#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৫৩
#নিশাত_জাহান_নিশি
“আজই উজ্জ্বলের দ্যা ইন্ড হবে নীহু! উজ্জ্বলের দুর্বল জায়গা আমি পেয়ে গেছি। এরপর তুমি শুধু আমার হবে নীহু! শুধু আমার!”
দুই কদমে স্টেজের ভেতর ঢুকে গেল রূপল। তড়িঘড়ি করে পায়জামার পকেট থেকে সাইলেন্ট মোডে বাজতে থাকা ফোনটি বের করল সে! ব্যস্ত গলায় ফোনের ঐ প্রান্তে থাকা মানুষটিকে বলল,
“ওয়েট অ্যা ফাইভ মিনিটস আপু। আমি আসছি!”
নীহারিকা নির্বোধ দৃষ্টিতে রূপলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। সেকেন্ডের মধ্যেই যেন রূপল কোথাও উধাও হয়ে গেল। কোমরে হাত গুজে নীহারিকা বেশ চিন্তিত সুরে বলল,
“কী বলে গেল ঐ ফিরিঙ্গি লোকটি? উজ্জ্বলের দুর্বল জায়গা খুঁজে পেয়েছে মানে? ভেতরে ভেতরে কী দুষ্টু বুদ্ধি এটেছে এই লোক? গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছে না-কী?”
প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে নীহারিকা ছুটল রূপলের পিছু পিছু। কী চলছে রূপলের মধ্যে তা এখনি জানতে হবে তার। দ্রুত পায়ে হেঁটে স্টেজের ভেতর ঢুকতেই নীহারিকার আকস্মিক দৃষ্টি পরল স্টেজের ভেতর দাড়িয়ে থাকা উজ্জ্বলের দিকে। নিহালের সাথে দাড়িয়ে সে বেশ হেসে হেসে কথা বলছে। দুজনই দুজনের খেয়ালে ব্যস্ত প্রায়। চোরের মত লুকিয়ে নীহারিকা উজ্জ্বলকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল! তবে লাভ কিছু হলো না এতে! উজ্জ্বলের শকুনের নজর তার উপর পরতেই হলো। মুখ ঢেকে নীহারিকা আল্লাহ্’র নাম জপ করতে করতে উজ্জ্বলের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার পূর্বেই উজ্জ্বল পেছন থেকে নীহারিকাকে ব্যাকুল স্বরে ডেকে উঠল! বলল,
“হেই নীহারিকা। কাম হেয়ার।”
শীঘ্রই থেমে গেল নীহারিকা! জিভ কেটে সে নিজেই নিজের মাথায় গাড্ডা মারল। বিরক্তি নিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“ধ্যাত। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। তোর চোখের পাওয়ার যেহেতু এতই হাই তাহলে চশমা পরার কী দরকার ভাই? নিশ্চয়ই ফ্যাশন করার জন্য এই লোক চশমা ইউজ করে! নাটক যত্তসব।”
বাইরে তিক্ততা প্রকাশ করলনা নীহারিকা। জোরপূর্বক হেসে পিছু ঘুরে তাকালো। চোখের সামনে পরে থাকা চুলগুলোকে হাত দ্বারা ঠেলে সে মাথা নুইয়ে হেঁটে উজ্জ্বলের দিকে এগিয়ে এলো। সংকুচিত দৃষ্টিতে উজ্জ্বলের দিকে তাকালো। আড়ষ্ট গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“জি বলুন?”
নীহারিকা ও উজ্জ্বলের মাঝে নিহাল নিজেকে বিরিয়ানিতে থাকা এলাচ মনে করল! গলা ঝাঁকিয়ে সে ইতস্তত গলায় উজ্জ্বলকে বলল,
“আচ্ছা তোমরা কথা বলো। আমি একটু আসছি।”
তাদের মাঝখান থেকে বিদায় নিলো নিহাল। এতে করে নীহারিকা আরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেল। মাথা নুইয়ে সে নখ কামড়াতে লাগল। কীভাবে এই অসহ্যকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে তা নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে গেল। নীহারিকার এহেন লজ্জা ও জড়তাগ্রস্ত অবস্থা দেখে উজ্জ্বল মিটিমিটি হাসল! বুকের উপর হাত গুজে সে ঈষৎ ঝুকে এলো নীহারিকার দিকে। নাক ঘঁষে মন্থর গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“লজ্জা পেলে বুঝি আপনি এভাবেই নখ কামড়ান?”
