ফেরারি প্রেম পর্ব-৫৫

#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৫৫
#নিশাত_জাহান_নিশি

“নাও। তোমার দুষ্টু মেয়েকে সামলাও! সবসময় আমার ঘাঁড়েই মেয়েকে চাপিয়ে দিবেনা! মা হিসেবে তোমারও কিছু কর্তব্য আছে!”

বেকুব বনে গেল নীহারিকা। মুখে আপনাআপনি হাত চলে গেল তার। চোখের পলক পরাও যেন নিমিষেই থেমে গেল! নিজের কানকেও সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারছেনা সে! লামিয়ার সামনে এই কোন ক্যালেঙ্কারি বাঁধিয়ে দিলো রূপল? কামড়ের প্রতিশোধ বুঝি এত ভয়ঙ্করভাবে নিলো? ততক্ষণে হৃদিও নীহারিকার কোলে ওঠে গেল! নীহারিকার গলাকে সাপের মত প্যাঁচিয়ে ধরে মুখ টিপে হাসল! আহ্লাদি গলায় বলল,

“হায়এ মেরি মা! কতক্ষণ পর তোমার কোলে উঠলাম! এই কোলটাকেই তো এতক্ষণ মিস করছিলাম!”

অতিশয় বিপাকে পড়ে চোখের কোটর থেকে চোখ বের হয়ে আসার উপক্রম হলো লামিয়ার! নীহারিকার চেয়েও লামিয়ার বিস্মিত হওয়ার মাত্রা যেন অধিক বেড়ে গেল। বেশিক্ষণ সেই চমক আটকে রাখতে পারলনা লামিয়া! বিক্ষিপ্ত গলায় নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“হোয়াট ইজ দিস নীহা? তুই বিয়ে করলি কবে? এই বাচ্চাটাই বা কবে হলো তোর? কী হচ্ছে এসব? সব তো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে!”

পৈশাচিক হাসিতে লিপ্ত রূপল! মাস্ক পরে থাকার দরুন যদিও তার হাসির মাত্রা বুঝা যাচ্ছেনা তবে তার কুঁচকানো চোখ দেখে নীহারিকা তা সুস্পষ্ট ভাবেই টের পাচ্ছে! রাগে গাঁ রি রি করে উঠল নীহারিকার। অবিলম্বেই চোয়াল ঝুঁকে এলো তার! ফোঁস করে শ্বাস ফেলে সে রূপলের ফুটফুটে দু’চোখের দিকে তাকালো। বিপরীতে গাঁ ছাড়া ভাব নিলো রূপল! খামখেয়ালি সুরে বলল,

“ওকে নীহু। তাহলে তুমি মেয়েকে সামলাও! আমি বরং আসছি।”

জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো রূপল! লামিয়ার সন্দেহ আরও প্রগাঢ় হলো। তেড়ে গেল সে নীহারিকার দিকে। খরতর গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“এই নীহা? কবে তুই এই আকাম করে রেখেছিলি? বাড়ির সবাই জানে তোর এই ক্যালেঙ্কারির কথা?”

পরিস্থিতি সামলানোর দায়ে পড়ে নীহারিকা বদ্ধ উন্মাদের মত হু হা করে হেসে দিলো! হাসির আড়ালে লরাদশা আড়াল করে হেয়ালি সুরে বলল,

“তুমিও না লামিয়া আপু। বুদ্ধি সুদ্ধি নেই তোমার মাথায়? ইয়ার্কিও বুঝো না তুমি? মিস্টার রূপল হলেন সম্পর্কে আমার বেয়াই! সেই খাতিরে প্রায়ই আমাদের মধ্যে এসব দুষ্টুমি হয়। আজও হলো ঠিক তাই। তাছাড়া এরমধ্যেও একটা সত্যি লুকিয়ে আছে। জানি সত্যিটা বললে তুমি কষ্ট পাবে!”

উৎসুক হয়ে উঠল লামিয়া। সত্যি জানার জন্য সে তৎপর হয়ে উঠল। উত্তেজিত গলায় শুধালো,

“কী সত্যি বল আমাকে? আমি কষ্ট পাবনা প্লিজ বল?”

