের বাড়িতে আসুন। কথা আছে।”
খিটখিটে মেজাজে রূপল বলল,
“আমি এখানে জরুরি কাজে ব্যস্ত নীহারিকা। আপনার কথামত আমি এখান থেকে ওখানে দৌড়োদৌড়ি করতে পারবনা! তাছাড়া আপনি এখন অসুস্থ। এই রোগা শরীর নিয়ে আপনি আমাদের বাড়িতে কী করছেন?”
রুদ্ধশ্বাস ফেলল নীহারিকা৷ রূপলের রাগী ভাবমূর্তি দমন করার জন্য সে রূপলকে চমকে দিয়ে বলল,
“আমি জানি আপনার সুহাসিনীকে কে খু/ন করেছে!”
অমনি উত্তেজিত হয়ে উঠল রূপল। পুলিশ স্টেশন থেকে দ্রুত পায়ে হেঁটে বের হয়ে গেল সে। মাথার চুলগুলো টেনে সে বিশৃঙ্খল গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“হোয়াট? কে খু/ন করেছে সুহাসিনীকে?”
“প্লিজ একবার আপনাদের বাড়িতে আসুন। আর একটু দেরী হয়ে গেলেই হয়ত সব আমাদের হাতের বাইরে চলে যাবে!”
“আপনি কী আমার সাথে ইয়ার্কি করছেন?”
“আমি এখন ইয়ার্কি করার মুডে নেই মিস্টার রূপল। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। আপনার যদি আমার উপরে আস্থা থাকে তো আপনি এক্ষুণি, এই মুহূর্তে আপনাদের বাড়িতে আসুন। আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করব।”
অনর্গল কথাগুলো বলেই নীহারিকা কলটি কেটে দিলো। বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়েই সে অসুস্থ শরীর নিয়ে রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল! চুপিসারে রওনা হলো রূপলদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। হাতে গোনা প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যেই নীহারিকা রূপলদের বাড়ি এসে পৌঁছে গেল। বাড়ির সদর দরজাটা খোলা! দেখেই বুঝা যাচ্ছে বাড়ি আজ জনমানবশূন্য! ফাঁকা বাড়িতে কোনো প্রকার ভয় ভীতি ছাড়াই নীহারিকা বাড়ির ভেতর ঢুকে সোজা রাতুলের বেডরুমে ঢুকে পড়ল!
তড়িঘড়ি করে রাতুল তার ব্যাগপত্র গুছাচ্ছিল! এর মধ্যেই নীহারিকার আগমন ঘটল তার রুমে। ফাঁকা রুমে দ্বিতীয় কারো উপস্থিতি টের পেতেই রাতুল ঝট করে পিছু ঘুরে তাকালো৷ জোরে জোরে শ্বাস ফেলছিল নীহারিকা। ছুটোছুটিতে সে মোটামুটি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তারই সুযোগ নিলো রাতুল। দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে সে নীহারিকার গলার টুটি চেপে ধরল! রক্তিম চোখে নীহারিকার দিকে তাকালো। গভীর আক্রোশ ভরা গলায় বলল,
“খুব সাহস তোর তাইনা? মেয়ে মানুষদের এত সাহস থাকা ভালোনা তুই জানিস না?”
গলা চেপে ধরার রাখার দরুন নীহারিকা গলায় প্রচণ্ড ব্যথা পাচ্ছিল। একই সাথে তার শ্বাস ফেলতে ও বড্ড কষ্ট হচ্ছিল। চোখ দুটো কোটর থেকে বের হয়ে আসছিল প্রায়। নেতিয়ে পড়া শরীর নিয়ে নীহারিকা প্রাণপণে চেষ্টা করছিল রাতুলের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য। তবুও যেন শেষ রক্ষা হচ্ছিলনা! উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে নীহারিকা তার হাতের কাছে থাকা ফুলের টবটি কোনো রকমে হাতে নিলো। শরীরের অবশিষ্ট শক্তি দ্বারা নীহারিকা রাতুলের ঠিক মাথা বরাবর জোরে এক আঘাত করল! অমনি রাতুল বাধ্য হলো নীহারিকার গলা থেকে হাত ছাড়াতে। ছাড়া পেয়ে নীহারিকা রুদ্ধশ্বাস ফেলে ব্যথায় কোঁকাতে থাকা রাতুলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আপনার সব খেলা শেষ রাতুল! আমি বুঝতে পারিনি আপনি এত জঘন্য একটা মানুষ।”
এতক্ষণে মাথা ফুলে ঢোল হয়ে গেল রাতুলের। পূর্বের তুলনায় আরও অধিক ক্ষেপে গেল সে। সঙ্গে সঙ্গেই হিংস্র রূপ ধারণ করে সে নীহারিকার চুলের মুঠি চেপে ধরল! দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
“আমি শুধু জঘন্য না, অতিরিক্ত জঘন্য একজন মানুষ। ভেবেছিলাম ভালোবেসে তোকে কাছে টেনে নিব! কিন্তু তুই যে ভেতরে ভেতরে এত চতুর আমার তা জানা ছিলনা! খেলা শুরু করার আগেই তুই আমার সব খেলা ভেস্তে দিলি। যেহেতু তুই এখন আমার সব ষড়যন্ত্র জেনেই গেছিস তাহলে তোর আর কোনো অধিকার নেই এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার!”
বর্বর রূপ ধারণ করে রাতুল যেইনা নীহারিকার মাথাটাকে দেয়ালের সাথে ধাক্কা মারতে যাবে অমনি রূপলের আবির্ভাব ঘটল ঘটনাস্থলে! আকস্মিকভাবে পেছন থেকে ছুটে এসে সে নীহারিকাকে আঁকড়ে ধরল! অগ্নিঝরা দৃষ্টিতে সে রাতুলের দিকে তাকালো।
#চলবে…?