#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ৪
লিখাঃ তাজরিয়ান খান তানভি
ঘন কুয়াশা ধীরে ধীরে মিহি কুয়াশায় রূপ নিয়েছে।সূর্যি মামা উঁকি দিচ্ছে তার মিষ্টি হাসি নিয়ে।স্নিগ্ধ,মিষ্টি রোদ ঝলমলে হয়ে উঠেছে।আজ এক অন্যরকম সকাল।শীতকালে এমনটা প্রায় বিরল।
আজ ভালো ঘুম হয়েছে মাহাদ এর।সেই দুঃস্বপ্নও আজ আসেনি তার দুয়ারে।নিজের ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে আছে মাহাদ।তীক্ষ্ম দৃষ্টি রেখেছে তার গার্ডেনে।আম্বের,আহমেদ আর ইমু দাঁড়িয়ে আছে।আহমেদ গাছে স্প্রে করছে।শুধুমাত্র গাছগুলোর সঠিক পরিচর্যার জন্য আহমেদ কে রাখা হয়েছে।একজন মালি নয় বাবার মতো আগলে রাখে আহমেদ প্রতিটি গাছকে।এতো যত্ন করা সত্ত্বেও মাহাদ কখনো তার বাগানের ফুলের সৌরভ নেয় না।
আম্বের কে দূর থেকেই আপাদমস্তক দেখছে মাহাদ।কেনো মেয়েটার প্রতি তার এতোটা আগ্রহ তা সে জানে না।মাহাদ এর আশেপাশে এর চেয়েও হাজারগুন সুন্দরীদের অবাধ বিচরণ।এক কথায় তার বেড পার্টনার হওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে তারা।কিন্তু আম্বের!
কেনো আম্বের কেই তার ভালো লাগে!
একদম সাধারণ একটা মেয়ে।অতি সাধারণ।সবার মতো তারও দুটো হাত,দুটো পা,চোখ,মুখ আছে।গায়ের রঙটাও মলিন।তাও কেন মাহাদ কে তার এই সাধারণ রূপ ই টানে!
কী বিশেষত্ব তার!মাহাদ আবইয়াজ এতোটাও ঠুনকো নয়।তাহলে কী সে সেই কারণ যা মাহাদ কে এতোটা টানে!
হঠাৎ মাহাদ এর ঘ্রাণেন্দ্রিয় সচকিত হয় আম্বের এর সেই সুগন্ধে।মাহাদ চোখ বন্ধ করে এক গাঢ় নিঃশ্বাস টেনে নেয়।
তাহলে কী এই সেই কারণ!
নাহ।এ হতে পারে না।মাহাদ কপাল কুঁচকে বিড়বিড় করে।তার জীবনে কোনো নারী আসতে পারে না।কখনই না।
ঘরের ভিতর প্রবেশ করে মাহাদ।
,
,
আহমেদ এর কাজ শেষ।নরম গলায় মেয়েকে বললেন–
“চল মা কাজ শেষ।আবার বিকেলে স্প্রে দিতে হবে।গাছগুলোর পাতাতে কেমন ফোঁটা ফোঁটা পড়েছে।মাহাদ স্যার জানলে খুব রাগ করবেন।”
মাহাদ এর কথা শুনতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে আম্বের।একটা অসহ্য,বর্বর লোক!
কাল রাতের কথা মনে পড়তেই আম্বের এর ইচ্ছে হচ্ছে মাহাদ এর মুখে কেরোসিন ঢেলে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়।চুমু খাওয়ার খায়েশ সারা জীবনের জন্য মিটে যাক।
বিলুপ্তপ্রায় গয়াল কোথাকার!
আম্বের মৃদু গলায় বললো—
“তুমি যাও বাবা।আমি আর ইমু পরে আসছি।”
আহমেদ চোখে হাসলেন।বিগলিত গলায় বললেন—
“ফুল ছিঁড়িস না মা।মাহাদ স্যার এইসব পছন্দ করে না।”
আম্বের কিঞ্চিৎ মুখ বাঁকিয়ে তেজি গলায় বললো–
“এতো কেন ভয় পাও তুমি ওই লোকটাকে!গয়াল একটা।”
গয়াল শুনেই খলখল করে হেসে উঠে ইমু।আর ওর সাথে আম্বের।আহমেদ নিগূঢ় দৃষ্টিতে মেয়েকে পর্যবেক্ষন করছে।মেয়েটাকে এতোটা খুশি দেখা হয়নি অনেক দিন।কী করে হতো।ওর ভালোর জন্যই সবসময় নিজের কাছ থেকে ওকে দুরে রেখেছে।এই শহর ওর জন্য বিপজ্জনক।কিন্তু এখন বাধ্য হয়ে ওকে এখানে আনতে হলো।কিন্তু আহমেদ দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।তাকে যে আম্বের কে নিরাপদ রাখতেই হবে।
আম্বের এর মায়া মাখা গলায় সম্বিৎ ফিরে আসে আহমেদ এর।আম্বের ঝুমঝুমিয়ে বললো–
“দাঁড়িয়ে আছো কেন বাবা?
