🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট০৬
“আচমকা পুরুষালী কন্ঠ শুনে চমকে মাথা তুলে তাঁকাল প্রেমা ।দেখে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে।ঘামের কারনে শার্ট ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। কপাল বেয়ে মুখেও টপটপ ঘাম পরছে। ঠোঁটজোড়া প্রচন্ড লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে যেনো লিপিস্টিক পরেছে,চোখের মণিটা কালো বেশ আকর্ষনীয় লাগছে এ মুহুর্তে অভ্রকে। কিন্তু মুখটা সেদিনের মতো লাল হয়ে আছে।চোখের সাদা অংশটাও লালচে হয়ে আছে।এ ছেলে কী ক্ষনে ক্ষনে রুপ পাল্টায় নাকি?? নিজের মনেই প্রশ্নটা করে প্রেমা!!”
এক ধ্যানে অভ্রের দিকে প্রেমা তাকিয়েছিলো। আবারো অভ্রের ডাকে স্তম্ভিত ফিরে পায় প্রেমা।নিজের কান্ডে লজ্জিত হয়ে পড়ে বেশ। তাড়াতাড়ি আশেপাশে তাঁকাতে লাগলো। অন্ধকার হয়ে গেছে এখন।সে দুপুরে কিছু না খেয়ে এখানে এসে বসেছিলো এক চুল পর্যন্ত নড়েনি।
-“আপনি এখানে বসে আছেন? বাসায় সবাই প্রচুর টেনশান করছিলো আপনার জন্য!!”(অভ্র)
প্রেমা কিছু বলেনি মন খারাপ হলে প্রেমা চুপচাপ থাকে। এবারো তাই অভ্রের কথার প্রতিউত্তরে কিছু বলেনি সে। অভ্রের দিকে তাঁকিয়ে ছিলো।কেন যেনো অভ্রের দিকে পলকহীন ভাবে তাঁকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিলো প্রেমা।
–“আমাকে দেখার সময় অনেক পাবেন! এখন বাসায় চলেন..!!”(অভ্র চট করে কথাটি বলে প্রেমার পাশে বেঞ্চিতে বসে পরে অনেকটা দূরত্ব রেখেই)
–“আমি মোটেও আপনাকে দেখছি না!”(খানিকটা রেগে এবং মুখ ফুলিয়ে)
“প্রেমার মুখ ফুলানো দেখে অভ্র মৃদু হাসে”। এরপর প্রেমার দিকে তাঁকাল দেখে প্রেমা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তখনি প্রেমার হাতে থাকা খামটির দিকে চোখ যায়। টুপ করে খামটি নিয়ে নেই। খাম নেওয়ার সাথে সাথে প্রেমা অভ্রের দিকে ফিরে তাকাল,দেখে ততক্ষনে খামটি খুলে পড়তে লাগলো দাঁড়িয়ে। ”
প্রেমাও দাঁড়িয়ে অভ্রের দিকে খামটি নেওয়ার জন্যে এগোতে গেলে অভ্র হাত বাড়িয়ে প্রেমাকে থামতে বলে।। তাতে প্রেমা ঠাঁয় দাড়িয়ে যায়।পড়া শেষ করে প্রেমার দিকে তাঁকাল।
–“সো এটার জন্য মন খারাপ করে এখানে এসে বসেছিলেন এতক্ষন যাবৎ??”(অভ্রের প্রশ্ন)
“নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রেমা!!”
— ” আমি আপনাকে হেল্প করতে পারি!!!”(অভ্র)
–“কীভাবে?? (এবার মৃদু কন্ঠে বলে উঠে)”
–” আমাদের কলেজ &ভার্সিটিতে এডমিট হতে পারেন চাইলে?? আমি আমার ফুফার সাথে কথা বলতে পারি যদি আপনি চান তাহলে??” (অভ্র)
এবার প্রেমা ভাবনায় পরে যায়। তার ভাইয়া যদি জানতে পারে অন্য ভার্সিটিতে এডমিন নিয়েছে তাহলে হয়তো রাগ দেখাতে পারে। কারনও তো জানতে চাইবে যে কেন হুট করে ভার্সিটি চ্যাঞ্জ করেছে।আসল কারন জানলে তো তাঁর সাথে সাথেই বিয়ে দেওয়ার জন্য যুদ্ধ শুরু করবে।যা প্রেমা একদমও চায় না।তাহলে কী করবে এখন??
