🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট০৩
গোসল করে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে প্রেমা নিজের রুমের সাথে এটাচড্ বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়। মন-মাতানো ফুলের মিষ্টি-ঘ্রাণেন্দ্রি়!! না চাইতেও মন ভালো হয়ে যায় প্রেমার!
বিস্ময়কর ব্যাপার একসময় এ ফুল প্রেমার অপছন্দের জিনিসগুলোর মধ্যে একটা ছিলো। সময়ের সাথে মানুষেরও পছন্দ বদলে যায়। কিন্তু স্বইচ্ছায় প্রেমার এই অপছন্দের জিনিস পছন্দতে রুপান্তর হয়নি। এর পেছনে কারো অসীম পরিশ্রম ও ছিলো।
দু-বছর আগে প্রেমা যখন ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলো। তখন প্রেমার এই বারান্দাটা সবসময় খালি পরে থাকতো।শুধু বসার জন্য একটা চেয়ার ছিলো।
বসন্তকালের আগমন হলেই তাদের কলেজে অনেক বড় করে ‘বসন্ত বরণ’ উৎসবের আয়োজন করা হয়। খুব সুন্দরভাবে নিজেকে লাল শাড়িতে জড়িয়েছিলো সেদিন। হয়তো প্রেমার এই রুপে অজানা অচেনা কেউ মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
সেটা কী ভালোবাসা ছিলো নাকি ভালোলাগা কেউ জানেনা উভয়ের মধ্যে। প্রেমার নিশ্চিত হয়েছিলো ব্যাপারটাই তার কারন সেদিন কেউ একজন লাল-টকটকে বসন্তকালের ফুলের মালা পাঠিয়েছিলো নিজের খোঁপায় পেঁছানোর জন্য। সাথে একটা চিরকুট ও ছিলো।তাতে লেখা ছিলো ফুলের মালাটা যেনো খোঁপায় পেঁছায়।সেদিন প্রেমার কথাটি ফেলতে পারেনি। পূরন করেছিলো তাঁর সেই আবদার।
সেদিন হাজার খুঁজলেও সে মানুষটির খোঁজ পায়নি প্রেমা। হতাশ হয়ে বাড়ি চলে আসে। পরেরদিন ঘটে আরো এক আশ্চর্য ঘটনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় যাওয়ার জন্য পা জোড়া অগ্রসর করেছিলো।কিন্তু যাওয়ার পথে বাঁধা হয় দু’টি ফুলের টব। সাথে চিরকুট তাতে কেউ অনুরোধ করেছিলো যাতে ফুল গুলো ফেলে না দেয়।প্রেমাও ফেলতে পারে নি তার কথা। সেদিনের পর থেকে ডেইলি দু’টো করে ভিবিন্ন ফুলের টব দেখতো বারান্দায় ঘুম থেকে উঠার পর।
তারপর থেকেই এই বারান্দাটা অসম্ভব সুন্দর একটি ফুলের বাগানে রুপান্তরিত হয়। কথা গুলো ভেবে আনমনে হেসে যাচ্ছিলো প্রেমা!! হঠাৎ তার ভাবির ডাকে হুস ফিরে আসে। তাকিয়ে দেখে নাতাশা দাঁড়িয়ে আছে!
–“কি রে খাবি না??”(ভাবি)
–“খাবো তো আসছি তুমি যাও!!” (প্রেমা)
খাবারের টেবিলে প্রেমার মা-বাবা,দাদি বসে অপেক্ষা করছিলো প্রেমার! প্রেমা গিয়ে বসতেই তারা খাবার শুরু করে। সাথে প্রেমার ভাবিও বসে পরো। কিছুসময় অতিক্রম করার পর প্রেমার তার বাবার উদ্দশ্যে বলতে।লাগে….!!
–“”বাবা আগে তো কলেজে ভাইয়া নিয়ে যেতো। এখন তো নিজেও নিজের ব্যাবসার কারনে আসতে পারছেনা,,ভার্সিটি তো সেই শহরের কাছাকাছি অনেক দূর।যাতায়তের জন্য বেশ অসুবিধা হয়। তো আমি একটা বাসা ভাড়া নিয়ে সেখান থেকে ক্লাস করলে সহজ হতো। তোমার মতামত কী?? কোনো আপত্তি নেই তো???””
–“তুই মেয়ে মানুষ একা বাসা ভাড়াই থাকাটা কী খুব ভালো হবে??”
–“অমাহ!! আমি একা হব কেন?? ডি.জেওয়ালা দাদি আছে তো আমার সাথে!” (চট করে বলে ফেলে)
হঠাৎ প্রেমার কথায় সবাই চুপ হয়ে যায়। ২ সেকেন্ড পেরুতেই সবাই অট্ট হাসিতে মেতে উঠলো। প্রেমার দেওয়া নাম শুনতেই…
–“” আর কতো নাম দিবি আমার”??