উজ্জ্বলের উস্কানিমূলক কথাতেও নীহারিকা তার নখ কামড়ানোর বদঅভ্যাস ছাড়লনা! বরং নখ কামড়ানো বহাল রেখেই সে প্রসঙ্গ পাল্টে হেয়ালি গলায় শুধালো,
“কখন এলেন আপনি?”
“কেন? আমি এসেছি বলে আপনি খুশি হননি?”
“না তা নয়। ভাইয়ার রিসিপশনে আপনার আসাটাই তো স্বাভাবিক।”
“হ্যাঁ। তবে আমি ভেবেছিলাম আসব না। যার জন্য আমি আসব ভেবেছিলাম, তার-ই তো গত চারদিন যাবত কোনো খোঁজ খবর নেই। ফোনই তুলছিলনা আমার। একবার বললও না ভাইয়ার রিসিপশনে আসুন!”
মাথা নুইয়ে মুখটা বাঁকালো নীহারিকা! উজ্জ্বল যে নীহারিকার সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছে তা বুঝতে বেশী বেগ পেতে হলোনা তার! উজ্জ্বলকে ব্যঙ্গ করে সে বিড়বিড় করে বলল,
“তোকে আসতে বলতে আমার বয়ে গেছে! আমিতো জানতাম ও না তুই আজ আসবি। জানলে তো সাবধানেই থাকতাম। তোর সামনে পরতাম না-কী? ধ্যাত, লোকটা আমার মুডটাই নষ্ট করে দিলো।”
মুখ মধু অন্তরে বিষ রেখে নীহারিকা স্বচ্ছ দৃষ্টিতে উজ্জ্বলের দিকে তাকালো। মৃদু হেসে বেশ উৎফুল্ল গলায় বলল,
“আরে কী বলছেন এসব আপনি এসব? আমিতো জানতাম আজ আপনি আসবেন। ভাইয়ার অফিসের সব কলিগরা যেহেতু আজ ইনভাইটেড সেই জায়গায় আপনিও ইনভাইট থাকবেন তা জানা কথা। তাই আর নতুন করে আপনাকে কিছু বলা হয়নি। তাছাড়া আপনার ফোন নাম্বারটা তো আমার ফোনে সেইভ করা নেই তাই বুঝতে পারিনি আপনি কখন কল করলেন! প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড ওকে?”
নীহারিকার কথায় ফিক করে হেসে দিলো উজ্জ্বল। স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো। মুগ্ধ স্বরে বলল,
“বাই দ্যা ওয়ে নীহারিকা। ইউ আর লুকিং সো প্রিটি, সো গর্জিয়াস এন্ড সো বিউটিফুল!”
বেকুবের মত হাসতে হাসতে নীহারিকা প্রত্যত্তুরে উজ্জ্বলকে বলল,
“ওহ্, ইয়াহ্, থ্যাংকস থ্যাংকস। আমি এবার আসছি তাহলে হ্যাঁ?
