#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ১৪
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
একটা স্টবেরি ফ্লেভার এর কেকের উপর ক্যান্ডেল জ্বালানো হয়েছে।তাও গুনে গুনে আঠারো টা।এতোকিছুর মধ্যে আম্বের ভুলেই গিয়েছিলো তার জন্মদিনের কথা।
কেক কাটার পর সবার মুখেই কেক তুলে দেয় আম্বের।বাড়ির সব সার্ভেন্টরা আজ প্রথম স্বপ্নমহল এর দোতালায় পদার্পনের সুযোগ পেয়েছে।আলতাফ কে কেক খাওয়াতে গিয়ে ছলছল করে উঠে আম্বের চোখ।কেনো যেনো বাবাকে তার অনেক বেশিই মনে পড়ছে।আলতাফ আম্বের এর মাথায় হাত বুলিয়ে নম্র গলায় বললেন—
“কাঁদবেন না বউমনি।এই পৃথিবী চিরস্থায়ী নয়।জন্ম নিলে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতেই হবে।মানুষ চলে গেলেও তার কর্ম থেকে যায়।এই যে আপনার বাবা আপনার মতো মিষ্টি বউমনি আমাদের উপহার দিয়ে গেলো।এইজন্য সারাজীবন আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।”
আম্বের চোখের পানি মুছে নেয়।সবার থেকে একটু দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে মাহাদ।নিশ্চল,নিরব দৃষ্টি।আম্বের সেদিকে তাকাতেই আলতাফ আলতো গলায় বললেন—
“আপনি বড় হয়েছেন।আজ আপনার এই জন্মদিনে গরীব চাচার তেমন কিছু দেওয়ার নেই।শুধু বুক ভরে দোআ করতে পারি।যেনো আপনি আপনার জীবনের সঠিক জীবন সাথী খুঁজে পান।
পৃথিবী বড্ড নিঠুর।এই নিঠুর পৃথিবীতে একা বেঁচে থাকা যায় না।একজন নিজের মানুষের প্রয়োজন হয়।যার কাছে আমাদের সবটা জমা থাকে।হাসি,কান্না,ভালোবাসা,ঘৃণা।প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে তার কাছ থেকে চেয়ে নিবো।
আমার মনে হয় আপনি তাকে অতি সত্ত্বর খুঁজে পাবেন।তাই বলবো একটু মন থেকে খুঁজে দেখেন।সবসময় চোখের সামনে আমরা যা দেখি তা সত্য নাও হতে পারে।স্বচ্চ আয়নায় তাই প্রতিফলিত হয় যা আমরা তার সামনে উপস্থাপন করি।
শতবর্ষী হোন।”
আম্বের অনেকক্ষন ধরে আলতাফ এর কথাগুলো ভাবে।কিন্তু তার কুল কিনারা করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না।
এক টুকরো কেক নিয়ে মাহাদ এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আম্বের।মাহাদ স্মিত হেসে হা করে।তার মুখে কেক দিতে দিতে আম্বের বললো–
“আপনি কী করে জানলেন আজ আমার জন্মদিন?
খাওয়া শেষ করে মৃদু হাসে মাহাদ।হালকা ঝুঁকে গাঢ় গলায় বললো—
“আপনার সম্পর্কে আমি এমন অনেক কিছুই জানি যা আপনি নিজেও জানেন না।
শুভ জন্মদিন প্রজাপতি।আপনার আগামী দিনগুলো আপনার নামের মতোই ভালোবাসার সুগন্ধে ভরে উঠুক।”
“ধন্যবাদ।”
কেক খাওয়ার পর সবাই খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত।মাহাদ এর মোবাইলে রিং বেজে চলছে।মাহাদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এখন তার যাওয়া উচিত।
,
,
,
হসপিটালে আধশোয়া হয়ে বসে আছে ইপ্তিহা।একটা ছোট অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।মাহাদ নরম পায়ে কেবিনে ঢুকে।ইপ্তিহা কে দেখেই মলিন হাসে মাহাদ।মাহাদ কে দেখে আবেগপূর্ণ চোখে তাকায় ইপ্তিহা।ওর সামনে এসেই পকেটে হাত গুঁজে শক্ত হয়ে দাঁড়ায় মাহাদ।ধারালো কন্ঠে বললো—
“কল কেন করছিলে আমাকে?