যাও।”
আহমেদ স্মিত হেসে চলে যায়।আম্বের আর ইমু বেশ কিছুক্ষন খোশগল্পে মেতে থাকে।ইমু ওর স্কুলের কথা বলে।
ওদের অগোচরেই পেছনে এসে দাঁড়ায় মাহাদ।স্মিত গলায় বললো–
“ইমু!
পড়ালেখা নেই তোমার?
মাহাদ এর গলার স্বরেই হৃদয় কেঁপে উঠে ইমুর।শুকনো গলায় আনম্র হয়ে ইমু বললো—
“আছে।”
মাহাদ শক্ত গলায় বললো–
“তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
ইমু দম বন্ধ করে এক দৌড় দেয়।বাঘের মুখ থেকে তাকে বাঁচতে হবে।ইমুর দৌড় দেখে গা দুলিয়ে হাসে মাহাদ।স্থির হয় মাহাদ।চোখের কোণ ক্ষীন করে গভীর দৃষ্টি নিপাত করে আম্বের এর দিকে।একদম ইমুর জমজ বোন।ইমুর মতোই স্বভাব।মাহাদ মিচকি হাসে।আম্বের মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।নিশ্চল,নিস্তব্ধ,নীরস।মাহাদ বিগলিত গলায় বললো–
“কেমন আছেন মিস সুগন্ধি?
আম্বের কিছু বললো না।তাকাতেই ইচ্ছে করছে না এই কলুষিত লোকটার দিকে।অযাচিত ধরণীর আবর্জনা।
মাহাদ শান্ত গলায় আবার বললো—
“আই থিংক আপনি কথা বলতে পারেন।তাহলে আমার সামনে বলতে কী সমস্যা?
আম্বের ভ্রু কুঁচকে কিড়মিড় করে দাঁত।এক ভ্রু উঁচিয়ে মাহাদ এর দিকে তাকায়।লোকটা কীভাবে তাকিয়ে আছে!ছিঃ!
মাহাদ আনমনেই হাসে।ভাবে,মেয়েটার দম আছে।ভাঙবে তবু মচকাবে না।মাহাদ একটু নিচু হয়ে এক গবীর নিঃশ্বাস টেনে নেয়।আম্বের এর হাত নিশপিশ করছে।লোকটার নাক টা যেনো মরার আগে একবার ফাটিয়ে যেতে পারি।
এতোকিছুর পরেও আম্বের কথা বললো না।মাহাদ গভীর শ্বাস ফেলে।ফিচেল হেসে স্বাভাবিক গলায় বললো—
“আপনি কোন ব্র্যান্ডের পারফিউম ইউস করেন?
আম্বের কঠিন দৃষ্টিতে তাকায়।মাহাদ এর মনে হলো এ যেনো হরিণী চোখ নয় জ্বলন্ত অগ্নিশিখা।মাহাদ শান্ত গলায় বললো—
“ভাবছিলাম এই ব্র্যান্ডের পারফিউম আমার গার্লফ্রেন্ড কে গিফ্ট করবো।আসলে কী বলেন তো এরা যতই আমার কাছে আসে না কেন সবকিছু একদম ফিলিংলেস।
বাট হোয়াই?