দুঃখী দুঃখী ভাব নিলো নীহারিকা! নাক টেনে মাথা নুয়ালো। ধীর স্বরে বলল,

“রূপলের অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে লামু আপু! দেট’স হোয়াই তিনি আমার উপর দোষ চাপিয়ে তোমার থেকে পরিত্রাণ পেতে চেয়েছে! একচুয়েলি তিনি এখনি চাননা তার গার্লফ্রেন্ডের বিষয়টা কারো সামনে আসুক। কজ তিনি আপাতত বেকার মানুষ তো! যখন চাকরী বাকরী হবে তখন তিনি বিষয়টা সবাইকে জানাবেন। আমি নিজেও জানিনা তার গার্লফ্রেন্ড কে! তবে এতটুকু খুব কষ্টে জেনেছি যে তার গার্লফ্রেন্ড আছে!”

মন ভেঙে গেল লামিয়ার! বুকে এক অদ্ভুত শূণ্যতা কাজ করতে লাগল। ভরাট গলায় সে নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“তুই যা বলছিস সব সত্যি তো নীহা? তাছাড়া এই বাচ্চাটাও যে তোকে মা বলে ডাকল? এর কারণ কী? তোরা সবাই মিলে গোল খাওয়াচ্ছিস না তো আমাকে?”

“কারণ বাচ্চাটাও তার চাচ্চুর সাথে জড়িত! কথা বার্তায় বুঝো না? পাকা বুড়ি একটা!”

দুষ্টুমি ভুলে হৃদি কেমন যেন আবেগপ্রবণ হয়ে উঠল! মায়াময় অশ্রুসজল দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো। হুট করেই সে চোখ বুজে নাক টেনে নীহারিকার গাঁয়ের গন্ধ শুকতে লাগল। ভরাট গলায় বলল,

“তুমিই তো আমার মা নীহা আন্টি! তোমার গাঁ থেকে আমার মায়ের গন্ধ ভেসে আসছে!”

হতভম্ব দৃষ্টি ফেলে নীহারিকা হৃদির দিকে চাইল। হৃদির চোখেমুখে সে এক অদ্ভুত মায়া খুঁজে পেল। তাৎক্ষণিক বুকটা কেঁপে উঠল তার। অজান্তেই চোখের কোণে অশ্রুবিন্দু জড়ো হলো। মিষ্টি হেসে হৃদি নীহারিকার গালে চুমু এঁকে দিলো। আদুরে সুরে বলল,

“আজ থেকে তুমিই মা নীহা আন্টি! আমি তোমাকে নীহা আন্টি না, বরং নীহা মা বলে ডাকব।”

বিগলিত হয়ে নীহারিকা মুহূর্তেই হৃদিকে তার বুকের মাঝে চেপে ধরল। এতক্ষণ যাবত বুকের মাঝে যে হাহাকার কাজ করছিল সেই হাহাকার যেন তার নিমিষেই দূর হয়ে গেল! প্রশান্তিতে ভরে উঠল বুকের ভেতরটা! “মা” শব্দটা ক্রমাগত তাকে মা হয়ে উঠার উপলব্ধি টের পাইয়ে দিচ্ছিল! কত অদ্ভুত সুন্দর এই অনুভূতি।

তাদের মাঝখানে লামিয়া আর তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে থাকতে চাইলনা! নীহারিকার বানোয়াট কথা সে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো যে, রূপলের গার্লফ্রেন্ড আছে! গার্লফ্রেন্ডকে লুকানোর জন্যই রূপল নীহারিকাকে ব্যবহার করেছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এই যে, নীহারিকার মত কুৎসিত দেখতে একটা মেয়ের প্রেমে রূপলের মত সুদর্শন ছেলে কখনও পরতে পারেনা! তবে এই মুহূর্তে সে রূপলের গার্লফ্রেন্ডকে খোঁজার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল! সিদ্ধান্ত নিলো যে করেই হোক রূপলের গার্লফ্রেন্ডকে সে খুঁজে বের করবে। ছলাকলা করে তাদের ব্রেকাপ করাবে। তারপর রূপলকে সে বিয়ে করবে! এরজন্য তাকে পিয়াসার সাথে মিলিত হতে হবে! পিয়াসাকেই প্রথমে ইমপ্রেস করতে হবে!

