বদ্ধ হৃদয়ের অনুভূতি পর্বঃ৩৯

0
3285

#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ৩৯
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

হসপিটালের বেডে স্থির হয়ে বসে আছে মাহাদ।নৈঃশব্দ চারপাশ।মাহাদ এর গা ঘেঁষে বসে আছে আম্বের।মাহাদ এক হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে আছে।আম্বের এর সরল দৃষ্টি আর ক্লান্ত দেহের সমস্ত ভার মাহাদ এর শরীরে।তাদের সামনেই বসে আছে মিশ্মিয়া।নিগূঢ় দৃষ্টি তার।আম্বের তার চক্ষু মুদন করে মাহাদ এর বুকের সাথে আরো লেপ্টে যায়।

আম্বের এর অবস্থা দেখে তখনই মাহাদ কল করে মিশ্মিয়া কে।সেই ভোরের প্রথম প্রহরেই আম্বের কে নিয়ে আসে নিকটবর্তী হসপিটালে।তেমন কিছু হয়নি।কিন্তু আম্বের এর শরীর অনেক উইক।

মিশ্মিয়া ঝাঁঝানো গলায় বললো—

“আমি তোমাকে আগেই বলেছি আম্বের তোমাকে নিজের খেয়াল রাখতে হবে।নাহলে কী হবে তা তুমি ভালো করেই জানো।আজ যদি কিছু একটা হয়ে যেতো!

আম্বের সব শুনলো।কিন্তু তার চোখের পাল্লা যেনো বড়ই ভারি।সে সেভাবে মাহাদ এর বুকে মুখ গুঁজে রইলো।মিশ্মিয়া আরো কিছু বলতে চাইলে মাহাদ ইশারা করে তাকে চুপ করিয়ে দেয়।ঘাড় নিচু করে আম্বের এর মাথায় চুমু খেয়ে নম্র গলায় বললো—

“সুগন্ধি!

আম্বের অস্ফুট আওয়াজ করলো।

“হু।”

মাহাদ অনুনয়ের স্বরে বললো—

“তাকান আমার দিকে।”

আম্বের ঈষৎ তার অক্ষিপুট মেলে মাথা উঁচু করে তাকায়।মাহাদ আম্বের এর কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে বললো—

“আপনি রেস্ট করেন।আমি আসছি।”

আম্বের নরম গলায় অস্ফুটভাবে বললো—

“কোথায় যাবেন আপনি?

মাহাদ অধর ছড়িয়ে চোখে হেসে শান্ত গলায় বললো–

“কোথাও না।ডক্টর এর সাথে কথা বলে আসছি।”

আম্বের চোখের পাতা দু বার ঝাপটে আবার কাতর নয়নে তাকিয়ে রইলো।মাহাদ আলগোছে আম্বের কে শুইয়ে দেয়।

করিডোরে এসে দাঁড়ায় মাহাদ আর মিশ্মিয়া।রাগে দপদপ করছে মাহাদ এর মস্তিষ্ক।করিডোরের রেলিং এ হাত রেখে তা মোচড়াতে থাকে।মাহাদ এর হাতের রগ ফুলে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।চোয়াল শক্ত করে অগ্নিচোখে তাকিয়ে আছে নিচের দিকে।মিশ্মিয়া রেলিং এর সাথে উল্টো হয়ে মাহাদ এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।হেয়ালি গলায় বললো—

“এখন এতো রাগ করে কী হবে!আমি তোমাকে সেদিন ই বলেছি আম্বের এর দিকে খেয়াল রাখো।আম্বের এখনো পুরোপুরি স্ট্যাবল নয়।শি ইজ ফিজিক্যালি উইক।”

মাহাদ ফোঁস করে এক দম ছাড়ে।দাঁতে দাঁত নিষ্পেষণ করতে থাকে।কড়া গলায় বললো—

“আমি ভাবতেও পারি নি এমনটা হবে।”

মিশ্মিয়া জোর গলায় বললো–

“ভাবা উচিত ছিলো।আমি তোমাকে আগেই সাবধান করেছি।”

মাহাদ অনুযোগের সুরে বললো—

“সরি।”

মিশ্মিয়া রাগী গলায় বললো—-

“এখন সরি বলে কী লাভ!
যা হওয়ার হয়েছে।আম্বের হয়তো আগের জন্মে কিছু পূন্য করেছে তাই ওর বাচ্চাটা এই যাত্রায় বেঁচে গেলো।”

মাহাদ তার নিম্নমুখী অরুনলোচন চোখ দুটি ঘাড় বাঁকিয়ে মিশ্মিয়ার দিকে করে গম্ভীর গলায় বললো–

“ভুলে যেওনা ওই বাচ্চার বাবা আমি।”

মিশ্মিয়া উপহাসমিশ্রিত গলায় বললো—

“যদি তাই মনে করো তাহলে এমন কেন করছো!

