বসন্তের_ফুল🌺পার্ট০৫

0
3255

🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট০৫

স্টাডিরুমে সব ধরনের বই ছিলো তাই প্রেমা একটা বই নিয়ে পড়তে লাগলো। প্রেমাকে রেখে অভ্র দরজাটা হালকা চেপে রেখে চলে যায়।


–” হুম আমি যেভাবে বলেছি।সেভাবে বললেই হবে বাকিটা উনি নিজ দায়িত্বে বুঝে যাবে।”(অভ্র)”

–” ঠিক আছে!!”(???)
.
.
.
.

আদ্রের পড়া শেষ হতেই প্রেমাকে খুঁজতে লাগলো। স্টাডিরুমে প্রেমাকে খুঁজে পেয়ে আদ্র শান্ত হয়। প্রেমার বই নিয়ে নিলো হাত থেকে।

–“বই নিলে কেন??” (প্রেমা)”

–“আমি আপনার সাথে, না না তোমার সাথে গল্প করবো এখন! প্লিজ…. (কিউট ফেস করে)

–” হ্যাঁ ঠিক আছে কিন্তু কী গল্প করবো??”(প্রেমা)”

–“যা ইচ্ছে?? জানো আপু আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আমার একটা বোন থাকবে। আমাকে আদর করবে,ঘুম পারাবে সব করবে…!!
কিন্তু মিলল একটা খাট্টুশ ভাই!”(আদ্র)”

–“খাট্টুশ কেন ডাকো??” (প্রেমা)”

–“জল্লাদ না বলে খাট্টুশ বলি এটাই কম নয় কী!”সারাদিন আমি এটা করি ওটা করি আম্মুর কাছে নালিশ দিবে নিজের কাহিনী বলবে না!”(আদ্র)

প্রেমা আদ্রের কথা শুনে হাসছে।খুব সুন্দর ঘুছিয়ে কথা বলে আদ্র যার ফলে প্রেমার আদ্রের কথা শুনতে ভালো লাগছে প্রেমার।

এমন আরো অনেক কথা বলে দুজনে। একসময় ডিনার করার জন্য ডাক পরে তাদের। নিচে নেমে যায় তারা। চেয়ারে আদ্র প্রেমা পাশাপাশি বসে প্রেমার বামসাইডে চেয়ারটা খালি ছিলো এবং,সোজা চেয়ারটাও। আরিয়ান এসে টুস করে প্রেমার পাশে বসে পরে।

এতে প্রেমা চোখেমুখে রাগ আর বিরক্তি দুটোই ফুঁটে উঠে। না চাইতেও চুপচাপ থাকতে হবে এখন! সবার সামনে কিছু বলতেও পারবে না। তার একটু বাদেই প্রেমার সামনের চেয়ারে অভ্র এসে বসে পরে। প্রেমা অভ্রের দিকে তাকালেই দেখে মুখ লাল হয়ে আছে। ফর্সা মুখ লাল হয়েছে হয়তো??

কিন্তু আরিয়ানের ন্যাকামি সহ্য করার মতো না। প্রেমা এটা নাও,ওইটা খাও,খাচ্ছো না কেন?? ওকে আরো মাংস দাও। এমন সব কথাবার্তা আরিয়ান প্রেমার কানের পাশে ঘ্যানঘ্যান করে বলছিলো।

–“(শালার-বিলাই! আমি কী খাবো না খাবো তোর থেকে এখন পরামর্শ নিতে হবে আমার!!)” (প্রেমা রেগে কথাগুলো মনে মনে বলছিলো!)

আরিয়ানের মাও বেশ প্রেমাকে আদর-যত্নে খাওয়াচ্ছে। মতলবটা কী?আবারো আরিয়ানের ন্যাকামি শুরু তখনি হঠাৎ ঝন করে শব্দ হয়।

সবাই একসাথে অভ্রের দিকে তাকাল, ভাত অর্ধেক থেকে গেছে প্লেটে ভালো করে খায়নি। হাত ধুয়ে প্লেট টা জোরে ঠ্যালা দিয়ে উঠে ধপাধপ পা চালিয়ে চলে যায়।

সবাই বোকার মতো তাঁকিয়ে অভ্রের যাওয়া দেখছে। খেতে এসে না খেয়ে চলে গেলো। অভ্রের মা দ্রুত পায়ে ছেলের পেছনে ছুটে।

–“কী হয়েছে অভ্র শরীর খারাপ নাকি খাস নাই কেন??”(অভ্রের মা)

–” এমনি ক্ষিদে নেই! আমি ঘুমাবো তুমি যাও এখন!”(অভ্রের সাফ বলে দেওয়া কথা শুনে উনি আর না দাঁড়িয়ে চলে যায়)

