#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৩
#নিশাত_জাহান_নিশি
“কয়েকদিন যাবত গাঁ গোলাচ্ছিল আমার। বমি বমি ভাব হচ্ছিল, মাথা ঘুরছিল, অবসন্ন লাগছিল, পিরিয়ডও প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ। সেই থেকে ধারণা করছিলাম আমি প্রেগনেন্ট! তাই প্রেগনেন্সি টেস্ট করানোর সাহসটাও ঠিক হয়ে ওঠে নি। তবে আজ কেন জানিনা আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। ভেতরের ভয়টা সবাইকে বলেই দিলাম!”
আবুল ভাব নিয়ে নীহারিকা বোকা কিসিমের পিয়াসার দিকে তাকিয়ে রইল! আজকালকার যুগে এমন নির্বোধ ধরণের মেয়ে হয়? কত ফাস্ট এখনকার যুগের মেয়েরা! কথার আগেই তাদের বুদ্ধি চলে। আর এই আধুনিক যুগে থেকেও কী-না পিয়াসা এত বুদ্ধুরাম? প্রেগনেন্সি টেস্ট না করিয়েই সে ধারণা করছে সে প্রেগনেন্ট? যেখানে পিয়াসা বলল অমি ভাইয়ার সাথে তার কোনো ফিজিক্যাল রিলেশন-ই হয়নি! রূপলও বোকা বনে গেল পিয়াসার অযৌক্তিক কথাবার্তা শুনে! ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সে পিয়াসার দিকে তাকিয়ে রইল। তাজ্জব গলায় বলল,
“মানে কী এসবের? সামান্য লক্ষ্মণ দেখেই কী-না তুই ভাবছিস তুই প্রেগনেন্ট? তুই যে লক্ষ্মণ গুলোর কথা বলছিস তা তো অন্য কোনো কারণেও হতে পারে। কয়েকদিন যাবত যেহেতু তোর শরীর এতটাই খারাপ করছিল তাহলে তুই এই কথাটা আমাদের বললি না কেন? আমরা তোকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতাম। ডিটেইলস জানতে পারতাম৷ সামান্য অনুমানের উপর ভিত্তি করে তুই কীভাবে বলতে পারিস যে তুই প্রেগনেন্ট?”
নীহারিকাও এবার রূপলের কথার উপর ভিত্তি করে পিয়াসাকে বলল,
“হ্যাঁ ভাবি। আপনি সামান্য অনুমানের উপর ভিত্তি করে বলতে পারেন না যে আপনি প্রেগনেন্ট! পিরিয়ড এক দুই মাসের জন্য বন্ধ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমারও মাঝে মাঝে এমন হয়। সেজন্য আমাকে গাইনি ডক্টরের সাজেশনও নিতে হয় মাঝে মাঝে। তাছাড়া আপনি তো একটু আগেই বললেন যে অমি ভাইয়ার সাথে আপনার কোনো ফিজিক্যাল রিলেশন হয়নি। তাহলে আপনার মনে হঠাৎ এই প্রেগনেন্সির ভয়টা ঢুকল কীভাবে?”
থতমতিয়ে গেল পিয়াসা! মাথা নুইয়ে অস্বস্তিতে ভুগতে লাগল। কী বলবে সে ভেবে পাচ্ছিল না। এখন সে যা বলবে তাও তো অনুমানের উপর ভিত্তি করেই বলতে হবে! ঐদিনের ঘটনাটাও তো সে পুরোপুরি শিওর না! পিয়াসার হঠাৎ ঘাবড়ে উঠাকে বেশ সিরিয়াসলি নিলো রূপল। পিয়াসার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে কঠিন গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“সত্যিই অমির সাথে তোর কোনো ফিজিক্যাল রিলেশন হয়নি বল?”
ভয়ে সিঁটিয়ে ওঠে পিয়াসা বলল,
“আমার জানা মতে হয়নি ভাইয়া! তবে একবার একটা ঘটনা ঘটেছিল যার জন্য আমার মনে সন্দেহ এবং ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে!”
“কী ঘটনা বল? অমি কী করেছে তোর সাথে কুইকলি বল?”