“সত্য জানা তার অধিকার।”

মিশ্মিয়া বিদ্রুপপূর্ণ হাসে।শক্ত গলায় বললো—

“যদি তাই হয় তাহলে আদ্রিতার কথাও আম্বের এর জানা উচিত।”

মুহূর্তেই মাহাদ জ্বলে উঠে বললো—

“কী বলতে চাও তুমি?

মিশ্মিয়া নীরব ও শান্ত গলায় বললো—

“তুমি ভালো করেই জানো আমি কী বলতে চাই।মেয়েটাকে ধুঁকে ধুঁকে কেন মারছো!সব সত্য ওকে বলে দাও।হয় বাঁচবে না হয় মরবে।”

মাহাদ প্রদৃপ্ত গলায় বললো—

“মিশ্মিয়া!!

মিশ্মিয়া বাঁকা হেসে তীর্যক গলায় বললো—

“এইভাবে একের পর এক সত্য জানলে ওর কী হবে তা তো দেখতেই পাচ্ছো!
হয়তো আম্বের কে বাঁচাতে পারবে কিন্তু তোমার সন্তান!
তাকে কী করে বাঁচাবে?

মাহাদ তপ্ত গলায় বললো—

“তা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।আই উইল ম্যানেজ।”

মিশ্মিয়া বিদ্রুপ করে বললো—

“আই উইশ,ইউ উইল ম্যানেজ।চলি।”

মিশ্মিয়া চলে যেতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহাদ।
,
,
,
আজ এক সপ্তাহ হয়েছে আম্বের হসপিটাল থেকে ফিরেছে।তারা তাদের আগের বাসায় ফেরেনি।কুমিল্লা থেকে একটু দূরে আসলেই চৌদ্দগ্রাম।সেখানের ছোট্ট এক এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে মাহাদ।গ্রামীন এলাকায় ততটা শহুরে সুযোগ সুবিধা না থাকলেও মাহাদ এর জন্য একদম উপযুক্ত।বিকেলে বেরিয়ে আম্বের এর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে ফিরেছে মাহাদ।

ফ্ল্যাটে ঢুকেই বিছানায় হাতের জিনিসগুলো রেখে এধার ওধার ঘাড় ঘুরায় মাহাদ।কিচেন এ গিয়ে তাকিয়ে দেখে।কিন্তু আম্বের কে কোথাও দেখতে পায় না মাহাদ।চট করে কিছু একটা ভেবে ধীরপায়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় মাহাদ।মাহাদ এর উপস্থিতি টের পেয়েও কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না আম্বের।একটা হলুদ রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে আম্বের।হালকা হাওয়ায় দোদুল্যমান তার চুল।

আম্বের এর নিস্পলক দৃষ্টি একটা ছোট্ট বাচ্চার দিকে।তাদের ফ্ল্যাটের সাথেই একটা টিনশেড বাসা।দুই সারি ঘরের মাঝখানে হাটাচলার জায়গা।চারতলা থেকে স্পষ্ট আম্বের দেখতে পাচ্ছে একটা ছোট্ট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে তার মা।বাচ্চাটি খাবার মুখে নিয়ে চুপ করে আছে।বেশ কিছু সময় এমন চলতে থাকে।তাই রাগে বাচ্চাটির মা একটা চড় বসিয়ে দেয় তার গালে।ঝনঝন করে উঠে আম্বের এর শরীর।তার কাতর নয়ন চেয়ে আছে নির্নিমেষ।স্বশব্দে কেঁদে উঠে বাচ্চাটি।

মাহাদ নরমপায়ে আম্বের এর পাশ ঘেঁষে এসে দাঁড়ায়।আম্বের এর কাঁধে চিবুক রেখে শান্ত গলায় বললো—

“এখানে কী করছেন প্রজাপতি?

আম্বের এর অভিব্যক্তির কোনো পরিবর্তন হলো না।মাহাদ ভ্রু কুঞ্চি করে জিঙ্গাসু গলায় আবার বললো—

” কী হয়েছে আপনার?