হৃদিকে এখনও বুকের মাঝে চেপে ধরে রেখেছে নীহারিকা। হৃদিও নীহারিকাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। হৃদির মাথায় হাত বুলিয়ে নীহারিকা নরম সুরে প্রশ্ন ছুড়ল,

“তুমি কী লামিয়া আপুকে দেখেই আমাকে মা বলে ডাকলে হৃদি? আপুর সামনে অভিনয় করলে?”

“না নীহা মা! প্রথমে আমি অভিনয় করলেও পরে যখন তোমার গাঁয়ের ঘ্রাণ শুকলাম তখন মনে হলো তুমিই আমার মা! কী মিষ্টি ঘ্রাণ গো তোমার গাঁয়ে। আমাদের স্কুলে টিচাররা সবসময় বলে জানো? মায়ের গাঁয়ে নাকী মিষ্টি একটা ঘ্রাণ থাকে। তোমার গাঁয়েও সেই ঘ্রাণটা পেয়েছি আমি! তাই তুমি এবার থেকে আমার মা!”

হয়রান হয়ে গেল নীহারিকা। হৃদির উপলব্ধি তার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হলোনা! বরং অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল তার। হৃদির চোখে মুখে চুমু খেয়ে নীহারিকা হেসে হেসে বলল,

“ওকে হৃদু। এবার থেকে আমি তোমার মা। আর তুমি আমার মেয়ে! এবার চলো আমরা নিচে যাই। অনুষ্ঠান তো শুরু হয়ে গেল। খাওয়াদাওয়া ও তো করতে হবে।”

হৃদিও নীহারিকার কপালে চুমু খেয়ে বলল,

“ওকে মা চলো। আমারও বেশ ক্ষিদে পেয়েছে।”

হৃদিকে কোলে নিয়ে নীহারিকা খাবারের প্যান্ডেলে চলে এলো। পিয়াসার পরিবার থেকে আসা আত্নীয়স্বজন ও নিহালের কলিগরা খেতে বসে গেছে প্রায়। ডেকোরেটরের লোকরা বেশ খাতির যত্ন করে তাদের খাওয়াচ্ছে। তখনি নীহারিকার নজর গেল স্টেজে পিয়াসার পাশের সোফায় বসা লামিয়ার দিকে! দূরে থেকেও নীহারিকা আঁচ করতে পারল লামিয়া নিশ্চয়ই কোনো চাল চালছে! পিয়াসাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে। লামিয়ার বুদ্ধির তারিফ না করে পারলনা নীহারিকা! বাঁকা হেসে সে বিড়বিড় করে বলল,

“বাহ্ লামিয়া আপু বাহ্! ভালোই সুযোগ নিয়েছ তুমি। কোথায় গেলে তোমার কী ফয়দা হবে তা বেশ ভালোভাবেই রপ্ত তোমার। পিয়াসা ভাবি তো এমনিতেই আমাকে পছন্দ করেনা এখন আবার তোমার মত সুন্দরী মেয়ের দেখা পেয়ে গেল! এবার তো তোমরা সোনায় সোহাগা! কলকাটি ভালোই নাড়তে পারবে।”

সেদিকে আপাতত পাত্তা দিলোনা নীহারিকা। হৃদির ক্ষুধা পেয়েছে কেবল এই বিষয়টাই আপাতত তার মাথায় ঘুরতে লাগল। হৃদির জন্য একটি প্লেটে খাবার মেখে নীহারিকা বেশ তৃপ্তি করেই হৃদিকে খাইয়ে দিলো। এরমধ্যেই ঘুম পেয়ে গেল হৃদির। নীহারিকা তার রুমে নিয়ে হৃদিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিচে নেমে এলো। রূপলের পরিবারের সবাই তখন টেবিলে বসল খাবার খেতে। মেহমানদের খাবার প্রায় শেষের দিকে। লামিয়াও অন্য টেবিলে বসে খাচ্ছিল।

দুটো টেবিল একত্র করে দুই পরিবারের সবাই খেতে বসল। নিহাল ও পিয়াসাও সবার সাথে খেতে বসল। শাকিল, সজল কব্জি ডুবিয়ে খেতে শুরু করেছে। রূপল এখনও মাস্ক পরা অবস্থায়! ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে তার। এখন সে খাবার খাবে কী করে তা ভেবেই চিন্তায় পরে গেল। দূর থেকে দাড়িয়ে রূপলের কাণ্ড সব দেখছিল নীহারিকা! হাসতে হাসতে তার পেটে খিল ধরে যাচ্ছিল। নিহাল হঠাৎ এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে লাগল। চিন্তিত সুরে বলল,

“নীহাকে কোথাও দেখছিনা। নীহা কোথায়?”

