#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৪৮
#নিশাত_জাহান_নিশি
“নীহারিকার জন্য একটা বিয়ে এসেছে! ছেলেটা অবশ্য আমার অফিসের-ই কলিগ। খুব তাড়াহুড়ো করছে তারা। আমার রিসিপশনের পর পরই নীহারিকাকে দেখতে আসবে তারা!”
নিস্তব্ধ, নির্বিকার, হতভম্ব রূপল! কিছু মুহূর্তের জন্য তার নড়াচড়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। নিহালের কথা তার এক কান দিয়ে প্রবেশ তো করল তবে অন্য কান দিয়ে তা বের হওয়ার বদলে বরং কর্ণকুহরে থেকেই বিকট আওয়াজে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল! যার তিক্ততা রূপল বাইরে প্রকাশ করতে না পেরে ভেতরে ভেতরে গুমরে মরছিল! এই প্রথম তার উপলব্ধি হলো নীহারিকার প্রতি তার মনে আলাদা এক অনুভূতি জন্ম নিয়েছে! যা হয়ত এক এক-দুইদিনে তৈরী হয়নি। ধীরে ধীরে তৈরী হয়েছে।
রূপলের আকস্মিক স্তব্ধতা দেখে অবাক হলো নিহাল। নির্বোধ ভঙ্গিতে সে রূপলকে তার হাত দ্বারা মৃদু ধাক্কা দিলো। অমনি রূপল তার নিজের মধ্যে ফিরে এলো। জায়গা থেকে কিঞ্চিৎ নড়েচড়ে বসল। নিহালের দিকে সচকিত দৃষ্টি ফেলল সে। অমনি বিস্ময়কর গলায় নিহাল প্রশ্ন ছুড়ল,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড রূপল? হঠাৎ কোন ঘোরে ডুবে গেলে তুমি? আমি এতক্ষণ ধরে যা যা বলছিলাম তার কিছুই শুনতে পাওনি তুমি?”
নিহালের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো রূপল। মাথা নুইয়ে সে নখ খুঁটতে লাগল! গলা ঝেড়ে সে গম্ভীর গলায় নিহালকে বলল,
“বেশি তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে না জিজু?”
“যেমন? কীসের তাড়াহুড়ো?”
“নীহারিকা তো সবেমাত্র অনার্সে উঠল! অন্তত অনার্সটা কমপ্লিট করুক।”
“ওহ্ আচ্ছা। পড়ালেখা নিয়ে তুমি টেনশন করছ? এটা টেনশনের কোনো ব্যাপার হলো? কজ বিয়ের পরেও নীহা পড়তে পারবে। উজ্জল তাকে পড়াবে। এই বিষয়ে কোনো এক্সট্রা টেনশন বা সন্দেহ নেই।”
“বাই অ্যানি চান্স বিয়ের পর যদি না পড়ায় জিজু! আই থিংক প্রত্যেকটা মেয়েরই সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ড হওয়ার পর বিয়ে করা উচিৎ! ইট’স ভেরি ইম্পর্টেন্ট পার্টস অফ এভরি ওমেনস। টু বি অনেস্ট জিজু এদিকে আপনাদেরও গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।”
রূপলের কথায় যদিও যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে তবুও নিহাল বিষয়টা নিয়ে প্রচণ্ড দ্বিমনায় ভুগতে লাগল। ভাবুক হয়ে সে রূপলের দিকে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে এলো। চিন্তিত গলায় শুধালো,
“তার মানে তুমি বলছ বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিতে?”
নিহালের মুখ থেকে এই কথাটি শোনার জন্যই যেন অপেক্ষা করছিল রূপল! ভনিতা ভুলে সে ঝট করে দ্রুত গলায় বলে দিলো,
“আই থিংক করে দেওয়া উচিৎ জিজু!”
“ধ্যাত! পাগল তুমি? আম্মায় ছেঁচবে আমাকে এই কথা শুনলে! এমনিতেই নীহার তেমন বিয়ে টিয়ে আসেনা। যদিও এই নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই তবে মা-বাবার এই নিয়ে খুব টেনশন হয়! বুঝই তো তাদের টেনশন কী নিয়ে?”