উজ্জ্বলকে হতবাক করে দিয়ে নীহারিকা দ্রুত পায়ে হেঁটে উজ্জ্বলের সামনে থেকে প্রস্থান নিলো। বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে সে স্বস্তির শ্বাস ফেলল। মনে মনে আল্লাহ্’র কাছে শুকরিয়া আদায় করতে লাগল। নীহারিকার আচরণে অবাক হওয়ার চেয়ে অধিক রুষ্ট হলো উজ্জ্বল! রূঢ় গলায় সে বলল,
“স্ট্রেঞ্জ তো। নীহারিকার ভাব হাব দেখে মনে হলো সে আমাকে সহ্য করতে পারেনা! কেমন অসভ্যের মত ব্যবহার করে গেল। হাউ ডিজগাস্টিং।”
তখনি পিয়াসার পরিবার থেকে পিয়াসার মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনরা দলে দলে আসতে শুরু করল। চারটি মাইক্রো কার এলো তাদের সাথে। নিহাল ও তার পরিবার ব্যস্ত হয়ে গেল তাদের নিয়ে। নীহারিকা ও তার মা গেল পিয়াসার মা-বাবাকে এগিয়ে আনতে। সবাইকে স্টেজে বসিয়ে কোল্ড ড্রিংকস ও হালকা নাশতা পরিবেশন করতে লাগল নীহারিকা। নিহালের অফিস সব কলিগরাও তখন আসতে শুরু করল। উজ্জ্বলও নীহারিকার থেকে পাওয়া অবহেলা ভুলে সবার সাথে মিশে গেল।
এত ব্যস্ততার মাঝেও নীহারিকাকে একরত্তি শান্তি দিচ্ছেনা নীহারিকার সেই প্রতিবেশী মেয়ে লামিয়া! যার সাথে কী-না একটু আগে রূপলের ধাক্কা লেগেছিল। বার বার নীহারিকাকে খুঁচিয়ে বলছে রূপলের সাথে তাকে একটিবার পরিচয় করিয়ে দিতে। নীহারিকার বিরক্তি ও বুঝতে চেষ্টা করছেনা লামিয়া। হ্যাংলার মত তার পিছু পিছু ঘুরছে। অথচ এই মেয়ের পেছনে কত ছেলে পাগল! পুরো মহল্লার ছেলেকে একা পাগল করে রেখেছে এই মেয়ে। তার রূপের গুনে ছেলেরা তার জন্য পাগল প্রায়। সে যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায় তখন তার পেছনে ছেলেদের লাইন পরে যায়! তবে এদের মধ্যে লামিয়া নিজের মনমত কাউকে খুঁজে পাচ্ছেনা। এই প্রথম কোনো ছেলেকে লামিয়ার বেশ লাগল! তাইতো রূপলের সান্নিধ্য পেতে সে বেহায়া হতেও পিছপা হলোনা!
তবে এই মুহূর্তে রূপলকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছেনা নীহারিকা। পুরো বাড়ি চুষে ফেলেছে সে তার সূক্ষ্ণ দৃষ্টি দ্বারা। তবে রূপলের দেখা মিলল না কোথাও। মন খারাপ করে লামিয়া স্টেজ ছেড়ে চলে গেল! আর তখনি নাজনীন বেগম নীহারিকার হাত টেনে ধরে তাকে পাশে বসালেন। মিষ্টি হেসে প্রশ্ন ছুড়লেন,
“পিয়াসার সাজগোজ কী এখনও শেষ হয়নি নীহারিকা?”
“আমি তো এখনও ভাবির কাছে যাইনি আন্টি। কাজে আটকে যাচ্ছি বার বার। তবে এখন যাচ্ছি। দেখে আসছি সাজ কতদূর এগোলো ভাবির।”
“হ্যাঁ। আর তোমার সাথে করে হৃদিকেও একটু নিয়ে এসো তো। পিয়াসার রুমেই আছে হৃদি!”
“এমা কী বলেন আন্টি? কখন এলো হৃদি? আর কার সাথেই বা এলো?”
“রূপলের সাথে এসেছিল! পিয়াসা তখন তার রুমে হৃদিকে রেখে দিয়েছিল। ফোন করে এসব বলল রূপল আমাকে। ছেলেটা যে কোথায় গেল তা জিজ্ঞেস করার সুযোগটাও দিলোনা! ঠাস করে ফোনটা কেটে দিলো।”
“চিন্তা করবেন না আন্টি। আছে হয়ত আশেপাশেই। আচ্ছা আন্টি আপনি বসুন। আমি বরং হৃদিকে ডেকে আনছি।”
তড়িঘড়ি করে নীহারিকা চেয়ার থেকে উঠতে যাবে অমনি নাজনীন বেগম নীহারিকার হাত টেনে ধরে নীহারিকাকে আবারও জায়গায় বসিয়ে দিলেন! উচ্ছ্বল গলায় তিনি নীহারিকার কানে ফিসফিসিয়ে বললেন,
“তোমার সাথে যে ঐ সময় মেয়েটাকে দেখলাম মেয়েটা কে?”
“আমাদের প্রতিবেশী হয় আন্টি৷ কেন?”
“রূপলের সাথে মেয়েটাকে খুব মানাবে তাইনা?”