আম্বের সরে দাঁড়ায়।মাহাদ এর দিকে না তাকিয়েই ঘরে গিয়ে বিছানার উপর বসে।মাহাদ ত্রস্তপায়ে ভিতরে আসে।আম্বের এর দিকে অভিনিবেশ করতেই মাহাদ খেয়াল করে আম্বের এর পা দুটো কাঁপছে।শুকনো ঢোক গিলে মাহাদ।ব্যস্ত হয়ে আম্বের এর পাশে বসেই উদ্বেলিত গলায় বললো—

“কী হয়েছে আপনার!
শরীরে খারাপ লাগছে?

মাহাদ তার হাত আম্বের এর শরীরে ছোঁয়াতেই ঝাটকা মেরে উঠে দাঁড়ায় আম্বের।মাহাদ অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকে।আম্বের এর চোখে মুখে লালচে আভা।অধর ছড়িয়ে শ্বাস নেয় মাহাদ।উঠে দাঁড়িয়ে কাতর গলায় বললো—

“কী হয়েছে আপনার!এমন করছেন কেন?

আম্বের রাগে ফুঁসতে থাকে।দাঁতে দাঁত চেপে বড় বড় নিঃশ্বাস টেনে বললো—

“কে হই আমি আপনার?

মাহাদ বিস্মিত হয়ে বললো—-

“এইসব কী বলছেন আপনি?

আম্বের ঝাঁঝানো গলায় বললো—

“ঠিক ই বলছি আমি।কে হই আমি আপনার?কী সম্পর্ক আপনার সাথে আমার?

মাহাদ বিচলিত হয়।তার ঘন নিঃশ্বাস পড়তে থাকে।ঝিমঝিম করে তার শরীর।শরীরের নিম্নাংশ হঠাৎ ই বিবশ মনে হচ্ছে তার।ভীত চোখে তাকিয়ে রইলো মাহাদ আম্বের এর দিকে।আম্বের এর ওই দীপ্ত বদন মাহাদ কে ভয়ে আড়ষ্ট করে।সে কোনো কিছুর বিনিময়ে তার প্রজাপতিকে হারাতে চায় না।নিজেকে শান্ত করে মাহাদ।নিঃশ্বাসের গড়পড়তা ঠিক করে অবিচলিত গলায় বললো—

“আপনি আমার স্ত্রী।আমার অর্ধাঙ্গীনি।আমার সত্তা।আমার প্রাণপ্রদীপ।আমার সন্তানের মা।আমার ভালোবাসার সুগন্ধি প্রজাপতি।”

ঝামটা মেরে উঠে আম্বের। তীক্ষ্ম গলায় বললো—

“নাহ।মিথ্যে বলছেন আপনি।যদি আমি আপনার স্ত্রী হই তাহলে আদ্রিতা কে?

আম্বের একটা কাগজ এগিয়ে দেয় মাহাদ এর দিকে।মাহাদ তা হাতে নিয়ে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে।মাহাদ এর হাতে আদ্রিতা আর মাহাদ এর বিয়ের কাবিননামা।
মাহাদ ব্যস্ত গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লো—

“এইটা আপনি কোথায় পেলেন?

জলন্ত অগ্নিশিখার মতো জ্বলজ্বলে গলায় অাম্বের বললো—-

“কেন?ভয় পাচ্ছেন?আপনার কুকীর্তি ফাঁষ হয়ে গেলো তাই?

মাহাদ কিছু সময় চুপ করে রইলো।তার নির্লিপ্ত দৃষ্টি আম্বের এর দিকে।অনুযোগের সুরে বললো—-

“আমি আপনাকে আগেই বলতে চেয়েছিলাম সবটা।কিন্তু আপনি তো জানেন আপনার হেলথ কন্ডিশন ঠিক নেই।তাই…।”

“ও তাই বুজি এতোদিন আমাকে মিথ্যে আশ্বাস দিচ্ছিলেন?

ঝমঝমিয়ে কেঁদে ফেলে আম্বের।আম্বের এর চোখের প্রতিটি নোনতা জলের ফোঁটা যেনো বর্শার মতো বিঁধতে থাকে মাহাদ এর বুকে।অনুনয়ের সুরে মাহাদ বললো—

“প্লিজ শান্ত হোন আপনি।আপনার শরীর খারাপ করবে।আপনি তো একা নন।আমাদের সন্তানও আছে।”

আম্বের থামলো না।অশ্রু বিসর্জিত ধরা গলায় বললো—

“হোক খারাপ।মরে যাই আমি,আমার সন্তান।মুক্তি দিয়ে যাবো আপনাকে।”

মুহূর্তেই রোষভরা কন্ঠে চিৎকার করে উঠে মাহাদ—

” এইসব কী বলছেন আপনি!
সময় দিন আমাকে।বলছি আপনাকে আমি সবকিছু।”

আম্বের ঘোর আপত্তি করে বললো—–

“নাহ।কিছু শুনতে চাই না আমি।আপনি বিবাহিত।ধর্মীয় বিধান মেনে আপনি আদ্রিতাকে বিয়ে করেছেন।সেখানে আপনার আর আমার এই বিয়ের কোনো মূল্য নেই।শেষমেষ আপনি আমাকে আপনার রক্ষিতাই বানালেন মাহাদ!
এই আপনার ভালোবাসা !

