#বসন্তের_ফুল🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট৫১
ফাল্গুন মাস। বসন্ত এসে গিয়েছে।দক্ষিনা হাওয়াই মাতিয়ে তুলছে চারিদিক।ফুলে ফুলে ভড়ে উঠেছে গাছ।
কৃষ্ণচূড়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, মালতী, মাধবী, বকুল, শিমুল, পলাশসহ নানা জাতের ফুল ফোটেছে। আমের মুকুলের সৌরভে ম ম করে আকাশ বাতাস। আর এই আগুন লাগা ফাগুনেই গাছে গাছে সুললিত কণ্ঠে প্রিয়াকে ডেকে আকুল হয় কোকিল।
কেটে গেছে পাঁচমাস। অভ্র আর প্রেমা স্বানন্দে উপভোগ করেছে পাঁচটা মাস। খুনসুটি, হাসি-কান্না,একঝাঁক অভিমান,দুষ্ট-মিষ্টি আলাপ।সব মিলে বেশ আনন্দের ছিলো দিনগুলো।যা এখন সোনালি অতীত বা স্মৃতি হয়ে, মনের ভাঁজে ভাঁজে আঁটকে থাকবে।
ভোরের মিষ্টি আলো জানালা ভেদ করে রুমে প্রবেশ করে। আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছাড়লো প্রেমা। সর্ব প্রথম কাজটি হলো ফোন হাতে নেওয়া। ফোনটা হাতে নিতেই ঠোঁটে হাসি জায়গা দখল করে নিলো।অস্পষ্ট স্বরে দৃঢ় কন্ঠে বলে, ‘উফ অভ্র’
ফোনের মেসেজটা দেখে শরীরে শিহরণ বয়ে যায়। সঙ্গে কোমল মনটাও শিহরিত হয়ে উঠে।
রাত বারোটার আগে এসেছিলো মেসেজটা।মহারানীর মাত্র দেখার সময় হলো।
ঠোঁট নেড়ে মেসেজটা পড়লো প্রেমা,
বসন্ত_আসুক, মধুময়ে ছেয়ে যাক মন।
শুধু আমার বসন্তের ফুল-কুমারির জন্য!
“বসন্তের শিমুলেরা সবুজে রঙ মাখুক,
নীল আকাশের তলে লাল-সবুজ গালিচা সাজুক,
শীতল হাওয়ায় পাখ দুলিয়ে কোকিল ডাকুক
পাগল করা মিষ্টি সুরে শব্দেরা বাজুক,”
সর্বশেষ মেসেজে ছিলো,
“ডিয়ার! বাসন্তি রঙের শাড়িটা পড়ে আসবা কিন্তু। চুল খোলা রাখবা।তোমার জন্য আমি নিজ হাতে মালা বানাচ্ছি,খোঁপায় গুজানোর জন্য। (শেষে চুমুর ইমুজি দেয়)
এতটুক পড়েই লজ্জায় মিঁইয়ে যায় প্রেমা। প্রতি মেসেজে চুমুর ইমুজি দেখে প্রেমা কেঁপে উঠে।
যদি অভ্র বাস্তবে চুমু…..
প্রেমা আর ভাবতে পারছেনা। নিজের কাছে নিজেরই লজ্জা লাগছে প্রেমার। ফোনের গ্যালারি থেকে অভ্রের একটা হাসিমাখা ছবি বের একটা চুমু খেলো প্রেমা। এটা প্রেমার রোজ সকালের কাজ।যেটাকে প্রেমা ‘মর্নিং কিস’ বলে।
দ্রুত ওয়াসরুমে গিয়ে গোসল করে নিলো প্রেমা। অভ্রের কথা মতো বাসন্তি রঙের শাড়ি শরীরে জড়িয়ে নিলো। নিজেকে গভীর দৃষ্টিতে দেখে নিলো।পরে হাত দিয়ে মাথায় চাপর দিলো।কারণ একটাই। প্রেমার দিকে সয়ং অভ্রই তাকাতে পারবে।প্রেমা নিজেও ভালোভাবে তাকাতে পারবেনা।এটা কোন কথা?
মাঝখানে সিঁথি করে চুল দু’পাশে এনে রাখলো।
চুল থেকে এখনো টপটপ পানি পড়ছে।ফোনে সময়টা একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো।
আটটা পনেরো। ঠিক পাঁচ মিনিট পর অভ্র ফোন করে,
—হ্যালো ডিয়ার তাড়াতাড়ি এসো!