-” কী ভাবছেন?? “(অভ্রের প্রশ্ন)
ভাবনার রাজ্য থেকে বের হয় প্রেমা অভ্রের প্রশ্নে।কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না! সবকিছু সাইডে রেখে একটা তো সিদ্ধান্তঃ নিতেই হবে..??
–“আপনাদের ভার্সিটি কোথায়?? কতদূর হবে??” (প্রেমা)
–” বেশিদূর নয়! গেলেই দেখতে পাবেন! এখন আপনি কী চান এডমিশন নিতে??”(অভ্র)
“হ্যাঁ।(অভ্রের দিকে তাকিয়ে)
তখনি অভ্র প্রেমার আরেকটু কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। এতে প্রেমা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যেতে গিয়েও থেমে যায়। কারন অভ্র খামটি প্রেমাকে এগিয়ে দিচ্ছিলো। এরপর বলল,
–” আমি আপনাকে হেল্প করবো কিন্তু তার বিনিময়ে আমারও কিছু চায়??(প্রেমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে কথাটি)
এবার প্রেমার টনক নড়ে উঠে।কী বলে ছেলেটা?? বিনিময়ে কিছু চায় মানে?? কী চায় ছেলেটা?? কাল পর্যন্তও দুজনে অপরিচিত ছিলো হঠাৎ আর কী বা এমন চাওয়ার উৎপত্তি ঘটলো?? প্রেমা এসব ভাবছিলো! তখনি অভ্র বলে উঠে…
–“কিছু বলছেন না যে??”(অভ্রের প্রশ্ন)
–“মানে কী চাওয়ার কথা বলছিলেন??(ভাঙা গলায় বলে উঠে)
এবার অভ্র শব্দ করে হাসতে লাগলো প্রেমার দিকে চোখ রেখে। এতে প্রেমা সাথে সাথে অভ্রের দিকে তাঁকাল খুব অমায়িক লাগছে প্রমার কাছে অভ্রের হাসিটা।অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে অভ্রকে এ মুহুর্তে । পরে আবার কারন ছাড়া হাসতে দেখে কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো অভ্রের দিকে। তারপর মৃদু কন্ঠে বলল,
–” কি চায় আপনার??”
–” ফ্রেন্ডশীফ?? আই মিন… আমার সাথে ফ্রেন্ডশীফ করবেন?? আমার কোনো ফ্রেন্ড নেই..কখনো কারো সাথে ফ্রেন্ডশীফ করিনি! একা থাকতে পছন্দ করতাম কারো সাথে মিশতাম না! আজই ফার্স্ট টাইম আপনাকে আমার ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য প্রপোজ করলাম?? আপনি কি রাজি?? “(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা এবার বেশ লজ্জায় পরে যায়। কী ভেবেছিলো ছেলেটার সম্পর্কে আর কী হলো। কিন্তু এভাবে কেউ ফ্রেন্ডশীফ করার জন্য প্রপোজ করে প্রেমার সত্যিই জানা ছিলো না।মনে হচ্ছিলো ফ্রেন্ড না গার্লফ্রেন্ড হওয়ার জন্য প্রপোজ করেছে?? চুপচাপ অভ্রের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে এসব ভাবছে। অভ্র প্রেমার দিকে তাঁকিয়ে রইলো উত্তরের আশায়।
–” আপনি কী রাজি?? “(অভ্র)
প্রেমা এবার সাথে সাথে উত্তর দিয়ে দেয় ” হ্যাঁ”
কথাটা শুনার সাথে সাথে ঠোঁটের কোনায় অদ্ভুত রহস্যময় হাসির রেখা ফুঁটে তুলে অভ্র।ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় খোপ মেরেছে সে। সময়টা ওষুধের মতোই কাজে দিলো।
পকেট থেকে একটা বেসলেট বের করে। প্রেমার আরো কাছে গিয়ে আলতো করে বাঁ হাতটা ধরে বেসলেটটা পরিয়ে দেয়।খুব সুন্দর বেসলেটটা ছোট ছোট গোলাপি রঙের ফুল চেইনের উপরে বসানো প্রেমার ফর্সা হাতে বেশ মানিয়েছে এটা।
এবার প্রেমা অবাক হয়ে যায় এবং ভাবছে এতো মনে হয় আগেই থেকেই সব প্ল্যানিং করে রেখেছিলো। নাহলে এ সময়ে হঠাৎ বেসলেট পেলো কোথায়??