তীব্র উত্তেজনা নিয়ে রূপল বলল,
“আন্টি আঙ্কেল বুঝেনা বলে অযথা টেনশন করে জিজু। কিন্তু আপনি তো বুঝেন হোল ওয়ার্ল্ড এখন যোগ্যতার পেছনে ঘুরে। কার গাঁয়ের রঙ কী, কে দেখতে কেমন, লম্বা না খাঁটো, কার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড কেমন ট্রাস্ট মি এসবের দিকে তাকানোরও সময় নেই এখন কারো! সবাই এখন যোগ্যতাকে জাজ করে। সময় বদলেছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও বলদেছে জিজু। এখন আর কেউ আগের জামানার ব্যাকডেটেড চিন্তাধারা নিয়ে বসে নেই। পড়ালেখা শেষ করে নীহু যখন তার যোগ্যতা অনুযায়ী ভালো কোনো চাকরী বাকরী করবে তখন ছেলের অভাব পড়বেনা ট্রাস্ট মি! দেখা যাবে তখন তার পেছনে ছেলেদের লাইন পরে গেছে।”
এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মধ্যেও নিহাল কেমন সন্দেহপ্রবন হয়ে উঠল! ভ্রু যুগল উঁচিয়ে সে রূপলের দিকে তাকালো। প্রশ্ন ছুড়ল,
“এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড। কী বললে তুমি? আরেকবার বলো তো? আমি যদি ভুল না শুনি নীহারিকাকে তুমি “নীহু” বললে?”
অমনি থতমত খেয়ে গেল রূপল! শার্টের কলার ঝেড়ে সে অস্থিরতা প্রকাশ করল। অবিন্যস্ত গলায় বলল,
“নীহারিকা নামটা খুব হার্ড তো! তাই শর্ট করে নিলাম! নীহু ইজ পার্ফেক্ট!”
“ওকে। বাট আমরা তো তাকে নীহা বলে ডাকি। তুমিও চাইলে তাকে নীহা ডাকতে পারবে। বাট নীহু ডাকটা অন্যরকম শুনালো তাই বললাম!”
নিহালের হুটহাট সন্দেহজনক প্রশ্নে রূপল বেশ বিরক্তবোধ করছিল! রাগে গজগজ করে সে মনে মনে অভিসন্ধি কষিয়ে বলল,
“এই বান্দায় আমারে জেরা করতে বইছে! ঘাম ছুটিয়ে দিলো জাস্ট। বিয়ে ভাঙা কী চাট্টিখানি কথা? উফ বিরক্তিকর! ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে কথা বলা আমার মোটেও পছন্দ নয়। এরচেয়ে ভালো বরং ডিরেক্টলি বলে দেওয়া “সময় হলে আমিই নীহুকে বিয়ে করব!” তার বোনকে দেখলে যে আমার সেনশেসন হয় এটা তো তার অন্তত বুঝা উচিৎ! ইভেন আমিতো তার বোনকে একটা স্পেশাল নামেও ডাকছি। তবুও কী বুঝতে পারছেন না তিনি আমি কী চাইছি? কেমন বেটা মানুষ রে?”
ইতোমধ্যেই পিয়াসা এবং মারজিনা বেগম নাশতার প্লেট হাতে নিয়ে ড্রইংরুমে এলো। নিহাল এবং রূপল নিজেদের অবস্থানে চুপচাপ হয়ে বসে রইল। মারজিনা বেগম হেসে হেসে রূপলের হাতে কফির মগ তুলে দিলেন। প্রফুল্ল গলায় বললেন,
“কী রূপল? বোনের রিসিপশনের পর পরই তো আরেকটা বিয়ের দাওয়াত তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে! আগে ভাগেই প্রস্তুত হয়ে থাকো।”
কফির মগটা হাতে নিয়ে রূপল সৌজন্যতার হাসি হাসতে বাধ্য হলো। বুঝেও কিছু না বুঝার ভান ধরে শুধালো,
“কার বিয়ের দাওয়াত আন্টি? বুঝলাম না ঠিক।”
তখনি মারজিনা বেগমের মুখের কথা টেনে নিলো পিয়াসা। রূপলের ঘাড় থেকে নীহারিকা বিদায় হবে সেই খুশিতে সে পৈশাচিক হাসল! আপদ দূর হবে ভেবে সে মহাখুশি। দ্রুত গলায় রূপলকে বলল,
“কার আবার? নীহারিকার! খুব শীঘ্রই তার বিয়ে।”
নির্বোধ দৃষ্টিতে রূপল পিয়াসার দিকে তাকালো। মারজিনা বেগমের সমস্ত ক্ষোভ সে পিয়াসার উপর ঝারতে উদ্যত হলো! নিমিষেই চোখ দুটো তার ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল! হঠকারি গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“পাত্র এখনও দেখতে এলোনা তাকে। এরমধ্যেই তোরা তাকে বিয়ে টিয়ে দিয়ে দিচ্ছিস? এত ওভার কনফিডেন্স কেন তোরা? আশ্চর্য মানুষ তো!”