এইটুকু বলে ফোনের লাইন কাটলো সে।প্রেমাকে বলার জন্য কোন সুযোগ ও দেয়নি।
প্রেমা মৃদু হাসে। এটা অভ্রের অস্থিরতা প্রকাশের ধরণ।সে যখন উম্মাদ হয়ে যায়,তখনি প্রেমাকে আর এক মুহূর্ত সময় দিবে না। যদি বলে ‘প্রেমা এখন নিচে নামো,তোমাকে দেখবো। পাঁচ মিনি সময়”
তাহলে প্রেমাকে পাঁচমিনিট কাঁটায় কাঁটায় পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই অভ্রের সামনে হাজির হতে হবে।
আর নয় তো মুখ গম্ভীর করে রাখবে। তবে রেগে থাকেনা।শুধু অভিনয় করে। মানুষ আসলেই বৈচিত্র্যময়। একেক সময় একেক অভিনয় করতে দক্ষ।
প্রেমা তার মা-বাবার থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ির বাইরে পা রাখে।
গেইট দিয়ে বের হতেই দেখলো অভ্র বসে আছে।তাঁর বাইকের উপর। সুন্দর আকর্ষনীয় চোখজোড়া প্রেমার আসার অপেক্ষায় মত্ত ছিলো। অবশেষে অপেক্ষার অবশান ঘটলো।
বাইক থেকে নেমে অভ্র আশেপাশে তাকাল। জনমানবহীন রাস্তা। ব্যস্ত পায়ে হেঁটে প্রেমার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ঝাপটে জড়িয়ে নিলো নিজের মধ্যে।
–অভ্র, রাস্তায়? লোকজন দেখলে,ছিঃ!
অভ্রের সোজাসাপ্টা জবাব,
–দেখলে দেখুক!
প্রেমার শব্দ ভান্ডারে অভ্রকে বলার জন্য আর কোন শব্দ বাকি নেই। মৌন থাকে।
পেঁছন থেকে অভ্রকে জড়িয়ে ধরে আছে প্রেমা। মন দিয়ে বাইক চালাচ্ছে অভ্র। মাঝেমাঝে গুনগুন শব্দ শুনতে পাচ্ছে প্রেমা।অভ্রকে গাইতে দেখেনি।তবে গুনগুনাতে দেখেছে।তাও মাঝেমধ্যে।
শহর থেকে দূরে। বিশাল বড় এক উদ্যানে আসল তারা। টিকিট কেটে প্রবেশ করলো ভেতরে।
কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে আশে দু’জনে। মাটিতে হাজারো ফুল বিছিয়ে আছে। সব কৃষ্ণচূড়া ফুল। অভ্র নিজ হাতে প্রেমার চুল খোঁপা করে।এরপর লাল টকটকে গোলাপ ফুল দিয়ে বানানো মালা স্বযত্নে প্রেমার খোঁপায় পেঁছিয়ে দিলো।
আশেপাশে অনেক দাম্পত্য অভ্রের এরূপ আচরণে বিমোহিত হয়। প্রিয়জনের সুখেই তো নিজের সুখ। তাদের ভীষণ সুখী লাগছে।
অভ্রের কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে প্রেমা।ডান হাত অভ্রের দু’হাতের মাঝে আবদ্ধ। অনেক্ষণ এভাবেই বসেছিলো। শেষে অভ্রের বিরক্ত লাগছিলো এভাবে বসে থাকতে। ডানদিকে দৃষ্টি ছুঁড়লো। সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁটের হাসি চলে আসে।
লাল,নীল,সবুজ, ছোট ছোট রঙিন সাজানো বাড়ি দেখে। দেখতে বাড়ির মতো দেখালেও ভেতরে শুধু একটা ছোট্ট রুমের সমান জায়গা।
বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় অভ্র,সঙ্গে প্রেমাকেও দাড় করাল। প্রেমা প্রশ্নাত্বক চাহনি ছুঁড়লো,
অভ্র বলল,
–চলো?
–কোথায়?
–পায়ে হেঁটে যাবে? নাকি কোলে নিবো?
–না না,পায়ে!