তখনি নিহালের শ্বাশুড়ি অর্থাৎ নাজনীন বেগম নিহালকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“হৃদিকে ঘুম পাড়াতে গিয়েছে নীহারিকা। আমরা ওয়েট করি। নীহারিকা এলে না হয় একসাথে খাব।”

নাজনীন বেগমের কথায় মারজিনা বেগম ফোড়ন কাটলেন। খামখেয়ালি স্বরে তিনি বললেন,

“না না বেয়াইন। আপনারা খাওয়া শুরু করে দিন। নীহারিকা হয়ত আসছেও। রাত তো অনেক হয়ে গেল। প্লিজ আপনারা খাওয়া শুরু করুন।”

মারজিনা বেগমের জোরাজুরিতে সবাই খেতে শুরু করল। রূপল হুট করে তখন চেয়ার ছেড়ে ওঠে সোজা দাড়িয়ে গেল। সবার দৃষ্টি এবার রূপলের দিকে পরল। পিয়াসা মুখে লোকমা তুলতে গিয়েও থেমে গেল। আশ্চর্যিত গলায় রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“কী ব্যাপার ভাইয়া? তুমি হঠাৎ মুখে মাস্ক পরলে কেন?”

খেতে খেতে সজল ইয়ার্কিপূর্ণ গলায় পিয়াসাকে বলল,

“সে কিছুনা আপু। ভাইয়ার নাকে ভীমরুল কামড় দিয়েছিল তো, তাই ভাইয়া মাস্ক পরতে বাধ্য হলো!”

অমনি রূপল রাগে গজগজ করে উঠল! হাত-পা ঝেড়ে ঝাঁজাল গলায় বলল,

“শাট আপ। জাস্ট শাট আপ! ক্ষেপাবি না আমায়। না হয় এতক্ষণ অবধি যা খেয়েছিস কিক মেরে সব এক এক করে পেট থেকে বের করব।”

রাগে হনহনিয়ে রূপল জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো! শাকিল ও সজল মুখ টিপে হাসতে লাগল। উপস্থিত সবাই বেকুব হয়ে রূপলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। সবাই শাকিল ও সজলকে চেপে ধরল। জানতে চাইল কী হয়েছে রূপলের। তারা দুজনই চাপে পরে হুড়োহুড়ি করে খাবার খেয়ে টেবিল ছেড়ে ওঠে গেল! এখানে থেকে বিপদ তারা বাঁধাবে না-কী?

প্যান্ডেলের বাইরে দাড়িয়ে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছিল নীহারিকা। বাঘ যে তার পেছনে দাড়িয়ে রয়েছে সেই দিকে বিন্দুমাত্রও খেয়াল নেই তার! হাসতে হাসতে নীহারিকা যেইনা রুপলের গাঁয়ের সাথে ধাক্কা খেলো তখনি তার টনক নড়ল! পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে নীহারিকা পিছু ফিরে তাকালো। রূপলের অগ্নিঝরা চাহনি দেখে ভয়ে আঁতকে উঠল নীহারিকা! শুকনো ঢোঁক গিলে সে মানে মানে করে যেইনা জায়গা থেকে পালাতে যাবে অমনি রূপল এক ঝটকায় নীহারিকার কোমর প্যাচিয়ে ধরল! আতঙ্কগ্রস্ত নীহারিকাকে কোমড় ধরে টানতে টানতে সে নীহারিকার রুম অবধি নিয়ে এলো! ধাক্কা মেরে নীহারিকাকে সে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো। রুমের দরজা আটকে মুখ থেকে মাস্কটা খুলল। স্বস্তি খুঁজে পেল সে। মুক্তভাবে শ্বাস নিতে লাগল।

গভীর ঘুমে মগ্ন হৃদি। অধীর চোখে নীহারিকা পাশ ফিরল। এই বুঝি হৃদি ওঠে গেল। না! এখনও নাক টেনে ঘুমুচ্ছে হৃদি। জোর বাঁচা বেঁচে গেল নীহারিকা। রাগী দৃষ্টিতে সে এবার রূপলের দিকে তাকালো। খিটখিটে গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“হোয়াটস ইউর প্রবলেম ম্যান? কোমড় জড়িয়ে ধরে চাপাচাপি বন্ধ হবেনা আপনার? নাকে কামড় খেয়েও শাস্তি হলোনা?”

ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল রূপলের। হাত থেকে মাস্কাট ছুড়ে ফেলে সে তেড়ে এলো নীহারিকার দিকে। নীহারিকার মুখের কাছে ঝুঁকে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“বাইটের শাস্তি তো তুমি এবার পাবেই! ইউ নো হোয়াট? আজ তোমার জন্য আমাকে কী কী ফেইস করতে হয়েছে? সবাই লিটরেলি আমাকে মেয়ে মেয়ে বলে ক্ষেপাচ্ছিল! সব তোমার জন্য হয়েছে!”

রূপলের ভয়ঙ্কর রূপ এবং রূপল এই মুহূর্তে কী করতে চাইছে তা বুঝতে পেরে নীহারিকা হুট করে রূপলের মুখ চেপে ধরল! ভীতু গলায় বলল,

“খবরদার। কামড়াকামড়ি করতে আসবেন না। না হয় কিন্তু….

নীহারিকাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলোনা রূপল! হাত টেনে ধরে নীহারিকাকে বসা থেকে উঠিয়ে দিলো সে। নীহারিকার জায়গায় পায়ের উপর পা তুলে বসল! বদরাগী গলায় বলল,

“আ’ম সো হাংরি। কুইকলি খাবার নিয়ে এসো। তুমি কামড়াইছ তুমিই এখন নিজ হাতে খাওয়াই দিবা! বিয়ের আগে কোনো প্রকার কামড়াকামড়ি করব না আমি! এতটুকু সভ্যতা জানা আছে আমার!”

ছাড়া পেয়ে নীহারিকা হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল! বাড়ির সবাইকে আড়াল করে রূপলের জন্য প্লেটে করে খাবার নিয়ে এলো। রূপলের কথা মত নীহারিকা ভয়ভীতি নিয়ে রূপলকে খাইয়ে দিতে লাগল। এর ফাঁকে ফাঁকে রূপলও হাত ঘুরিয়ে নীহারিকার মুখেওখাবার পুড়ে দিলো। এভাবেই দুজন সবটা খাবার শেষ করল।

খাবার শেষে রূপল আয়নার দিকে তাকালো। দেখল নাকে থাকা কামড়ের দাগটা মিশে গেছে প্রায়। স্বস্তির শ্বাস ফেলল সে। মাস্কটা আর পরতে হবেনা সেই খুশিতে ব্যগ্র হাসল! পেছনে চুপটি করে দাড়িয়ে থাকা নীহারিকাকে সে হাত ধরে তার দিকে টেনে আনল। নীহারিকাকে জড়িয়ে ধরে কাতর স্বরে বলল,

“প্লিজ নীহু ব্লকটা খুলে দিও! তোমার সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারব না। সেদিন যা হয়েছে তার জন্য আ’ম সরি! বাড়ি ফিরে কল করেই যেন তোমাকে আমি পাই। প্লিজ একটু কো-অপারেট করো।”

“ওয়েট ওয়েট আমাকে ছাড়া থাকতে না পারার কারণ? এখনও কিন্তু বললেন না।”

“মুখে না বললেও যে তুমি বুঝোনা বিষয়টা কিন্তু এমন নয়! তুমি যথেষ্ট বুঝদার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয় আমার চেয়েও ভালো বুঝো তুমি! যখন সময় হবে তখন আমি নিজে থেকেই আমার মনের অনুভূতি তোমাকে খুলে বলব। এখনও সেই সুইটেবল সময় আসেনি।”

নীহারিকাকে ছেড়ে রূপল ঘুমন্ত হৃদিকে কোলে তুলে নিলো। দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে গেল। নিয়ম অনুযায়ী নিহাল আজ পিয়াসার সাথে তার শ্বশুড় বাড়ি যাবে। রূপল খায়নি ভেবে রূপলের খাবারটা মারজিনা বেগম প্যাক করে দিলেন! বিদায় নিয়ে সবাই গাড়িতে ওঠে বসল। গাড়ি ছেড়ে দিলো রূপলদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here