ভয়ে কেঁদে দিলো পিয়াসা। স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিল না সে রূপলকে সব খুলে বলতে। জেদ সংযত করতে না পেরে রূপল তার পায়ের সামনে থাকা সোফাটিতে জোরে এক লা’থ মারল! ঝাঁজালো গলায় বলল,
“আমার জানা আছে অমি তোর সাথে ঠিক কী কী করতে পারে। কার ইশারায় অমি এসব করছে তাও আমার ভালো করে জানা আছে। রিলেশন করলি তো করলি একটা ফা’ল’তু, থার্ড ক্লাস, নে’শা’খো’র ছেলের সাথে রিলেশন করলি? মান সম্মান সব নষ্ট করে দিলি! শত্রুকে সুযোগ করে দিলি। গোটা পরিবারের ক্ষতি করে দিলি।”
বলেই রূপল রাগে গজগজ করে পিয়াসার রুম থেকে বের হয়ে গেল। পিয়াসা আবারও মরা কান্না জুড়ে দিলো। শরীরটা কেমন যেন তার নিস্তেজ হয়েও এলো। মাথা ঘুরে যাচ্ছিল। পাশে দাঁড়িয়ে কপাল চাপড়াতে লাগল নীহারিকা৷ অসহ্যকর পরিস্থিতিতে পড়ে সে মিনমিনিয়ে বলল,
“হে আল্লাহ্। এ তো দেখছি পুরো গোষ্ঠী শুদ্দ পাগল! একজন প্রেগনেন্সি টেস্ট না করিয়েই বলল সে প্রেগনেন্ট। তার এক কথায় আস্ত একটা সংসার ভেঙে গেল! কতগুলো সম্পর্কও নষ্ট হয়ে গেল। অন্যজন তো এর সত্যতা যাচাই না করেই বেচারা নির্দোষ ছেলেটাকে মে’রে আ’ধ’ম’রা করে দিলো! শুধু তাই নয় বোন তো এখন আবার বলছে ঐ ছেলের সাথে না-কী কী ঘটনা ঘটে গেছে তার! সেই ঘটনা সে আবার মুখ খুলে বলতেও পারছেনা! এ কোন পাগলা পরিবার মাবুদ? এদের মাথায় কী ঘিলু বলতে কিছু আছে? না-কী মাথায় শুধু গ্যাস্ট্রিক-ই আছে?”
পিয়াসার কান্নাকাটি দেখে নীহারিকা তার বিরক্তি ভাব পাল্টে পিয়াসাকে শান্তনা দিতে প্রস্তুত হলো। পিয়াসাকে কাঁধে হাত রেখে পিয়াসাকে নিয়ে সে বিছানার উপর বসল। পিয়াসার মাথায় হাত বুলিয়ে বেশ শান্ত গলায় বলল,
“প্লিজ কাঁদবেন না ভাবি। বিষয়টা আমাকে বরং বুঝিয়ে বলুন? সত্যিই কী আপনাদের মধ্যে কোনো ইন্টিমেট হয়নি?”
পিয়াসা ডুকরে কেঁদে বলল,
“আমি কিছু জানিনা নীহা! প্লিজ আমাকে এখন কিছু জিজ্ঞেস করোনা। আমি কোনো উত্তর দিতে পারব না। শরীরটা খুব খারাপ লাগছে আমার। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। তোমরা চাইলে আগামী একমাসের মধ্যেই ডিভোর্স পেপারটা এই বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে পারো! আমি সাইন করে দিব। ভালো কোনো মেয়ে দেখে তোমার ভাইকে বিয়ে দিয়ে দিও প্লিজ! আজ যা হয়েছে তার জন্য আমি সত্যিই খুব লজ্জিত।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীহারিকা মাথাটা নুইয়ে নিলো। পিয়াসাকে বেশী চাপ দিলো না সে৷ নীহারিকার মনের অবস্থা ভালো নেই বেশ বুঝতে পারল সে। তবে তার মনের মধ্যেও নানা ধরনের প্রশ্ন বাসা বাঁধতে লাগল। পিয়াসা কেন সেদিনের ঘটনাটা কাউকে বলছে না? কী এমন ঘটেছিল সেদিন?