প্রেমার কিছু বলবে তার আগেই অভ্র বলে উঠল,
-” আসার সময় দেখেছিলাম একটা দোকানে ভালো লেগেছিলো তাই নিয়ে নিলাম! আপনার জন্য ভেবেই নিয়েছি। কিন্তু সেটা দেখার বিষয় নয়..আমার ফ্রেন্ডশীফ বাকি নরমাল ফ্রেন্ডশীফের মতো না। কিছু রুলস আছে।যা আপনাকে বাধ্যতামূলক মানতে হবে…??(অভ্র বেশ সুন্দর করে কথাটা বলে)
এবার প্রেমার মাথা ঝিমঝিমিয়ে উঠে,নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।বেঞ্চিতে বসে পড়লো।অবাকের উপর অবাক হচ্ছে সে আজ। এমন এমন কান্ড নিজের চোখের সামনে ঘটছে যার ব্যখ্যা সে নিজেও করতে পারবে না। ফ্রেন্ডশীফ করতে সমস্যা নেই কিন্তু রুলস সেটা আবার কী?? ফ্রেন্ডশীফ করতে রুলস ফলো করতে হয়? তাও আবার বাধ্যতামূলক….’ধ্যাত’..এমন একটা শব্দ মনে মনে উচ্চারন করে।
–” আপনি এখন আর না করতে পারবেন না??কারন আপনি একটু আগে একসেপ্ট করেছিলেন আমার প্রপোজ। যদি রিজেক্ট করেন তো আপনাকে জরিমানা দিতে হবে…(কথাটা বলেই প্রেমার দিকে তাকায়)
প্রেমা এবার হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। ভাবছে ছেলেটা খুব অদ্ভুত! অদ্ভুত চিন্তাভাবনা তার।ফ্রেন্ডশীফ করার জন্য প্রপোজ!! “অশ্চর্যের বিষয়’ প্রেমার আর কথা না বাড়িয়ে বলে উঠে…
–” রুলসগুলো কী বলেন??”
–“আস্তে আস্তে জানিয়ে দিবো।” এখন বাসায় চলেন সবাই চিন্তা করছেন (অভ্র)”
কথাটা শুনা মাত্রই প্রেমা দাঁড়িয়ে যায় সাথে অভ্রও। সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। দুজনে নিশ্চুপ! কিছু সময় অতিক্রম হওয়ার পর প্রেমা বলে উঠে…
–“আপনি কোন ডিপার্টমেন্ট?? ”
অভ্র ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলে….
–” ডিপার্টমেন্ট নেই। আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে!(অভ্র)
অভ্রের কথা শুনামাত্রই গাড়ির মতো ব্রেক কষাল প্রেমা। দাঁড়িয়ে অভ্রকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে নেয়।
–“তুমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে?? তারমানে তুমি তো আমার ছোট?? আর আমি ভাবলাম তুমিই আমার সিনিয়র?? বাই চান্স তুমি কী কোনো ক্লাসে ফেল করেছিলে?? ( প্রেমার দ্রুতগতীতে করা প্রশ্নের জবাবে)
মলিন একটা হাসি দেয় অভ্র আর বলে..”জানি না”
–জানো না মানে আমি তো ড্যাম সিউর তুমি ফেইল করছিলে,,নাহলে এতো বড় হয়ে ইন্টারে বইসা থাকো কেমনে??(সন্দেহের দষ্টি নিয়ে তাকিয়ে)
–“তেমন কিছু না ” (বলেই হাঁটা ধরে)”
প্রেমা অভ্রের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে..
–‘কিছুনা মানে??(কিছুক্ষণ থেমে জিজ্ঞেস করে)
” কী হয়েছে হঠাৎ??