রূপলের এহেন রাগের কারণ পিয়াসার বুঝতে বেশি সময় ব্যয় হলো না! তবে উপস্থিত সবার সামনে পিয়াসা কোনো বাজে ব্যবহার করতে চায়না রূপলের সাথে। তাই সে খামোশ খেয়ে গেল। তবে এই বিষয়ে একরত্তিও ছাড় পাবেনা রূপল। যেকোনো ভাবেই হোক নীহারিকার ভূত সে রূপলের মাথা থেকে নামাবেই! রূপলের কথার পরিবর্তে মারজিনা বেগম মুখটাকে কেমন কালো করে বললেন,
“বালাইষাট। এসব তুমি কী বলছ রূপল? ছেলে তো আমার নীহারিকাকে দেখেছেই। পছন্দ হয়েছে বলেই তো বিয়ের প্রস্তাবটা দিলো। দোয়া করো বাবা যেন ভালোয় ভালোয় সব মিটে যায়।”
কফির মগটা টি-টেবিলের উপর রাখল রূপল। রাগকে যথেষ্ট সংযত করার চেষ্টা করল সে। এই মুহূর্তে রেগে গেলেই পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠবে। মারজিনা বেগমকে ইনডিরেক্টলি সে কিছু বুঝাতে পারবেনা। তাই সে ঠাণ্ডা মাথায় মারজিনা বেগমকে বুঝানোর উদ্দেশ্যে বলল,
“দেখুন আন্টি। কোনো বিষয় নিয়েই তাড়াহুড়ো করা ঠিকনা। ধীরে সুস্থে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিবেন।ইভেন বিয়ের মত ইম্পর্টেন্ট কিছু হলে তো আর কথাই নেই। প্রয়োজনে একটা বিষয় নিয়ে বিশ বার ভাববেন! কথাগুলো বলছি কারণ, নীহারিকাকে দেখানোর আগেই ছেলের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিন। ছেলের চরিত্র, ব্যবহার আচরণ, ছেলের হিস্ট্রি সব খতিয়ে দেখুন। আপনাদের কথানুযায়ী মনে হচ্ছে ছেলে খুব তাড়াহুড়ো করছে। যা তাকে সন্দেহ করার মেইন পয়েন্ট! বিয়ে তো করবিই ভাই। আজ না হয় কাল। সো এত তাড়াহুড়ো করার কী আছে? ধীরেসুস্থে কর। যদি তোর রেকর্ড খারাপ না হয়ে থাকে তো! আমার যা বলার বলে দিয়েছি আন্টি। বাকীটা আপনারা পরিবারের সবাই এক হয়ে সিদ্ধান্ত নিন। তাছাড়া নীহারিকার থেকও এই বিষয়ে মতামত নেওয়ার প্রয়োজন আছে। ইভেন বিয়েটা তার। হোপ সো আপনারা তার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করবেন না।”
খালি মুখেই রূপল হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। রূপলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে মারজিনা বেগম চিন্তিত হয়ে উঠলেন। সঙ্গে সঙ্গেই দৃষ্টি ফিরিয়ে তিনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে থাকা নিহালের দিকে তাকালেন। বিচলিত গলায় শুধালেন,
“রূপল এসব কী বলে গেল নিহাল? ছেলে তাড়াহুড়ো করছে মানেই কোনো ঘাপলা আছে? তুই ঠিকঠাক ভাবে ছেলের খোঁজ খবর নিয়েছিস তো?”