পিয়াসার ঘর থেকে বের হতেই রূপলকে ঘিরে ধরেছিল রূপলের পরিবারের সদস্যরা। রূপলের মা নাজনিন বেগম তো বেশ চিন্তিত গলায় রূপলকে বললেন,
“এই রূপল? কী বলল পিয়াসা? বল না আমাকে প্লিজ?”
জেদ দমিয়ে রূপল বেশ শান্ত গলায় তার মাকে বলল,
“কিছুনা মা। তোমার চিন্তা করার কিছু নেই। তবে কাল পিয়াসাকে নিয়ে একবার হসপিটালে যেতে হবে। রেডি হয়ে থেকো।”
“কেন? বাচ্চাটাকে এবর্শন করবি?”
“ধ্যাত। বোকা বোকা কথা বলো না তো মা! তোমার মেয়ে কী এখনও শিওর যে সে প্রেগনেন্ট? অনুমানের ভিত্তিতে বলেছে জাস্ট। মা হয়েও কী মেয়ের মনের খবর, শরীরের খবর রাখতে পারোনা তুমি? অথচ সারাক্ষণ তোমরা বাড়িতেই থাকো। এক বাড়িতে থেকে এতকিছু ঘটে গেল অথচ তুমি কিছু বুঝতেই পারলে না? কখনও মেয়ের সাথে ফ্রেন্ডলি বিহেভ করেছ যে তার সম্পর্কে সব জানবে? আমিও না, একটু বেশী বেশী আশা করে ফেলি তোমার থেকে!”
বলেই রূপল হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। শরীরের অসুস্থতা যদিও তাকে ক্রমশ দুর্বল করে তুলছে তবুও সে থামবার পাত্র নয়। অমিকে যে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে সে হসপিটালে যেতে হবে তাকে। সেদিন পিয়াসার কী হয়েছিল তা তাকে জানতে হবে। সত্যিই কী পিয়াসার অজান্তে সেদিন অমি খারাপ কিছু করেছিল তার সাথে? যার ফলে পিয়াসার মনে ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে? মাথাটা যেন স্থির নেই রূপলের। সবদিক থেকে সমস্ত আপদ বিপদ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে।
বাইকে চড়ে রূপল হসপিটালের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছাতেই পেছন থেকে একটা বাইক এসে রূপলের চলন্ত বাইকের সামনে থামল! বাইকের ব্যাকসিটে বসা জাদরেল দেখতে ছেলেটি হাত নাড়িয়ে রূপলকে থামতে বলল। রূপলও সঙ্গে সঙ্গে বাইটিকে থামিয়ে দিলো। অমনি বাইক থেকে দুজন বডিবিল্ডার ছেলে নেমে এলো। একরোখা ভাব নিয়ে রূপল বাইকেই বসে রইল! দেখে মনে হচ্ছে যেন রূপল তাদের সাথে পূর্ব পরিচিত। তাদের হঠাৎ আগমনে রূপলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হলো। ছেলে দুটি বেশ ভাবসাব নিয়ে হেঁটে এলো রূপলের দিকে। শার্টের কলার উঁচিয়ে সেই জাদরেল ছেলেটি রূপলের পাঞ্জাবির কলারে হালকা হাত ছুঁইয়ে বিদঘুটে হেসে বলল,
“কী রে রূপল? কোথায় যাচ্ছিস?”
অন্যদিকে তাকিয়ে রূপল বিরক্তিকর গলায় বলল,
“হসপিটালে যাচ্ছি।”
“অমিকে দেখতে?”
“হুম।”
“শুনলাম তুই না-কী অমিকে খুব ক্যালিয়েছিস?”
“জানোই যেহেতু আবার জিজ্ঞেস করছ কেন?”
“তুই কী ভুলে গেছিস রূপল? অমি আমার দলের লোক?”
“এতকিছু গোনার সময় নেই আমার! দেখি সাইড দাও আমার কাজ আছে।”
“যদি না দিই তো? তোর সাথে আমার অনেক হিসেব বাকী আছে।”
খিটখিটে মেজাজ নিয়ে রূপল ছেলেটির দিকে তাকালো। তেজী গলায় বলল,
“তোমার সাথেও আমার কী কম হিসেব বাকী আছে সাফোয়ান ভাই? অতীত ভুলিনি এখনও! শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছি। তুমি ভেবো না অমিকে দিয়ে তুমি আবারও আমার কোনো ক্ষতি করাতে পারবে! আমি আর কিছুতেই ভয় পাইনা। কথাটা তোমার মগজে ভালোভাবে ঢুকিয়ে নাও!”