মুহূর্তেই নীহারিকার হাসিমুখে আঁধার নেমে এলো! বুকটা কেঁপে উঠল তার। মাথাটাও কেমন ঘুরে এলো। অস্থিরতায় ঘাম ছুটে গেল তার। ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েও সে নিচু গলায় বলল,
“অনেক ভালো মানাবে আন্টি।”
গলাটা ধরে এলো নীহারিকার! চোখ দুটোও ঝাপসা হয়ে এলো। ঝড়ের বেগে জায়গা থেকে ছুটে পালালো সে। দুঃখ নিবারণ করা সম্ভব হচ্ছিল না তার পক্ষে। উদগ্রীব হয়ে নীহারিকা যেইনা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে যাবে অমনি সে খেয়াল করল রূপল মেইন ধরে হেঁটে স্টেজের দিকে এগিয়ে আসছে। তার একপাশে শাকিল ও সজল এবং অন্যপাশে অপরিচিত একটি মেয়ে! মেয়েটির সাথে একাগ্রচিত্তে কথা বলতে বলতে রূপল হেঁটে আসছে। সেই মেয়েকে দেখে তৎক্ষনাৎ মাথা গরম হয়ে গেল নীহারিকার। একে তো নাজনীন বেগমের কথার প্রেক্ষিতে পাওয়া কষ্ট অন্যদিকে রূপলের সাথে অন্য এক অপরিচিত মেয়ে। সব মিলিয়ে তার ক্ষোভ বেড়ে গেল রূপলের প্রতি। চ্যালচ্যালিয়ে হেঁটে সে রূপলের মুখোমুখি দাড়ালো। চলতি পথে রূপলকে থামিয়ে দিলো। হতবাক রূপলের দিকে গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“আপনারা সবাই মিলে আমাকে পেয়েছেনটা কী? আপনার সাথে কে ইনি? কাকে নিয়ে এসেছেন সাথে করে?”
নীহারিকার দুর্ব্যবহারে অবাক হলো রূপল। এমন অশোভন আচরণ তো নীহারিকার থেকে প্রত্যাশিত নয়। নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘটেছে তার সাথে। তাই তো এমন অশোভন আচরণ। রূপলের পাশে থাকা মেয়েটি হঠাৎ মুখ টিপে হেসে দিলো! ধীর গলায় রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“ইনিই কী মিস নীহারিকা?”
প্রত্যত্তুরে রূপল উদাস গলায় বলল,
“হ্যাঁ আপু।”
এতটুকু বলেই রূপল নীহারিকার হাত চেপে ধরে নীহারিকাকে নিয়ে নির্জন জায়গায় চলে এলো। লোকজনের সমাগম এখানে নেই বললেই চলে। সবাই স্টেজের ভেতরে ঢুকে গেছে। সেই সুযোগে রূপল নীহারিকার সাথে একান্তে কথা বলতে এসেছে। উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে নীহারিকার দু’চোখে তাকালো রূপল। প্রশ্নবিদ্ধ গলায় বলল,
“কী হইছে তোমার? চোখে পানি কেন?”
রূপলের প্রশ্নের জবাব তো দিলোই না নীহারিকা পাল্টা ভরাট গলায় রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“আগে বলুন মেয়েটি কে?”
“আগে আমার কুয়েশ্চনের আনসার দাও? উজ্জ্বল কিছু করেছে তোমার সাথে? এত এগ্রেসিভ দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?”
আবেগ ধরে রাখতে পারলনা নীহারিকা! হুট করে সে রূপলকে জড়িয়ে ধরল! ডুকরে কেঁদে বলল,
“আন্টি আপনার জন্য মেয়ে দেখছেন রূপল! লামিয়া আপুকে পছন্দ করেছে আপনার জন্য।”
“আজব তো! হু ইজ লামিয়া?”
“অনেক সুন্দর দেখতে। ধবধবে ফর্সা। আপনার গাঁয়ের রঙের মত ফর্সা! আপনার সাথে মানাবেও ভালো।”
রাগে গজগজ করে উঠল রূপল। নীহারিকাকে তার বুক থেকে উঠালো! নীহারিকার অশ্রুসিক্ত দু’চোখে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ঝাঁজালো গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“আমি তোমার কাছে জানতে চেয়েছি মেয়ে কেমন দেখতে? আমার সাথে মানাবে কী-না জানতে চেয়েছি? আগ বাড়িয়ে এত বাড়তি কথা বলতে যাও কেন তুমি? হোয়াট ইজ ইউর প্রবলেম নীহু?”