ইপ্তিহা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে।ওর এই অবস্থা দেখেও মাহাদ কী করে এই প্রশ্ন করে!
ধীম গলায় ইপ্তিহা বললো—
“আমার অবস্থা তুমি দেখতে পারছো না?
মাহাদ বেখেয়ালি গলায় বললো–
“তো?
“মাহাদ!
মাহাদ ফুঁসে উঠে।কেবিনে কেঁপে উঠে তার গলার ভয়াল আওয়াজ।প্রদৃপ্ত গলায় বললো—
“তোর কল রিসিভ করিনি কেন তাই তোর বাপ কে দিয়ে ও শুরু করেছিস!
সমস্যা কী তোর!
মুহূর্তেই চোখ গোল গোল করে ইপ্তিহা নিস্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মাহাদ এর দিকে।সে ভাবতেও পারছে না মাহাদ তাকে তুই করে বলছে।
মাহাদ ইপ্তিহার গাল টিপে ধরে।তপ্ত গলায় বললো—
“শুধু তোর ঠোঁট ছুঁয়ে ছিলাম তাই তোর এই অবস্থা।আর এসেছিস আমাকে ভালোবাসতে!
আমি এক জ্বলন্ত কয়লা।আমার দগ্ধ আগুন নিভে গেলেও তার আভা বিদ্যমান।আমার কাছে এলে তার আঁচে পুড়ে শেষ হয়ে যাবি।জাস্ট স্টে এওয়ে ফ্রম মি।”
ইপ্তিহার অক্ষিপল্লব ভিজে উঠে।এক স্মিত ধারা বইতে থাকে তার চোখ বেয়ে।ধরা গলায় ইপ্তিহা বললো—
“আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি মাহাদ।”
মাহাদ বিদ্রুপপূর্ণভাবে হাসে।তাচ্ছিল্যের সাথে বললো—
“ভালোবাসা !ভালোবাসার মানে বুঝিস!তোদের মতো মেয়েদের ভালোবাসা বিছানা পর্যন্তই।এই টাকা,এই ফেম এর জন্য তোরা মানুষের বিছানায় বিছানায় ঘুরে ফিরিস।তোর যেই বাপকে দিয়ে আমাকে ফাঁসাতে চাস কয়বার তার বেড পার্টনার হয়েছিস তুই!
তোদের মতো মেয়েরা নিজের স্বার্থের জন্য নিজের শরীর বিকিয়ে দেয়।”
ইপ্তিহার চোখ দিয়ে অঝোর ধারা বইছে।মাহাদ ভাবলো কী করে এইসব তার সম্পর্কে !
ওদের ফিল্মের ডিরেক্টর ওকে একটু বেশিই পছন্দ করে তাই মাহাদ কে বারবার কল করার পরও যখন রিসিভ করছিলো না তখন তাকে বলেই মাহাদ কে কল করায়।কিন্তু তাই বলে মাহাদ এইসব ভাববে!
ইপ্তিহা কিছুই বললো না।মাহাদ ফোঁস করে এক দম ফেলে।অধর ছড়িয়ে বুক ভরে শ্বাস নেয়।কঠিন গলায় বললো—-
“আজকের পর আমার সাথে আর কন্টাক্ট করার চেষ্টা করবি না।তোর ওই বাপকে বলবি তোর জন্য এত মায়া হলে তোকে অন্য ব্যবস্থা করে দিতে।”
ইপ্তিহা অনুজ্জ্বল চোখে তাকায়।ম্লান গলায় অনুরক্তির সাথে বললো—
“স্যার শুধু আমার কথা ভেবেই তোমাকে কল করেছে।তুমি ভালো করেই জানো এখানে আমার কেউ নেই।বাবা মা কেউ আমার মিডিয়ায় কাজ করা পছন্দ করে না।
আমি অনেক আগে থেকেই তোমার ফ্যান।তাই এই সুযোগ টা পেয়ে আমি হাত ছাড়া করতে চাই নি।কিন্তু তাই বলে আমি নিজেকে বিলিয়ে দেই নি মাহাদ।”
মাহাদ চুপ করে শুনে।এই মিডিয়া,ফেম,সেলেব্রেটির তকমা তার পুরো জীবন ওলট পালট করে দিয়েছে।তাই সে এর সাথে যুক্ত মানুষদের সহ্য করতে পারে না।বিশেষ করে মেয়েদের।একটা চেয়ার টেনে ইপ্তিহার সামনে শান্ত হয়ে বসে মাহাদ।নির্মল গলায় বললো—