চিন্তায় পড়ে গেলেন খেতে গিয়ে না খেয়ে চলে এসে বলছে ক্ষিদে নেই। পেছন ফিরে ছেলেকে আরেকবার দেখে আবার ও সামনের দিকে পা চালায়।

–“কী রে বউ মা ছোট নাতির কী হয়েছে!”(অভ্রের দাদি)

–“ক্ষিদে নেই বলল!” আর কিছু বলেনি!!”(অভ্রের মা)

প্রেমা অভ্র যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই দ্রুত খাওয়া শেষ করে গেস্টরুমে চলে যায়।যেহেতু একা থাকবে তাই আগে থেকেই রুমে ঢোকে লক করে দেয়। কারন প্রেমার দাদি তার বান্ধবীর সাথে থাকবেন!

প্রেমা বিছানায় শায়িত হতেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। ১১ টার দিকে দরজার টকটক শব্দে প্রেমার ঘুম ভেঙে যায়। এলোমেলো এবং ঘুমে ডুলুডুলু অবস্থায় গিয়ে দরজা খুলে দেখে অভ্র আর আদ্র দাড়িয়ে। যদিও ঘুমের জন্য চোখ মেলে ভালো মতন তাঁকাতে পারছে না।

–” কিছু বলবেন??” (ঘুম জরানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করে প্রেমা)

–” সরি আপনার ঘুমে ডিস্টার্ব করার জন্য! আদ্র আপনার সাথে থাকবে বলে বায়না করছিলো। তাই নিয়ে আসতে হলো।”(অভ্র)

প্রেমা আর কিছু না বলে হাত বাড়িয়ে আদ্রকে খুঁজে হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পরে।

–“আরে দরজাটা বন্ধ করুন!”(অভ্র)

প্রেমার কোনো সাড়া নেই। সে আবারো গভীর ঘুমে ডুব দিলো। অভ্র দরজা টেনে চেপে দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। তখনি দেখে আরিয়ানের রুমের লাইট জ্বলছে এখনো।

কিছু একটা ভেবে সামনে এগোতে গিয়েও থেমে যায় অভ্র। আর সামনের দিকে পা বাড়ায়নি। প্রেমার রুমে গিয়ে ভেতর থেকে লকড করে দেয় অভ্র।

সকালে…

ঘুম থেকে উঠে প্রেমা দেখে আদ্র ওর পাশে শুয়ে আছে। সাথে সাথে চমকে যায়।দরজা তো ভেতর থেকে বন্ধ আসলো কিভাবে?আদ্রকে জিজ্ঞেস করলে বলে প্রেমার নিজেই দরজা খুলে আবার বন্ধ করে শুয়েছে।কিছু সময় তব্দা খেয়ে থাকে,পরে বিশ্বাস করে নিলো কারন ঘুমের মধ্যে এমন অনেক কিছু প্রেমা করেও ভুলে যায়।মনে রাখতে পারে না।

ব্রেকফাস্ট করে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয় প্রেমা। আরিয়ান রেডি হয়ে বসে আছে প্রেমাকে সহ সাথে নিয়ে যাবে। কিন্তু প্রেমা তাতে এক বিন্দুও রাজি নয়। সাফ বলে দেই সে রিক্সায় করে চলে যাবে।

কিন্তু আরিয়ানের মা প্রেমাকে অনুরোধ করে বললে আর ফেলতে পারে নি। বাধ্য হয়ে যেতে হয় আরিয়ানের সাথে।

আরিয়ানের গাড়ি গেইট দিয়ে বের হওয়ার আগেই প্রচন্ড স্পিডে একটা বাইক পাশ দিয়ে আরিয়ানের গাড়ি ক্রস করে চলে যায়। পেছনের সাইড দেখে বুঝতে পার এটা অভ্র।

আরিয়ান তো অনেকবার সরি বলছে কালকে হাত ধরার জন্য প্রেমা চুপচাপ শুনতে থাকে কোনো উত্তর দেয়নি।মনেমনে সিদ্ধান্ত নেয় আজকেই চলে যাবে ওদের বাড়ি থেকে। লোকটা কী পেয়েছে ওকে।

ভার্সিটিতে পৌঁছেই প্রেমা ধাম করে দরজা খুলে বের হয়ে দ্রুত পা চালিয়ে চলে যায়। ক্লাসে মিম আর আসিফের সাথে গিয়ে বসে পরে।ওরা প্রেমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

হঠাৎ ক্লাস শুরু হওয়ার আগে পিয়ন এসে প্রেমাকে ডেকে বলে যে প্রিন্সিপ্যাল স্যার ডাকছেন। প্রেমা প্রথমে একটু অবাক হয় হুট করে ডাকার কারনে। কোনো ভুল কিছু করেনি তো। এসব ভাবতে ভাবতে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের রুমের দিকে যায়।

–“মে আই কাম ইন স্যার??'”(প্রেমা)

–“এসো, বসো।(প্রিন্সিপ্যাল)

প্রিন্সিপ্যালের কথায় প্রেমা ভেতরে এসে বসল। তখনি প্রিন্সিপ্যাল প্রেমাকে একটা খাম এগিয়ে দেয়। প্রেমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে খামটি নেয়।

–“এটা কী স্যারর?’