আম্বের ফোঁস ফোঁস করতে থাকে।মাহাদ এর স্পষ্ট নজর আম্বের এর বুকের উঠানামায়।আম্বের রেগে যাচ্ছে তা বোঝার বাকি নেই মাহাদ এর।মাহাদ গম্ভীর গলায় বললো—
“আর কখনো পারফিউম ব্যবহার করবেন না।মেয়েদের সুগন্ধি ব্যবহার করা হারাম।
কিন্তু তা সুন্নত তখনই যখন কোনো নারী শুধুমাত্র তার স্বামীর জন্য ব্যবহার করবে। সুগন্ধি ব্যবহার করার নিয়ম অর্থাৎ একজন নারী শুধুমাত্র ঘরে তার স্বামীকে খুশি করার জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করবে।
রাসুল (সাঃ)বলেছেন–
পুরুষেরা গন্ধ পাবে এমন উদ্দেশ্যে আতর বা অন্য কোন সুগন্ধি মেখে কোনো মহিলা যদি পুরুষদের মাঝে চলাফেরা করে তাহলে সে একজন যিনাকারী মহিলা হিসেবে গন্য হবে।
—-(আহমাদ ৪/৪১৮।ছহীহুল জামে হাদীস।)
পর্দার সাথে হলেও কোনো মহিলা পারফিউম বা সেন্ট ব্যবহার করে বাইরে যেতে পারবে না।নবী কারীম(সাঃ) বলেন—
প্রত্যেক চক্ষুই ব্যাভিচারী।আর কোনো মহিলা যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো মজলিস(পুরুষ)পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তবে সে ব্যাভিচারীণী।”
—-(আবু দাউদ।তিরমিযী।নাসাঈ।ইবনে হিব্বান।ইবনে খুযাইমাহ।হাকেম।সহীহুল জামে ৪৫৪০।)
চোখ বড় বড় করে মাহাদ এর কথা শুনছে আম্বের।আর তাতেই আরো ক্ষেপে উঠে আম্বের।মনে মনে অশ্রাব্য গালিগালাজ করে মাহাদ কে।ইচ্ছে করছে কুঁচি কুঁচি কর কেটে মরিচ জলে ভিজিয়ে চিবিয়ে খেতে।
মাহাদ হতাশ হলো।এই মেয়ে কী কখনই কথা বলবে না!
এক শীতল দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে মাহাদ এর বুক চিরে।নিজেকে কেমন ইউজলেস মনে হচ্ছে।মাহাদ আবইয়াজ শেষ পর্যন্ত একটা সাধারণ মেয়ের কাছে হেরে যাবে!
আম্বের এর সুতীক্ষ্ম চোখ জোড়া মাহাদ কে গভীরভাবে দেখছে।মাহাদ অধর বাঁকিয়ে হাসে।দুষ্ট গলায় বললো–
“আপনি আগের জনমে কী কোনো রাজার মেয়ে ছিলেন নাকী!
আম্বের বিরক্তি আর উৎসুক চোখে তাকায় মাহাদ এর দিকে।মাহাদ বিগলিত হেসে আবার বললো–
“মানে বলছিলাম আপনি মনে হয় তখন গোলাপের পাঁপড়ি ছড়ানো দুগ্ধজলে অবগাহন করতেন।তাই এতো সুগন্ধ আপনাতে।যাতে বিমোহিত এই মাহাদ আবইয়াজ।”
কটমট করছে আম্বের এর দাঁত।মাহাদ এর ঠোঁট দুটোতে একটা বিষাক্ত কামড় বসাতে পারলে এখন শান্তি পেতো আম্বের।
মাহাদ বাঁকা হাসলো।গলার স্বর স্মিত করে বললো–
“মি.আহমেদ কে দেখে একদম মনে হয় না সে আপনার বাবা।
আপনার মায়ের কী কোনো রাজার সাথে পরকীয়া ছিলো নাকী!
ঝাঁঝিয়ে উঠে আম্বের।আর চুপ থাকবে না সে।একটা অসহ্যকর লোক!ভাবে কী নিজেকে!যা নয় তা বলবে!
নিজে যেমন বারো প্লেটের অন্নে মুখ লাগায় সবাই কে তেমন মনে করে!
ক্রোধিত গলায় আম্বের বললো—
“কী বলছেন এইসব।আর একটা বাজে কথাও বলবেন না আমার মায়ের নামে।”
মাহাদ প্রসন্ন হাসে।সরস গলায় বললো—
“হায় মেরে মারজাওয়াবা!