“এটাই তো সত্যি রূপল! লামিয়া আপু সত্যিই দেখতে খুব সুন্দরী। আন্টি এক দেখাতেই লামিয়া আপুকে পছন্দ করে ফেলেছে।”
“সো হোয়াট? এমন কত শত মেয়েকেই তো আমার মা রোজ আমার জন্য পছন্দ করে। তাই বলে কী আমি সবাইকে বিয়ে করে বসে আছি? আগামী এক ঘণ্টা তুমি আমার চোখের সামনে আসবা না! যাও দূর হও আমার চোখের সামনে থেকে! গেট লস্ট।”
নীহারিকাকে বড্ড রাগিয়ে দিলো রূপল। হুমকি ধমকি মোটেও পছন্দ নয় তার। আর এক সেকেণ্ড ও বিলম্ব করলনা নীহারিকা। রূপলের সম্মুখ থেকে প্রস্থান নিলো। সোজা বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। নীহারিকা চলে যেতেই রূপল তার মাথার চুলগুলো টেনে ধরে রুদ্ধকর শ্বাস ফেলল। উত্তেজিত গলায় বিড়বিড় করে বলল,
“ফালতু একটা বিষয় নিয়ে নিজেও প্যারা খাচ্ছে, আমাকেও প্যারা দিচ্ছে। বোকা মেয়ে এটাই বুঝেনা আমি যদি ঠিক থাকি তো পৃথিবীর কেউ আমাকে আমার জায়গা থেকে টলাতে পারবেনা। ধ্যাত মাথাটাই গরম করে দিলো আমার। আর আমার মায়ের কথাই বা কী বলব। যেখানে যাও সেখানেই শুধু আমার জন্য বউ খুঁজো। এছাড়া বোধ হয় আর কোনো কাজ নেই তার।”
মেজাজ ঠিক করে রূপল ধীরস্থির ভাবে এগিয়ে এলো মেয়েটির দিকে। শাকিল ও সজল ততক্ষণে স্টেজের দিকে যাচ্ছিল। দুজনই হঠাৎ উজ্জ্বলের মুখোমুখি পরে গেল! তবে উজ্জ্বল যাচ্ছিল নীহারিকার পেছনে! হম্বিতম্বি হয়ে নীহারিকা কেন বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল তা জানার আগ্রহ থেকে উজ্জ্বল নীহারিকার পিছু নিচ্ছিল। উজ্জ্বলকে দেখে সজল ও শাকিল ব্যগ্র হাসল। দুজনই সমস্বরে উজ্জ্বলকে বলল,
“ভাইয়া। ওখানে কেউ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। প্লিজ গো।”
উৎসুক হয়ে উজ্জ্বল বাড়ির মেইন গেইটের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই হঠাৎ থমকে গেল! আবছা আলোতে সেই চিরচেনা মেয়েটিকে দেখে সে ভড়কে উঠল। শাকিল ও সজলকে উপেক্ষা করে সে ছুটে গেল মেয়েটির দিকে। দূরে দাড়িয়ে রূপল তার সূক্ষ্ম দৃষ্টি দ্বারা সব ক্যাপচার করছিল! সামনে গেলে উজ্জ্বল মেয়েটির সাথে মন খুলে কথা বলবেনা! ভয়ে ভয়ে থাকবে। কোনো সত্য কথাই তার মুখ থেকে শোনা হবেনা। তাই রূপল উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে গাছের আড়ালে গিয়ে দাড়াল। কান পেতে সব শুনতে থাকল।
ঘাবড়ে ওঠে মেয়েটির মুখোমুখি দাড়ালো উজ্জ্বল! কড়া গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“এই তুমি এখানে কী করছ?”
উজ্জ্বলের হুমকি ধমকিতে ভয় পেলোনা মেয়েটি। বুকে সাহস রাখল সে। এই সময় ভয় পাওয়ার সময় নয়। বরং নিজের অধিকার বুঝে নেওয়ার সময়। তীক্ষ্ণ গলায় মেয়েটি পাল্টা উজ্জ্বলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,
“তোকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসেছি! কী ভেবেছিস তুই? আমাকে ঠকানো বুঝি এতই সহজ? আমাকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করবি আর আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে কলা চুষব? এমনই দুর্দিন চলে এলো আমার?”