–গুড, চলো।
প্রেমার হাত ধরে সেই রঙিন বাড়িগুলোর দিকে পা বাড়াল অভ্র। চলতি পথে আচমকা দু’জনের চোখ বাঁ দিকে গাছের ঝোঁপের পাশে একজোড়া দম্পতির দিকে গিয়ে পড়ল। এমন কিছু দৃশ্যমান হলো যে তাদের দ্রুত চোখ সরাতে হয়। অভ্র তেমন একটা গায়ে মাখায়নি। সে স্বাভাবিক থাকে।
কিন্তু প্রেমার উৎসুক দৃষ্টি আবারও ছুঁড়লো সেদিকে,চোখে মুখে অস্তিরতা এসে ভিড় করে প্রেমার। প্রেমার অস্বস্তি অভ্র ঠাওর করতে পারলো। প্রেমাকে স্বাভাবিক করার জন্য বলল,
— রিল্যাক্স!
–লজ্জা নেই এদের?
— লজ্জা নেই বলেই তো!বাদ দাও,চলো।
বাড়িগুলোর সামনে এসে দাড়াল। বেঞ্চিতে একজন লোক বসে আছে। অভ্র লোকটিক কাছ থেকে ভাড়া দিয়ে লাল রঙের ছোট্ট বাড়িটির চাবি নিলো।
প্রেমা শুধু নীরব দর্শম মাত্র। তাই চেয়ে থাকল।
লাল বাড়িটির মধ্যে প্রবেশ করতে করতে প্রেমা জিজ্ঞেস করল,
–এখানে আসার কী দরকার ছিলো?
অভ্র দরজাটা বন্ধ করে দিলো। প্রেমা দ্রুত চমকে পেঁছন ফিরে তাকাল। প্রেমার চমকানো মুখ দেখে অভ্র কপাল কুঁচকাল,জিজ্ঞেস করে,
–কী হয়েছে?
প্রেমা ঠোঁট টেনে হেসে বলল, ‘কিছু না’
সিঙ্গেল বেড। জানালার পাশে ছোট গোল টেবিল,এবং একজোড়া চেয়ার। ভীষণ পরিপাটি রুম। চেয়ারে বসতে বসতে অভ্র বলল,
–দিনটা তোমাকে দেখে কাটাবো বলেই এখানে আসলাম।তো তোমাকে না দেখে আশেপাশের মানুষগুলোকে দেখবো?
অভ্র কথায় প্রেমা অবাক না হয়ে পারলো না।আর কতো দেখলে অভ্রের চোখের স্বাদ মিটবে সে জানেনা।তবে এতটুক নিশ্চিত অভ্র যতক্ষণ ওর কাছাকাছি থাকবে।তখন একমুহূর্তের জন্যও আড়াল হতে পারবে না।
–বসো, কতক্ষন সঙ সেজে দাড়িয়ে থাকবে?
অভ্রের কথায় প্রেমা চারিদিকে তাকিয়ে চেয়ারে বসল। অভ্রের দু’গালে হাত,দৃষ্টি প্রেমার দিকে।
প্রেমা ইতস্তত বোধ করে। অভ্রের গাঢ় চাহনি তার শরীরে যেনো অবশ হয়ে যাচ্ছে। কী অদ্ভুদ। শুধু কারো মায়ামাখানো দৃষ্টিতেই শরীরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুভুতি খেলে যায়।কীভাবে? ভাবুক ভঙ্গিমা নিয়ে চোখ তুলে অভ্রের দিকে তাকাল প্রেমা।
এবার প্রেমার চোখও আঁটকে গেলো। অভ্রের চোখ আর ঠোঁট দু’টোই সাময়িক সময়ের জন্য প্রেমার শ্বাস থমকে যায়। উপরের ঠোঁট খুব সুন্দর লাভ সেইফের আকৃতি। মুগ্ধতাপূর্ণ মুহুর্তে কাটছে দুজনের।
মাঝখানে নীরবতা ভেঙে ঘোর লাগা কন্ঠে অভ্র বলল,
—তুমি আগের চেয়ে বেশি সুন্দরী হয়ে গিয়েছো।বেশিই সন্দরী!
প্রেমা লজ্জামাখা হাসি হেসে বলল, ‘তোমার ঠোঁটজোড়া বেশি সুন্দর।’
উক্ত কথাটুকু বলে প্রেমা নিজেই চমকে গেলো।নিজের কান্ডে নিজেই স্তব্ধ হয়ে যায়। এতোদিনের চাপানো কথা আজ প্রকাশ করে ফেলেছে। অভ্রের দিকে তাঁকানোর সাহস পাচ্ছে না প্রেমা। হঠাৎ অভ্র বলে উঠে,
–প্রেমা তুমি কিছু বলেছিলে? সরি আমি শুনতে পাইনি।
অভ্রের কথায় প্রেমা হকচকিয়ে তাকাল। কেন যেনো রাগ হলো। অভ্র তার কথা খেয়াল করেনি।মানে অভ্রের খেয়াল অন্যদিকে ছিলো।কপালে তীক্ষ্ণ ভাঁজ নিয়ে তাকাল,মুহুর্তে চাহনি শিথিল হয়ে আসে। প্রেমা বিড়বিড় কন্ঠে বলল, ‘শুনেনি,বেশ হয়েছে।বাঁচলাম!