এট দ্যা ইন্ড আপনি কথা তো বললেন।শত রঙা প্রজাপতির রঙ ছড়িয়ে পড়ুক আপনার জীবনে মিস সুগন্ধি।”
আম্বের এর আর দাঁড়াতে ইচ্ছে হলো না।মাহাদ কে পাশ কাটিয়ে যেতেই মাহাদ আম্বের এর এক হাত মুছড়ে ধরে।আম্বের এর পিঠে ঠেকিয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে।হালকা ঝুঁকে আম্বের এর কানের কাছে গিয়ে নরম গলায় বললো—
“আপনি আজও ওড়না ঠিক জায়গায় পড়েন নি মিস সুগন্ধি।সব জিনিস সবার জন্য নয়।আপনাকে দেওয়া কিছু জিনিস একান্তই আপনার প্রিয় মানুষের জন্য।তা আপনার কাছে তার দেওয়া আমানত।তার রক্ষনাবেক্ষন করতে শিখেন।”
মাহাদ এর মুখঃনিসৃত প্রতিটি ধ্বনি আম্বের এর শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দেয়।মাহাদ এক শীতল ফুঁ ছুঁড়ে দেয় আম্বের এর কানে।শিরশির করে উঠে আম্বের এর শরীর।মোহবিষ্ট গলায় মাহাদ আবার হিসহিসিয়ে বললো–
“কালকের জন্য সরি।আসলে কি হয়েছে বলেন তো!আপনার সুগন্ধে এতোটা হারিয়ে গেছিলাম যে বুঝতেই পারিনি মিষ্টি খাচ্ছি না আপনার ঠোঁট !
সরি প্রজাপতি।”
আম্বের দুম করে তার কনুই দিয়ে এক গুঁতো মারে মাহাদ এর পেটে।হাতের মুঠো একটু শিথিল হতেই গটগট করে পা চালায় আম্বের।
মাহাদ গা দুলিয়ে হেসে উঠে।আম্বের এর শরীরের সেই অকৃত্রিম সুগন্ধ এখনো মেখে আছে মাহাদ এর শরীরে। মাহাদ নির্ণিমেষ তাকিয়ে থাকে আম্বের এর দিকে।আনমনেই বলে উঠলো–
“আমার আমি কে হারিয়েছি তোমার বাহুডোরে
বদ্ধ হৃদয়ের অনুভূতি যা ঘুমন্ত সহস্র দিবস জুড়ে,
তোমার সুগন্ধ মাতাল হাওয়া বইছে চারিপাশে
আমার হৃদয়ের সুগন্ধি প্রজাপতি আমার জীবনডোরে।”
—–তানভি
নিজের ঘরের জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে ইমু।বিবশ তার চাহনি।রহিম শেখ বিছানা ঝাড় ছিলেন।ছেলেকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে নম্র গলায় বললেন–
“কির ইমু,বই খাতা ছড়িয়ে রেখে ওইখানে কেন দাঁড়িয়ে আছিস?
ইমু কিছু বললো না।সে কিছু একটা প্রগাঢ়ভাবে ভাবছে।একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে ফিকে গলায় বললো–
“বাবা,মাহাদ স্যার কী কেশবালা বিয়ে করবে!
ইমুর কথায় চকিত হয় রহিম।এইটুকু এক ছেলে কী বলছে এইসব!
মাহাদ স্যার আর আম্বের এর বিয়ে!ধমকে উঠে রহিম।কঠিন গলায় বললেন–
“তোকে না বলেছি আম্বের কে কেশবালা বলবি না!
ইমু নিরব নিথর।তার মস্তিষ্ক জুড়ে ক্ষেপণাস্ত্রের মতো বিঁধে যাচ্ছে একটু আগে দেখা মাহাদ আর আম্বের এর ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত।গলা জড়িয়ে আসে ইমুর।নির্বিকার ভাবে শান্ত গলায় ইমু বললো—-
“আমি কখনো মাহাদ স্যার কে কেশবালা কে বিয়ে করতে দিবো না।মাহাদ স্যার কেশবালার যোগ্য না।
কেশবালা শুধু…..।”
ইমু তার কথা শেষ করলো না।চুপচাপ তার পড়ায় মনোযোগ দেয়।কিন্তু কিছুতেই সে ভুলতে পারছে না মাহাদের এই অযাচিতভাবে আম্বের কে ছোঁয়া।তার প্রশ্ন,কেশবালা কেন কিছু বললো না!সে কী ইচ্ছে করেই কিছু বলে নি!নাকি সেও তার মতো মাহাদ কে ভয় পায়!