মেয়েটির অকপট কথায় অবাক হলো উজ্জ্বল! আরও একটু এগিয়ে গেল সে মেয়েটির দিকে। বিস্মিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“বিহেভিয়ারের এই হাল অবস্থা কেন তোমার? কার সাথে দাড়িয়ে কথা বলছ তুমি ভুলে যাচ্ছ?”
“না! ভুলব কেন? আমার উডবি হাসবেন্ডের সামনে দাড়িয়ে আমি কথা বলছি! যার সাথে কী-না একমাস আগে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল!”
“হ্যাঁ কথা ছিল! কিন্তু শেষ অবধি বিয়েটা হয়নি। কেন হয়নি বলো তো? তোমার বেপরোয়া চালচলনের জন্য! তোমার চরিত্রের সমস্যার জন্য!”
“শাট ইউর মাউথ উজ্জ্বল! সামান্য সন্দেহ থেকে তুমি আমার চরিত্রে প্রশ্ন তুলতে পারোনা। তোমার সমস্যাটা কী জানো? তোমার সমস্যা হলো আমার গাঁয়ের চামড়া নিয়ে! তুমি ভাবছ মেয়েটা সুন্দর তাই হয়ত তার অনেক পুরুষের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে! তার অনেক বেড হেবিটসও থাকতে পারে। মেয়েটা জব করে তার মানে মেয়েটার সিদ্ধান্তই সবসময় উপরে থাকবে! তার মতামতের গুরুত্ব থাকবে। তোমার বুঝি কোনো গুরুত্বই থাকবেনা তখন! এই ম্যান্টালিটি থেকে বের হয়ে এসো উজ্জ্বল। যদি এসব চিন্তাধারাই তুমি মাথায় গেঁথে রাখো তো আমি কেন? পৃথিবীর কোনো মেয়েই তোমার সাথে সুখি হবেনা! সবার জীবনেই একটা পার্সোনাল স্পেস থাকা দরকার। কেউ সবসময় বন্ধি হয়ে থাকতে চাইবেনা। ফ্রিডম সবারই প্রয়োজন। লিসেন উজ্জ্বল? তোমাকে এক সপ্তাহ সময় দিচ্ছি আমি! এই এক সপ্তাহের মধ্যে তুমি হয় আমাকে গ্রহণ করবে নয় আমাকে নিজের হাতে খু’ন করবে! দুটোর একটা করবে। ফ্যামিলিতে মুখ দেখাতে পারছিনা আমি! নিজের পছন্দ মতো তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম আমি এখন সেই তুমিই আমার সাথে পল্টি নিচ্ছ! এই এক সপ্তাহের মধ্যেই তুমি যা করার করবে। আমি তোমার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকব। বায়!”
উজ্জ্বলকে কিছু বলার সুযোগ দিলোনা মেয়েটি। হনহনিয়ে হেঁটে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। ঘাম ছুটে গেল উজ্জ্বলের। অস্থিরতা কাজ করতে লাগল তার মধ্যে। অমনি রূপল লুকানো অবস্থা থেকে বের হয়ে এলো! ক্রুর হেসে সে উজ্জ্বলের মুখোমুখি দাড়ালো। রূপলকে দেখে দাঁতে দাঁত চাপল উজ্জ্বল। বেশ ভাব দেখিয়ে সে পিছু ঘুরতেই রূপল শ্লেষাত্মক গলায় উজ্জ্বলকে ডেকে বলল,
“কী মিস্টার উজ্জ্বল? বেশ চিন্তায় পরে গেছেন তাইনা? দুই নৌকোয় পা দিয়ে চলতে পারছেন না আর?”
উজ্জ্বলের মাথায় এতক্ষণে সব ঢুকল! দেরিতে হলেও সে বুঝতে পারল এসব রূপলের চাল! তৎক্ষনাৎ আগ্রাসী দৃষ্টিতে পিছু ঘুরে তাকালো উজ্জ্বল। রূপল তখনই ব্যগ্র হেসে তার ফোনটা হাতে ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,
“পল্টি খাওয়ার কোনো অপশন নেই। কজ ফোনে সব রেকর্ড করা আছে! বিয়ে ভাঙতে বেশী সময় লাগবেনা আমার! তবে আমি চাই আপনি নিজ থেকেই বিয়েটা ভাঙুন। নীহুকে ছাড়ুন!”