প্রেমার হাবভাব দেখে অভ্র না হেসে পারলো না। উচ্চস্বরে হেসে বলল, ‘ তোমাকে বলেছিলাম আমার শ্রবণশক্তি ভীষণ প্রকড়’
তাই তোমার কথা আমি শুনেছি। ‘
প্রেমাও হাসে।লজ্জা কেটে গেলো তাঁর।মূলত অভ্রের কারণেই। এবার প্রেমাও দু’গালে হাত দিয়ে অভ্রের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলল,
–তোমার চোখ ও ভীষণ সুন্দর,নাকটাও!
মৃদু হাসল অভ্র। সত্যিই এ জীবণ ধন্য তার।
_____________________________
চোখের পলকে নিমিষেই কেটে
গেলো আরো কিছু দিন।
আজ অভ্রের এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো। এতোদিন বহু ব্যস্তায় কেটেছে তার। পড়াশোনা জনিত ব্যস্ততা। সব পরীক্ষা ভালো হয়েছে তার। গোল্ডেন রেজাল্ট আসবেই।
ফহেলা ফাল্গুনের পর অভ্রের সাথে প্রেমার দেখা হয়নি। প্রেমার কড়া নির্দেশ ছিলো। পরীক্ষা শেষ না হওয়া অবধি তাদের দেখা হবে না। প্রেমা কথাতেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলো।এক মুহুর্তের জন্য দেখা দেয়নি। তার ধারণা অভ্রের সাথে একবার দেখা করলে সে বারবার বায়না করবে। জোর জবরদস্তি করে কোন মতে রাতে ঘুমানোর আগে কয়েক মধুময় বাক্য বিনিময় হতো।বেশিরভাগ সময় প্রেমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতো অভ্র।কারণ কথার মাঝেই প্রেমা ঘুমের দেশে তলিয়ে যেতো। রেখে যেতে অভ্রের জন্য একরাশ ছটপটানি।
বিকেল শার্ট পড়তে পড়তে অভ্র প্রেমাকে ফোন দিলো, কয়েকবার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ হলো।
উত্তেজিত কন্ঠে অভ্র বলে উঠলো,’ আজ পরীক্ষা শেষ।দেখা করার কথা ছিলো? মনে আছে? আমি আসছি,রেডি হয়ে নিচে এসো। দেড়ি করবা না একদম।’
ধুম করে ফোনের লাইনটা কেটে দিলো অভ্র।
পার্ফিউম দেওয়ার পর,গড়ি হাতে পড়ে দ্রুত রুম ত্যাগ করলো।
ঠিক সেই মুহূর্তে অরি এসে অভ্রের সামনে দাঁড়ায়। চোখেমুখে খুশীর চাপ। অকারণে খুশীর চাপ দেখে অভ্র ভ্রু কুঁচকে ফেলল,
কপট রাগ নিয়ে বলল,
–কী? সামনে দাঁড়িয়েছিস কেন?
অরি মিটিমিটি হেসে বলল,
–তোর ভাইয়ের সাথে আমার সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।
অভ্র ফুস শব্দে করে শ্বাস ছাড়লো, কড়া কন্ঠে বললে, ‘ তো? আমি কী করবো?
— জানতে চাইবি না কীভাবে করলাম?
অভ্র দাঁত কিড়মিড় করে বলল, ‘আমি জানতে না চাইলেও কী তুই বলবি না?