রূপলের কাণ্ডকীর্তি নিহালের মাথার উপর দিয়ে গেল। কিছু স্বাভাবিক মনে হলোনা তার। রূপলের চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে নিহাল নিশ্চিন্ত গলায় তার মাকে বলল,
“আমি যতটুকু খোঁজ খবর নিয়েছি মা, ছেলে দেখতে শুনতে ভালোই। কয়েক মাস হলো আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করেছে। খু্বই শান্তশিষ্ট, নম্রভদ্র, বুঝদার একটি ছেলে।”
অমনি সুযোগ পেতেই পিয়াসা মুখ খুলল। অনর্গল গলায় তার শ্বাশুড়ি মাকে বলল,
“ছেলে যেহেতু ভালোই মা। আপনারা বরং কথাবার্তা আগান! বেশি বাছতে গেলে দেখা যাবে একটা সময় পর আর বিয়েই আসবেনা। তাই সময় থাকতে থাকতে বিয়ে টিয়ে দিয়ে দেওয়া ভালো। এই কথাটা আমার মা সবসময় বলে। তাইতো অনার্সে ওঠার সাথে সাথেই মা আমাকেও বিয়ে দিয়ে দিলো!”
পিয়াসার কথায় এই প্রথম ভরসা পেলেন মারজিনা বেগম! আশ্বস্ত গলায় তিনি বললেন,
“তুমি ঠিক বলেছ মা। নিহালের বাবা আজ বাড়ি ফিরুক। বিয়েটা কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবেনা!”
___________________________________
রাত আটটা তখন। আকাশ, সবিতা এবং দিশারা একটা দফারফা করে থানার সব কাজকর্ম সেরে রূপল তার কাজিন সজল এবং শাকিলকে নিয়ে টং দোকানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাড়ে চা খাচ্ছে। তবে রূপল চা খাচ্ছে কম সিগারেটে ফুঁক দিচ্ছে বেশী! টেনশনে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে! অস্থির লাগছে খুব। রূপলের এই অস্থিরতা দেখে সজল এবং শাকিল নিশ্চুপ। দুজনই বুঝতে পারছিলনা নীহারিকার বিয়ে নিয়ে রূপলের কেন এত মাথাব্যথা? কী চলছে রূপলের মধ্যে? তবে এই নিয়ে তারা কোনো প্রশ্ন করতে চায়না রূপলকে। জেচে পরে মা’র’ধ’র খাওয়ার শখ নেই তাদের!
তবে এতকিছুর মধ্যে থেকেও রূপলের সূক্ষ্ম নজর ছিল টং দোকানের বিপরীত পাশে থাকা দু’তলা বিশিষ্ট পাকা বাড়িটির দিকে। কারো বের হওয়ার জন্য যেন সে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। তখনি তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে একটি তরুন ছেলে বাড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে এলো! রাস্তার এপাশে ওপাশে তাকিয়ে ছেলেটি রাস্তা পাড় হয়ে সোজা টং দোকানের দিকেই হেঁটে আসছিল! অমনি রূপল চা খাওয়া বন্ধ করে দিলো। সিগারেটটিও হাত থেকে ফেলে দিলো। পাশ থেকে সজল এবং শাকিল এসে রূপলের গাঁ ঘেঁষে দাড়ালো। বলল,
“ভাইয়া এই সেই উজ্জ্বল। যাকে আমরা খুঁজছি।”
মিনমিনে গলায় রূপল বলল,
“চিনেছি। সাইডে দাড়া তোরা।”
রূপলের কথামতো সজল এবং শাকিল তার পাশ থেকে সরে দাড়ালো। হেঁটে এসে উজ্জ্বল টং দোকানে দাড়ালো। রূপলের পাশে দাড়িয়ে উজ্জ্বল হাসিমুখে দোকানদারকে বলল,
