ফেরারি প্রেম পর্ব-৫০

#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৫০
#নিশাত_জাহান—নিশি

“হেই স্টপ। উজ্জ্বলের বাইকের হাওয়া পাংচার করতে গিয়েছিলাম আমি! চু’রি করতে নয়!”

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সজল ও শাকিল তাকিয়ে রইল হিংস্রাত্নক রূপলের দিকে। নির্বাক চাহনি তাদের। রূপলের বাচ্চাসুলভ কাজকর্ম তাদের রীতিমত অবাক করে দিলো। তড়িঘড়ি করে কান দুটো ছেড়ে দিলো রূপল। তড়তড়িয়ে হেঁটে বাইকে ওঠে বসল। তখনি সজল দু’কদম বাড়িয়ে রূপলের দিকে এগিয়ে গেল। কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“আর ইউ শিওর ভাই? বাইকের হাওয়া পাংচার করার জন্য তুমি এই রাত বিরাতে আমাদের ঘুমের বারোটা বাজিয়ে ঘাড় ধরে চেপে এনেছ?”

বাইকের স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখল রূপল। রাগে ফোঁস ফোঁস করে বলল,

“না। এসেছিলাম চাশমিশ উজ্জ্বলের ক্লাস নিতে! বাট পরে মনে হলো এখন ডিরেক্টলি তার সাথে লাগাটা ঠিক হবেনা! আর তখনই সামনে তার বাইকটা পরল তাই পাংচার করে এলাম। কিছু না কিছু তো একটা করতেই হতো।”

বেশ বিরক্তি ভরা গলায় সজল পুনরায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“আর ইউ ক্রেজি ভাই? এসব করার রিজন কী?”

প্রত্যত্তুরে মৌন রইল রূপল! গাঁয়ের সমস্ত শক্তি দ্বারা বাইকের স্টিয়ারিংটা ঘুরাতে লাগল। হাতের রগগুলো ফুলে ফেঁপে উঠছিল তার। রাগে, ক্ষোভে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিল। সজল তাকে প্রশ্ন করছে? ছোটো হয়ে বড়ো ভাইকে প্রশ্ন করা? দাঁতে দাঁত চেপে সে তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় সজলকে বলল,

“তুই হয়ত ভুলে যাচ্ছিস তুই কাকে প্রশ্ন করছিস! কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠ। হারি আপ।”

আগ্রাসী হয়ে উঠল সজল! জেদ দেখালো বেশ। এক রোঁখা গলায় বলল,

“না। আগে তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিবে! দেন আমরা গাড়িতে উঠব! এর আগে আমরা এখান থেকে এক পা ও নড়ব না।”

রূপল ও তার জেগে অনড় রইল! সজলের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো। শক্ত গলায় বলল,

“ওকে। তোরা তাহলে এই মাঝ রাস্তাতেই দাড়িয়ে থাক। আর একটু পর যখন টহল পুলিশরা এসে দুইটাকে কানে ধরে হাজুতে নিয়ে যাবে তখন ভালো হবে! তখন কিন্তু এসবের মাঝে আমাকে জড়াতে আসবিনা। একদম না। আমি তখন তোদের ভাই বলেও পরিচয় দিবনা!”

এই বলে রূপল বাইক স্টার্ট করে দিলো! অমনি সজল ও শাকিল পেছন থেকে রূপলকে ডাকতে শুরু করল। দুজনই ভয় পেয়ে গেল। ছুটে চলল বাইকের পেছনে। মৃদু আওয়াজে বলল,

“হেই ভাইয়া। প্লিজ স্টপ। আমরা আসছি তো!”

বাইক থামিয়ে দিলো রূপল। পিছু ফিরে তাকালো সজল ও শাকিলকের দিকে। গরম মেজাজ নিয়ে দুজনকে শাসিয়ে বলল,

“কোনো কুয়েশ্চন, ফুয়েশ্চন করতে পারবিনা! যদি এগ্রি হোস তো তবেই আমি তোদের বাইকে তুলব। এর আগে নয়। ভালো করে ভেবে দেখ কী করবি?”