তুখোড় রাগী ভাব নিয়ে রূপল সাফোয়ানকে পাশ কাটিয়ে বাইক স্টার্ট করে দিলো। রূপলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে সাফোয়ান অট্ট হাসল। হাতে তালি বাজিয়ে বিদ্রুপের স্বরে চিৎকার করে বলল,
“তোর ‘সুহাসিনীর’ মত তোর বোন পিয়াসার জীবনটাকেও আমি নরক করে দিয়েছি রে রূপল! তুই আমার কিচ্ছু করতে পারবিনা, কিচ্ছু না!”
‘সুহাসিনী’ নামটি রূপলের কর্ণকুহরে মিহিভাবে ভেসে আসতেই রূপল অন্য এক জগতে হারিয়ে গেল! কষ্টের বোঝাটা আরও ভারী হতে লাগল! প্রচণ্ড জেদ চেপে বসল তার মাথায়। পরিস্থিতির চাপে পড়ে সে কিছুতেই পিছু ঘুরে সাফোয়ানের মুখোমুখি হতে পারছেনা! বাইকটা আরও স্পিডে ছেড়ে দিলো রূপল। বাইকের সাথে জেদ ঝাড়তে লাগল। এতক্ষণে সে হসপিটাল পাড় হয়ে দু-চোখ যেখানে যায় সেখানেই হারিয়ে গেল! জাগতিক সব চিন্তাভাবনা তার মাথা থেকে বেরিয়ে গেল। হাওয়ার বেগে কোথায় যেন একটা মিশিয়ে গেল।
ঘড়িতে রাত প্রায় একটা বাজতে চলল অথচ নীহারিকা এখনও তার বাড়ি যেতে পারলনা! এদিকে নীহারিকার মা-বাবা বেশ চটে গেছে তার উপর। একে তো তাদের পারমিশন ছাড়া ঐ বাড়িতে গেল নীহারিকা। দ্বিতীয়ত, এত রাত হয়ে গেল অথচ সে এখনও বাড়ি ফিরছেনা! নিহালকে ও তারা ঐ বাড়িতে যেতে দিচ্ছেনা। নিহালকে এক প্রকার জোর করে আটকে রেখেছে তারা!
নীহারিকার আজ রাতে বাড়ি ফিরার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ পিয়াসা হুট করেই বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মাথা ধরা, অনর্গল বমি করা, পেটে ব্যথা শরীরের অবস্থা বেহাল তার। রাতটা কোনো রকমে তাকে সামলানো গেলেও ভোরের দিকে তার অবস্থা আরও বেহাল হয়ে গেল। রাত থেকে রূপলের সাথে কোনো যোগাযোগ না করা গেলেও ভোরের দিকে রূপল বাড়ি ফিরে পিয়াসার এই জটিল অবস্থা দেখে হম্বিতম্বি হয়ে পিয়াসাকে নিয়ে হসপিটালে গেল। বেলা গড়াতেই পরীক্ষা নীরিক্ষা করে জানা গেল পিয়াসার পেটে টিউমার হয়েছে! যত দ্রুত সম্ভব অপারেশন করতে হবে। আর দু-একদিন দেরী করলেই লাইফ রিস্ক হয়ে যাবে তার!
এদিকে অমির বাবা-মা এসে আ’হ’ত অমির বেডের পাশে বসে কান্না করছে। আকাশ এবং সজল অমিকে এবং অমির পরিবারকে পাহারা দিচ্ছে। সবাই অপেক্ষা করছে রূপল কখন আসবে। কখন অমির থেকে জবানবন্দি নেওয়া হবে। যদিও অমি বলছে সে নির্দোষ, সে কোনো দোষ করেনি। তবুও তার কথা কেউ বিশ্বাস করছেনা। সাফোয়ানও অমিকে এই ঝঞ্জাট থেকে বাঁচাতে আসছেনা! হয়ত ভাবছে তার কাজ শেষ! এবার অমি মরলেও কী বা বাঁচলেও কী!