–“কিছু না বাসায় চলেন! দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।(গম্ভীর ভাবে কথাটা বলে)
তারপর দুজনে হেঁটে পার্ক থেকে বের হয়ে রাস্তায় যায়।রাস্তায় গিয়ে দেখে অভ্রের বাইকটা।সেখানে গিয়ে অভ্র বাইকে বসে প্রেমাকে বসতে বললে প্রেমা আমতা আমতা করে লাগলো। এর আগে বাইকে ছড়েনি। তাই
ভীষণ ভয় করছিলো।
–” ভয় পাচ্ছেন নাকি?? (অভ্র)
–চুপ করে আছে।
–“ভয় পেতে হবে না। আমি আস্তে চালাবো,,,আসুন??
অভ্রের কথায় প্রেমা কিছুটা আশ্বাস পেলেও ভয়টা রয়ে গিয়েছে মনের মধ্যে। হালকা দূরত্ব রেখেই বাইকে বসে পরে। বাইক আস্তে আস্তে চালাতে লাগলো। তারপর বাসায় এসে পৌঁছালো যায় দুজনে।
বাসায় পৌঁছাতেই সবার প্রশ্নের আক্রমণ।
–কিরে তোরা দুজনে আজ সারাদিন বাড়ি ফিরিস নি কেন?? কোথায় ছিলি??(অভ্রের দাদি)
প্রেমা এবার হকচকিয়ে অভ্রের দিকে তাকাল।সেও বাড়িতে ছিলো না?? তাহলে কোথায় ছিলো?? যখন পার্কে গিয়েছিলো তখন তো সন্ধ্যা ছিলো। তাহলে কোথায় ছিলো??
অভ্র প্রেমার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার তার দাদুর দিকে তাঁকাল।তারপর বলে।
–উনার ফেন্ড মিমের শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিলো হঠাৎ তাই উনাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। আমরা সেখানে ছিলাম দুপুর থেকে ।আর উনাকে একটু আগে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তারপর এখানে আসলাম! (অভ্র)
অভ্র কথাটা এমনভাবে বলল যে আর কারো কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ ছিলো না তাদের। তারপর সে চুপচাপ উপরে চলে যায়।
প্রেমাতো আরেক ঝাটকা খেয়েছে এখন আবার। একে তো এতো বড় একটা মিথ্যে বলল তার উপর মিম ওর ফ্রেন্ড এ কথাটা অভ্র কিভাবে জানলো??সেটাও মনে মনে ভাবছে প্রেমা।
–” যাও মা ফ্রেশ হয়ে আসো! সারাদিন তো কিছুই খাও নি দুজনে, যাও। ডিনারটা তাড়াতাড়ি করে নিও তোমর।(অভ্রের মা)
প্রেমা একটা মুচকি হাসি দিয়ে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল।আর মনে মনে ভাবছে অভ্রের কাছ থেকে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিবে সময় পেলেই।
সকালে…..
অভ্র আপনমনে বাইক চালাচ্ছে আর প্রেমা তার পেছনে বসা। কাল তাদের ফ্রেন্ডশীফ হওয়ার পর অনেকটা ফ্রি হয়ে যায় দুজনে।এখন ভার্সিটিতে যাচ্ছে দু’জনে।
কিন্তু প্রেমা ভাবছে অন্য কিছু।বারবার পেঁছনে তাঁকাচ্ছিলে। কারন সেই ব্ল্যাক কারটা ওদের পেঁছনে পেঁছন আসছে। প্রেমা গাড়িটা ভালোভাবেই চিনে কারন গত ছয়মাস ধরেই এই গাড়িটিকে সে তার সাথে কলেজে যাওয়ার সময় দেখতো।তাই চিনতে একটুও ভুল হচ্ছে না প্রেমার। কিন্তু গাড়ির মালিকটা কী চায়?? বারবার ওর পেঁছন পেঁছন কেন আসে?? এমন প্রশ্নই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে প্রেমার!!???
(চলবে)
মোবাইলের অবস্থাতো জানেন সবাই। তাই আশা করছি ভুলটা আমাকে অনুধাবন করতে সাহায্য করবেন!!
Tarin Jannat