সজল হা করে কিছু বলার পূর্বেই শাকিল অস্থির হয়ে উঠল। অনর্গল গলায় বলতে লাগল,

“ওকে ভাইয়া। আমার এগ্রি। তুমি আমাদের বড়ো ভাই। হুটহাট আমার তোমার উপর প্রশ্ন তুলতে পারিনা! তবে আমরা জানি তুমি যা করো তার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো রিজন থাকত! এবার এই কারণটা না হয় আমরা না-ই জানলাম।”

সজলের কথায় খুশি হলো রূপল! রাগকে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে এনে গলা ঝেড়ে বলল,

“গুড! আই লাইক ইট। এবার ওঠে পড় তাহলে।”

হুড়মুড়িয়ে দুজন বাইকে ওঠে বসল। রূপল ও হাই স্পিডে বাইক ছেড়ে দিলো। রূপলকে খুশি করার জন্য শাকিল দু’একটা মনগড়া কথা বললেও তা মানতে পারছিলনা সজল! চুপচাপ থেকে সে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,

“ভাইয়া নিশ্চয়ই কিছু একটা লুকুচ্ছে আমাদের থেকে! আমি যতটা আন্দাজ করতে পারছি, নীহারিকা আপুর সাথে কোনো না কোনো চক্কর চলছে ভাইয়ার! সেইজন্যই আপুর বিয়ে ভাঙতে ভাইয়া এমন ওঠে পড়ে লেগেছে। যাই হোক, লেটস সি। জল কতদূর গড়ায়!”

মিনিট দশেকের মধ্যে রূপল বাড়ি পৌঁছে গেল। বাইকের চাবি হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করল। ঘামে ভেজা শার্টটিকে গাঁ থেকে খুলল। শরীরটা বেশ ক্লান্ত লাগছে তার। উন্মুক্ত শরীর নিয়ে সে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকল। ঈষৎ ঝুঁকে ওয়াশরুমের আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। অতি নিঁখুতভাবে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করল। দাঁড়ি গুলো একটু বেশিই বড়ো হয়ে গেছে তার। ছোটো করা প্রয়োজন। একদম উজ্জ্বলের মত! প্রয়োজনে ক্লিন শেইভ করবে। তাহলে তাকে দেখতে উজ্জ্বলের চেয়েও বেশী ফর্সা দেখাবে! যদিও সে উজ্জ্বলের চেয়েও ফর্সা। লম্বায় উজ্জ্বলের চেয়েও দুই ইঞ্চি লম্বা রূপল। ৫ ফিট ৭ ইঞ্চি তো হবেই। তবে বেশি কিছু না, রূপল আগের মত কুল গেটআপে ফিরে এলেই উজ্জ্বল তার কাছে পাত্তা পাবেনা! এসব ভাবতে ভাবতেই চোখেমুখে পানি ছিটালো রূপল। আচ্ছন্ন দৃষ্টিতে আয়নায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। গম্ভীর গলায় বলল,

“আই ডোন্ট নো আমি কেন উজ্জ্বলের সাথে নিজেকে এতটা কম্পেয়ার করছি! কেন আমি তাকে নিয়ে এত জেলাস ফিল করছি! কেন নীহুর সাথে উজ্জ্বলকে মেনে নিতে পারছিনা। কেন এত পাগলামি করছি। এটা কী আদো প্রেম না-কী ভালো লাগা তাও আমি জানিনা! তবে এতটুকু জানি আমি কিছুতেই নীহুকে অন্য কারোর হতে দিবনা! ফার্স্ট টাইম যদিও আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম। তবে এইবার করিনি! যে নিঁখাদ মনের মানুষটিকে চিনতে আমার এক চুল পরিমান ভুল হয়নি সেই মানুষটিকে আমি কোনোভাবেই হারাতে দিবনা! এর নাম যদি ভালোবাসা হয়, হ্যাঁ “আমি ভালোবাসি তাকে!” যাকে আমি ভালোবাসি তাকে আমি যতটা সম্ভব আগলে রাখার চেষ্টা করব। নিজের দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমি তাকে আটকে রাখব। আর এটা হলো আমার নিজের কাছে নিজের ওয়াদা।”

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো রূপল। শটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পরল। ঘুমের মধ্যে হৃদি নড়েচড়ে উঠতেই রূপল হৃদিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরল।