“দেখো,তোমার বাবা মা যা বলেছে তা একদম ঠিক।এই জগত ভালো নয়।তোমাকে যা দিবে তার চেয়ে দ্বিগুন কেড়ে নিবে।
আই থিংক তুমি ওই ধরনের মেয়ে নও।যথেষ্ট ভালো একটা মেয়ে তা আমি তোমার সাথে কাজ করেই বুঝেছি।চলে যাও এখান থেকে।পৃথিবীতে বাবা মায়ের মতো নিঃস্বার্থভাবে কেউ ভালোবাসতে পারে না।কিন্তু সেই ভাগ্যও সবার হয় না।তোমার হয়েছে।পৃথিবীতে সে সুখী যার একটা পরিবার আছে।
আর আমার কথা!যদি সত্যিই তুমি আমাকে পছন্দ করো তবে সারাজীবন আমরা বন্ধু থাকবো।কিন্তু এর বেশি নয়।এখানে কেউ কারো না।ফিরে যাও আপন ঠিকানায়।পড়ালেখা শেষ করে নিজের যোগ্যতায় কিছু করো।এইসব জীবনের কোনো মানে নেই।আসি।টেক কেয়ার।”
মাহাদ উঠে ডোর পর্যন্ত যেতেই আহত গলায় ইপ্তিহা বললো—
“আমাদের কী আর কখনো দেখা হবে না!
“হতে পারে।যদি ডেসটিনি চায়।টেক লাভ এন্ড উইশ ইউ অল দ্যা বেস্ট।বাই।”
মাহাদ যেতেই ঝমঝমিয়ে কেঁদে ফেলে ইপ্তিহা।শুধু মাহাদ কে কাছে পাবে বলে বাবা মায়ের কথা অমান্য করে একা এখানে চলে আসে।গত ছয় মাস একা একটা ফ্ল্যাটে থাকে।
হসপিটাল এর সিড়ি দিয়ে হুড়হুড়িয়ে নামে মাহাদ।আর তার সামনেই পড়ে তার অতি পরিচিত একজন।তাকে দেখেই বাঁকা হাসে মাহাদ।কিন্তু দাঁড়ায় না।
লোকটি কিছুক্ষন উদ্ভ্রান্তের মতো তাকিয়ে থাকে।মাহাদ এর মুখে হাসি!
লোকটি তার স্মার্ট ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একজন মেঘের মতো গর্জন করে উঠে,বললো—
“গাধার বাচ্চা,তোকে নজর রাখতে বলেছি।মারতে নয়।”
ঝনঝনিয়ে উঠে লোকটির শরীর।আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওপাশের সেই ভারী কন্ঠে আবার কেঁপে উঠে সে।
“এরপর এমন ভুল হলে তোর ঘাড় থেকে মাথাটা আলাদা করে দিবো আমি।মনে রাখিস।”
কম্পনরত গলায় ভয়ের সাথে লোকটি বললো—
“জ্বী স্যার,জ্বী।আর ভুল হবে না।”
কল ডিসকানেক্ট হতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে লোকটি।বুকের উপর একমনের পাথরটা সরলো মনে হচ্ছে।
,
,
,
ঘরময় পায়চারী করছে আম্বের।তার লাল শাড়ির আঁচল ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।ঝিমঝিম করছে মস্তিষ্ক।আলতাফ ঘুমিয়ে পড়েছে।অন্যান্য সার্ভেন্টরাও চলে গিয়েছে।মাহাদ বাসায় নেই।এমন সুযোগ সে আর কখনো পাবে না।
আম্বের এর মনে দমদম করছে ভয়ে।সে বদ্ধশালা থেকে বের হতে চায়।সোনার খাঁচায় বন্ধি পাখিও মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করতে চায়।সেখান আম্বের তো মানুষ।