“চাচা। এক কাপ চা দিয়েন তো। দুধ বেশী করে।”
দোকানদারও হেসে হেসে উজ্জ্বলকে বলল,
“দিতাছি বাবা। একটু অফেক্ষা করন লাগব।”
“ওকে চাচা। আপনি আস্তেধীরে বানান। আমি অপেক্ষা করছি।”
এই বলে উজ্জ্বল দোকানে থাকা বেঞ্চিতে বসল। পায়ের উপর পা তুলে বসে সে প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে বেশ মনোযোগ দিয়ে ফোন ঘাটতে লাগল! ডোন্ট কেয়ার ভাব তার। আশেপাশে কারো দিকে তাকানোর কোনো মুড নেই। উজ্জ্বলকে কিছুতেই যেন সহ্য করতে পারছেনা রূপল! কারণ, উজ্জ্বলকে রূপল যতটা আনস্মার্ট ভেবেছিল উজ্জ্বল ততটাও আনস্মার্ট নয়! দেখতে শুনতে ভালোই। পছন্দ করার মত। এই প্রথম কোনো ছেলেকে দেখে বড্ড হিংসে হচ্ছিল তার! রূপলের রাগী রূপ দেখে সজল এবং শাকিল শুকনো ঢোঁক গিলতে লাগল। ইশারায় দুজন রূপলকে বলছিল শান্ত হতে। কে শুনে কার কথা? উজ্জ্বলের ভাব দেখে রূপলের মাথা তো আরও গরম হয়ে যাচ্ছিল! মনে হচ্ছিল এখনি মাথাটা ফাটিয়ে দিতে!
হনহনিয়ে হেঁটে রূপল দোকান থেকে বের হয়ে গেল! রাস্তার পাশে পার্ক করে রাখা বাইকের সাথে সে হেলান দিয়ে দাড়ালো। পকেট থেকে ফোনটি বের করে নীহারিকার নাম্বারে কল করল। সঙ্গে সঙ্গেই নীহারিকা ঐ পাশ থেকে কলটি তুলল। নম্র গলায় নীহারিকা হ্যালো বলতেই রূপল কর্কশ গলায় শুধালো,
“এই? চশমা ওয়ালা ছেলে পছন্দ আপনার?”
তাজ্জব বনে গেল নীহারিকা। এইমাত্র টিউশনিতে এলো সে। তাই উঁচু গলায় পরিষ্কারভাবে কথা বলতে পারছেনা সে। নিচু গলায় ফিসফিসিয়ে সে রূপলকে বলল,
“আপনি কী পাগল হয়ে গেছেন রূপল? ফোন করে এসব জিজ্ঞেস করার বিষয় হলো? যতসব ফা’ল’তু কথা!”
“যা আস্ক করেছি তার আনসার দিন? আননেসেসারি কথা বলবেন না।”
রাগে নীহারিকা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
“আমি পড়াতে এসেছি। আপনার আজাইরা বকবক শুনতে নয়। ফোনটা রাখুন।।”
“হেই স্টপ। কল কাটবেন না। একদম না। এক্ষুণি বাড়ি থেকে বের হয়ে আসুন। আমি বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছি!”
“আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন রূপল! কী হয়েছে কী আপনার বলুন তো?”
“আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। কানা দেখতে ছেলে আপনার পছন্দ?”
নীহারিকা বেশ বুঝতে পেরে গেছে ঝাড়িঝুড়ি দিয়ে রূপলকে থামানো যাবেনা। পাগলকে না ঘাটিয়ে বরং তার কথামত যেকোনো একটা উত্তর দিয়ে দিলেই ভালো। প্রত্যত্তুরে নীহারিকা রাগী গলায় বলল,
“হ্যাঁ পছন্দ! এবার খুশি?”
এই বলে নীহারিকা কলটি কেটে দিলো। রাগে রূপলের মাথা ভনভন করে ঘুরতে লাগল! রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিলনা সে। বাইকে জোরে একটা লাথ মেরে মৃদু চিৎকার করে বলল,
“তার মানে ঐ ছেলেকে নীহু পছন্দ করবে?”