_________________________________

শপিং করতে এসেও কোনকিছুতে মন লাগছিল না নীহারিকার! মনমরা হয়ে সে পিয়াসা এবং নিহালের সাথে পিছু পিছু ঘুরছিল। এই দোকান থেকে সেই দোকানে। মনে হচ্ছে যেন ঠেকায় পরে সে শপিং করতে এসেছে। মন আটকে আছে তার অন্য কোথাও। কোনো লেহেঙ্গাই যেন তার পছন্দ হচ্ছেনা। পিয়াসা যা পছন্দ করে দিচ্ছে তাও তার পছন্দ হচ্ছেনা। হাত থেকে ফেলে দিচ্ছে। বিষয়টা নোটিশ করল নিহাল। কৌতূহলী গলায় নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“কী রে? কী হয়েছে তোর? মনমরা দেখাচ্ছে কেন তোকে?”

পরিস্থিতি সামলাতে নীহারিকা জোরপূর্বক হাসল! হুড়মুড়িয়ে বলল,

“কোথায় মনমরা দেখাচ্ছে ভাইয়া? আসলে কোনো কালেকশনই পছন্দ হচ্ছেনা আজ। তাই হয়ত এমন দেখাচ্ছে!”

ভ্রু যুগল উঁচালো নিহাল। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“শিওর?”

আড়ষ্ট গলায় নীহারিকা বলল,

“হ্যাঁ শিওর!”

নীহারিকার মুখের কথায় বিশ্বাস করতে পারছিল না নিহাল! নীহারিকার চোখমুখ দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল নীহারিকা মিথ্যা বলছে! তবে এই মুহূর্তে নীহারিকাকে ঘাটাতে চাইলনা নিহাল। সন্দেহ নিয়ে নীহারিকার পাশ থেকে সরে এলো। ইতোমধ্যেই নীহারিকার নজর গেল পিয়াসার পছন্দ করা খয়েরী রঙের লেহেঙ্গাটির দিকে! সঙ্গে সঙ্গেই সে উত্তেজিত গলায় বলে উঠল,

“হ্যাঁ হ্যাঁ এই লেহেঙ্গাটা! এই লেহেঙ্গাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে ভাবি!”

তৎক্ষনাৎ পিয়াসা রাগী দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো! নীহারিকার প্রতি ক্ষোভ জমল। খরতর গলায় বলল,

“এটাতো আমি আমার জন্য পছন্দ করেছি নীহারিকা! রিসিপশনে আমি এটা পরব। তাছাড়া এই রঙটাতে তোমাকে মানাবে না! তুমি অন্যকিছু দেখো।”

“এই রঙটিতেই তাকে বেশী মানাবে পিয়াসা! তোর থেকেও বেশী! সৌন্দর্যের বুঝিস কী তুই?”

কথাগুলো বলেই রূপল আচমকা নীহারিকার পাশে এসে দাড়ালো! রূপলের উপস্থিতি সবাইকে অবাক করে দিলো। রূপলকে দেখে পিয়াসা যতটা না অবাক হলো এর চেয়েও বেশী রেগে গেল। রূপলের কথায় সে ইনসাল্টেড ফিল করল! ছ্যাত করে তার গাঁয়ে যেন আগুনের ছ্যাঁকা লেগে গেল! চোখ রাঙিয়ে সে রূপলের দিকে তাকালো। প্রশ্ন ছুড়ল,

“তুমি এখানে কী করছ ভাইয়া?”

“একটা কাজে এসেছি! বাই দ্যা ওয়ে দুজনেরই যেহেতু একই লেহেঙ্গা পছন্দ হয়েছে আই থিংক একই কালার একই ডিজাইনের দুটো লেহেঙ্গা নিয়ে নে তোরা! যদি জিজু চায় তো।”

রূপলের কথা শুনে পিয়াসার মাথা গরম হয়ে গেল। মানতে পারলনা রূপলের সিদ্ধান্ত। রাগী গলায় সে কিছু বলার পূর্বেই নিহাল পাশ থেকে বলে উঠল,

“আরে ভাই আমি চাইবটা কী? আমি তো চাই-ই দুজনই এক রকম লেহেঙ্গা পড়ুক। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।”