–“খুলে দেখো।’

প্রেমা খামটি খুলে যেনো আকাশ থেকে পরলো। কাল এডমিশন নিয়েছে আর আজ।

“–ট্রান্সপার সার্টিফিকেট?(প্রেমা)”

–হ্যাঁ,,তুমি অন্য কোনো ভার্সিটিতে এডমিশন নিতে পারো কিন্তু আমার ভার্সিটিতে তুমি থাকতে পারবে না।

–“স্যার আমার দোষটা কী বলবেন??”(প্রেমা)

তখনি প্রিন্সিপ্যাল স্যার প্রেমার দিকে কিছু ছবি এগিয়ে দেয়। বিস্ফোরিত দৃষ্টি ছুঁড়লো ছবিগুলোর দিকে।ছবিতে স্পস্ট দেখা যাচ্ছে প্রেমার আরিয়ানের গায়ে পানি ছুড়ে মেরেছে।

–“ছাত্রী হয়ে শিক্ষকের গায়ে পানি ছুড়ে মারাটা চরম বেয়াদবী। তাই তোমাকে টি.সি দিলাম। এখন তুমি আসতে পারো।

–” স্যার উনি আমার….!!(প্রেমা)

–“আমি কিছু শুনতে চায় না..তুমি আসতে পারো।”

বলে ফোনটা বের করে কাকে যেনো কল দেয়।প্রেমা স্তব্ধ হয়ে বসেছিলো কিছুক্ষন। পরে আবার উঠে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে। ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায় ভার্সিটি থেকে।মিম আসিফ অনেক ডেকেছে তাও শুনেনি প্রেমা।

অন্যদিকে…

–“দেখো আরিয়ান পার্সনাল সম্পর্কে তুমি আমার কী সেটা জানি। এখন কথা হচ্ছে অন্য কিছু নিয়ে।(প্রিন্সি)

–” স্যার এসব বলার মানে কী আমি সেটাই বুঝতে পারছি না। কি এমন হলো হঠাৎ?(আরিয়ান)

তখনি প্রিন্সিপ্যাল স্যার আরিয়ানের দিকে কিছু ছবি এগিয়ে দিল।সেখানে আরিয়ান প্রেমার হাত ধরেছিলো। নিজের দিকে টানতে চেয়েছিলো প্রেমার হাত ধরে।

–“হুয়াট দ্য?

–“তাই আমি ওয়ার্ন করছি নেক্সট এমন কোনো ছবি যাতে আমাকে দেখতে নাহয়।এখন যেতে পারো। আর হ্যাঁ প্রেমাকে আমি টি.সি দিয়ে দিয়েছি ও এখন থেকে অন্য ভার্সিটি থেকে স্টাডি করবে। তুমি যাতে ওকে আর বিরক্ত না করো। “(প্রিন্সিপ্যাল)

আরিয়ান হাত মুঠ করে রেগে বেড়িয়ে যায়।এই ছবিগুলো যে তুলেছে তাকে হাতের কাছে ফেলে পুঁতে ফেলতো।

–” নাতি তোর প্ল্যান সাকসেসফুল!! (প্রিন্সি)

–” ওকে তোমার বউয়ের সাথে হানিমুনে যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিবো।”(নাতি)

নাতির কথা শুনে প্রিন্সিপ্যাল স্যার হেসে ফেলে।

সন্ধ্যা হতে চলল প্রেমার এখনো বাড়ি ফিরেনি।সবাই চিন্তায় পরে যায়। আরিয়ানও অনেক জায়গায় গিয়ে খুঁজেছে তবুও পায়নি।

পার্কের একটা বেঞ্চিতে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে প্রেমা। ভার্সিটি থেকে টি.সি দিয়েছে তাতে ওর কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু ওর ভাইয়া জানলে…আবারও বিয়ে দেওয়ার…..

এসব ভাবছিলো হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠ শুনে চমকে মাথা তুলে তাকায় প্রেমা….

(চলবে)

[গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি,কেমন হয়েছে জানাবেন]

Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here