অরি হেসে বলল, ‘হ্যাঁ বলতাম, আমি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে…
— প্লিজ থাম! কীভাবে কী করেছিস জানতে চাই না। ভালোভাবে যে কিছু করবি না তা নিয়ে আমি নিশ্চিত। এখন আমাকে যেতে দে।
–এমন করছিস কেন? তোর কী কোন বোন আছে? আমিই তো একমাত্র তোর বোন। তোর
জেঠুর মেয়ে।তাহলে আমি তোর জেঠাতো বোন হই। এখনকার দিনে চাচাতো,জেঠাতো হিসাব হয়না। বোন বোনই হয়।
অরির কথায় অভ্র কিছুটা ভেতরে শান্ত হয়।তবে গম্ভীর কন্ঠে অরিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
— না তোর বাবার সাথে আমার সম্পর্ক আছে না তোর চাচার সাথে। যেখানে ওদের কারো সাথে আমার সম্পর্ক নেই সেখানে তোর সাথে বোন-টোনের সম্পর্ক বেমানান।
— সেই তুই যাই বল, আমি তোরই বোন। অভিকের চেয়ে আমার তোকেই বেশি আপন মনে হয়।আরে ওরা সবাই তো স্বার্থপর।যেখানেই তুই একজন যে আমার সত্যিটা জেনেও এ বাড়িতে বউ হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিস।
নাহলে….
–অরি আপু! আগের কথা বাদ দাও। আমি কী করেছি করিনি সেটার হিসাব প্লিজ করতে যেও না। কারণ হিসাব করতে বসলে স্বার্থপর ওরা হবে না আমি আর তুমি হবো।
অরিকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অভ্র নেমে যায়। যেতে যেতে মন-কোটরে জমা কিছু স্মৃতি গেঁটে নিতে লাগলো।
অভ্রের (মণিমা) মায়ের প্রথম সন্তান গর্ভে মারা যাওয়ার পর আর কোন সন্তান গর্ভে আসেনি।অতিরিক্ত আঘাতের কারণে ব্রেইনে সমস্যা হয়।ব্রেইনের কড়া ওষুধ চলমান থাকার কারণে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
ব্রেইনের সমস্যাটা কমে গেলেও কনসিভ করতে পারেনি। সেই থেকে আরিয়ানের মা বারবার অভ্রের মাকে নিঃসন্তান বলে কোঁটা দিতো। মাঝে মাঝে কথাগুলো অভ্রের কর্ণেও ভেদ করতো। ভীষণ ঝাঁঝালো কন্ঠের ছিলো আরিয়ানের মায়ের কথাগুলো।অভ্র তার মায়ের আঁচলে ঢেকে কান্নামিশ্রিত মুখ দেখতে পেতো।সেদিন ছিলো নিরুপায়। যদিও এ নিয়ে অভ্রকে কোনদিন দোষারোপ করেনি তার মা।
মনে মনে তীব্র ক্ষোভ জাগলো অভ্রের। তাই তো আরিয়ানের মা আরিয়ানের জন্য ভালো কিছু করলে সেটাতে অভ্র গন্ডগোল করে দিতো।
শেষে আরিয়ানের বাবা অভ্রের বাবার দ্বিতীয় বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কথা-বার্তা ছাড়া কাজী সহ বাড়িতে নিয়ে আসেন।
অভ্রের বাবার মত ছিলোনা বলে বাড়িভর্তি লোকজনের সামনে থাপ্পর দিলেন।যেই স্মৃতি এখনো অভ্রের চোখে ভেসে উঠে।
অরির সাথে আরিয়ানের বিয়ে করানোর মূল উদ্দেশ্য ছিলো একটা। কারণ অরি কোনদিনও মা হতে পারবে না। যেদিন অভ্রের সাথে দেখা হয়েছিলো। সেদিন অরি নেশায় বুদ ছিলে।যার ফলে কার এ্যাক্সিডেন্ড করে ফেলে। অতিরিক্ত আঘাত পেয়েছিলো,তাই ডাক্তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিলেন। অপারশন করার পর ডাক্তার জানালো অরি আর মা হতে পারবে না। আশ্চর্যের বিষয়!অরির এ নিয়ে সেদিনও বিন্দুমাত্র আফসোস বা হতাশা অভ্রের চোখে আসেনি।
সেই সুযোগটাই নিয়েছে আজ অভ্র।
এটাকেই বলে নিয়তি।যেমন কর্ম তেমন ফল।
পাপ করলে ভোগ তো করতেই হবে।যা পৃথিবীতে অবস্থান করা অবস্থায় পেয়ে যায়। মানুষ শুধু উপলব্ধি করতে পারে না।ভুল করে যায় বারেবারে।
ফোনের আওয়াজে সকল ভাবনার সমাপ্তি ঘটে।সমাপ্তি ঘটে স্মৃতিচারণের।
ফোন প্রেমার নামটা ভেসে উঠতেই ঠোঁটের কোণার হাসিটা প্রসারিত হয় অভ্রের।
(চলবে)
রি-চ্যাক দেওয়স হয়নি। ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। Tarin Jannat