মাহাদ নিজেকে শান্ত করার পূর্ণ প্রয়াস করছে।বুক ফুলিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে নিয়ে শান্ত ও স্বাভাবিক গলায় বললো—-

“আদ্রিতা বেঁচে নেই আম্বের।আর আমি আদ্রিতাকে কখনো ভালোবাসিনি।আমাদের বিয়ে ছিলো একটা ডিল ।যার মাধ্যমে আদ্রিতা তার জেদ পূরণ করেছে আর আমি আমার সাফল্যের শিয়রে আরোহন করেছি।
নিজের রাগ আর প্রতিষ্ঠায় এতোটা মত্ত ছিলাম যে জেনেশুনে উনুনের গনগনে আগুনে নিজেকে পুরিয়ে নিঃশেষ করছি তা বুঝতে অনেকটা সময় লেগে যায় আমার।যতক্ষনে বুঝতে পেরেছি আমি অনেকটা দূরে চলে এসেছি নিজেকে সামলানোর সুযোগ পাইনি।মিডিয়া জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়েও আমার জীবনটা ছিলো আঁধারে ঢাকা।
সেই আঁধার জীবনের প্রভাতকিরণ হয়ে এসেছেন আপনি।আমার শূন্য জীবনের পূর্ণতা হয়ে এসেছেন আপনি।”

মাহাদ থামে।আম্বের এর দিকে পূর্ন নজর স্থাপন করে সে।আম্বের নিরুত্তেজ।তার অরুণলোচন আঁখি ধীরে ধীরে নিস্প্রভ হচ্ছে।মাহাদ শান্ত পায়ে আম্বের এর কাছে এসে দাঁড়ায়।একটা চেয়ার টেনে আম্বের কে বসিয়ে নিজেও হাঁটু গেড়ে বসে তার সামনে।আম্বের এর দুই হাত নিজের মুষ্টিতে আবদ্ধ করে নির্মল গলায় বললো–

“আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি প্রজাপতি।তবে নিজের চেয়ে বেশি নয়।কারণ নিজের চেয়ে বেশি বললে তা মিথ্যে বলা হবে।আমি সবচেয়ে বেশি আমাকে ভালোবাসি।নিজেকে ভালোবাসি বলেই আপনাকে ভালোবাসি।নিজেকে কষ্ট দিতে পারবোনা বলে আপনাকে আগলে রাখি।নিজের অশ্রুকে ভয় পাই বলে আপনাকে কাঁদাতে চাই না।
আমার সবটা জুড়ে আপনি।আপনি আমার আপনিময় পৃথিবী।যেখানে শুধু আপনি আর আপনি।আপনি আমার আত্নার আত্নস্থল।আপনাকে ছাড়া আপনার ফিল্মস্টার কিছু নয়।”

মাহাদ তার মাথা রাখে আম্বের এর পায়ের উপর।আম্বের তার কম্পনরত হাত ধীরে ধীরে মাহাদ এর মাথায় রাখে।মাহাদ শান্ত গলায় বললো—

“আপনি ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আপন কেউ নেই।আপনিবিহীন এই পৃথিবী মৃত্যুসম।আমি আপনাকে সব খুলে বলবো।সব শুনে আপনার যদি মনে হয় আমি অপরাধী তাহলে আপনার দেওয়া সব সাজা আমি মেনে নেবো।কিন্তু তার বিনিময়ে শুধু আমাকে একা করে যাবেন না।
আপনিবিহীন এই পৃথিবীতে আপনার মাহাদ বাঁচবে না সুগন্ধি।মরে যাবে সে।”

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ
সরি।গ্রামে ছিলাম।এখন রোজ গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো।কিন্তু পেজে এতো ফলোয়ার হওয়ার পরেও রিয়েক্ট হতাশাদায়ক😑😑।
আচ্ছা,হ্যাপি রিডিং ☺☺)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here