অমনি পিয়াসা গরম চোখে পাশ ফিরে নিহালের দিকে তাকালো। জেদ দেখিয়ে বেশ ঝাঁজালো গলায় বলল,

“আমি এই লেহেঙ্গা পরব না! এটা আপনি আপনার বোনের জন্যই নিয়ে নিন।”

রাগে গজগজ করে পিয়াসা জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো! অমনি নীহারিকা পেছন থেকে পিয়াসার হাত টেনে ধরল। কাতর গলায় বলল,

“স্টপ ভাবি। তোমার পছন্দ করা লেহেঙ্গাটা আমি কীভাবে পরব বলো? লেহেঙ্গাটা হঠাৎ পছন্দ হয়ে গিয়েছিল তাই হুট করে বলে ফেলেছিলাম। তুমি বরং এই লেহেঙ্গাটাই নাও। আমি অন্যকিছু দেখছি।”

নীহারিকার হাতটি ঝেড়ে ফেলে দিলো পিয়াসা! দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“উঁহু। আমি ঐ লেহেঙ্গাটা ছুঁয়েও দেখব না! তুমিই নিয়ে নাও ওটা। আমি এরচেয়েও সুন্দর ও গর্জিয়াস লেহেঙ্গা নিব!”

“ওকে যা যা! তোকে কেউ রিকুয়েস্ট করছেনা এই লেহেঙ্গাটা নিতে!”

এই বলে রূপল পিয়াসার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। হনহনিয়ে হেঁটে পিয়াসা অন্য শপে ঢুকে গেল! নীহারিকার চেয়েও রূপলের উপর বেশী ক্ষোভ জমেছে তার। বোনের চেয়েও বোনের ননদকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে তার ভাই? দাঁত কিড়মিড়িয়ে পিয়াসা বলল,

“ঐ মেয়েটা আমার ভাইকে কী জাদু করেছে জানিনা! তার পেছনে পেছনে সে শপিংমল অবধি চলে এসেছে? প্রেম এতই খেয়ে উঠেছে?”

এরমধ্যেই পিয়াসার মাথায় শয়তানি এক বুদ্ধি খেলল! পার্স থেকে ফোন বের করে সে মেসেঞ্জারে কাউকে মেসেজ করল! ব্যগ্র হেসে বলল,

“এবার জমবে মজা! এবার নীহারিকার পেছনে তোমার ঘুর ঘুর করা বের করব ভাইয়া!”

ফোঁস শ্বাস ফেলে নিহাল রূপলের দিকে তাকালো। উত্তেজিত গলায় বলল,

“তোমার বোনটাকে নিয়ে আমি কী করি বলো তো? হঠাৎ হঠাৎ রেগে যায়। মানে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করেনা সে! মাঝে মাঝে আমি তাকে নিয়ে কনফিউজড হয়ে যাই। চিনতেই পারিনা তাকে।”

“কুল জিজু। বেশী কিছুনা তাকে শুধু টাইটে রাখতে হবে! বেশী প্রশ্রয় দেওয়া যাবেনা। এমনিতেও মেয়েদের মন বুঝা মুশকিল! আর এমন ঘাড়ত্যাড়া টাইপের মেয়ে হলে তো কিছু করারই নেই!”

কোমরে হাত গুজল নীহারিকা। রূপলকে শাসিয়ে বলল,

“এই আপনি চুপ করুন তো! এমনিতেই ভাবি রেগে গেছে তার উপর আপনি আগুনে ঘি ঢেলে দিচ্ছেন!”

পাশ ফিরে নীহারিকা এবার নিহালের দিকে তাকালো। খরখরে গলায় বলল,

“আর তুমিই বা এখানে দাঁড়িয়ে কী করছ? যাও ভাবির সাথে যাও। দেখলে না রাগ করেছে ভাবি?”

বেশ তাড়া দেখিয়ে নিহাল বলল,

“ওকে ওকে যাচ্ছি বাবা।”

প্রস্থান নিলো নিহাল। পিয়াসাকে এই শপে ঐ শপে খুঁজতে লাগল। রূপলের দিকে এবার তেড়ে এলো নীহারিকা। একা পেয়ে তাকে ঝাড়তে শুরু করল।খিটখিটে মেজাজে বলল,

“এই? আপনার কী কোনো আক্কেল জ্ঞান নেই?”