না না আর দেরি করা যাবে না।আম্বের তার ঘরের লাইট টা অফ করে দেয়।বিড়ালপায়ে ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।ঘুটঘুটে অন্ধকার।আর আম্বের ভালো করেই জানে কোথায় কী আছে।তাই অতি সাবধানে পা ফেলে স্বপ্নমহল এর সদর দরজায় এসে তার রুদ্ধশ্বাস ছাড়ে।আম্বের কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো।পিছন ফিরে পুরো ঘরের দিকে তাকালো।কিছুই দেখতে পেলো না সে।অন্ধকারে নিমজ্জিত সব।ক্রমশ আম্বের এর বুকের বা’পাশটা ভারী হতে লাগলো।এক চাপা কষ্ট মুছড়ে দিচ্ছে তাকে।চোখ ঘোলা হতে শুরু করলো।পা দুটোও ধীরে ধীরে অবশ হতে লাগলো।আম্বের নিজেকে সামলায়।মাহাদ কে সত্যিই ভালোবেসে ছিলো।কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় নয়।আম্বের ঘুরে দাঁড়ায়।সে আর মায়া বাড়াতে চায় না।হাত উঁচু করে দরজার লক এ হাত লাগাতেই একটা মিষ্টি সুরেলা কন্ঠ বেজে উঠে।আম্বের এর শরীর হিমালয় পর্বতের মতো জমতে থাকে সেই আওয়াজ এ।তার নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে যায়।নিজেকে আবিষ্কার করে এক ভয়ংকর মায়াজালে আচ্ছন্ন।এই কন্ঠ সে চিনে।আম্বের এর চোখে উপচে পড়ে বর্ষনের স্রোত।ঘন ঘন নিঃশ্বাসের সাথে কম্পন।
চইলা কেন যাও রে কন্যা,চইলা কেন যাও?
তোমার লাগি অন্তর আমার করে রে আনচান।।
তুমি আমার আন্ধার ঘরের চান্দেরই আলো
এই না জীবন ধইরা তোমার বাইসাছি ভালো
তোমার তরে জীবন আমার কইরাছি দান
আমার মরা বাঁচা এখন তোমার প্রতিদান
চইলা কেন যাও রে কন্যা,চইলা কেন যাও
তোমার লাগি অন্তর আমার করে রে আনচান
আন্ধার রাইতে জোনাই জ্বলে তারই আলোর ছায়
দেইখা তোমার চান্দের এই মুখ ভুলি কেমনে হায়
সুবাস ভরা ফুল তুমি তোমার অঙ্গখানি
তোমার এই রূপ দেইখা হারায় আমার নজরখানি
তোমায় ছাড়া এখন আমার বাঁচা হলো দায়
এ জীবনে তোমার ছাড়া আর কিছু না চাই
——-তানভি
গান শেষ হতেই পুরো ফ্লোর এর লাইট জ্বলে উঠে।মাহাদ কে দেখেই আঁতকে উঠে আম্বের।কাউচে বসে ফ্লোরে অক্ষি নিবদ্ধ করে রেখেছে মাহাদ।ঘাড় ঘুরিয়ে আম্বের এর দিকে তাকাতেই আম্বের এর প্রান আত্না ধড়ফড় করতে থাকে।মাহাদ এর চোখ দুটো দিয়ে যেনো অগ্নিলাভা বিচ্ছুরিত হচ্ছে।ধীরগতিতে উঠে দাঁড়ায় মাহাদ।নরম পায়ে হেঁটে আম্বের এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আম্বের তার প্রশস্ত আঁখি মেলে রেখেছে।শ্বাসনালী কম্পিত হচ্ছে বেগতিক হারে।মাহাদ আম্বের কে টেনে নিজ বাহুতে আবদ্ধ করে।আম্বের তার মাথা মাহাদের বুক থেকে হলকা দূরত্বে সরিয়ে মাহাদ এর দিকে তাকিয়ে আছে।অনুরক্তি গলায় মাহাদ বললো—
“আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চান মিস সুগন্ধি !থাকতে পারবেন আমাকে ছাড়া!