ঐদিকে রূপলসহ রূপলের পরিবারের মাথায় যেন আকাশ ভেড়ে পড়ল! পিয়াসার একটু বোকামির জন্য আজ কতকিছু ঘটে গেল! এমনকি তার চরিত্রেও দাগ লেগে গেল। সবাই তাকে ছিঃ ছিঃ করল। কত মা’র’পি’টও হয়ে গেল। সম্পর্ক ভাঙল। পিয়াসার পেটে টিউমার হয়েছে কথাটা জেনে নিহাল এবং নিহালের মা-বাবা হসপিটালে ছুটে এলো। পিয়াসা প্রেগনেন্ট না শুনে তারা নিশ্চিন্ত হলো। তবে মন থেকে তাদের সন্দেহ একরত্তিও দূর হলো না! পিয়াসা প্রেগনেন্ট না হলেও নিশ্চয়ই অমির সাথে তার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে বলে তারা ধারণা করতে লাগল! আর এই মেয়েকে ঘরের বউ হিসেবে মানার কোনো প্রশ্ন-ই ওঠেনা!
আজ রাতের মধ্যেই ডক্টরকে অপারেশনের সমস্ত বন্দোবস্ত করতে বলল রূপল। ডক্টরের চিকিৎসার খামখেয়ালির জন্য যেন তার বোনের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলল। রূপলের পরিবারের কারো মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা। সবাই অতিরিক্ত দুঃশ্চিতায় ভুগছে। ভেতরে ভেতরে মেয়ের এত বড়ো অসুখ বেঁধে আছে অথচ মা হয়ে মেয়ের অসুস্থতার বিষয়টা ধরতে পারেননি মিসেস নাজনিন বেগম। সেই আফসোসেই যেন তার ভেতরটা ভার হয়ে আসছে।
সবার করুন আহাজারিকে উপেক্ষা করে নিহাল এক দৃষ্টিতে পিয়াসার কেবিনের দিকে তাকিয়ে আছে! জানালার থাই গ্লাস সরিয়ে সে বেডে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকা পিয়াসার দিকে নিমগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেন যেন তার হঠাৎ করেই পিয়াসার প্রতি বড্ড মায়া তৈরী হচ্ছে! বিয়ের মত পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে বলেই কী তার মন ভঙকারী মেয়েটির প্রতি এত মায়া তৈরী হচ্ছে?
এদিকে হসপিটালের বারান্দায় রূপলকে একা পেয়ে নীহারিকা ধেয়ে গেল রূপলের কাছে! দুঃশ্চিতায় ভুগতে থাকা রূপলের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সে তেজী গলায় রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী ব্যাপার হুম? সব তর্জন গর্জন নিমিষেই দমে গেল? আপনি না এলাকার শে’ট? গু’ন্ডা, মা’স্তান? এলাকার সব ধরনের বিচার আচার করেন? তো আপনার কী মিনিমাম এই সেন্সটুকু নেই যে কোনো সিদ্ধান্তে যেতে গেলে প্রথমে একটু যাচাই বাছাই করতে হয়? প্রথমেই মাথা গরম করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে নেই? বেচারা ছেলেটাকে অযথাই বে’ধ’র’ক পিটালেন! কী দোষ ছিল তার?”
চটে গেল রূপল! নীহারিকার দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সে। ঝাঁজালো গলায় বলল,
“এই চুপ করুন আপনি। একদম চুপ। আপনি কতটুকু চিনেন ঐ অমিকে? যে তার হয়ে সাফাই দিতে এসেছেন? আমি যা করেছি একদম বেশ করেছি। প্রয়োজনে আরও একদফা ক্যা’লা”ব তাকে! আমার কোনো কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলা আমার পছন্দ নয়।”
“তবুও নিজের বোনের দোষটা স্বীকার করবেন না তাইনা? তার বোকামিকে বড়ো করে দেখবেন না? নিজের বেলায় ষোলো আনা আর পরের বেলায় এক কানা কড়িও না?”
#চলবে…?