রূপলের দিকে তেড়ে এলো উজ্জ্বল! রাগী দৃষ্টিতে রূপলের দিকে তাকালো। চোয়াল উঁচিয়ে বলল,
“আমি প্রথম থেকেই আন্দাজ করেছিলাম নীহারিকার সাথে কোন ইন্টু পিন্টু আছে। আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে কোনো লাভ নেই ওকে? বিয়েটা আমি নীহারিকাকেই করব! প্রয়োজনে তোকে খু’ন করব!”
উজ্জ্বলের সস্তা হুমকিতে হু হা করে হেসে দিলো রূপল। পেটে খিল ধরে গেল তার। হাসতে হাসতেই সে মেজাজ চওড়া করে বলল,
“ওহ্ মাই গড। ভয় পেয়ে গেছি আমি! আমার ভালোবাসা তোর মত এতই সস্তা যে নিজের জান যাওয়ার ভয়ে আমি নীহুকে ছেড়ে দিব? হাউ চিপ ইউর ম্যান্টালিটি ইয়ার। আমিতো বলব, পৃথিবীর কোনো মেয়েরই উচিৎ হবেনা তোকে বিয়ে করার! যে কী-না অন্যকে দমিয়ে রেখে নিজেকে উপরে রাখতে চায় সে তো মানুষ হিসেবেই গণ্য না। স্বামী হিসেবে কী গণ্য হবে? তাছাড়া তুই কী ভেবেছিস? আমার নীহু কালো বলে এটাই তার দুর্বলতা? তার দুর্বল জায়গা দেখিয়ে তুই সবসময় তাকে তোর পায়ের তলায় পিষে রাখতে পারবি? আর সেজন্যই তুই কালো মেয়ে খুঁজছিস বিয়ে করার জন্য? তো আমিও চ্যালেঞ্জ করে বলছি আমার দেহে শেষ রক্ত বিন্দুটুকু অবশিষ্ট থাকতে নীহুকে আমি ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো পুরুষ ছুঁতে পারবেনা! তাকে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করতে পারবেনা। নীহুর দায়িত্ব শুধু আমার। একান্তই আমার।”
গটগটিয়ে হেঁটে উজ্জ্বলের সম্মুখ থেকে প্রস্থান নিলো রূপল। রাগে মাথা গরম হয়ে গেল উজ্জ্বলের। কাউকে কিছু না বলেই সে বিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল! নীহারিকাকে খুঁজতে খুঁজতে রূপল দু’তলায় ওঠে গেল। নীহারিকা তখন কোল্ড ড্রিংকস হাতে নিয়ে নিচের দিকেই নেমে আসছিল। নীহারিকাকে দেখামাত্রই রূপল চনমনে হয়ে ছুটে গেল নীহারিকার দিকে। রূপলকে দেখে মুহূর্তেই মুখটা পিছনে ঘুরিয়ে নিলো নীহারিকা। রাগে রঙ্গিন হয়ে বলল,
“সরে যান সামনে থেকে!”
নীহারিকার রাগের কারণ বুঝতে পারল রূপল। তবুও নীহারিকাকে রাগাতে ছাড়লনা সে। গরমে পাঞ্জাবির কলারটা ঝাড়ল সে। গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে ঘুরে এসে নীহারিকার মুখোমুখি দাড়ালো। ট্রে থেকে একটি কোল্ড ড্রিংকস হাতে নিয়ে সে ভাব শূণ্য গলায় শুধালো,
“ওহ্। একঘণ্টা হয়নি এখনও?”
“একঘণ্টা কেন? এক যুগ পরেও আপনি আমার মুখ দর্শন করতে পারবেননা!”
এই বলে নীহারিকা পুনরায় পিছু ঘুরে গেল। রাগে বোম হয়ে যেইনা সামনের দিকে পা বাড়ালো অমনি রূপল ক্রুর হেসে নীহারিকার লেহেঙ্গার ওড়না টেনে ধরল। ঠোঁট কাটা গলায় বলল,
“ইশ! রাগলে তো তোমাকে আরও হট দেখায়! মনে জ্বালা ধরিয়ে দেয়। আর কত জ্বালাতে চাও আমাকে বলো?”
#চলবে…?