রহিম হতাশ চোখে ছেলের দিকে তাকায়।আম্বের এর সাথে দেখা হওয়ার পর ইমু অদ্ভুত আচরণ করে।এইতো সেদিন আম্বের গোসল করে ওর ভেজা চুল মেলে দিয়ে বসে ছিলো মিষ্টি রোদে।ইমু আড়াল থেকেই এক প্রগাঢ় দৃষ্টিতে দেখছিলো আম্বের কে।নিজের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে একটা সস্তা পায়েল কিনে এনেছিলো আম্বের এর জন্য ইমু।আম্বের তা সানন্দে গ্রহণ করে।উচ্ছ্বাসিত হয়ে একটা চুমু খেয়েছিলো বাড়ন্ত কিশোর ইমুর গালে।সেদিনের পর প্রায় সময় নিজের গাল দেখে আয়নায় ইমু।নিজেকে দেখে।
এইসব ভাবতেই রহিম শেখ ঘাবড়ে যান।ছেলেটার কোনো রোগ হলো না তো!!
,
,
ত্রস্ত পায়ে ঘরে ঢোকে আম্বের।হাঁপিয়ে উঠেছে সে।ঘন ঘন নিঃশ্বাস যেনো বাতাস ভারী করে ফেলছে।এই ঠান্ডতেও ঘাম ছুটছে আম্বের এর শরীর থেকে।
ওয়াশরুম থেকে পানির কলকল শব্দ আসছে।আম্বের ধীরে ধীরে স্বাভাবিক শ্বাস নিতে শুরু করে।অগোছালো পায়ে বিছানায় বসার জন্য পা বাড়ায়।ঠিখ তখন নিজের অজান্তেই আম্বের এর চোখ পড়ে মিররে।আম্বের স্থির হয়ে দাঁড়ায়।নাকের উপর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার।হাতের উল্টো পাশ দিয়ে এক ঘষায় তা মুছে নেয়।
আম্বের খেয়াল করে তার ওড়না এখনো তার গলায় জড়ানো।আম্বের নিজের হাতেই তার ওড়না সরিয়ে নেয়।নিজেকে আদ্যোপান্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে আম্বের।
প্রজাপতি!সুগন্ধি প্রজাপতি!
সে কী আসলেই সুগন্ধি প্রজাপতি!আর কীসের সুগন্ধের কথা বলে ওই ফিল্মস্টার!আম্বের নিরুঙ্কুশ ভেবে চলে।
নিজের শরীরে নাক বুলায় আম্বের।কই এমন কিছু তো নয়।লোকটা কী তবে তাকে বোকা বানাচ্ছে!
কিন্ত কেন?তাতে তার কী লাভ?
আম্বের নিজের শরীরের দিকে তাকায়।তার গায়ের রঙ ওতোটা উজ্জ্বল নয়।আরেকটু ফর্সা হলে কী বা হতো!তবুও তার বাবা বলে সে নাকি একদম পরী।আসলেই কী সে পরী!
কই তার তো পাখা নেই।আর পরীরা তো খুব সুন্দর হয়।সে তো সুন্দর নয়।ভাবতেই মনটা বিষন্নতায় ভরে উঠে আম্বের এর।
কিন্তু তার চোখ আটকায় তার বুকে।আর ভাবে,লোকটা এতো নোংরা কেন?সব সময় তার বুকের দিকে নজর দেয়।তার মাঝে কী আর কিছু দেখার নেই!
আম্বের দুম করে ভেবে উঠে।আসলে মাহাদ এর কোনো দোষ নেই।দোষ তার চোখের।সারাদিন স্বল্প বসনা নারীদের দেখে মাথা ঠিক থাকে।যার শরীরের যত ভাঁজ ফুটে উঠবে তার চাহিদাও তত বেশি।
আম্বের এর মনে মনে খুব রাগ হলো।লোকটা তাকে তাহলে কী বিচ্ছিরি ভাবে দেখে।নাহ।আর কখনো তার সামনে এভাবে যাবে না সে।
এলোমেলো ভাবনার মাঝেই আম্বের টের পায় কেউ তাকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে।আম্বের গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে পড়ে নেয়।তার এখন সব খানেই মাহাদ এর ভয়।মাহাদ এর ওই বাদামী চোখের মনি কী যেনো বলতে চায়।কিন্তু আম্বের তা শুনতে চায় না।কিছুতেই না।
দরজায় দিকে তাকিয়ে চকিত হয় আম্বের।এতোটা গভীরভাবে তো ও আম্বের কে আগে কখনো দেখেনি।চোখ জুড়ে একরাশ ক্ষোভ আর হতাশা।ম্নান মুখে বিরস অঙ্গভঙ্গি।আম্বের উচ্চ গলায় বললো—
“তুই?
চলবে,,,