আম্বের কোনো কথা বললো না।সে আসলে কথা বলতে চাচ্ছে না।গলায় আটকে আছে তার কথা।ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আম্বের মাহাদ এর দিকে।মাহাদ দুর্বোধ্য হাসলো।কোলে তুলে নেয় আম্বের কে মাহাদ।আম্বের নিরব,নিথর,নিশ্চল।কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।মাহাদ এর ওই চোখ তার ভেরতটা কাঁপিয়ে দিচ্ছে যেনো এখনই সব শেষ করে দিবে।সিড়ি বেয়ে উঠতে থাকে মাহাদ। বিগলিত গলায় বললো—
“ছোটবেলায় একবার বাবা আমাকে বাইরে যেতে না দেওয়ার জন্য ঘরে আটকে রেখছিলো।আর আমি জানালার গ্রীল কেটে বাইরে চলে যাই।বাবা এসে আমাকে আর খুঁজে পান না।এখানে ক্ষতি টা কার হলো বলেন তো!
বাবার।আমাকেও আটকাতে পারলো না আর টাকা খরচ করে জানালার গ্রীলও লাগাতে হলো।আমার বাবা বোকা।তার বোকামির জন্য আমাকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে।কিন্তু আমি বোকা নই।আমি আপনাকে কোথাও যেতে দিবো না।”
মাহাদ আম্বের কে নিজের ঘরে নিয়ে যায়।পা দিয়ে ধাক্কা মেরে দরজা ভেজিয়ে দেয়।আম্বের কে বিছিনায় নামায়।চুপচাপ শুয়ে আছে সে আর চোখ আবদ্ধ করে রেখেছে মাহাদ ওই স্নিগ্ধ,শান্ত,ভয়ংকর চেহারায়।মাহাদ আম্বের এর পাশে বসে একদম ঝুঁকে পড়ে তার উপর।মাহাদ এর উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ছুঁয়ে যাচ্ছে আম্বের কে।শীতল গলায় মাহাদ বললো—
“আপনি ভাবলেন কী করে আমি আপনাকে যেতে দিবো!
আম্বের নির্বিকারভাবে চেয়ে আছে।মাহাদ তার ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ঘষা মারে আম্বের এর নিচের ঠোঁটে।আরেকটু নিচু হয়ে আম্বের এর অধরপল্লব হতে দীর্ঘ সময় নিয়ে শুঁষে নিতে থাকে তার অধরামৃত।
আম্বের শক্ত হয়ে শুয়ে আছে।চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে শীতল জল।নিজেকে সংবরণ করে দু হাতে খামচে ধরেছে বিছানার চাদর।
মাহাদ তার দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে আম্বের এর চোখের পানি মুছে দেয়।স্মিত গলায় বললো—
“কাঁদবেন না প্রজাপতি।এখনো অনেক কাঁদতে হবে আপনাকে।আপনার আমার জীবনে আসা উচিত হয়নি।ডেসটিনি আপনাকে আমার কাছে পাঠিয়েছে।যতদিন আমার নিঃশ্বাস চলবে ততদিন আপনাকে আমার কাছেই থাকতে হবে।আপনি যেতে চাইলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ করে চলে যাবেন।কিন্তু আমি জানি আপনি তা পারবেন না।কারণ ভালোবাসার মানুষের মৃত্যু কামনা করা যায় না।আর আপনি আমাকে সত্যিই ভালোবাসেন।”
মাহাদ তার ওষ্ঠদ্বয় আম্বের এর কানের কাছে নিয়ে হিসহিসিয়ে বললো—
“আর কখনো এমন করবেন না।তাহলে যে রঙিন পাখা মেলে আপনি আমার ভালোবাসার বাগানে ঘুরে বেরিয়েছেন তা কেটে দিতে আমি দ্বিতীয় বার ভাববো না।”
আম্বের এর ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে।কিন্তু সে পারছে না।তার চোখের জল তাকে মানছে না।তারা আপন গতিতে নিরবধি বয়ে চলছে।আম্বের নিজের দু চোখ বুজে নেয়।
মাহাদ তার মুখ ডোবায় আম্বের এর গলায়।এক সুদীর্ঘ শ্বাস টেনে নেয় মাহাদ।
কিছু সময় পর আম্বের তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মাহাদের বেপরোয়া পুরুষালী স্পর্শ অনুভব করে।নিজেকে ধরে রাখার যথার্থ চেষ্টা করে আম্বের।কিন্তু বেশিসময় তা ধরে রাখা সম্ভব হয় না।মিশে যেতে থাকে মাহাদ এর সুগন্ধি প্রজাপতি তার সাথে।
চলবে,,,