ভ্রু উঁচালো রূপল। কপালে কয়েক দফা ভাজ ফেলে বলল,

“যেমন? কী আক্কেল জ্ঞান?”

“বোনকে এভাবে কেউ ইনসাল্ট করে?”

“ইনসাল্ট কোথায় করলাম? আমিতো জাস্ট সত্যিটা বললাম।”

“ভাবির জায়গায় যদি আমি থাকতাম না? তাহলে আমিও হয়ত এভাবেই রাগ করতাম! আমি আমার পছন্দের জিনিস অন্য কাউকে দিবে কেন?”

“আমিও আমার পছন্দের জিনিস অন্য কাউকে দিতে চাইনা নীহু! বাট তুমি বুঝতে চাইছ না!”

কথা শেষ করে বেশ আদুরে হয়ে রূপল নীহারিকার নাক টেনে দিলো! ব্যগ্র হেসে পেছনে ফিরল রূপল। নম্র গলায় দোকানদারকে বলল,

“হেই ব্রাদার। লেহেঙ্গাটা প্যাক করে রাখুন। আমরা আসছি।”

দোকানদার খুশি হয়ে লেহেঙ্গাটা প্যাক করতে লাগল। সামনে হাঁটা ধরল রূপল। রূপলের আচার আচরণে অবাক হলো নীহারিকা। তাজ্জব বনে সে রূপলের যাওয়ার তাকিয়ে রইল। নির্বোধ গলায় বিড়বিড় করে বলল,

“ব্যাপারটা কী হলো? কী বুঝাতে চাইলেন তিনি? আর আমার নাকই বা কেন টানলেন? তুমি করেও সম্বোধন করলেন!”

এই বলে নীহারিকা তার কৌতূহল দূর করার জন্য রূপলের পিছু পিছু ছুটল। আগ বাড়িয়ে রূপলের পাশাপাশি হাঁটতে লাগল সে। আগ্রহী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“কী বললেন আপনি ওটা? আমি কী বুঝতে চাইনা!”

মাথার চুলগুলো ঠিক করল রূপল। গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে এদিক ওদিক তাকালো। রসকষহীন গলায় বলল,

“আপনি তো হলেন টিউব লাইট! কী বললাম বুঝবেন কীভাবে?”

রেগে গেল নীহারিকা। রূপলের পথ আটকে দাড়ালো সে! চোয়াল উঁচু করে বলল,

“কী বললেন আপনি? আমি টিউব লাইট?”

নীহারিকার দিকে মনোযোগ নেই রূপলের। আশেপাশের দোকানগুলোতে সে শকুনের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে! মনে হচ্ছে যেন সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে কাউকে খুঁজছে সে। রূপলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পারে পূর্বের তুলনায় আরও অধিক রেগে গেল নীহারিকা। ঝাঁজালো গলায় শুধালো,

“আমি এখানে। এদিক ওদিক তাকিয়ে আপনি কাকে খুঁজছেন?”

“সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে খুঁজছি!”

“মানে? কে সে?”

“চিনবেন না।”

রূপলের দিকে এবার নিঁখুত দৃষ্টিতে তাকালো নীহারিকা। পরিপাটি দেখাচ্ছে আজ রূপলকে। চেহারায় জৌলুশতা দ্বিগুন বেড়ে গেছে। হালকা চাপ দাঁড়িতে তাকে ভালোই লাগছে। চুলগুলো ও ঠিকঠাক লাগছে। সব মিলিয়ে খুবই গোছানো। চোখ আটকে গেছে নীহারিকার। কিছুতেই যেন চোখ সরাতে পারছেনা। সম্মোহিত হয়ে গেল সে। নীহারিকার মৌনতা বুজে রূপল এবার নীহারিকার দিকে তাকালো। নীহারিকার ড্যাব ড্যাব চাহনী দেখে রূপল অবাক হলো। তুড়ি মেরে নীহারিকার দৃষ্টি আর্কষণ করার চেষ্টা করল। বলল,

“হেই নীহু? কোথায় হারিয়ে গেলেন?”