এই পরিস্থিতিতে ভেঙে পরতে চাইলনা রূপল। হনহনিয়ে হেঁটে সে আবার টং দোকানে চলে এলো! ইশারায় শাকিল ও সজলকে বলল উজ্জ্বলের পাশ থেকে সরে দাড়াতে। দুজনই উজ্জ্বলের পাশ থেকে সরে দাড়ালো। অমনি রূপল পায়ের উপর পা তুলে উজ্জ্বলের পাশে বসল!রাগী ভাব নিয়েই উজ্জ্বলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য গলা ঝাকালো। বলল,
“হায়।”
ফোন থেকে মনোযোগ সরিয়ে উজ্জ্বল পাশ ফিরে রূপলের দিকে তাকালো। সৌজন্যতার খাতিরে বলতে বাধ্য হলো,
“হ্যালো।”
উজ্জ্বলের সাথে সখ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করল রূপল! জোরপূর্বক হেসে বলল,
“আ’ম রূপল। এন্ড ইউ?”
শুকনো হেসে উজ্জ্বল বলল,
“আ’ম উজ্জ্বল।”
বেশ ভাব নিয়ে উজ্জ্বল আবার তার ফোনের দিকে মনোযোগ দিলো! মাথা ঠিক নেই রূপলের। কখন সে উজ্জ্বলের মাথা ফাটিয়ে দেয় বলা যায়না! এই প্রথম কেউ রূপলের সাথে এত ভাব নিলো। যেখানে সে সবার সাথে ভাব নিতে অভ্যস্ত। তাই পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে তার কিছুটা সময় নিতে হল। বেহায়াদের মত রূপল আবারও উজ্জ্বলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“শুনলাম আপনার মা আপনার জন্য মেয়ে দেখছে?”
উজ্জ্বলের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন কারাতেও অবাক হলোনা উজ্জ্বল! বরং সে স্বাভাবিক গলায় জবাবে রূপলকে বলল,
“দেখছিল। এখন দেখা শেষ। মেয়ে পছন্দ হয়ে গেছে! মায়ের কথা আর কী বলব। চারিদিকে এত ঘটক লাগিয়ে রেখেছে!”
ঘটকের উপাধি পেয়ে রূপল রাগে কপাল ঘঁষতে লাগল! তবে শিওর হয়ে নিলো নীহারিকাকে তাদের গোষ্ঠী শুদ্ধু সবাই পছন্দ করেছে! সজল এবং শাকিলকে নিয়ে রূপল সঙ্গে সঙ্গেই টং দোকান থেকে বের হয়ে গেল! জিদ্দি হয়ে তাদের দুজনকে রূপল বাড়ি ফিরে যেতে বলল।
__________________________
বুকের উপর দু’হাত গুজে নীহারিকা রুদ্রাক্ষীর ন্যায় রাগী রূপ নিয়ে রূপলের মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে! নীহারিকার দিকে না তাকিয়ে রূপল বেশ গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে রাস্তার এদিক ওদিক তাকিয়ে সিগারেট ফুকছে! এক পর্যায়ে জেদ দমন করতে না পেরে নীহারিকা চিৎকার করে রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“আমার পারমিশন ছাড়া আপনি আমার স্টুডেন্টের বাসায় ঢুকলেন কেন হ্যাঁ? কেন আপনি পড়ানো অবস্থায় আমাকে ঐ বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য করলেন? আন্টির সামনে আমাকে লজ্জা দিলেন কেন?”
তবুও শান্ত রইল রূপল! ভাবশূণ্য গলায় জবাবে বলল,
“উঁহু। এত রাগ দেখাবেন না আমার সাথে। ভেবে দেখুন আপনি কী করেছেন!”
“কী করেছি আমি?”
“বেশী এটিটিউট থাকা ছেলেরা ভালো হয়না! কানা ছেলে আপনার পছন্দ হলেও সে ছেলে আপনার ম্যান্টালিটির সাথে যাবেনা!”
#চলবে…?
[পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে গেলে লিখালিখিতে অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছি। লিখালিখিতে মনোযোগ দিতে গেলে আবার পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছি! অথচ এই মুহূর্তে আমার পড়াশোনাটা ভীষণ জরুরী। কারণ আমার ফাইনাল এক্সাম রানিং! কী করব বুঝতে পারছিনা। তাই গল্প দিতে খুব দেরী হচ্ছে। আশা করি আপনারা আমার সমস্যাটা বুঝবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]