–” দেখি!! (প্রেমা)
–” বলছি আমার ফ্রেন (ফ্রেন্ড) সুরিয়া ফোন দিয়েছিলো তাদের বাড়িতে বেড়াতে যেতে। শহরে তার ছেলের বাড়িতে আছে এখন।অনেক জোরাজোরির পর আমিও আর না করতে পারিনি।তাই আজকে বিকেলেই রওনা দিতে হবে। আমাদের জন্য গাড়িও পাঠিয়ে দিবে। সেখান থেকে এসেই তোর ব্যাপারটা ভাবা হইবো। (প্রেমার দাদি)
–“হ্যাঁ তো যাও না তুমি! তার সাথে আমার কী সম্পর্ক?”(প্রেমা)
–” সম্পর্ক আছে! কারন তুইও আমার সাথে যাবি। আর তোর বই-পত্রও সাথে নিস সেখান থেকে তোর ভাসিটি (ভার্সিটি) কাছে। আমি কোনো না শুনতে চায় না প্রেমা। যদি না বলিস তো আমি আর তোর সাথে কথা বলবো না।
প্রেমার বাবা কিছু বলেননি যওয়ার জন্য সম্মতি দেন।বাড়িতে তার মায়ের সিদ্ধান্তেই সব। প্রেমাও আর না করতে পারেনি।দাদিকে ভীষণ ভালোবাসে সে। তাই আর না করতে পারে নি। খাবার খেয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য প্যাক করেনে নেয়।সপ্তাখানেক থাকবে বলে সেখানে।
৩ টার দিকে গাড়ি আসলেই তাঁরা রওনা দেই শহরের দিকে। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই পৌঁছে যায় সেখানে।
গাড়ি থেকে নেমে কলিংবেলে চাপ দেয় গাড়ির ড্রাইবার। তারপর চলে যায়। এখন শুধু প্রেমা আর প্রেমার দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষন যেতেই একটা ছেলে এসে দরজা খুলে। আস্মিকভাবে ছেলেটি প্রেমাকে দেখে চমকে যায়। তার চমকে যাওয়াটা প্রেমার চোখ এড়াইনি। তবুও তেমন মনে নেইনি ব্যাপারটা।
খুব সুন্দর এবং মার্জিত কন্ঠে ছেলেটি সালাম দিয়ে তাদের ভেতরে আসতে বলে। ভেতরে গিয়ে প্রেমার আরেক শক খায় সোফায় বসে থাকা মানুষটিকে দেখে।সে আর কেউ নয় প্রেমার ভার্সিটির আরিয়ান স্যার।পরক্ষনে মেজাজ ধরে যায় প্রেমার। আরিয়ানও প্রেমাকে দেখে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে থাকে।
সেসময় আবারো সেই ছেলের কন্ঠটি কানে ভেসে উঠে।তাদের বসতে বলছে এবং ছেলেটি তার মাকে ডাকছে। এরপর দ্রুত পা চালিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। এই মুহুর্তে তার আর সেখানে থাকা সম্ভভ হচ্ছিলো না।
–আরে আমেনা এসেছিস?? (বলেই দুজন দুজনে জড়িয়ে ধরে)
–“কত বছর পর দেখা তাই না রে?(প্রেমার দাদি)
প্রেমার দাদির বান্ধবী এবং তার দুই ছেলের বউদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এবং জানতে পারে আরিয়ান দাদির বান্ধবীর বড় নাতি হয়। আরিয়ান প্রেমার সাথে কথা বললেও প্রেমার উত্তর দেয় নি তার মনোযোগ অন্যদিকে ছিলো।
–“এইতো এসে গেছে এটা আমার ছোট নাতি অভ্র। “(আরিয়ানের দাদি বলে) অভ্র ও তোমার আমেনা দাদু মনে আছে ছোটবেলায় দেখেছিলে??”
তখনি অভ্রের মনে পরে ক্লাস এইটে থাকা অবস্থায় দেখা হয়েছিলো একবার।
–”হুম মনে আছে”(অভ্র)
তারপর তাঁরা সোফায় বসল। তাদের নানা ভাবে আপায়ণ করছিলেন আরিয়ানের এবং অভ্রের মা। আরিয়ানতো অনেক খুশী প্রেমাকে ইমপ্রোস করার জন্য আরো একটা বড় সুযোগ হাতে পেয়েছে।
আরিয়ান প্রেমার সামনা-সামনি বসে দাদিদের সাথে গল্পে মেতে উঠে। কিন্তু প্রেমার মনে হচ্ছে কেউ থাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।আশে পাশে তাকালে কাউকে দেখতে পায়নি তেমন।
🌺(চলবে)🌺
[গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।কেমন লেগেছে জানাবেন]
- Tarin Jannat