সম্বিত ফিরে পেল নীহারিকা। তড়িঘড়ি করে রূপলের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। মাথা নুইয়ে সে তার হাত-পায়ের দিকে তাকালো! রূপলের হাত-পা কত ফর্সা! আর তার হাত-পা? ছিঃ কী জঘন্য! হীনমন্যতায় ভুগতে লাগল নীহারিকা। বিড়বিড় করে বলল,

“কোথায় উনি, আর কোথায় আমি! কত আকাশ পাতাল তফাৎ আমাদের। উনার দিকে তাকানোটা ও তো পাপ!”

কোনো কারণে নীহারিকার মন খারাপ হয়ে গেছে তা বুঝতে পারল রূপল। অস্থির হয়ে উঠল সে। খানিক বিচলিত হয়ে নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“আরে কী হয়েছে? হঠাৎ চুপ করে গেলেন কেন?”

মাথা তুলে নীহারিকন জড়তাগ্রস্ত হয়ে কিছু বলতে যাবে অমনি হঠাৎ পেছন থেকে পিয়াসার গলার আওয়াজ ভেসে এলো! ক্ষোভ ভুলে সে মিষ্টি মধুর গলায় নীহারিকাকে ডেকে বলল,

“এই নীহারিকা? দেখো কে এসেছে?”

কৌতূহলী হয়ে নীহারিকা পিছু ফিরে তাকাতেই দেখল পিয়াসা এবং নিহালের পাশে একজন অপরিচিত ছেলে! সেই ছেলেটিকে চিনতে বেশী দেরি হলোনা রূপলের! ফট করে তার মাথা গরম হয়ে গেল। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে সে রাগে ফোঁসতে লাগল। উজ্জ্বলের দিকে রক্তশূল দৃষ্টিতে তাকালো। এই প্রথম উজ্জ্বল নীহারিকার মুখোমুখি হলো! ছবিতে নীহারিকাকে যতটা কালো মনে হয়েছিল সরাসরি ততটাও কালো নয় নীহারিকা। মায়া যেন ঠিকরে পরছিল তার মুখশ্রী থেকে! নীহারিকাকে দেখে ইম্প্রেস হয়ে গেল উজ্জ্বল! জড়তা ভুলে সে বেখেয়ালি হয়ে নীহারিকার দিকে এগিয়ে এলো। হ্যান্ডশেক করার উদ্দেশ্যে নীহারিকার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,

“হায়। আ’ম উজ্জ্বল।”

ভ্রু কুঁচকে নীহারিকা উজ্জ্বলের দিকে তাকিয়ে রইল। হ্যান্ডশেক করাটা তার বেহায়াপনা মনে হলো! প্রথমত সে চিনেনা উজ্জ্বলকে, দ্বিতীয়ত তার অদ্ভুত চাহনি। সব মিলিয়ে নীহারিকা বিরক্ত উজ্জ্বলের প্রতি। শান্ত হয়ে রূপল দেখতে চাইছিল নীহারিকা ঠিক কী করতে চায়! আদো একটা অপরিচিত ছেলের সাথে হ্যান্ডশেক করে কী-না। রূপলকে খুশি করে দিয়ে নীহারিকা জোরপূর্বক হেসে উজ্জ্বলের দিকে তাকালো। ইতস্তত গলায় বলল,

“সরি। একচুয়েলি আমি অপরিচিত পুরুষদের সাথে হ্যান্ডশেক করিনা। বাই দ্যা ওয়ে কে আপনি? আপনাকে তো চিনলাম না।”

নীহারিকার আচরণে উজ্জ্বল ইনসাল্টেড ফিল করল! হাতটা শীঘ্রই গুটিয়ে নিলো। পেছন দাড়িয়ে থেকে রূপল ব্যগ্র হাসছিল। বিড়বিড় করে বলল,

“আহ! শান্তি। নীহু আজ তো তুমি আমার মন খুশি করে দিলে।”

#চলবে….?

[ক্ষমা করবেন এত অনিয়মিত গল্প দেওয়ার জন্য। ফাইনাল এক্সাম চলছে আমার। পড়ালেখার চাপে সময় হয়না লিখার। ৪ তারিখে আমার এক্সাম শেষ হবে। ইনশাআল্লাহ্ এর পর থেকে নিয়মিত গল্প দিব।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here